সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৭

যিহোবার সাহায্যে মন্দদূতদের প্রতিরোধ করুন

যিহোবার সাহায্যে মন্দদূতদের প্রতিরোধ করুন

“স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে।”—ইফি. ৬:১২.

গান সংখ্যা ৩৩ তাদের ভয় কোরো না!

সারাংশ *

১. ইফিষীয় ৬:১০-১৩ পদ অনুযায়ী, একটা কোন হৃদয়গ্রাহী উপায়ে যিহোবা আমাদের প্রতি বিবেচনা দেখান? ব্যাখ্যা করুন।

একটা যে-হৃদয়গ্রাহী উপায়ে যিহোবা তাঁর দাস হিসেবে আমাদের প্রতি বিবেচনা দেখান, সেটা হল আমাদের শত্রুদের প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের সাহায্য করার মাধ্যমে। আমাদের প্রধান শত্রুরা হল শয়তান ও মন্দদূতেরা। যিহোবা এই শত্রুদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক করেন এবং তাদের প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো প্রদান করেন। (পড়ুন, ইফিষীয় ৬:১০-১৩.) আমরা যখন যিহোবার সাহায্য গ্রহণ করি এবং তাঁর উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করি, তখন আমরা দিয়াবলের প্রতিরোধ করায় সফল হতে পারি। আমরাও সেই একই আস্থা রাখতে পারি, যা প্রেরিত পৌলের ছিল। তিনি লিখেছিলেন: “ঈশ্বর যখন আমাদের সপক্ষ, তখন আমাদের বিপক্ষ কে?”—রোমীয় ৮:৩১.

২. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে বিবেচনা করব?

সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমরা শয়তান ও মন্দদূতদের দ্বারা আকৃষ্ট হই না। আমরা যিহোবা সম্বন্ধে জানার এবং তাঁর সেবা করার উপর বেশি মনোযোগ দিই। (গীত. ২৫:৫) তবে, শয়তানের কাজ সম্বন্ধে আমাদের জানার প্রয়োজন রয়েছে। কেন? কারণ এভাবে আমরা তার দ্বারা প্রতারিত হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি। (২ করি. ২:১১) শয়তান ও মন্দদূতেরা একটা যে-প্রধান উপায়ে লোকেদের ভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, সেটা নিয়ে আমরা এই প্রবন্ধে বিবেচনা করব। এ ছাড়া, আমরা এও বিবেচনা করব যে, কীভাবে আমরা সফলভাবে তাদের প্রতিরোধ করতে পারি।

যেভাবে মন্দদূতেরা লোকেদের ভ্রান্ত করে

৩-৪. (ক) প্রেতচর্চা কী? (খ) প্রেতচর্চার উপর বিশ্বাস কতটা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে রয়েছে?

একটা যে-প্রধান উপায়ে শয়তান ও মন্দদূতেরা লোকেদের ভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, সেটা হল প্রেতচর্চা। যারা প্রেতচর্চা করে, তারা এমন বিষয়গুলো জানার অথবা নিয়ন্ত্রণ করার দাবি করে, যেগুলো লোকেরা সাধারণত জানতে অথবা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ, কেউ কেউ ভবিষ্যৎকথন অথবা জ্যোতিষবিদ্যা ব্যবহার করে দাবি করে যে, তারা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানে। অন্যেরা হয়তো দাবি করতে পারে যে, তারা মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছে। কেউ কেউ ডাকিনীবিদ্যা অথবা জাদুবিদ্যা ব্যবহার করে এবং তারা হয়তো অন্যদের বশীকরণ করা বা প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। *

প্রেতচর্চার ক্ষমতার উপর বিশ্বাস কতটা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে রয়েছে? ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ানের ১৮টা দেশে করা একটা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সমীক্ষার প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোক জাদুক্রিয়া, ডাকিনীবিদ্যা অথবা মায়াবিদ্যায় বিশ্বাস করে এবং তারা প্রায় সবাই এও বিশ্বাস করে যে, আত্মাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। আফ্রিকার ১৮টা দেশে কিছু লোকের উপর আরেকটা সমীক্ষা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে গড়ে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি লোক এটা বলেছিল যে, তারা ডাকিনীবিদ্যায় বিশ্বাস করে। অবশ্য আমরা যেখানেই বাস করি না কেন, আমাদের অবশ্যই প্রেতচর্চার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ শয়তান ‘সমস্ত নরলোককে’ ভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।—প্রকা. ১২:৯.

৫. প্রেতচর্চা সম্বন্ধে যিহোবা কেমন অনুভব করেন?

যিহোবা হলেন “সত্যের ঈশ্বর।” (গীত. ৩১:৫) তাই, প্রেতচর্চা সম্বন্ধে তিনি কেমন অনুভব করেন? তিনি এটাকে ঘৃণা করেন! যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “তোমার মধ্যে যেন এমন কোন লোক পাওয়া না যায়, যে পুত্ত্র বা কন্যাকে অগ্নির মধ্য দিয়া গমন করায়, যে মন্ত্র ব্যবহার করে, বা গণক, বা মোহক, বা মায়াবী, বা ঐন্দ্রজালিক, বা ভূতড়িয়া, বা গুণী বা প্রেতসাধক। কেননা সদাপ্রভু এই সকল কার্য্যকারীকে ঘৃণা করেন।” (দ্বিতীয়. ১৮:১০-১২) যিহোবা ইস্রায়েল জাতিকে যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, খ্রিস্টানরা সেই ব্যবস্থার অধীন নয়। তবে, আমরা জানি যে, প্রেতচর্চা সম্বন্ধে তাঁর অনুভূতি পরিবর্তিত হয়নি।—মালাখি ৩:৬.

৬. (ক) শয়তান লোকেদের ক্ষতি করার জন্য কীভাবে প্রেতচর্চাকে ব্যবহার করে? (খ) উপদেশক ৯:৫ পদ অনুযায়ী মৃতদের অবস্থা সম্বন্ধে সত্যটা কী?

যিহোবা আমাদের প্রেতচর্চার বিরুদ্ধে সতর্ক করেন কারণ তিনি জানেন, শয়তান লোকেদের ক্ষতি করার জন্য এই বিষয়টা ব্যবহার করে। শয়তান মিথ্যা কথাকে তুলে ধরার জন্য প্রেতচর্চাকে ব্যবহার করে আর এর অন্তর্ভুক্ত হল মৃতেরা অন্য কোনো জগতে বেঁচে আছে। (পড়ুন, উপদেশক ৯:৫.) এ ছাড়া, শয়তান লোকেদের আতঙ্কে রাখার এবং যিহোবার কাছে থেকে দূরে নিয়ে যাওয়ার জন্যও প্রেতচর্চাকে ব্যবহার করে। তার লক্ষ্য হল যে-লোকেরা প্রেতচর্চা করে থাকে, তারা যেন যিহোবার পরিবর্তে মন্দদূতদের উপর আস্থা রাখে।

যেভাবে আমরা মন্দদূতদের প্রতিরোধ করি

৭. যিহোবা আমাদের কী বলেন?

আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, যিহোবা আমাদের বলেন যে, শয়তান ও মন্দদূতদের দ্বারা ভ্রান্ত হওয়া এড়িয়ে চলার জন্য আমাদের কী জানতে হবে। আসুন, আমরা শয়তান ও মন্দদূতদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময়ে যে-ব্যাবহারিক পদক্ষেপগুলো নিতে পারি, সেগুলোর কয়েকটা নিয়ে আলোচনা করি।

৮. (ক) মন্দদূতদের প্রতিরোধ করার প্রধান উপায় কী? (খ) কীভাবে গীতসংহিতা ১৪৬:৪ পদ শয়তানের মিথ্যাকে প্রকাশ করে দেয়?

ঈশ্বরের বাক্য পড়ুন এবং সেটি নিয়ে ধ্যান করুন। মন্দদূতদের দ্বারা তুলে ধরা মিথ্যা কথাগুলো প্রত্যাখ্যান করার এটাই হল প্রধান উপায়। ঈশ্বরের বাক্য হল ধারালো খড়্গের মতো, যেটি শয়তানের তুলে ধরা মিথ্যা কথাগুলোকে কেটে দিতে অর্থাৎ প্রকাশ করে দিতে পারে। (ইফি. ৬:১৭) উদাহরণ স্বরূপ, ঈশ্বরের বাক্য এই মিথ্যাকে প্রকাশ করে দেয় যে, মৃতেরা জীবিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৪৬:৪.) এ ছাড়া, এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, একমাত্র যিহোবাই সঠিকভাবে ভবিষ্যতের বিষয়ে বলতে পারেন। (যিশা. ৪৫:২১; ৪৬:১০) আমরা যদি নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্য পড়ি এবং সেটি নিয়ে ধ্যান করি, তা হলে আমরা সেই মিথ্যা কথাগুলো প্রত্যাখ্যান করার জন্য প্রস্তুত থাকতে এবং সেগুলোকে ঘৃণা করতে পারব, যেগুলো মন্দদূতেরা আমাদের বিশ্বাস করাতে চায়।

৯. প্রেতচর্চার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন অভ্যাসগুলো আমরা এড়িয়ে চলি?

প্রেতচর্চার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো কাজ প্রত্যাখ্যান করুন। সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমরা কখনোই প্রেতচর্চায় রত হই না, তা সেটা যে-ধরনেরই হোক না কেন। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা ভূতুড়িয়াদের কাছে যাই না অথবা অন্য কোনো উপায়ে মৃতদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি না। আগের প্রবন্ধে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সেই প্রথাগুলো এড়িয়ে চলি, যেগুলো এই মিথ্যার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, মৃত ব্যক্তিরা এখনও জীবিত আছে। আর আমরা জ্যোতিষবিদ্যা অথবা ভবিষ্যৎকথন ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানতে চাওয়ার জন্য চেষ্টা করি না। (যিশা. ৮:১৯) আমরা জানি, এই ধরনের সমস্ত অভ্যাস খুবই বিপদজনক এবং এগুলো আমাদের শয়তান ও মন্দদূতদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার দিকে চালিত করতে পারে।

অতিপ্রাকৃতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো জিনিস থেকে দূরে থাকা এবং প্রেতচর্চার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আমোদপ্রমোদ প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের অনুকরণ করুন (১০-১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০-১১. (ক) প্রথম শতাব্দীতে কেউ কেউ যখন সত্য সম্বন্ধে শিখেছিল, তখন তারা কী করেছিল? (খ) ১ করিন্থীয় ১০:২১ পদ অনুযায়ী কেন আমাদের প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উদাহরণ অনুকরণ করা উচিত এবং কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

১০ অতিপ্রাকৃতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জিনিসগুলো থেকে দূরে থাকুন। প্রথম শতাব্দীতে ইফিষে বসবাসরত লোকেদের মধ্যে কেউ কেউ প্রেতচর্চা করত। তারা যখন সত্য সম্বন্ধে শিখেছিল, তখন তারা এক বড়ো পদক্ষেপ নিয়েছিল। “যাহারা যাদুক্রিয়া করিত, তাহাদের মধ্যে অনেকে আপন আপন পুস্তক আনিয়া একত্র করিয়া সকলের সাক্ষাতে পোড়াইয়া ফেলিল।” (প্রেরিত ১৯:১৯) তারা মন্দদূতদের প্রতিরোধ করার জন্য যথাসাধ্য করেছিল। জাদুবিদ্যা সংক্রান্ত তাদের বইগুলো অনেক দামি ছিল। কিন্তু, তারা সেই বইগুলো অন্যদের দেওয়ার অথবা বিক্রি করার পরিবর্তে সেগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিল। সেই বইগুলো কতটা দামি, সেটার উপর নয় বরং তারা যিহোবাকে খুশি করার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল।

১১ কীভাবে আমরা প্রথম শতাব্দীর সেই খ্রিস্টানদের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি? আমাদের জন্যও এমন যেকোনো জিনিস থেকে দূরে থাকা বিজ্ঞতার কাজ হবে, যেগুলো অতিপ্রাকৃতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এর অন্তর্ভুক্ত হল তাবিজকবজ অথবা অন্য কোনো জিনিস, যেগুলো লোকেরা মন্দদূতদের হাত থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য পরে থাকে অথবা কিনে থাকে।— পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১০:২১.

১২. আমাদের আমোদপ্রমোদের বিষয়ে নিজেদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

১২ সতর্কতার সঙ্গে আপনার আমোদপ্রমোদ পরীক্ষা করুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি অতিপ্রাকৃতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বই, পত্রিকা অথবা ইন্টারনেটে পাওয়া প্রবন্ধগুলো পড়ি? আমি যে-গানগুলো শুনি, যে-সিনেমা ও টিভির অনুষ্ঠানগুলো দেখি অথবা যে-ভিডিও গেমস্‌ খেলি, সেগুলোর বিষয়ে কী বলা যায়? আমার আমোদপ্রমোদের সঙ্গে কি কোনোরকমভাবে প্রেতচর্চা জড়িত রয়েছে? এর মধ্যে কি কোনোরকমভাবে ভ্যাম্পায়ার, জোম্বি অথবা অতিপ্রাকৃতিক শক্তির বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে? এর মধ্যে কি জাদুবিদ্যা, বশীকরণ অথবা অভিশাপের ব্যবহারকে অক্ষতিকর মজা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে?’ অবশ্য, আমোদপ্রমোদের মধ্যে কাল্পনিক বিষয় থাকার মানেই যে সেটা প্রেতচর্চার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, এমন নয়। আপনি যখন আপনার আমোদপ্রমোদ নিয়ে পরীক্ষা করেন, তখন এমন বাছাইগুলো করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন, যেগুলো আপনাকে যিহোবার ঘৃণিত বিষয়গুলো থেকে অনেক দূরে থাকতে সাহায্য করবে। আমরা আমাদের ঈশ্বরের সামনে “বিঘ্নহীন সংবেদ” বা বিবেক ‘রক্ষা করিবার’ জন্য যথাসাধ্য করতে চাই।—প্রেরিত ২৪:১৬. *

১৩. আমাদের কী এড়িয়ে চলা উচিত?

১৩ মন্দদূতদের বিষয়ে গল্প বলা এড়িয়ে চলুন। এই বিষয়ে আমাদের যিশুর দ্বারা স্থাপিত উদাহরণ অনুকরণ করা উচিত। (১ পিতর ২:২১) পৃথিবীতে আসার আগে তিনি স্বর্গে ছিলেন আর তিনি শয়তান ও মন্দদূতদের সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতেন। কিন্তু, তিনি সেই মন্দদূতদের করা কাজগুলো নিয়ে গল্প বলেননি। যিশু যিহোবা সম্বন্ধে লোকেদের শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন, শয়তান সম্বন্ধে নয়। আমরা মন্দদূতদের সম্বন্ধে গল্পগুলো না ছড়ানোর মাধ্যমে যিশুকে অনুকরণ করতে পারি। আমরা যেন আমাদের কথার মাধ্যমে দেখাই যে, আমাদের “হৃদয়ে শুভকথা” অর্থাৎ সত্য “উথলিয়া উঠিতেছে।”—গীত. ৪৫:১.

আমাদের মন্দদূতদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। যিহোবা, যিশু ও স্বর্গদূতেরা তাদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী (১৪-১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৪-১৫. (ক) কেন মন্দদূতদের বিষয়ে আমাদের আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়? (খ) বর্তমানে যিহোবা যে তাঁর লোকেদের সুরক্ষা জোগাচ্ছেন, সেটার কোন প্রমাণ রয়েছে?

১৪ মন্দদূতদের বিষয়ে আতঙ্কিত হবেন না। বর্তমান জগতে আমাদের প্রতি মন্দ বিষয়গুলো ঘটতে পারে। দুর্ঘটনা, অসুস্থতা অথবা মৃত্যুও আমাদের জীবনে অপ্রত্যাশিতভাবে আসতে পারে। কিন্তু, আমাদের এইরকম ধরে নেওয়া উচিত নয় যে, এর পিছনে মন্দদূতদের হাত রয়েছে। বাইবেল ব্যাখ্যা করে, যেকোনো ব্যক্তির প্রতি “কাল ও দৈব” ঘটতে পারে। (উপ. ৯:১১) আর মন্দদূতদের চেয়ে যিহোবা যে অনেক বেশি শক্তিশালী, তা তিনি দেখিয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ, ইয়োবকে হত্যা করার অনুমতি ঈশ্বর শয়তানকে দেননি। (ইয়োব ২:৬) মোশির দিনে যিহোবা মিশরের মন্ত্রবেত্তাদের উপর নিজের ক্ষমতা দেখিয়েছিলেন। (যাত্রা. ৮:১৮; ৯:১১) পরবর্তী সময়ে, যিশু যিহোবার কাছ থেকে ক্ষমতা লাভ করার পর শয়তান ও মন্দদূতদের উপর তাঁর ক্ষমতা দেখিয়েছিলেন আর তাদের স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করেছিলেন। আর খুব শীঘ্রই তাদের অগাধলোকে নিক্ষেপ করা হবে, যেখানে তারা কারো ক্ষতি করতে পারবে না।—প্রকা. ১২:৯; ২০:২, ৩.

১৫ বর্তমানে, যিহোবা যে তাঁর লোকেদের সুরক্ষা জোগাচ্ছেন, সেটার অনেক প্রমাণ আমরা দেখতে পাই। এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করুন: আমরা পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত সত্য সম্বন্ধে প্রচার করার এবং শিক্ষা দেওয়ার কাজ করছি। (মথি ২৮:১৯, ২০) ফল স্বরূপ, আমরা দিয়াবলের মন্দ কাজগুলো প্রকাশ করে দিই। নিশ্চিতভাবেই, শয়তানের কাছে ক্ষমতা থাকলে সে আমাদের সমস্ত কাজকে বন্ধ করে দিত কিন্তু সে পারেনি। তাই, মন্দদূতদের বিষয়ে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা জানি, “সদাপ্রভুর প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য তাঁহার চক্ষু পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে।” (২ বংশা. ১৬:৯) আমরা যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তা হলে মন্দদূতেরা আমাদের চিরস্থায়ী ক্ষতি করতে পারবে না।

যিহোবার সাহায্য গ্রহণকারীদের জন্য আশীর্বাদগুলো

১৬-১৭. মন্দদূতদের প্রতিরোধ করার জন্য যে-সাহসের প্রয়োজন হয়, সেই বিষয়ে একটা উদাহরণ দিন।

১৬ মন্দদূতদের প্রতিরোধ করার জন্য সাহসের প্রয়োজন হয় আর তা বিশেষভাবে সেইসময়ে, যখন শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুবান্ধব অথবা আত্মীয়রা আমাদের বিরোধিতা করে। কিন্তু, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করেন, যারা সাহস দেখায়। এরিকা নামে একজন বোনের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যিনি ঘানায় থাকেন। তিনি ২১ বছর বয়সে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন। তার বাবা একজন পুরোহিত ছিলেন, যিনি জাদুবিদ্যা ব্যবহার করতেন। তিনি চেয়েছিলেন যেন তার মেয়েও প্রেতচর্চার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রথাগুলোয় যোগ দেয়, যার অন্তর্ভুক্ত হল এমন মাংস খাওয়া, যেটা মৃত পূর্বপুরুষদের আত্মার উদ্দেশে উৎসর্গ করা হতো। বোন এরিকা যখন সেটা খেতে প্রত্যাখ্যান করেন, তখন তার পরিবারের সদস্যরা সেটাকে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি করা এক অপমানজনক কাজ হিসেবে দেখেছিল। তারা মনে করেছিল যে, পূর্বপুরুষরা মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার মাধ্যমে তাদের শাস্তি দেবেন।

১৭ বোন এরিকার পরিবারের সদস্যরা তাকে জোর করে সেই প্রথা পালন করানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, তিনি সেটা করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আর যদিও এর অর্থ ছিল তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। কয়েক জন সাক্ষি তাকে তাদের বাড়িতে থাকতে দিয়েছিল। এভাবে বোন এরিকাকে যিহোবা একটা নতুন পরিবার দেওয়ার মাধ্যমে আশীর্বাদ করেছিলেন আর সেই সহবিশ্বাসীরা তার নিজের ভাই ও বোন হয়ে উঠেছিল। (মার্ক ১০:২৯, ৩০) যদিও তার আত্মীয়রা তাকে পরিত্যাগ করেছিল আর এমনকী তার জিনিসপত্র পুড়িয়ে দিয়েছিল, তা সত্ত্বেও তিনি যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন এবং বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। বর্তমানে, তিনি একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করেন। তিনি মন্দদূতদের বিষয়ে আতঙ্কিত নন। বোন এরিকা তার পরিবারের বিষয়ে বলেন, “আমি প্রতিদিন প্রার্থনা করি যেন আমার পরিবারের সদস্যরাও একদিন যিহোবাকে জানার আনন্দ পায় এবং আমাদের প্রেমময় ঈশ্বরের সেবা করার ফলে যে-স্বাধীনতা পাওয়া যায়, তা লাভ করে।”

১৮. যিহোবার উপর আস্থা রাখার মাধ্যমে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করি?

১৮ আমাদের সকলকেই যে এইরকম বিশ্বাসের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে এমন নয়, তবে আমাদের সকলকেই মন্দদূতদের প্রতিরোধ করতে এবং যিহোবার উপর আস্থা রাখতে হবে। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করব আর আমরা শয়তানের মিথ্যা কথাগুলোর দ্বারা ভ্রান্ত হওয়া এড়িয়ে চলব। এ ছাড়া, আমরা মন্দদূতদের ভয়ের কারণে যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেব না। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, আমরা যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকে দৃঢ় করব। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন, “তোমরা ঈশ্বরের বশীভূত হও; কিন্তু দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে। ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।”—যাকোব ৪:৭, ৮

গান সংখ্যা ৪৯ যিহোবা মোদের আশ্রয়

^ অনু. 5 যিহোবা প্রেমের সঙ্গে দুষ্ট আত্মাদের বা মন্দদূতদের বিষয়ে এবং তারা যে-ক্ষতি করতে পারে, সেই বিষয়ে আমাদের সতর্ক করেছেন। কীভাবে মন্দদূতেরা লোকেদের ভ্রান্ত করার চেষ্টা করে? মন্দদূতদের প্রতিরোধ করার জন্য আমরা কোন কোন পদক্ষেপ নিতে পারি? এই প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে যে, তাদের মন্দ প্রভাব এড়িয়ে চলার জন্য কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন?

^ অনু. 3 এর অর্থ কী?: প্রেতচর্চা মন্দদূতদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিশ্বাস ও অভ্যাসকে নির্দেশ করে। এই বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত হল, শারীরিক দেহের মৃত্যুর পরও একজন ব্যক্তির আত্মা জীবিত থাকে এবং সেই আত্মা জীবিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, বিশেষভাবে কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে। এ ছাড়া, প্রেতচর্চার অন্তর্ভুক্ত হল ডাকিনীবিদ্যা ও ভবিষ্যৎকথন। এই প্রবন্ধে ব্যবহৃত জাদুবিদ্যা বলতে সেই অভ্যাসগুলোকে বোঝানো হয়েছে, যেগুলো অতিপ্রাকৃতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, ভূতুড়িয়াদের কাছে গিয়ে কোনো ব্যক্তির ক্ষতি করতে বলা এবং অন্যদের বশীকরণ করা বা তা কাটানোর চেষ্টা করা। এটা হাতের কারসাজি বা খেলা দেখানোকে বোঝায় না, যেটা কোনো কোনো ব্যক্তি কেবল আমোদপ্রমোদের জন্য করে থাকে।

^ অনু. 12 প্রাচীনরা আমোদপ্রমোদের বিষয়ে কোনো নিয়ম তৈরি করেন না। এর পরিবর্তে, একজন খ্রিস্টান কী পড়বেন, কী দেখবেন অথবা কী খেলবেন, সেই বিষয়ে বাছাই করার সময়ে তাকে অবশ্যই নিজের বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেককে ব্যবহার করতে হবে। একজন বিজ্ঞ মস্তক, তার পরিবারের আমোদপ্রমোদের বিষয়ে খেয়াল রাখেন যেন তা বাইবেলের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।—jw.org® ওয়েবসাইটে আমাদের সম্বন্ধে > যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে প্রায়ই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন-এর অধীনে “যিহোবার সাক্ষিরা কি নির্দিষ্ট কিছু সিনেমা দেখতে, বই পড়তে অথবা গান শুনতে নিষেধ করে?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

^ অনু. 54 ছবি সম্বন্ধে: এই ছবিতে যিশুকে আমাদের শক্তিশালী স্বর্গীয় রাজা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যিনি স্বর্গীয় দূতবাহিনীর নেতৃত্ব নিচ্ছেন। যিহোবার সিংহাসন তাদের উপরে রয়েছে।