সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪

‘আত্মা আপনিও সাক্ষ্য দিতেছেন’

‘আত্মা আপনিও সাক্ষ্য দিতেছেন’

“আত্মা আপনিও আমাদের আত্মার সহিত সাক্ষ্য দিতেছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান।”—রোমীয় ৮:১৬.

গান সংখ্যা ১৪৭ এক বিশেষ লোকবৃন্দ

সারাংশ *

যিহোবা পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রায় ১২০ জন শিষ্যের একটা দলের উপর অসাধারণ উপায়ে পবিত্র আত্মা বর্ষণ করেছিলেন (১-২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১-২. তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনে কোন অসাধারণ ঘটনা ঘটে?

যিরূশালেমে সময়টা হল রবিবার সকাল। বছরটা হল ৩৩ খ্রিস্টাব্দ আর দিনটা হল পঞ্চাশত্তমীর দিন। প্রায় ১২০ জন শিষ্যের একটা দল একটা ঘরের উপরের কুঠরিতে একত্রিত হয়েছে। (প্রেরিত ১:১৩-১৫; ২:১) এর কয়েক দিন আগে, যিশু তাদের যিরূশালেমেই থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন কারণ তারা এক বিশেষ উপহার লাভ করবে। (প্রেরিত ১:৪, ৫) এরপর কী হয়?

“হঠাৎ আকাশ হইতে প্রচণ্ড বায়ুর বেগের শব্দবৎ একটা শব্দ আসিল।” পুরো ঘরে সেই শব্দ শোনা যায়। এরপর, “অনেক অগ্নিবৎ জিহ্বা” শিষ্যদের মাথার উপর দেখা যায় এবং তারা সকলে “পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ” হয়। (প্রেরিত ২:২-৪) এই অসাধারণ উপায়ে যিহোবা সেই দলের উপর তাঁর পবিত্র আত্মা বর্ষণ করেন। (প্রেরিত ১:৮) তাদেরই প্রথম পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত করা * হয় এবং স্বর্গে যিশুর সঙ্গে শাসন করার আশা প্রদান করা হয়।

একজন ব্যক্তি যখন অভিষিক্ত হন, তখন কী ঘটে?

৩. কেন পঞ্চাশত্তমীর দিনে একত্রিত সেই শিষ্যদের মনে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহই ছিল না যে, তারা পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছে?

আপনি যদি উপরের কুঠরিতে একত্রিত সেই শিষ্যদের মধ্যে একজন হতেন, তা হলে আপনি সেই দিনটার কথা কখনো ভুলতেন না। আগুনের জিহ্বার মতো কিছু-একটা আপনার মাথার উপর বসেছিল আর আপনি অন্য একটা ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছিলেন! (প্রেরিত ২:৫-১২) আপনার মনে কোনো সন্দেহই থাকত না যে, আপনি পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছেন। কিন্তু, যারা পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হয়, তাদের সবাইকে কি এক অসাধারণ উপায়ে এবং তাদের জীবনের নির্দিষ্ট একটা সময়ে অভিষিক্ত করা হয়? না। কীভাবে আমরা তা জানি?

৪. প্রথম শতাব্দীতে সমস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিই কি তাদের জীবনের নির্দিষ্ট একটা সময়ে অভিষিক্ত হয়েছিল? ব্যাখ্যা করুন।

আসুন আমরা সময়ের বিষয়টা বিবেচনা করি। ৩৩ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রায় ১২০ জন খ্রিস্টানের সেই দলই যে কেবল পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিল, এমন নয়। পরে সেই দিনেই, আরও প্রায় ৩,০০০ জন ব্যক্তি প্রতিজ্ঞাত পবিত্র আত্মা লাভ করেছিল। তারা সেইসময় অভিষিক্ত হয়েছিল, যখন তারা বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। (প্রেরিত ২:৩৭, ৩৮, ৪১) কিন্তু, এর পরবর্তী বছরগুলোতে সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানই তাদের বাপ্তিস্মের সময়ে অভিষিক্ত হয়নি। শমরীয়রা বাপ্তিস্ম নেওয়ার কিছুটা সময় পর অভিষিক্ত হয়েছিল। (প্রেরিত ৮:১৪-১৭) আর কর্ণীলিয় এবং তার বাড়ির লোকেদের ক্ষেত্রে বিষয়টা ব্যতিক্রম ছিল। বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগেই তারা অভিষিক্ত হয়েছিল।—প্রেরিত ১০:৪৪-৪৮.

৫. দ্বিতীয় করিন্থীয় ১:২১, ২২ পদ অনুযায়ী সেইসময় কী ঘটে, যখন একজন ব্যক্তি পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হন?

আসুন আমরা এও বিবেচনা করি, একজন ব্যক্তি যখন পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হন, তখন কী ঘটে। কোনো কোনো অভিষিক্ত ব্যক্তির পক্ষে প্রথমে হয়তো এটা মেনে নেওয়া কঠিন হতে পারে যে, যিহোবা তাদের মনোনীত করেছেন। তারা ভাবতে পারে, ‘কেন ঈশ্বর আমাকে মনোনীত করেছেন?’ অন্যদের প্রতিক্রিয়া হয়তো এইরকম নয়। যা-ই হোক না কেন, সমস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তির প্রতি কী ঘটে, তা প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেন: “[তোমরা] তাঁহাতে বিশ্বাসও করিয়া সেই অঙ্গীকৃত পবিত্র আত্মা দ্বারা মুদ্রাঙ্কিত * হইয়াছ; সেই আত্মা . . . আমাদের দায়াধিকারের বায়না।” (ইফি. ১:১৩, ১৪) তাই, যিহোবা যে এই খ্রিস্টানদের মনোনীত করেছেন, তা তাদের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট করার জন্য তিনি তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করেন। এভাবে পবিত্র আত্মা হল এক “বায়না [প্রতিজ্ঞা],” যা তাদের এই আশ্বাস দেওয়ার জন্য প্রদান করা হয় যে, ভবিষ্যতে তারা স্বর্গে চিরকাল বেঁচে থাকবে, পৃথিবীতে নয়।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১:২১, ২২.

৬. একজন অভিষিক্ত খ্রিস্টানকে তার স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করার জন্য অবশ্যই কী করতে হবে?

একজন খ্রিস্টানকে যদি অভিষিক্ত করা হয়, তা হলে তিনি কি এমনি এমনি তার স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করবেন? না। তিনি এই বিষয়ে নিশ্চিত যে, তাকে স্বর্গে যাওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। কিন্তু, তাকে এই সতর্কবাণী মনে রাখতে হবে: “হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা যে আহূত ও মনোনীত, তাহা নিশ্চয় করিতে অধিক যত্ন কর, কেননা এ সকল করিলে তোমরা কখনও উছোট খাইবে না।” (২ পিতর ১:১০) তাই, যদিও একজন অভিষিক্ত খ্রিস্টানকে স্বর্গে যাওয়ার জন্য মনোনীত বা আহ্বান করা হয়েছে, কিন্তু তিনি কেবল তখনই তার পুরস্কার লাভ করবেন, যদি তিনি বিশ্বস্ত থাকেন।—ফিলি. ৩:১২-১৪; ইব্রীয় ৩:১; প্রকা. ২:১০.

কীভাবে একজন ব্যক্তি জানতে পারেন, তিনি অভিষিক্ত কি না?

৭. কীভাবে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা জানে যে, তারা স্বর্গে যাওয়ার আমন্ত্রণ লাভ করেছে?

কিন্তু, কীভাবে একজন ব্যক্তি জানেন যে, তিনি স্বর্গে যাওয়ার আমন্ত্রণ লাভ করেছেন? এর উত্তর রোমের সেই ব্যক্তিদের উদ্দেশে লেখা পৌলের কথাগুলোর মধ্যে স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়, যারা “পবিত্র” হওয়ার জন্য “আহূত” ছিল বা আহ্বান লাভ করেছিল। তিনি তাদের বলেছিলেন: “তোমরা দাসত্ত্বের আত্মা পাও নাই যে, আবার ভয় করিবে; কিন্তু দত্তকপুত্ত্রতার আত্মা পাইয়াছ, যে আত্মাতে আমরা আব্বা, পিতা, বলিয়া ডাকিয়া উঠি। আত্মা আপনিও আমাদের আত্মার সহিত সাক্ষ্য দিতেছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান।” (রোমীয় ১:৭; ৮:১৫, ১৬) তাই, ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত ব্যক্তিদের কাছে এই বিষয়টা স্পষ্ট করেন যে, তারা স্বর্গে যাওয়ার আমন্ত্রণ লাভ করেছে।—১ থিষল. ২:১২.

৮. কীভাবে ১ যোহন ২:২০, ২৭ পদ দেখায় যে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের অন্য কারো দ্বারা এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন নেই যে, তাদের অভিষিক্ত করা হয়েছে?

যিহোবা সেই ব্যক্তিদের মনে ও হৃদয়ে কোনো সন্দেহ রাখেন না, যারা স্বর্গে যাওয়ার জন্য তাঁর আমন্ত্রণ লাভ করে। (পড়ুন, ১ যোহন ২:২০, ২৭.) অবশ্য, অন্য সকলের মতো অভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরও মণ্ডলীর মাধ্যমে যিহোবার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করা প্রয়োজন। কিন্তু, তারা যে অভিষিক্ত হয়েছেন, সেই বিষয়ে অন্য কারো দ্বারা তাদের নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। যিহোবা নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমী শক্তি অর্থাৎ তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে এই বিষয়টা তাদের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট করেছেন যে, তারা অভিষিক্ত!

তাদের “নূতন জন্ম” হয়

৯. একজন ব্যক্তি যখন অভিষিক্ত হন, তখন ইফিষীয় ১:১৮ পদ অনুযায়ী তার মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়?

ঈশ্বর যখন একজন ব্যক্তিকে অভিষিক্ত করেন, তখন তার প্রতি কী ঘটে, সেই বিষয়টা বর্তমানে ঈশ্বরের বেশিরভাগ দাসের পক্ষে বোঝা কঠিন হতে পারে। এটা স্বাভাবিক কারণ তাদের অভিষিক্ত করা হয়নি। ঈশ্বর মানুষকে স্বর্গে নয় বরং পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করেছিলেন। (আদি. ১:২৮; গীত. ৩৭:২৯) কিন্তু, যিহোবা কিছু ব্যক্তিকে স্বর্গে বাস করার জন্য মনোনীত করেছেন। তাই, তিনি যখন তাদের অভিষিক্ত করেন, তখন তিনি তাদের আশা ও সেইসঙ্গে তাদের চিন্তা করার ধরন পুরোপুরি পরিবর্তন করে দেন, যাতে তারা স্বর্গে জীবন লাভ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।—পড়ুন, ইফিষীয় ১:১৮.

১০. ‘নূতন জন্ম হওয়ার’ অর্থ কী? (এ ছাড়া, পাদটীকা দেখুন।)

১০ খ্রিস্টানরা যখন পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হয়, তখন তাদের “নূতন জন্ম” বা “উপর হইতে” জন্ম হয়। * যিশুও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যে-ব্যক্তি অভিষিক্ত নন, তার কাছে এটা পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা অসম্ভব যে, ‘নূতন জন্ম হওয়ার’ বা “আত্মা হইতে জাত” হওয়ার অনুভূতি কেমন।—যোহন ৩:৩-৮; পাদটীকা।

১১. একজন ব্যক্তি যখন অভিষিক্ত হন, তখন তিনি কীভাবে এক ভিন্ন উপায়ে চিন্তা করতে শুরু করেন, তা ব্যাখ্যা করুন।

১১ খ্রিস্টানরা যখন অভিষিক্ত হয়, তখন কীভাবে তারা এক ভিন্ন উপায়ে চিন্তা করতে শুরু করে? যিহোবা এই খ্রিস্টানদের অভিষিক্ত করার আগে তারা চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশাকে খুবই মূল্যবান হিসেবে দেখত। তারা সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত, যখন যিহোবা সমস্ত দুষ্টতা দূর করবেন এবং পৃথিবীকে পরমদেশ করে তুলবেন। তারা হয়তো তাদের পরিবারের এমন কোনো সদস্য কিংবা বন্ধুকে ফিরে পাওয়ার বিষয়ে কল্পনা করত, যিনি মারা গিয়েছেন। কিন্তু, অভিষিক্ত হওয়ার পর তারা ভিন্ন উপায়ে চিন্তা করতে শুরু করেছে। কেন? বিষয়টা এমন নয় যে, তারা পার্থিব আশার বিষয়ে আর সন্তুষ্ট নয়। কিংবা তারা আবেগগত চাপ বা কষ্টের কারণে তাদের আকাঙ্ক্ষাকে পরিবর্তন করেছে। অথবা তারা হঠাৎ এমনটা মনে করতে শুরু করেনি যে, পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকা তাদের জন্য একঘেয়ে হবে। এর পরিবর্তে, যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে তাদের চিন্তাভাবনার ধরন এবং তারা যে-আশাকে খুবই মূল্যবান হিসেবে দেখে, সেটা পরিবর্তন করেছেন।

১২. প্রথম পিতর ১:৩, ৪ পদ অনুযায়ী, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা তাদের আশা সম্বন্ধে কেমন বোধ করে?

১২ অভিষিক্ত হয়েছেন এমন একজন ব্যক্তি হয়তো এই মূল্যবান সুযোগের ব্যাপারে নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করতে পারেন। কিন্তু, যিহোবা যে তাকে মনোনীত করেছেন, সেই ব্যাপারে তিনি কখনোই সন্দেহ করেন না। তিনি যখন স্বর্গে বাস করার বিষয়ে তার আশা নিয়ে চিন্তা করেন, তখন তার হৃদয় আনন্দে ও কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে।—পড়ুন, ১ পিতর ১:৩, ৪.

১৩. অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা পৃথিবীতে তাদের জীবন সম্বন্ধে কেমন বোধ করে?

১৩ তাহলে, এর অর্থ কী এই যে, অভিষিক্ত ব্যক্তিরা মারা যেতে চায়? প্রেরিত পৌল এই প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি তাদের মানবদেহকে একটা তাঁবুর সঙ্গে তুলনা করে বলেন: “বাস্তবিক এই তাম্বুতে থাকিয়া আমরা ভারাক্রান্ত হওয়াতে আর্ত্তস্বর করিতেছি; কেননা আমরা পরিচ্ছদ-বিহীন হইতে বাঞ্ছা করি না, কিন্তু ইহার উপরে পরিহিত হইতে বাঞ্ছা করি, যেন যাহা মর্ত্ত্য, তাহা জীবনের দ্বারা কবলিত হয়।” (২ করি. ৫:৪) এই খ্রিস্টানরা পৃথিবীতে জীবনের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেনি এবং তারা এমনটা চায় না যে, এই জীবন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাক। বরং তারা জীবন উপভোগ করে এবং প্রতিটা দিনকে তারা তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যিহোবার সেবা করার জন্য ব্যবহার করতে চায়। তবে, তারা যা-ই করুক না কেন, তারা সবসময় ভবিষ্যতের বিষয়ে তাদের অপূর্ব আশা নিয়ে চিন্তা করে।—১ করি. ১৫:৫৩; ২ পিতর ১:৪; ১ যোহন ৩:২, ৩; প্রকা. ২০:৬.

যিহোবা কি আপনাকে অভিষিক্ত করেছেন?

১৪. কী প্রমাণ করে না যে, একজন ব্যক্তি পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছেন?

১৪ আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনাকে পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত করা হয়েছে কি না। যদি এইরকমটা ভেবে থাকেন, তা হলে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো নিয়ে একটু চিন্তা করুন: আপনার কি যিহোবার ইচ্ছা পালন করার ব্যাপারে খুবই জোরালো আকাঙ্ক্ষা রয়েছে? আপনি কি মনে করেন, প্রচার কাজে আপনি অনেক উদ্যোগী? আপনি কি ঈশ্বরের বাক্যের এমন একজন অধ্যবসায়ী ছাত্র, যিনি ‘ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল’ জানতে ভালোবাসেন? (১ করি. ২:১০) আপনার কি মনে হয়, প্রচার কাজে যিহোবা আপনাকে চমৎকার ফলাফল পেতে সাহায্য করেছেন? আপনি কি যিহোবা সম্বন্ধে অন্যদের জানতে সাহায্য করাকে গুরু দায়িত্ব বলে মনে করেন? আপনি কি এই বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছেন যে, যিহোবা আপনাকে আপনার জীবনে অনেক সুনির্দিষ্ট উপায়ে সাহায্য করেছেন? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরে আপনি যদি হ্যাঁ বলেন, তা হলে এটা কি প্রমাণ দেয় যে, আপনি এখন স্বর্গীয় আহ্বান লাভ করেছেন? না, এর অর্থ তা নয়। কেন? কারণ ঈশ্বরের সকল দাসই এইরকম অনুভব করতে পারে, তা তারা অভিষিক্ত হোক বা না-ই হোক। আর যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁর যেকোনো দাসকেই একই ক্ষমতা দিতে পারেন, তা তাদের আশা যেটাই হোক না কেন। আসলে, আপনি পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছেন কি না, সেই ব্যাপারে যদি আপনার সন্দেহ থেকে থাকে, তা হলে এই সন্দেহের অর্থই হল, আপনাকে অভিষিক্ত করা হয়নি। যারা যিহোবার কাছ থেকে আহ্বান লাভ করে, তারা এই ব্যাপারে সন্দেহ করে না যে, তাদের অভিষিক্ত করা হয়েছে, না কি করা হয়নি! তারা তা জানে!

যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে অব্রাহাম, সারা, দায়ূদ ও যোহন বাপ্তাইজককে অপূর্ব বিষয়গুলো করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সেই পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে তাদের স্বর্গে বাস করার আশা প্রদান করেননি (১৫-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৫. কীভাবে আমরা জানি, যারা পবিত্র আত্মা লাভ করেছে, তাদের সবাইকে স্বর্গে যাওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়নি?

১৫ পুরো বাইবেলে এমন অনেক বিশ্বাসী ব্যক্তিদের উদাহরণ রয়েছে, যারা পবিত্র আত্মা লাভ করেছিলেন; তবে তাদের স্বর্গে বাস করার আশা ছিল না। দায়ূদ পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন। (১ শমূ. ১৬:১৩) পবিত্র আত্মা তাকে যিহোবা সম্বন্ধে গভীর বিষয়গুলো বুঝতে সাহায্য করেছিল আর সেইসঙ্গে বাইবেলের কিছু অংশ লেখার জন্য পরিচালনা দিয়েছিল। (মার্ক ১২:৩৬) তা সত্ত্বেও, প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন, দায়ূদ “স্বর্গারোহণ করেন নাই।” (প্রেরিত ২:৩৪) যোহন বাপ্তাইজক “পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ” ছিলেন। (লূক ১:১৩-১৬) যিশু বলেছিলেন, যোহনের চেয়ে মহান কেউ নেই কিন্তু এরপর তিনি বলেছিলেন, যোহন স্বর্গীয় রাজ্যের অংশী হবেন না। (মথি ১১:১০, ১১) যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে এই ব্যক্তিদের অপূর্ব বিষয়গুলো করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সেই পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে তাদের স্বর্গে বাস করার জন্য মনোনীত করেননি। এর অর্থ কী এই যে, তারা সেই ব্যক্তিদের চেয়ে কম বিশ্বস্ত ছিল, যাদের স্বর্গে শাসন করার জন্য মনোনীত করা হয়েছে? না। এর অর্থ হচ্ছে, যিহোবা পরমদেশ পৃথিবীতে তাদের পুনরুত্থিত করবেন।—যোহন ৫:২৮, ২৯; প্রেরিত ২৪:১৫.

১৬. বর্তমানে ঈশ্বরের বেশিরভাগ দাস কোন পুরস্কার লাভ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে?

১৬ বর্তমানে পৃথিবীতে বসবাসরত ঈশ্বরের বেশিরভাগ দাসেরই স্বর্গে বাস করার আশা নেই। অব্রাহাম, সারা, দায়ূদ, যোহন বাপ্তাইজক এবং বাইবেলের সময়ের অন্যান্য অনেক নারী-পুরুষের মতো, তারাও সেই সময় পৃথিবীতে বাস করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে, যখন ঈশ্বরের রাজ্য তাদের উপর শাসন করবে।—ইব্রীয় ১১:১০.

১৭. পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

১৭ যেহেতু বর্তমানে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে এখনও কিছু অভিষিক্ত ব্যক্তি রয়েছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। (প্রকা. ১২:১৭) উদাহরণ স্বরূপ, অভিষিক্ত ব্যক্তিদের নিজেদের সম্বন্ধে কেমন দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত? আপনার মণ্ডলীতে কোনো ব্যক্তি যদি স্মরণার্থ সভায় প্রতীকগুলো গ্রহণ করতে শুরু করেন, তা হলে সেই ব্যক্তির সঙ্গে আপনার কেমন আচরণ করা উচিত? আর যারা বলে যে, তারা অভিষিক্ত, তাদের সংখ্যা যদি বাড়তে থাকে, তা হলে? আপনার কি এই বিষয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত? পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেব।

^ অনু. 5 ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে যিহোবা কিছু খ্রিস্টানকে এক অপূর্ব আশা প্রদান করেছেন আর তা হল স্বর্গে তাঁর পুত্রের সঙ্গে শাসন করার আশা। কিন্তু, কীভাবে এই খ্রিস্টানরা জানে যে, তাদের এই চমৎকার সুযোগের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে? একজন ব্যক্তি যখন এই আমন্ত্রণ লাভ করেন, তখন কী ঘটে? এই প্রবন্ধ ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার একটা প্রবন্ধের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এই প্রবন্ধ উপরে উল্লেখিত আগ্রহজনক প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবে।

^ অনু. 2 এই অভিব্যক্তির অর্থ: পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত করা: যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে একজন ব্যক্তিকে স্বর্গে যিশুর সঙ্গে শাসন করার জন্য বেছে নেন। ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মা দ্বারা সেই ব্যক্তির কাছে ভবিষ্যতের জন্য এক প্রতিজ্ঞা করেন অর্থাৎ তাকে এক “বায়না” প্রদান করেন। (ইফি. ১:১৩, ১৪) এই খ্রিস্টানরা বলতে পারে, পবিত্র আত্মা তাদের কাছে “সাক্ষ্য” দেয় বা এটা স্পষ্ট করে যে, তাদের পুরস্কার স্বর্গে।—রোমীয় ৮:১৬.

^ অনু. 5 এই অভিব্যক্তির অর্থ: মুদ্রাঙ্কন। এই মুদ্রাঙ্কন চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কন নয়, কারণ একজন অভিষিক্ত ব্যক্তি বিশ্বস্তভাবে মারা যাওয়ার অল্পসময় আগে অথবা মহাক্লেশ শুরু হওয়ার অল্পসময় আগে চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কন লাভ করেন।—ইফি. ৪:৩০; প্রকা. ৭:২-৪; ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন” দেখুন।

^ অনু. 10 ‘নূতন জন্ম হওয়ার’ অর্থ কী, সেই বিষয়ে আরও ব্যাখ্যার জন্য ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ৩-১২ পৃষ্ঠা দেখুন।

গান সংখ্যা ৯ আমাদের ঈশ্বর যিহোবার প্রশংসা করো!

^ অনু. 57 ছবি সম্বন্ধে: আমরা আমাদের বিশ্বাসের কারণে কারাগারে থাকি কিংবা আমরা সত্য সম্বন্ধে প্রচার করার এবং শিক্ষা দেওয়ার জন্য স্বাধীন থাকি, যেটাই হোক না কেন, আমরা সেই সময় পৃথিবীতে বাস করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে পারি, যখন ঈশ্বরের রাজ্য আমাদের উপর শাসন করবে।