সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৭

হঠাৎ সমস্যা এলেও যিহোবা আপনাকে সাহায্য করবেন!

হঠাৎ সমস্যা এলেও যিহোবা আপনাকে সাহায্য করবেন!

“ধার্ম্মিকের বিপদ অনেক, কিন্তু সেই সকল হইতে সদাপ্রভু তাহাকে উদ্ধার করেন।”—গীত. ৩৪:১৯.

গান ৪৪ হতাশ লোকের প্রার্থনা

সারাংশ a

১. কোন বিষয়ে আমরা নিশ্চিত?

 আমরা যিহোবার লোক, তাই আমরা নিশ্চিত যে, তিনি আমাদের খুব ভালোবাসেন আর চান যেন আমরা আনন্দে থাকি এবং জীবন উপভোগ করি। (রোমীয় ৮:৩৫-৩৯) আমরা এই বিষয়েও নিশ্চিত, আমরা যদি বাইবেলের নীতিগুলো আমাদের জীবনে কাজে লাগাই, তা হলে এটা আমাদের মঙ্গল নিয়ে আসবে। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) কিন্তু, কখনো কখনো আমরা এমন সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই, যেগুলোর বিষয়ে আমরা হয়তো কখনো চিন্তাও করিনি। এইরকম সময়ে আমরা কী করতে পারি?

২. আমাদের হয়তো কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় আর এইরকম সময়ে আমরা কী চিন্তা করতে পারি?

যিহোবার সমস্ত উপাসককে কোনো-না-কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যেমন, আমাদের পরিবারের কোনো সদস্য হয়তো এমন কিছু করেছে, যেটার কারণে আমরা দুঃখ পেয়েছি। আমাদের হয়তো এমন কোনো কঠিন রোগ ধরা পড়েছে, যেটার কারণে যিহোবার সেবায় বেশি করতে পারছি না। আমরা হয়তো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছি কিংবা আমাদের বিশ্বাসের কারণে আমাদের উপর তাড়না করা হয়েছে। আমরা যখন এইরকম কোনো সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন আমরা হয়তো চিন্তা করতে শুরু করি, ‘কেন আমার প্রতিই এইরকমটা ঘটছে? এমনটা নয় তো, আমি কোনো ভুল করেছি? যিহোবা কি আমার উপর রেগে আছেন?’ আপনার মনেও কি কখনো এইরকম চিন্তা এসেছে? যদি এসে থাকে, তা হলে হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। যিহোবার এমন অনেক উপাসক ছিল, যাদের ঠিক এমনটাই মনে হয়েছিল।—গীত. ২২:১, ২; হবক্‌. ১:২, ৩.

৩. গীতসংহিতা ৩৪:১৯ পদ থেকে আমরা কী শিখি?

গীতসংহিতা ৩৪:১৯ পদ পড়ুন। এই শাস্ত্রপদে বিশেষভাবে দুটো বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে: (১) ধার্মিক লোকদেরও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় আর (২) যিহোবা আমাদের সমস্যাগুলো থেকে উদ্ধার করেন। কীভাবে তিনি আমাদের উদ্ধার করেন? তিনি আমাদের বলেছেন, এই জগতে কখনো আমাদের এটা আশা করা উচিত নয় যে, আমাদের প্রতি সবসময় ভালো হবে। যিহোবা আমাদের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছেন, আমরা যদি তাঁর সেবা করি, তা হলে আমরা অনেক আনন্দ লাভ করব। তবে, তিনি এই বিষয়ে কোনো গ্যারান্টি দেননি যে, আমাদের সামনে কোনো সমস্যা আসবেই না। (যিশা. ৬৬:১৪) যিহোবা চান আমরা যেন ভবিষ্যতের সেই সময় নিয়ে চিন্তা করি, যখন তিনি আমাদের অনন্তজীবন দেবেন আর আমরা চিরকাল ধরে আনন্দে থাকব। (২ করি. ৪:১৬-১৮) কিন্তু, সেই সময় না আসা পর্যন্ত তিনি আমাদের সাহায্য করে যাচ্ছেন, যাতে আমরা হাল ছেড়ে না দিই এবং তাঁর সেবা করে চলি।—বিলাপ ৩:২২-২৪.

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী লক্ষ করব?

আসুন লক্ষ করি, আমরা যিহোবার বিশ্বস্ত উপাসকদের কাছ থেকে কী শিখতে পারি। আমরা অতীতের কিছু লোক এবং আমাদের দিনের কিছু ভাই-বোনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দেব। আমরা লক্ষ করব, কখনো কখনো আমাদের সামনে হঠাৎ করে কোনো সমস্যা চলে আসতে পারে। কিন্তু, সেইসময়ও আমরা যখন যিহোবার উপর আস্থা রাখব, তখন তিনি আমাদের অবশ্যই সাহায্য করবেন। (গীত. ৫৫:২২) এই উদাহরণগুলো নিয়ে আলোচনা করার সময়ে চিন্তা করুন: ‘আমার পরিস্থিতিও যদি এইরকম হত, তা হলে আমি কী করতাম? এই উদাহরণের উপর মনোযোগ দেওয়ার ফলে কীভাবে যিহোবার উপর আমার আস্থা আরও বেড়ে গিয়েছে? আমি এখান থেকে আর কী শিখতে পারি?’

অতীতের লোকেরা

২০ বছর ধরে যাকোবের মামা লাবন তার সঙ্গে বার বার প্রতারণা করেন, কিন্তু যিহোবা যাকোবকে আশীর্বাদ করে চলেন (৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৫. লাবনের জন্য যাকোবকে কী কী সহ্য করতে হয়েছিল? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

যিহোবার অনেক উপাসককে এমন বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যেগুলো তারা কখনো আশাও করেনি। একটু যাকোবের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তার বাবা তাকে বলেন, তিনি যেন লাবন নামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান, যিনি যিহোবার একজন উপাসক ছিলেন আর তার এক মেয়েকে বিয়ে করেন। তিনি তাকে আশ্বাস দেন, এমনটা করলে যিহোবা তাকে প্রচুর আশীর্বাদ করবেন। (আদি. ২৮:১-৪) যাকোব তার বাবার কথা শোনেন। তিনি কনান দেশ ছেড়ে লাবনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। লাবনের দুটো মেয়ে ছিল, লেয়া ও রাহেল। যাকোব তার ছোটো মেয়ে রাহেলকে ভালোবেসে ফেলেন এবং তাকে বিয়ে করতে চান। সেইজন্য তিনি লাবনের এখানে সাত বছর কাজ করতে রাজি হয়ে যান। (আদি. ২৯:১৮) কিন্তু, যাকোব যেমনটা ভেবেছিলেন, তেমনটা হয়নি। সাত বছর কাজ করার পর, তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। লাবন তার বড়ো মেয়ে লেয়ার সঙ্গে যাকোবের বিয়ে দিয়ে দেন। পরে, তিনি যাকোবকে বলেন, তিনি এক সপ্তাহ পরে রাহেলের সঙ্গেও তার বিয়ে দিয়ে দেবেন, কিন্তু এরজন্য তাকে আরও সাত বছর কাজ করতে হবে। (আদি. ২৯:২৫-২৭) আর যাকোব যখন লাবনের জন্য কাজ করছিলেন, তখনও লাবন তার সঙ্গে অন্যায় করেছিলেন। লাবন ২০ বছর ধরে যাকোবের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছিলেন।—আদি. ৩১:৪১, ৪২.

৬. যাকোবকে আর কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল?

যাকোবকে আরও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তার পরিবার অনেক বড়ো ছিল, কিন্তু কখনো কখনো তার ছেলেরা একে অন্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারত না। এমনকী তারা তাদের ভাই যোষেফকে এক দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল। যাকোবের দুই ছেলে শিমিয়োন ও লেবি তাদের পরিবারের নাম মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল আর যিহোবার নামের উপরও নিন্দা নিয়ে এসেছিল। এ ছাড়া, যাকোবের প্রিয় স্ত্রী রাহেল তাদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময়ে মারা গিয়েছিলেন। আর একটা ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কারণে যাকোবকে বৃদ্ধ বয়সে বাধ্য হয়ে মিশরে গিয়ে থাকতে হয়েছিল।—আদি. ৩৪:৩০; ৩৫:১৬-১৯; ৩৭:২৮; ৪৫:৯-১১, ২৮.

৭. কীভাবে যিহোবা যাকোবের প্রতিটা পদক্ষেপে তার সঙ্গে ছিলেন?

এত কিছু হওয়া সত্ত্বেও, যিহোবা এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর উপর যাকোবের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যায়নি। আর যিহোবাও তার প্রতিটা পদক্ষেপে তার সঙ্গে ছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, যদিও লাবন যাকোবের সঙ্গে বার বার অন্যায় করছিলেন, কিন্তু যিহোবা যাকোবের সম্পত্তি বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন। আর চিন্তা করুন, সেইসময় যাকোব কতটা আনন্দিত হয়েছিলেন, যখন দীর্ঘসময় পর যোষেফের সঙ্গে তার আবারও দেখা হয়েছিল! তিনি তার ছেলেকে ফিরে পেয়েছিলেন বলে যিহোবাকে নিশ্চয়ই অনেক ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। যাকোবের সঙ্গে যিহোবার খুবই ঘনিষ্ঠ এক সম্পর্ক ছিল। তাই, তিনি এইসমস্ত সমস্যা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পেরেছিলেন। (আদি. ৩০:৪৩; ৩২:৯, ১০; ৪৬:২৮-৩০) একইভাবে, আমাদেরও যদি যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে, তা হলে আমরাও সেই সমস্ত সমস্যার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতে পারব, যেগুলো আমাদের সামনে হঠাৎ করে আসে।

৮. রাজা দায়ূদ কী করতে চেয়েছিলেন?

রাজা দায়ূদ যিহোবার জন্য যা-কিছু করতে চেয়েছিলেন, সেই সমস্ত কিছু তিনি করতে পারেননি। যেমন, তার খুব ইচ্ছা ছিল যে, তিনি যিহোবার জন্য একটা গৃহ নির্মাণ করবেন আর এই বিষয়টা তিনি ভাববাদী নাথনকে বলেছিলেন। তখন নাথন তাকে বলেছিলেন, “আপনার মনে যা আছে, আপনি তা-ই করুন কারণ সত্য ঈশ্বর আপনার সঙ্গে রয়েছেন।” (১ বংশা. ১৭:১, ২, NW) এই কথাগুলো শুনে দায়ূদ খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন। তিনি হয়তো সঙ্গেসঙ্গে সেই গৃহ নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা করতে শুরু করে দিয়েছিলেন।

৯. দায়ূদ যখন এমন একটা খবর শুনেছিলেন, যেটা তিনি আশা করেননি, তখন তিনি কী করেছিলেন?

কিন্তু “সেই রাতেই” যিহোবা নাথনকে বলেছিলেন, দায়ূদ তাঁর জন্য গৃহ নির্মাণ করবেন না বরং তার এক ছেলে তা করবেন। এই কথা শুনে নাথন সঙ্গেসঙ্গে দায়ূদের কাছে গিয়েছিলেন এবং তাকে এই খবরটা জানিয়েছিলেন। (১ বংশা. ১৭:৩, ৪, ১১, ১২, NW) তখন দায়ূদ কী করেছিলেন? তিনি তার লক্ষ্য পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন। আর যিহোবার গৃহ নির্মাণের জন্য টাকাপয়সা এবং অন্যান্য জিনিসপত্র জোগাড় করতে শুরু করেছিলেন, যেটা পরে গিয়ে তার ছেলে শলোমন নির্মাণ করতেন।—১ বংশা. ২৯:১-৫.

১০. যিহোবা দায়ূদকে কোন আশীর্বাদ করেছিলেন?

১০ দায়ূদকে যখন বলা হয়েছিল, তিনি যিহোবার জন্য একটা গৃহ নির্মাণ করবেন না, ঠিক তার পরেই যিহোবা তার সঙ্গে একটা চুক্তি করেন। তিনি দায়ূদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন, তার এক বংশধর চিরকাল রাজত্ব করবেন। (২ শমূ. ৭:১৬) কল্পনা করুন, যিশুর হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে যখন দায়ূদকে পুনরুত্থিত করা হবে, তখন তিনি এটা জেনে কতই-না আনন্দিত হবেন যে, আমাদের রাজা যিশু খ্রিস্ট তার বংশ থেকেই এসেছেন! এই বিবরণ থেকে আমরা কী শিখি? যিহোবার জন্য আমরা যা করতে চাই, সেটা যদি করতে না পারি, তা হলে আমাদের হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। কে জানে, যিহোবা হয়তো আমাদের এমন উপায়ে আশীর্বাদ করবেন, যেটা আমরা হয়তো কখনো আশাই করিনি!

১১. ঈশ্বরের রাজ্য সেই সময়ে আসেনি, যখন প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা আশা করেছিল, কিন্তু তারপরও তারা কোন আশীর্বাদ লাভ করেছিল? (প্রেরিত ৬:৭)

১১ প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদেরও এইরকমই কিছু পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তারা যেমনটা চিন্তা করেছিল, তেমনটা হয়নি। তারা চেয়েছিল যেন ঈশ্বরের রাজ্য তাড়াতাড়ি আসে, কিন্তু সেইসময় তাদের আশা পূরণ হয়নি। তারা এটাও জানত না যে, ঈশ্বরের রাজ্য ঠিক কখন আসবে। (প্রেরিত ১:৬, ৭) এইরকম সময়ে তারা কী করেছিল? তারা নিরুৎসাহিত হয়নি বরং সুসমাচার প্রচার করে গিয়েছিল। আর এই সুসমাচার যত দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল, তত তারা এই বিষয়ের স্পষ্ট প্রমাণ দেখতে পেয়েছিল যে, কীভাবে যিহোবা তাদের পরিশ্রমের উপর আশীর্বাদ করছেন।—পড়ুন, প্রেরিত ৬:৭.

১২. দুর্ভিক্ষের সময়ে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা কী করেছিল?

১২ প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের এমন কিছু পরিস্থিতিরও মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যেগুলোর বিষয়ে তারা চিন্তা করেনি। একবার “পুরো দেশে এক ভয়ানক দুর্ভিক্ষ” হয়েছিল। (প্রেরিত ১১:২৮) আপনি কি কল্পনা করতে পারেন, এই দুর্ভিক্ষের কারণে তাদের কতটা কষ্ট ভোগ করতে হয়েছিল? পরিবারের মস্তকেরা হয়তো এই বিষয়ে দুশ্চিন্তা করেছিল, কীভাবে তারা তাদের পরিবারের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করবে। আর সেই যুবক-যুবতীদের বিষয়ে চিন্তা করুন, যারা আরও বেশি করে যিহোবার সেবা করতে চেয়েছিল। তারা কি এমনটা মনে করেছিল, দুর্ভিক্ষ শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে? যা-ই হোক না কেন, সেই খ্রিস্টানেরা পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছিল আর যতটা সম্ভব তারা প্রচার কাজ করে গিয়েছিল। এর পাশাপাশি, তাদের কাছে যা-কিছু ছিল, তারা সেগুলো আনন্দ সহকারে যিহূদিয়ার ভাই-বোনদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিল।—প্রেরিত ১১:২৯, ৩০.

১৩. দুর্ভিক্ষের সময়ে যিহোবা খ্রিস্টানদের কোন কোন আশীর্বাদ করেছিলেন?

১৩ সেই দুর্ভিক্ষের সময়ে খ্রিস্টানেরা কোন কোন আশীর্বাদ পেয়েছিল? যে-ভাই-বোনদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছিল, তারা স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিল, যিহোবা তাদের সাহায্য করছেন। (মথি ৬:৩১-৩৩) আর যারা তাদের সাহায্য করেছিল, সেই ভাই-বোনদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছিল। আর যে-খ্রিস্টানেরা দান দিয়ে বা অন্যান্য উপায়ে ত্রাণকাজে সাহায্য করেছিল, তারা এটা জেনে আনন্দিত হয়েছিল যে, তারা অন্যদের জন্য কিছু করতে পেরেছে। (প্রেরিত ২০:৩৫) সেইসময় যিহোবা সমস্ত খ্রিস্টানকে আশীর্বাদ করেছিলেন কারণ তারা পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছিল।

১৪. পৌল ও বার্ণবার প্রতি কী ঘটেছিল? আর এর ফলাফল কী হয়েছিল? (প্রেরিত ১৪:২১, ২২)

১৪ প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উপর প্রায়ই তাড়না করা হত। কখনো কখনো এমন সময়ে তাড়না করা হত, যখন তারা আশাই করত না। লক্ষ করুন, যখন পৌল ও বার্ণবা লুস্ত্রায় প্রচার করছিলেন, তখন তাদের প্রতি কী ঘটেছিল। প্রথমে লোকেরা তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছিল এবং ভালোভাবে তাদের স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু পরে, কিছু বিরোধী এসে সেই “লোকদের উসকে” দিয়েছিল। তখন যে-লোকেরা পৌল ও বার্ণবাকে স্বাগত জানিয়েছিল, তাদের মধ্যেই কিছু লোক পৌলকে পাথর ছুড়ে মেরেছিল এবং তাকে মৃত ভেবে সেখানে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল। (প্রেরিত ১৪:১৯) সেই সময়ে পৌল ও বার্ণবা কী করেছিলেন? তারা অন্য একটা জায়গায় গিয়ে প্রচার করতে শুরু করেছিলেন। এর ফলাফল কী হয়েছিল? তারা “অনেক লোককে শিষ্য হতে” সাহায্য করেছিলেন এবং তাদের কথা ও উদাহরণ থেকে অন্য ভাই-বোনেরা অনেক শক্তি লাভ করেছিল। (পড়ুন, প্রেরিত ১৪:২১, ২২.) পৌল ও বার্ণবার উপর যখন হঠাৎ তাড়না করা হয়েছিল, তখন তারা হাল ছেড়ে দেননি। আর এই কারণে অনেকে উপকৃত হয়েছিল। আমরাও যদি হাল ছেড়ে না দিই এবং যিহোবা আমাদের যে-কাজ দিয়েছেন, সেটা করে চলি, তা হলে তিনি আমাদেরও অনেক আশীর্বাদ করবেন।

আমাদের দিনের ভাই-বোনেরা

১৫. ভাই ম্যাকমিলানের কাছ থেকে আমরা কী শিখি?

১৫ উনিশ-শো চোদ্দো সালের আগের বছরগুলোতে যিহোবার লোকেরা কিছু ঘটবে বলে প্রত্যাশা করছিল। যেমন, ভাই এ. এইচ. ম্যাকমিলানের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। অনেক ভাই-বোনের মতো তারও মনে হয়েছিল, তিনি খুব শীঘ্রই স্বর্গে চলে যাবেন। ১৯১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটা বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, “এটাই হয়তো আমার শেষ বক্তৃতা হবে।” কিন্তু তিনি যেমনটা ভেবেছিলেন, তেমনটা কিছুই হয়নি। পরবর্তী সময়ে ভাই লিখেছিলেন, “আমাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি হয়তো একটু বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলেছিলাম। আমরা এটা ভেবেই নিয়েছিলাম যে, আমরা খুব শীঘ্রই স্বর্গে চলে যাব।” পরে তিনি আরও লিখেছিলেন, “আসলে আমাদের প্রভুর সেবায় নিজেদের ব্যস্ত রাখতে হত।” আর ভাই ম্যাকমিলান সত্যিই নিজেকে প্রচার কাজে ব্যস্ত রেখেছিলেন। তিনি উদ্যোগের সঙ্গে তা করে গিয়েছিলেন। তাকে এমন ভাইদের উৎসাহিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যারা জেলে ছিল কারণ তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আর বয়সের কারণে যখন তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, তখনও তিনি নিয়মিতভাবে মণ্ডলীর সভায় যোগ দিতেন। ভাই যখন তার স্বর্গীয় পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখনও তিনি তার সময়কে সঠিক উপায়ে ব্যবহার করেছিলেন। এর ফলে, তিনি কোন উপকার পেয়েছিলেন? ১৯৬৬ সালে মারা যাওয়ার কিছুসময় আগে তিনি লিখেছিলেন, “আজও আমার বিশ্বাস ততটাই দৃঢ়, যতটা আগে ছিল।” ভাই ম্যাকমিলানের মনোভাব কতই-না ভালো ছিল! কখনো কখনো আমরা হয়তো চিন্তাও করি না, আমাদের এত দীর্ঘসময় ধরে সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু, এইরকম সময়ে আসুন আমরা ভাই ম্যাকমিলানের মতো হই এবং ধৈর্য ধরি!—ইব্রীয় ১৩:৭.

১৬. ভাই হার্বার্ট এবং তার স্ত্রীকে হঠাৎ করেই কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল? (যাকোব ৪:১৪)

১৬ যিহোবার অনেক উপাসককে হঠাৎ স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। হার্বার্ট জেনিংগস্‌ b নামে একজন ভাইয়ের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তার জীবনকাহিনিতে তিনি বলেছিলেন, তিনি এবং তার স্ত্রী ঘানাতে মিশনারি হিসেবে সেবা করার সময় অনেক আনন্দে ছিলেন। কিন্তু, পরে তিনি জানতে পারেন, তার গুরুতর এক ধরনের মানসিক রোগ (এক প্রকার মুড ডিসঅর্ডার) রয়েছে। যাকোব ৪:১৪ পদের কথা মাথায় রেখে ভাই নিজের পরিস্থিতি সম্বন্ধে বলেছিলেন, ‘এটা এমন এক “আগামীকাল” ছিল, যেটা আমরা কখনো আশাই করিনি।’ (পড়ুন) তিনি লিখেছিলেন, “কঠিন বাস্তবকে মেনে নিয়ে . . . আমাদের ঘানার বন্ধুবান্ধবদের বিদায় জানিয়ে [চিকিৎসার জন্য] কানাডায় ফিরে যেতে হয়েছিল।” ভাই হার্বার্ট এবং তার স্ত্রীর জন্য এটা খুবই কঠিন এক সময় ছিল। কিন্তু, যিহোবার সাহায্যে তারা বিশ্বস্তভাবে তাঁর সেবা করে গিয়েছিলেন।

১৭. কীভাবে অন্য ভাই-বোনেরা ভাই হার্বার্টের উদাহরণ থেকে উপকার পেয়েছিল?

১৭ ভাই হার্বার্ট তার জীবনকাহিনিতে যে-কথাগুলো বলেছিলেন, সেগুলো অন্য ভাই-বোনদের উপর খুব ভালো প্রভাব ফেলেছিল। একজন বোন লিখেছিলেন, ‘আমি বহু বছর ধরে আমাদের পত্রিকাগুলো পড়ছি, তবে এই প্রবন্ধটা আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। আমি যখন পড়ি, ভাই হার্বার্টকে তার অসুস্থতার কারণে তার দায়িত্বগুলো ছাড়তে হয়েছিল, তখন এটা আমাকে আমার পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে দেখতে সাহায্য করে।’ একইভাবে, একজন ভাই লিখেছিলেন, ‘মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হিসেবে ১০ বছর ধরে সেবা করার পর, আমাকে সেই দায়িত্ব ছাড়তে হয়। কারণ আমার এক মানসিক রোগ ধরা পড়ে। অযোগ্যতার অনুভূতি আমাকে এতটাই কষ্ট দিত যে, আমি যখনই ভাই-বোনদের জীবনকাহিনি পড়তাম, তখনই আমি আমার পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে হতাশ হয়ে পড়তাম। তবে, আমি যখন ভাই হার্বার্টের জীবনকাহিনি পড়ি যে, তিনি কীভাবে ধৈর্য ধরেছিলেন, তখন আমি যেন আরও উদ্যোগী হয়ে উঠি।’ এখান থেকে আমরা শিখি, আমাদের পরিস্থিতি যখন হঠাৎ করে পালটে যায় আর এইরকম সময়েও আমরা ধৈর্য ধরি, তখন এটা দেখে ভাই-বোনেরা উৎসাহিত হতে পারে। অনেকসময়, আমরা যেমনটা চিন্তা করি, তেমনটা হয় না, কিন্তু তখনও আমরা ভাই-বোনদের জন্য বিশ্বাস ও ধৈর্যের এক উত্তম উদাহরণ হতে পারি।—১ পিতর ৫:৯.

আমাদের সামনে হঠাৎ কোনো সমস্যা আসা সত্ত্বেও আমরা যখন যিহোবার উপর আস্থা রাখি, তখন আমরা আসলে তাঁর আরও নিকটবর্তী হই (১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৮. আপনি নাইজেরিয়ার একজন বোনের কাছ থেকে কী শিখতে পারেন? (ছবিও দেখুন।)

১৮ যিহোবার অনেক উপাসককে কোভিড-১৯ অতিমারির মতো দুর্যোগের কারণে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। নাইজেরিয়ার একজন বোনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যার স্বামী মারা গিয়েছেন। তাদের কাছে বেশি টাকাপয়সা এবং খাবারদাবার ছিল না। একদিন সকালে তাদের কাছে কেবল এক কাপ চাল ছিল। এটা ছাড়া তাদের কাছে কোনো খাবার আর সেইসঙ্গে টাকাপয়সাও ছিল না। তার মেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আচ্ছা মা, এরপর আমরা কী খাব?’ বোন তার মেয়েকে বলেন, তাদের সারিফতের বিধবার মতো হতে হবে। তাদের কাছে যে-খাবার আছে, তারা সেটা খাবে আর বাকিটা যিহোবার হাতে ছেড়ে দেবে। (১ রাজা. ১৭:৮-১৬) তারা চিন্তাও করেনি, দুপুর বেলায় তারা কী খাবে, তখনই তারা ভাই-বোনদের কাছ থেকে একটা বড়ো থলি পায়। এই থলির মধ্যে এত খাবার ছিল যে, তারা দুই সপ্তাহ পেট ভরে তা খেতে পারত। বোন বলেন, তিনি এটা বুঝতেও পারেননি, তার মেয়েকে তিনি যা বলছিলেন, সেটা যিহোবা কতটা মন দিয়ে শুনছিলেন। সত্যিই, হঠাৎ করে সমস্যা আসা সত্ত্বেও আমরা যখন যিহোবার উপর আস্থা রাখি, তখন আমরা তাঁর আরও নিকটবর্তী হই।—১ পিতর ৫:৬, ৭.

১৯. ভাই অ্যালেক্সি ইয়েরশোভের উপর কোন তাড়না করা হয়েছিল?

১৯ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের ভাই-বোনদের এমন অনেক তাড়নার মুখোমুখি হতে হয়েছে, যেগুলো তারা কখনো আশাই করেনি। যেমন, ভাই অ্যালেক্সি ইয়েরশোভের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যিনি রাশিয়ায় থাকেন। ১৯৯৪ সালে তার বাপ্তিস্ম হয়। সেই সময়ে যিহোবার উপাসনা করার ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ ছিল না। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি পালটে যায়। ২০২০ সালে ইয়োরশোভের বাড়িতে কিছু লোক ঢুকে পড়ে, তারা তার ঘর তল্লাশি করে এবং তার অনেক জিনিসপত্র দখল করে নেয়। এর কিছু মাস পরে, সরকার তার উপর বিদ্রোহ করার অভিযোগ দেয়। আসলে, একজন ব্যক্তি প্রায় এক বছর ধরে ভাইয়ের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার নাটক করছিল। সেই ব্যক্তি কিছু ভিডিও বানিয়েছিল। আর সেটার উপর ভিত্তি করেই ভাইয়ের উপর মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেই ব্যক্তি ভাইয়ের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল!

২০. ভাই ইয়েরশোভ যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ককে আরও মজবুত করার জন্য কী করেছিলেন?

২০ ভাই ইয়েরশোভের উপর যে-তাড়না করা হয়েছিল, সেটার কি কোনো ভালো ফলাফলও দেখা গিয়েছে? হ্যাঁ, যিহোবার সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক এখন আরও মজবুত হয়ে গিয়েছে। ভাই বলেন, “এখন আমি এবং আমার স্ত্রী আরও বেশি করে একসঙ্গে মিলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি। আমি জানি, যিহোবার সাহায্য ছাড়া আমি কখনোই এই সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারতাম না।” ভাই আরও বলেন, “ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার ফলে আমি অনেক উপকার পেয়েছি। এটা আমাকে আমার হতাশা কাটিয়ে উঠতে অনেক সাহায্য করেছে। আমি অতীতের বিশ্বস্ত উপাসকদের উদাহরণ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি। বাইবেলে এমন অনেক বিবরণ রয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়, সমস্যার সময়ে শান্ত থাকা এবং যিহোবার উপর আস্থা রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”

২১. এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখেছি?

২১ এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখেছি? এই জগতে আমাদের সঙ্গে যেকোনো সময়ে যা-কিছু ঘটতে পারে। কিন্তু, আমরা যদি যিহোবার উপর আস্থা রাখি, তা হলে তিনি সবসময় আমাদের সাহায্য করবেন। যেমন, এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদে যেমনটা লেখা রয়েছে, “ধার্ম্মিকের বিপদ অনেক, কিন্তু সেই সকল হইতে সদাপ্রভু তাহাকে উদ্ধার করেন।” (গীত. ৩৪:১৯) তাই আসুন, আমরা আমাদের সমস্যাগুলোর উপর মনোযোগ না দিই। এর পরিবর্তে, এই বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই যে, কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করছেন। তখন আমরাও প্রেরিত পৌলের মতো এই কথা বলতে পারব: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁর মাধ্যমে আমি সব কিছুই করতে পারি।”—ফিলি. ৪:১৩.

গান ৩৮ তিনি সবল করবেন তোমায়

a এই জগতে যেকোনো সময়ে আমাদের সামনে সমস্যা আসতে পারে। কিন্তু, আমরা আস্থা রাখতে পারি, এইরকম সময়েও যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত লোকদের সাহায্য করবেন। অতীতে কীভাবে যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত লোকদের সাহায্য করেছিলেন? আর বর্তমানে কীভাবে তিনি তাঁর লোকদের সাহায্য করছেন? এই প্রবন্ধে আমরা অতীতের লোকদের এবং আমাদের দিনের কিছু ভাই-বোনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দেব। এর মাধ্যমে আমাদের এই নিশ্চয়তা বেড়ে যাবে যে, আমরা যদি যিহোবার উপর আস্থা রাখি, তা হলে তিনি আমাদেরও সাহায্য করবেন।