অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৩
গান ৯০ একে অন্যকে উৎসাহিত করো
নিজের সন্দেহ কীভাবে দূর করবেন?
“সমস্ত কিছু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নাও।”—১ থিষল. ৫:২১.
আমরা কী শিখব?
এই প্রবন্ধে আমরা জানব যে, কীভাবে আমরা নিজেদের সন্দেহ দূর করতে পারি, যাতে যিহোবার সেবায় দুর্বল হয়ে না পড়ি।
১-২. (ক) যিহোবার দাসদের মনে কোন সন্দেহ আসতে পারে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?
আমরা যুবক হই বা বৃদ্ধ, আমাদের প্রত্যেকের মনেই কখনো-না-কখনো সন্দেহ চলে আসে। a যেমন, একজন যুবক হয়তো ভাবতে পারেন, “জানি না, যিহোবা আমার জন্য চিন্তা করেন কি না।” এই কারণে হয়তো সে বাপ্তিস্ম নিতে ইতস্তত বোধ করে। এ ছাড়া, হতে পারে একজন ভাই যুবক বয়সে প্রচুর অর্থ উপার্জন করার পরিবর্তে যিহোবার রাজ্যকে প্রথম স্থান দিয়েছেন। আর এখন তার পক্ষে নিজের পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানো কঠিন হয়ে পড়ছে আর তিনি হয়তো এইরকম চিন্তা করছেন, ‘আমি যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেটা কি সঠিক ছিল?’ অথবা এমনটা হতে পারে যে, একজন বয়স্ক বোন এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন যে, তিনি আর আগের মতো যিহোবার সেবা করতে পারছেন না। তিনি হয়তো নিরুৎসাহিত হয়ে এইরকমটা চিন্তা করতে পারেন, ‘জানি না আমি যিহোবার কোনো কাজে আসছি কি না!’ আপনার মনেও কি কখনো এইরকম সন্দেহ এসেছে?
২ আপনি যদি আপনার মন থেকে এই ধরনের সন্দেহ দূর না করেন, তা হলে আপনার বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং আপনি এমনকী যিহোবার উপাসনা করা বন্ধ করে দিতে পারেন। এই প্রবন্ধে আমরা শিখব যে, কীভাবে আমরা বাইবেলের নীতিগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের সন্দেহ দূর করতে পারি। যেমন হতে পারে, আমরা এইরকম চিন্তা করতে শুরু করি, (১) জানি না, যিহোবা আমার জন্য চিন্তা করেন কি না? (২) আমি যে-সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিলাম, সেগুলো সঠিক ছিল কি না আর (৩) ‘জানি না, আমি যিহোবার কোনো কাজে আসছি কি না?’
সন্দেহ দূর করার জন্য কী করব?
৩. সন্দেহ দূর করার একটা উপায় কী?
৩ সন্দেহ দূর করার একটা উপায় হল, ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল পড়া। এটি থেকে আমরা আমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে পারি। আমরা যদি এটা করি, তা হলে যিহোবার উপর আমাদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে, তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে এবং আমরা “বিশ্বাসে দৃঢ়” থাকতে পারব।—১ করি. ১৬:১৩.
৪. কীভাবে আমরা “সমস্ত কিছু পরীক্ষা করে” দেখতে পারি? (১ থিষলনীকীয় ৫:২১)
৪ প্রথম থিষলনীকীয় ৫:২১ পদ পড়ুন। বাইবেল আমাদের উৎসাহিত করে, আমরা যেন “সমস্ত কিছু পরীক্ষা করে” দেখি। কীভাবে আমরা এটা করতে পারি? আমাদের মনে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তা হলে সেই বিষয়ে বাইবেল কী বলে, তা জানার চেষ্টা করতে হবে। যেমন, সেই যুবকের কথা চিন্তা করুন, যিনি মনে করেন যে, ঈশ্বর তার জন্য চিন্তা করেন কি না। তার কি এই বিষয়টাকে এমনি এমনিই মেনে নেওয়া উচিত? একেবারেই না! যিহোবা তার সম্বন্ধে কী চিন্তা করেন, তা অবশ্যই তাকে “পরীক্ষা করে” দেখতে হবে।
৫. আমরা কীভাবে আমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে পারি?
৫ আমরা যখন ঈশ্বরের বাক্য পড়ি, তখন আমরা যিহোবার কথা শুনি এবং তাঁর চিন্তাভাবনা বুঝতে পারি। কিন্তু, আমাদের প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য বাইবেল পড়ার পাশাপাশি আমাদের আরও কিছু করতে হবে। আমাদের এমন শাস্ত্রপদগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং সেগুলো নিয়ে গবেষণা করতে হবে, যেটার ফলে আমাদের সন্দেহ দূর হতে পারে। এ ছাড়া, সংগঠন আমাদের গবেষণা করার জন্য যে-প্রকাশনাগুলো জুগিয়েছে, সেগুলোও আমরা ব্যবহার করতে পারি। (হিতো. ২:৩-৬) আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি, যেন তিনি আমাদের গবেষণা করতে সাহায্য করেন, যাতে আমরা তাঁর চিন্তাভাবনা বুঝতে পারি। এরপর আমরা বাইবেলের এমন নীতি ও তথ্যের উপর মনোযোগ দিতে পারি, যা আমাদের পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া, আমরা প্রাচীনকালের ঈশ্বরের সেই দাসদের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিতে পারি, যারা আমাদের মতো একইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল।
৬. নিজেদের সন্দেহ দূর করার জন্য সভাগুলো কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে?
৬ যিহোবা সভাগুলোর মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। আমরা যদি ক্রমাগত সভাগুলোতে যোগ দিই, তা হলে আমরা হয়তো কোনো বক্তৃতায় অথবা কারো মন্তব্যে এমন কিছু শুনব, যেটা আমাদের সন্দেহ দূর করতে সাহায্য করবে। (হিতো. ২৭:১৭) এখন আসুন আমরা দেখি যে, আমাদের মনে কোন কোন সন্দেহ আসতে পারে আর কীভাবে আমরা সেটা দূর করতে পারি?
জানি না, যিহোবা আমার জন্য চিন্তা করেন কি না
৭. কিছু লোকের মনে হয়তো কোন প্রশ্ন আসে?
৭ আপনার মনে কি কখনো এমন প্রশ্ন এসেছে, ‘যিহোবা কি সত্যিই আমার জন্য চিন্তা করেন?’ আপনি যদি নিজেকে খুব নগণ্য বলে মনে করেন, তা হলে আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন, ‘আমি কীভাবে এই নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারি?’ এটা তো কখনোই সম্ভব নয়! হয়তো দায়ূদের মনেও একই প্রশ্ন এসেছিল। তিনি এটা চিন্তা করে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন যে, যিহোবা এমনকী আমাদের মতো সাধারণ মানুষের উপরও মনোযোগ দেন। তিনি বলেছিলেন, “হে যিহোবা, মানুষ কী যে, তুমি তাকে লক্ষ করবে? মরণশীল মানুষ কী যে, তুমি তার প্রতি মনোযোগ দেবে?” (গীত. ১৪৪:৩) তাহলে, আপনি কোথায় এই প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন, ‘যিহোবা কি সত্যিই আমার প্রতি মনোযোগ দেন এবং আমার জন্য চিন্তা করেন?’
৮. প্রথম শমূয়েল ১৬:৬, ৭, ১০-১২ পদ অনুযায়ী যিহোবা লোকদের মধ্যে কোন বিষয়টা দেখেন?
৮ বাইবেল থেকে জানতে পারি, যিহোবা সেই লোকদের প্রতি মনোযোগ দেন, যে-লোকদের অন্যেরা খুব সাধারণ ও ছোটো মনে করে। এই বিষয়টা বোঝার জন্য একটা ঘটনা বিবেচনা করুন। যিহোবা ইজরায়েলের পরবর্তী রাজা বেছে নেওয়ার জন্য শমূয়েলকে যিশয়ের বাড়িতে পাঠান। এরপর যিশয় তার সাত ছেলেকে তার সামনে নিয়ে আসেন। তবে, তার ছোটো ছেলে দায়ূদকে আনেন না। কিন্তু, b যিহোবা দায়ূদকে পরবর্তী রাজা হিসেবে বেছে নেন। (পড়ুন, ১ শমূয়েল ১৬:৬, ৭, ১০-১২.) কেন? কারণ যিহোবা দায়ূদের হৃদয় দেখেছিলেন আর তিনি দেখেছিলেন যে, এই যুবক তাঁকে কতটা ভালোবাসে।
৯. আপনি কেন নিশ্চিত হতে পারেন যে, যিহোবা আপনার প্রতি মনোযোগ দেন? (ছবিও দেখুন।)
৯ এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করুন যে, যিহোবা কীভাবে দেখিয়েছেন যে, তিনি আপনার উপর মনোযোগ দেন। তিনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনাকে পরামর্শ দেন। (গীত. ৩২:৮) একটু কল্পনা করুন, যিহোবা যদি আপনাকে ভালোভাবে না জানতেন, তা হলে কি তিনি আপনাকে উত্তম পরামর্শ দিতে পারতেন? (গীত. ১৩৯:১) আর আপনি যখন যিহোবার পরামর্শ অনুসরণ করেন এবং দেখেন যে, কীভাবে এটা আপনার উপকার করছে, তখন আপনি নিশ্চিত হয়ে যান, যিহোবা আপনার প্রতি মনোযোগ দেন, আপনার জন্য চিন্তা করেন এবং আপনাকে অনেক মূল্যবান হিসেবে দেখেন। (১ বংশা. ২৮:৯; প্রেরিত ১৭:২৬, ২৭) আপনি তাঁর সেবায় যা-কিছু করেন, তিনি সেগুলো দেখেন। তিনি আপনার ভালো গুণগুলো লক্ষ করেন এবং আপনার বন্ধু হতে চান। (যির. ১৭:১০) শুধু তা-ই নয়, যিহোবা চান যেন আপনিও তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন।—১ যোহন ৪:১৯.
আমি যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেটা সঠিক ছিল কি না
১০. আমরা আগে যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেই বিষয়ে আমাদের মনে কোন প্রশ্ন আসতে পারে?
১০ কিছু লোক হয়তো ভাবতে পারে, অনেক বছর আগে তারা যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা সঠিক ছিল কি না। তারা হয়তো যিহোবাকে সেবা করার জন্য কোনো ভালো চাকরি অথবা ব্যাবসা করার সুযোগ ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু, এখন অনেক বছর পর তারা যখন দেখে তাদের পরিচিত লোকেরা এবং বন্ধুরা এই জগতে একটা ভালো ক্যারিয়ার তৈরি করেছে, তখন তারা হয়তো এইরকম চিন্তা করে, ‘তাদের কাছে কত টাকা, তারা কত আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করছে! আমি কি যিহোবার জন্য ত্যাগস্বীকার করে সঠিক কাজ করেছি? আমার কি আরও বেশি টাকাপয়সা রোজগার করে নিলে ভালো হত?’
১১. তিয়াত্তর গীতের লেখক কেন উদ্বিগ্ন ছিলেন?
১১ আপনার মনেও যদি এইরকম সন্দেহ আসে, তা হলে ৭৩ গীতের লেখক সম্বন্ধে চিন্তা করুন। তিনি দেখেছিলেন, যারা যিহোবাকে সেবা করে না, তারা ক্রমাগত উন্নতি করছে এবং আরাম-আয়েশে জীবন কাটাচ্ছে। (গীত. ৭৩:৩-৫, ১২) তখন তিনি মনে করেছিলেন, তাদের কোনো চিন্তা নেই এবং কোনো সমস্যা নেই। সেই লেখক চিন্তা করছিলেন, যিহোবার জন্য তিনি যে-ত্যাগস্বীকারগুলো করেছেন, সেগুলো করে তার কোনো লাভ হয়নি। এই সমস্ত বিষয়ে চিন্তা করে তিনি “সারাদিন” খুবই ‘কষ্ট ভোগ করতেন‘ এবং হতাশ হয়ে পড়তেন। (গীত. ৭৩:১৩, ১৪) তখন তিনি কী করেছিলেন?
১২. তিয়াত্তর গীতের লেখকের সন্দেহ কীভাবে দূর হয়েছিল? (গীতসংহিতা ৭৩:১৬-১৮)
১২ গীতসংহিতা ৭৩:১৬-১৮ পদ পড়ুন। ৭৩ গীতের লেখক যিহোবার মন্দিরে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি সঠিকভাবে চিন্তা করতে পেরেছিলেন, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, যদিও এমনটা মনে হয়, দুষ্টেরা আরাম-আয়েশে জীবন কাটাচ্ছে, কিন্তু তাদের কাছে ভবিষ্যতের কোনো আশা নেই। আর তখন তিনি স্বস্তি লাভ করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবার সেবাকে প্রথম স্থান দিয়ে তিনি একেবারে সঠিক কাজ করেছেন। তার সন্দেহ দূর হয়ে গিয়েছিল এবং যিহোবাকে সেবা করার তার সংকল্প আরও দৃঢ় হয়ে গিয়েছিল।—গীত. ৭৩:২৩-২৮.
১৩. আপনার মনে যদি সন্দেহ থাকে যে, অতীতে আপনি যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা সঠিক ছিল না, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? (ছবিও দেখুন।)
১৩ তিয়াত্তর গীতের লেখকের মতো আমরাও আমাদের সন্দেহ দূর করতে পারি এবং মনের শান্তি লাভ করতে পারি। কীভাবে? চিন্তা করুন, আপনার কাছে কী আছে এবং জগতের লোকদের কাছে কী আছে। যেমন, আপনি স্বর্গে ধন সঞ্চয় করছেন এবং যিহোবা আপনাকে সাহায্য করছেন। এর বিপরীতে, জগতের লোকেরা ঈশ্বরের সেবা করে না এবং ঈশ্বর তাদের কোনো সাহায্য করেন না। জগতের লোকেরা মনে করে, একটা ভালো চাকরি, আরামদায়ক জীবন, এগুলোই তাদের কাছে সব কিছু, কারণ তাদের কাছে ভবিষ্যতের কোনো আশা নেই। কিন্তু, আমরা তাদের থেকে আলাদা। যিহোবা আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি আমাদের এক অপূর্ব ভবিষ্যৎ দেবেন এবং এত আশীর্বাদ করবেন, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। (গীত. ১৪৫:১৬) এই বিষয়েও একটু চিন্তা করুন, আপনি যদি যিহোবার সেবা করার পরিবর্তে এই জগতে প্রচুর টাকাপয়সা উপার্জন করতেন, তা হলে এটা কি এই বিষয়টার নিশ্চয়তা দিত যে, আপনার জীবন ঠিক তেমনি হত, যেমনটা আপনি চিন্তা করছেন? কিন্তু, একটা বিষয় তো নিশ্চিত, যদি একজন ব্যক্তি যিহোবাকে এবং লোকদের ভালোবাসেন এবং তা মনে রেখে জীবনে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে তিনি প্রকৃত সুখী হবেন এবং তার কোনো কিছুরই অভাব হবে না।
কি জানি, আমরা যিহোবার কোনো কাজে আসব কি না
১৪. যিহোবার কিছু দাসের মনে কোন প্রশ্ন আসতে পারে এবং কেন?
১৪ ঈশ্বরের এমন কিছু দাসও রয়েছে, যারা বয়স্ক, অসুস্থ অথবা অক্ষম। তারা যিহোবার জন্য যতটা করতে চায়, ততটা করতে পারে না আর তাই তারা নিজেকে মূল্যহীন বলে মনে করে। তারা হয়তো মনে করে, ‘জানি না, আমি যিহোবার কোনো কাজে আসছি কি না।’
১৫. একাত্তর গীতের লেখক কোন বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন?
১৫ একাত্তর গীতের লেখকের মনেও সম্ভবত এই একই প্রশ্ন এসেছিল। তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন আর বলেছিলেন: “আমার শক্তি ফুরিয়ে গেলে আমাকে পরিত্যাগ কোরো না।” (গীত. ৭১:৯, ১৮) কিন্তু, সেই লেখক নিশ্চিত ছিলেন যে, যদি তিনি বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করে চলেন, তা হলে তিনি তাকে ধরে রাখবেন এবং সঠিক পথে চলতে সাহায্য করবেন। তিনি এও শিখেছিলেন যে, আমরা যদি আমাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী যথাসাধ্য করি, তা হলে সেটা দেখে যিহোবা অনেক খুশি হন।—গীত. ৩৭:২৩-২৫.
১৬. বয়স্ক ভাই-বোনেরা যিহোবার জন্য কী কী করতে পারে? (গীতসংহিতা ৯২:১২-১৫)
১৬ প্রিয় বয়স্ক ভাই ও বোনেরা, নিজেকে যিহোবার মতো করে দেখার চেষ্টা করুন। আপনি হয়তো শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন, কিন্তু যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক দিন দিন আরও দৃঢ় হচ্ছে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৯২:১২-১৫.) তাই আপনি যা করতে পারেন না, সেটার উপর মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে, যা করতে পারেন, সেটার উপর মনোযোগ দিন। যেমন, আপনি যখন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন এবং অন্যদের জানার চেষ্টা করেন, তখন আপনি তাদের উৎসাহিত করেন। আপনি তাদের বলতে পারেন যে, বছরের পর বছর ধরে কীভাবে যিহোবা আপনাকে ধরে রেখেছেন এবং ভবিষ্যতে আপনি যিহোবার কোন প্রতিজ্ঞা পূরণ হতে দেখতে চান। শুধু তা-ই নয়, আপনি অন্যদের জন্য হৃদয় থেকে প্রার্থনা করতে পারেন। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না যে, প্রার্থনার মধ্যে কতটা শক্তি রয়েছে। (১ পিতর ৩:১২) এটা ঠিক, আমাদের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আমরা যিহোবার জন্য এবং অন্যদের জন্য কিছু-না-কিছু করতে পারি।
১৭. কেন আমাদের অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করা উচিত নয়?
১৭ আপনি এই বিষয়টা নিয়ে কি চিন্তিত আছেন যে, আপনি যিহোবার সেবায় যতটা করতে চান, ততটা করতে পারছেন না? তা হলে নিশ্চিত থাকুন যে, আপনি যতটা করতে পারেন, যিহোবা সেটাকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন। এ ছাড়া, অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করবেন না। এইরকম চিন্তা করবেন না যে, অন্যেরা তো যিহোবার সেবায় কত কিছু করছে আর আপনি কিছুই করতে পারছেন না। যিহোবা তাঁর একজন দাসের সঙ্গে অন্য দাসের তুলনা করেন না। (গালা. ৬:৪) উদাহরণ স্বরূপ, মরিয়ম যিশুর পায়ে যে-সুগন্ধি তেল ঢেলেছিলেন, তা খুবই দামি ছিল। (যোহন ১২:৩-৫) অন্যদিকে, সেই দরিদ্র বিধবা মন্দিরে যে-দুটো মুদ্রা রেখেছিলেন, সেটার মূল্য খুবই সামান্য ছিল। কিন্তু, যিশু তাদের দু-জনের বিশ্বাস দেখেছিলেন এবং তাদের দু-জনকেই প্রশংসা করেছিলেন। যিশু একেবারে তাঁর পিতার মতো। তাই আপনি নিশ্চিত থাকুন যে, প্রেমের কারণে যিহোবার জন্য আপনি যা-কিছুই করেন না কেন, তা আপনার কাছে কম বলে মনে হলেও যিহোবা সেটাকে অনেক মূল্যবান হিসেবে দেখেন।
১৮. কীভাবে আমরা আমাদের সন্দেহ দূর করতে পারি? (“ যিহোবার বাক্য থেকে আপনি আপনার সন্দেহ দূর করতে পারেন” শিরোনামের বাক্স দেখুন।)
১৮ আমরা সবাই কখনো-না-কখনো সন্দেহ করতে শুরু করি। কিন্তু, আমরা যেমনটা দেখলাম, যিহোবার বাক্যের সাহায্যে আমরা আমাদের সন্দেহ দূর করতে পারি। তাই, আপনার প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য কঠোর পরিশ্রম করুন। এটা করার মাধ্যমে আপনি অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হবেন না এবং যিহোবার উপর আপনার এই আস্থা বৃদ্ধি পাবে যে, যিহোবা প্রকৃতই আপনার জন্য চিন্তা করেন। শুধু তা-ই নয়, এটা মনে রাখুন যে, আপনি তাঁর জন্য যে-ত্যাগস্বীকারগুলো করেছেন, তিনি সেগুলো মূল্যবান হিসেবে দেখেন এবং অবশ্যই আপনাকে পুরস্কার দেবেন। নিশ্চিত থাকুন, যিহোবা তাঁর প্রত্যেক বিশ্বস্ত দাসকে ভালোবাসেন এবং তাদের প্রতি মনোযোগ দেন।
গান ১১১ আমাদের আনন্দের কারণ
a এটার মানে কী?: বাইবেলে বলা হয়েছে, বিশ্বাসের অভাব থাকার কারণে একজন ব্যক্তি যিহোবা এবং তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর সন্দেহ করতে শুরু করেন। কিন্তু, এই প্রবন্ধে আমরা সেই সন্দেহ নিয়ে কথা বলছি না। এর পরিবর্তে, আমরা এমন সন্দেহগুলো নিয়ে কথা বলছি, যেগুলো কখনো কখনো একজন খ্রিস্টানের মনে আসতে পারে। যেমন, তিনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন, যিহোবার দৃষ্টিতে তার কোনো মূল্য আছে কি না অথবা তিনি যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা সঠিক ছিল না।
b বাইবেলে এটা বলা হয়নি যে, দায়ূদকে যখন অভিষেক করা হয়েছিল, তখন তার বয়স কত ছিল। হয়তো সেইসময় তিনি কিশোরবয়সি ছিলেন। তার বয়স হয়তো ১৪-১৫ বা এর কাছাকাছি ছিল।—২০১৬ সালের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার নং ৪-এর পৃষ্ঠা ৯ পড়ুন।