অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৬
মৃত্যু সম্বন্ধে সত্য জানুন
“কতক লোক ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগেতে ও ভূতগণের শিক্ষামালায় মন দিয়া বিশ্বাস হইতে সরিয়া পড়িবে।”—১ তীম. ৪:১.
গান সংখ্যা ৩৩ তাদের ভয় কোরো না!
সারাংশ *
১-২. (ক) কোন কোন উপায়ে শয়তান লোকেদের প্রতারিত করে আসছে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
শয়তান হল ‘মিথ্যাবাদীর পিতা।’ আর সে মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই লোকেদের প্রতারিত করে আসছে। (যোহন ৮:৪৪) তার বলা কিছু মিথ্যা কথার অন্তর্ভুক্ত হল মৃত্যু এবং মৃত্যুর পরের জীবন সম্বন্ধে বিভিন্ন মিথ্যা শিক্ষা। এই শিক্ষাগুলোর উপর ভিত্তি করে অনেক প্রচলিত প্রথা ও কুসংস্কার গড়ে উঠেছে। এর ফলে, অনেক ভাই-বোনের জন্য সেইসময়ে “বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ করিতে” হয়, যখন তাদের পরিবারে অথবা এলাকায় কোনো ব্যক্তি মারা যান।—যিহূদা ৩.
২ আপনি যদি এই ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হন, তা হলে কী আপনাকে মৃতদের সম্বন্ধে বলা বাইবেলের শিক্ষা অনুযায়ী অটল থাকার জন্য সাহায্য করতে পারে? (ইফি. ৬:১১) কীভাবে আপনি কোনো সহখ্রিস্টানকে সান্ত্বনা প্রদান করতে এবং শক্তিশালী করতে পারেন, যিনি এমন প্রথায় জড়িত হওয়ার চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন, যেটা ঈশ্বরকে অখুশি করে? এই প্রবন্ধে সেই নির্দেশনাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলো যিহোবা আমাদের দিয়েছেন। প্রথমে আসুন আমরা বিবেচনা করি, বাইবেল মৃত্যু সম্বন্ধে কী বলে।
মৃতদের অবস্থা সম্বন্ধে সত্য
৩. প্রথম মিথ্যা কথার পরিণতি কী হয়েছে?
৩ ঈশ্বর চাননি যে, মানুষ মারা যাক। তবে, চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য আদম ও হবাকে যিহোবার বাধ্য হতে হতো, যিনি তাদের এই আদেশ দিয়েছিলেন: “সদসদ্-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।” (আদি. ২:১৬, ১৭) এই আদেশ পালন করা তাদের জন্য কঠিন ছিল না। কিন্তু এরপর, শয়তান সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। সে একটা সাপের মাধ্যমে হবাকে বলেছিল: “কোন ক্রমে মরিবে না।” দুঃখের বিষয় হল হবা সেই মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করেছিলেন এবং সেই ফল খেয়েছিলেন। পরে, তার স্বামীও সেই ফল খেয়েছিলেন। (আদি. ৩:৪, ৬) আর এভাবে পাপ ও মৃত্যু মানব পরিবারে প্রবেশ করেছিল।—রোমীয় ৫:১২.
৪-৫. কীভাবে শয়তান লোকেদের ক্রমাগত প্রতারিত করছে?
৪ আদম ও হবা মারা গিয়েছিলেন, ঠিক যেমনটা ঈশ্বর বলেছিলেন। কিন্তু, শয়তান ১ তীম. ৪:১.
মৃত্যু সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলা ছেড়ে দেয়নি। পরবর্তী সময়ে, সে নতুন নতুন মিথ্যা কথা বলতে শুরু করে। সেই মিথ্যা কথাগুলোর মধ্যে একটা হল মৃত্যুতে একজন ব্যক্তির কেবল শরীর মারা যায় কিন্তু আত্মা বেঁচে থাকে। এই মিথ্যা কথার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন শিক্ষা আজও বহু লোককে প্রতারিত করছে।—৫ কেন এত বেশি লোক প্রতারিত হয়? শয়তান জানে, মৃত্যু সম্বন্ধে লোকেরা কেমন অনুভব করে আর সে এই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে লোকেদের বোকা বানায়। যেহেতু আমাদের চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল, তাই আমরা মারা যেতে চাই না। (উপ. ৩:১১) আমরা মৃত্যুকে আমাদের শত্রু হিসেবে দেখি।—১ করি. ১৫:২৬.
৬-৭. (ক) মৃতদের সম্বন্ধে সত্যকে গুপ্ত রাখার বিষয়ে শয়তানের প্রচেষ্টা কি সফল হয়েছে? ব্যাখ্যা করুন। (খ) কীভাবে বাইবেলের সত্য আমাদেরকে মৃতদের ভয় না পেতে সাহায্য করে?
৬ শয়তান শত প্রচেষ্টা করা সত্ত্বেও মৃত্যু সম্বন্ধে সত্যকে গুপ্ত রাখতে পারেনি। সত্যি বলতে কী, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে আরও বেশি লোক মৃতদের অবস্থা ও আশার বিষয়ে বাইবেলের শিক্ষা সম্বন্ধে জানে ও অন্যদের জানায়। (উপ. ৯:৫, ১০; প্রেরিত ২৪:১৫) এই সত্যগুলো আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করে এবং মানুষ মারা গেলে কী হয়, সেই বিষয়ে ভয় না পেতে এবং সন্দেহ না করতে সাহায্য করে। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা মৃত ব্যক্তিদের ভয় পাই না এবং আমাদের মৃত প্রিয়জনদের প্রতি খারাপ কিছু ঘটবে, এই ভেবেও ভয় পাই না। আমরা জানি যে তারা আর বেঁচে নেই এবং কোনো ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারবে না। এটা এমন যেন তারা গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন রয়েছে। (যোহন ১১:১১-১৪) আমরা এও জানি যে, মৃতেরা বয়ে চলা সময়ের বিষয়ে কিছুই জানে না। তাই, যদিও তারা শত শত বছর আগে মারা গিয়েছে কিন্তু পুনরুত্থানের সময়ে তাদের মনে হবে যেন তারা একটু আগেই ঘুমিয়ে ছিল।
৭ মৃতদের অবস্থা সম্বন্ধে এই সত্যকে আপনি কি সুস্পষ্ট, সরল ও যুক্তিসংগত বলে মনে করেন না? শয়তানের বিভ্রান্তিকর মিথ্যা কথার চেয়ে এই সত্য কতই-না আলাদা! লোকেদের বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি সেই মিথ্যা কথাগুলো আমাদের সৃষ্টিকর্তার উপর অপবাদ নিয়ে আসে। শয়তান মিথ্যা কথা বলার মাধ্যমে যে-ক্ষতি করেছে, সেটা ভালোভাবে বোঝার জন্য আমরা এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব: কীভাবে শয়তানের মিথ্যা কথাগুলো যিহোবার উপর অপবাদ নিয়ে এসেছে? কীভাবে সেই মিথ্যাগুলো লোকেদের এভাবে চিন্তা করতে প্ররোচিত করেছে যে, খ্রিস্টের দ্বারা জোগানো মুক্তির মূল্যের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার কোনো প্রয়োজন নেই? আর কীভাবে সেগুলো মানবজাতির দুঃখকষ্টকে বৃদ্ধি করেছে?
শয়তানের মিথ্যা কথা অনেক ক্ষতি নিয়ে এসেছে
৮. যিরমিয় ১৯:৫ পদ অনুযায়ী, কীভাবে মৃতদের সম্বন্ধে বলা শয়তানের মিথ্যা কথা যিহোবার উপর অপবাদ নিয়ে আসে?
৮ মৃতদের সম্পর্কে শয়তানের মিথ্যা কথা যিহোবার উপর অপবাদ নিয়ে আসে। সেই মিথ্যা কথাগুলোর মধ্যে একটা মিথ্যা শিক্ষা হল মৃত ব্যক্তিরা নরকাগ্নির যাতনা ভোগ করে। এই ধরনের শিক্ষা ঈশ্বরের উপর অপবাদ নিয়ে আসে! কীভাবে? ১ যোহন ৪:৮) এই অপবাদ সম্বন্ধে জেনে আপনি কেমন অনুভব করেন? আর এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যিহোবা কেমন অনুভব করেন? তিনি নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পান কারণ তিনি সমস্ত ধরনের নিষ্ঠুরতাকে ঘৃণা করেন।—পড়ুন, যিরমিয় ১৯:৫.
এই শিক্ষাগুলো লোকেদের এটা বিশ্বাস করতে প্ররোচিত করে যে, প্রেমময় ঈশ্বরও দিয়াবলের মতো নিষ্ঠুর। (৯. শয়তানের মিথ্যা কথাগুলো যোহন ৩:১৬ ও ১৫:১৩ পদে বর্ণিত মুক্তির মূল্যের উপর বিশ্বাস স্থাপন করাকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
৯ মৃত্যু সম্বন্ধে শয়তানের মিথ্যা কথার কারণে লোকেরা মনে করে যে, মুক্তির মূল্যের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার কোনো প্রয়োজন নেই। (মথি ২০:২৮) শয়তানের বলা আরেকটা মিথ্যা কথা হল মানুষের মধ্যে এক অমর আত্মা রয়েছে। আর এটা যদি সত্যি হতো, তা হলে সবাই চিরকাল বেঁচে থাকত। আমরা যাতে অনন্তজীবন লাভ করতে পারি, সেই উদ্দেশ্যে খ্রিস্ট আমাদের জন্য যে-মুক্তির মূল্য জুগিয়েছেন, সেটার কোনো প্রয়োজন হতো না। মনে রাখবেন, খ্রিস্টের বলিদান হল মানব পরিবারের প্রতি দেখানো প্রেমের সর্বমহৎ উদাহরণ। (পড়ুন, যোহন ৩:১৬; ১৫:১৩.) একটু কল্পনা করুন, মিথ্যা শিক্ষাগুলো যখন এই মূল্যবান উপহারকে অপ্রয়োজনীয় হিসেবে তুলে ধরে, তখন যিহোবা ও তাঁর পুত্র কেমন অনুভব করেন!
১০. কীভাবে মৃত্যু সম্বন্ধে শয়তানের মিথ্যা কথাগুলো মানবজাতির দুঃখকষ্ট আরও বাড়িয়ে তোলে?
১০ শয়তানের মিথ্যা কথা মানবজাতির দুঃখকষ্ট আরও বাড়িয়ে তোলে। কোনো সন্তান মারা গেলে, শোকার্ত বাবা-মায়েদের হয়তো এই কথা বলা হয়ে থাকে, ‘স্বর্গে হয়তো কোনো দূতের প্রয়োজন ছিল, তাই ঈশ্বর আপনাদের সন্তানকে স্বর্গে নিয়ে গিয়েছেন।’ শয়তানের এই মিথ্যা কথা কি তাদের কষ্টকে কমিয়ে দেয়, না কি বাড়িয়ে তোলে? অতীতে গির্জার শিক্ষার বিরোধীদের যাতনা দেওয়ার জন্য নরকাগ্নির মিথ্যা শিক্ষাকে ব্যবহার করা হতো, এমনকী তাদের একটা দণ্ডে বেঁধে জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হতো। স্প্যানিশ ইনকুইজিশন নামে একটা বই অনুযায়ী, যারা এইরকম নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার করত, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাস করত যে, তারা গির্জার শিক্ষার বিরোধীদের কেবল এটা অনুভব করাচ্ছে, চিরকাল ধরে নরকাগ্নির যাতনা ভোগ করা কেমন হবে, যাতে সেই বিরোধীরা মৃত্যুর আগে অনুতপ্ত হতে পারে এবং নরকাগ্নির যাতনার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। বেশ কিছু দেশে লোকেরা মনে করে, তাদের মৃত পূর্বপুরুষদের উপাসনা ও সম্মান করতেই হবে অথবা তাদের কাছ থেকে আশীর্বাদ চাইতেই হবে। অন্যেরা আবার অমঙ্গলের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাদের পূর্বপুরুষদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে। দুঃখের বিষয় হল শয়তানের মিথ্যা কথার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বিশ্বাসগুলো প্রকৃত সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে না। এর পরিবর্তে, সেগুলো লোকেদের উদ্বিগ্নতাকে বাড়িয়ে তোলে আর তারা ভয়ে ভয়ে জীবনযাপন করে।
যেভাবে আমরা বাইবেলের সত্য তুলে ধরতে পারি
১১. কীভাবে আমাদের কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী আত্মীয় অথবা বন্ধু ঈশ্বরের বাক্যের বিপরীত কোনো কাজ করার জন্য জোরাজুরি করার চেষ্টা করতে পারে?
১১ ঈশ্বর ও তাঁর বাক্যের প্রতি ভালোবাসা আমাদের সেইসময়ে যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকার জন্য শক্তিশালী করে, যখন আমাদের কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী আত্মীয় অথবা বন্ধু মৃতদের সম্বন্ধে কোনো অশাস্ত্রীয় অভ্যাসে অংশ নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করার চেষ্টা করে। তারা হয়তো আমাদের লজ্জায় ফেলার চেষ্টা করতে পারে, হয়তো এমনটা বলার দ্বারা যে, আমরা মৃত ব্যক্তিকে ভালোবাসি না কিংবা তাকে সম্মান করি না। অথবা তারা হয়তো বলে যে, আমাদের আচরণের কারণে সেই মৃত ব্যক্তি জীবিতদের কোনোভাবে ক্ষতি করবে। কীভাবে আমরা বাইবেলের সত্যকে তুলে ধরতে পারি? পরবর্তী বাইবেলের নীতিগুলো কীভাবে আপনি কাজে লাগাতে পারেন, তা বিবেচনা করুন।
১২. মৃতদের সম্বন্ধে কোন প্রথাগুলো স্পষ্টতই অশাস্ত্রীয়?
১২ অশাস্ত্রীয় বিশ্বাস ও প্রথাগুলো থেকে ‘পৃথক্ হইবার’ বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন। (২ করি. ৬:১৭) ক্যারিবিয়ানের একটা দেশে অনেকে বিশ্বাস করে, একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর “ভূত” হয়ে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে এবং যারা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিল, তাদের শাস্তি দেয়। একটা তথ্যগ্রন্থ বলে, সেই “ভূত” এমনকী “সেই এলাকার লোকেদের ক্ষতি করে।” আফ্রিকার একটা প্রথা হল মৃত ব্যক্তির বাড়ির আয়না ঢেকে রাখা এবং তার ছবিগুলো দেওয়ালের দিকে ঘুরিয়ে রাখা। কেন? কেউ কেউ বলে, মৃতেরা যেন নিজেদের দেখতে না পায়! যিহোবার দাস হিসেবে আমরা নিশ্চিতভাবেই কোনো পৌরাণিক কাহিনিতে বিশ্বাস করি না অথবা এমন কোনো অভ্যাসে অংশ নিই না, যেগুলো শয়তানের মিথ্যাকে তুলে ধরে!—১ করি. ১০:২১, ২২.
১৩. আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো প্রথার বিষয়ে অনিশ্চিত হয়ে থাকেন, তা হলে যাকোব ১:৫ পদ অনুযায়ী আপনার কী করা উচিত?
১৩ আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো প্রথা অথবা অভ্যাসের বিষয়ে অনিশ্চিত হয়ে থাকেন, তা হলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন এবং তাঁর কাছে জ্ঞান বা প্রজ্ঞা চান। (পড়ুন, যাকোব ১:৫.) তারপর, সেই বিষয়ে আমাদের প্রকাশনা থেকে গবেষণা করুন। প্রয়োজন হলে, আপনার মণ্ডলীর প্রাচীনদের কাছে পরামর্শ চান। তারা আপনাকে বলে দেবেন না যে, আপনাকে কী করতে হবে, তবে তারা বাইবেলের সেই নীতিগুলো খুঁজে পাওয়ার জন্য আপনাকে সাহায্য করতে পারেন, যেগুলো নিয়ে এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যখন এই পদক্ষেপগুলো নেবেন, তখন আপনি আপনার “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল” প্রশিক্ষিত করবেন এবং এই ক্ষমতা আপনাকে ‘সদসৎ বিষয়ের বিচারণ’ করতে বা ভালো-মন্দ পৃথক করতে সাহায্য করবে।—ইব্রীয় ৫:১৪.
১৪. কোন কোন উপায়ে আমরা লোকেদের বিঘ্নিত করা এড়িয়ে চলতে পারি?
১৪ ‘সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর। কাহারও বিঘ্ন জন্মাইও না।’ (১ করি. ১০:৩১, ৩২) আমরা কোনো প্রথা অথবা রীতিনীতিতে অংশ নেব কি না, সেই বিষয়ে যখন সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমরা যেন এই বিষয়টা নিয়েও চিন্তা করি যে, আমাদের সিদ্ধান্ত কীভাবে অন্যদের, বিশেষভাবে সহখ্রিস্টানদের বিবেককে প্রভাবিত করতে পারে। অবশ্য, আমরা কোনো ব্যক্তিকে বিঘ্নিত করতে চাই না! (মার্ক ৯:৪২) এ ছাড়া, আমরা ন-সাক্ষিদের অযথা অসন্তুষ্ট করতে চাই না। প্রেম আমাদের সম্মান দেখিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে অনুপ্রাণিত করবে, যেটা যিহোবাকে গৌরবান্বিত করে। নিশ্চিতভাবেই, আমরা লোকেদের সঙ্গে ঝগড়া করব না অথবা তাদের রীতিনীতি নিয়ে উপহাস করব না। মনে রাখবেন, প্রেমের অনেক ক্ষমতা রয়েছে! আমরা যখন বিবেচনা ও সম্মানের সঙ্গে এই গুণটা দেখাই, তখন আমরা এমনকী বিরোধীদের হৃদয়কেও নরম করে দিতে পারি।
১৫-১৬. (ক) আপনি যা বিশ্বাস করেন, তা অন্যদের জানানো কেন বিজ্ঞতার কাজ? একটা উদাহরণ দিন। (খ) রোমীয় ১:১৬ পদে লিপিবদ্ধ পৌলের কথাগুলো কীভাবে আমাদের প্রতি প্রযোজ্য?
১৫ আপনার প্রতিবেশীদের জানান যে, আপনি হলেন একজন যিহোবার সাক্ষি। (যিশা. ৪৩:১০) আপনার পরিবারের কোনো সদস্য যদি মারা যান এবং আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো প্রথায় অংশ না নেন, তা হলে আপনার আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা হয়তো খুবই দুঃখিত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু, আপনি যদি আগে থেকেই তাদের কাছে আপনার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেন, তা হলে আপনার পক্ষে এইরকম পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করা সহজ হবে। ভাই ফ্রান্সিস্কু, যিনি মোজাম্বিকে থাকেন, লেখেন: “আমার স্ত্রী কারোলিনা আর আমি যখন সত্য শিখি, তখন আমি আমার পরিবারের সদস্যদের বলে দিয়েছিলাম যে, আমরা আর মৃত ব্যক্তিদের উপাসনা করব না। আমাদের এই সিদ্ধান্ত সেইসময়ে পরীক্ষিত হয়েছিল, যখন কারোলিনার দিদি মারা গিয়েছিলেন। স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী এখানে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মৃতদেহকে স্নান করানো হয়। আর সেই জল যেখানে ঢালা হয়, সেখানে মৃত ব্যক্তির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে তিন দিন শুতে হয়। এই প্রথা মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির জন্য করা হয়। কারোলিনার পরিবারের লোকেরা চেয়েছিল যেন ও সেখানে শোয়ার দায়িত্ব পালন করে।”
১৬ ভাই ফ্রান্সিস্কু ও তার স্ত্রী কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান? ভাই ব্যাখ্যা করেন: “যেহেতু আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি এবং তাঁকে খুশি করতে চাই, তাই আমরা এই প্রথায় অংশ নেওয়া প্রত্যাখ্যান করি। কারোলিনার পরিবারের লোকেরা এতে খুবই রেগে যায়। তারা অভিযোগ করে বলে যে, আমরা মৃত ব্যক্তির প্রতি অসম্মান দেখিয়েছি আর তাই তারা আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না। যেহেতু আমরা আগেই আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলাম, তাই আমরা সেই চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে এই বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আর আলোচনা করিনি। কোনো কোনো আত্মীয় এমনকী আমাদের হয়ে কথা বলে। তারা বলে, ওরা তো ইতিমধ্যেই ওদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কারোলিনার আত্মীয়দের রাগ ঠাণ্ডা হয়ে যায় আর আমাদের সম্পর্ক আবারও ভালো হয়। এমনকী তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের কাছে বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি চায়।” আমরা মৃত্যু সম্বন্ধে সত্যের বিষয়ে যে-পদক্ষেপ নিই, সেটার জন্য যেন কখনো লজ্জিত না হই।—পড়ুন, রোমীয় ১:১৬.
শোকার্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা দিন এবং সাহায্য করুন
১৭. একজন শোকার্ত সহখ্রিস্টানের প্রকৃত বন্ধু হওয়ার জন্য কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১৭ একজন সহখ্রিস্টান যখন মৃত্যুতে কোনো প্রিয়জনকে হারান, তখন আমরা যেন একজন প্রকৃত “বন্ধু” ও “ভ্রাতা” হওয়ার জন্য সর্বোত্তমটা করি, যিনি “দুর্দ্দশার” বা দুর্দশার সময়ে সাহায্য করার “জন্য জন্মে।” (হিতো. ১৭:১৭) কীভাবে আমরা প্রকৃত “বন্ধু” হতে পারি, বিশেষভাবে যদি কোনো শোকার্ত ভাই অথবা বোনকে অশাস্ত্রীয় প্রথায় জড়িত হওয়ার জন্য চাপের মুখোমুখি হতে হয়? আসুন, আমরা বাইবেলের দুটো নীতি নিয়ে বিবেচনা করে দেখি, যেগুলো শোকার্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমাদের সাহায্য করতে পারে।
১৮. কেন যিশু কেঁদেছিলেন এবং তাঁর উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৮ “যাহারা রোদন করে, তাহাদের সহিত রোদন কর।” (রোমীয় ১২:১৫) একজন শোকার্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমরা কী বলব, সেটা নির্ধারণ করা আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে। কখনো কখনো আমাদের চোখের জল আমাদের কথার চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রকাশ করে। যিশুর বন্ধু লাসার যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন মরিয়ম, মার্থা ও অন্যেরা তাদের প্রিয় ভাই ও বন্ধুর জন্য কেঁদেছিল। এর চার দিন পর যিশু যখন এসেছিলেন, তখন তিনিও ‘কাঁদিয়াছিলেন,’ যদিও তিনি জানতেন যে, শীঘ্রই তিনি লাসারকে পুনরুত্থিত করবেন। (যোহন ১১:১৭, ৩৩-৩৫) যিশুর কান্না দেখায়, লাসারের মৃত্যুর কারণে যিহোবা কেমন অনুভব করেছিলেন। এটা এও দেখায়, যিশু লাসারের পরিবারকে সত্যিই ভালোবাসতেন আর নিশ্চিতভাবেই এটা মরিয়ম ও মার্থাকে সান্ত্বনা প্রদান করেছিল। একইভাবে, আমাদের ভাই-বোনেরা যখন বুঝতে পারে, আমরা তাদের ভালোবাসি এবং তাদের জন্য চিন্তা করি, তখন তারা এই আস্থা লাভ করে যে, তারা একা নয় বরং যত্নশীল ও সাহায্যকারী বন্ধুরা তাদের চারপাশে রয়েছে।
১৯. একজন শোকার্ত সহখ্রিস্টানকে সান্ত্বনা দেওয়ার সময়ে কোন কোন উপায়ে আমরা উপদেশক ৩:৭ পদ কাজে লাগাতে পারি?
১৯ “নীরব থাকিবার কাল ও কথা কহিবার কাল।” (উপ. ৩:৭) আরেকটা যে-উপায়ে আমরা একজন শোকার্ত সহখ্রিস্টানকে সান্ত্বনা দিতে পারি, সেটা হল একজন উত্তম শ্রোতা হওয়ার মাধ্যমে। সেই শোকার্ত খ্রিস্টানকে হৃদয় উজাড় করে কথা বলার সুযোগ দিন এবং তার ‘অসংলগ্ন বাক্যের’ দ্বারা অসন্তুষ্ট হবেন না। (ইয়োব ৬:২, ৩) তিনি হয়তো ন-সাক্ষি আত্মীয়দের চাপের কারণেও আবেগগতভাবে অনেক কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। তাই, তার সঙ্গে প্রার্থনা করুন। ‘প্রার্থনা-শ্রবণকারীর’ কাছে সাহায্যভিক্ষা করুন যেন তিনি তাকে শক্তি ও সঠিকভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা দেন। (গীত. ৬৫:২) যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয়, তা হলে একসঙ্গে বাইবেল পড়ুন। অথবা আমাদের প্রকাশনাদি থেকে কোনো উপযুক্ত প্রবন্ধ পড়ুন, যেমন কোনো উৎসাহজনক জীবনকাহিনি।
২০. পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
২০ মৃত ব্যক্তিদের বিষয়ে এবং তাদের জন্য যে-চমৎকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে আছে, সেই বিষয়ে সত্য জানার কতই-না বিশেষ সুযোগ আমরা পেয়েছি! (যোহন ৫:২৮, ২৯) তাই আসুন, আমরা যেন আমাদের কথায় ও কাজে বাইবেলের সত্যকে সাহসের সঙ্গে তুলে ধরি এবং প্রতিটা উপযুক্ত সুযোগে এই সত্যকে অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিই। পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা আরেকটা উপায় সম্বন্ধে দেখব, যেটাকে কাজে লাগিয়ে শয়তান লোকেদের সত্য জানার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে আর সেটা হল প্রেতচর্চা। আমরা দেখব, কেন মন্দদূতদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অভ্যাস ও আমোদপ্রমোদগুলো আমাদের এড়িয়ে চলার প্রয়োজন রয়েছে।
গান সংখ্যা ১৬ ঈশ্বরের রাজ্যের দিকে গমন!
^ অনু. 5 শয়তান ও তার মন্দদূতেরা মৃতদের অবস্থা সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলার মাধ্যমে লোকেদের প্রতারিত করে আসছে। আর এই মিথ্যা কথাগুলোর উপর ভিত্তি করে অনেক অশাস্ত্রীয় প্রথা গড়ে উঠেছে। এই প্রবন্ধ আপনাকে সেইসময় যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করবে, যখন অন্যেরা আপনাকে এই ধরনের প্রথায় অংশ নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করার চেষ্টা করে।
^ অনু. 55 ছবি সম্বন্ধে: সাক্ষিরা তাদের একজন শোকার্ত আত্মীয়কে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, যিনি মৃত্যুতে তার প্রিয়জনকে হারিয়েছেন।
^ অনু. 57 ছবি সম্বন্ধে: একজন সাক্ষি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রথা সম্বন্ধে গবেষণা করছেন আর তারপর তার আত্মীয়দের কাছে সদয়ভাবে নিজের বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করছেন।
^ অনু. 59 ছবি সম্বন্ধে: খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর প্রাচীনরা একজন সাক্ষিকে সান্ত্বনা ও সাহায্য প্রদান করছেন, যিনি মৃত্যুতে কোনো প্রিয়জনকে হারিয়েছেন।