সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩০

যিহোবার পরিবারে আপনার মূল্য রয়েছে

যিহোবার পরিবারে আপনার মূল্য রয়েছে

“তুমি স্বর্গদূতদের চেয়ে তাঁকে . . . নীচু করেছ; তুমি তাঁকে গৌরব ও সমাদরের মুকুট পরিয়েছ।”—ইব্রীয় ২:৭.

গান ৪৩ জেগে থাকো, নিশ্চল হও, বলবান হও

সারাংশ *

১. আমরা যখন যিহোবার সৃষ্টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন আমাদের মনে কোন কোন প্রশ্ন আসতে পারে?

যিহোবা এই নিখিলবিশ্বে অনেক কিছু সৃষ্টি করেছেন। আমরা যখন সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন আমরা হয়তো ঠিক তেমনটাই অনুভব করি, যেমনটা দায়ূদ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমার অঙ্গুলি-নির্ম্মিত আকাশমণ্ডল, তোমার স্থাপিত চন্দ্র ও তারকামালা নিরীক্ষণ করি, [বলি], মর্ত্ত্য কি যে, তুমি তাহাকে স্মরণ কর? মনুষ্য-সন্তান বা কি যে, তাহার তত্ত্বাবধান কর?” (গীত. ৮:৩, ৪) দায়ূদের মতো আমাদেরও মনে হতে পারে, তারাগুলোর তুলনায় আমরা কত ক্ষুদ্র। তারপরও, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন। এখন আমরা জানব, যিহোবা যখন আদম ও হবাকে সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি তাদের প্রতি শুধুমাত্র চিন্তাই নয়, কিন্তু তাদের তাঁর পরিবারের অংশও করেছিলেন।

২. যিহোবা আদম ও হবাকে কী করার জন্য বলেছিলেন?

যিহোবা তাঁর সন্তানদের অর্থাৎ আদম ও হবাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি চেয়েছিলেন, তারা যেন সন্তানের জন্ম দেন আর এই পৃথিবীর দেখাশোনা করেন। ঈশ্বর তাদের বলেছিলেন: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর।” (আদি. ১:২৮) আদম ও হবা যদি যিহোবার কথা শুনতেন আর তাঁর দেওয়া কাজ ভালোভাবে করতেন, তা হলে তারা ও তাদের সন্তানেরা সবসময় যিহোবার পরিবারের অংশ হয়ে থাকত।

৩. কোন বিষয়টা থেকে বোঝা যায়, যিহোবার পরিবারে আদম ও হবার অনেক মূল্য ছিল?

ইব্রীয় ২:৭ পদ মানুষের সৃষ্টি সম্বন্ধে জানায়: “তুমি স্বর্গদূতদের চেয়ে তাঁকে . . . নীচু করেছ; তুমি তাঁকে গৌরব ও সমাদরের মুকুট পরিয়েছ।” এটা ঠিক যে, মানুষকে স্বর্গদূতদের মতো শক্তি, বুদ্ধি ও ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। (গীত. ১০৩:২০) তবে, তাদের ও স্বর্গদূতদের মধ্যে বেশি পার্থক্য নেই। স্বর্গদূতদের চেয়ে মানুষকে সামান্য “নীচু” করে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই বিষয়টা থেকে বোঝা যায়, যিহোবার পরিবারে আদম ও হবার অনেক মূল্য ছিল। সত্যিই, যিহোবা কত অসাধারণভাবে আদম ও হবাকে সৃষ্টি করেছিলেন আর তাদের কত ভালো জীবন দিয়েছিলেন!

৪. (ক) আদম ও হবার প্রতি কী ঘটেছিল? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

  দুঃখের বিষয় হল, আদম ও হবা যিহোবার আজ্ঞা পালন করেননি, ফলে তারা যিহোবার পরিবারের অংশ আর রইলেন না। আদম ও হবার কারণে তাদের সন্তানদের অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে, যেগুলোর বিষয়ে আমরা পরে লক্ষ করব। কিন্তু, যিহোবার উদ্দেশ্য পরিবর্তন হয়নি। তিনি এখনও চান, বিশ্বস্ত মানুষ যেন তাঁর সন্তান হয়ে ওঠে। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে যিহোবা ইতিমধ্যে দেখিয়েছেন যে, তিনি মানুষকে মূল্যবান হিসেবে গণ্য করেছেন। এ ছাড়া, আমরা আলোচনা করব, আজ আমরা কী করতে পারি, যাতে আমরা যিহোবার পরিবারের অংশ হতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা এও জানব যে, ভবিষ্যতে যিহোবার সন্তানেরা এই পৃথিবীতে কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করবে।

যিহোবা মানুষকে মূল্যবান হিসেবে গণ্য করেছেন

কীভাবে যিহোবা আমাদের মূল্যবান হিসেবে গণ্য করেছেন? (৫-১১ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৫. যিহোবা আমাদের তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন, সেইজন্য আমাদের কী করতে হবে?

যিহোবা আমাদের তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন। (আদি. ১:২৬, ২৭) এর অর্থ হল, আমরা যিহোবার মতো গুণাবলি গড়ে তুলতে পারি। যেমন প্রেম, সমবেদনা, বিশ্বস্ততা ও ধার্মিকতা। (গীত. ৮৬:১৫; ১৪৫:১৭) আমরা যখন আমাদের মধ্যে যিহোবার মতো গুণাবলি গড়ে তুলব, তখন আমরা তাঁর গৌরব করব। আমরা এই বিষয়েও কৃতজ্ঞ হব যে, তিনি আমাদের তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন। (১ পিতর ১:১৪-১৬) এভাবে, যিহোবা খুশি হবেন আর আমরাও খুশি হব। আর আমরা দেখাব, আমরা যিহোবার পরিবারের অংশ হতে চাই।

৬. কীভাবে যিহোবা মানুষকে মূল্যবান হিসেবে গণ্য করেছেন?

যিহোবা আমাদের জন্য এক অপূর্ব বাড়ি প্রস্তুত করেছেন। মানুষকে সৃষ্টি করার অনেক আগে যিহোবা পৃথিবীকে প্রস্তুত করেছিলেন। (ইয়োব ৩৮:৪-৬; যির. ১০:১২) যিহোবা খুবই দয়ালু, তাই মানুষের খুশির জন্য তিনি অনেক কিছু সৃষ্টি করেছেন। (গীত. ১০৪:১৪, ১৫, ২৪) তিনি সেগুলো লক্ষ করলেন আর দেখলেন যে, সবই “অতি উত্তম।” (আদি. ১:১০, ১২, ৩১) এরপর, যিহোবা সেগুলোর উপর মানুষকে “কর্ত্তৃত্ব” করতে দিলেন। এভাবে, তিনি তাদের মূল্যবান হিসেবে গণ্য করেছেন। (গীত. ৮:৬) যিহোবা চান যেন সিদ্ধ মানুষ সবসময় তাঁর সৃষ্টির দেখাশোনা করে। আপনি কি এরজন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ দেন?

৭. যিহোশূয় ২৪:১৫ পদ থেকে কীভাবে বোঝা যায় যে, মানুষকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে?

যিহোবা আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমরা জীবনে কী করব, তা আমরা মনোনীত বা বাছাই করতে পারি। (পড়ুন, যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৫.) আমরা যখন যিহোবাকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নিই, তখন তিনি খুব খুশি হন। (গীত. ৮৪:১১; হিতো. ২৭:১১) আমরা জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই স্বাধীনতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি। কীভাবে? আসুন, যিশুর উদাহরণ থেকে তা লক্ষ করি।

৮. উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন, যিশু কীভাবে নিজের স্বাধীনতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করেছিলেন।

যিশু সবসময় অন্যদের সম্বন্ধে চিন্তা করতেন। একবার, যিশু ও তাঁর প্রেরিতেরা অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তারা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এক নিরিবিলি জায়গায় যান। কিন্তু, তারা বিশ্রাম নিতে পারেননি। অনেক লোক তাদের খুঁজতে খুঁজতে সেখানে চলে আসে। তারা যিশুর কাছ থেকে শিখতে চেয়েছিল। যিশু তাদের দেখে বিরক্ত হননি বরং তাদের প্রতি সমবেদনা দেখিয়ে “তাদের অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন।” (মার্ক ৬:৩০-৩৪) আমাদেরও নিজেদের চেয়ে অন্যদের সম্বন্ধে বেশি চিন্তা করা উচিত। আমরা যখন অন্যদের সাহায্য করার জন্য নিজেদের সময় ও শক্তি ব্যবহার করি, তখন তা যিহোবার গৌরব নিয়ে আসে। (মথি ৫:১৪-১৬) আর আমরা দেখাই যে, আমরা যিহোবার পরিবারের অংশ হতে চাই।

৯. যিহোবা মানুষকে কোন দায়িত্ব দিয়েছেন?

যিহোবা মানুষকে সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন। এ ছাড়া, তিনি তাদের এই দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা যেন নিজেদের সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসতে এবং তাঁর সেবা করতে শিক্ষা দেয়। যিহোবা স্বর্গদূতদের অনেক ক্ষমতা দিয়েছেন, কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা তাদের দেননি। এই ক্ষমতা তিনি শুধুমাত্র মানুষকে দিয়েছেন। বাবা-মায়েরা, আপনারা কি এটার জন্য ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ নন? যিহোবা আপনাদের এক বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি চান যেন আপনারা তাঁর “শাসনে ও উপদেশে তাদের মানুষ করে” তোলেন। (ইফি. ৬:৪; দ্বিতীয়. ৬:৫-৭; গীত. ১২৭:৩) আপনাদের সাহায্য করার জন্য তাঁর সংগঠন বিভিন্ন প্রকাশনা, ভিডিও, সংগীত ও ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রবন্ধ প্রস্তুত করেছে। এটা থেকে বোঝা যায়, যিহোবা ও যিশু সন্তানদের খুব ভালোবাসেন। (লূক ১৮:১৫-১৭) আপনারা যখন যিহোবার উপর নির্ভর করেন আর সন্তানদের ভালোভাবে বড়ো করে তোলেন, তখন যিহোবা তা দেখে খুব খুশি হন। আর এভাবে, আপনারা সন্তানদেরও যিহোবার পরিবারের অংশ হওয়ার জন্য সাহায্য করেন।

১০-১১. মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে যিহোবা মানুষকে কোন সুযোগ দিয়েছেন?

১০যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রকে মৃত্যুবরণ করতে দিয়েছেন, যাতে আমরা আবারও তাঁর পরিবারের অংশ হতে পারি।  অনুচ্ছেদ ৪-এ আমরা যেমনটা আলোচনা করেছি, আদম ও হবা ও সেইসঙ্গে তাদের সন্তানেরা যিহোবার পরিবারের অংশ আর রইল না। (রোমীয় ৫:১২) আদম ও হবা ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করেছিলেন, তাই যিহোবা তাঁর পরিবার থেকে তাদের বের করে দেন। কিন্তু, তাদের সন্তানদের কী হত? যিহোবা মানুষকে খুব ভালোবাসেন। সেইজন্য তিনি তাঁর একজাত পুত্রকে মৃত্যুবরণ করতে দিয়েছিলেন, যাতে বাধ্য মানুষ আবারও তাঁর পরিবারের অংশ হতে পারে। (যোহন ৩:১৬; রোমীয় ৫:১৯) এই বলিদানের কারণে যিহোবা ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তিকে নিজের সন্তান হিসেবে দত্তক নিয়েছেন।—রোমীয় ৮:১৫-১৭; প্রকা. ১৪:১.

১১ এ ছাড়া, লক্ষ লক্ষ লোক যিহোবার আজ্ঞা পালন করছে। তাদের এই আশা রয়েছে যে, হাজার বছরের শেষে চূড়ান্ত পরীক্ষার পর তারা যিহোবার পরিবারের অংশ হবে। (গীত. ২৫:১৪; রোমীয় ৮:২০, ২১) তাই আজ, তারা তাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবাকে “পিতা” হিসেবে দেখে। (মথি ৬:৯) যে-লোকদের জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তাদেরও যিহোবা ও তাঁর মান সম্বন্ধে শেখার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে, তারা তখনই যিহোবার পরিবারের অংশ হতে পারবে, যখন তারা যিহোবাকে উপাসনা করার সিদ্ধান্ত নেবে।

১২. আমরা এখন কোন প্রশ্ন নিয়ে বিবেচনা করব?

১২ আমরা যেমনটা দেখলাম, যিহোবা মানুষকে বিভিন্ন উপায়ে মূল্যবান হিসেবে গণ্য করেছেন। তিনি অভিষিক্ত ব্যক্তিদের নিজের সন্তান হিসেবে দত্তক নিয়েছেন। আর “বিরাট জনতা” নতুন জগতে তাঁর সন্তান হয়ে উঠবে। (প্রকা. ৭:৯) তাহলে প্রশ্ন হল, যিহোবার পরিবারের অংশ হওয়ার জন্য আজ আমরা কী করতে পারি?

যিহোবার পরিবারের অংশ হওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি?

১৩. যিহোবার পরিবারের অংশ হওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১৩যিহোবাকে ভালোবাসুন আর সমস্ত হৃদয় দিয়ে তাঁর সেবা করুন। (পড়ুন, মার্ক ১২:৩০.) যিহোবা আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে একটা হল, যিহোবা আমাদের তাঁকে ভালোবাসার ও তাঁর উপাসনা করার ক্ষমতা দিয়েছেন। আমরা যখন যিহোবার “আজ্ঞাগুলো পালন করি,” তখন আমরা দেখাই যে, তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা রয়েছে। (১ যোহন ৫:৩) একটা আজ্ঞা হল, লোকদের শিষ্য করা এবং তাদের বাপ্তিস্ম দেওয়া। (মথি ২৮:১৯) আরেকটা আজ্ঞা হল, আমরা যেন একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখাই। (যোহন ১৩:৩৫) যে-লোকেরা যিহোবার আজ্ঞা পালন করে, তাদের তিনি তাঁর পরিবারের অংশ করবেন।—গীত. ১৫:১, ২.

১৪. কীভাবে আমরা অন্যদের প্রতি প্রেম দেখাতে পারি? (মথি ৯:৩৬-৩৮; রোমীয় ১২:১০)

১৪অন্যদের প্রতি প্রেম দেখান। প্রেম হল যিহোবার প্রধান গুণ। (১ যোহন ৪:৮) যিহোবা আমাদের প্রতি সেইসময় প্রেম দেখিয়েছিলেন, যখন আমরা তাঁকে জানতামও না। (১ যোহন ৪:৯, ১০) আমাদেরও অন্যদের প্রতি প্রেম দেখাতে হবে। (ইফি. ৫:১) এমনটা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল, শেষ না আসা পর্যন্ত আমরা লোকদের যিহোবা সম্বন্ধে শেখাব। (পড়ুন, মথি ৯:৩৬-৩৮.) এভাবে তারা জানতে পারবে, কীভাবে তারা ঈশ্বরের পরিবারের অংশ হতে পারে। বাপ্তিস্ম নেওয়ার পরও, তাদের প্রতি প্রেম দেখাতে হবে এবং সম্মানের সঙ্গে আচরণ করতে হবে। (১ যোহন ৪:২০, ২১) কীভাবে? ধরুন, একজন ভাই কিছু করেছেন। কিন্তু, আমরা হয়তো বুঝতে পারছি না, তিনি কেন এমনটা করলেন। এইরকম ক্ষেত্রে আমরা এমনটা চিন্তা করব না, তার মনোভাব সঠিক নয়। এর পরিবর্তে, আমরা তার উপর নির্ভর করব, তার প্রতি সম্মান দেখাব আর নিজের চেয়ে তাকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করব।—পড়ুন, রোমীয় ১২:১০; ফিলি. ২:৩.

১৫. কাদের প্রতি আমাদের করুণা ও দয়া দেখাতে হবে?

১৫সবার প্রতি করুণা ও দয়া দেখান। আমরা যদি যিহোবার পরিবারের অংশ হতে চাই, তা হলে আমাদের বাইবেলের শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, যিশু শিখিয়েছিলেন, আমাদের সবার প্রতি করুণা ও দয়া দেখাতে হবে, এমনকী আমাদের শত্রুদের প্রতিও। (লূক ৬:৩২-৩৬) কখনো কখনো এমনটা করা কঠিন হতে পারে। কিন্তু, আমাদের যিশুর মতো চিন্তা করতে হবে এবং তাঁর মতো আচরণ করতে হবে। আমরা যখন যিহোবার আজ্ঞা পালন করব আর যিশুর মতো হওয়ার প্রচেষ্টা করব, তখন আমরা দেখাব যে, আমরা যিহোবার পরিবারের অংশ হতে চাই।

১৬. কীভাবে আমরা যিহোবার পরিবারের সুনাম রক্ষা করতে পারি?

১৬যিহোবার পরিবারের সুনাম রক্ষা করুন। সাধারণত, একটা পরিবারের একজন ছোটো ভাই সেটাই করে, যেটা সে তার দাদাকে করতে দেখে। দাদা যদি বাইবেলের নীতি অনুযায়ী জীবনযাপন করে আর ভালো কাজ করে, তা হলে ছোটো ভাইও সেটা করে থাকে। কিন্তু, দাদা যদি মন্দ কাজ করতে থাকে, তা হলে ছোটো ভাইও তাকে দেখে মন্দ কাজ করতে শেখে। যিহোবার পরিবারেও এমনটা হয়ে থাকে। যখন একজন খ্রিস্টান ধর্মভ্রষ্ট হয়ে যান, অনৈতিক কিংবা মন্দ কাজ করতে শুরু করেন, তখন অন্যেরাও তার দেখাদেখি সেইরকম কাজ করতে পারে। এর ফলে, ঈশ্বরের পরিবারের সুনাম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। (১ থিষল. ৪:৩-৮) যারা মন্দ কাজ করে, তাদের দেখাদেখি আমাদের কোনো মন্দ কাজ করা উচিত নয়। শুধু তা-ই নয়, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে এমন কোনো কিছুই আমাদের করা উচিত নয়।

১৭. আমাদের কী চিন্তা করা উচিত নয় আর কেন?

১৭টাকাপয়সার উপর নয় বরং যিহোবার উপর নির্ভর করুন। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন, আমরা যদি তাঁর রাজ্যকে জীবনে প্রথম স্থান দিই, তা হলে তিনি খাওয়া-দাওয়া কিংবা জীবনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ের কোনো অভাব হতে দেবেন না। (গীত. ৫৫:২২; মথি ৬:৩৩) যিহোবার প্রতিজ্ঞার উপর আমাদের যদি নির্ভরতা থাকে, তা হলে আমরা এইরকম চিন্তা করব না, টাকাপয়সা বা আরাম-আয়েশের বিষয়গুলো আমাদের আনন্দ দিতে এবং সুরক্ষা জোগাতে পারে। কারণ আমরা জানি, প্রকৃত শান্তি শুধুমাত্র ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার মাধ্যমে লাভ করা যায়। (ফিলি. ৪:৬, ৭) আমাদের কাছে যদি অনেক কিছু কেনার টাকাপয়সাও থাকে, তা হলেও আমাদের কাছে কি এতটা সময় ও শক্তি রয়েছে, যাতে সেগুলো উপভোগ করতে আর সেগুলোর দেখাশোনা করতে পারি? এমনটা কি হতে পারে, সেগুলোর প্রতি আমরা আসক্ত হয়ে পড়েছি? আমাদের মনে রাখতে হবে, যিহোবার সেবায় আমাদের অনেক কাজ রয়েছে এবং তিনি চান যেন আমরা সেই কাজ করার সময় বিক্ষিপ্ত হয়ে না পড়ি। সেই লোকটির কথা চিন্তা করুন, যার কাছে যিহোবার সেবা করার এবং তাঁর দত্তকপুত্র হওয়ার এক সুযোগ ছিল। কিন্তু, টাকাপয়সার প্রতি তার এতটাই আসক্তি ছিল যে, সেই অপূর্ব সুযোগ সে হাতছাড়া করেছিল। আমরা যেন কখনোই তার মতো না হই!—মার্ক ১০:১৭-২২.

ভবিষ্যতে যিহোবার সন্তানেরা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করবে?

১৮. বাধ্য মানবজাতি কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করবে?

১৮ বাধ্য মানবজাতি অনেক আশীর্বাদ লাভ করবে। তারা সবসময় যিহোবাকে ভালোবাসতে এবং তাঁর উপাসনা করতে পারবে। তারা আরেকটা আশীর্বাদ লাভ করবে: খুব শীঘ্র যখন ঈশ্বরের রাজ্য এই পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করবে, তখন তাদের এই পৃথিবীকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হবে। যিশু সেই সমস্ত সমস্যা দূর করে দেবেন, যেগুলো আদম ও হবার কারণে এসেছিল। যিহোবা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির জীবন ফিরিয়ে দেবেন আর তারা এই পৃথিবীতে অনন্তজীবন ও উত্তম স্বাস্থ্য লাভ করবে। (লূক ২৩:৪২, ৪৩) যিহোবার দাসেরা যখন সিদ্ধ হয়ে যাবে, তখন তারা প্রকৃত অর্থে ঈশ্বরের সন্তান হবে আর তারা সেই ‘গৌরব ও সমাদর’ প্রদর্শন করবে, যেটার বিষয়ে বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে।—ইব্রীয় ২:৭.

১৯. আপনাকে কী স্মরণে রাখতে হবে?

১৯ আপনি যদি ‘বিরাট জনতার’ অংশ হয়ে থাকেন, তা হলে আপনার কাছে এক অপূর্ব প্রত্যাশা রয়েছে। যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন আর তিনি চান যেন আপনি তাঁর পরিবারের অংশ হন। তাই, এমন কাজ করুন, যা দেখে তিনি আনন্দিত হবেন। তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো প্রতিদিন স্মরণে রাখুন। যিহোবার উপাসনা ও গৌরব করার যে-বিশেষ সুযোগ আপনি পেয়েছেন, সেটার প্রতি উপলব্ধি দেখান।

গান ৫০ ঈশ্বরীয় প্রেমের উদাহরণ

^ অনু. 5 একটা পরিবার তখনই সুখী হতে পারে, যখন প্রত্যেকে এটা জানে যে, তাদের কী করতে হবে আর যখন তারা একে অপরকে সাহায্য করে। একজন বাবা হলেন পরিবারের মস্তক এবং তিনি পরিবারের যত্ন নেন। মা তাকে সহযোগিতা করেন এবং সন্তানেরা বাবা-মায়ের কথা শোনে। যিহোবার পরিবারেও এমনটা হয়। তিনি বলেছেন, আমাদের কী করতে হবে। আমরা যদি সেই অনুযায়ী কাজ করি, তা হলে আমরা তাঁর পরিবারের অংশ হতে পারব।

^ অনু. 55 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যিহোবা মানুষকে তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টিতে করেছেন। এই কারণে, এক দম্পতি একে অন্যের প্রতি আর তাদের সন্তানদের প্রতি প্রেম ও সমবেদনা দেখাচ্ছেন। তারা যিহোবাকেও ভালোবাসেন। যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া উপহারের প্রতি তাদের উপলব্ধি রয়েছে। তাই, তারা তাদের সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখাচ্ছেন। তারা একটা ভিডিও দেখিয়ে তাদের বোঝাচ্ছেন, কেন যিহোবা যিশুকে মৃত্যুবরণ করতে দিয়েছিলেন। তারা সন্তানদের এও শেখাচ্ছেন, নতুন জগতে তারা পৃথিবী ও জীবজন্তুর দেখাশোনা করবে।