সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৬

মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করুন এবং আনন্দিত থাকুন

মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করুন এবং আনন্দিত থাকুন

“প্রত্যেকে নিজের কাজ পরীক্ষা করে দেখুক।”—গালা. ৬:৪.

গান ১০ “এই আমি, আমাকে পাঠাও”

সারাংশ *

১. আমরা কী করার মাধ্যমে অনেক আনন্দ লাভ করি?

 যিহোবা চান যেন আমরা সুখী হই। কীভাবে আমরা তা বলতে পারি? বাইবেল জানায়, তাঁর পবিত্র শক্তির ফলের একটা দিক হল আনন্দ। (গালা. ৫:২২) বাইবেলে এও লেখা আছে, নেওয়ার চেয়ে বরং দেওয়ার মধ্যে আরও বেশি সুখ। (প্রেরিত ২০:৩৫) তাই, যখন আমরা অন্যদের কাছে সাক্ষ্য দিই এবং বিভিন্ন উপায়ে আমাদের ভাই-বোনদের সাহায্য করি, তখন আমরা অনেক আনন্দ লাভ করি।

২-৩. (ক) গালাতীয় ৬:৪ পদ অনুযায়ী আমরা যদি আনন্দিত থাকতে চাই, তা হলে আমাদের কী করতে হবে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?

গালাতীয় ৬:৪ পদে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, আমরা যদি আনন্দিত থাকতে চাই, তা হলে আমাদের দুটো বিষয় করতে হবে। (পড়ুন।) প্রথমত, যিহোবার সেবা করার জন্য আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, তা মনপ্রাণ দিয়ে করতে হবে। (মথি ২২:৩৬-৩৮) দ্বিতীয়ত, আমাদের কখনোই অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করা উচিত নয়। আমাদের মনে রাখা উচিত, আমরা যা-কিছু করতে পারছি, তা যিহোবার সাহায্যেই করতে পারছি। তিনিই আমাদের শিখিয়েছেন এবং আমাদের শক্তি ও দক্ষতা দিয়েছেন। আর যদি অন্যেরা আমাদের চেয়ে বেশি করে থাকে, তা হলেও আমাদের আনন্দিত হওয়া উচিত। তারা তাদের এই দক্ষতা নিজেদের নাম অর্জন করার জন্য নয় বরং যিহোবার প্রশংসা করার জন্য ব্যবহার করে থাকে। তাই, তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার পরিবর্তে তাদের কাছ থেকে আমাদের শেখা উচিত।

কখনো কখনো আমাদের পরিস্থিতি ঠিক থাকে না আর আমরা বেশি করে যিহোবার সেবা করতে পারি না। এই কারণে আমরা হতাশ হয়ে পড়তে পারি। কিংবা হতে পারে, আমাদের পরিস্থিতি ঠিক রয়েছে আর আমাদের অনেক দক্ষতা ও ক্ষমতাও রয়েছে, কিন্তু আমরা এগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করছি না। এই প্রবন্ধে আমরা শিখব যে, আমাদের পরিস্থিতি যেরকমই হোক না কেন, আমরা মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করতে পারি আর আনন্দ লাভ করতে পারি। আমরা এও জানব, অন্যদের ভালো উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

যখন আমাদের পরিস্থিতি ঠিক থাকে না

আমরা যদি জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করি, তা হলে তিনি অনেক আনন্দিত হবেন (৪-৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৪. একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন যে, কখন আমরা হতাশ হয়ে পড়তে পারি?

যিহোবার অনেক উপাসক বয়স্ক হয়ে গিয়েছে কিংবা অসুস্থ রয়েছে। তাই, তারা বেশি করে তাঁর সেবা করতে পারে না। এই কারণে তারা কখনো কখনো হতাশ হয়ে পড়ে। ক্যারল নামে একজন বোনের প্রতি এমনটাই ঘটেছিল। একসময়, তিনি এমন একটা জায়গায় সেবা করতেন, যেখানে বেশি প্রকাশকের প্রয়োজন ছিল। তার কাছে ৩৫টা বাইবেল অধ্যয়ন ছিল এবং তিনি অনেক লোককে বাপ্তিস্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিলেন। তিনি খুব আনন্দে থাকতেন। কিন্তু পরে, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন আর এখন তাকে বেশিরভাগ সময়ই ঘরে থাকতে হয়। তিনি বলেন: “আমি জানি, আমার খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে আমি এখন আর বেশি করে যিহোবার সেবা করতে পারছি না। কিন্তু, আমি যখন অন্যদের বেশি করে যিহোবার সেবা করতে দেখি, তখন আমার মনে হয়, আমি তাদের মতো বিশ্বস্ত নই। এইরকম বিষয়ে বার বার চিন্তা করে আমি হতাশ হয়ে পড়ি।” যদিও ক্যারল এখন অসুস্থ রয়েছেন, তবুও তিনি মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করতে চান। তার এই ইচ্ছা দেখে যিহোবা কতই-না আনন্দিত হন!

৫. (ক) বেশি করে যিহোবার সেবা করতে না পারার কারণে আমরা যদি হতাশ হয়ে পড়ি, তা হলে আমরা কী মনে রাখতে পারি? (খ) ছবিতে যেমনটা দেখানো হয়েছে, একজন ভাই কীভাবে সারাজীবন ধরে মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করেছেন?

যদি এমনটা হয়, আপনি আপনার পরিস্থিতির কারণে বেশি করে যিহোবার সেবা করতে পারছেন না আর হতাশ হয়ে পড়েছেন, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? আপনি মনে রাখতে পারেন, যিহোবা আপনার কাছ থেকে কী চান। তিনি চান, আপনি যতটুকু করতে পারেন, ততটুকু যেন মনপ্রাণ দিয়ে করেন। ধরুন, ৮০ বছর বয়সি একজন বোন এইরকম চিন্তা করে হতাশ হয়ে পড়েন যে, তিনি ততটা করতে পারছেন না, যতটা তিনি ৪০ বছর বয়সে করতে পারতেন। যদিও তিনি এখনও মনপ্রাণ দিয়ে সেবা করছেন, তারপরও তার মনে হয় যে, যিহোবা তার উপর সন্তুষ্ট নন। সত্যিই কি তা-ই? সেই বোনের বয়স যখন ৪০ বছর ছিল, তখনও তিনি মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করতেন। আর এখন ৮০ বছর বয়সেও তিনি মনপ্রাণ দিয়ে তাঁর সেবা করছেন। তাই দেখা যায় যে, তিনি মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করা কখনো বন্ধই করে দেননি আর এই বিষয়টাই যিহোবার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যখনই আমাদের সেই বোনের মতো মনে হবে, যিহোবা আমাদের উপর সন্তুষ্ট নন কিংবা আমাদের সেবায় খুশি নন, তখনই আমরা নিজেদের মনে করাতে পারি, যিহোবা জানেন যে, আমরা কতটুকু করতে পারি। আর আমরা যদি মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করি, তা হলে তিনি অনেক আনন্দিত হবেন।—তুলনা করুন, মথি ২৫:২০-২৩.

৬. বোন মারিয়ার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

আমাদের পরিস্থিতি ঠিক না-ও থাকতে পারে, তারপরও আমরা আনন্দিত থাকতে পারি। আমরা যা করতে পারি না, সেই বিষয়ের উপর মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে, ভালো হবে আমরা যেন এই বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই যে, আমরা কী করতে পারি। মারিয়া নামে একজন বোন এমনটাই করেন। বোনের এমন একটা রোগ রয়েছে, যেটার কারণে তিনি বেশি করে প্রচার করতে পারেন না। প্রথম প্রথম তার মনে হত, তিনি কোনো কাজের নন আর এইরকম চিন্তা করে তিনি হতাশ হয়ে পড়তেন। তারপর, তিনি তার মণ্ডলীর একজন বোনকে লক্ষ করেন, যিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। তিনি সেই বোনকে সাহায্য করার কথা চিন্তা করেন। মারিয়া বলেন: “আমি সেই বোনকে সঙ্গে নিয়ে টেলিফোনে এবং চিঠি লেখার মাধ্যমে সাক্ষ্য দিতে শুরু করি। যখনই আমরা একসঙ্গে প্রচার করতাম, তখনই আমি খুব আনন্দিত হতাম। সেই বোনকে সাহায্য করতে আমার খুব ভালো লাগত।” মারিয়ার মতো আসুন আমরাও এই বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই যে, আমরা কী করতে পারি। তখনই আমরা আনন্দিত থাকতে পারব। কিন্তু, আমাদের যদি কোনো দক্ষতা থাকে এবং আমরা আরও বেশি করে যিহোবার সেবা করতে পারি, তা হলে আরও আনন্দ লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

যখন আপনার কোনো দক্ষতা থাকে

৭. প্রেরিত পিতর ভাই-বোনদের কী করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন?

প্রেরিত পিতর তার প্রথম চিঠিতে ভাই-বোনদের অনুরোধ করেছিলেন, তাদের যে-দক্ষতা কিংবা ক্ষমতা রয়েছে, সেটা ব্যবহার করে তারা যেন অন্যদের উৎসাহিত করে। তিনি লিখেছিলেন: “তোমরা প্রত্যেকে যে যেমন দান লাভ করেছ, উত্তম গৃহাধ্যক্ষ হিসেবে তা একে অন্যের সেবা করার জন্য ব্যবহার করো। কারণ তোমরা তো বিভিন্নভাবে প্রকাশিত ঈশ্বরের মহাদয়া লাভ করেছ।” (১ পিতর ৪:১০) এটা থেকে আমরা শিখতে পারি, আমাদের এইরকম চিন্তা করে পিছিয়ে যাওয়া উচিত নয় যে, আমরা যদি নিজেদের দক্ষতা ব্যবহার করি, তা হলে অন্যেরা তা দেখে হিংসা করবে কিংবা হতাশ হয়ে পড়বে। আমরা যদি পিছিয়ে যাই, তা হলে এটা দেখাবে, আমরা মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করছি না।

৮. প্রথম করিন্থীয় ৪:৬, ৭ পদ অনুযায়ী নিজেদের দক্ষতার বিষয়ে কেন আমাদের গর্ব করা উচিত নয়?

এটা ঠিক যে, আমাদের দক্ষতাকে আমাদের ভালোভাবে ব্যবহার করতে হবে, কিন্তু তা নিয়ে আমরা যেন কখনো গর্ব না করি। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৪:৬, ৭.) উদাহরণ স্বরূপ, হতে পারে আপনি সহজেই বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করতে পারেন। এটা হল আপনার দক্ষতা আর অবশ্যই আপনাকে তা ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু, আপনাকে তা নিয়ে গর্ব করা উচিত নয়। ধরুন, আপনি সবেমাত্র প্রচার কাজ শেষ করেছেন আর একটা বাইবেল অধ্যয়নও শুরু করতে পেরেছেন। আপনি অনেক আনন্দিত আর আপনি এই বিষয়টা অন্য ভাই-বোনদের জানাতে চান। কিন্তু, তাদের সঙ্গে যখন আপনার দেখা হয়, তখন আপনি দেখেন, একজন বোন তার নিজের অভিজ্ঞতা বলছেন যে, কীভাবে তিনি প্রচারে একজন ব্যক্তিকে একটা পত্রিকা দিয়েছেন। এখন আপনি কী করবেন? আপনি জানেন, আপনার অভিজ্ঞতা থেকে ভাই-বোনেরা উৎসাহিত হবে। কিন্তু একটু চিন্তা করুন, সেই বোনের কেমন লাগবে। আপনার অভিজ্ঞতা শুনে সেই বোন তার আনন্দ হারিয়ে ফেলতে পারেন। তার মনে হতে পারে, তিনি যা করেছেন, সেটা আপনার তুলনায় কিছুই নয়। এভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে আপনি হয়তো অন্য কোনো সময় আপনার অভিজ্ঞতা বলার সিদ্ধান্ত নেবেন। আর এটা দেখাবে যে, সেই বোনের প্রতি আপনি বিবেচনা দেখাচ্ছেন। তবে, আপনি আপনার দক্ষতা ব্যবহার করা বন্ধ করবেন না!

৯. আমাদের দক্ষতাকে কী করার জন্য ব্যবহার করা উচিত?

আমাদের মনে রাখা উচিত, আমাদের যে-দক্ষতা ও ক্ষমতা রয়েছে, তা আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পেয়েছি। আমাদের সেগুলো নিজেদের বড়ো করে দেখানোর জন্য নয় বরং মণ্ডলীর সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করা উচিত। (ফিলি. ২:৩) আমরা যখন এই বিষয়ে খেয়াল রাখব এবং নিজেদের দক্ষতা ও ক্ষমতা ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করব, তখন আমরা যিহোবার প্রশংসা করতে পারব। এর ফলে, আমরা আনন্দ লাভ করব।

১০. কেন আমাদের অন্যদের নীচু চোখে দেখা উচিত নয়?

১০ যদি আমাদের কোনো দক্ষতা কিংবা ক্ষমতা থাকে, তা হলে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত যেন আমরা অন্যদের নীচু চোখে না দেখি। যেমন হতে পারে, একজন ভাই ভালোভাবে বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব দক্ষ। কিন্তু, তিনি এমন একজন ভাইকে নীচু চোখে দেখতে পারেন, যিনি তার মতো ভালোভাবে বক্তৃতা দিতে পারেন না। তবে, তার এমনটা করা ভুল হবে কারণ সেই ভাই হয়তো অন্যান্য ক্ষেত্রে তার চেয়ে অনেক ভালো, যেমন আতিথেয়তা দেখানোর ক্ষেত্রে, নিজের সন্তানদের ভালোভাবে শেখানোর ক্ষেত্রে কিংবা উদ্যোগ সহকারে প্রচার করার ক্ষেত্রে। তাই, অন্যদের নীচু চোখে দেখার পরিবর্তে আমাদের দেখা উচিত যে, তাদের কোন কোন দক্ষতা রয়েছে এবং কীভাবে তারা যিহোবা এবং অন্যদের সেবা করার জন্য তা ব্যবহার করছে।

অন্যদের কাছ থেকে শিখুন

১১. কেন আমাদের যিশুর মতো হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত?

১১ যদিও আমাদের অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করা উচিত নয়, তবে আমরা ভালো উদাহরণ থেকে অবশ্যই শিখতে পারি। যেমন, যিশু খ্রিস্ট। যদিও তিনি সিদ্ধ ছিলেন, তারপরও তিনি যে-সমস্ত গুণ দেখিয়েছিলেন আর যে-কাজগুলো করেছিলেন, তা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। (১ পিতর ২:২১) আমরা যদি যিশুর মতো হওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি, তা হলে আমরা ভালোভাবে যিহোবার সেবা করতে পারব আর প্রচার করার ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতাকে বাড়াতে পারব।

১২-১৩. রাজা দায়ূদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১২ বাইবেলে এমন অনেক ব্যক্তির বিষয়েও উল্লেখ করা রয়েছে, যারা অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ভালো উদাহরণ রেখেছিল। (ইব্রীয় ৬:১২) তাদের মধ্যে একজন হলেন রাজা দায়ূদ। তিনি কিছু গুরুতর পাপ করেছিলেন, তা সত্ত্বেও যিহোবা তার সম্বন্ধে বলেছিলেন: “সে আমার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করে।” (প্রেরিত ১৩:২২) কেন যিহোবা এমনটা বলেছিলেন? কারণ ভুল করার পর দায়ূদকে যখন সংশোধন করা হয়েছিল আর কড়াভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি কোনো অজুহাত দেখাননি। এর পরিবর্তে, তিনি নিজের ভুল স্বীকার করেছিলেন এবং মন থেকে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এই কারণে যিহোবা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।—গীত. ৫১:৩, ৪, ১০-১২.

১৩ দায়ূদের উদাহরণের উপর মনোযোগ দেওয়ার সময় আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘যখন আমাকে পরামর্শ দেওয়া হয়, তখন আমি কী করি? আমি কি কোনো অজুহাত দেখাতে শুরু করি? আমি কি অন্যের ঘাড়ে নিজের দোষ চাপিয়ে দিই? না কি আমি নিজের ভুল স্বীকার করি আর চেষ্টা করি, যেন সেই ভুল আবারও না করি?’ আপনি যখন বাইবেল থেকে অন্যান্য বিশ্বস্ত ব্যক্তি সম্বন্ধে পড়বেন, তখন আপনি নিজেকে এই ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন। হতে পারে, তারা আপনার মতো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। এইরকম ক্ষেত্রে আপনি চিন্তা করতে পারেন, তারা কোন গুণ দেখিয়েছিল আর নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘আমি তাদের মতো হওয়ার জন্য কী করতে পারি?’

১৪. আমরা আমাদের ভাই-বোনদের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?

১৪ আমরা আমাদের ভাই-বোনদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারি, তা তারা যুবক হোক কিংবা বয়স্ক। আপনার মণ্ডলীতে কি এমন কেউ রয়েছে, যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও যিহোবার সেবা করে যাচ্ছে? হতে পারে, স্কুলে পড়ে এমন কেউ তার সঙ্গীসাথিদের কাছ থেকে আসা চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করছে কিংবা কেউ তার পরিবারের কাছ থেকে আসা বিরোধিতা সহ্য করছে অথবা কোনো ব্যক্তি অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করছে। আপনি যদি এইরকম ভাই-বোনদের সম্বন্ধে চিন্তা করেন, তা হলে আপনি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন। আপনি তাদের মতো গুণ দেখানোর ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা করতে পারেন কিংবা তাদের কাছ থেকে নিজের সমস্যার সমাধান করা শিখতে পারেন। আমরা খুবই আনন্দিত যে, এই ভাই-বোনেরা আমাদের জন্য এক ভালো উদাহরণ রেখেছে।—ইব্রীয় ১৩:৭; যাকোব ১:২, ৩.

আনন্দ সহকারে যিহোবার সেবা করুন

১৫. আজ আমরা প্রেরিত পৌলের দেওয়া কোন পরামর্শ মেনে চলতে পারি?

১৫ আমরা যদি প্রত্যেকে নিজেদের পরিস্থিতি অনুযায়ী মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করি, তা হলে মণ্ডলীতে একতা ও শান্তি বজায় থাকবে। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উদাহরণ লক্ষ করুন। তাদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন দান, ক্ষমতা ও দায়িত্ব ছিল। (১ করি. ১২:৪, ৭-১১) কিন্তু, এর অর্থ এই ছিল না যে, তারা একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে শুরু করে দেবে। পৌল তাদের অনুরোধ করেছিলেন, তারা যেন নিজেদের ক্ষমতাকে এমনভাবে ব্যবহার করে, যাতে খ্রিস্টের দেহ বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ মণ্ডলী আরও শক্তিশালী হয়। পৌল লিখেছিলেন: “প্রতিটা অঙ্গ যখন সঠিকভাবে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে, তখন তা দেহকে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে, যেন সম্পূর্ণ দেহ প্রেমে দৃঢ় হয়।” (ইফি. ৪:১-৩, ১১, ১২, ১৬) অনেক খ্রিস্টান এই পরামর্শ মেনে নিয়ে ছিল আর এর ফলে মণ্ডলীতে শান্তি ও একতা বজায় ছিল। এই বিষয়টা আজ মণ্ডলীগুলোতেও দেখা যায়।

১৬. এই প্রবন্ধ থেকে আমরা কী শিখেছি? (ইব্রীয় ৬:১০)

১৬ অন্যদের সঙ্গে নিজের তুলনা করবেন না। এর পরিবর্তে, যিশুর কাছ থেকে শিখুন এবং তিনি যে-গুণগুলো দেখিয়েছিলেন, সেগুলো গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন। বাইবেলে উল্লেখিত বিশ্বস্ত ব্যক্তি এবং ভাই-বোনদের কাছ থেকে শিখুন। আপনি যা করছেন, যদি তা মনপ্রাণ দিয়ে করে চলেন, তা হলে যিহোবা কখনো আপনার কাজকে ভুলে যাবেন না। (পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১০.) তাই, মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করে চলুন। এতে শুধু আপনিই নন, কিন্তু সেইসঙ্গে যিহোবাও অনেক আনন্দিত হবেন।

গান ৪৫ এগিয়ে চলো!

^ অনু. 5 অন্যেরা যেভাবে যিহোবার সেবা করে থাকে, তা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। কিন্তু, আমাদের কখনোই তাদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করা উচিত নয়। এমনটা করলে আমরা হয় গর্বিত হয়ে যেতে পারি নতুবা হতাশ হয়ে পড়তে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা শিখব যে, কীভাবে আমরা অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করা এড়িয়ে চলতে পারি আর আনন্দ সহকারে যিহোবার সেবা করতে পারি।

^ অনু. 49 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাই যুবক বয়সে বেথেলে সেবা করতেন। এরপর, ভাইয়ের বিয়ে হয়ে যায় আর তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করেন। কিছু বছর পর যখন তার সন্তান হয়, তখন তিনি তাদের প্রচার করতে শেখান। এখন তিনি বয়স্ক হয়ে গিয়েছেন এবং চিঠি লিখে লোকদের কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। তিনি সারাজীবন ধরে মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করে যাচ্ছেন।