অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৩
যিহোবার দৃষ্টি আমাদের উপর আছে
“সদাপ্রভুর দৃষ্টি তাহাদের উপরে, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে।”—গীত. ৩৩:১৮.
গান ২২ “সদাপ্রভু আমার পালক”
সারাংশ *
১. কেন যিশু যিহোবার কাছে অনুরোধ করেছিলেন যেন তিনি তাঁর শিষ্যদের যত্ন নেন?
মারা যাওয়ার আগের রাতে, যিশু তাঁর পিতার কাছে একটা বিশেষ বিষয় নিয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি যিহোবার কাছে অনুরোধ করেছিলেন যেন যিহোবা তাঁর শিষ্যদের যত্ন নেন। (যোহন ১৭:১৫, ২০) যিশু জানতেন, যিহোবা সবসময় তাঁর লোকদের লক্ষ রাখেন এবং তাদের রক্ষা করেন। তবে, পরবর্তী সময় শয়তান যিশুর শিষ্যদের উপর অনেক অত্যাচার করবে এবং তাড়না নিয়ে আসবে। এই কারণে যিশু তাদের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তিনি জানতেন, একমাত্র যিহোবার সাহায্যে তাঁর শিষ্যেরা শয়তানের আক্রমণের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে।
২. গীতসংহিতা ৩৩:১৮-২০ পদ অনুযায়ী পরীক্ষার মুখোমুখি হলে, কেন আমাদের ভয় পাওয়া উচিত নয়?
২ আজ শয়তানের এই জগতে আমাদের বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। এই কারণে কখনো কখনো আমরা হতাশ হয়ে পড়ি আর অনেকসময় তো যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকাও আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। তবে, এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, আমাদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। যিহোবা আমাদের দেখছেন। তিনি জানেন, আমরা কোন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তিনি আমাদের সাহায্য করার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছেন। আসুন, বাইবেলে দেওয়া দু-জন ব্যক্তির উদাহরণের উপর মনোযোগ দিই, যেখান থেকে আমরা নিশ্চিত হব, “সদাপ্রভুর দৃষ্টি তাহাদের উপরে, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে।”—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৩:১৮-২০.
যখন আপনি নিজেকে খুব একা বলে মনে করেন
৩. কখন আমরা হয়তো নিজেদের খুব একা বলে মনে করি?
৩ মণ্ডলীতে আমাদের অনেক ভাই-বোন আছে। তারপরও, কখনো কখনো আমরা হয়তো নিজেদের খুব একা বলে মনে করি। যেমন, অল্পবয়সিদের যখন স্কুলে সবার সামনে বলতে হয় যে, তারা কী বিশ্বাস করে আর কী বিশ্বাস করে না, তখন তারা হয়তো ভয় পায় এবং নিজেদের খুব একা বলে মনে করে। তারা হয়তো সেইসময়ও নিজেদের খুব একা বলে মনে করে, যখন তারা কোনো নতুন মণ্ডলীতে যায়। এ ছাড়া, আমরা যখন হতাশ হয়ে পড়ি কিংবা কোনো কারণে দুঃখের মধ্যে থাকি, তখনও আমরা হয়তো নিজেদের খুব একা বলে মনে করি। আমরা হয়তো ভাবতে শুরু করি, আমাদের নিজেদেরই এই অনুভূতিগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে হবে। আমরা হয়তো অন্যদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রেও ইতস্তত বোধ করি কারণ আমাদের মনে হতে পারে, তারা আমার অনুভূতি বুঝবে না। অনেকসময় আমরা হয়তো এইরকমও ভাবতে শুরু করি, কেউই আমার জন্য চিন্তা করে না। এই সমস্ত কারণে আমরা হয়তো দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি কিংবা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি এবং মনে করি, কেউই আমাদের সাহায্য করতে পারবে না। কিন্তু, যিহোবা চান না যেন আমরা কখনো এমনটা চিন্তা করি। কেন আমরা তা বলতে পারি?
৪. কেন ভাববাদী এলিয় বলেছিলেন, “কেবল আমিই বাকি রয়েছি”?
৪ ভাববাদী এলিয়কে স্মরণ করুন। রানি ঈষেবল প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি এলিয়কে হত্যা করেই ছাড়বেন। তাই, এলিয় নিজের প্রাণ রক্ষা করার জন্য ৪০ দিন ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। (১ রাজা. ১৯:১-৯) এলিয় একটা গুহার মধ্যে লুকিয়ে ছিলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে যিহোবাকে বলেছিলেন: “[ভাববাদীদের মধ্যে] কেবল আমিই বাকি রয়েছি।” (১ রাজা. ১৯:১০, NW) এমনটা নয় যে, ইজরায়েলে আর কোনো ভাববাদী বেঁচে ছিল না। ওবদিয় ১০০ জন ভাববাদীকে ঈষেবলের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। (১ রাজা. ১৮:৭, ১৩) কিন্তু প্রশ্ন হল: কেন এলিয়ের মনে হচ্ছিল, তিনি একাই বেঁচে আছেন? এলিয়ের হয়তো মনে হয়েছিল, ভাববাদীদের মধ্যে এক জনও বেঁচে নেই। অথবা তার হয়তো মনে হয়েছিল, ‘যিহোবা কর্মিল পর্বতের উপরে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, বাল নয় বরং তিনিই হলেন সত্য ঈশ্বর। তাহলে, কেন এখন অন্য লোকেরা আমার সঙ্গে যিহোবার উপাসনা করছে না?’ কিংবা তার হয়তো মনে হয়েছিল, কেউ জানে না, তিনি কেমন অনুভব করছেন বা কোন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। অথবা তিনি হয়তো চিন্তা করেছিলেন, ‘আমি বেঁচে আছি কি মরে গিয়েছি, তাতে কারো কিছু যায়-আসে না।’ এটা ঠিক যে, আমরা জানি না, সেই সময় এলিয়ের মনে কী চলছিল, কিন্তু যিহোবা তা জানতেন। তাই, সেই কঠিন সময়ে তিনি এলিয়কে সাহায্য করেছিলেন।
৫. কীভাবে যিহোবা এলিয়কে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, তিনি একা নন?
৫ যিহোবা এলিয়কে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করেছিলেন। যিহোবা চেষ্টা করেছিলেন যেন এলিয় তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি এলিয়কে দু-বার জিজ্ঞেস করেছিলেন: “এলিয়, তুমি এখানে কী করছ?” (১ রাজা. ১৯:৯, ১৩, NW) এলিয় যখন তার মনের অবস্থা কিংবা অনুভূতির কথা খুলে যিহোবাকে বলেছিলেন, তখন তিনি এলিয়ের কথা মন দিয়ে শুনেছিলেন। পরে, যিহোবা এলিয়কে ঝোড়ো বাতাস, ভূমিকম্প ও আগুন ব্যবহার করার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, তাঁর অনেক শক্তি আছে। আর তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, তিনি এলিয়ের সঙ্গে রয়েছেন। তিনি এলিয়কে এও বলেছিলেন, তিনি একা নন, আরও অনেক লোক রয়েছে, যারা তাঁর সেবা করছে। (১ রাজা. ১৯:১১, ১২, ১৮) এলিয় যখন যিহোবাকে নিজের মনের অবস্থা খুলে বলেছিলেন এবং তাঁর কথা শুনেছিলেন, তখন এলিয় নিশ্চয়ই অনেক স্বস্তি পেয়েছিলেন। এরপর, যিহোবা এলিয়কে কিছু দায়িত্বও দিয়েছিলেন। তিনি এলিয়কে বলেছিলেন, এলিয় যেন হসায়েলকে সিরিয়ার রাজা হিসেবে, যেহূকে ইজরায়েলের রাজা হিসেবে ও সেইসঙ্গে ইলীশায়কে একজন ভাববাদী হিসেবে অভিষেক করেন। (১ রাজা. ১৯:১৫, ১৬) যিহোবা যখন এলিয়কে এই দায়িত্বগুলো দিয়েছিলেন, তখন এলিয় ভালো বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিতে পেরেছিলেন। এ ছাড়া, যিহোবা তাকে এক ভালো বন্ধু দিয়েছিলেন। এখন এলিয় একা ছিলেন না, ইলীশায় তার সঙ্গে ছিলেন। যখন আপনি নিজেকে খুব একা বলে মনে করেন, তখন যিহোবা আপনাকেও সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু এরজন্য, আপনাকেও কিছু করতে হবে।
৬. যখন আপনি নিজেকে খুব একা বলে মনে করেন, তখন কোন বিষয়ে প্রার্থনা করতে পারেন? (গীতসংহিতা ৬২:৮)
৬ যিহোবা চান যেন আপনি তাঁর কাছে প্রার্থনা করেন। তিনি জানেন, আমরা কোন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেছেন, আমরা যখনই তাঁর কাছে প্রার্থনা করব, তখনই তিনি তা শুনবেন। (১ থিষল. ৫:১৭) তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনে অনেক খুশি হন। (হিতো. ১৫:৮) যখন আপনি নিজেকে খুব একা বলে মনে করেন, তখন আপনি কোন বিষয়ে প্রার্থনা করতে পারেন? এলিয়ের মতো মন খুলে যিহোবার সঙ্গে কথা বলুন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৬২:৮.) তাঁকে বলুন, আপনার মনে কী চলছে, আপনি কেমন অনুভব করছেন এবং কোন বিষয়টা আপনাকে কষ্ট দিয়েই চলেছে। তারপর, সেই অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করার জন্য তাঁর কাছে সাহায্য চান। যেমন, তুমি যদি তোমার স্কুলের ছেলে-মেয়েদের এই বিষয়টা বলতে ভয় পাও যে, তুমি কী বিশ্বাস কর আর কী কর না, তা হলে সাহসের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করো। তুমি যিহোবার কাছে প্রজ্ঞাও চাইতে পার, যাতে তাদের ভালোভাবে বিষয়টা বোঝাতে পার এবং তাদের খারাপও না লাগে। (লূক ২১:১৪, ১৫) এমন যদি হয়, আপনি কোনো বিষয়ে খুব দুঃখে রয়েছেন, তা হলে যিহোবাকে বলুন যেন তিনি কোনো অভিজ্ঞ ভাই কিংবা বোনের সঙ্গে কথা বলতে আপনাকে সাহায্য করেন। আপনি সেই ভাই কিংবা বোনের জন্যও প্রার্থনা করতে পারেন, যাতে তারা আপনার কথা ভালোভাবে বুঝতে পারে। তাই, যখনই আপনি নিজেকে খুব একা বলে মনে করেন, তখন মন খুলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন আর লক্ষ করুন, যিহোবা কীভাবে আপনার প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেন। এরপর, সেই বিষয় নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলুন।
৭. আপনি মাউরিসিয়োর কাছ থেকে কী শিখেছেন?
৭ যিহোবা আমাদের সবাইকে কিছু-না-কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। যেমন, আমাদের সবাইকে প্রচার করতে হয় এবং মাঝেমধ্যে সভাগুলোতে বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট তুলে ধরতে হয়। আবার কিছু জনকে মণ্ডলীর দায়িত্ব পালন করতে হয়। (গীত. ১১০:৩) বিশ্বাস করুন, যখন আপনি নিজের দায়িত্ব পালন করার জন্য পরিশ্রম করেন, তখন যিহোবা সেটা লক্ষ করেন এবং তা দেখে খুব খুশি হন। আমরা যখন এই কাজগুলোতে ব্যস্ত থাকব, তখন আমরা নিজেদের ততটা একা বলে মনে করব না। এখন মাউরিসিয়োর * উদাহরণ লক্ষ করুন। তার বাপ্তিস্ম নেওয়ার কিছুসময় পর তার এক প্রিয় বন্ধু ধীরে ধীরে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করে। মাউরিসিয়ো বলেন: “এটা দেখে আমি একেবারে হতবাক হয়ে যাই এবং খুবই ভেঙে পড়ি। আমি চিন্তা করতে শুরু করি, ‘যিহোবার কাছে আমি যে-প্রতিজ্ঞা করেছি, সেটা কি আমি পালন করতে পারব? একদিন আমিও তাঁকে ছেড়ে চলে যাব না তো?’ আমার মনে হচ্ছিল, কেউ আমার অনুভূতি বুঝতে পারবে না। তাই, আমার নিজেকে খুব একা বলে মনে হচ্ছিল।” তখন মাউরিসিয়ো কী করেছিলেন? তিনি বলেন: “আমি আরও বেশি করে প্রচার করতে শুরু করি। এভাবে আমি নিজের বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার এবং দুঃখে থাকার পরিবর্তে ভালো বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিতে শুরু করি। আমি যখন অন্যদের সঙ্গে প্রচার করতাম, তখন আমি আর নিজেকে আগের মতো খুব একা বলে মনে করতাম না। এর ফলে, আমি অনেক আনন্দে থাকতাম।” আমরাও এই ভাইয়ের মতো করতে পারি। যদিও এখন আমরা অন্য ভাই-বোনদের সঙ্গে ঘরে ঘরে প্রচার করতে পারি না, কিন্তু তাদের সঙ্গে আমরা চিঠি লেখার বা ফোনের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিতে পারি। মাউরিসিয়ো আরও কিছু করেছিলেন। তিনি বলেন: “আমি মণ্ডলীর আরও অনেক কাজ করতে শুরু করি। সভাতে আমাকে যে-অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হত, সেটার জন্য আমি খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতাম। তারপর, আমি যখন সভাতে সেটা তুলে ধরতাম, তখন ভাই-বোনেরা খুব খুশি হত। আর আমি জানতাম, যিহোবাও আমাকে দেখে খুব খুশি হবেন।”
যখন বড়ো বড়ো পরীক্ষার মুখোমুখি হই
৮. যখন আমরা বড়ো বড়ো পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন আমরা কেমন অনুভব করি?
৮ আমরা শেষকালে বাস করছি, তাই আমরা জানি, আমরা পরীক্ষার মুখোমুখি হবই। (২ তীম. ৩:১) কিন্তু, কখনো কখনো আমরা হঠাৎ করে কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারি কিংবা আমাদের জীবনে এমন কিছু ঘটতে পারে, যেটা আমরা কখনো আশাই করিনি। আমাদের টাকাপয়সার সমস্যা দেখা দিতে পারে, কোনো বড়ো রোগ ধরা পড়তে পারে অথবা আমরা কোনো বন্ধু কিংবা প্রিয়জনকে মৃত্যুতে হারাতে পারি। কখনো কখনো মনে হতে পারে, সমস্যাগুলো যেন শেষই হচ্ছে না, একটার পর একটা এসেই যাচ্ছে। আবার, অনেকসময় আমাদের জীবনে একসঙ্গে সমস্যার পাহাড় ভেঙে পড়ে। যখন এইরকমটা হয়, তখন আমরা একেবারে ভেঙে পড়ি। এইরকম সময়ে মনে হতে পারে, ‘এগুলো আমি আর সহ্য করতে পারব না।’ তবে মনে রাখবেন, যিহোবা আমাদের লক্ষ করছেন। তিনি খুব ভালোভাবে আমাদের অনুভূতি বোঝেন এবং জানেন, আমরা কোন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। আর তাঁর সাহায্যেই আমরা প্রতিটা পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারব।
৯. ইয়োবকে কোন কোন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছিল?
৯ স্মরণ করুন, ইয়োবের প্রতি কী ঘটেছিল। তিনি একটার পর একটা বড়ো বড়ো পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন। এক দিনের মধ্যেই তিনি তার সমস্ত কিছু হারিয়েছিলেন। তার কিছু পশুপাল চুরি করা হয়েছিল এবং কিছু মেরে ফেলা হয়েছিল। তার দাসেরাও মারা গিয়েছিল আর এমনকী একটা দুর্ঘটনায় তার সমস্ত ছেলে-মেয়ে মারা গিয়েছিল। (ইয়োব ১:১৩-১৯) এই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই, ইয়োবের এমন এক রোগ হয়, যেটার ফলে তার সারা শরীর যন্ত্রণাদায়ক ফোড়ায় ভরে যায়। (ইয়োব ২:৭) এই কারণে, ইয়োব খুবই ভেঙে পড়েছিলেন। তাই, তিনি বলেছিলেন: “আমার ঘৃণা হইয়াছে, আমি নিত্য বাঁচিয়া থাকিতে চাহি না।”—ইয়োব ৭:১৬.
১০. পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য যিহোবা কীভাবে ইয়োবকে সাহায্য করেছিলেন? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১০ যিহোবা এই সমস্ত কিছু দেখছিলেন। তিনি ইয়োবকে খুব ভালোবাসতেন। তাই, তিনি ইয়োবের পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য তাকে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করেছিলেন। যিহোবা ইয়োবের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি আলাদা আলাদা পশুপাখির মাধ্যমে ইয়োবকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি কতটা বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী এবং তিনি তাঁর সৃষ্টির বিষয়ে কতটা চিন্তা করেন। (ইয়োব ৩৮:১, ২; ৩৯:৯, ১৩, ১৯, ২৭; ৪০:১৫; ৪১:১, ২) পরে, যিহোবা ইলীহূর মাধ্যমে ইয়োবকে উৎসাহিত করেছিলেন এবং তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। ইলীহূ ইয়োবকে এই বিষয়ে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে, যারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তিনি তাদের আশীর্বাদ করেন। তারপর, যিহোবা ইলীহূর মাধ্যমে ইয়োবের চিন্তাধারাকে সংশোধন করেছিলেন। ইলীহূ ইয়োবকে বলেছিলেন, তিনি যেন শুধু নিজের সম্বন্ধে চিন্তা না করেন, এর পরিবর্তে তিনি যেন মনে রাখেন, পুরো পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তার সামনে তিনি কতটা ক্ষুদ্র। (ইয়োব ৩৭:১৪) যিহোবা ইয়োবকে একটা কাজও দিয়েছিলেন। তিনি ইয়োবকে বলেছিলেন, তিনি যেন তার তিন জন বন্ধুর জন্য প্রার্থনা করেন। (ইয়োব ৪২:৮-১০) বর্তমানে, আমরা যখন বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন যিহোবা কীভাবে আমাদের সাহায্য করেন?
১১. পরীক্ষার মুখোমুখি হলে কীভাবে আমরা বাইবেল থেকে সান্ত্বনা পেতে পারি?
১১ বর্তমানে, যিহোবা আমাদের সঙ্গে সেভাবে কথা বলেন না, যেভাবে তিনি ইয়োবের সঙ্গে বলেছিলেন। কিন্তু, তিনি তাঁর বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। (রোমীয় ১৫:৪) তিনি তাঁর বাক্য বাইবেলে অনেক কিছু লিখিয়েছেন। আমরা যদি সেটি পড়ি, তা হলে পরীক্ষার মুখোমুখি হলে আমরা সান্ত্বনা পাব। যেমন, তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, বড়ো বড়ো পরীক্ষাও ‘তাঁর প্রেম থেকে আমাদের আলাদা করতে পারবে না।’ (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি “সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে।” (গীত. ১৪৫:১৮) যিহোবা বলেছেন, আমরা যদি তাঁর উপর নির্ভর করি, তা হলে যেকোনো পরীক্ষার সঙ্গে আমরা মোকাবিলা করতে পারব এবং কষ্টের মধ্যেও আনন্দে থাকতে পারব। (১ করি. ১০:১৩; যাকোব ১:২, ১২) বাইবেল থেকে আমরা এও জানতে পেরেছি, ভবিষ্যতে আমরা যে-অনন্তজীবন পাব, সেটার তুলনায় বর্তমানের সমস্যাগুলো শুধু কিছুসময়ের জন্য। (২ করি. ৪:১৬-১৮) যিহোবা এও প্রতিজ্ঞা করেছেন, সমস্ত সমস্যার মূল শয়তান এবং তার সঙ্গীদের তিনি চিরকালের জন্য উপড়ে ফেলে দেবেন। (গীত. ৩৭:১০) আমরা যখন এই বিষয়ে চিন্তা করি, ভবিষ্যতে যিহোবা আমাদের সমস্ত সমস্যা দূর করে দেবেন, তখন আমরা কতই-না সান্ত্বনা পাই! বাইবেলে এমন আরও শাস্ত্রপদ আছে, যেগুলো পড়লে আমরা সান্ত্বনা পেতে পারি। এগুলো মনে রাখলে আমরা ভবিষ্যতের পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারব। আপনি কি এইরকম কিছু শাস্ত্রপদ মুখস্থ করেছেন?
১২. পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের আর কী করতে হবে?
১২ যিহোবা চান যেন আমরা বাইবেল অধ্যয়ন করার এবং সেটি নিয়ে ধ্যান করার জন্য সময় বের করি। এরপর, আমরা যখন সেই কথাগুলো মেনে চলব, তখন আমাদের বিশ্বাস বাড়বে এবং আমরা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হব। এভাবে আমরা পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতে পারব। আমরা যদি বাইবেল পড়ি আর সেই অনুযায়ী কাজ করি, তা হলে যিহোবা আমাদের তাঁর পবিত্র শক্তিও দেবেন। তিনি আমাদের এমন “অসাধারণ শক্তি” দেবেন, যেটার সাহায্যে আমরা সাহসের সঙ্গে পরীক্ষাগুলোর মোকাবিলা করতে পারব।—২ করি. ৪:৭-১০.
১৩. “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস” যে-ব্যবস্থা করেছে, সেগুলোর সাহায্যে কীভাবে আমরা পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে পারি?
১৩ যিহোবার সাহায্যে বর্তমানে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস” অনেক প্রবন্ধ, ভিডিও ও গান প্রস্তুত করছে। (মথি ২৪:৪৫) এগুলো থেকেও আমাদের বিশ্বাস বাড়ে এবং আমরা যিহোবার নিকটে থাকি। আমরা এই ব্যবস্থাগুলো থেকে পুরোপুরিভাবে উপকার লাভ করার চেষ্টা করতে পারি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একজন বোন বলেন, এগুলো থেকে তিনি অনেক সাহায্য পেয়েছিলেন। বোন বলেন: “আমি ৪০ বছর ধরে যিহোবার সেবা করছি। সেই সময়গুলোতে আমি অনেক পরীক্ষার মুখোমুখি হই। কখনো কখনো তো আমার মনে হয়েছিল, আমি হয়তো আর যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারব না।” বোনকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছিল। একজন ব্যক্তি মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর সময় বোনের দাদুকে ধাক্কা মারে আর এর ফলে, তার দাদু মারা যান। একটা বড়ো রোগের কারণে বোনের মা-বাবাও মারা যান আর বোনের নিজেরও দু-বার ক্যান্সার ধরা পড়ে। কীভাবে বোন এই সমস্ত কিছু সহ্য করতে পেরেছিলেন? বোন বলেন: “যিহোবা সবসময় আমার যত্ন নিয়েছিলেন। বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের মাধ্যমে তিনি যা-কিছু ব্যবস্থা করেছেন, সেগুলো থেকে আমি অনেক সাহায্য পাই। ইয়োবের মতো আমারও সংকল্প দৃঢ় হয় যে, ‘প্রাণ থাকিতে আমি আপন সিদ্ধতা [“বিশ্বস্ততা,” NW] ত্যাগ করিব না।’”—ইয়োব ২৭:৫.
১৪. পরীক্ষার মুখোমুখি হলে কীভাবে যিহোবা আমাদের ভাই-বোনদের মাধ্যমে সাহায্য করেন? (১ থিষলনীকীয় ৪:৯)
১৪ যিহোবা তাঁর লোকদের শিখিয়েছেন, পরীক্ষার সময় তারা যেন একে অন্যকে সান্ত্বনা দেয় এবং একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখায়। (২ করি. ১:৩, ৪; পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৪:৯.) ঠিক যেমন ইলীহূ ইয়োবকে সাহায্য করেছিলেন, একইভাবে কঠিন সময়ে ভাই-বোনেরাও আমাদের বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করে। (প্রেরিত ১৪:২২) বোন ডিয়ানের প্রতি এইরকমই কিছু ঘটেছিল। তার স্বামীর একটা বড়ো রোগ ধরা পড়ে। মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা সেই সময় বোনকে সামলায় এবং যিহোবার নিকটে থাকার জন্য সাহায্য করে। বোন বলেন: “সেই কঠিন সময়ে যিহোবা যেন তাঁর দুই বাহুতে আমাকে ধরে রেখেছিলেন। মণ্ডলীর ভাই-বোনেরাও সেই সময়ে আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছিল। যেমন, তারা ফোন করত, আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসত এবং আমাদের গলা জড়িয়ে ধরত। যেহেতু, আমি গাড়ি চালাতে পারি না, তাই কোনো-না-কোনো ভাই কিংবা বোন আমাকে প্রচারে এবং সভাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসত। এর ফলে, আমরা অনেক সান্ত্বনা পাই।” আমাদের ভাই-বোনেরা আমাদের খুব ভালোবাসে আর এটা আমাদের জন্য কতই-না বড়ো এক আশীর্বাদ!
আমরা খুবই খুশি যে, যিহোবা আমাদের যত্ন নেন!
১৫. কেন আমরা নিশ্চিত, আমরা দৃঢ়ভাবে পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারব?
১৫ আমাদের সবাইকে কোনো-না-কোনো সময়ে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। তবে, এই প্রবন্ধে আমরা যেমনটা শিখলাম, আমরা একা নই, যিহোবা আমাদের সঙ্গে আছেন। একজন বাবা যেমন তার সন্তানকে ভালোবাসে এবং সবসময় তার প্রতি লক্ষ রাখে, ঠিক একইভাবে যিহোবাও আমাদের ভালোবাসেন এবং সবসময় আমাদের প্রতি লক্ষ রাখেন। আমরা যখন যিহোবাকে ডাকি, তখন তিনি আমাদের কথা শোনেন এবং আমাদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। (যিশা. ৪৩:২) আমাদের সাহায্য করার জন্য যিহোবা আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন। যেমন, তিনি আমাদের তাঁর কাছে প্রার্থনা করার সুযোগ দিয়েছেন, আমাদের বাইবেল দিয়েছেন, বিভিন্ন প্রকাশনা ও ভিডিও দিয়েছেন আর সেইসঙ্গে এমন ভাই-বোনদেরও দিয়েছেন, যারা আমাদের খুব ভালোবাসে। তাই, যেকোনো পরীক্ষাই আসুক না কেন, আমরা সেটার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতে পারব।
১৬. আমরা যদি চাই, যিহোবা আমাদের যত্ন নিক, তা হলে আমাদের কী করতে হবে?
১৬ আমরা যিহোবার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ যে, তাঁর দৃষ্টি আমাদের উপর আছে। এই বিষয়ে চিন্তা করে আমাদের হৃদয় কি আনন্দে ভরে যায় না? (গীত. ৩৩:২১) কিন্তু, আমরা যদি চাই, যিহোবা আমাদের যত্ন নিক, তা হলে আমাদেরও কিছু করতে হবে। তিনি আমাদের সাহায্য করার জন্য যা-কিছু ব্যবস্থা করেছেন, সেগুলো থেকে আমাদের পুরোপুরি উপকার লাভ করতে হবে। এ ছাড়া, আমাদের চেষ্টা করতে হবে যেন আমরা সবসময় তাঁর কথা শুনি আর তাঁর দৃষ্টিতে যা ঠিক, তা-ই করি। তখন তাঁর দৃষ্টি সবসময় আমাদের উপর থাকবে।—১ পিতর ৩:১২.
গান ৫১ আমরা যিহোবাতে আসক্ত
^ আজ আমাদের সবাইকে বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় আর সেগুলোর সঙ্গে আমরা একা মোকাবিলা করতে পারব না। আমাদের যিহোবার সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রবন্ধ আমাদের এই নিশ্চয়তাকে বাড়াবে যে, যিহোবা আমাদের প্রতি লক্ষ রাখেন এবং আমাদের জন্য অনেক চিন্তা করেন। যিহোবা জানেন, আমরা প্রত্যেকে কোন কোন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আর সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য তিনি আমাদের সাহায্য করেন।
^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।