সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৬

শুনুন, জানুন এবং সমবেদনা দেখান

শুনুন, জানুন এবং সমবেদনা দেখান

“দৃশ্য মতে বিচার করিও না, কিন্তু ন্যায্য বিচার কর।”—যোহন ৭:২৪.

গান সংখ্যা ৫৩ একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা

সারাংশ *

১. বাইবেল যিহোবা সম্বন্ধে কোন সান্ত্বনাদায়ক সত্য প্রকাশ করে?

লোকেরা যদি আপনার গায়ের রং, মুখের আকার অথবা শারীরিক গঠনের উপর ভিত্তি করে আপনার বিচার করে, তা হলে আপনার কেমন লাগবে? সম্ভবত, খারাপ লাগবে। এটা জানা কতই-না সান্ত্বনাদায়ক যে, যিহোবা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী আমাদের বিচার করেন না! উদাহরণ স্বরূপ, শমূয়েল যখন যিশয়ের ছেলেদের দেখেছিলেন, তখন তিনি তাদের মধ্যে এমন কিছু বিষয় দেখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, যা যিহোবা দেখেছিলেন। যিহোবা শমূয়েলকে বলেছিলেন, যিশয়ের ছেলেদের মধ্যে একজন ইস্রায়েলের রাজা হবেন। কিন্তু, কে রাজা হবেন, তা তিনি শমূয়েলকে বলেননি। শমূয়েল যখন যিশয়ের বড়ো ছেলে ইলীয়াবকে দেখেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন: “অবশ্য সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তি তাঁহার সম্মুখে।” ইলীয়াব রাজার মতো দেখতে ছিলেন। “কিন্তু সদাপ্রভু শমূয়েলকে কহিলেন, তুমি উহার মুখশ্রীর বা কায়িক দীর্ঘতার প্রতি দৃষ্টি করিও না; কারণ আমি উহাকে অগ্রাহ্য করিলাম।” শিক্ষণীয় বিষয়টা কী? যিহোবার পরবর্তী কথাগুলো লক্ষ করুন: “মনুষ্য প্রত্যক্ষ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি করে, কিন্তু সদাপ্রভু অন্তঃকরণের” বা হৃদয়ের “প্রতি দৃষ্টি করেন।”—১ শমূ. ১৬:১, ৬, ৭.

২. যোহন ৭:২৪ পদ অনুযায়ী কেন একজন ব্যক্তির বাহ্যিক বিষয়গুলো দেখে তার বিচার করা উচিত নয়? একটা উদাহরণ দিন।

অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে আমাদের সবার মধ্যেই “দৃশ্য মতে” বা বাহ্যিক বিষয়গুলোর দ্বারা অন্যদের বিচার করার প্রবণতা রয়েছে। (পড়ুন, যোহন ৭:২৪.) কিন্তু, আমরা যা দেখি, সেটার দ্বারা একজন ব্যক্তি সম্বন্ধে খুব কমই জানতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ, একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তারও একজন রোগীকে বাইরে থেকে দেখে তার রোগ সম্বন্ধে খুব সামান্যই জানতে পারেন। সেই রোগীর আগে কোন কোন স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল, এখন তিনি কেমন অনুভব করছেন এবং তার মধ্যে রোগের কোন কোন লক্ষণ রয়েছে, সেগুলো জানার জন্য সেই ডাক্তারকে অবশ্যই রোগীর কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। রোগীর শরীরের ভিতরের কোনো সমস্যা সম্বন্ধে জানার জন্য সেই ডাক্তার হয়তো এমনকী এক্স-রে করার জন্য সুপারিশ করতে পারেন। এমনটা না করলে সেই ডাক্তার হয়তো ভুল চিকিৎসা করে ফেলতে পারেন। একইভাবে, আমরা আমাদের ভাই-বোনদের কেবল বাহ্যিক বিষয়গুলো দেখে তাদের সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারি না। আমাদের অবশ্যই তাদের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে বোঝার জন্য চেষ্টা করতে হবে। এটা ঠিক যে, আমরা হৃদয় পড়তে পারি না। তাই, যিহোবা যতটা ভালোভাবে আমাদের ভাই-বোনদের বুঝতে পারেন, আমরা কখনোই ততটা ভালোভাবে তাদের বুঝতে পারব না। তবে, আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করার জন্য আমাদের সর্বোত্তমটা করতে পারি। কীভাবে?

৩. এই প্রবন্ধে দেওয়া বাইবেলের বিবরণগুলো যিহোবাকে অনুকরণ করার ক্ষেত্রে কীভাবে আমাদের সাহায্য করবে?

যিহোবা কীভাবে তাঁর উপাসকদের সঙ্গে আচরণ করেন? তিনি তাদের কথা শোনেন। তিনি তাদের পটভূমি ও পরিস্থিতি বিবেচনা করেন। আর তিনি তাদের প্রতি সমবেদনা দেখান। যিহোবা যেভাবে যোনা, এলিয়, হাগার ও লোটের প্রতি এমনটা করেছিলেন, তা নিয়ে বিবেচনা করার সময়ে আসুন আমরা দেখি যে, কীভাবে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে আচরণ করার সময়ে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি।

মন দিয়ে শুনুন

৪. কেন আমরা হয়তো যোনাকে নেতিবাচকভাবে দেখতে পারি?

আমরা যেহেতু যোনার পরিস্থিতি সম্বন্ধে সমস্ত কিছু জানি না, তাই আমরা হয়তো ভাবতে পারি যে, যোনা একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নন আর তিনি এমনকী একজন অবাধ্য ব্যক্তি। যিহোবা তাকে সরাসরি আজ্ঞা দিয়েছিলেন যেন তিনি নীনবীতে গিয়ে বিচারের বার্তা ঘোষণা করেন। কিন্তু, যোনা যিহোবার আজ্ঞার প্রতি বাধ্যতা দেখানোর পরিবর্তে জাহাজে চড়ে “সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে . . . পলাইয়া” বিপরীত দিকে যাত্রা করেছিলেন। (যোনা ১:১-৩) আপনি যদি যিহোবার জায়গায় থাকতেন, তা হলে আপনি কি যোনাকে আরেকটা সুযোগ দিতেন? হয়তো দিতেন না। কিন্তু, যিহোবা যোনাকে সুযোগ দিয়েছিলেন আর এর পিছনে উপযুক্ত কারণ ছিল।—যোনা ৩:১, ২.

৫. যোনা ২:১, ২, ৯ পদে লিপিবদ্ধ কথাগুলো থেকে আপনি যোনার বিষয়ে কী শেখেন?

যোনার প্রার্থনা প্রকাশ করে যে, তিনি আসলে কেমন ব্যক্তি ছিলেন। (পড়ুন, যোনা ২:১, ২, .) কোনো সন্দেহ নেই, যোনা একাধিক বার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। সেই প্রার্থনাগুলোর মধ্যে একটা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, তিনি একজন ভালো ব্যক্তি ছিলেন। যদিও তিনি তার কার্যভার ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তারপরও তার প্রার্থনা দেখায় যে, তার মধ্যে নম্রতা ও কৃতজ্ঞতার মতো গুণগুলো ছিল এবং তিনি যিহোবার প্রতি বাধ্যতা দেখানোর বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। তাই, এতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই যে, যিহোবা যোনার ভুলের উপর মনোযোগ দেননি। এর পরিবর্তে, তিনি তার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন এবং তাকে একজন ভাববাদী হিসেবে ব্যবহার করে গিয়েছিলেন!

আমরা যদি সঠিক তথ্য লাভ করি, তা হলে আমরা আরও বেশি সহমর্মিতা দেখাতে পারব (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৬. কেন মন দিয়ে কথা শোনা উত্তম ফল নিয়ে আসে?

অন্যদের কথা মন দিয়ে শোনার জন্য আমাদের নম্র হতে হবে এবং ধৈর্য ধরতে হবে। এই ধরনের প্রচেষ্টা উত্তম ফল নিয়ে আসবে আর তা অন্ততপক্ষে তিনটে কারণে। প্রথমত, আমরা লোকেদের সম্বন্ধে দ্রুত ভুল ধারণা গড়ে তুলব না। দ্বিতীয়ত, আমরা আমাদের ভাইয়ের অনুভূতি ও মনোভাব বুঝতে পারব এবং এর ফলে আমরা আরও বেশি সহমর্মিতা দেখাতে পারব। আর তৃতীয়ত, আমরা যখন আমাদের ভাইকে কথা বলার সুযোগ দেব, তখন তিনি হয়তো নিজের সম্বন্ধে কিছু বিষয় বুঝতে পারবেন। কখনো কখনো আমরা যখন নিজেদের অনুভূতি সম্বন্ধে অন্যদের কাছে বলি, তখন আমরা হয়তো আরও ভালোভাবে নিজেদের অনুভূতি সম্বন্ধে বুঝতে পারি। (হিতো. ২০:৫) এশিয়ার একজন প্রাচীন ভাই স্বীকার করেন: “এক বার আমি সম্পূর্ণ তথ্য না শুনেই কথা বলেছিলাম। আমি একজন বোনকে বলেছিলাম, তিনি সভায় যে-মন্তব্য করেন, তাতে তাকে উন্নতি করতে হবে। পরবর্তী সময়ে আমি জানতে পারি, সেই বোন ভালোভাবে পড়তে জানেন না এবং সভায় মন্তব্য করার জন্য তাকে কঠোর প্রচেষ্টা করতে হয়।” তাই, প্রত্যেক প্রাচীনের জন্য এটা কতই-না গুরুত্বপূর্ণ যে, পরামর্শ দেওয়ার আগে তারা যেন তথ্য সম্বন্ধে ‘শুনেন’!—হিতো. ১৮:১৩.

৭. যিহোবা এলিয়ের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখি?

কোনো কোনো ভাই-বোন তাদের পটভূমি, সংস্কৃতি অথবা ব্যক্তিত্বের কারণে নিজেদের অনুভূতি সম্বন্ধে কথা বলাকে কঠিন বলে মনে করে। তারা যাতে আমাদের কাছে সহজেই নিজেদের অনুভূতি সম্বন্ধে খোলাখুলিভাবে কথা বলতে পারে, সেইজন্য আমরা কী করতে পারি? মনে করে দেখুন, যিহোবা কীভাবে সেই সময়ে এলিয়ের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন, যখন তিনি ঈষেবলের কাছ থেকে পালাচ্ছিলেন। এলিয় নিজের অনুভূতি তার স্বর্গীয় পিতার কাছে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ তো করেছিলেন, কিন্তু এরজন্য তার অনেক দিন সময় লেগেছিল। তবে, এলিয় যখন তা প্রকাশ করেছিলেন, তখন যিহোবা মন দিয়ে তা শুনেছিলেন। তারপর, তিনি এলিয়কে উৎসাহিত করেছিলেন এবং এক গুরুত্বপূর্ণ কার্যভার দিয়েছিলেন। (১ রাজা. ১৯:১-১৮) এটা ঠিক যে, আমাদের ভাই-বোনদের পক্ষে আমাদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে স্বচ্ছন্দ বোধ করার জন্য সময় লাগতে পারে। তবে, একমাত্র তারা মন খুলে কথা বললেই আমরা তাদের প্রকৃত অনুভূতি সম্বন্ধে জানতে পারব। আমরা যদি ধৈর্য ধরার মাধ্যমে যিহোবাকে অনুকরণ করি, তা হলে আমরা তাদের আস্থা অর্জন করতে পারব। আর তারপর, তারা যখন তাদের অনুভূতি সম্বন্ধে আমাদের জানাতে চাইবে, তখন আমাদের অবশ্যই তাদের কথা মন দিয়ে শুনতে হবে।

আপনার ভাই-বোনদের জানুন

৮. আদিপুস্তক ১৬:৭-১৩ পদ অনুযায়ী কীভাবে যিহোবা হাগারকে সাহায্য করেছিলেন?

অব্রামের সঙ্গে সারীর দাসী হাগারের বিয়ে হওয়ার পর হাগার মূর্খতাপূর্ণ কাজ করেছিলেন। হাগার গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে সারীকে অসম্মান করতে শুরু করেছিলেন কারণ সেই সময়ে সারীর নিজের কোনো সন্তান ছিল না। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, সারীর আচরণের কারণে হাগার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। (আদি. ১৬:৪-৬) অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে আমাদের হয়তো মনে হতে পারে, হাগার একজন অহংকারী মহিলা ছিলেন আর তার সঙ্গে উপযুক্ত আচরণ করা হয়েছে। কিন্তু, যিহোবা হাগারের প্রতি এইরকম অনুভব করেননি। তিনি তার কাছে একজন স্বর্গদূতকে পাঠিয়েছিলেন। সেই স্বর্গদূত হাগারকে তার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছিলেন আর তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন। হাগার এটা উপলব্ধি করেছিলেন যে, যিহোবা তাকে দেখছেন এবং তার পরিস্থিতি সম্বন্ধে খুব ভালোভাবে অবগত রয়েছেন। হাগার এতটাই অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁকে “দর্শনকারী ঈশ্বর” বলে অভিহিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন, “[তিনি] আমাকে দর্শন করেন।”—পড়ুন, আদিপুস্তক ১৬:৭-১৩.

৯. কেন ঈশ্বর হাগারের সঙ্গে এভাবে আচরণ করেছিলেন?

যিহোবা হাগারের মধ্যে কী লক্ষ করেছিলেন? যিহোবা তার পটভূমি এবং তিনি যা-কিছু ভাবছিলেন, সেই সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে অবগত ছিলেন। (হিতো. ১৫:৩) হাগার একজন মিশরীয় ছিলেন এবং এক ইব্রীয় পরিবারে বাস করছিলেন। তিনি কি মাঝেমধ্যে একাকিত্ব বোধ করতেন? তিনি কি তার পরিবার ও দেশের কথা ভেবে দুঃখ পেতেন? তিনি অব্রামের একমাত্র স্ত্রী ছিলেন না। অতীতে যিহোবার কিছু বিশ্বস্ত উপাসকের একাধিক স্ত্রী ছিল। কিন্তু, এটা যিহোবার আদি উদ্দেশ্য ছিল না। (মথি ১৯:৪-৬) তাই, এতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই যে, এই ধরনের পরিস্থিতির কারণে প্রায়ই পরিবারের মধ্যে হিংসা ও ঘৃণার মনোভাব দেখা দিত আর এর ফলে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হত। যিহোবা এটা জানতেন, হাগার যেভাবে সারীর সঙ্গে আচরণ করেছেন, সেটা ঠিক নয়। তবে, তিনি হাগারের অনুভূতি ও পরিস্থিতি সম্বন্ধেও বুঝতে পেরেছিলেন আর তাই তিনি তার সঙ্গে সদয়ভাবে আচরণ করেছিলেন।

আপনার ভাই-বোনদের আরও ভালোভাবে জানুন (১০-১২ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১০. কীভাবে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের আরও ভালোভাবে জানতে পারি?

১০ আমরা আমাদের ভাই-বোনদের বোঝার চেষ্টা করার মাধ্যমে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি। ভাই-বোনদের আরও ভালোভাবে জানুন। সভার আগে ও পরে তাদের সঙ্গে কথা বলুন, পরিচর্যায় তাদের সঙ্গে কাজ করুন আর যদি সম্ভব হয়, তা হলে তাদের খাবার খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ জানান। আপনি যখন এমনটা করবেন, তখন আপনি আপনার ভাই-বোনদের আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন। আপনি হয়তো জানতে পারবেন যে, একজন বোন যাকে আপনি বন্ধুত্বপরায়ণ নয় বলে ভাবতেন, তিনি আসলে লাজুক স্বভাবের; একজন ভাই যাকে আপনি বস্তুবাদী হিসেবে ভাবতেন, তিনি আসলে অতিথিপরায়ণ; অথবা একটা পরিবার প্রায়ই সভায় দেরি করে আসে, সেই পরিবার আসলে বিরোধিতা সহ্য করছে। (যাকোব ৪:১২) এটা ঠিক যে, লোকেদের সম্বন্ধে আমাদের ‘অনধিকারচর্চ্চা’ করা উচিত নয়। (১ তীম. ৫:১৩) তবে, আমাদের ভাই-বোনদের সম্বন্ধে এবং তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে কিছু বিষয় জানা ভালো। এটা তাদের আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আমাদের সাহায্য করবে।

১১. কেন মেষদের ভালোভাবে জানা প্রাচীনদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

১১ বিশেষভাবে, প্রাচীনদের তাদের যত্নাধীনে থাকা ভাই-বোনদের পটভূমি সম্বন্ধে জানার প্রয়োজন রয়েছে। আর্টুর নামে একজন ভাইয়ের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যিনি সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করতেন। তিনি আরেকজন প্রাচীনকে সঙ্গে নিয়ে একজন বোনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই বোন লাজুক স্বভাবের ছিলেন। ভাই আর্টুর বলেন, “আমরা জানতে পারি যে, সেই বোনের বিয়ে হওয়ার অল্প সময় পরেই তার স্বামী মারা গিয়েছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও তিনি তার দুই মেয়েকে যিহোবাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন, যারা বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করেন। বর্তমানে, সেই বোন আর আগের মতো চোখে দেখতে পান না এবং অবসাদে ভোগেন। তারপরও, যিহোবার প্রতি তার ভালোবাসা ও বিশ্বাস আগের মতোই দৃঢ় রয়েছে। আমরা এটা বুঝতে পারি যে, সেই বোনের উত্তম উদাহরণ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার রয়েছে।” (ফিলি. ২:৩) এই সীমা অধ্যক্ষ যিহোবার উদাহরণ অনুসরণ করছিলেন। যিহোবা তাঁর মেষদের সম্বন্ধে এবং তাদের দুঃখ সম্বন্ধে জানেন। (যাত্রা. ৩:৭) যে-প্রাচীনেরা মেষদের ভালোভাবে জানেন, তারা তাদের সাহায্য করার জন্য ভালো অবস্থানে রয়েছেন।

১২. ইপ ই নামে একজন বোন তার মণ্ডলীর আরেকজন বোনের বিষয়ে জানার মাধ্যমে কীভাবে উপকৃত হয়েছিলেন?

১২ আপনি হয়তো কোনো ভাই অথবা বোনের আচরণের কারণে বিরক্তি বোধ করেন। তবে, আপনি যখন তার পটভূমি সম্বন্ধে জানবেন, তখন আপনি হয়তো তার প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে অনুপ্রাণিত হবেন। একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। ইপ ই নামে এশিয়ার একজন বোন বলেন: “আমাদের মণ্ডলীর একজন বোন সবসময় জোরে জোরে কথা বলতেন। আমার মনে হতো, তার উত্তম আচার-ব্যবহারের অভাব রয়েছে। কিন্তু, আমি যখন তার সঙ্গে পরিচর্যায় কাজ করি, তখন আমি জানতে পারি, তিনি তার বাবা-মাকে বাজারে মাছ বিক্রি করতে সাহায্য করতেন। আর তাই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য তাকে জোরে জোরে কথা বলতে হতো।” বোন ইপ ই আরও বলেন: “আমি এটা শিখেছি, ভাই-বোনদের বোঝার জন্য আমাকে তাদের পটভূমি সম্বন্ধে জানতে হবে।” ভাই-বোনদের আরও ভালোভাবে জানার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। তারপরও, আপনি যখন আপনার হৃদয় প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে বাইবেলের পরামর্শ অনুসরণ করেন, তখন আপনি যিহোবাকে অনুকরণ করেন, যিনি ‘সমুদয় মনুষ্যকে’ ভালোবাসেন।—১ তীম. ২:৩, ৪; ২ করি. ৬:১১-১৩.

সমবেদনা দেখান

১৩. আদিপুস্তক ১৯:১৫, ১৬ পদের বিবরণ অনুযায়ী লোট যখন ইতস্তত করছিলেন, তখন স্বর্গদূতেরা কী করেছিলেন এবং কেন?

১৩ লোট তার জীবনের এক কঠিন সময়ে যিহোবার নির্দেশনার প্রতি বাধ্যতা দেখানোর ক্ষেত্রে দেরি করেছিলেন। দুই জন স্বর্গদূত তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং তাকে তার পরিবার নিয়ে সদোম থেকে চলে যেতে বলেছিলেন। কেন? তারা বলেছিলেন: “আমরা এই স্থান উচ্ছিন্ন করিব।” (আদি. ১৯:১২, ১৩) স্বর্গদূতদের কাছ থেকে এই সতর্কবাণী শোনার পরও পরের দিন সকাল পর্যন্ত লোট ও তার পরিবার বাড়িতেই ছিলেন। তাই, স্বর্গদূতেরা আবারও লোটকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু, “তিনি ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন।” আমরা হয়তো ভাবতে পারি, লোট যিহোবার কথাকে গুরুত্ব দেননি অথবা তিনি একজন অবাধ্য ব্যক্তি। কিন্তু, যিহোবা তার বিষয়ে হাল ছেড়ে দেননি। “তাঁহার” অর্থাৎ লোটের “প্রতি সদাপ্রভুর স্নেহ” বা সমবেদনা “প্রযুক্ত” স্বর্গদূতেরা লোট ও তার পরিবারের সদস্যদের হাত ধরে টেনে নগরের বাইরে নিয়ে গিয়েছিলেন।—পড়ুন, আদিপুস্তক ১৯:১৫, ১৬.

১৪. কোন কোন কারণে হয়তো যিহোবা লোটের প্রতি সমবেদনা বোধ করেছিলেন?

১৪ যিহোবা হয়তো একাধিক কারণে লোটের প্রতি সমবেদনা বোধ করেছিলেন। লোট নগরের বাইরের লোকেদের ভয় পেতেন আর তাই তিনি হয়তো তার বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ইতস্তত করেছিলেন। এ ছাড়া, আরও কিছু বিপদ ছিল। লোট সম্ভবত সেই দুই জন রাজাকে জানতেন, যারা কাছের একটা উপত্যকার মেটিয়া তৈলের বা আলকাতরার খনিতে পড়ে গিয়েছিলেন। (আদি. ১৪:৮-১২) একজন স্বামী ও বাবা হিসেবে লোট নিশ্চয়ই তার পরিবারের বিষয়ে দুশ্চিন্তা করেছিলেন। এ ছাড়া, লোট একজন ধনী ব্যক্তি ছিলেন আর তাই সদোমে হয়তো তার একটা সুন্দর বাড়ি ছিল। (আদি. ১৩:৫, ৬) অবশ্য, দ্রুত যিহোবার প্রতি বাধ্যতা দেখানোর ক্ষেত্রে লোটের ব্যর্থ হওয়ার পিছনে এগুলোর মধ্যে একটাও উপযুক্ত কারণ ছিল না। তবে, যিহোবা লোটের ভুলের উপর মনোযোগ দেননি। এর পরিবর্তে, তিনি তাকে একজন “ধার্ম্মিক ব্যক্তি” হিসেবে দেখেছিলেন।—২ পিতর ২:৭, ৮.

আমরা যখন অন্যদের কথা শুনব, তখন আমরা বুঝতে পারব যে, কীভাবে আমরা সমবেদনা দেখাতে পারি (১৫-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৫. কোনো ব্যক্তির কাজ নিয়ে বিচার করার পরিবর্তে আমাদের কী করা উচিত?

১৫ কোনো ব্যক্তির কাজ নিয়ে বিচার করার পরিবর্তে তার অনুভূতি বোঝার জন্য যথাসাধ্য করুন। ভেরনিকা নামে ইউরোপের একজন বোন এমনটা করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেন: “একজন বোনকে দেখে মনে হতো যেন সবসময়েই তার মুড অফ রয়েছে। তিনি সবসময় আলাদা থাকার চেষ্টা করতেন। কখনো কখনো তো আমার কথা বলতেই ভয় লাগত। কিন্তু আমি ভাবতাম, ‘আমি যদি তার জায়গায় থাকতাম, তা হলে আমার একজন বন্ধুর প্রয়োজন হতো।’ তাই, আমি তার অনুভূতি সম্বন্ধে জানার জন্য তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। আর এর ফলে তিনি আমাকে তার মনের কথা খুলে বলতে শুরু করেছিলেন! এখন আমি তাকে আগের চেয়ে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি।”

১৬. কেন আমাদের সহমর্মিতা গড়ে তোলার জন্য সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করা উচিত?

১৬ একমাত্র যিহোবাই আমাদের সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারেন। (১ যোহন ৩:২০) তাই, যিহোবার কাছে সাহায্য চান, যাতে আপনি তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যদের দেখতে পারেন এবং তাদের প্রতি কীভাবে সমবেদনা দেখানো যায়, তা বুঝতে পারেন। আঞ্জিলা নামে একজন বোন আরও বেশি সহমর্মিতা দেখাতে চেয়েছিলেন আর প্রার্থনা তাকে সাহায্য করেছিল। তার মণ্ডলীর একজন বোনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা তার জন্য কঠিন ছিল। বোন আঞ্জিলা স্বীকার করেন: “আমি খুব সহজেই সেই বোনের সমালোচনা করতে পারতাম এবং তাকে এড়িয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু, আমি যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেছিলাম, যাতে আমি সেই বোনের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে পারি।” যিহোবা কি বোন আঞ্জিলার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন? বোন আরও বলেন: “আমরা একসঙ্গে পরিচর্যায় যাই আর তারপর কয়েক ঘণ্টা ধরে কথা বলি। আমি সমবেদনা দেখিয়ে তার কথা শুনি। এখন আমি তাকে আগের চেয়ে আরও বেশি ভালোবাসি এবং তাকে সাহায্য করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।”

১৭. আমাদের কী করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?

১৭ আমরা আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি সমবেদনা দেখানোর ক্ষেত্রে বাছবিচার করতে পারি না। তারা সবাই সমস্যার মুখোমুখি হয়, ঠিক যেমনটা যোনা, এলিয়, হাগার ও লোট হয়েছিলেন। বেশিরভাগ সময়ে তারা নিজেরাই নিজেদের জীবনে সমস্যা ডেকে এনেছে। আর সত্যি বলতে কী, আমরাও কোনো-না-কোনো সময়ে এমনটা করেছি। তাই, এটা যুক্তিসংগত যে, যিহোবা চান যেন আমরা অন্যদের দুঃখে দুঃখিত হই। (১ পিতর ৩:৮) আমরা যখন যিহোবার বাধ্য হই, তখন আমরা আমাদের অদ্বিতীয় বিশ্বব্যাপী পরিবারের একতায় অবদান রাখি। তাই, একে অন্যের সঙ্গে আচরণ করার সময়ে আমরা যেন শোনার, জানার এবং সমবেদনা দেখানোর বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই।

গান সংখ্যা ২০ আমাদের একত্রে সভাস্থ হওয়াকে আশীর্বাদ করো

^ অনু. 5 অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে আমাদের মধ্যে লোকেদের সম্বন্ধে এবং তাদের মনোভাব সম্বন্ধে দ্রুত ধারণা গড়ে তোলার প্রবণতা রয়েছে। অন্যদিকে যিহোবা “অন্তঃকরণের” বা হৃদয়ের “প্রতি দৃষ্টি করেন।” (১ শমূ. ১৬:৭) এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে যে, কীভাবে তিনি প্রেমের সঙ্গে যোনা, এলিয়, হাগার ও লোটকে সাহায্য করেছিলেন। আর এটা আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে আচরণ করার সময়ে যিহোবাকে অনুকরণ করতে সাহায্য করবে।

^ অনু. 52 ছবি সম্বন্ধে: একজন অল্পবয়সি ভাইকে দেরি করে সভায় আসতে দেখে একজন বয়স্ক ভাই বিরক্ত হচ্ছেন। কিন্তু, পরে তিনি জানতে পারেন, গাড়ি দুর্ঘটনার জন্য সেই ভাইয়ের দেরি হয়েছে।

^ অনু. 54 ছবি সম্বন্ধে: যদিও একটা পরিচর্যা দলের অধ্যক্ষ প্রথমে মনে করছিলেন, একজন বোন বন্ধুত্বপরায়ণ নন কিন্তু পরে তিনি জানতে পেরেছিলেন, সেই বোন আসলে লাজুক স্বভাবের ছিলেন আর তিনি যাদেরকে ভালোভাবে চেনেন না, তাদের সঙ্গে থাকতে অস্বস্তি বোধ করতেন।

^ অনু. 56 ছবি সম্বন্ধে: একজন বোন যখন আরেকজন বোনকে প্রথম বার কিংডম হলে দেখেছিলেন, তখন তিনি মনে করেছিলেন, সেই বোনের মুড সবসময় ঠিক থাকে না এবং তিনি অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখান না। কিন্তু, সেই বোনের সঙ্গে সময় কাটানোর ফলে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সেই বোন আসলে এইরকম নন।