অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৪
আপনার প্রত্যাশাকে দৃঢ় করে চলুন!
“যিহোবার উপর প্রত্যাশা রাখো।”—গীত. ২৭:১৪, NW.
গান ২৪ পুরস্কারে তোমার চোখ রাখো!
সারাংশ *
১. যিহোবা আমাদের কোন প্রত্যাশা দিয়েছেন?
যিহোবা আমাদের চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকের এই পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা আছে। সেই সময় সবার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং সবাই আনন্দে থাকবে। (প্রকা. ২১:৩, ৪) আর আমাদের মধ্যে কিছু জনের স্বর্গে অমর জীবন লাভ করার প্রত্যাশা আছে। (১ করি. ১৫:৫০, ৫৩) আমাদের বেঁচে থাকার প্রত্যাশা স্বর্গে হোক কিংবা পৃথিবীতে, আমরা অনেক খুশি যে, যিহোবা আমাদের এই প্রত্যাশা দিয়েছেন। আর আমরা সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি, যখন এটা পূরণ হবে।
২. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হবেই?
২ বাইবেলে যখন ‘প্রত্যাশার’ বিষয়ে বলা হয়, তখন সেটা ভালো কিছু হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করাকে বোঝায়। আমাদের প্রত্যাশা কোনো স্বপ্ন নয় বরং আমাদের কাছে এই বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণ আছে যে, এটা পূরণ হবেই। এই প্রত্যাশা যিহোবা নিজে আমাদের দিয়েছেন। (রোমীয় ১৫:১৩) যিহোবা আমাদের স্পষ্টভাবে বলেছেন, তিনি কী করবেন আর আমরা খুব ভালোভাবেই জানি, তিনি যা প্রতিজ্ঞা করেন, তা সবসময় পূরণ করেন। (গণনা. ২৩:১৯) আমরা এও জানি, যিহোবার কাছে তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করার ইচ্ছাও রয়েছে এবং ক্ষমতাও রয়েছে। এই কথাগুলো মাথায় রেখে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, আমাদের এই প্রত্যাশা অবশ্যই পূরণ হবে।
৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব? (গীতসংহিতা ২৭:১৪)
৩ যিহোবা হলেন আমাদের পিতা এবং তিনি আমাদের অনেক ভালোবাসেন। তিনি চান যেন আমরা তাঁর উপর পুরোপুরি নির্ভর করি। (পড়ুন, গীতসংহিতা ২৭:১৪.) * আমরা যখন যিহোবার উপর নির্ভর করব এবং তাঁর উপর প্রত্যাশা রাখব, তখন সমস্যা এলেও আমরা সাহস বজায় রাখতে পারব এবং আনন্দে থাকতে পারব। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কীভাবে আমাদের প্রত্যাশা একটা নোঙর এবং একটা হেলমেটের মতো আমাদের সুরক্ষা জোগায়। এরপর আমরা এও জানতে পারব, কীভাবে আমরা আমাদের প্রত্যাশাকে আরও দৃঢ় করতে পারি।
আমাদের প্রত্যাশা একটা নোঙরের মতো
৪. কীভাবে আমাদের প্রত্যাশা একটা নোঙরের মতো? (ইব্রীয় ৬:১৯)
৪ পৌল ইব্রীয়দের প্রতি যে-চিঠি লিখেছিলেন, সেখানে তিনি বলেছিলেন, আমাদের প্রত্যাশা হল একটা নোঙরের মতো। (পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১৯.) পৌল প্রায়ই জাহাজে করে ভ্রমণ করতেন। তাই, তিনি খুব ভালো করেই জানতেন যে, একটা নোঙর জাহাজকে স্থির থাকতে সাহায্য করে। লক্ষ করুন, একবার কী হয়েছিল। পৌল একটা জাহাজে করে ভ্রমণ করছিলেন। তখন হঠাৎ সমুদ্রে প্রচণ্ড ঝড় ওঠে। সেইসময় পৌল দেখেন, নাবীকেরা সমুদ্রে নোঙর ফেলছে, যাতে জাহাজ সামলে যায় এবং পাথরে ধাক্কা না মারে। (প্রেরিত ২৭:২৯, ৩৯-৪১) কখনো কখনো আমাদের জীবনেও ঝড়ের মতো সমস্যা আসে। সেই সময় আমাদের প্রত্যাশা আমাদের স্থির থাকতে সাহায্য করে, যাতে আমরা যিহোবার কাছ থেকে দূরে চলে না যাই। আমরা অতিরিক্ত চিন্তিত কিংবা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি না কারণ আমরা জানি, এই ঝড় একদিন থেমে যাবে। আর যিশুও বলেছিলেন, আমাদের তাড়না করা হবে। (যোহন ১৫:২০) তাই, আমরা যদি আমাদের প্রত্যাশার উপর মনোযোগ দিই, তা হলে আমাদের বিশ্বাস টলে যাবে না এবং সমস্যা এলেও আমরা যিহোবার সেবা চালিয়ে যেতে পারব।
৫. যিশু যখন মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন প্রত্যাশা কীভাবে তাঁকে বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছিল?
৫ যিশু জানতেন, তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলা হবে। কিন্তু, নিজের প্রত্যাশার কারণে তিনি সেইসময়ও বিশ্বস্ত ছিলেন। ৩৩ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চাশত্তমীর দিনে পিতর তার বক্তৃতায় যিশু সম্বন্ধে লেখা একটা ভবিষ্যদ্বাণীর বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। গীতরচকের বইয়ে লেখা সেই ভবিষ্যদ্বাণী থেকে বোঝা যায় যে, যিশু কোন বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন আর কী করার জন্য হয়তো দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। যিশু যেন এমনটা চিন্তা করছিলেন: ‘আমি প্রত্যাশায় থাকব; কারণ তুমি আমাকে কবরে ত্যাগ করবে না কিংবা তোমার অনুগত ব্যক্তির দেহ ক্ষয় পেতে দেবে না। তোমার সান্নিধ্যে তুমি আমার হৃদয়কে প্রচুর আনন্দে ভরিয়ে দেবে।’ (প্রেরিত ২:২৫-২৮; গীত. ১৬:৮-১১) যিশু জানতেন, তাঁকে মেরে ফেলা হবে। কিন্তু, তাঁর এই বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যাশা ছিল যে, যিহোবা তাঁকে পুনরুত্থিত করবেন এবং তিনি আবারও তাঁর পিতার সঙ্গে স্বর্গে থাকতে পারবেন।—ইব্রীয় ১২:২, ৩.
৬. একজন ভাই তার প্রত্যাশার বিষয়ে কী বলেছিলেন?
৬ প্রত্যাশা থাকার কারণে আমাদের অনেক ভাই-বোন বিভিন্ন পরীক্ষা সহ্য করতে পেরেছে। ভাই লিয়োনার্ড চিন, যিনি ইংল্যান্ডে থাকতেন, তিনিও এই প্রত্যাশার কারণে স্থির থাকতে পেরেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি সেনাবাহিনীতে ভরতি হতে প্রত্যাখ্যান করেন। এই কারণে তাকে জেলে বন্দি করা হয়। তাকে দু-মাস ধরে একাই জেলে রাখা হয় এবং তারপর তাকে দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করানো হয়। ভাই পরে লিখেছিলেন: “সেইসময় আমি শিখি, প্রত্যাশা থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের বড়ো বড়ো পরীক্ষা সহ্য করতে সাহায্য করে। যিশু, তাঁর প্রেরিতেরা এবং অন্য ভাববাদীরা প্রত্যাশা থাকার কারণে পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে পেরেছিলেন। আমরা যখন তাদের বিষয়ে এবং বাইবেলে দেওয়া ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন আমাদের প্রত্যাশা আরও দৃঢ় হয় আর পরীক্ষার সময় আমরা ধৈর্য ধরতে পারি।” ভাই লিয়োনার্ডের জন্য তার প্রত্যাশা একটা নোঙরের মতো ছিল। আমাদের জন্যও এটা একটা নোঙরের মতো কাজ করতে পারে।
৭. পরীক্ষার মুখোমুখি হলে কীভাবে আমাদের প্রত্যাশা আরও দৃঢ় হয়? (রোমীয় ৫:৩-৫; যাকোব ১:১২)
৭ আমরা যখন প্রথম বার বাইবেল থেকে যিহোবার প্রতিজ্ঞার বিষয়ে জেনেছিলাম, তখন আমরা এক প্রত্যাশা পেয়েছিলাম। আমরা যখন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাই এবং যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন, তখন আমাদের এই প্রত্যাশা আরও দৃঢ় হয়। কারণ আমরা জানি, যিহোবা আমাদের দেখে খুশি হচ্ছেন। (পড়ুন, রোমীয় ৫:৩-৫; যাকোব ১:১২.) শয়তান চায়, পরীক্ষার মুখোমুখি হলে আমরা যেন সেটা নিয়ে বেশি চিন্তা করি, উদ্যোগ হারিয়ে ফেলি এবং হাল ছেড়ে দিই। কিন্তু, যিহোবার সাহায্যে আমরা যেকোনো পরীক্ষার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতে পারব।
আমাদের প্রত্যাশা সৈনিকের হেলমেটের মতো
৮. কীভাবে আমাদের প্রত্যাশা একটা হেলমেটের মতো? (১ থিষলনীকীয় ৫:৮)
৮ বাইবেলে এও লেখা আছে, আমাদের প্রত্যাশা হল একটা হেলমেটের মতো। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:৮, পাদটীকা) একজন সৈনিক তার মাথায় হেলমেট পরেন, যাতে শত্রুরা যখন আক্রমণ করে, তখন তার মাথা যেন রক্ষা পায়। আজ শয়তানও আমাদের উপর আলাদা আলাদা উপায়ে আক্রমণ করে। সে আমাদের বিভিন্ন উপায়ে প্রলোভিত করে কিংবা লোভ দেখায় আর চায়, আমরা যেন এমন বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করি, যেগুলো সঠিক নয়। তাই, আমাদের নিজেদের চিন্তাভাবনাকে রক্ষা করতে হবে। যেভাবে একজন সৈনিক হেলমেট পরলে নিজের মাথা রক্ষা করতে পারে, একইভাবে আমরা যদি আমাদের প্রত্যাশা নিয়ে চিন্তা করি, তা হলে আমরা আমাদের চিন্তাভাবনাকে রক্ষা করতে পারব এবং যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারব।
৯. যাদের কাছে কোনো প্রত্যাশা নেই, তারা কীভাবে জীবনযাপন করে?
৯ আমরা যদি মনে রাখি, আমাদের কাছে চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা আছে, তা হলে আমরা আজ ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারব এবং সঠিক বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিতে পারব। কিন্তু, আমরা যদি আমাদের প্রত্যাশার বিষয়ে চিন্তা না করি, তা হলে আমরা শুধু নিজেদের শখ পূরণ করার ক্ষেত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়ব এবং যিহোবা যে-প্রতিজ্ঞাগুলো করেছেন, সেগুলো ভুলে যাব। প্রথম শতাব্দীতে করিন্থের খ্রিস্টানদের প্রতিও এমনই কিছু ঘটেছিল। তারা মনে করছিল, মৃত ব্যক্তিদের বিষয়ে যিহোবা যে-প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেটা পূরণ হবে না। (১ করি. ১৫:১২) পৌল বলেছিলেন, তাদের প্রবণতা হল শুধু বর্তমানে বেঁচে থাকা এবং নিজেদের শখ পূরণ করতেই ব্যস্ত থাকা। (১ করি. ১৫:৩২) আজও যারা যিহোবার প্রতিজ্ঞার বিষয়ে জানে না এবং যাদের কাছে কোনো প্রত্যাশা নেই, তারা আনন্দফুর্তি করতেই ব্যস্ত আছে। তারা মনে করে, ‘কাল কে দেখেছে? যা মন চায়, আজকেই করে নাও!’ কিন্তু, আমরা এই লোকদের মতো নই। যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর উপর আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে। আমাদের প্রত্যাশা একটা হেলমেটের মতো আমাদের চিন্তাভাবনাকে রক্ষা করে, যাতে আমরা শুধু নিজেদের শখ পূরণ করার বিষয়ে চিন্তা না করি। যদি আমরা তা করে চলি, তা হলে এটা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে খারাপ করে ফেলতে পারে।—১ করি. ১৫:৩৩, ৩৪.
১০. আমাদের প্রত্যাশা কোন ভুল চিন্তাভাবনা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে?
১০ অনেকসময় আমাদের মনে হতে পারে, ‘যিহোবা কখনো আমার উপর সন্তুষ্ট হবেন না।’ তবে, প্রত্যাশা এইরকম ভুল চিন্তাভাবনা থেকেও আমাদের রক্ষা করে। যেমন, কিছু লোক চিন্তা করতে পারে, ‘আমি তো কত বার যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে ব্যর্থ হই আর কত ভুল করি। মনে হয় না, আমি চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ পাব।’ ইয়োবের একজন বন্ধু ইলীফস তাকে এইরকমই কিছু বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “মর্ত্ত্য কি যে, সে পবিত্র হইতে পারে?” এরপর, তিনি ঈশ্বর সম্বন্ধে বলেছিলেন: “দেখ, তিনি আপনার পবিত্রগণেও বিশ্বাস করেন না, তাঁহার দৃষ্টিতে আকাশও নির্ম্মল নহে।” (ইয়োব ১৫:১৪, ১৫) তিনি যা বলছিলেন, তা একেবারেই মিথ্যে কথা ছিল। আসলে শয়তান চায়, আমরা যেন এভাবে চিন্তা করি। কারণ সে জানে, আমরা যদি এভাবে চিন্তা করি, তা হলে আমাদের প্রত্যাশা অস্পষ্ট হয়ে যাবে। তাই, আপনার মনে যদি কখনো এইরকম চিন্তা আসে, তা হলে সঙ্গেসঙ্গে সেটা মন থেকে বের করে দিন এবং যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর বিষয়ে চিন্তা করুন। বিশ্বাস করুন, যিহোবা চান যেন আপনি চিরকাল বেঁচে থাকেন আর তিনি আপনাকে সাহায্যও করবেন, যাতে আপনার এই প্রত্যাশা পূরণ হয়।—১ তীম. ২:৩, ৪.
আপনার প্রত্যাশাকে দৃঢ় করে চলুন
১১. যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেন আমাদের ধৈর্য ধরা উচিত?
১১ কখনো কখনো আমাদের পক্ষে ধৈর্য ধরা কঠিন হতে পারে এবং আমাদের প্রত্যাশা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। আমরা চিন্তা করতে পারি, এখনও পর্যন্ত কেন যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করেননি। তবে, আমাদের মনে রাখা উচিত, যিহোবা সবসময় ছিলেন এবং সবসময় থাকবেন। তাই, আমাদের কাছে যেটা এত দীর্ঘসময় বলে মনে হচ্ছে, সেটা যিহোবার কাছে খুবই কম। (২ পিতর ৩:৮, ৯) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা সঠিক সময়ে তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন। তবে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যখন আমরা চাইব, তখনই তিনি তা করবেন। তাই, যতক্ষণ না যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করছেন, ততক্ষণ কীভাবে আমরা নিজেদের প্রত্যাশাকে আরও দৃঢ় করতে পারি?—যাকোব ৫:৭, ৮.
১২. ইব্রীয় ১১:১, ৬ পদ অনুযায়ী প্রত্যাশা রাখার জন্য বিশ্বাস থাকা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
১২ যিহোবাই আমাদের প্রত্যাশা দিয়েছেন আর তিনিই এটা পূরণ করবেন। তাই, আমরা যদি যিহোবার উপর আমাদের বিশ্বাস বাড়াই এবং তাঁর সঙ্গে এক ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলি, তা হলে আমাদের প্রত্যাশা আরও দৃঢ় হবে। বাইবেলে এও বলা হয়েছে, আমরা যখন বিশ্বাস করব, যিহোবা সত্যিই আছেন এবং “যারা আন্তরিকভাবে তাঁর অন্বেষণ করে, তিনি তাদের পুরস্কার দেন,” তখনই আমরা প্রত্যাশা রাখতে পারব যে, তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পূরণ করবেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:১, ৬.) এখন আসুন দেখি, কীভাবে আমরা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে মজবুত করতে পারি, যাতে আমাদের প্রত্যাশা আরও দৃঢ় হয়।
১৩. কীভাবে আমরা যিহোবার নিকটবর্তী হতে পারি?
১৩ যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন এবং বাইবেল পড়ুন। আমরা যিহোবাকে দেখতে পাই না ঠিকই, কিন্তু তারপরও আমরা তাঁর নিকটবর্তী হতে পারি। আমরা প্রার্থনায় যিহোবার সঙ্গে কথা বলতে পারি এবং নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনবেন। (যির. ২৯:১১, ১২) আর আমরা যখন বাইবেল পড়ি এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন আমরা যিহোবার কথা শুনি। আমরা যখন বাইবেল থেকে পড়ি যে, যিহোবা কীভাবে তাঁর বিশ্বস্ত লোকদের সাহায্য করেছেন, তাদের যত্ন নিয়েছেন, তখন আমাদের প্রত্যাশা আরও দৃঢ় হয়। আসলে, বাইবেলে যা-কিছু লেখা আছে, “সেগুলো আমাদের নির্দেশনার জন্য লেখা হয়েছিল, যাতে আমরা শাস্ত্র থেকে ধৈর্য ও সান্ত্বনার মাধ্যমে প্রত্যাশা লাভ করি।”—রোমীয় ১৫:৪.
১৪. অতীতে যিহোবা যেভাবে তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করেছিলেন, কেন আমাদের সেই বিষয়ে চিন্তা করা উচিত?
১৪ চিন্তা করুন, কীভাবে যিহোবা এখনও পর্যন্ত তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করেছেন। অব্রাহাম ও সারার বিষয়ে একটু চিন্তা করুন। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তাদের একটা ছেলে হবে। (আদি. ১৮:১০) কিন্তু, তাদের দু-জনেরই অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের সন্তান হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। তারপরও, অব্রাহামের পুরোপুরি বিশ্বাস ছিল, যিহোবা অবশ্যই তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন। (রোমীয় ৪:১৯-২১) বাইবেলে লেখা আছে: “তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, তিনি বহু জাতির পিতা হয়ে উঠবেন।” (রোমীয় ৪:১৮) আর ঠিক এমনটাই হয়! সঠিক সময়ে যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন এবং তাদের একটা ছেলে হয়। এই ধরনের ঘটনাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে আমাদের বিশ্বাস বাড়বে যে, যিহোবা সবসময় তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন, তা সেটা আমাদের কাছে যতই অসম্ভব বলে মনে হোক না কেন।
১৫. যিহোবা আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, কেন আমাদের তা নিয়ে চিন্তা করা উচিত?
১৫ চিন্তা করুন, যিহোবা আপনার জন্য কী কী করেছেন। যিশু বলেছিলেন, তাঁর পিতা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাবেন। (মথি ৬:৩২, ৩৩) তিনি এও বলেছিলেন, যখনই আমরা যিহোবার কাছে তাঁর পবিত্র শক্তি চাইব, তখনই তিনি আমাদের তা দেবেন। (লূক ১১:১৩) যিহোবা আমাদের কাছে এও প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি আমাদের ক্ষমা করে দেবেন এবং সান্ত্বনা দেবেন আর এমন বিভিন্ন ব্যবস্থা করবেন, যেগুলো থেকে আমরা তাঁর বিষয়ে শিখতে পারব এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মজবুত করতে পারব। (মথি ৬:১৪; ২৪:৪৫; ২ করি. ১:৩) আপনি কি যিহোবার এই সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূরণ হতে দেখেছেন? আপনি যখন এই বিষয়ে চিন্তা করবেন, যিহোবা আপনার জন্য কী কী করেছেন, তখন আপনার প্রত্যাশা আরও দৃঢ় হবে। আপনি নিশ্চিত হবেন, তিনি ভবিষ্যতেও তাঁর প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পূরণ করবেন।
আপনার প্রত্যাশার কারণে আনন্দ করুন
১৬. কেন আমাদের প্রত্যাশা আমাদের কাছে এত মূল্যবান?
১৬ যিহোবা আমাদের চিরকাল বেঁচে থাকার এক অপূর্ব প্রত্যাশা দিয়েছেন। আর আমরা সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, যখন আমাদের এই প্রত্যাশা পূরণ হবে। আমরা নিশ্চিত, এটা পূরণ হবেই। আমাদের প্রত্যাশা একটা নোঙরের মতো আর ঝড়ের মতো সমস্যার সময়েও এটা আমাদের স্থির থাকতে সাহায্য করে। প্রত্যাশার কারণে আমরা তাড়না সহ্য করতে পারি এবং যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি, তা আমাদের জীবন যতই ঝুঁকির মুখে থাকুক না কেন। এ ছাড়া, আমাদের প্রত্যাশা একটা হেলমেটের মতো, এটা আমাদের চিন্তাভাবনাকে রক্ষা করে। এটার মাধ্যমে আমরা খারাপ বিষয়গুলো চিন্তা করার পরিবর্তে ভালো বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিতে পারি। আমাদের প্রত্যাশার কারণে আমরা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে পারি এবং নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি আমাদের খুব ভালোবাসেন। সত্যিই, নিজেদের প্রত্যাশাকে দৃঢ় করলে আমরা অনেক উপকার পাই!
১৭. কেন আমরা প্রত্যাশার কারণে আনন্দ করি?
১৭ পৌল রোমে বসবাসরত খ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “প্রত্যাশায় আনন্দ করো।” (রোমীয় ১২:১২) পৌল আনন্দিত ছিলেন কারণ তিনি জানতেন, বিশ্বস্ত থাকলে তিনি স্বর্গে অনন্তজীবন লাভ করবেন। আমরাও আমাদের প্রত্যাশার কারণে আনন্দে থাকতে পারি কারণ আমরা নিশ্চিত যে, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পূরণ করবেন। একজন গীতরচকও বলেছিলেন: “ধন্য” বা সুখী ‘সেই, যাহার আশাভূমি সদাপ্রভু, তিনি অনন্তকাল সত্য পালন করেন।’—গীত. ১৪৬:৫, ৬.
গান ৫৫ অবশেষে—অনন্ত এই জীবন!
^ যিহোবা আমাদের এক অপূর্ব প্রত্যাশা দিয়েছেন। এই প্রত্যাশার উপর মনোযোগ দিলে আমরা উৎসাহিত হই এবং আমাদের কষ্টের বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হই না। এটা থেকে আমরা সাহস লাভ করি এবং সমস্যা থাকা সত্ত্বেও যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি। এই প্রত্যাশা আমাদের চিন্তাভাবনাকেও রক্ষা করে। এ ছাড়া, যিহোবার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যেতে পারে এমন কোনো চিন্তা এলে, সেটা আমরা আটকাতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা এই তিনটে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব আর দেখব যে, কীভাবে আমরা আমাদের প্রত্যাশাকে দৃঢ় করতে পারি।
^ গীতসংহিতা ২৭:১৪, NW: “যিহোবার উপর প্রত্যাশা রাখো, সাহস করো, তোমার হৃদয়কে শক্তিশালী করো। হ্যাঁ, যিহোবার উপরই প্রত্যাশা রাখো।”
^ ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যেভাবে একটা হেলমেট সৈনিকের মাথা রক্ষা করে আর একটা নোঙর জাহাজকে স্থির থাকতে সাহায্য করে, ঠিক একইভাবে আমাদের প্রত্যাশা আমাদের চিন্তাভাবনাকে সুরক্ষিত রাখে এবং পরীক্ষার মুখোমুখি হলে আমাদের স্থির থাকতে সাহায্য করে। একজন বোন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করছেন এবং তিনি নিশ্চিত, যিহোবা তার প্রার্থনা শুনছেন। একজন ভাই এই বিষয়ে চিন্তা করছেন যে, যিহোবা কীভাবে অব্রাহামের কাছে করা তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করেছিলেন। আরেকজন ভাই চিন্তা করছেন, যিহোবা তার জন্য কী কী করেছেন এবং তাকে কত আশীর্বাদ করেছেন।