সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৯

নতুন জগৎ একেবারেই কাছে—যিহোবার প্রতিজ্ঞার উপর কীভাবে বিশ্বাস বাড়াতে পারি?

নতুন জগৎ একেবারেই কাছে—যিহোবার প্রতিজ্ঞার উপর কীভাবে বিশ্বাস বাড়াতে পারি?

“[যিহোবা] কহিয়া কি কার্য্য করিবেন না?”—গণনা. ২৩:১৯.

গান ১৪২ আমাদের প্রত্যাশা দৃঢ়ভাবে ধরে রাখা

সারাংশ a

১-২. নতুন জগতের জন্য অপেক্ষা করার সময়ে আমাদের ক্রমাগত কী করতে হবে?

 যিহোবা এই দুষ্ট জগৎকে ধ্বংস করে নতুন জগৎ নিয়ে আসার বিষয়ে যে-প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেটা আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান। (২ পিতর ৩:১৩) আমরা এটা জানি না, নতুন জগৎ ঠিক কখন আসবে। কিন্তু প্রমাণ দেখায়, সেই দিন খুবই কাছে।—মথি ২৪:৩২-৩৪, ৩৬; প্রেরিত ১:৭.

সেই দিন না আসা পর্যন্ত আমাদের সবাইকে এই প্রতিজ্ঞার উপর ক্রমাগত বিশ্বাস বাড়াতে হবে, তা আমরা সত্যে যত দীর্ঘসময় ধরেই থাকি না কেন। এর কারণ হল, আমরা যদি এমনটা না করি, তা হলে এই প্রতিজ্ঞার উপর আমাদের দৃঢ়বিশ্বাসও দুর্বল হয়ে যেতে পারে। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, বিশ্বাসের অভাব হল ‘এমন পাপ, যা সহজেই আমাদের জন্য বাধা তৈরি করে।’ (ইব্রীয় ১২:১) আমরা সবাই চাই, আমাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে না পড়ুক। তাই, এটা খুবই জরুরি যেন আমরা সেই প্রমাণগুলোর উপর মনোযোগ দিয়ে চলি, যেগুলো থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, নতুন জগৎ খুব শীঘ্রই বাস্তবে পরিণত হবে।—ইব্রীয় ১১:১.

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে উপায় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলোর মাধ্যমে নতুন জগতের বিষয়ে করা প্রতিজ্ঞার উপর আমরা আমাদের বিশ্বাস বাড়াতে পারি। (১) মুক্তির মূল্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে, (২) যিহোবার যে কত শক্তি রয়েছে, তা নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে এবং (৩) উপাসনার সঙ্গে যুক্ত কাজে ব্যস্ত থাকার মাধ্যমে। আমরা এও আলোচনা করব, যিহোবা হবক্‌কূককে যা বলেছিলেন, কীভাবে তা থেকে আজ আমাদের বিশ্বাস বাড়তে পারে। কিন্তু আসুন, সবচেয়ে প্রথমে আমরা আলোচনা করি, এমন কোন কোন পরিস্থিতি আসতে পারে, যেখানে নতুন জগতের বিষয়ে করা প্রতিজ্ঞার উপর দৃঢ়বিশ্বাস থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনিও হয়তো এমন কিছু পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতি, যেখানে দৃঢ়বিশ্বাস থাকা গুরুত্বপূর্ণ

৪. কোন ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দৃঢ়বিশ্বাস থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ?

প্রতিদিন আমাদের এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যেগুলোর জন্য দৃঢ়বিশ্বাস থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন বন্ধুত্ব, বিনোদন, পড়াশোনা, বিয়ে, চাকরি এবং সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে। তাই, আমাদের চিন্তা করা উচিত, ‘আমার সিদ্ধান্ত থেকে কী বোঝা যায়? এটা কি দেখায়, আমি বিশ্বাস করি, এই জগৎ শুধু কিছুসময়ের জন্য রয়েছে আর ঈশ্বর খুব শীঘ্রই নতুন জগৎ নিয়ে আসবেন? না কি আমার সিদ্ধান্ত থেকে এটা বোঝা যায়, আমি শুধু জগতের লোকদের মতো চিন্তা করি, যারা শুধু বর্তমান নিয়েই চিন্তা করে?’ (মথি ৬:১৯, ২০; লূক ১২:১৬-২১) আমরা যদি এই বিষয়ের উপর নিজেদের বিশ্বাস বাড়াই যে, নতুন জগৎ খুব শীঘ্রই আসবে, তা হলে আমরা ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারব।

৫-৬. সমস্যার সময়ে দৃঢ়বিশ্বাস থাকা কেন গুরুত্বপূর্ণ? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

কখনো কখনো আমাদের এমন সমস্যারও মুখোমুখি হতে হয়, যেখানে দৃঢ়বিশ্বাস থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আমাদের উপর হয়তো তাড়না করা হয়, আমাদের হয়তো এমন কোনো রোগ ধরা পড়ে, যেটা তাড়াতাড়ি ঠিক হয় না কিংবা আমাদের সামনে হয়তো এমন সমস্যাগুলো আসে, যেগুলোর কারণ আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। প্রথম প্রথম আমরা হয়তো দৃঢ়ভাবে সেই সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করি। কিন্তু, কোনো সমস্যা যদি দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকে, যেমনটা প্রায়ই হয়, তা হলে দৃঢ়বিশ্বাস থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। দৃঢ়বিশ্বাস থাকলে আমরা সেইসময় ধৈর্য ধরতে পারব আর আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করতে পারব।—রোমীয় ১২:১২; ১ পিতর ১:৬, ৭.

আমরা যখন কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাই, তখন আমাদের হয়তো মনে হয়, ‘কী জানি, নতুন জগৎ কখন আসবে?’ এর মানে কি এই যে, আমাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়েছে? না, ঠিক তা নয়। এই বিষয়ে একটু চিন্তা করুন। শীত কালে যখন কনকনে ঠাণ্ডা পড়ে, তখন আমাদের হয়তো মনে হয়, ‘কী জানি, গ্রীষ্ম কাল কখন আসবে?’ কিন্তু আমরা জানি, গ্রীষ্ম কাল তো আসবেই। একইভাবে, আমরা যখন খুব হতাশ হয়ে পড়ি, তখন আমাদের হয়তো মনে হয়, ‘কী জানি, নতুন জগৎ কখন আসবে?’ কিন্তু আমাদের বিশ্বাস যদি দৃঢ় হয়, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকব, নতুন জগৎ তো আসবেই কারণ এই প্রতিজ্ঞা যিহোবা করেছেন। (গীত. ৯৪:৩, ১৪, ১৫; ইব্রীয় ৬:১৭-১৯) আর আমরা যদি এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকি, তা হলে আমরা সবসময় যিহোবার উপাসনাকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থান দেব।

৭. আমাদের কোন বিষয়ে সন্দেহ করা উচিত নয়?

প্রচার করে চলার জন্যও দৃঢ়বিশ্বাস থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেন? কারণ আমরা যখন লোকদের কাছে এই “সুসমাচার” জানাই যে, ঈশ্বর খুব তাড়াতাড়ি নতুন জগৎ নিয়ে আসবেন, তখন অনেক লোক মনে করে, ‘এটা তো শুধু মুখের কথা, এমনটা কখনোই হবে না।’ (মথি ২৪:১৪; যিহি. ৩৩:৩২) কিন্তু আমরা চাই না, আমরাও সেই লোকদের মতো যিহোবার প্রতিজ্ঞার উপর সন্দেহ করতে শুরু করি। তাই, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা আমাদের বিশ্বাস বাড়িয়ে চলি। আমরা কীভাবে তা করতে পারি? আসুন, তিনটে উপায়ের উপর মনোযোগ দিই।

মুক্তির মূল্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন

৮-৯. মুক্তির মূল্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে কীভাবে আমাদের বিশ্বাস বাড়তে পারে?

নিজেদের বিশ্বাস দৃঢ় করার একটা উপায় হল, যিশুর মুক্তির মূল্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা। মুক্তির মূল্য হল এই বিষয়ের গ্যারান্টি যে, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো নিশ্চয়ই পূরণ হবে। তাই চিন্তা করুন, যিহোবা কেন মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা করেছেন আর এরজন্য তাঁকে কত কিছু করতে হয়েছে। এমনটা করার মাধ্যমে আমাদের এই বিশ্বাস আরও বেড়ে যাবে যে, ঈশ্বর নতুন জগতে অনন্তজীবন দেওয়ার যে-প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেটা নিশ্চয়ই পূরণ হবে। কেন আমরা তা বলতে পারি?

চিন্তা করুন, যিহোবা মুক্তির মূল্য দেওয়ার জন্য কত কিছু করেছেন। তিনি তাঁর একজাত পুত্রকে খুব ভালোবাসতেন এবং তিনি তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তারপরও, যিহোবা তাঁকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে সিদ্ধ মানুষ হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তাঁকে অনেক পরীক্ষা সহ্য করতে হয়েছিল আর পরে তাঁকে অনেক কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। সত্যিই, যিহোবা আমাদের জন্য কত বড়ো এক মূল্য দিয়েছেন! তাই কী মনে হয়, আমাদের ঈশ্বর কি শুধু ক্ষণিকের সুখের জন্য এত বড়ো বলিদান দিয়েছেন? (যোহন ৩:১৬; ১ পিতর ১:১৮, ১৯) ঈশ্বর যদি আমাদের জন্য এত বড়ো মূল্য দিতে পারেন, তা হলে তিনি নিশ্চয়ই তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন আর আমাদের নতুন জগতে অনন্তজীবন দেবেন।

চিন্তা করুন, যিহোবার কত শক্তি রয়েছে

১০. ইফিষীয় ৩:২০ পদ অনুযায়ী যিহোবার কত শক্তি রয়েছে?

১০ নিজেদের বিশ্বাস বাড়ানোর দ্বিতীয় উপায় হল এই বিষয়ে চিন্তা করা যে, যিহোবার কত শক্তি রয়েছে। তাঁর এতটা শক্তি রয়েছে যে, তিনি তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে পারেন। কিন্তু, যিহোবা নতুন জগতে অনন্তজীবন দেওয়ার যে-প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেই বিষয়ে আমরা কী বলতে পারি? অনেক লোক মনে করে, এটা তো অসম্ভব। কিন্তু মনে রাখবেন, যিহোবা প্রায়ই এমন প্রতিজ্ঞা করেন, যেটা মানুষ কখনোই পূরণ করতে পারে না। যিহোবা হলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। (ইয়োব ৪২:২; মার্ক ১০:২৭) তাই, তিনি যখন বড়ো বড়ো প্রতিজ্ঞা করেন, তখন আমরা অবাক হই না।—পড়ুন, ইফিষীয় ৩:২০.

১১. যিহোবার করা এমন একটা প্রতিজ্ঞার বিষয়ে বলুন, যেটা পূরণ হওয়া অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। (“ অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)

১১ যিহোবার এমন কিছু প্রতিজ্ঞার উপর মনোযোগ দিন, যেগুলো পূরণ হওয়া একেবারে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। যেমন, তিনি অব্রাহাম ও সারাকে বলেছিলেন, তারা বৃদ্ধ বয়সে এক সন্তানের জন্ম দেবেন। (আদি. ১৭:১৫-১৭) এ ছাড়া, যিহোবা অব্রাহামকে বলেছিলেন, তিনি তার বংশধরদের কনান দেশ দেবেন। কিন্তু, অনেক বছর ধরে অব্রাহামের বংশধরেরা অর্থাৎ ইজরায়েলীয়েরা মিশর দেশে দাস হয়ে ছিল। তাই, হয়তো লোকদের মনে হচ্ছিল, যিহোবার করা এই প্রতিজ্ঞা কখনো পূরণ হবে না। কিন্তু, যিহোবা তাঁর এই প্রতিজ্ঞা পূরণ করেছিলেন। এই ঘটনার হাজার হাজার বছর পর যিহোবা ইলীশাবেতের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি এক সন্তানের জন্ম দেবেন, যদিও সেইসময় তিনি বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। যিহোবা মরিয়মের কাছেও একটা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। যদিও তিনি কুমারী ছিলেন, কিন্তু যিহোবা তাকে বলেছিলেন, তিনি তাঁর পুত্রের জন্ম দেবেন, যেটার বিষয়ে তিনি হাজার হাজার বছর আগে এদন উদ্যানে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। যিহোবা তাঁর এই প্রতিজ্ঞাও পূরণ করেছিলেন!—আদি. ৩:১৫.

১২. যিহোবার যে কত শক্তি রয়েছে, তা আমরা যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪ এবং যিশাইয় ৫৫:১০, ১১ পদ থেকে কীভাবে বুঝতে পারি?

১২ আমরা যখন এই বিষয়ে চিন্তা করি, যিহোবা কোন কোন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এবং কীভাবে তা পূরণ করেছিলেন, তখন আমরা বুঝতে পারি, তাঁর কত শক্তি রয়েছে। এর ফলে যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার উপর আমাদের বিশ্বাস আরও বেড়ে যায় যে, তিনি নতুন জগৎ অবশ্যই নিয়ে আসবেন। (পড়ুন, যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪; যিশাইয় ৫৫:১০, ১১.) তখন আমরা অন্যদেরও দৃঢ়নিশ্চয়তার সঙ্গে বলতে পারি, যিহোবা নতুন জগৎ নিয়ে আসার যে-প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা কোনো স্বপ্ন বা কাল্পনিক বিষয় নয়। যিহোবা নিজেও নতুন আকাশমণ্ডল এবং নতুন পৃথিবী নিয়ে আসার বিষয়ে বলেছেন যে, “এই কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য ও সত্য।”—প্রকা. ২১:১, ৫.

উপাসনার সঙ্গে যুক্ত কাজে ব্যস্ত থাকুন

সভাগুলো

কীভাবে এই সমস্ত কিছু থেকে আপনার বিশ্বাস বাড়তে পারে? (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. সভাগুলোতে যাওয়ার মাধ্যমে কীভাবে আমাদের বিশ্বাস বেড়ে যায়? ব্যাখ্যা করুন।

১৩ নিজেদের বিশ্বাস বাড়ানোর তৃতীয় উপায় হল, উপাসনার সঙ্গে যুক্ত কাজে ব্যস্ত থাকা। লক্ষ করুন, সভাগুলোতে যাওয়ার মাধ্যমে কীভাবে আমাদের বিশ্বাস বাড়ে। বোন অ্যানার উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যিনি অনেক বছর ধরে আলাদা আলাদা উপায়ে পূর্ণসময়ের সেবা করেছেন। তিনি বলেন, “সভাগুলোতে যাওয়ার মাধ্যমে আমি আমার দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রাখতে পারি। বক্তা হয়তো তার বিষয়বস্তু ভালোভাবে তুলে ধরতে পারেন না অথবা তিনি এমন কোনো বিষয় বলেন না, যেটা আমার কাছে নতুন। তারপরও, আমি সভাগুলোতে কিছু-না-কিছু বিষয় জানতে পারি, যেগুলোর মাধ্যমে আমি বাইবেলের সত্যগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি। এর ফলে আমার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়ে যায়।” b এ ছাড়া, সভাগুলোতে অন্য ভাই-বোনদের উত্তর শুনেও আমাদের বিশ্বাস বেড়ে যায়।—রোমীয় ১:১১, ১২; ১০:১৭.

প্রচার কাজ

কীভাবে এই সমস্ত কিছু থেকে আপনার বিশ্বাস বাড়তে পারে? (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. প্রচার কাজ করার মাধ্যমে কীভাবে আমাদের বিশ্বাস বেড়ে যায়?

১৪ প্রচার কাজ করার মাধ্যমেও আমাদের বিশ্বাস বেড়ে যায়। (ইব্রীয় ১০:২৩) বোন বারবারা, যিনি ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যিহোবার সেবা করছেন, বলেন: “আমি দেখেছি, প্রচার করার সময়ে আমার বিশ্বাস বেড়ে যায়। যতবেশি আমি অন্যদের কাছে যিহোবার অপূর্ব প্রতিজ্ঞার বিষয়ে বলি, ততবেশি আমার বিশ্বাস দৃঢ় হয়।”

ব্যক্তিগত অধ্যয়ন

কীভাবে এই সমস্ত কিছু থেকে আপনার বিশ্বাস বাড়তে পারে? (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার মাধ্যমে কীভাবে আমাদের বিশ্বাস বেড়ে যায়? (ছবিগুলোও দেখুন।)

১৫ আরেকটা যে-বিষয়ের মাধ্যমে আমাদের বিশ্বাস বেড়ে যায়, তা হল ব্যক্তিগত অধ্যয়ন। বোন সুজান ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার একটা তালিকা তৈরি করেছেন। এটা থেকে বোন অনেক সাহায্য পান। তিনি বলেন: “প্রতি রবিবার আমি তার পরের সপ্তাহের প্রহরীদুর্গের জন্য প্রস্তুতি নিই। সোমবার ও মঙ্গলবার আমি সপ্তাহের মাঝের সভার জন্য প্রস্তুতি নিই। আর বাকি দিনগুলোতে আমি আলাদা আলাদা বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করি।” এভাবে একটা তালিকা তৈরি করা এবং সেই অনুযায়ী চলার মাধ্যমে বোন সুজান তার বিশ্বাস বাড়াতে পেরেছেন। বোন আইরিন অনেক বছর ধরে বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ে সেবা করছেন। ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে তিনি তার বিশ্বাস বাড়াতে পেরেছেন। বোন বলেন, “আমি যখন পড়ি, যিহোবা যে-ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো করেছিলেন, সেগুলোর ছোটো ছোটো বিষয়ও তিনি কীভাবে পূরণ করেছেন, তখন আমি অবাক হয়ে যাই।” c

“তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে”

১৬. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা হবক্‌কূককে যা বলেছিলেন, তা আজ আমাদের জন্যও অর্থ রাখে? (ইব্রীয় ১০:৩৬, ৩৭)

১৬ যিহোবার কিছু বিশ্বস্ত সেবক অনেক বছর ধরে এই বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছে। অনেক লোক হয়তো মনে করে, শেষ আসতে দেরি হচ্ছে। যিহোবা জানেন, মানুষ হিসেবে আমাদের এমনটা মনে হতে পারে। তাই, তিনি ভাববাদী হবক্‌কূককে আশ্বাস দিয়েছিলেন, “এই দর্শন এখনও নিরূপিত কালের নিমিত্ত, ও তাহা পরিনামের আকাঙ্ক্ষা করিতেছে, আর মিথ্যা হইবে না; তাহার বিলম্ব হইলেও তাহার অপেক্ষা কর, কেননা তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না।” (হবক্‌. ২:৩) যিহোবা হবক্‌কূককে যে-আশ্বাস দিয়েছিলেন, তা থেকে শুধু কি হবক্‌কূকই উপকার পেয়েছিলেন? না কি যিহোবার সেই কথাগুলো আজ আমাদের জন্যও কোনো অর্থ রাখে? ঈশ্বরের প্রেরণায় প্রেরিত পৌল সেই কথাগুলো খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন, যারা নতুন জগতের জন্য অপেক্ষা করছিল আর আজ আমরাও এই কথাগুলো মনে রাখতে পারি। (পড়ুন, ইব্রীয় ১০:৩৬, ৩৭.) তাই, আমাদের যদি কখনো এমনটা মনেও হয়, নতুন জগৎ নিয়ে আসার বিষয়ে যিহোবা যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেটা পূরণ হতে দেরি হচ্ছে, তারপরও আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, “তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না।”

১৭. যিহোবা হবক্‌কূককে যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেটা একজন বোন কীভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন?

১৭ যিহোবার অনেক উপাসক তাঁর দেওয়া পরামর্শ কাজে লাগিয়েছে আর “অপেক্ষা” করছে। কিছু লোক অনেক বছর ধরে তা করে আসছে। বোন লুইসের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি ১৯৩৯ সাল থেকে যিহোবাকে সেবা করে যাচ্ছেন। বোন বলেন, “সেই সময় আমার মনে হয়েছিল, আমার স্কুলের পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরই আরমাগিদোন চলে আসবে। কিন্তু, এমনটা হয়নি। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি বাইবেল থেকে এমন অনেক লোকের বিষয়ে পড়ি, যারা যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পূরণ হতে দেখার জন্য অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করেছিল। যেমন নোহ, অব্রাহাম, যোষেফ এবং এইরকম অন্যান্য লোকের সম্বন্ধে। যিহোবার প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পূরণ হবে, এই বিষয়ের উপর সবসময় আস্থা রাখার মাধ্যমে আমি এবং অন্যেরা নিশ্চিত হয়েছি, নতুন জগৎ খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে।” যিহোবার অনেক বিশ্বস্ত উপাসক, যারা দীর্ঘসময় ধরে তাঁর সেবা করছে, তারা বোন লুইসের কথাগুলোর সঙ্গে একমত হবে!

১৮. সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা কীভাবে নতুন জগতের বিষয়ে করা প্রতিজ্ঞার উপর নিজেদের বিশ্বাস বাড়াতে পারি?

১৮ এটা ঠিক যে, এখনও পর্যন্ত নতুন জগৎ আসেনি। কিন্তু, আপনার চারপাশের সৃষ্টির উপর মনোযোগ দিন। যেমন তারা, গাছপালা, জীবজন্তু এবং মানুষ। একসময় এগুলো কিছুই ছিল না, তবে আজ কেউই এগুলোর অস্তিত্বের বিষয়ে সন্দেহ করতে পারে না। আজ এই সমস্ত এইজন্য রয়েছে কারণ যিহোবা ঈশ্বর এগুলো সৃষ্টি করেছেন। (আদি. ১:১, ২৬, ২৭) একইভাবে, যিহোবা স্থির করেছেন যে, তিনি নতুন জগৎ নিয়ে আসবেন আর তিনি তা অবশ্যই নিয়ে আসবেন। সেইসময় সবার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং আমরা সবাই চিরকাল বেঁচে থাকতে পারব। আমরা নিশ্চিত, যিহোবা তাঁর নির্ধারিত সময়ে নতুন জগৎ নিয়ে আসবেন। আর সেটা আজ আমাদের চারপাশে যা-কিছু রয়েছে, সেগুলোর মতোই বাস্তব হবে।—যিশা. ৬৫:১৭; প্রকা. ২১:৩, ৪.

১৯. আপনি আপনার বিশ্বাস বাড়ানোর জন্য কী করতে পারেন?

১৯ যতক্ষণ পর্যন্ত না নতুন জগৎ আসছে, আসুন আমরা প্রতিটা সুযোগের সদ্‌ব্যবহার করি এবং নিজেদের বিশ্বাস বাড়িয়ে চলি। সবসময় এই বিষয়ের জন্য কৃতজ্ঞ হোন যে, যিহোবা মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা করেছেন। চিন্তা করুন, তাঁর কত শক্তি রয়েছে আর উপাসনার সঙ্গে যুক্ত কাজে ব্যস্ত থাকুন। এমনটা করার মাধ্যমে আপনিও সেই লোকদের মতো হবেন, “যারা বিশ্বাস ও ধৈর্যের মাধ্যমে প্রতিজ্ঞাত বিষয়গুলো লাভ করে।”—ইব্রীয় ৬:১১, ১২; রোমীয় ৫:৫.

গান ১৩৯ নিজেকে পরমদেশে কল্পনা করুন

a ঈশ্বর নতুন জগৎ নিয়ে আসার যে-প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেটা অনেক লোকই বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে, এটা কেবল এক স্বপ্ন বা কাল্পনিক বিষয়, এটা বাস্তবে কখনোই হবে না। কিন্তু, আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে, যিহোবা যে-সমস্ত প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেগুলোর সবই পরিপূর্ণ হবে। তারপরও, আমাদের এই বিশ্বাস ক্রমাগত বাড়াতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কীভাবে আমরা তা করতে পারি।

b কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

c বাইবেলে দেওয়া ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোর বিষয়ে আরও প্রবন্ধ পড়ার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের জন্য গবেষণা নির্দেশিকা-এ “বাইবেল” শিরোনামের বিষয়ের অধীনে দেওয়া উপশিরোনাম “ভবিষ্যদ্‌বাণী” দেখুন। যেমন, ২০০৮ সালের জানুয়ারি-মার্চ মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “যিহোবা যা ভবিষ্যদ্বাণী করেন তা পরিপূর্ণ হয়” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।