সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৫

যিশুর অলৌকিক কাজ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

যিশুর অলৌকিক কাজ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

‘তিনি সমগ্র অঞ্চলে গিয়ে ভালো ভালো কাজ করতেন এবং যারা কষ্ট ভোগ করছিল, তাদের সুস্থ করতেন।’—প্রেরিত ১০:৩৮.

গান ১৩ খ্রিস্ট, আমাদের আদর্শ

সারাংশ a

১. যিশুর প্রথম অলৌকিক কাজ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করুন।

 উনত্রিশ খ্রিস্টাব্দের ঘটনা। সময়টা হল শরৎ কাল। যিশু সবেমাত্র তাঁর সেবা শুরু করেছেন। তাঁকে এবং তাঁর মা মরিয়মকে আর সেইসঙ্গে তাঁর কিছু শিষ্যকে এক বিবাহভোজের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই অনুষ্ঠান কান্না নামে একটা জায়গায় রাখা হয়েছে, যেটা নাসরৎ থেকে কিছুটা দূরে ছিল। মরিয়ম সেই পরিবারকে খুব ভালোভাবে জানতেন, তাই তিনি হয়তো অতিথিদের যত্ন নেওয়ার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। কিন্তু, সেইসময়ই একটা সমস্যা দেখা দেয়। দ্রাক্ষারস কম পড়ে যায়। b যা আশা করা হয়েছিল, হয়তো তার চেয়ে বেশি অতিথি সেই বিবাহভোজে চলে এসেছে। যদি কিছু না করা হয়, তা হলে বর ও কনে এবং তাদের পরিবারের সদস্যেরা লজ্জায় পড়ে যেতে পারে। তাই, মরিয়ম দ্রুত তার ছেলের কাছে যান এবং তাঁকে বলেন, “তাদের দ্রাক্ষারস নেই।” (যোহন ২:১-৩) তখন যিশু এমন কিছু করেন, যেটা কেউই আশা করেনি। তিনি অলৌকিকভাবে জলকে ‘উত্তম দ্রাক্ষারসে’ পরিণত করেন।—যোহন ২:৯, ১০.

২-৩. (ক) যিশু আর কোন কোন অলৌকিক কাজ করেছিলেন? (খ) কেন আমাদের যিশুর অলৌকিক কাজগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত?

পরবর্তী সময়ে যিশু আরও অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। c এভাবে তিনি হাজার হাজার ব্যক্তিকে সাহায্য করেছিলেন। যেমন বাইবেল জানায়, একবার তিনি ৫,০০০ জন পুরুষকে খাইয়েছিলেন। আরেক বার ৪,০০০ জন পুরুষকে। যদি সেই পুরুষদের সঙ্গে মহিলা এবং বাচ্চাদের গোনা যায়, তা হলে হয়তো যিশু মোট ২৭,০০০-রেরও বেশি লোককে খাইয়েছিলেন। (মথি ১৪:১৫-২১; ১৫:৩২-৩৮) সেই দুই বার যিশু অসুস্থ ব্যক্তিদেরও সুস্থ করেছিলেন। (মথি ১৪:১৪; ১৫:৩০, ৩১) চিন্তা করুন, যিশু যখন অলৌকিকভাবে এত বেশি লোককে সুস্থ করেছিলেন এবং খাইয়েছিলেন, তখন তারা কতটা অবাক হয়ে গিয়েছিল!

যিশুর অলৌকিক কাজগুলো আজ আমাদের জন্যও অনেক অর্থ রাখে। এই প্রবন্ধে আমরা যিশুর অলৌকিক কাজগুলো থেকে এমন কিছু বিষয় শিখব, যেগুলো আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করবে। আমরা এই বিষয়ের উপরও মনোযোগ দেব, কীভাবে যিশু অলৌকিক কাজ করার সময়ে দেখিয়েছিলেন, তিনি কতটা নম্র এবং লোকদের জন্য তাঁর কতটা সমবেদনা রয়েছে। আর এও শিখব যে, কীভাবে আমরা তাঁর মতো হতে পারি।

যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে শিক্ষা

৪. যিশুর অলৌকিক কাজগুলো থেকে আমরা কার বিষয়ে শিখতে পারি?

যিশুর অলৌকিক কাজগুলো থেকে আমরা এমন অনেক বিষয় শিখতে পারি, যেগুলো আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে পারে। এগুলো থেকে আমরা শুধু যিশুর বিষয়ে নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁর পিতা যিহোবার বিষয়েও অনেক কিছু শিখতে পারি। এর কারণ হল, তিনি এই অলৌকিক কাজগুলো যিহোবার সাহায্যেই করতে পেরেছিলেন। প্রেরিত ১০:৩৮ পদে লেখা আছে, “ঈশ্বর তাঁকে পবিত্র শক্তির মাধ্যমে মনোনীত করেন এবং তাঁকে ক্ষমতা দেন। এরপর তিনি সমগ্র অঞ্চলে গিয়ে ভালো ভালো কাজ করতেন এবং দিয়াবলের কারণে যারা কষ্ট ভোগ করছিল, তাদের সুস্থ করতেন, কারণ ঈশ্বর তাঁর সঙ্গে ছিলেন।” এও মনে রাখুন, যিশু হুবহু তাঁর পিতার মতো। তাই, তিনি যা করেছিলেন বা বলেছিলেন কিংবা যে-অলৌকিক কাজগুলো করেছিলেন, তা থেকে আমরা জানতে পারি যে, যিহোবা কীভাবে চিন্তা করেন এবং অনুভব করেন। (যোহন ১৪:৯) এখন আসুন, এমন তিনটে বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই, যেগুলো আমরা যিশুর অলৌকিক কাজগুলো থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি।

৫. যিশু কোন কারণে অলৌকিক কাজ করেছিলেন? (মথি ২০:৩০-৩৪)

প্রথম শিক্ষা: যিশু এবং তাঁর পিতা আমাদের অনেক ভালোবাসেন। যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তাঁর কাজগুলো থেকে জানা যায় যে, তিনি লোকদের কতটা ভালোবাসেন। ভালোবাসার কারণেই তিনি অলৌকিকভাবে লোকদের কষ্ট দূর করেছিলেন। একবার দু-জন অন্ধ ব্যক্তি সাহায্যের জন্য চিৎকার করে যিশুকে ডাকতে শুরু করে। (পড়ুন, মথি ২০:৩০-৩৪.) তাদের দেখে যিশুর “গভীর সমবেদনা বোধ” হয় এবং তিনি তাদের সুস্থ করেন। যিশু লোকদের ভালোবাসেন বলেই তাঁর হৃদয়ে লোকদের জন্য এত সমবেদনা রয়েছে। এই সমবেদনার কারণে তিনি লোকদের খাইয়েছিলেন আর একবার তিনি একজন কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করেছিলেন। (মথি ১৫:৩২; মার্ক ১:৪১) এটা থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পারি, লোকদের জন্য যিহোবার ‘কোমল সমবেদনা’ রয়েছে এবং তাঁর পুত্র যিশু আমাদের অনেক ভালোবাসেন। আমাদের কষ্টের মধ্যে দেখে তাঁরাও কষ্ট পান। (লূক ১:৭৮; ১ পিতর ৫:৭) যিহোবা ও যিশু অধীর আগ্রহে সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করছেন, যখন তাঁরা মানুষের সমস্ত কষ্ট চিরকালের জন্য দূর করে দেবেন।

৬. যিহোবা যিশুকে কতটা শক্তি দিয়েছেন?

দ্বিতীয় শিক্ষা: যিহোবা যিশুকে মানুষের সমস্ত সমস্যা দূর করার শক্তি দিয়েছেন। যিশু যে-অলৌকিক কাজগুলো করেছিলেন, তা থেকে বোঝা যায়, তিনি এমন সমস্যাগুলোও দূর করতে পারেন, যেগুলো মানুষ দূর করতে পারে না। যেমন, তাঁর কাছে এতটাই শক্তি রয়েছে যে, তিনি অসুস্থতা ও মৃত্যুকে চিরকালের জন্য শেষ করে দিতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি পাপকেও পুরোপুরিভাবে শেষ করে দিতে পারেন, যেটা হল সমস্ত সমস্যার মূল। (মথি ৯:১-৬; রোমীয় ৫:১২, ১৮, ১৯) যিশু অলৌকিক কাজ করে দেখিয়েছিলেন, তিনি “সমস্ত ধরনের” অসুস্থতা দূর করতে পারেন আর যারা মারা গিয়েছে, তাদেরও জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেন। (মথি ৪:২৩; যোহন ১১:৪৩, ৪৪) তাঁর কাছে প্রচণ্ড ঝড়কে নিয়ন্ত্রণ করার এবং মন্দ স্বর্গদূতদের পরাজিত করারও শক্তি আছে। (মার্ক ৪:৩৭-৩৯; লূক ৮:২) এটা দেখে আমরা কতই-না সান্ত্বনা পাই যে, যিহোবা তাঁর পুত্রকে কত কিছু করার শক্তি দিয়েছেন!

৭-৮. (ক) যিশুর অলৌকিক কাজগুলো থেকে আমরা কোন বিষয়ে আস্থা রাখতে পারি? (খ) আপনি নতুন জগতে কোন অলৌকিক কাজ দেখার জন্য উৎসুক হয়ে আছেন?

তৃতীয় শিক্ষা: আমরা সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি, ঈশ্বর তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে যে-আশীর্বাদগুলো দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেগুলো আমরা অবশ্যই পাব। পৃথিবীতে থাকার সময়ে যিশু যে-অলৌকিক কাজগুলো করেছিলেন, সেগুলো থেকে জানা যায়, ভবিষ্যতে তিনি একজন রাজা হিসেবে আরও বড়ো আকারে এগুলো করবেন। একটু চিন্তা করুন, সেইসময় পরিবেশ কেমন হবে: আমাদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে কারণ যিশু সমস্ত ধরনের অসুস্থতা এবং শারীরিক অক্ষমতা দূর করে দেবেন। (যিশা. ৩৩:২৪; ৩৫:৫, ৬; প্রকা. ২১:৩, ৪) আর কেউই না খেয়ে থাকবে না এবং কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হবে না। (যিশা. ২৫:৬; মার্ক ৪:৪১) আমাদের প্রিয়জনেরা “যারা স্মরণিক কবরে রয়েছে,” তাদের সঙ্গে আমরা আবারও দেখা করতে পারব। (যোহন ৫:২৮, ২৯) আপনি নতুন জগতে কোন অলৌকিক কাজ দেখার জন্য উৎসুক হয়ে আছেন?

যিশু যখন অলৌকিক কাজ করেছিলেন, তখন তিনি দেখিয়েছিলেন যে, তিনি কতটা নম্র এবং লোকদের জন্য তাঁর কতটা সমবেদনা রয়েছে। এই গুণগুলো আমাদের সবার মধ্যে গড়ে তোলা উচিত। আসুন, তাঁর দুটো অলৌকিক কাজের উপর মনোযোগ দিই। সবচেয়ে প্রথমে, আমরা সেই অলৌকিক কাজের উপর মনোযোগ দেব, যেটা তিনি কান্না নগরে বিবাহভোজে করেছিলেন।

নম্র হতে শিখুন

৯. কেন যিশু বিবাহভোজে অলৌকিক কাজ করেছিলেন? (যোহন ২:৬-১০)

যোহন ২:৬-১০ পদ পড়ুন। বিবাহভোজে যখন দ্রাক্ষারস শেষ হয়ে গিয়েছিল, তখন যিশুর জন্য কোনো অলৌকিক কাজ করার কি প্রয়োজন ছিল? না। মশীহের বিষয়ে এমন কোনো ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়নি যে, তিনি অলৌকিকভাবে দ্রাক্ষারস তৈরি করবেন। একটু চিন্তা করুন, আপনি আপনার বিয়েতে অতিথিদের খাওয়ার ও পান করার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু আপনি দেখলেন যে, সেগুলো কম পড়ে গিয়েছে। সেইসময় আপনার কেমন লাগবে? যিশু সেই পরিবারের, বিশেষ করে বর ও কনের বিষয়ে চিন্তা করেন। যিশু চাননি, তারা লজ্জায় পড়ে যাক। তাদের প্রতি যিশু সমবেদনা বোধ করেছিলেন এবং তাদের জন্য তিনি কিছু করতে চেয়েছিলেন, তাই তিনি একটা অলৌকিক কাজ করেছিলেন। তিনি প্রায় ৩৯০ লিটার (১০৩ গ্যালন) জলকে উত্তম মানের দ্রাক্ষারসে পরিণত করেছিলেন। কিন্তু, কেন যিশু এত বেশি পরিমাণে দ্রাক্ষারস তৈরি করেছিলেন? তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, যা বেঁচে যাবে, তা পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে কিংবা সেটা বিক্রি করে বর ও কনের হাতে কিছু টাকাপয়সা আসতে পারে। সেই অলৌকিক কাজের পর বর ও কনে নিশ্চয়ই অনেক স্বস্তি পেয়েছিল!

যিশুর মতো হোন আর নিজেদের সাফল্যের বিষয়ে বড়াই করা এড়িয়ে চলুন (১০-১১ অনুচ্ছেদ দেখুন) e

১০. যোহন ২ অধ্যায়ে যে-বিবরণ রয়েছে, সেটার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্বন্ধে উল্লেখ করুন। (ছবিও দেখুন।)

১০ যোহন ২ অধ্যায়ে যে-বিবরণ রয়েছে, আসুন সেটার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই। আপনি কি লক্ষ করেছেন, পাথরের সেই জালাগুলোতে যিশু নিজে জল ভরতি করেননি? এর পরিবর্তে, তিনি দাসদের তা করার জন্য বলেন, যাতে লোকদের মনোযোগ তাঁর উপর না যায়। (৬, ৭ পদ) আর জলকে দ্রাক্ষারসে পরিণত করার পর তিনি নিজে সেগুলো ভোজাধ্যক্ষের কাছে নিয়ে যাননি বরং তিনি দাসদের তার কাছে নিয়ে যেতে বলেন। (৮ পদ) আর তিনি দ্রাক্ষারসের পেয়ালা নিয়ে সমস্ত অতিথির সামনে বড়াই করে বলেননি যে, ‘আমি এখনই এই দ্রাক্ষারস তৈরি করেছি। একবার পান করে তো দেখুন, আপনাদের খুব ভালো লাগবে!’

১১. আমরা যিশুর অলৌকিক কাজ থেকে কী শিখতে পারি?

১১ যিশুর এই অলৌকিক কাজ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? এটাই যে, আমাদের নম্র হতে হবে। যিশু তাঁর এই অলৌকিক কাজ নিয়ে গর্ব করেননি। আসলে তিনি যা-কিছু করেছিলেন, সেগুলো নিয়ে কখনোই গর্ব করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি নম্র ছিলেন। তিনি যা-কিছু করতেন, সেগুলোর সমস্ত কৃতিত্ব এবং মহিমা তাঁর পিতাকে দিতেন। (যোহন ৫:১৯, ৩০; ৮:২৮) আমাদেরও যিশুর মতো নম্র হতে হবে এবং নিজেদের সাফল্যের বিষয়ে বড়াই করা এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা যিহোবা এবং তাঁর লোকদের জন্য যা-কিছু করি, সেগুলো নিয়ে গর্ব করার পরিবর্তে আমাদের এই বিষয়ে গর্ব করা উচিত যে, আমরা এত মহান ঈশ্বরের সেবা করার এক বিশেষ সুযোগ পেয়েছি। (যির. ৯:২৩, ২৪) তাই আসুন, আমরা আমাদের কাজের কৃতিত্ব সবসময় যিহোবাকে দিই কারণ তাঁর সাহায্য ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারি না।—১ করি. ১:২৬-৩১.

১২. আমরা আর কীভাবে যিশুর মতো নম্র হতে পারি? একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

১২ যিশুর মতো নম্র হওয়ার আরেকটা উপায় আছে। কল্পনা করুন: একজন যুবক পরিচারক দাস প্রথম বার পাবলিক টক দেবেন। একজন প্রাচীন তার সঙ্গে যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন এবং তার বক্তৃতা প্রস্তুত করতে তাকে সাহায্য করেন। এই কারণে সেই পরিচারক দাস ভালোভাবে তার বক্তৃতা দেন আর মণ্ডলীর সবার তার বক্তৃতা অনেক ভালো লাগে। সভার পর কেউ এসে সেই প্রাচীনকে জিজ্ঞেস করে, ‘আজকে ওই ভাই কত ভালো বক্তৃতা দিয়েছে, তা-ই না?’ এখন সেই প্রাচীনের কি এমনটা বলা উচিত, ‘হ্যাঁ ভালো দিয়েছে, কিন্তু আমি তাকে অনেক সাহায্য করেছি’? না কি তার নম্র হওয়া উচিত এবং এইরকম কিছু বলা উচিত, ‘সত্যিই, সে খুব ভালো বক্তৃতা দিয়েছে। আমি অনেক উপভোগ করেছি’? আমরা যখন নম্র হব, তখন আমরা অন্যদের জন্য যে-ভালো কাজ করেছি, সেটার কৃতিত্ব আমরা নিজেরা নেব না। আমরা এটা জেনে খুবই খুশি হব যে, আমরা অন্যদের জন্য যা-কিছু করি, সেগুলো যিহোবা দেখেন এবং তা মূল্যবান হিসেবে গণ্য করেন। (ইব্রীয় ১৩:১৬; তুলনা করুন, মথি ৬:২-৪) সত্যিই, আমরা যখন যিশুর মতো নম্র হই, তখন যিহোবা আনন্দিত হন।—১ পিতর ৫:৬.

সমবেদনা দেখাতে শিখুন

১৩. নায়িন্‌ নগরের কাছে এসে যিশু কী দেখেন আর তারপর তিনি কী করেন? (লূক ৭:১১-১৫)

১৩ লূক ৭:১১-১৫ পদ পড়ুন। এই বিবরণ সম্বন্ধে একটু কল্পনা করার চেষ্টা করুন। যিশু প্রায় দু-বছর ধরে পৃথিবীতে সেবা করছেন। এখন তিনি গালীল প্রদেশের নায়িন্‌ নগরে যাচ্ছেন। এটা শূনেম থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে, যেখানে প্রায় ৯০০ বছর আগে ভাববাদী ইলীশায় একজন মহিলার ছেলেকে পুনরুত্থিত করেছিলেন। (২ রাজা. ৪:৩২-৩৭) ঠিক নগরের দরজার কাছে এসে যিশু দেখেন যে, নগর থেকে একটা মৃতদেহ খাটে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখের এক সময় কারণ একজন বিধবার একমাত্র ছেলে মারা গিয়েছে। কিন্তু, সেই মা একা নয়, তার সঙ্গে নগর থেকে অনেক লোক যাচ্ছে। তখনই যিশু লোকদের সেই খাট থামাতে বলেন আর সেই মায়ের জন্য এমন কিছু করেন, যেটার ফলে তার কষ্ট আনন্দে পরিণত হয়। যিশু তার ছেলেকে পুনরুত্থিত করেন! সুসমাচারের বইগুলোতে যিশুর করা যে-তিনটে পুনরুত্থানের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এটা হল প্রথম পুনরুত্থান।

যিশুর মতো হোন আর যাদের প্রিয়জন এখন আর বেঁচে নেই, তাদের প্রতি সমবেদনা দেখান (১৪-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. লূক ৭ অধ্যায়ে দেওয়া বিবরণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্বন্ধে উল্লেখ করুন। (ছবিও দেখুন।)

১৪ আসুন, লূক ৭ অধ্যায়ের এই বিবরণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই। আপনি কি লক্ষ করেছেন, প্রথমে যিশু সেই মাকে ‘দেখতে পেয়েছিলেন’ আর এরপর ‘তিনি তার জন্য গভীর সমবেদনা বোধ করেছিলেন’? (১৩ পদ) হয়তো যিশু যখন দেখেছিলেন, মৃতদেহকে যে-খাটে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেটার সঙ্গে সঙ্গে সেই বিধবা যাচ্ছে আর কেঁদেই চলেছে, তখন তিনি গভীর সমবেদনা বোধ করেছিলেন। যিশু সেই মায়ের জন্য শুধু কষ্ট অনুভবই করেননি, কিন্তু তিনি তার জন্য কিছু করেও ছিলেন। এমন কিছু, যেটা থেকে বোঝা যায় যে, তাঁর হৃদয়ে কতটা সমবেদনা রয়েছে। তিনি তাকে বলেছিলেন, “কেঁদো না।” যিশু নিশ্চয়ই এই কথা খুবই প্রেমের সঙ্গে বলেছিলেন। এরপর, তিনি সেই মাকে কিছু না বলেই তার ছেলেকে পুনরুত্থিত করেছিলেন আর ‘তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।’—১৪, ১৫ পদ

১৫. আমরা যিশুর এই অলৌকিক কাজ থেকে কী শিখতে পারি?

১৫ যিশুর এই অলৌকিক কাজ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? এটাই যে, যারা মৃত্যুতে তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা দেখানো উচিত। এটা ঠিক যে, আমরা যিশুর মতো কাউকে পুনরুত্থিত করতে পারি না, কিন্তু আমরা সেই ভাই-বোনদের প্রতি একটু বেশি মনোযোগ দিতে পারি, যারা তাদের প্রিয়জনকে মৃত্যুতে হারিয়েছে। আমরা নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি, যাতে তারা সান্ত্বনা লাভ করে। আর তাদের সাহায্য করার জন্য আমাদের পক্ষে যা-কিছু করা সম্ভব, তা আমরা করতে পারি। d (হিতো. ১৭:১৭; ২ করি. ১:৩, ৪; ১ পিতর ৩:৮) আমরা যদি হাসি মুখে তাদের সঙ্গে দুটো কথা বলি কিংবা আমাদের সাধ্যমতো তাদের জন্য সামান্য কিছু করি, তা হলে এগুলো থেকে তারা অনেক সান্ত্বনা ও উৎসাহ লাভ করতে পারে।

১৬. আপনি সেই বোনের কাছ থেকে কী শিখতে পারেন, যিনি একজন মাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন? (ছবিও দেখুন।)

১৬ একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। এটা কিছু বছর আগের ঘটনা। একদিন সভাতে সবাই গান গাইছিল। সেই গান পুনরুত্থানের আশার বিষয়ে ছিল। তখনই একজন বোন দেখেন, কিছুটা দূরে অন্য একজন বোন কাঁদছেন। তার মনে পড়ে যায়, কিছুসময় আগেই সেই বোনের মেয়ে মারা গিয়েছে। তিনি সঙ্গেসঙ্গে সেই বোনের কাছে যান এবং তার কাঁধের উপর হাত রাখেন আর তার পাশে দাঁড়িয়ে গান করতে থাকেন। যে-বোন তার মেয়েকে হারিয়েছেন, তিনি বলেন, “সেইসময় আমার হৃদয়ে ভাই-বোনদের জন্য ভালোবাসা ভরে ওঠে।” সেই বোন খুব খুশি ছিলেন যে, সেই দিন তিনি সভাতে গিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, “কিংডম হলই এমন একটা জায়গা, যেখানে আমরা সাহায্য লাভ করতে পারি।” যে-ভাই-বোনদের মন ‘চূর্ণ’ হয়ে গিয়েছে কিংবা যারা খুব হতাশ হয়ে পড়েছে, তাদের সাহায্য করার জন্য আমরা যখন সামান্যও কিছু করি, তখন সেটা যিহোবা লক্ষ করেন আর সেটাকে খুবই মূল্যবান হিসেবে দেখেন।—গীত. ৩৪:১৮.

এমন কিছু নিয়ে অধ্যয়ন করুন, যেটার মাধ্যমে আরও উপকৃত হতে পারবেন

১৭. যিশুর অলৌকিক কাজগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা কী শিখতে পারি?

১৭ সুসমাচারের বইগুলোতে যিশুর যে-অলৌকিক কাজগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আমরা জানতে পারি, যিহোবা ও যিশু আমাদের কতটা ভালোবাসেন এবং যিশুর কাছে মানুষের সমস্ত সমস্যা দূর করার শক্তি আছে। এটা থেকে আমাদের এই আস্থাও বাড়বে যে, যিহোবা খুব তাড়াতাড়ি তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন। আমরা যখন এই বিবরণগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করি, তখন আমরা চিন্তা করতে পারি, এগুলো থেকে যিশুর কোন গুণাবলি সম্বন্ধে জানা যায় আর কীভাবে আমরা তাঁর মতো হতে পারি। তাই, একদিন পারিবারিক উপাসনা কিংবা ব্যক্তিগত অধ্যয়নে যিশুর কিছু অলৌকিক কাজ নিয়ে অধ্যয়ন করুন না কেন? এই বিষয়ে চিন্তা করুন, আপনি সেই অলৌকিক কাজ থেকে কোন বিষয়গুলো শিখতে পারেন। তারপর, আপনি সেগুলো অন্যদেরও বলতে পারেন। চিন্তা করে দেখুন, এমনটা করার মাধ্যমে আপনি কত ভালোভাবে ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন এবং একে অন্যকে কতটা উৎসাহিত করতে পারবেন!—রোমীয় ১:১১, ১২.

১৮. পরের প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

১৮ যিশু তাঁর সেবার প্রায় শেষের দিকে আরেক বার একজন মৃত ব্যক্তিকে পুনরুত্থিত করেছিলেন। যদিও এর আগে তিনি লোকদের পুনরুত্থিত করেছিলেন, তবে এই অলৌকিক কাজ একেবারে আলাদা ছিল। এই বার তিনি তাঁর প্রিয় বন্ধুকে পুনরুত্থিত করেছিলেন আর পরিস্থিতিও পুরোপুরি ভিন্ন ছিল। সুসমাচারের বইয়ে দেওয়া এই অলৌকিক কাজ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আর এই বিষয়ে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে কীভাবে আমাদের এই বিশ্বাস শক্তিশালী হয় যে, মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করা হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পরের প্রবন্ধে দেওয়া হবে।

গান ২০ তোমার প্রিয় পুত্রকে দিলে

a যিশু এক প্রচণ্ড ঝড়কে শান্ত করেছিলেন, অসুস্থ ব্যক্তিদের সুস্থ করেছিলেন এবং মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করেছিলেন। আমরা যখন তাঁর এই অলৌকিক কাজগুলোর বিষয়ে পড়ি, তখন আমরা অবাক হয়ে যাই। তবে, বাইবেলে সেগুলোর বিষয়ে শুধুমাত্র এইজন্য লেখা হয়নি, যেন তা পড়ে আমরা আনন্দ পাই বরং আমরা যেন তা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা যিশুর কিছু অলৌকিক কাজের বিষয়ে আলোচনা করব। আমরা জানতে পারব, সেগুলো থেকে আমরা যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে কী শিখতে পারি, যেটার ফলে আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হবে। সেই অলৌকিক কাজগুলো থেকে আমরা এমন কিছু গুণের বিষয়েও জানতে পারব, যেগুলো আমাদের নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে।

b বাইবেলের একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন: “ইজরায়েলের আশেপাশের নগরের লোকেরা আতিথেয়তা দেখানোকে নিজেদের কর্তব্য বলে মনে করত। কেউ যদি নিজের বাড়িতে অতিথিদের নিমন্ত্রণ করত, তা হলে তার কাছ থেকে আশা করা হত, সে যেন তাদের জন্য প্রয়োজনের চেয়ে ভালো ব্যবস্থা করে। আর যদি কোনো বিশেষ উপলক্ষ্যে অতিথিদের খুব ভালোভাবে যত্ন নিতে হয়, তা হলে সেটার চেয়েও আরও বেশি ব্যবস্থা করতে হত। যেমন, বিবাহভোজের অনুষ্ঠানে।”

c সুসমাচারের বইগুলোতে যিশুর ৩০টারও বেশি অলৌকিক কাজের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিটা অলৌকিক কাজের বিষয়ে আলাদাভাবে উল্লেখ করাও হয়নি। যেমন, একবার “নগরের সমস্ত লোক” যিশুর কাছে এসেছিল এবং তিনি ‘বিভিন্ন ধরনের অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করেছিলেন।’—মার্ক ১:৩২-৩৪.

d যাদের প্রিয়জন এখন আর বেঁচে নেই, তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আপনি কী করতে পারেন এবং তাদের কী বলতে পারেন? সেই বিষয়ে কিছু পরামর্শ জানার জন্য ২০১৬ সালের নং ৩ প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “শোকার্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা দিন” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

e ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যিশু পিছনের দিকে দাঁড়িয়ে আছেন আর বর ও কনে এবং তাদের অতিথিরা উন্নত মানের দ্রাক্ষারস উপভোগ করছে।