সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন

পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন

ইজরায়েলীয়েরা যখন প্রান্তরে ছিল, তখন কি তাদের কাছে শুধু খাওয়ার জন্য মান্না এবং ভারুই পাখিই ছিল?

প্রান্তরে ৪০ বছরে ইজরায়েলীয়েরা বিশেষ করে মান্নাই খেত। (যাত্রা. ১৬:৩৫) তবে, দু-বার যিহোবা তাদের ভারুই পাখিও খেতে দিয়েছিলেন। (যাত্রা. ১৬:১২, ১৩; গণনা. ১১:৩১) কিন্তু, ইজরায়েলীয়দের কাছে খাওয়ার জন্য অনেক কিছু ছিল।

বাইবেলে যেমনটা বলা হয়েছে, যিহোবা কখনো কখনো তাঁর লোকদের “বিশ্রাম-স্থানে” নিয়ে যেতেন, যেখানে তারা খাওয়ার জন্য জল এবং বিভিন্ন জিনিস পেত। (গণনা. ১০:৩৩) একবার তিনি তাদের এলিম নামে গাছপালা ভরা এক জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে “জলের বারোটী উনুই ও সত্তরটী খর্জ্জুরবৃক্ষ ছিল।” (যাত্রা. ১৫:২৭) বাইবেলের সময়ের গাছপালা নামক ইংরেজি বইয়ে লেখা রয়েছে, অনেক জায়গায় এই খেজুর গাছ পাওয়া যায় এবং মরুভূমিতে বেশিরভাগ লোক এটার ফল খায়, এটা থেকে তেল বের করে এবং এটার নীচেই আশ্রয় নেয়।

ইজরায়েলীয়েরা হয়তো সেই গাছপালা ভরা জায়গায় থেমে ছিল, যেটা বর্তমানে ফেরন নদীর এলাকার মধ্যে পড়ে। a একটা বইতে লেখা আছে, এই নদী কিংবা উপত্যকা ১৩০ কিলোমিটার (৮১ মাইল) দীর্ঘ এবং সিনে যে-নদী রয়েছে, সেটার চেয়েও অনেক দীর্ঘ এবং দেখতে সুন্দর এবং পরিষ্কার। এতে এও লেখা রয়েছে, যেখানে এই নদী সমুদ্রের সঙ্গে মিশে যায়, সেখান থেকে ৪৫ কিলোমিটার (২৮ মাইল) দূরে ফেরন নামে একটা গাছপালা ভরা জায়গা রয়েছে। এই জায়গাটা সমুদ্রতল থেকে ২০০০ ফুট (৬১০মি) উঁচুতে অবস্থিত এবং ৪.৮ কিলোমিটার (৩ মাইল) দীর্ঘ। যে-দিকেই চোখ যায়, সেখানেই খেজুর গাছ দেখা যায়। এই জায়গাটা এত সুন্দর এদন উদ্যান বলা হয়। বছরের পর বছর ধরে দেখা গিয়েছে, হাজার হাজার খেজুর গাছ থাকার কারণে অনেক জায়গা থেকে লোকেরা এসে এখানে থাকতে শুরু করেছিল।

ফেরন প্রান্তরে খেজুর গাছ

ইজরায়েলীয়েরা যখন মিশর ছেড়ে এসেছিল, তখন তারা তাদের সঙ্গে আটা মাখা, আটামাখার বাসনপত্র আর হয়তো কিছু সবজি ও তেল সঙ্গে করে নিয়েছিল। কোনো সন্দেহ নেই যে সেই জিনিসগুলো একটা সময়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাইবেলে লেখা রয়েছে, লোকেরা “মেষ ও গো, অতি বিস্তর পশু” সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল। (যাত্রা. ১২:৩৪-৩৯) প্রান্তরে যাত্রা করা তাদের জন্য হয়তো নিশ্চয়ই অনেক কঠিন ছিল। তাই, হয়তো অনেক পশুপাখি মারা গিয়েছিল। হয়তো কিছু পশুপাখিকে মেরে তারা খেয়ে নিয়েছিল। অথবা হয়তো তাদের বলি হিসেবে উৎসর্গ করা হয়েছিল। হয়তো মিথ্যা দেবদেবীদের সামনেও উৎসর্গ করা হয়েছিল। b (প্রেরিত ৭:৩৯-৪৩) তারপরও ইজরায়েলীয়দের কাছে কিছু পশুপাখি ছিল এবং তাদের বাচ্চাও হয়েছিল। এটা আমরা ইজরায়েলীয়দের কাছে বলা যিহোবার এই কথাগুলো থেকে বুঝতে পারি, যেটা তিনি সেইসময়ে বলেছিলেন, যখন তারা তাঁর উপরে বিশ্বাস করেনি: “তোমাদের সন্তানগণ চল্লিশ বৎসর এই প্রান্তরে পশু চরাইবে।” (গণনা. ১৪:৩৩) তারা হয়তো এই পশুদের দুধ খেত এবং কখনো কখনো তাদের মাংসও খেত। তবে, এটা ৪০ বছর ধরে ৩০ লক্ষ লোকের পেট ভরার মতো যথেষ্ট ছিল না। c

প্রান্তরে সেই পশুরা কী খেত বা তারা কোথায় জল পেত? এখনকার তুলনায় তখন সেখানে প্রচুর বৃষ্টি হত। আর এই কারণে সেখানে অনেক গাছপালা জন্মাত। শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি, খণ্ড ১-এ লেখা রয়েছে, “প্রায় ৩,৫০০ বছর আগে আরবে অনেক জল পাওয়া যেত। কেন আমরা তা বলতে পারি? বর্তমানে সেখানে অনেক শুকনো ও গভীর নদী বা উপত্যকা রয়েছে। এগুলো প্রমাণ করে যে, একটা সময়ে সেখানে এত বৃষ্টি হত যে, সেখানে নদী বয়ে যেত।” তারপরও, সেই প্রান্তর ফাঁকা এবং খুব ভয়ংকর ছিল। (দ্বিতীয়. ৮:১৪-১৬) যিহোবা যদি তাদের অলৌকিকভাবে জল না জোগাতেন, তা হলে ইজরায়েলীয়েরা এবং তাদের পশুপাখিরা অনেক আগেই মারা যেত।—যাত্রা. ১৫:২২-২৫; ১৭:১-৬; গণনা. ২০:২, ১১.

মোশি ইজরায়েলীয়দের বলেছিলেন, যিহোবা তাদের মান্না দিয়েছেন, ‘যাতে তারা জানতে পারে যে, মানুষ কেবল রুটিতে বাঁচে না কিন্তু যিহোবার মুখ থেকে যে-প্রত্যেক বাক্য বের হয়, তাতেই বাঁচে।’—দ্বিতীয়. ৮:৩.

a বাইবেলে এমন দুটো ঘটনার বিষয়ে বলা হয়েছে, ইজরায়েলীয়েরা প্রান্তরে যিহোবার উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করেছিল। প্রথম বার হারণ এবং তার ছেলেদের যখন যাজক হিসেবে সেবা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বার নিস্তারপর্বের সময়। এই সমস্ত কিছু ইজরায়েলীয়েরা মিশর ছেড়ে বেরিয়ে আসার প্রায় এক বছর পর অর্থাৎ ১৫১২ খ্রিস্টপূর্বে ঘটেছিল।—লেবীয়. ৮:১৪–৯:২৪; গণনা. ৯:১-৫.

b প্রান্তরে যখন ইজরায়েলীয়েদের ৪০ বছরের যাত্রা শেষ হতে যাচ্ছিল, তখন তারা যুদ্ধের পরে হাজার হাজার পশুপাখি এবং লুট করা জিনিসপত্র নিয়ে নিয়েছিল। (গণনা. ৩১:৩২-৩৪) তা সত্ত্বেও, তারা যতদিন পর্যন্ত প্রতিজ্ঞাত দেশে গিয়ে পৌঁছায়নি, ততদিন পর্যন্ত তারা মান্না খেয়েছিল।—যিহো. ৫:১০-১২.

c এই বিষয়টার কোনো প্রমাণ নেই যে, পশুপাখিরাও মান্না খেত। কারণ ইজরায়েলীয়দের বলা হয়েছিল, তারা যেন তত পরিমাণেই মান্না ওঠায়, যতটা একজন ব্যক্তি খেতে পারে।—যাত্রা. ১৬:১৫, ১৬.