সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪১

কীভাবে প্রকৃত সুখ লাভ করা যায়?

কীভাবে প্রকৃত সুখ লাভ করা যায়?

“ধন্য [“সুখী,” NW] সেই জন, যে কেহ সদাপ্রভুকে ভয় করে, যে তাঁহার সকল পথে চলে।”—গীত. ১২৮:১.

গান ১৪ সবই নতুন করা হয়েছে

সারাংশ *

১. (ক) মানুষকে কোন আকাঙ্ক্ষা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে? (খ) এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার ফলে কেন আমরা প্রকৃত সুখ লাভ করি?

 জগতে এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো থেকে আমরা ক্ষণিকের সুখ লাভ করি। তবে, এটা প্রকৃত সুখ নয়। প্রকৃত সুখ সবসময় বজায় থাকে। যিশু তাঁর পর্বতের উপরে দেওয়া উপদেশে বলেছিলেন, কীভাবে আমরা প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারি। তিনি বলেছিলেন, “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা ঈশ্বরের কাছ থেকে নির্দেশনা লাভ করার জন্য আকাঙ্ক্ষী।” (মথি ৫:৩) যিশু জানতেন, মানুষকে ঈশ্বর সম্বন্ধে শেখার এবং তাঁর উপাসনা করার আকাঙ্ক্ষা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা যখন এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করি, তখন আমরা প্রকৃত সুখ লাভ করি। আর যিহোবা নিজেও একজন ‘সুখী ঈশ্বর।’ তাই, আমরা যদি তাঁর উপাসনা করি, তা হলে আমরাও সুখী হতে পারব।—১ তীম. ১:১১.

“সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা সঠিক কাজ করার জন্য তাড়িত হয়।”—মথি ৫:১০ (২-৩ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

২-৩. (ক) মথি ৫:৪, ১০, ১১ পদ অনুযায়ী আমরা কোন কোন পরিস্থিতিতেও সুখী হতে পারি? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব আর তা করা কেন ভালো হবে?

আমরা কি শুধু সেইসময় সুখী হতে পারি, যখন সমস্ত কিছু ভালোভাবে চলছে এবং জীবনে কোনো সমস্যা নেই? না, তা কিন্তু নয়। সমস্যা এলেও আমরা সুখী হতে পারি। লক্ষ করুন, যিশু বলেছিলেন: “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা শোক করে।” এরা এমন ব্যক্তি হতে পারে, যারা আগে কোনো পাপ কিংবা ভুল করেছিল আর এই কারণে অনেক দুঃখের মধ্যে রয়েছে। অথবা তারা সেই ব্যক্তিও হতে পারে, যারা বড়ো বড়ো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করছে এবং খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে। যিশু এও বলেছিলেন, ‘যারা সঠিক কাজ করার জন্য তাড়না’ সহ্য করে এবং যাদের তাঁর শিষ্য হওয়ার জন্য “অপমান” করা হয়, তারাও সুখী হতে পারে। (মথি ৫:৪, ১০, ১১) তবে, এইরকম পরিস্থিতিতে কেউ কীভাবে সুখী হতে পারে?

যিশু আসলে বোঝাতে চাইছিলেন, প্রকৃত সুখ লাভ করার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, আমাদের জীবনে সব কিছু ভালোভাবে চলবে এবং কোনো সমস্যা থাকবে না। এর পরিবর্তে, প্রকৃত সুখ তখনই লাভ করা যায়, যখন আমরা ঈশ্বরের বিষয়ে শিখি, তাঁর উপাসনা করি এবং তাঁর নিকটবর্তী হই। (যাকোব ৪:৮) কীভাবে আমরা তা করতে পারি? এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, প্রকৃত সুখ লাভ করার জন্য আমাদের কোন তিনটে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাইবেল পড়ুন এবং তা নিয়ে অধ্যয়ন করুন

৪. প্রকৃত সুখ লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (গীতসংহিতা ১:১-৩)

প্রথম পদক্ষেপ: প্রকৃত সুখ লাভ করার জন্য আমাদের বাইবেল পড়তে হবে এবং তা নিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে। আমরা খুব ভালো করেই জানি যে, মানুষের এবং জীবজন্তুর বেঁচে থাকার জন্য খাবারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু যিশু বলেছিলেন, মানুষের আরেকটা বিষয়ের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘মানুষ কেবল রুটিতে বাঁচবে না, বরং যিহোবার মুখ থেকে যে-প্রত্যেক বাক্য বের হয়, তাতেই বাঁচে।’ (মথি ৪:৪) যেমন, আমরা প্রতিদিন খাবার খাই, ঠিক একইভাবে আমাদের প্রতিদিন বাইবেল পড়তে হবে এবং তা নিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে। একজন গীতরচক লিখেছিলেন: “ধন্য” বা সুখী ‘সেই ব্যক্তি, যে সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে।’—পড়ুন, গীতসংহিতা ১:১-৩.

৫-৬. (ক) যিহোবা বাইবেলে কী কী লিখিয়েছেন? (খ) কেন আমাদের বাইবেল পড়া উচিত?

যিহোবা আমাদের খুব ভালোবাসেন। তাই, তিনি বাইবেলে লিখিয়েছেন যে, আমরা যদি সুখী হতে চাই, তা হলে আমাদের কী করতে হবে। যেমন, আমরা বাইবেল থেকে জানতে পারি, আমাদের বেঁচে থাকার কী উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, কীভাবে আমরা যিহোবার নিকটবর্তী এবং তাঁর বন্ধু হতে পারি। আমরা বাইবেল থেকে এও জানতে পারি, আমরা যদি চাই, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দিক, তা হলে আমাদের কী করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, বাইবেলে এও আশা দেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে আমরা এক অপূর্ব জীবন উপভোগ করব। (যির. ২৯:১১) আমরা যখন এই বিষয়গুলো শিখি, তখন আমরা অনেক আনন্দিত হই।

এ ছাড়া, বাইবেলে অনেক বিষয়ে উত্তম পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা যখন সেগুলো মেনে চলি, তখন আমার সুখী হতে পারি। তাই, আপনি যখন দুঃখের মধ্যে থাকেন অথবা কোনো বিষয়ে দুশ্চিন্তা করেন, তখন বাইবেল পড়ার জন্য এবং সেখানে লেখা কথাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য আরও সময় বের করুন। যিশু বলেছিলেন, “সুখী তারাই, যারা ঈশ্বরের বাক্য শোনে এবং তা পালন করে চলে!”—লূক ১১:২৮.

৭. (ক) কীভাবে আমাদের বাইবেল পড়া উচিত? (খ) আর এভাবে বাইবেল পড়লে কী হবে?

বাইবেল পড়ার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না বরং সেটি ধীরে ধীরে পড়ুন। আপনার প্রতি কখনো কি এমনটা হয়েছে, কেউ আপনাকে আপনার পছন্দের খাবার বানিয়ে দিয়েছে, কিন্তু আপনি যখন খেতে বসলেন, তখন আপনার মন অন্য কোথাও ছিল? অথবা আপনার হাতে কম সময় ছিল বলে আপনি সেটা তাড়াহুড়ো করে খেয়েছেন এবং সেটা উপভোগ করতে পারেননি? কিন্তু পরে আপনি চিন্তা করেছেন, ‘আমি যদি সেটা ধীরে ধীরে খেতাম এবং উপভোগ করতাম, তা হলে কতই-না ভালো হত!’ বাইবেল পড়ার সময়ও আমাদের প্রতি এইরকম কিছু হতে পারে। আমরা হয়তো তাড়াহুড়ো করে পড়ি এবং তাতে যে-শিক্ষণীয় বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলোর উপর মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হই। তাই, আপনি যখন বাইবেল পড়েন, তখন তাড়াহুড়ো করে পড়বেন না। কোনো ঘটনা পড়ার সময় সেই বিষয়ে কল্পনা করুন। চিন্তা করুন, সেই সময় কী কী ঘটছে, আশেপাশে থেকে কেমন আওয়াজ আসছে এবং এই ঘটনা থেকে আপনি কী শিখতে পারেন। এভাবে বাইবেল পড়লে আপনার ভালো লাগবে এবং আপনি অনেক আনন্দিত হবেন।

৮. কীভাবে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস” তাদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করছে? (এ ছাড়া, পাদটীকা দেখুন।)

যিশু ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসকে’ নিযুক্ত করেছেন, যাতে তারা আমাদের ‘উপযুক্ত সময়ে খাবার’ দিতে পারে। আজ এই দাস তাদের দায়িত্ব খুব ভালোভাবে পালন করছে আর আমাদের কাছে অনেক প্রকাশনা আছে। * (মথি ২৪:৪৫) এই বিশ্বস্ত দাস যে-প্রকাশনাগুলো জোগায়, সেগুলো সবই বাইবেলের উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়। (১ থিষল. ২:১৩) আমরা যখন এগুলো পড়ি, তখন আমরা জানতে পারি, কোনো বিষয়ে যিহোবা কী চিন্তা করেন। তাই, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা প্রহরীদুর্গসজাগ হোন! পত্রিকা পড়ি, jw.org ওয়েবসাইটে যে-প্রবন্ধগুলো আসে, সেগুলো পড়ি, সভাগুলোর জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিই আর প্রত্যেক মাসে JW ব্রডকাস্টিং দেখি। আমরা যখন বাইবেল এবং এই প্রকাশনাগুলো পড়ব, তখন আমরা দ্বিতীয় পদক্ষেপও নিতে পারব, যেটার ফলে আমরা প্রকৃত সুখ লাভ করব।

যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করুন

৯. প্রকৃত সুখ লাভ করার জন্য আমাদের আর কী করতে হবে?

দ্বিতীয় পদক্ষেপ: প্রকৃত সুখ লাভ করার জন্য আমাদের যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। একজন গীতরচক বলেছিলেন: “[সুখী] সেই জন, যে কেহ সদাপ্রভুকে ভয় করে, যে তাঁহার সকল পথে চলে।” (গীত. ১২৮:১) যিহোবাকে ভয় করার অর্থ এই নয় যে, আমাদের সবসময় ভয়ে ভয়ে জীবন কাটাতে হবে। বরং এর অর্থ হল, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যেন এমন কোনো কাজ না করি, যেটা যিহোবা পছন্দ করেন না। (হিতো. ১৬:৬) বাইবেলে যিহোবা লিখিয়েছেন, তাঁর চোখে কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল। আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত, আমরা যেন তাঁর এই মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি। (২ করি. ৭:১) আমরা যদি এমন কাজ করি, যেটা যিহোবা পছন্দ করেন এবং এমন কাজ না করি, যেটা তিনি পছন্দ করেন না, তা হলে আমরা সুখী হব।—গীত. ৩৭:২৭; ৯৭:১০; রোমীয় ১২:৯.

১০. রোমীয় ১২:২ পদ অনুযায়ী যিহোবার মানগুলো জানার পাশাপাশি আমাদের আর কী করতে হবে?

১০ রোমীয় ১২:২ পদ পড়ুন। একজন ব্যক্তি হয়তো জানেন, একমাত্র যিহোবারই সঠিক ও ভুলের বিষয়ে মান স্থির করার অধিকার আছে। তবে, শুধু এটুকু জানাই যথেষ্ট নয়। তাকে সেই মান অনুযায়ী জীবনযাপনও করতে হবে। এটা বোঝার জন্য একটা উদাহরণ লক্ষ করুন। একজন ব্যক্তি হয়তো জানেন যে, একটা রাস্তায় কত গতিতে গাড়ি চালানো যেতে পারে, এটা সরকারেরই স্থির করার অধিকার আছে। তবে, তিনি যেভাবে গাড়ি চালাবেন, তা থেকে বোঝা যাবে, তিনি সেই নিয়ম পালন করছেন কি না। ঠিক একইভাবে, আমরা যেভাবে জীবনযাপন করি, তা থেকে বোঝা যাবে, আমরা সত্যিই বিশ্বাস করি কি না, যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করলে আমাদের মঙ্গল হয়। (হিতো. ১২:২৮) দায়ূদও বিশ্বাস করতেন, যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করলে সুখী হওয়া যায়। তাই, তিনি বলেছিলেন: “তুমি আমাকে জীবনের পথ জ্ঞাত করিবে, তোমার সম্মুখে তৃপ্তিকর আনন্দ, তোমার দক্ষিণ হস্তে নিত্য সুখভোগ।”—গীত. ১৬:১১.

১১-১২. (ক) আমরা যখন খুবই দুঃখের কিংবা দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি, তখন আমাদের কী খেয়াল রাখা উচিত? (খ) ফিলিপীয় ৪:৮ পদের কথাগুলো মাথায় রেখে আমরা কীভাবে স্থির করতে পারি যে, কোনো একটা বিনোদন সঠিক কি না?

১১ আমরা যখন কোনো কারণে খুবই দুঃখের কিংবা দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি, তখন আমরা হয়তো সেই কষ্ট ভুলে থাকার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজি। কিন্তু, এইরকম সময়ে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত যেন আমরা এমন কিছু করে না ফেলি, যেটা যিহোবা ঘৃণা করেন।—ইফি. ৫:১০-১২, ১৫-১৭.

১২ পৌল ফিলিপীর খ্রিস্টানদের প্রতি যে-চিঠি লিখেছিলেন, সেখানে তিনি তাদের বলেছিলেন, ‘যা-কিছু ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সঠিক, যা-কিছু শুদ্ধ, যা-কিছু প্রীতিজনক, যা-কিছু প্রশংসনীয়, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করো।’ (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৮.) যদিও পৌল এখানে বিনোদনের বিষয়ে বলছেন না, তবে আপনি যখন চিন্তা করবেন, আপনার ফ্রি টাইমে কী করবেন, তখন আপনি এই পদের বিষয়ে চিন্তা করতে পারেন। যেমন, কোনো সিনেমা দেখার আগে আপনি চিন্তা করতে পারেন, ‘এই সিনেমা কি “ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সঠিক”? এটা কি “শুদ্ধ”? এটা কি “প্রীতিজনক”? এটা কি “প্রশংসনীয়”?’ একইভাবে, কোনো গান শোনার আগে, কোনো বই পড়ার আগে কিংবা কোনো ভিডিও গেম খেলার আগে আপনি নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারেন। এভাবে চিন্তা করলে আপনি জানতে পারবেন, যিহোবার চোখে কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল। আমরা যদি যিহোবার উচ্চ নৈতিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি, তা হলে আমাদের বিবেক শুদ্ধ থাকবে। (গীত. ১১৯:১-৩; প্রেরিত ২৩:১) এরপর আমরা তৃতীয় পদক্ষেপ নিতে পারব, যেটার ফলে আমরা প্রকৃত সুখ লাভ করব।

যিহোবার উপাসনাকে জীবনে প্রথম স্থানে রাখুন

১৩. যোহন ৪:২৩, ২৪ পদ অনুযায়ী প্রকৃত সুখ লাভ করার জন্য আমাদের আর কী করতে হবে?

১৩ তৃতীয় পদক্ষেপ: যিহোবার উপাসনাকে জীবনে প্রথম স্থানে রাখুন। যিহোবাই আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তাই আমাদের একমাত্র তাঁরই উপাসনা করা উচিত আর খেয়াল রাখা উচিত, কোনো বিষয়ই যেন তাঁর উপাসনা করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। (প্রকা. ৪:১১; ১৪:৬, ৭) আর আমাদের ঠিক সেভাবেই তাঁর উপাসনা করা উচিত, যেভাবে তিনি চান অর্থাৎ “পবিত্র শক্তির পরিচালনায় এবং সত্যের সঙ্গে মিল রেখে।” পবিত্র শক্তি বাইবেলে লেখা সত্যগুলো বুঝতে এবং সেই অনুযায়ী যিহোবার উপাসনা করতে আমাদের সাহায্য করে। (পড়ুন, যোহন ৪:২৩, ২৪.) আমাদের কাজের উপর যখন বিধি-নিষেধ অথবা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তখনও আমাদের যিহোবার উপাসনা করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাওয়া উচিত নয়। শুধুমাত্র যিহোবার উপাসনা করার কারণে বর্তমানে আমাদের ১০০ জনেরও বেশি ভাই-বোন জেলে রয়েছে। * জেলেও এই ভাই-বোনেরা অবিরত যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে, যতটা সম্ভব ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করে আর অন্যদের কাছে যিহোবা এবং তাঁর রাজ্যের বিষয়ে বলে। এর কারণে তারা আনন্দে থাকে। আমাদেরও যদি বদনাম করা হয় কিংবা তাড়না করা হয়, তা হলে আমরা মনে রাখতে পারি, যিহোবা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন এবং সঠিক সময়ে তিনি আমাদের পুরস্কার দেবেন। এভাবে আমরা আনন্দে থাকতে পারব।—যাকোব ১:১২; ১ পিতর ৪:১৪.

পরীক্ষা সত্ত্বেও কীভাবে একজন ভাই সুখী হতে পেরেছিলেন?

১৪. তাজিকিস্তানে আমাদের একজন ভাইয়ের প্রতি কী ঘটেছিল?

১৪ আমাদের এমন অনেক ভাই-বোন রয়েছে, যারা বড়ো বড়ো পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। তবে, তারা সেই তিনটে পদক্ষেপ নিয়েছে, যেগুলোর বিষয়ে আমরা এই প্রবন্ধে আলোচনা করেছি আর এই কারণে তারা আনন্দিত ছিল। সম্প্রতি তাজিকিস্তানে থাকা আমাদের একজন ভাইয়ের উপরও বিভিন্ন পরীক্ষা এসেছিল। ভাইয়ের নাম হল জোভিডন বোবোজোনোভ। তার বয়স যখন ১৯ বছর ছিল, তখন তাকে সেনাবাহিনীতে ভরতি হওয়া জন্য বলা হয়, কিন্তু তিনি বারণ করে দেন। তাই, ৪ অক্টোবর ২০১৯ সালে পুলিশ তাকে তার ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং কয়েক মাস ধরে বন্দি করে রাখে। তারা ভাইয়ের সঙ্গে একজন অপরাধীর মতো আচরণ করে। আলাদা আলাদা দেশের মিডিয়া জানায় যে, ভাইয়ের প্রতি কী কী করা হচ্ছে। খবরে দেখানো হয়, তাকে অনেক মারধর করা হয়েছে, অফিসারেরা তাকে সেনাবাহিনীতে ভরতি হওয়ার জন্য শপথ নিতে এবং সৈন্যের পোশাক পরার জন্য জোরাজুরি করেছে। কিছুসময় পর, আদালত তাকে শাস্তির রায় দেয় এবং তার জেল হয়। কিন্তু, এর কিছুসময় পর, তাজিকিস্তানের রাষ্ট্রপতি তাকে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেন। তবে, এই পরীক্ষার সময়েও জোভিডন আনন্দিত থাকতে এবং যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পেরেছিলেন। কেন তিনি তা করতে পেরেছিলেন? কারণ তিনি যিহোবার সঙ্গে এক মজবুত সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।

জোভিডন যিহোবা সম্বন্ধে ক্রমাগত শেখেন, তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করে চলেন এবং তাঁর উপাসনাকে জীবনে প্রথম স্থানে রাখেন (১৫-১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. জোভিডন জেলে থাকার সময়ে কীভাবে যিহোবা সম্বন্ধে ক্রমাগত শেখেন?

১৫ জোভিডন যখন জেলে ছিলেন, তখন তার কাছে বাইবেলে কিংবা অন্য কোনো প্রকাশনা ছিল না। তারপরও, তিনি যিহোবা সম্বন্ধে ক্রমাগত শেখেন। কীভাবে? যে-ভাই-বোনেরা জেলে তার জন্য খাবার নিয়ে আসত, তারা খাবারের ব্যাগের উপরে প্রতিদিনের শাস্ত্রপদ লিখে দিত। এভাবে, জোভিডন প্রতিদিন বাইবেলের পদ পড়তে পারতেন এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারতেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর জোভিডন বলেন, “যে-ভাই-বোনেরা এখনও পর্যন্ত কোনো বড়ো পরীক্ষার মুখোমুখি হয়নি, তাদের আমি শুধু এটা বলতে চাই, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের কাছে স্বাধীনতা আছে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আপনারা ক্রমাগত বাইবেল এবং আমাদের প্রকাশনা পড়েন আর যিহোবার বিষয়ে যতটা সম্ভব শিখে চলেন।”

১৬. জেলে থাকার সময়ে জোভিডন কোন বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতেন?

১৬ জোভিডন যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করে চলেন। খারাপ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করার পরিবর্তে তিনি চিন্তা করেন, যিহোবা কী পছন্দ করেন আর নিজের আচার-আচরণ ভালো রাখেন। যখনই তিনি সুযোগ পেতেন, তখনই তিনি যিহোবার সৃষ্টি মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ করতেন। প্রতিদিন সকালে তিনি পাখিদের কিচিরমিচির এবং গান শুনতেন আর রাতে, আকাশে চাঁদ ও তারা দেখতেন। তিনি বলেন: “যিহোবার এই সৃষ্টিগুলো আমার কাছে কোনো উপহারের চেয়ে কম ছিল না। এগুলো থেকে আমি অনেক আনন্দিত হই এবং উৎসাহ লাভ করি।” আমরাও যখন যিহোবার সৃষ্টিগুলো লক্ষ করব এবং ক্রমাগত বাইবেল পড়ব, তখন আমরা সুখী হতে পারব। আর আমাদের জীবনে যখন বড়ো বড়ো পরীক্ষা আসবে, তখন আমরা সাহসের সঙ্গে সেগুলোর মোকাবিলা করতে পারব।

১৭. পরীক্ষা এলে আমরা যদি জোভিডনের মতো বিশ্বস্ত থাকি, তা হলে ১ পিতর ১:৬, ৭ পদ অনুযায়ী কী হবে?

১৭ জোভিডন যিহোবার উপাসনাকে জীবনে প্রথম স্থানে রাখেন। যিশু বলেছিলেন: “তোমার ঈশ্বর যিহোবাকেই উপাসনা করবে এবং একমাত্র তাঁকেই পবিত্র সেবা প্রদান করবে।” (লূক ৪:৮) জোভিডনও জানতেন যে, জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, তিনি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন। সেনার অফিসার এবং সৈন্যেরা অনেক চেষ্টা করেছিল, যাতে তিনি যিহোবার উপাসনা করা বন্ধ করে দেন। কিন্তু, তিনি যিহোবার কাছে দিনরাত প্রার্থনা করতেন, যাতে যিহোবা তাকে তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহস জোগান। অফিসারেরা তার সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করেছিল। তারপরও, জোভিডন হাল ছেড়ে দেননি, তিনি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। তাকে তার ঘর থেকে তুলে আনা হয়েছিল, মারধর করা হয়েছিল এবং জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। এই সমস্ত কিছু তার বিশ্বাসকে পরীক্ষিত করেছিল। তবে, এখন তিনি খুব খুশি কারণ তার বিশ্বাস আগের চেয়ে আরও মজবুত হয়েছে।—পড়ুন, ১ পিতর ১:৬, ৭.

১৮. পরীক্ষা এলেও আমরা কীভাবে সুখী হতে পারি?

১৮ যিহোবা জানেন, কীভাবে আমরা প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারি। আর তিনি আমাদের বলেছেন, এটা পাওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে। আপনি যদি এই তিনটে পদক্ষেপ নেন, যেগুলো এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে, তা হলে আপনার জীবনে যতই পরীক্ষা আসুক না কেন, আপনি সুখী হতে পারবেন। তখন আপনিও গীতরচকের মতো বলতে পারবেন: “ধন্য” বা সুখী “সেই জাতি, সদাপ্রভু যার ঈশ্বর।”—গীত. ১৪৪:১৫.

গান ১২০ শ্রবণ করো, বাধ্য হও ও আশীর্বাদ লাভ করো

^ কিছু লোক মনে করে, যদি তারা আনন্দফুর্তি করে, অনেক টাকাপয়সা রোজগার করে আর তাদের খ্যাতি, ক্ষমতা এবং এক সুনাম থাকে, তা হলে তারা সুখী হতে পারবে। কিন্তু, এগুলো থেকে প্রকৃত সুখ লাভ করা যায় না। পৃথিবীতে থাকার সময় যিশু বলেছিলেন, প্রকৃত সুখ লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কোন তিনটে পদক্ষেপ নিলে আমরা প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারি।

^ ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “আপনি কি ‘উপযুক্ত সময়ে খাদ্য’ পাচ্ছেন?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

^ আরও তথ্য জানার জন্য jw.org ওয়েবসাইটে “Jehovah’s Witnesses Imprisoned for Their Faith” সার্চ করুন।

^ ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: ভাই-বোনদের যখন গ্রেপ্তার করে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন অনেকসময় অন্য ভাই-বোনেরা আশেপাশে দাঁড়িয়ে তাদের উৎসাহিত করে।