সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৫

আপনি ক্ষেত্রকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?

আপনি ক্ষেত্রকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?

“চক্ষু তুলিয়া ক্ষেত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত কর, শস্য . . . কাটিবার মত শ্বেতবর্ণ হইয়াছে।”—যোহন ৪:৩৫.

গান সংখ্যা ৪৪ শস্যচ্ছেদনের কাজে আনন্দের সঙ্গে অংশ নেওয়া

সারাংশ *

১-২. যিশু যখন যোহন ৪:৩৫, ৩৬ পদের কথাগুলো বলেছিলেন, তখন তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন?

যিশু খ্রিস্ট সবুজ ক্ষেত্রের মধ্যে দিয়ে যাত্রা করছেন, সম্ভবত সেই ক্ষেত্রের শস্যগুলো সবেমাত্র বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। (যোহন ৪:৩-৬) এই শস্যগুলো প্রায় চার মাসের মধ্যে কাটার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। তাই, যিশুর এই কথাগুলো সেই সময়ে অদ্ভুত বলে মনে হয়েছিল, যখন তিনি বলেছিলেন: “চক্ষু তুলিয়া ক্ষেত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত কর, শস্য . . . কাটিবার মত শ্বেতবর্ণ হইয়াছে।” (পড়ুন, যোহন ৪:৩৫, ৩৬.) তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন?

যিশু সম্ভবত শস্যের বিষয়ে নয় বরং লোকেদের একত্রিত করার বিষয়ে কথা বলছিলেন। এর ঠিক আগেই কী হয়েছিল, তা বিবেচনা করুন। যদিও যিহুদিরা সাধারণত শমরীয়দের এড়িয়ে চলত কিন্তু যিশু একজন শমরীয় মহিলার কাছে প্রচার করেছিলেন। আর সেই মহিলা তা শুনেছিলেন! সত্যি বলতে কী, যিশু যখন ক্ষেত্রের বিষয়ে কথা বলছিলেন, যে-ক্ষেত্র “কাটিবার মত শ্বেতবর্ণ” হয়েছিল, তখন সেই শমরীয় মহিলার কাছ থেকে যিশুর বিষয়ে শুনে একদল জনতা তাঁর কাছ আসছিল, যাতে তারা যিশুর কাছ থেকে আরও কিছু শিখতে পারে। (যোহন ৪:৯, ৩৯-৪২) একজন বাইবেল পণ্ডিত এই বিবরণ সম্বন্ধে বলেছিলেন: “লোকেদের উৎসুক মনোভাব দেখায় যে, তারা সেই শস্যের মতো ছিল, যেটা কাটার জন্য প্রস্তুত।”

আমরা যদি মনে করি যে, আমাদের ক্ষেত্র “কাটিবার মত শ্বেতবর্ণ হইয়াছে,” তা হলে আমাদের কী করা উচিত? (৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৩. লোকেদের যিশুর মতো করে দেখার মাধ্যমে কীভাবে আপনি আরও ভালো প্রচারক হয়ে উঠবেন?

সেই লোকেদের বিষয়ে কী বলা যায়, যাদের কাছে আপনি সুসমাচার প্রচার করেন? আপনি কি তাদের এমন শস্য হিসেবে দেখেন, যেটা কাটার জন্য প্রস্তুত? যদি তা-ই হয়, তা হলে তিনটে বিষয় ঘটবে: প্রথমত, আপনি প্রচার কাজকে গুরুত্ব দেবেন এবং এই কাজে আরও বেশি করে অংশ নেবেন। শস্য কাটার সময় সীমিত; তাই নষ্ট করার মতো সময় আমাদের হাতে নেই। দ্বিতীয়ত, আপনি যখন সুসমাচারের প্রতি লোকেদের সাড়া দিতে দেখবেন, তখন আপনি আনন্দিত হবেন। বাইবেল বলে: ‘লোকেরা শস্যচ্ছেদনের সময়ে আহ্লাদ করে।’ (যিশা. ৯:৩) তৃতীয়ত, আপনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে খ্রিস্টের সম্ভাব্য শিষ্য হিসেবে দেখবেন আর এর ফলে আপনি সেই ব্যক্তির আগ্রহের কথা মাথায় রেখে আপনার উপস্থাপনাকে খাপ খাইয়ে নেবেন।

৪. এই প্রবন্ধে আমরা প্রেরিত পৌল সম্বন্ধে কী শিখব?

যিশুর অনুসারীদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো মনে করত যে, শমরীয়রা কখনো যিশুর শিষ্য হবে না কিন্তু যিশু এইরকম মনে করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি তাদের মধ্যে শিষ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা লক্ষ করেছিলেন। আমরাও যেন আমাদের এলাকার লোকেদের যিশুর মতো করে দেখি। প্রেরিত পৌল এক্ষেত্রে আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছেন, যা আমরা অনুসরণ করতে পারি। তার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব যে, কীভাবে তিনি (১) যাদের কাছে প্রচার করেছিলেন, তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে কোনো কোনো বিষয় জানতে পেরেছিলেন, (২) তাদের আগ্রহের বিষয় সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছিলেন এবং (৩) তাদের মধ্যে যিশুর শিষ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা লক্ষ করেছিলেন।

তারা কী বিশ্বাস করে?

৫. কেন পৌল সমাজগৃহে তার শ্রোতাদের অনুভূতি বুঝতে পেরেছিলেন?

পৌল প্রায়ই যিহুদিদের সমাজগৃহে প্রচার করতেন। তিনি থিষলনীকীর সমাজগৃহে “তিন বিশ্রামবারে [যিহুদিদের] সহিত শাস্ত্রের কথা লইয়া প্রসঙ্গ করিলেন।” (প্রেরিত ১৭:১, ২) সম্ভবত, পৌল সমাজগৃহে স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। তিনি এক যিহুদি পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন। (প্রেরিত ২৬:৪, ৫) পৌল যিহুদিদের অনুভূতি বুঝতে পেরেছিলেন আর তাই তিনি প্রত্যয়ের সঙ্গে তাদের কাছে প্রচার করতে পেরেছিলেন।—ফিলি. ৩:৪, ৫.

৬. পৌল সমাজগৃহে যে-লোকেদের কাছে প্রচার করেছিলেন, তাদের চেয়ে আথীনীর বাজারের লোকেরা কোন দিক দিয়ে ভিন্ন ছিল?

পৌল তাড়নাকারীদের জন্য থিষলনীকী ও বিরয়া থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন আর তারপর তিনি আথীনীতে (এথেন্স) চলে গিয়েছিলেন। আবারও ‘তিনি সমাজ-গৃহে যিহূদী ও ভক্ত লোকদের কাছে কথা প্রসঙ্গ করিতে’ শুরু করেছিলেন। (প্রেরিত ১৭:১৭) তবে, বাজারে প্রচার করার সময়ে পৌলের সঙ্গে ভিন্ন শ্রোতাদের দেখা হয়েছিল। তার শ্রোতাদের মধ্যে দার্শনিক ও অন্যান্য পরজাতীয় ছিল, যারা পৌলের বার্তাকে “নূতন শিক্ষা” হিসেবে দেখেছিল। তারা পৌলকে বলেছিল: “আপনি কতকগুলি অদ্ভুত কথা আমাদের কাণে তুলিতেছেন।”—প্রেরিত ১৭:১৮-২০.

৭. প্রেরিত ১৭:২২, ২৩ পদ অনুযায়ী কীভাবে পৌল তার উপস্থাপনায় রদবদল করেছিলেন?

প্রেরিত ১৭:২২, ২৩ পদ পড়ুন। পৌল সমাজগৃহে যিহুদিদের কাছে যেভাবে তার বার্তা তুলে ধরেছিলেন, একইভাবে আথীনীর পরজাতীয়দের কাছে বার্তা তুলে ধরেননি। পৌল সম্ভবত নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আথীনীর লোকেরা কী বিশ্বাস করে?’ তিনি তার চারপাশের বিষয়গুলো এবং লোকেদের ধর্মীয় প্রথাগুলো ভালোভাবে লক্ষ করেছিলেন। তারপর, পৌল শাস্ত্রীয় সত্যের সঙ্গে তাদের উপাসনার কোন কোন মিল রয়েছে, সেগুলো খুঁজে বের করেছিলেন। একজন বাইবেল পণ্ডিত বলেছিলেন: “একজন যিহুদি খ্রিস্টান হিসেবে পৌল এটা উপলব্ধি করেছিলেন, পৌত্তলিক গ্রিকরা যিহুদি এবং খ্রিস্টানদের ‘সত্য’ ঈশ্বরের উপাসনা করে না। তবে, তিনি তাদের এটা দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন, তিনি যে-ঈশ্বরের বিষয়ে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি আসলে আথীনীয়দের কাছে অজানা নন।” তাই, পৌল তার উপস্থাপনাকে খাপ খাইয়ে নিতে ইচ্ছুক ছিলেন। তিনি আথীনীয়দের বলেছিলেন, তার বার্তা একজন “অপরিচিত দেবের” কাছ থেকে এসেছে, যাঁকে তারা উপাসনা করার চেষ্টা করে। যদিও পরজাতীয়রা শাস্ত্রের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত ছিল না তারপরও পৌল এমনটা মনে করেননি যে, তারা কোনোদিনও খ্রিস্টান হতে পারবে না। এর বিপরীতে, তিনি তাদের এমন শস্য হিসেবে দেখেছিলেন, যেটা কাটার জন্য প্রস্তুত এবং তিনি সুসমাচারের উপস্থাপনায় রদবদল করেছিলেন।

প্রেরিত পৌলের মতো ভালোভাবে লক্ষ করুন, আপনার উপস্থাপনাকে খাপ খাইয়ে নিন আর সেইসঙ্গে লোকেদের মধ্যে যে খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে, সেটা লক্ষ করুন (৮, ১২, ১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৮. (ক) আপনার এলাকার লোকেরা কোন ধর্মে বিশ্বাস করে, তা আপনি কীভাবে বুঝতে পারেন? (খ) কোনো ব্যক্তি যদি বলেন, তার নিজের ধর্ম রয়েছে, তা হলে আপনি হয়তো কী বলবেন?

পৌলের মতো ভালোভাবে লক্ষ করুন। এমন চিহ্নগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন, যেগুলোর সাহায্যে আপনি বুঝতে পারবেন যে, আপনার এলাকার লোকেরা কী বিশ্বাস করে। গৃহকর্তা কীভাবে তার বাড়ি সাজিয়েছেন? তার নাম, পোশাক ও সাজগোজ অথবা তিনি কথা বলার সময়ে যে-শব্দ ব্যবহার করেন, সেগুলো কি ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি কোন ধর্মের ব্যক্তি? তিনি হয়তো আপনাকে সরাসরি বলতে পারেন যে, তার নিজের ধর্ম রয়েছে। কোনো ব্যক্তি যখন ফ্লুটুরা নামে একজন বিশেষ অগ্রগামী বোনকে এইরকম উত্তর দেন, তখন তিনি বলেন, “আমি আপনার উপর নিজের বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়ার জন্য আসিনি। আমি তো আপনার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলাম . . .।”

৯. একজন ধর্মীয় ব্যক্তির সঙ্গে আপনি একমত হবেন, এমন কোন বিষয়গুলো আপনি খুঁজে পেতে পারেন?

একজন ধর্মীয় ব্যক্তির সঙ্গে আপনি হয়তো কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন? আপনারা দু-জনেই একমত হবেন, এমন বিষয়গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। তিনি হয়তো কেবল একজন ঈশ্বরের উপাসনা করেন অথবা তিনি হয়তো এটা উপলব্ধি করেন যে, যিশু হলেন মানবজাতির ত্রাণকর্তা কিংবা তিনি হয়তো বিশ্বাস করেন যে, শীঘ্রই দুষ্টতা শেষ হতে চলেছে। আপনাদের বিশ্বাসের মধ্যে যে-বিষয়গুলোর মিল রয়েছে, সেগুলোর উপর ভিত্তি করে বাইবেলের বার্তাকে সেই ব্যক্তির কাছে গ্রহণযোগ্য উপায়ে তুলে ধরুন।

১০. আমাদের কী করার চেষ্টা করা উচিত এবং কেন?

১০ মনে রাখবেন, লোকেরা হয়তো তাদের ধর্মের সমস্ত শিক্ষা বিশ্বাস না-ও করতে পারে। তাই, একজন ব্যক্তি কোন ধর্মে বিশ্বাসী, সেই বিষয়ে জানার পরও এটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে কী বিশ্বাস করেন। ডেভিড নামে অস্ট্রেলিয়ার একজন বিশেষ অগ্রগামী বলেন: “বর্তমানে, অনেকে নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে দর্শনবিদ্যাকে মিশিয়ে ফেলেছে।” ডোনাল্টা নামে আলবানিয়ার একজন বোন বলেন, “আমরা যাদের সঙ্গে দেখা করি, তাদের কেউ কেউ বলে যে, তাদের নিজেদের ধর্ম রয়েছে কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা এটা স্বীকার করে, তারা আসলে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না।” আর আর্জেন্টিনার একজন মিশনারি ভাই এটা লক্ষ করেছেন যে, কেউ কেউ বলে তারা ত্রিত্বে বিশ্বাস করে, কিন্তু তারা আসলে এটা বিশ্বাস করে না যে, পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা হল এক ঈশ্বর। তিনি বলেন, “আমি যখন এটা স্মরণে রাখি, আমি যার সঙ্গে কথা বলছি, তিনি হয়তো তার ধর্মের সমস্ত শিক্ষায় বিশ্বাস না-ও করতে পারেন, তখন এমন বিষয়গুলো খোঁজা সহজ হয়ে যায়, যেগুলোতে আমরা একমত হব।” তাই, লোকেরা আসলে কী বিশ্বাস করে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। এভাবে পৌলের মতো আপনিও “সর্ব্বজনের কাছে সর্ব্ববিধ” হতে পারবেন।—১ করি. ৯:১৯-২৩.

তারা কোন বিষয়ে আগ্রহী?

১১. প্রেরিত ১৪:১৪-১৭ পদে লিপিবদ্ধ বিবরণ অনুযায়ী পৌল কীভাবে লুস্ত্রার লোকেদের কাছে গ্রহণযোগ্য উপায়ে তার বার্তাকে তুলে ধরেছিলেন?

১১ প্রেরিত ১৪:১৪-১৭ পদ পড়ুন। পৌল এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার শ্রোতারা কোন বিষয়ে আগ্রহী আর সেই অনুযায়ী তিনি তার উপস্থাপনাকে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি লুস্ত্রায় যে-জনতার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তাদের শাস্ত্র সম্বন্ধে খুব কম জ্ঞান ছিল অথবা কোনো জ্ঞানই ছিল না। তাই, পৌল তাদের সঙ্গে এমনভাবে যুক্তি করেছিলেন, যাতে তারা বুঝতে পারে। তিনি প্রচুর পরিমাণে জোগানো শস্য এবং জীবন উপভোগ করার ক্ষমতার বিষয়ে বলেছিলেন। তিনি এমন শব্দ ও উদাহরণ ব্যবহার করেছিলেন, যেগুলো তার শ্রোতারা সহজেই বুঝতে পেরেছিল।

১২. একজন ব্যক্তি কোন বিষয়ে আগ্রহী, তা আপনি কীভাবে বুঝতে পারেন এবং আপনার উপস্থাপনাকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন?

১২ আপনার এলাকার লোকেরা কোন বিষয়ে আগ্রহী তা বোঝার জন্য অন্তর্দৃষ্টি ব্যবহার করুন এবং আপনার উপস্থাপনাকে খাপ খাইয়ে নিন। আপনি যখন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন অথবা তার ঘরে যান, তখন আপনি কীভাবে এটা খুঁজে বের করতে পারেন যে, সেই ব্যক্তি কোন বিষয়ে আগ্রহী? আবারও, ভালোভাবে লক্ষ করুন। হতে পারে, তিনি বাগানের যত্ন নিচ্ছেন, বই পড়ছেন, গাড়ি মেরামত করছেন অথবা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। উপযুক্ত হলে, তিনি যে-কাজ করছেন, সেই বিষয় নিয়েই কথোপকথন শুরু করুন না কেন! (যোহন ৪:৭) আর এমনকী একজন ব্যক্তির পোশাক-আশাকও তার সম্বন্ধে কিছু প্রকাশ করে, হতে পারে সেটা ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি কোন দেশের লোক, তার পেশা কী অথবা তার প্রিয় খেলার দল কোনটা। গুস্টাভো নামে একজন ভাই বলেন: “আমি ১৯ বছর বয়সি একটি ছেলের সঙ্গে কথা বলি, যার টি-শার্টে একজন জনপ্রিয় গায়কের ছবি আঁকা ছিল। আমি তার টি-শার্টের বিষয়ে জানতে চাই আর সে বলে, কেন সে সেই গায়ককে পছন্দ করে। সেই আলোচনার ফলে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু হয় এবং এখন সে আমাদের একজন ভাই।”

১৩. কীভাবে আপনি এক আগ্রহজনক উপায়ে বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাব দিতে পারেন?

১৩ আপনি যখন কোনো ব্যক্তিকে বাইবেল অধ্যয়ন করার প্রস্তাব দেন, তখন সেটাকে তার কাছে আগ্রহজনক করে তুলুন। (যোহন ৪:১৩-১৫) উদাহরণ স্বরূপ, একজন আগ্রহী মহিলা আমাদের একজন বোনকে ঘরে আমন্ত্রণ জানান। আমাদের বোন ঘরের দেওয়ালে একটা সার্টিফিকেট লক্ষ করেন এবং বুঝতে পারেন যে, সেই মহিলা হলেন একজন প্রফেসর এবং এডুকেশন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। আমাদের বোন এই বিষয়ে জোর দেন যে, বাইবেল অধ্যয়ন এবং সভার মাধ্যমে আমরাও লোকেদের শিক্ষা দিই। সেই মহিলা বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হন এবং পরের দিন সভায় যোগ দেন আর তারপর সীমা সম্মেলনেও যোগ দেন। এক বছর পর তিনি বাপ্তিস্ম নেন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি যাদের সঙ্গে পুনর্সাক্ষাৎ করি, তারা কোন বিষয়ে আগ্রহী? আমি কি এমনভাবে বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাব দিতে পারি, যাতে তা তাদের কাছে আগ্রহজনক বলে মনে হয়?’

১৪. কীভাবে আপনি প্রতিটা ছাত্রের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার সময়ে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন?

১৪ বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার পর প্রতিটা অধ্যয়ন পর্বের আগে ছাত্রের পটভূমি ও আগ্রহের কথা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিন। প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে নির্ধারণ করুন যে, আপনি কোন পদগুলো পড়বেন, কোন ভিডিওগুলো দেখাবেন এবং বাইবেলের সত্য ব্যাখ্যা করার জন্য কোন দৃষ্টান্তগুলো ব্যবহার করবেন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘ছাত্রের জন্য কোন বিষয়টা বিশেষভাবে আগ্রহজনক হবে এবং তার হৃদয় স্পর্শ করবে?’ (হিতো. ১৬:২৩) আলবানিয়ায় ফ্লোরা নামে একজন অগ্রগামী বোন একজন মহিলাকে অধ্যয়ন করাতেন। সেই মহিলা একবার দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “আমি পুনরুত্থানের শিক্ষা মেনে নিতে পারছি না।” সেইসময়ে বোন ফ্লোরা পুনরুত্থানের শিক্ষায় বিশ্বাস করার জন্য সেই মহিলাকে জোরাজোরি করেননি। বোন বলেন, “আমার মনে হয়েছিল, প্রথমে তাকে ঈশ্বরকে জানতে হবে, যিনি পুনরুত্থানের প্রতিজ্ঞা করেছেন।” সেই দিন থেকে প্রতি বার অধ্যয়ন করার সময়ে বোন ফ্লোরা যিহোবার প্রেম, প্রজ্ঞা ও শক্তির উপর জোর দিতে থাকেন। পরবর্তী সময়ে, সেই ছাত্রী ইচ্ছুক মনে পুনরুত্থানের শিক্ষায় বিশ্বাস করেছিলেন। বর্তমানে, সেই মহিলা একজন উদ্যোগী যিহোবার সাক্ষি।

তাদের সম্ভাব্য শিষ্য হিসেবে দেখুন

১৫. প্রেরিত ১৭:১৬-১৮ পদ অনুযায়ী আথীনীয়দের কোন আচরণগুলোর কারণে পৌল কষ্ট পেয়েছিলেন কিন্তু কেন তিনি এই উপসংহারে আসেননি যে, আথীনীয়রা কোনো দিনও খ্রিস্টান হতে পারবে না?

১৫ প্রেরিত ১৭:১৬-১৮ পদ পড়ুন। পৌল কখনো এই উপসংহারে আসেননি যে, আথীনীয়রা কোনো দিনও খ্রিস্টান হতে পারবে না, এমনকী যদিও সেই নগর প্রতিমাপূজা, যৌন অনৈতিকতা এবং পৌত্তলিক দর্শনবিদ্যায় পূর্ণ ছিল। আর তিনি সেখানকার লোকেদের কাছে প্রচার করাও বন্ধ করেননি, এমনকী যদিও তারা তাকে অপমান করেছিল। পৌল নিজে একজন খ্রিস্টান হয়ে উঠেছিলেন, যদিও তিনি একসময়ে “ধর্ম্মনিন্দক, তাড়নাকারী ও অপমানকারী” ছিলেন। (১ তীম. ১:১৩) ঠিক যেমন যিশু পৌলের মধ্যে শিষ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা লক্ষ করেছিলেন, একইভাবে পৌলও আথীনীয়দের মধ্যে শিষ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা লক্ষ করেছিলেন। আর ঠিক এমনটাই ঘটেছিল।—প্রেরিত ৯:১৩-১৫; ১৭:৩৪.

১৬-১৭. কী দেখায় যে, সমস্ত পটভূমির লোকেরা খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে উঠতে পারে? একটা উদাহরণ দিন।

১৬ প্রথম শতাব্দীতে সমস্ত পটভূমির লোকেরা যিশুর শিষ্য হয়ে উঠেছিল। পৌল যখন করিন্থের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, সেই মণ্ডলীর কোনো কোনো সদস্য এক সময়ে অপরাধী ছিল অথবা অতি জঘন্য অনৈতিক জীবনযাপন করত। আর তারপর তিনি এই কথাগুলো যুক্ত করেছিলেন: “তোমরা কেহ কেহ সেই প্রকার লোক ছিলে; কিন্তু তোমরা . . . আপনাদিগকে ধৌত করিয়াছ।” (১ করি. ৬:৯-১১) আপনি কি লক্ষ করেছেন, সেই লোকদের মধ্যে পরিবর্তিত হয়ে যিশুর শিষ্য হওয়ার সম্ভাবনা ছিল?

১৭ বর্তমানে, অনেকে যিশুর শিষ্য হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক। উদাহরণ স্বরূপ, ইউকিনা নামে অস্ট্রেলিয়ার একজন বিশেষ অগ্রগামী বোন এটা শিখতে পেরেছিলেন যে, সমস্ত ধরনের মানুষ বাইবেলের বার্তার প্রতি সাড়া দিতে পারে। এক দিন একটা ব্যাবসায়িক এলাকায় তিনি একজন যুবতীকে দেখেছিলেন, যার শরীরে একাধিক ট্যাটু ছিল। বোন ইউকিনা বলেন, “শুরুতে ইতস্তত বোধ করলেও পরে আমি তার সঙ্গে কথা বলি। আমি এটা বুঝতে পারি, তিনি বাইবেলের বিষয়ে এতটাই আগ্রহী ছিলেন যে, তার ট্যাটুর মধ্যে গীতসংহিতার কিছু পদ লেখা ছিল!” সেই মহিলা বাইবেল অধ্যয়ন করতে এবং সভায় আসতে শুরু করেছিলেন। *

১৮. কেন লোকেদের বিচার করা উচিত নয়?

১৮ যিশু কি আশা করেছিলেন যে, বেশিরভাগ লোক তাঁকে অনুসরণ করবে আর এই কারণে কি তিনি ক্ষেত্রের শস্যকে কাটার জন্য প্রস্তুত হিসেবে দেখেছিলেন? একেবারেই না। শাস্ত্রে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা ছিল যে, খুবই অল্পসংখ্যক ব্যক্তি তাঁর উপর বিশ্বাস দেখাবে। (যোহন ১২:৩৭, ৩৮) আর যিশুর কাছে হৃদয় পড়ার এক চমৎকার ক্ষমতা ছিল। (মথি ৯:৪) যদিও তিনি সেই অল্পসংখ্যক ব্যক্তির উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন, যারা তাঁর উপর বিশ্বাস দেখাবে কিন্তু তারপরও তিনি উদ্যোগের সঙ্গে সবার কাছে প্রচার করেছিলেন। আমরা হৃদয় পড়তে পারি না আর তাই আমরা যেন কখনোই কোনো এলাকা অথবা ব্যক্তির বিচার না করি! এর পরিবর্তে, লোকেদের মধ্যে যিশুর শিষ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা লক্ষ করুন। মার্ক নামে বুরকিনা ফাসোর একজন মিশনারি ভাই বলেছিলেন: “যে-লোকেরা উন্নতি করবে বলে আমি মনে করি, তারা প্রায়ই অধ্যয়ন বন্ধ করে দেয়। কিন্তু, যারা উন্নতি করবে না বলে মনে করি, তারাই ভালো উন্নতি করে। তাই, আমি এটা শিখেছি, যিহোবার পবিত্র আত্মার দ্বারা আমাদের নির্দেশিত হওয়া উচিত।”

১৯. আমাদের এলাকার লোকেদের আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

১৯ প্রথম প্রথম আমাদের হয়তো মনে হতে পারে, ক্ষেত্রে এইরকম লোক খুব কমই রয়েছে, যারা যিশুর শিষ্য হয়ে উঠবে। কিন্তু মনে রাখবেন, যিশু তাঁর শিষ্যদের কী বলেছিলেন। ক্ষেত্র শ্বেতবর্ণের হয়ে গিয়েছে আর এর অর্থ হল সেটা কাটার জন্য প্রস্তুত। লোকেরা পরিবর্তিত হতে পারে এবং খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে উঠতে পারে। যিহোবা বিশ্বাস করেন যে, আমাদের এলাকার লোকেদের মধ্যে খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে আর তিনি তাদের “মনোরঞ্জন বস্তু [“মূল্যবান,” NW]” হিসেবে দেখেন। (হগয় ২:৭) আমরা যদি লোকেদের যিহোবা ও যিশুর মতো করে দেখি, তা হলে তাদের পটভূমি ও আগ্রহের বিষয়গুলো সম্বন্ধে জানতে পারব। আমরা তাদের অপরিচিত ব্যক্তি হিসেবে নয় বরং সম্ভাব্য ভাই ও বোন হিসেবে দেখব।

গান সংখ্যা ১৮ ঈশ্বরের অনুগত প্রেম

^ অনু. 5 আমরা যেভাবে আমাদের এলাকাকে দেখি, সেটা আমাদের প্রচার করা এবং শিক্ষা দেওয়ার উপর কোন প্রভাব ফেলে? এই প্রবন্ধে পরীক্ষা করা হবে যে, যিশু ও প্রেরিত পৌল তাদের শ্রোতাদের কোন দৃষ্টিতে দেখেছিলেন। এ ছাড়া, এই প্রবন্ধে এই বিষয় নিয়েও পরীক্ষা করা হবে যে, আমরা যাদের সঙ্গে দেখা করি, তাদের বিশ্বাস ও আগ্রহ সম্বন্ধে বিবেচনা করার এবং তাদের মধ্যে যে যিশুর শিষ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা বিবেচনা করার মাধ্যমে কীভাবে আমরা যিশু ও প্রেরিত পৌলকে অনুকরণ করতে পারি।

^ অনু. 17বাইবেল জীবনকে পরিবর্তন করে” শিরোনামের ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোতে আরও উদাহরণ রয়েছে, যেগুলো দেখায় যে, কীভাবে লোকেরা পরিবর্তিত হতে পারে। এই ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলো প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয়ে এসেছে। বর্তমানে, এই প্রবন্ধগুলো jw.org® ইংরেজি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হচ্ছে। আমাদের সম্বন্ধে > অভিজ্ঞতা-র অধীনে দেখুন।

^ অনু. 57 ছবি সম্বন্ধে: এক দম্পতি ঘরে ঘরে প্রচার করার সময়ে (১) একটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাড়ি লক্ষ করেন, যেটা ফুল দিয়ে সাজানো রয়েছে; (২) একটা পরিবার লক্ষ করেন, যে-পরিবারে ছোটো ছেলে-মেয়ে রয়েছে; (৩) একটা অপরিচ্ছন্ন বাড়ি লক্ষ করেন এবং (৪) একটা ধর্মীয় বাড়ি লক্ষ করেন। কোথায় আপনি সেই ব্যক্তিদের খুঁজে পেতে পারেন, যাদের মধ্যে খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে ওঠার আমূল সম্ভাবনা রয়েছে?