সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৩

প্রকৃত প্রজ্ঞা উচ্চস্বরে ডাকে!

প্রকৃত প্রজ্ঞা উচ্চস্বরে ডাকে!

“প্রজ্ঞা [“প্রকৃত প্রজ্ঞা,” NW] বাহিরে উচ্চৈঃস্বরে ডাকে, চকে চকে নিজ রব ছাড়ে।”—হিতো. ১:২০.

গান ১১ যিহোবার চিত্তকে আনন্দিত করা

সারাংশ *

১. আমরা যখন লোকদের কাছে বাইবেলের প্রজ্ঞার কথাগুলো বলি, তখন কিছু লোক কী করে? (হিতোপদেশ ১:২০, ২১)

 অনেক দেশে আমাদের ভাই-বোন ভিড় রাস্তায় লোকদের কাছে প্রচার করে থাকে। তারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আনন্দের সঙ্গে অন্যদের সাক্ষ্য দেয়। আপনি কি কখনো লোকদের কাছে এভাবে প্রচার করেছেন এবং তাদের পড়ার জন্য কিছু দিয়েছেন? সেইসময় আপনি হয়তো হিতোপদেশ বইয়ের এই কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করেছেন। সেটা হল, প্রকৃত প্রজ্ঞা রাস্তায় রাস্তায় উচ্চস্বরে ডাকে, যাতে লোকেরা তা শুনতে পায়। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১:২০, ২১.) বাইবেল এবং আমাদের প্রকাশনাগুলোতে “প্রকৃত প্রজ্ঞা” অর্থাৎ যিহোবার প্রজ্ঞার কথাগুলো পাওয়া যায়। তাই, যখনই লোকেরা আমাদের কাছ থেকে কোনো প্রকাশনা নেয়, তখন আমরা খুব খুশি হই কারণ সেখানে দেওয়া কথাগুলো পড়লে পরবর্তী সময় তারা হয়তো অনন্তজীবন লাভ করতে পারবে। তবে, প্রত্যেকে আমাদের প্রকাশনা নেয় না। আবার কিছু লোক শুনতেই চায় না যে, বাইবেলে কী বলা হয়েছে। কিছু লোক আমাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করে কারণ তারা মনে করে, বাইবেল অনেক পুরোনো বই এবং এটিতে লেখা কথাগুলো আজ আমাদের কোনো কাজে আসবে না। আবার কিছু লোক বাইবেলের মানগুলো পছন্দ করে না এবং নিজেদের ইচ্ছামতো জীবনযাপন করে। এই লোকেরা আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপভাবে কথা বলে কারণ তারা মনে করে, আমরা একটু বেশিই আইনকানুন মেনে চলি। যদিও আজ কিছু লোক যিহোবার প্রজ্ঞার কথাগুলো শুনতে চায় না, তারপরও যিহোবা প্রত্যেককে প্রকৃত প্রজ্ঞা লাভ করার সুযোগ দিচ্ছেন। তিনি কীভাবে তা করছেন?

২. কোথা থেকে আমরা প্রকৃত প্রজ্ঞা লাভ করতে পারি? কিন্তু বেশিরভাগ লোক কী করে?

যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে প্রজ্ঞার কথাগুলো শেখান। আজ প্রায় প্রত্যেকেই সেই ভাষায় বাইবেল পড়তে পারে, যে-ভাষা তারা বুঝতে পারে। যিহোবা বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাগুলোর মাধ্যমেও আমাদের শেখাচ্ছেন। এই প্রকাশনাগুলো ১,০০০-রেরও বেশি ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে। যারা যিহোবার কথাগুলো শোনে অর্থাৎ বাইবেল এবং বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাগুলো পড়ে এবং সেখানে লেখা কথাগুলো মেনে চলে, তারা উপকার পায়। কিন্তু, বেশিরভাগ লোক যিহোবার কথা শোনে না। যখনই তাদের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখনই তারা নিজেদের মনের কথা শোনে কিংবা অন্যদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়। আর কেউ যখন বাইবেলে লেখা কথাগুলো মেনে চলে, তখন অনেকসময় তারা তাকে অপমান করে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কেন লোকেরা এমনটা করে। কিন্তু আসুন, প্রথমে আমরা দেখি, যিহোবার কাছ থেকে প্রজ্ঞা লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে।

যিহোবা সম্বন্ধে জানুন এবং প্রজ্ঞা লাভ করুন

৩. প্রকৃত প্রজ্ঞা বলতে কী বোঝায়?

প্রজ্ঞা একজন ব্যক্তিকে ভেবে-চিন্তে কাজ করতে এবং ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। কিন্তু, প্রকৃত প্রজ্ঞা বলতে আরও কিছু বোঝায়। এই বিষয়ে বাইবেলে লেখা আছে, “সদাপ্রভুকে ভয় করাই প্রজ্ঞার আরম্ভ, পবিত্রতম-বিষয়ক জ্ঞানই সুবিবেচনা।” (হিতো. ৯:১০) তাই, যখনই আমাদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন আমাদের যিহোবার চিন্তাভাবনা জানার চেষ্টা করা উচিত। কীভাবে আমরা তা জানতে পারি? বাইবেল এবং বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাগুলো পড়ার মাধ্যমে। আর একবার আমরা যখন যিহোবার চিন্তাভাবনা জানতে পারব, তখন আমাদের সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটা থেকে বোঝা যাবে যে, আমাদের মধ্যে প্রকৃত প্রজ্ঞা আছে।—হিতো. ২:৫-৭.

৪. কেন আমরা বলতে পারি, যিহোবার কাছ থেকেই আমরা প্রকৃত প্রজ্ঞা লাভ করতে পারি?

আমরা যিহোবার কাছ থেকেই প্রকৃত প্রজ্ঞা লাভ করতে পারি। (রোমীয় ১৬:২৭) কেন আমরা তা বলতে পারি? তিনটে বিষয়ের উপর মনোযোগ দিন। প্রথমত, তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তাঁর সৃষ্টির বিষয়ে সব কিছু জানেন। (গীত. ১০৪:২৪) দ্বিতীয়ত, তিনি যা-কিছু করেন, তা থেকে বোঝা যায়, তিনি কতটা প্রজ্ঞাবান। (রোমীয় ১১:৩৩) তৃতীয়ত, যিহোবার পরামর্শ মেনে চললে সবসময় উপকার পাওয়া যায়। (হিতো. ২:১০-১২) আমরা যখন এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করব, তখন আমরা নিশ্চিত হব যে, একমাত্র যিহোবাই প্রকৃত প্রজ্ঞা দিতে পারেন। এরপর, যেকোনো কাজ করার আগে কিংবা যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা যিহোবার চিন্তাভাবনা জানার চেষ্টা করব।

৫. লোকেরা যখন যিহোবার কথা না শুনে নিজেদের ইচ্ছামতো জীবনযাপন করে, তখন কী হয়?

আজ জগতের অনেক লোক সৃষ্টি দেখে বলে থাকে, এটা কত অসাধারণ। কিন্তু, তারা এটা বিশ্বাস করে না যে, কেউ এগুলো সৃষ্টি করেছে। তারা বিবর্তনবাদের শিক্ষায় বিশ্বাস করে। আবার এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যারা ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করে। কিন্তু, তারা বাইবেলে লেখা বিষয়গুলো মানতে চায় না এবং নিজেদের ইচ্ছামতো জীবনযাপন করে। তারা মনে করে, তাদের ঈশ্বরের কোনো প্রয়োজন নেই, তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারে। কিন্তু, ঈশ্বরের কথা শোনার পরিবর্তে নিজেদের বুদ্ধি ব্যবহার করে তারা কি আজ সত্যিই আনন্দে রয়েছে? তাদের কাছে কি ভবিষ্যতের জন্য কোনো আশা রয়েছে? এর ফলে কি পৃথিবীর অবস্থা ভালো হয়ে গিয়েছে? না। তাই, বাইবেলে লেখা এই কথাগুলোর উপর আমাদের বিশ্বাস বেড়ে যায়: “নাহি জ্ঞান,” বা প্রজ্ঞা “নাহি বুদ্ধি, নাহি মন্ত্রণা—সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে।” (হিতো. ২১:৩০) সত্যিই, একমাত্র যিহোবাই আমাদের প্রকৃত প্রজ্ঞা দিতে পারেন। তাই, এটা জেনে আমাদের কি তাঁর কাছ থেকে প্রজ্ঞা চাইতে ইচ্ছা করে না? এখন আসুন আমরা দেখি, কেন অনেক লোক যিহোবার কথা শুনতে চায় না।

কেন অনেক লোক যিহোবার প্রজ্ঞার কথা শুনতে চায় না?

৬. হিতোপদেশ ১:২২-২৫ পদ অনুযায়ী কারা প্রকৃত প্রজ্ঞার কথা শুনতে চায় না?

যখন “[প্রকৃত] প্রজ্ঞা বাহিরে উচ্চৈঃস্বরে ডাকে,” তখন অনেক লোক বলতে গেলে নিজেদের কান বন্ধ করে নেয়। বাইবেল জানায়, তিন ধরনের লোক আছে, যারা যিহোবার প্রজ্ঞার কথা শুনতে চায় না: “অবোধেরা,” “নিন্দকেরা” এবং “হীনবুদ্ধিরা।” (পড়ুন, হিতোপদেশ ১:২২-২৫.) আসুন দেখি, কেন এই ধরনের লোকেরা ঈশ্বরের কথা শুনতে চায় না আর আমরা কী করতে পারি, যাতে আমরা তাদের মতো না হই।

৭. কেন কিছু লোক ‘অবোধ’ হয়ে থাকে?

“অবোধেরা” দ্রুত অন্যদের কথায় বিশ্বাস করে নেয় এবং খুব সহজেই লোকেরা তাদের বোকা বানায়। (হিতো. ১৪:১৫) আজ জগতে এমন অনেক লোক রয়েছে, যারা নেতাদের এবং ধর্মীয় গুরুদের কথায় খুব বিশ্বাস করে। তারা যা বলে, লোকেরা সেটাই করার জন্য প্রস্তুত থাকে। পরে, যখন এই বিষয়টা লোকেরা জানতে পারে যে, তাদের এত সময় ধরে বোকা বানানো হয়েছে, তখন তাদের মধ্যে কিছু লোক একেবারে আশ্চর্য হয়ে যায়। তবে, এমন কিছু লোকও রয়েছে, যাদের কিছুই যায়-আসে না। তারা অবোধ হয়েই থাকতে চায়। তাদের এই গুরুদের অনুসরণ করতে খুব ভালো লাগে। (যির. ৫:৩১) প্রচার করার সময় এইরকম অনেক লোকের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়। তারা জানতেই চায় না যে, বাইবেলে কী লেখা আছে এবং তাদের যেটা ঠিক লাগে, তারা কেবল সেটাই করে। কানাডার কুইবেক শহরে একজন ভাইয়ের সঙ্গে এইরকমই একজন মহিলার দেখা হয়। সেই মহিলা তার পাদরির কথায় খুব বিশ্বাস করতেন। তিনি সেই ভাইকে বলেন, “আমাদের পাদরি যদি ভুল শিক্ষা দেয়, তাতে আমরা কী করতে পারি? এটা তো তার সমস্যা!” আমরা এই লোকদের মতো একদমই হতে চাই না, যারা জেনে-বুঝে অবোধ হয়ে থাকতে চায়।—হিতো. ১:৩২; ২৭:১২.

৮. একজন পরিপক্ব ব্যক্তি হওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি?

বাইবেলে এও লেখা আছে: ‘[অবোধের] মতো হোয়ো না, বরং বোঝার ক্ষমতার ক্ষেত্রে পরিপক্ব হও।’ (১ করি. ১৪:২০) আমরা যদি বাইবেলের নীতিগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করি, তা হলে আমরা পরিপক্ব হতে পারব। ধীরে ধীরে আমরা দেখতে পারব, বাইবেলের নীতিগুলো মেনে চলার ফলে আমরা কত উপকার পাচ্ছি। আমরা সমস্যায় পড়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি। চিন্তা করুন, আপনি এখনও পর্যন্ত যা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেগুলো কেমন ছিল। আপনি কি অনেক বছর ধরে বাইবেল অধ্যয়ন করছেন এবং সভায় আসছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেননি এবং বাপ্তিস্ম নেননি? যদি এমনটা হয়, তা হলে চিন্তা করুন, কোন বিষয়টা আপনাকে তা করতে বাধা দিচ্ছে। অথবা আপনি যদি ইতিমধ্যে বাপ্তিস্ম নিয়ে থাকেন, তা হলে আপনি কি লোকদের কাছে আরও ভালোভাবে প্রচার করার এবং তাদের শেখানোর জন্য প্রচেষ্টা করছেন? আপনি কি বাইবেলের নীতিগুলো অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেন? আপনি কি লোকদের সঙ্গে সেভাবে আচরণ করেন, যেভাবে যিশু করতেন? আপনার যদি মনে হয়, কোনো জায়গায় আপনার উন্নতি করার প্রয়োজন আছে, তা হলে যিহোবার দেওয়া নির্দেশনাগুলোর উপর মনোযোগ দিন। তাঁর নির্দেশনাগুলো “অল্পবুদ্ধির জ্ঞানদায়ক।”—গীত. ১৯:৭.

৯. হিতোপদেশ ১:২২ পদে লেখা দ্বিতীয় ধরনের লোক কারা আর তারা কী করে?

হিতোপদেশ ১:২২ পদে ‘নিন্দকদের’ বিষয়েও বলা হয়েছে। বাইবেলে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল, শেষকালে এইরকম লোকদের কোনো অভাব হবে না। (২ পিতর ৩:৩, ৪) অতীত কালে, লোটের জামাইরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া সতর্কবাণীর প্রতি মনোযোগ দেয়নি। (আদি. ১৯:১৪) ঠিক একইভাবে, আজ যখন আমরা লোকদের কাছে প্রচার করি, তখন কিছু লোক আমাদের কথায় মনোযোগ দেয় না। উলটে তারা আমাদের নিয়েই হাসিঠাট্টা করে। (গীত. ১২৩:৪) এই লোকেরা ‘নিজেদের মন্দ আকাঙ্ক্ষার পিছনে ছুটতে’ চায়, তাই তারা সেই ব্যক্তিদের নিয়ে হাসাহাসি করে কিংবা উপহাস করে, যারা বাইবেলের নীতিগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করে। (যিহূদা ৭, ১৭, ১৮) আর দেখা যায়, যে-লোকেরা ধর্মভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছে কিংবা যারা যিহোবার বিষয়ে শিখতেই চায় না, তারা এমনটাই করে থাকে।

১০. আমরা যদি ‘নিন্দকদের’ মতো হতে না চাই, তা হলে আমাদের কী করতে হবে? (গীতসংহিতা ১:১)

১০ আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা ‘নিন্দকদের’ মতো না হই। এরজন্য, আমাদের কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। যেমন, আমাদের সেই লোকদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে, যারা সবসময় অন্যদের দোষ ধরে বেড়ায়। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১:১.) ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিরা এইরকমই অন্যদের দোষ ধরে বেড়ায়। তাই, আমাদের তাদের কথা শোনা উচিত নয় আর সেইসঙ্গে তাদের লেখা কোনো প্রবন্ধও পড়া উচিত নয়। আমরা যদি এমন লোকদের সঙ্গে সময় কাটাই, তা হলে আমরাও তাদের মতো হয়ে যাব। একসময়, আমরা হয়তো প্রত্যেকটা বিষয় নিয়ে অভিযোগ করতে শুরু করব। অথবা আমরা হয়তো সন্দেহ করতে শুরু করব, ‘সত্যিই কি যিহোবা এই সংগঠনকে পরিচালনা দিচ্ছেন? আজ আমরা যে-নির্দেশনাগুলো পাচ্ছি, সেগুলো কি সঠিক?’ আমাদের খেয়াল রাখা উচিত, আমরা যেন কখনো এমনটা না করি। তাই, একটু থেমে চিন্তা করুন: ‘যখন আমরা কোনো নতুন নির্দেশনা পাই অথবা আগে আমরা একটা বিষয়কে যেভাবে বুঝতাম, তাতে কোনো রদবদল করা হয়, তখন আমরা কি সঙ্গেসঙ্গে সেটা মেনে চলার চেষ্টা করি, না কি সেটার মধ্যে খুঁত বের করতে শুরু করি? যে-ভাইয়েরা সংগঠনে নেতৃত্ব নেয়, আমরা কি তাদের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বেড়াই?’ আপনার যদি মনে হয়, আপনি এমনটা করতে শুরু করেছেন, তা হলে দেরি না করে নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। তখন যিহোবা আপনাকে দেখে খুশি হবেন।—হিতো. ৩:৩৪, ৩৫.

১১. কাদের ‘হীনবুদ্ধি’ বলা হয়েছে?

১১ তৃতীয় ধরনের লোকেরা হল “হীনবুদ্ধিরা,” যারা প্রকৃত প্রজ্ঞার উচ্চস্বর শোনে না। আমরা জানি, যিহোবাই হলেন সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান। তবে, এই ধরনের লোকেরা তাঁকে মানতে চায় না এবং তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতেও চায় না। (গীত. ৫৩:১) এর পরিবর্তে, তারা কেবল সেটাই করে, যেটা তাদের কাছে ঠিক বলে মনে হয়। (হিতো. ১২:১৫) এই কারণে তাদের ‘হীনবুদ্ধি’ বলা হয়। তাদের নিজেদের কাছে কোনো ভালো পরামর্শ থাকে না অথচ আমরা যখন তাদের কাছে প্রচার করি এবং বাইবেল থেকে ভালো পরামর্শ দেখাই, তখন তারাই আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করে। তারা মনে করে, বাইবেলের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করা বেকার। এই ধরনের লোকদের সম্বন্ধে বাইবেল জানায়, “[হীনবুদ্ধির] জন্য প্রজ্ঞা [“প্রকৃত প্রজ্ঞা,” NW] অতি উচ্চ; সে নগর-দ্বারে মুখ খুলে না।” (হিতো. ২৪:৭) সেইজন্যই, যিহোবা আমাদের বলেন, “তুমি হীনবুদ্ধির সম্মুখে [“সামনে থেকে চলে,” NW] যাও।”—হিতো. ১৪:৭.

১২. আমরা কী করতে পারি, যাতে যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার সংকল্প আরও দৃঢ় হয় এবং আমরা ‘হীনবুদ্ধিদের’ মতো না হই?

১২ আমরা সেই ‘হীনবুদ্ধিদের’ মতো নই, যারা যিহোবার প্রজ্ঞার কথাগুলো শুনতে চায় না। আমরা মন থেকে চাই যেন আমরা তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি এবং তাঁর মতো চিন্তা করি। কীভাবে আমরা আমাদের এই সংকল্পকে দৃঢ় করতে পারি? আমরা এই বিষয়ে চিন্তা করতে পারি, যারা যিহোবার প্রজ্ঞার কথাগুলো শোনে না, তাদের জীবন এখন কেমন এবং তারা নিজেদের জীবনে কত সমস্যা ডেকে এনেছে। এরপর, আমরা চিন্তা করতে পারি, যিহোবার কথা শোনার ফলে আমাদের জীবন কতটা ভালো আছে।—গীত. ৩২:৮, ১০.

১৩. যিহোবা কি লোকদের তাঁর পরামর্শ শোনার জন্য জোর করেন?

১৩ যিহোবা আজ প্রত্যেককে সুযোগ দিচ্ছেন যেন তারা তাঁর প্রজ্ঞার কথাগুলো শোনে এবং তা থেকে উপকার পায়। কিন্তু, তিনি কাউকে তা শোনার জন্য জোর করেন না। শোনা না শোনার বিষয়টা তিনি লোকদের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। তবে, তিনি এটা বলেছেন, যারা তাঁর কথা শুনবে না, তাদের কী হবে। বাইবেলে লেখা আছে, ‘তারা নিজ নিজ আচরণের ফল ভোগ করবে।’ (হিতো. ১:২৯-৩২) তারা যেমন জীবনযাপন করে, সেটার কারণে তাদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, বিভিন্ন দুশ্চিন্তার সঙ্গে লড়াই করতে হয় এবং শেষে যিহোবা তাদের ধ্বংস করে দেবেন। কিন্তু, যারা যিহোবার কথা শোনে এবং তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করে, তাদের বিষয়ে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন: ‘তোমরা নির্ভয়ে বাস করিবে, শান্ত থাকিবে, অমঙ্গলের আশঙ্কা করিবে না।’—হিতো. ১:৩৩.

প্রকৃত প্রজ্ঞা অনেক উপকার নিয়ে আসে

আমরা যখন সভায় উত্তর দিই, তখন যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয় (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪-১৫. হিতোপদেশ ৪:২৩ পদ থেকে আমরা কী শিখি?

১৪ যিহোবা আমাদের অনেক প্রজ্ঞার কথা বলেছেন আর আজ যে-কেউ তা থেকে উপকার পেতে পারে। যেমন, হিতোপদেশ বইয়ে যিহোবা এমন অনেক কথা লিখিয়েছেন, যেগুলো আজও আমাদের অনেক উপকার নিয়ে আসে। আসুন, সেগুলোর মধ্যে চারটে বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই।

১৫ নিজের হৃদয়কে রক্ষা করুন। বাইবেলে লেখা আছে: “সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর কেননা তাহা হইতে জীবনের উদ্গম হয়।” (হিতো. ৪:২৩) আমরা সবাই চাই যেন আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং আমাদের হার্টের কোনো রোগ না হয়। তাই, আমরা ভালো খাবার খাই, এক্সারসাইজ করি এবং খেয়াল রাখি যেন কোনো খারাপ অভ্যাস গড়ে না তুলি। একইভাবে, নিজেদের হৃদয়কে রক্ষা করার জন্য আমরা প্রতিদিন বাইবেল পড়ি, সভাগুলোর জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিই, প্রতিটা সভায় যাই এবং সেখানে গিয়ে উত্তর দিই। আমরা প্রচার করার ক্ষেত্রেও অনেক পরিশ্রম করি। আমরা সেই খারাপ বিষয়গুলো থেকেও দূরে থাকি, যেগুলো আমাদের চিন্তাভাবনাকে নষ্ট করে দিতে পারে। যেমন, অনৈতিক আমোদপ্রমোদ এবং খারাপ লোকদের সঙ্গে মেলামেশা।

আমরা যখন টাকাপয়সার পিছনে দৌড়াই না, তখন আমাদের কাছে যা আছে, তাতেই আমরা সন্তুষ্ট থাকি (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬. হিতোপদেশ ২৩:৪, ৫ পদে দেওয়া পরামর্শ কেন অনেক উপকারজনক?

১৬ আপনার কাছে যা আছে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকুন। বাইবেলে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: “ধন সঞ্চয় করিতে অত্যন্ত যত্ন করিও না, . . . তুমি কি ধনের দিকে চাহিতেছ? তাহা আর নাই; কারণ ঈগল যেমন আকাশে উড়িয়া যায়, তেমনি ধন আপনার জন্য নিশ্চয়ই পক্ষ প্রস্তুত করে।” (হিতো. ২৩:৪, ৫) সত্যিই, টাকাপয়সার কোনো ভরসা নেই; আজ আছে, কাল নেই। কিন্তু, আজ প্রত্যেকে এর পিছনে পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে, তা সে ধনী হোক কিংবা গরিব। এর পিছনে দৌড়াতে গিয়ে লোকেরা নিজেদের সুনাম খারাপ করে ফেলছে, অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করছে আর এমনকী নিজেদের স্বাস্থ্যও খারাপ করে ফেলছে। (হিতো. ২৮:২০; ১ তীম. ৬:৯, ১০) তবে, বাইবেলে দেওয়া প্রজ্ঞার কথাগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা টাকাপয়সার পিছনে দৌড়াই না বরং আমাদের কাছে যা আছে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকি। এর ফলে, আমরা আনন্দে থাকি।—উপ. ৭:১২.

আমরা যখন ভেবে-চিন্তে কথা বলি, তখন আমাদের কথার দ্বারা অন্যদের ক্ষতি হয় না (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭. হিতোপদেশ ১২:১৮ পদ থেকে আমরা কী শিখি?

১৭ ভেবে-চিন্তে কথা বলুন। আমরা যদি ভেবে-চিন্তে কথা না বলি, তা হলে এতে অনেক ক্ষতি হতে পারে। বাইবেলে লেখা আছে: “কেহ কেহ অবিবেচনার কথা বলে, খড্‌গাঘাতের মত, কিন্তু জ্ঞানবানদের জিহ্বা স্বাস্থ্যস্বরূপ।” (হিতো. ১২:১৮) আমরা যদি অন্যদের সম্বন্ধে খারাপ কথা বলে বেড়াই, তা হলে যাদের কাছে বলছি এবং যাদের বিষয়ে বলছি, তাদের মাঝে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে। (হিতো. ২০:১৯) এইরকম কথা বলার পরিবর্তে আমাদের চেষ্টা করা উচিত যেন আমাদের কথা “স্বাস্থ্যস্বরূপ” হয় অর্থাৎ তা থেকে লোকেরা যেন উৎসাহিত হয়। আমরা এমনটা তখনই করতে পারব, যখন আমরা প্রতিদিন বাইবেল পড়ব এবং আমাদের হৃদয়ে ভালো বিষয় ভরে রাখব। (লূক ৬:৪৫) আমরা যখন বাইবেলের কথাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করব, তখন আমরা সবসময় প্রজ্ঞার কথা আলোচনা করব আর এর ফলে, লোকেরা নদীর জলের মতো সতেজতা লাভ করবে।—হিতো. ১৮:৪.

আমরা যখন সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চলি, তখন আমরা আরও ভালো করে প্রচার করতে পারি (১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৮. হিতোপদেশ ২৪:৬ পদে লেখা কথাগুলো মেনে চললে কীভাবে আমরা আরও ভালোভাবে প্রচার করতে পারব?

১৮ নির্দেশনা মেনে চলুন। বাইবেলে লেখা আছে: ‘সুমন্ত্রণার চালনায় তুমি যুদ্ধ করিবে, আর মন্ত্রিবাহুল্যে [“অনেক পরামর্শদাতা থাকলে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] জয়ী হবে।’ (হিতো. ২৪:৬) আমরা যখন এই পরামর্শ মনে রাখব, তখন আমরা নিজেদের মতো করে প্রচার করার পরিবর্তে সেই সমস্ত নির্দেশনা মেনে চলব, যেগুলো সংগঠন আমাদের দিয়ে থাকে। এভাবে আমরা আরও ভালোভাবে প্রচার করতে পারব এবং লোকদের আরও ভালোভাবে শেখাতে পারব। আর সভাতে যে-অংশগুলো তুলে ধরা হয় এবং যে-বক্তৃতাগুলো দেওয়া হয়, তা থেকেও আমরা শিখতে পারি যে, কীভাবে আমরা লোকদের বাইবেল থেকে আরও ভালোভাবে শেখাতে পারি। সংগঠন এমন অনেক প্রকাশনা ও ভিডিও প্রস্তুত করেছে, যেগুলোর সাহায্যে লোকেরা বাইবেলের কথাগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে। প্রশ্ন হল, আপনি কি এগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করছেন?

১৯. যিহোবা আমাদের যে প্রজ্ঞার কথাগুলো জানিয়েছেন, তা জেনে আপনার কেমন লাগে? (হিতোপদেশ ৩:১৩-১৮)

১৯ হিতোপদেশ ৩:১৩-১৮ পদ পড়ুন। ঈশ্বর বাইবেলে যে-প্রজ্ঞার কথাগুলো লিখিয়েছেন, সেগুলোর জন্য আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ! এগুলো আমাদের সত্যিই উপকৃত করে। এই প্রবন্ধে আমরা হিতোপদেশ বইয়ে দেওয়া অনেক উত্তম কথাগুলোর উপর মনোযোগ দিয়েছি। এইরকম কথাগুলো পুরো বাইবেলে পাওয়া যায়। জগতের লোকেরা ঈশ্বরের কথা শুনতে চায় না, কিন্তু আমরা যেন কখনো তাদের মতো না হই বরং আমরা যেন প্রজ্ঞাকে ধরে রাখি। এর ফলে, আমরা “ধন্য” বা সুখী হব।

গান ৫২ তোমার হৃদয়কে রক্ষা করো

^ আজ জগতে পরামর্শ দেওয়ার লোকের অভাব নেই। তবে, যিহোবা আমাদের যে-প্রজ্ঞা দেন, সেটা তাদের পরামর্শের চেয়ে অনেক শ্রেষ্ঠ। হিতোপদেশ বইয়ে একটা আগ্রহজনক কথা লেখা আছে। সেটা হল, প্রকৃত প্রজ্ঞা রাস্তায় রাস্তায় উচ্চস্বরে ডাকে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, এর মানে কী। আমরা এও জানতে পারব, কীভাবে আমরা একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি হতে পারি, কেন কিছু লোক যিহোবার প্রজ্ঞার কথাগুলো শুনতে চায় না এবং যিহোবার কথাগুলোর উপর মনোযোগ দিলে আমরা কোন কোন উপকার পাব।