সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩১

“আমরা নিরুৎসাহ হই না”!

“আমরা নিরুৎসাহ হই না”!

“এই জন্য আমরা নিরুৎসাহ হই না।”—২ করি. ৪:১৬.

গান সংখ্যা ২৪ পুরস্কারে তোমার চোখ রাখো!

সারাংশ *

১. জীবনের দৌড়ে শেষ পর্যন্ত দৌড়োনোর জন্য খ্রিস্টানদের অবশ্যই কী করতে হবে?

খ্রিস্টানরা জীবনের এক দৌড়ে অংশ নিয়েছে। আমরা সবেমাত্র দৌড়োতে শুরু করে থাকি অথবা বহু বছর ধরে দৌড়ে আসছি, আমাদের শেষ পর্যন্ত দৌড়োতে হবে। প্রেরিত পৌল ফিলিপীর খ্রিস্টানদের যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেটা আমাদের শেষ পর্যন্ত দৌড়োনোর জন্য উৎসাহিত করতে পারে। প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীর সদস্যরা যখন পৌলের চিঠি পেয়েছিল, তখন ইতিমধ্যেই তাদের মধ্যে কোনো কোনো ব্যক্তি অনেক বছর ধরে যিহোবার সেবা করছিল। তারা ভালোভাবে দৌড়োচ্ছিল কিন্তু পৌল তাদের ধৈর্য ধরে ক্রমাগত দৌড়োনোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যেন তারা ‘লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়িতে দৌড়িতে যত্ন করিবার’ বিষয়ে ক্রমাগত তার উদাহরণ অনুসরণ করে।—ফিলি. ৩:১৪.

২. ফিলিপীয়দের উদ্দেশে দেওয়া পৌলের পরামর্শ কেন একেবারে সময়োপযোগী ছিল?

ফিলিপীয়দের উদ্দেশে দেওয়া পৌলের পরামর্শ একেবারে সময়োপযোগী ছিল। মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা শুরু থেকেই বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছিল। ৫০ খ্রিস্টাব্দে পৌল ও সীল “পার হইয়া মাকিদনিয়াতে” যাওয়ার বিষয়ে ঈশ্বরের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছিলেন। তাই, তারা ফিলিপীতে সুসমাচার প্রচার করার জন্য গিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৬:৯) সেখানে লুদিয়া নামে একজন মহিলার সঙ্গে তাদের দেখা হয়, যিনি সুসমাচার সম্বন্ধে “কথা শুনিতেছিলেন; আর প্রভু [ঈশ্বর] তাঁহার হৃদয় খুলিয়া দিলেন।” (প্রেরিত ১৬:১৪) শীঘ্রই তিনি তার পরিবারের সঙ্গে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। কিন্তু, দিয়াবল দ্রুত তাদের জন্য সমস্যা নিয়ে আসতে শুরু করেছিল। নগরের লোকেরা পৌল ও সীলকে টানতে টানতে শাসনকর্তাদের কাছে নিয়ে গিয়েছিল এবং তাদের উপর সমস্যা তৈরি করার মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছিল। এর ফলে, পৌল ও সীলকে মারধর করা হয়েছিল, কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল এবং পরে নগর ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল। (প্রেরিত ১৬:১৬-৪০) তারা কি হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন? না! আর সেই নবগঠিত মণ্ডলীর ভাই-বোনদের বিষয়ে কী বলা যায়? প্রশংসনীয় বিষয়টা হল তারাও ধৈর্য ধরেছিল! কোনো সন্দেহ নেই, পৌল ও সীল তাদের জন্য যে-উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন, সেটার দ্বারা তারা প্রচুর উৎসাহিত হয়েছিল।

৩. পৌল কী বুঝতে পেরেছিলেন এবং আমরা কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে বিবেচনা করব?

পৌল হাল ছেড়ে না দেওয়ার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। (২ করি. ৪:১৬) তবে তিনি জানতেন, শেষ পর্যন্ত দৌড়োনোর জন্য তাকে লক্ষ্যের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে হবে। পৌলের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? বর্তমানে বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের কোন উদাহরণগুলো দেখায়, আমরা যেকোনো সমস্যা সত্ত্বেও ধৈর্য ধরতে পারি? আর কীভাবে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমাদের আশা কখনো হাল ছেড়ে না দেওয়ার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করে? এই প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলো নিয়ে বিবেচনা করব।

যেভাবে পৌলের উদাহরণ আমাদের উপকৃত করতে পারে

৪. কীভাবে পৌল কঠিন পরিস্থিতিতেও যিহোবার সেবায় ব্যস্ত থেকেছিলেন?

ফিলিপীয়দের উদ্দেশে চিঠি লেখার সময়ে পৌল যা-কিছু করছিলেন, সেইসমস্ত বিষয় নিয়ে চিন্তা করুন। তিনি রোমে গৃহবন্দি ছিলেন। তিনি প্রচার করার জন্য বাইরে যেতে পারতেন না। তা সত্ত্বেও, তিনি তার সঙ্গে দেখা করতে আসা ব্যক্তিদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার এবং দূরবর্তী মণ্ডলীগুলোতে চিঠি লেখার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। একইভাবে বর্তমানে, অনেক খ্রিস্টান অসুস্থতা ও বার্ধক্যের কারণে বাড়িতে আবদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তাদের বাড়িতে আসা ব্যক্তিদের কাছে সুসমাচার জানানোর বিষয়ে প্রতিটা সুযোগের সদ্‌ব্যবহার করে। এ ছাড়া, তারা সেই গৃহকর্তাদের উদ্দেশে উৎসাহজনক চিঠি লেখে, যাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করা সম্ভব হয় না।

৫. ফিলিপীয় ৩:১২-১৪ পদে পাওয়া পৌলের কথা অনুযায়ী কী তাকে লক্ষ্যের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করেছিল?

পৌল অতীতে যে-ভালো বিষয়গুলো সম্পাদন করেছিলেন অথবা যে-ভুলগুলো করেছিলেন, সেগুলোর দ্বারা নিজেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যেতে দেননি। সত্যি বলতে কী, তিনি বলেছিলেন: ‘সম্মুখস্থ বিষয়ের চেষ্টায় একাগ্র হইবার’ অর্থাৎ সফলভাবে শেষ পর্যন্ত দৌড়োনোর জন্য “পশ্চাৎ স্থিত বিষয় সকল ভুলিয়া” যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৩:১২-১৪.) কয়েকটা বিষয় কী, যেগুলো পৌলকে বিক্ষিপ্ত করতে পারত? প্রথমত, পৌল যিহুদি হিসেবে অনেক সফলতা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু, তিনি সেই বিষয়গুলোকে “মলবৎ” হিসেবে দেখেছিলেন। (ফিলি. ৩:৩-৮) দ্বিতীয়ত, তিনি যদিও খ্রিস্টানদের উপর তাড়না নিয়ে আসার কারণে নিজেকে দোষী বলে মনে করেছিলেন কিন্তু তিনি এই অনুভূতির দ্বারা কবলিত হননি। আর তৃতীয়ত, তিনি এভাবে যুক্তি করেননি যে, তিনি ইতিমধ্যেই যিহোবার সেবায় অনেক কিছু করে ফেলেছেন। পৌল কারাদণ্ড, বেত্রাঘাত, প্রস্তরাঘাত, নৌকাভঙ্গ আর সেইসঙ্গে খাদ্য ও বস্ত্রের অভাবের মতো বিভিন্ন পরীক্ষা ভোগ করা সত্ত্বেও পরিচর্যায় অনেক কিছু সম্পাদন করেছিলেন। (২ করি. ১১:২৩-২৭) তবে, পৌল ইতিমধ্যেই যা-কিছু সম্পাদন করেছিলেন এবং যে-কষ্ট ভোগ করেছিলেন, সেগুলো সত্ত্বেও তিনি জানতেন তাকে ক্রমাগত যিহোবার সেবা করতে হবে। আমাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য।

৬. ‘পশ্চাৎ স্থিত বিষয় সকলের’ মধ্যে কয়েকটা কী, যেগুলো হয়তো আমাদের ভুলে যেতে হবে?

কীভাবে আমরা “পশ্চাৎ স্থিত বিষয় সকল ভুলিয়া” যাওয়ার বিষয়ে পৌলের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি? আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো অতীতের পাপের কারণে নিজেদের দোষী বলে মনে করে। আপনি যদি এমনটা অনুভব করেন, তা হলে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য খ্রিস্টের দ্বারা জোগানো মুক্তির মূল্য নিয়ে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করুন না কেন? আমরা যদি এই উৎসাহজনক বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন, ধ্যান ও প্রার্থনা করি, তা হলে আমরা অযথা দোষী বোধ করার হাত থেকে স্বস্তি লাভ করতে পারব। আমরা এমনকী সেই বিষয়গুলোর কারণে নিজেদের দোষী বোধ করা বন্ধ করতে পারব, যেগুলো যিহোবা ইতিমধ্যেই ক্ষমা করে দিয়েছেন। পৌলের কাছ থেকে আমরা আরেকটা যে-শিক্ষা লাভ করতে পারি, তা বিবেচনা করুন। কোনো কোনো ব্যক্তি যিহোবার সেবায় আরও বেশি কিছু করার জন্য হয়তো চাকরি ছেড়ে দিয়েছে, যেটার দ্বারা তারা ধনী হতে পারত। যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা হলে আমরা হয়তো যা লাভ করতে পারতাম, সেগুলোর বিষয়ে আকাঙ্ক্ষা না করার মাধ্যমে পিছনে ছেড়ে আসা বিষয়গুলো কি ভুলে যেতে পারি? (গণনা. ১১:৪-৬; উপ. ৭:১০) ‘পশ্চাৎ স্থিত বিষয় সকলের’ অন্তর্ভুক্ত এমনকী সেই বিষয়গুলোও হতে পারে, যেগুলো আমরা ইতিমধ্যেই যিহোবার সেবায় সম্পাদন করেছি অথবা আমরা অতীতে যে-পরীক্ষাগুলো সহ্য করেছি। এটা ঠিক যে, অতীতে যিহোবা যেভাবে আমাদের সাহায্য করেছেন, সেগুলো নিয়ে আমরা যখন চিন্তা করি, তখন আমরা আমাদের পিতার আরও নিকটবর্তী হই। কিন্তু, আমরা যেন কখনো এমনটা মনে না করি, আমরা যিহোবার সেবায় অনেক কিছু করে ফেলেছি।—১ করি. ১৫:৫৮.

জীবনের দৌড়ে আমাদের অবশ্যই বিক্ষেপগুলো এড়িয়ে চলতে হবে এবং আমাদের লক্ষ্যের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে হবে (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৭. প্রথম করিন্থীয় ৯:২৪-২৭ পদ অনুযায়ী জীবনের দৌড়ে বিজয়ী হওয়ার জন্য কী করার প্রয়োজন রয়েছে? একটা উদাহরণ দিন।

পৌল যিশুর এই কথাগুলোর অর্থ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলেন: “প্রাণপণ কর।” (লূক ১৩:২৩, ২৪) পৌল জানতেন, খ্রিস্টের মতো তাকে অবশ্যই শেষ পর্যন্ত প্রাণপণ করতে হবে। তাই, তিনি খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের জীবনকে এক দৌড়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৯:২৪-২৭.) একজন দৌড়বিদ দৌড়োনোর সময়ে শেষ সীমানার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখেন এবং বিক্ষেপগুলো এড়িয়ে চলেন। উদাহরণ স্বরূপ, দৌড়বিদদের হয়তো শহরের রাস্তা দিয়ে দৌড়োতে হয়, যেটার ধারে দোকান রয়েছে অথবা এমন কিছু রয়েছে, যেগুলো তাদের বিক্ষিপ্ত করতে পারে। আপনি কি মনে করেন, একজন দৌড়বিদ দৌড়োনোর সময়ে থেমে দোকানের বাইরে সাজিয়ে রাখা বিষয়গুলো দেখবেন? তিনি যদি বিজয়ী হতে চান, তা হলে তিনি সেগুলো দেখবেন না! জীবনের দৌড়ে আমাদেরও অবশ্যই বিক্ষেপগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখি এবং পৌলের মতো যিহোবার সেবায় প্রাণপণ করি, তা হলে আমরা পুরস্কার লাভ করব!

যেভাবে আমরা বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও যিহোবার সেবা চালিয়ে যেতে পারি

৮. আমরা কোন তিনটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে বিবেচনা করব?

এখন আসুন আমরা তিনটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে বিবেচনা করি, যেগুলো আমাদের নিরুৎসাহিত করতে পারে। প্রথমটা হল প্রত্যাশিত সময়ে আশা পূরণ না হওয়া, দ্বিতীয়টা হল স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়া এবং তৃতীয়টা হল দীর্ঘস্থায়ী পরীক্ষা। অন্যেরা কীভাবে এই ধরনের পরিস্থিতিতে সফল হয়েছে, তা জানার মাধ্যমে আমরা উপকৃত হতে পারি।—ফিলি. ৩:১৭.

৯. প্রত্যাশিত সময়ে আশা পূরণ না হওয়া কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করতে পারে?

প্রত্যাশিত সময়ে আশা পূরণ না হওয়া। যিহোবা যে-উত্তম বিষয়গুলোর প্রতিজ্ঞা করেছেন, স্বাভাবিকভাবেই আমরা সেগুলোর জন্য অপেক্ষা করে আছি। সত্যি বলতে কী, ভাববাদী হবক্‌কূক যখন যিহূদায় দুষ্টতার শেষ নিয়ে আসার জন্য যিহোবার হস্তক্ষেপের বিষয়ে তার আকুল আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন, তখন যিহোবা তাকে বলেছিলেন: “অপেক্ষা কর।” (হবক্‌. ২:৩) কিন্তু, প্রত্যাশিত সময়ে যদি আমাদের আশা পূরণ না হয়, তা হলে আমরা হয়তো উদ্যোগ হারিয়ে ফেলতে পারি। আমরা এমনকী নিরুৎসাহিত হয়ে যেতে পারি। (হিতো. ১৩:১২) বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এমনটা হয়েছিল। সেই সময়ে অনেক অভিষিক্ত খ্রিস্টান আশা করেছিল, তারা ১৯১৪ সালে তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করবে। কিন্তু, তা যখন হয়নি, তখন কীভাবে সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা প্রত্যাশিত সময়ে আশা পূরণ না হওয়ার ফলে আসা অনুভূতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল?

ভাই রয়্যাল ও বোন পার্ল স্পাট্জের আশা ১৯১৪ সালে পরিপূর্ণ হয়নি কিন্তু তারা দশকের পর দশক ধরে ক্রমাগত বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করেছিলেন (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০. প্রত্যাশিত সময়ে এক দম্পতির আশা যখন পূরণ হয়নি, তখন তারা কী করেছিলেন?

১০ দু-জন অনুগত খ্রিস্টানের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যারা এই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। ভাই রয়্যাল স্পাট্জ ১৯০৮ সালে ২০ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। তিনি একেবারে নিশ্চিত ছিলেন, তিনি শীঘ্রই তার স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করবেন। সত্যি বলতে কী, ১৯১১ সালে তিনি যখন বিয়ের প্রস্তাব দেন, তখন তিনি তার হবু স্ত্রী পার্লকে বলেছিলেন: “তুমি জানো, ১৯১৪ সালে কী হতে চলেছে। আমরা যদি বিয়ে করতে চাই, তা হলে আমাদের জন্য তা তাড়াতাড়ি করে ফেলা ভালো!” তারা যখন ১৯১৪ সালে তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করেননি, তখন কি তারা জীবনের দৌড়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন? না, কারণ তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা, পুরস্কার লাভ করা নয়। তারা ধৈর্য ধরে দৌড়োনোর বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। আর এর অনেক দশক পরও ভাই রয়্যাল ও বোন পার্ল তাদের পার্থিব জীবনের শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে গিয়েছিলেন। নিশ্চিতভাবেই আপনি সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে আছেন, যখন যিহোবা তাঁর নামের উপর থেকে অপবাদ দূর করে দেবেন, তাঁর শাসন করার পদ্ধতি যে সঠিক, তা প্রমাণিত করবেন এবং তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করবেন। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, যিহোবার নিরূপিত সময়ে এই সমস্ত কিছু পরিপূর্ণ হবে। সেই সময় না আসা পর্যন্ত আমরা যেন আমাদের ঈশ্বরের সেবায় ক্রমাগত ব্যস্ত থাকি এবং প্রত্যাশিত সময়ে আশা পূরণ না হওয়ার কারণে নিরুৎসাহিত না হই।

বৃদ্ধ বয়সেও ভাই আর্থার সিকর্ড ক্রমাগত উন্নতি করতে ইচ্ছুক ছিলেন (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১-১২. স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়া সত্ত্বেও কেন আমরা বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে যেতে পারি? একটা উদাহরণ দিন।

১১ স্বাস্থ্যের অবনতি। আধ্যাত্মিকভাবে ক্রমাগত শক্তিশালী হওয়ার জন্য একজন আক্ষরিক দৌড়বিদের মতো যে আপনাকে শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে, এমন নয়। সত্যি বলতে কী, অনেকে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়া সত্ত্বেও আধ্যাত্মিকভাবে ক্রমাগত উন্নতি করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ রয়েছে। (২ করি. ৪:১৬) উদাহরণ স্বরূপ, আর্থার সিকর্ড নামে একজন বয়স্ক অসুস্থ ভাইয়ের কথা বিবেচনা করুন। তার বয়স ৮৮ বছর হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি ইতিমধ্যেই ৫৫ বছর ধরে বেথেলে সেবা করছিলেন। একদিন একজন নার্স তার যত্ন নেওয়ার জন্য তার কাছে গিয়ে সদয়ভাবে তাকে বলেছিলেন: “ভাই সিকর্ড, আপনি যিহোবার জন্য অনেক কিছু করেছেন।” তবে, ভাই অতীতে করা তার কাজগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেননি। তিনি সেই নার্সের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলেছিলেন: “হ্যাঁ, এটা ঠিক। কিন্তু, যিহোবার সেবায় আমরা অতীতে যা করেছি, সেটার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আজ আমরা কী করছি।”

১২ হতে পারে, আপনি বহু বছর ধরে যিহোবার সেবা করছেন এবং এখন খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে আর আগের মতো কাজ করতে পারছেন না। যদি তা-ই হয়, তা হলে নিরুৎসাহিত হবেন না। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, অতীতে যিহোবার সেবায় আপনি বিশ্বস্তভাবে যা-কিছু সম্পাদন করেছেন, সেগুলোকে তিনি স্মরণে রেখেছেন এবং সেগুলোর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। (ইব্রীয় ৬:১০) আর মনে রাখবেন, প্রভু যিহোবাকে আমরা কতটা মনে-প্রাণে ভালোবাসি, সেটা তাঁর সেবায় করা আমাদের কাজের পরিমাণের দ্বারা পরিমাপ করা যায় না। এর পরিবর্তে, আমরা এক ইতিবাচক মনোভাব দেখানোর এবং শারীরিকভাবে যতটা করতে পারি, ততটা করার মাধ্যমে প্রকাশ করি যে, আমরা তাঁকে কতটা মনে-প্রাণে ভালোবাসি। (কল. ৩:২৩) যিহোবা আমাদের সীমাবদ্ধতা বোঝেন এবং আমাদের কাছ থেকে আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু আশা করেন না।—মার্ক ১২:৪৩, ৪৪.

ভাই এনালটি ও বোন লিডিয়া মেলনিক বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরেছিলেন (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. ভাই এনালটি ও বোন লিডিয়ার প্রতি কী ঘটেছিল এবং কীভাবে তাদের উদাহরণ আমাদের যিহোবার সেবা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে আর তা এমনকী অনেক পরীক্ষা ভোগ করা সত্ত্বেও?

১৩ দীর্ঘস্থায়ী পরীক্ষা। কোনো কোনো যিহোবার সাক্ষি কয়েক দশক ধরে কঠিন পরিস্থিতি ও তাড়না ভোগ করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, ভাই এনালটি মেলনিকের * বয়স যখন ১২ বছর ছিল, তখন তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়, কারাগারে বন্দি করা হয় এবং মলডোভায় থাকা তার পরিবারের কাছ থেকে ৭,০০০ কিলোমিটারেরও (৪,০০০ মাইল) বেশি দূরে অবস্থিত সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো হয়। এর এক বছর পর ভাই এনালটি, তার মা ও দাদু-দিদাকেও সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো হয়। তার কিছু সময় পর, তারা অন্য একটা গ্রামে সভায় যোগ দিতে শুরু করে কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর জন্য তাদের প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে পায়ে হেঁটে ৩০ কিলোমিটার (২০ মাইল) পথ যাত্রা করতে হতো। পরবর্তী সময়ে, ভাই মেলনিককে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় আর এর ফলে তাকে তার স্ত্রী লিডিয়া এবং তার এক বছরের মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়। বছরের পর বছর ধরে কঠিন পরিস্থিতি ভোগ করা সত্ত্বেও ভাই এনালটি ও তার পরিবার বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে গিয়েছিলেন। এখন ভাই এনালটির বয়স ৮২ বছর আর তিনি মধ্য এশিয়ায় শাখা কমিটির সদস্য হিসেবে সেবা করেন। ভাই এনালটি ও বোন লিডিয়ার মতো আমরাও যেন যিহোবার সেবায় যথাসাধ্য করি, অতীতের মতো ক্রমাগত ধৈর্য ধরি।—গালা. ৬:৯.

ভবিষ্যতের আশার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখুন

১৪. লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পৌলকে যা করতে হতো, সেই বিষয়ে তিনি কী উপলব্ধি করেছিলেন?

১৪ পৌল যে তার দৌড় সম্পন্ন করবেন এবং তার লক্ষ্যে পৌঁছাবেন, সেই বিষয়ে তিনি দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন। অভিষিক্ত খ্রিস্টান হিসেবে তিনি “ঈশ্বরের কৃত ঊর্দ্ধ্বদিক্‌স্থ আহ্বানের পণ” বা পুরস্কার পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু, তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তাকে ‘দৌড়িতে দৌড়িতে যত্ন করিতে’ বা প্রচেষ্টা করে যেতে হবে। (ফিলি. ৩:১৪) পৌল ফিলিপীয়দের সাহায্য করার জন্য একটা আগ্রহজনক দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন, যাতে তারা ক্রমাগত তাদের লক্ষ্যের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে পারে।

১৫. কীভাবে পৌল ফিলিপীয়ের খ্রিস্টানদের ‘দৌড়িতে দৌড়িতে যত্ন করিবার’ বিষয়ে উৎসাহিত করার জন্য নাগরিকত্বের দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন?

১৫ পৌল ফিলিপীয়দের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, তারা হল স্বর্গপুরীর প্রজা অর্থাৎ তাদের স্বর্গীয় নাগরিকত্ব রয়েছে। (ফিলি. ৩:২০) কেন তাদের তা স্মরণে রাখতে হতো? সেইসময়ে রোমীয় নাগরিকত্বকে উচ্চমূল্য দেওয়া হতো। * কিন্তু, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সেটার চেয়ে অনেক ভালো এক নাগরিকত্ব ছিল, যে-নাগরিকত্বের মাধ্যমে তারা আরও বেশি উপকার লাভ করবে। স্বর্গীয় নাগরিকত্বের তুলনায় রোমীয় নাগরিকত্ব খুবই নগণ্য ছিল! এই কারণে পৌল ফিলিপীয়দের ‘খ্রীষ্টের সুসমাচারের যোগ্যরূপে তাঁহার প্রজাদের মত আচরণ করিবার’ জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। (ফিলি. ১:২৭) বর্তমানে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের লক্ষ্য হল স্বর্গে অনন্তজীবন লাভ করা। আর এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর উদ্দেশে ক্রমাগত প্রচেষ্টা করার সময়ে তারা এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করে।

১৬. আমাদের জীবন লাভ করার আশা স্বর্গে থাকুক অথবা পৃথিবীতে, ফিলিপীয় ৪:৬, ৭ পদ অনুযায়ী আমাদের অবশ্যই ক্রমাগত কী করতে হবে?

১৬ আমাদের অনন্তজীবন লাভ করার আশা স্বর্গে থাকুক অথবা পৃথিবীতে, আমাদের অবশ্যই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা করতে হবে। আমাদের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আমরা যেন পিছনে ছেড়ে আসা বিষয়গুলোর দিকে ফিরে না তাকাই অথবা কোনো কিছুকে আমাদের উন্নতিতে বাধা হতে না দিই। (ফিলি. ৩:১৬) আমাদের প্রত্যাশিত সময়ে আশা পূরণ না-ও হতে পারে অথবা আমাদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে। আমরা হয়তো অনেক বছর ধরে কঠিন পরিস্থিতি ও তাড়না ভোগ করেছি। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আপনি যেন ‘কোন বিষয়ে ভাবিত না হন।’ এর পরিবর্তে, আপনার বিনতি ও যাচ্ঞা ঈশ্বরের কাছে জানান এবং তিনি আপনাকে এমন শান্তি প্রদান করবেন, যেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।—পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.

১৭. পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে বিবেচনা করব?

১৭ ঠিক যেমন একজন দৌড়বিদ তার শেষ সীমানার নিকটবর্তী হওয়ার সময়ে দৌড় শেষ করার জন্য যথাসাধ্য করেন, একইভাবে আমরাও যেন আমাদের জীবনের দৌড় শেষ করার উপর সম্পূর্ণরূপে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখি। আমাদের ক্ষমতা ও পরিস্থিতি আমাদের যতটা করার অনুমতি দেয়, ততটা করার জন্য আমরা যেন যথাসাধ্য করি এবং ভবিষ্যতের চমৎকার বিষয়গুলোর দিকে উৎসুকভাবে এগিয়ে চলি। সঠিক দিকে ক্রমাগত দৌড়োনোর জন্য এবং যে-গতিতে আমরা দৌড়োতে পারি, তা বজায় রাখার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে? পরবর্তী প্রবন্ধ আমাদের সঠিক অগ্রাধিকার স্থাপন করতে এবং “যাহা যাহা শ্রেয়ঃ” বা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, ‘তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনতে’ সাহায্য করবে।—ফিলি. ১:৯, ১০, পাদটীকা।

গান সংখ্যা ৭ খ্রিস্টীয় উৎসর্গীকরণ

^ অনু. 5 আমরা যত দীর্ঘসময় ধরেই যিহোবার সেবা করি না কেন, খ্রিস্টান হিসেবে আমরা ক্রমাগত পরিপক্ব হতে এবং উন্নতি করতে চাই। প্রেরিত পৌল তার সহবিশ্বাসীদের নিরুৎসাহিত না হওয়ার বা হাল ছেড়ে না দেওয়ার বিষয়ে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন! আমরা যখন ফিলিপীয়দের উদ্দেশে লেখা তার চিঠি পড়ি, তখন আমরা আমাদের জীবনের দৌড়ে ধৈর্য ধরার বিষয়ে উৎসাহিত হই। এই প্রবন্ধে দেখানো হবে, কীভাবে আমরা পৌলের অনুপ্রাণিত বাক্য কাজে লাগাতে পারি।

^ অনু. 13 ২০০৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের সচেতন থাক! পত্রিকায় দেওয়া ভাই মেলনিকের জীবনকাহিনি দেখুন, যেটার শিরোনাম হল “ছেলেবেলা থেকেই ঈশ্বরকে ভালবাসতে শিখেছি।”

^ অনু. 15 যেহেতু ফিলিপী রোমীয়দের অধীনে ছিল, তাই ফিলিপীতে বসবাসরত লোকেরা এমন কিছু সুযোগসুবিধা উপভোগ করত, যেগুলো রোমীয় নাগরিকদের অধিকারভুক্ত ছিল। তাই, পৌলের দৃষ্টান্ত তার শ্রোতাদের জন্য অর্থপূর্ণ ছিল।