সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩

আরও মেষের বিরাট জনতা ঈশ্বর ও খ্রিস্টের প্রশংসা করে

আরও মেষের বিরাট জনতা ঈশ্বর ও খ্রিস্টের প্রশংসা করে

“পরিত্রাণ, যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, আমাদের সেই ঈশ্বরের এবং মেষশাবকেরই দান।”—প্রকা. ৭:১০.

গান সংখ্যা ৩০ যিহোবা তাঁর শাসন শুরু করেন

সারাংশ *

১. উনিশ-শো পঁয়ত্রিশ সালের এক সম্মেলনে দেওয়া একটা বক্তৃতা একজন ভাইকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?

উনিশ-শো ছাব্বিশ সালে একজন তরুণ যখন বাপ্তিস্ম নেন, তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর। তার বাবা-মা ছিলেন বাইবেল ছাত্র, যে-নামে যিহোবার সাক্ষিরা সেই সময়ে পরিচিত ছিল। তাদের তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে ছিল, যাদের তারা যিহোবা ঈশ্বরের সেবা করতে এবং যিশু খ্রিস্টকে অনুকরণ করতে শিখিয়েছিলেন। সেই সময়কার সমস্ত বাইবেল ছাত্রের মতোই, এই বিশ্বস্ত তরুণ ভাইও প্রতি বছর প্রভুর সান্ধ্যভোজে রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করতেন। কিন্তু, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তার প্রত্যাশা সেই সময় পুরোপুরি পালটে যায়, যখন তিনি “বিরাট জনতা” শিরোনামের এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা শোনেন। ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে একটা সম্মেলনে ভাই জে. এফ. রাদারফোর্ড এই বক্তৃতা দেন। এই সম্মেলনে কী প্রকাশ করা হয়েছিল?

২. ভাই রাদারফোর্ডের বক্তৃতায় কোন আগ্রহজনক সত্য প্রকাশ করা হয়েছিল?

ভাই রাদারফোর্ড তার বক্তৃতায় সেই ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছিলেন, যাদের নিয়ে প্রকাশিত বাক্য ৭:৯ পদে উল্লেখিত “বিরাট জনতা” সংগঠিত হবে। সেই সময়ের আগে পর্যন্ত বাইবেল ছাত্রেরা মনে করত, এই দল স্বর্গে যাবে ঠিকই কিন্তু তারা যিশুর সঙ্গে রাজত্ব করবে না কারণ তারা অভিষিক্ত ব্যক্তিদের চেয়ে কম বিশ্বস্ত। ভাই রাদারফোর্ড শাস্ত্র ব্যবহার করে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, বিরাট জনতাকে স্বর্গে বাস করার জন্য বেছে নেওয়া হয়নি বরং তারা হল খ্রিস্টের আরও মেষ, * যারা “মহাক্লেশ” পার হয়ে আসবে এবং চিরকাল পৃথিবীতে বাস করবে। (প্রকা. ৭:১৪) যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমার আরও মেষ আছে, যেগুলো এই খোঁয়াড়ের নয়; সেগুলোকেও আমার পরিচালনা দিতে হবে এবং তারা আমার রবে মনোযোগ দেবে আর তখন একটা পাল এবং এক জন মেষপালক থাকবে।” (যোহন ১০:১৬) এই মেষতুল্য ব্যক্তিরা হল যিহোবার অনুগত সাক্ষি, যাদের চিরকাল পরমদেশ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার প্রত্যাশা রয়েছে। (মথি ২৫:৩১-৩৩, ৪৬) আসুন আমরা দেখি, কীভাবে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে এই নতুন বোধগম্যতা যিহোবার লোকদের মধ্যে অনেকের জীবন পালটে দিয়েছিল, যাদের মধ্যে সেই তরুণ ভাইও ছিলেন।—গীত. ৯৭:১১; হিতো. ৪:১৮.

এক নতুন বোধগম্যতা হাজার হাজার ব্যক্তির জীবন পালটে দেয়

৩-৪. উনিশ-শো পঁয়ত্রিশ সালের সম্মেলনে হাজার হাজার ব্যক্তি নিজেদের আশা সম্বন্ধে কী বুঝতে পারে এবং কেন?

সেই সম্মেলনে এক রোমাঞ্চকর মুহূর্ত আসে, যখন বক্তা শ্রোতাদের জিজ্ঞেস করেন: “যাদের চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার প্রত্যাশা রয়েছে, তারা সবাই কি দয়া করে উঠে দাঁড়াবেন?” একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কথা অনুযায়ী, সেখানকার প্রায় ২০,০০০ জন শ্রোতার মধ্যে অর্ধেকের বেশি উঠে দাঁড়ায়। এরপর ভাই রাদারফোর্ড বলেন: “দেখুন! বিরাট জনতা!” তা শুনে সবাই আনন্দে উল্লসিত হয়ে ওঠে। যারা দাঁড়িয়েছিল, তারা বুঝেছিল যে, তাদের স্বর্গীয় জীবনের জন্য বেছে নেওয়া হয়নি। তারা বুঝতে পেরেছিল, ঈশ্বরের পবিত্র শক্তি দ্বারা তাদের অভিষিক্ত করা হয়নি। সম্মেলনের পরের দিন ৮৪০ জন নতুন সাক্ষি বাপ্তিস্ম নেয়, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই আরও মেষের অংশ।

সেই বক্তৃতা শোনার পর, শুরুতে উল্লেখিত ভাই এবং অন্যান্য হাজার হাজার ব্যক্তি উপযুক্তভাবেই প্রভুর সান্ধ্যভোজে রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয়। অনেকের অনুভূতিই সেই নম্র ভাইয়ের মতো ছিল, যিনি বলেছিলেন: “১৯৩৫ সালের স্মরণার্থ সভায় আমি শেষ বারের মতো প্রতীকগুলো গ্রহণ করি। আমি বুঝতে পারি, যিহোবা তাঁর পবিত্র শক্তির মাধ্যমে আমাকে স্বর্গীয় আশা প্রদান করেননি। এর বিপরীতে, আমার পৃথিবীতে বেঁচে থাকার এবং সেটাকে পরমদেশে পরিণত করার কাজে অংশ নেওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।” (রোমীয় ৮:১৬, ১৭; ২ করি. ১:২১, ২২) এরপর থেকে বিরাট জনতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা অভিষিক্ত ব্যক্তিদের অবশিষ্টাংশের * সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

৫. যারা স্মরণার্থ সভার প্রতীকগুলো গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয়, তাদের যিহোবা কোন দৃষ্টিতে দেখেন?

উনিশ-শো পঁয়ত্রিশ সালের পর থেকে যারা স্মরণার্থ সভার প্রতীকগুলো গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয়, তাদের যিহোবা কোন দৃষ্টিতে দেখেন? আর বর্তমানে কোনো বাপ্তাইজিত সাক্ষি যদি আন্তরিকভাবেই প্রভুর সান্ধ্যভোজে রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করেন কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে, তিনি আসলে অভিষিক্ত নন, তা হলে? (১ করি. ১১:২৮) নিজেদের আশা সম্বন্ধে ভুল ধারণা থাকার কারণে কেউ কেউ প্রতীকগুলো গ্রহণ করেছে। কিন্তু, তারা যদি সত্যিই তাদের ভুল স্বীকার করে, প্রতীকগুলো গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয় এবং বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করা চালিয়ে যায়, তা হলে যিহোবা নিশ্চিতভাবেই তাদের আরও মেষের অংশ হিসেবে গণ্য করবেন। যদিও তারা রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করে না, তারপরও তারা স্মরণার্থ সভায় যোগ দেয় কারণ যিহোবা ও যিশু তাদের জন্য যে-মুক্তির মূল্য জুগিয়েছেন, সেটার জন্য তারা খুবই কৃতজ্ঞ।

এক অদ্বিতীয় প্রত্যাশা

৬. যিশু স্বর্গদূতদের কী করার আদেশ দিয়েছেন?

যেহেতু মহাক্লেশ শীঘ্রই ঘটতে চলেছে, তাই আমাদের জন্য এটা বিবেচনা করা উৎসাহজনক হবে যে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সম্বন্ধে এবং আরও মেষের বিরাট জনতা সম্বন্ধে প্রকাশিত বাক্য ৭ অধ্যায় আরও কী জানায়। যিশু স্বর্গদূতদের ধ্বংসের চারটে বায়ু আটকে রাখার আদেশ দেন। তারা যেন ততক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবীর উপর সেই বায়ুগুলো বইতে না দেয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানকে সিলমোহর দিয়ে চিহ্নিত করা হয় অর্থাৎ তারা যিহোবার চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। (প্রকা. ৭:১-৪) খ্রিস্টের অভিষিক্ত ভাইয়েরা তাদের বিশ্বস্ততার পুরস্কার হিসেবে স্বর্গে তাঁর সঙ্গে রাজা ও যাজক হয়। (প্রকা. ২০:৬) যিহোবা, যিশু ও স্বর্গদূতেরা সেই সময় খুবই আনন্দিত হবেন, যখন ১,৪৪,০০০ জন অভিষিক্ত ব্যক্তি তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করবে।

বিরাট জনতা সাদা পোশাক পরে ও সেইসঙ্গে হাতে খেজুর গাছের পাতা ধরে ঈশ্বরের সিংহাসনের উজ্জ্বলতার সামনে এবং মেষশাবকের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৭. প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০ পদে যেমনটা বর্ণনা করা হয়েছে, দর্শনে যোহন কাদের দেখেন আর তারা কী করছে? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

যোহন ১,৪৪,০০০ জন রাজা ও যাজকের বিষয়ে বলার পর এক আগ্রহজনক বিষয় লক্ষ করেন। সেটা কী? তিনি “এক বিরাট জনতা” দেখতে পান, যারা হর্‌মাগিদোন থেকে রক্ষা পায়। প্রথম দলের বিপরীতে, এই দ্বিতীয় দল আরও অনেক বড়ো আর এই দলের লোকদের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০.) তারা “সাদা পোশাক পরে” রয়েছে, যেটা দেখায় যে, তারা শয়তানের জগৎ থেকে নিজেদের ‘পৃথক রেখেছে’ এবং ঈশ্বর ও খ্রিস্টের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছে। (যাকোব ১:২৭) তারা চিৎকার করে বলে যে, যিহোবা এবং ঈশ্বরের মেষশাবক যিশু যে-মুক্তির মূল্য জুগিয়েছেন, সেটার জন্য তারা রক্ষা পেয়েছে। এ ছাড়া, তারা হাতে খেজুর গাছের পাতা ধরে রয়েছে, যেটা দেখায়, তারা যিশুকে যিহোবার অভিষিক্ত রাজা হিসেবে গ্রহণ করেছে।—তুলনা করুন, যোহন ১২:১২, ১৩.

৮. প্রকাশিত বাক্য ৭:১১, ১২ পদ যিহোবার স্বর্গীয় পরিবার সম্বন্ধে আমাদের কী জানায়?

প্রকাশিত বাক্য ৭:১১, ১২ পদ পড়ুন। স্বর্গে সবাই যখন বিরাট জনতাকে দেখতে পায়, তখন কী ঘটে? যোহন দেখেন, যখন যিহোবার স্বর্গীয় পরিবার বিরাট জনতাকে দেখতে পায়, তখন তারা খুবই আনন্দিত হয় এবং ঈশ্বরের প্রশংসা করে। যিহোবার স্বর্গীয় পরিবার সেই সময় এই দর্শনের পরিপূর্ণতা দেখে খুবই আনন্দিত হবে, যখন বিরাট জনতা জীবিত অবস্থায় মহাক্লেশ পার হয়ে আসবে।

৯. প্রকাশিত বাক্য ৭:১৩-১৫ পদ অনুযায়ী, বিরাট জনতা এখন কী করছে?

প্রকাশিত বাক্য ৭:১৩-১৫ পদ পড়ুন। যোহন লেখেন, বিরাট জনতা “মেষশাবকের রক্তে নিজেদের পোশাক ধুয়ে সেগুলোকে সাদা করেছে।” এর অর্থ হল, তাদের এক শুচি বিবেক রয়েছে আর যিহোবা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। (যিশা. ১:১৮) তারা উৎসর্গীকৃত ও বাপ্তাইজিত খ্রিস্টান, যাদের যিশুর বলিদানের উপর দৃঢ়বিশ্বাস রয়েছে এবং যিহোবার সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক রয়েছে। (যোহন ৩:৩৬; ১ পিতর ৩:২১) তাই, ঈশ্বর তাদের বিষয়ে খুবই খুশি আর তারা পৃথিবীতে “দিন-রাত তাঁকে পবিত্র সেবা” প্রদান করতে পারে। তারা উদ্যোগী আর ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচারকাজের এবং শিষ্য তৈরি করার কাজের বেশিরভাগটাই তারা করে থাকে কারণ ঈশ্বরের রাজ্য তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।—মথি ৬:৩৩; ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০.

আরও মেষের আনন্দিত বিরাট জনতা, যারা মহাক্লেশ পার হয়ে এসেছে (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০. বিরাট জনতা কোন বিষয়ে নিশ্চিত আর তারা কোন প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হতে দেখবে?

১০ মহাক্লেশ পার হয়ে আসা বিরাট জনতা নিশ্চিত যে, ঈশ্বর সবসময় তাদের যত্ন নেবেন কারণ “যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, সেই ঈশ্বর তাদের সুরক্ষিত রাখবেন।” আরও মেষ যে-প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছে, সেটা অবশেষে বাস্তবে পরিণত হবে: “[ঈশ্বর] তাদের চোখের সমস্ত জল মুছে দেবেন এবং মৃত্যু আর থাকবে না; শোক বা আর্তনাদ বা ব্যথা আর থাকবে না।”—প্রকা. ২১:৩, ৪.

১১-১২. (ক) প্রকাশিত বাক্য ৭:১৬, ১৭ পদে যেমনটা প্রকাশ করা হয়েছে, বিরাট জনতা ভবিষ্যতে কোন আশীর্বাদগুলো লাভ করবে? (খ) স্মরণার্থ সভায় আরও মেষের ব্যক্তিরা কী করতে পারে এবং কেন?

১১ প্রকাশিত বাক্য ৭:১৬, ১৭ পদ পড়ুন। বর্তমানে, যিহোবার লোকদের মধ্যে কেউ কেউ চরম অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে কিংবা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং যুদ্ধের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ক্ষুধায় কষ্ট পায়। অন্যদের তাদের বিশ্বাসের কারণে জেলে বন্দি করা হয়। তা সত্ত্বেও, বিরাট জনতা এটা জেনে খুবই আনন্দিত যে, এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ধ্বংস থেকে রক্ষা পাওয়ার পর তাদের কাছে সবসময় প্রচুর খাবার এবং যিহোবার কাছ থেকে প্রচুর নির্দেশনা থাকবে। যখন শয়তানের বিধিব্যবস্থার উপর ধ্বংস আনা হবে, তখন বিরাট জনতা যিহোবার ক্রোধের ‘উত্তাপ’ থেকে রক্ষা পাবে, যে-ক্রোধ তিনি সমস্ত জাতির উপর ঢেলে দেবেন। মহাক্লেশ শেষ হওয়ার পর, যিশু পৃথিবীতে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের “জীবনজলের” দিকে নিয়ে যাবেন অর্থাৎ তাদের অনন্তজীবন লাভ করতে সাহায্য করবেন। একটু চিন্তা করুন: বিরাট জনতার এক অদ্বিতীয় প্রত্যাশা রয়েছে। পৃথিবীতে বেঁচে থাকা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির মধ্যে এই ব্যক্তিরা হয়তো কখনো মারা যাবে না!—যোহন ১১:২৬.

১২ আরও মেষের এক অপূর্ব প্রত্যাশা রয়েছে, যেটার জন্য তারা যিহোবা ও যিশুর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ! তাদের স্বর্গীয় জীবনের জন্য বেছে নেওয়া হয়নি কিন্তু যিহোবার কাছে তাদের গুরুত্ব অথবা মূল্য কোনোভাবেই কম নয়। উভয় দলের লোকেরাই ঈশ্বর ও খ্রিস্টের প্রশংসা করতে পারে। একটা যে-উপায়ে তারা তা করে থাকে, তা হল প্রভুর সান্ধ্যভোজে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে।

স্মরণার্থ সভায় পূর্ণহৃদয়ে ঈশ্বর ও খ্রিস্টের প্রশংসা করুন

স্মরণার্থ সভায় যে-রুটি ও দ্রাক্ষারস ঘোরানো হয়, সেটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যিশু আমাদের পরিবর্তে মারা গিয়েছিলেন, যাতে আমরা জীবন লাভ করতে পারি (১৩-১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩-১৪. কেন সবাই স্মরণার্থ সভায় যোগ দেয়?

১৩ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্মরণার্থ সভায় যোগদানকারী ১,০০০ জনের মধ্যে প্রায় এক জন রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করেছে। বেশিরভাগ মণ্ডলীতে এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যিনি স্মরণার্থ সভায় রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করেন। স্মরণার্থ সভায় যোগদানকারী বেশিরভাগ ব্যক্তির পার্থিব আশা রয়েছে। তা হলে, কেন তারা প্রভুর সান্ধ্যভোজে যোগ দেয়? সেই একই কারণে যোগ দেয়, যে-কারণে লোকেরা তাদের কোনো বন্ধুর বিয়েতে যোগ দিয়ে থাকে। তারা যোগ দেয় কারণ যে-দম্পতির বিয়ে হচ্ছে, সেই দম্পতির প্রতি তারা তাদের প্রেম ও সমর্থন প্রকাশ করতে চায়। একইভাবে, আরও মেষের ব্যক্তিরা স্মরণার্থ সভায় যোগ দেয় কারণ তারা খ্রিস্টের প্রতি এবং অভিষিক্ত ব্যক্তিদের প্রতি তাদের প্রেম ও সমর্থন প্রকাশ করতে চায়। এ ছাড়া, আরও মেষ স্মরণার্থ সভায় যোগ দেয় কারণ তারা যিশুর বলিদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চায়, যে-বলিদানের কারণে তাদের পক্ষে পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকা সম্ভবপর হয়েছে।

১৪ আরেকটা যে-গুরুত্বপূর্ণ কারণে আরও মেষ স্মরণার্থ সভায় যোগ দেয়, তা হল যিশুর আজ্ঞার প্রতি বাধ্যতা দেখানোর জন্য। যিশু যখন প্রথম বার তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদের সঙ্গে প্রভুর সান্ধ্যভোজ করেছিলেন, তখন তিনি তাদের বলেছিলেন: “আমার স্মরণে এটা কোরো।” (১ করি. ১১:২৩-২৬) তাই, যতদিন কিছু অভিষিক্ত ব্যক্তি পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে, ততদিন আরও মেষ প্রভুর সান্ধ্যভোজে যোগ দেওয়া চালিয়ে যাবে। এ ছাড়া, তারা সবাইকে তাদের সঙ্গে স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।

১৫. কীভাবে স্মরণার্থ সভায় আমরা ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বর ও খ্রিস্টের প্রশংসা করতে পারি?

১৫ স্মরণার্থ সভায় আমাদের গান ও প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বর ও খ্রিস্টের প্রশংসা করার সুযোগ থাকে। এই বছর যে-বক্তৃতা দেওয়া হবে, সেটার শিরোনাম হল, “ঈশ্বর ও খ্রিস্ট আপনার জন্য যা করেছেন, সেটার প্রতি উপলব্ধি দেখান!” এই বক্তৃতা যিহোবা ও খ্রিস্টের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। প্রতীকগুলো যখন ঘোরানো হবে, তখন সেগুলো শ্রোতাদের মনে করিয়ে দেবে যে, সেগুলো কোন দুটো বিষয়কে চিত্রিত করে—যিশুর দেহ এবং তাঁর রক্ত। আমরা স্মরণ করতে পারব, যিহোবা আমাদের পরিবর্তে তাঁর পুত্রকে মারা যেতে দিয়েছেন, যাতে আমরা জীবন লাভ করতে পারি। (মথি ২০:২৮) আমাদের স্বর্গস্থ পিতাকে এবং তাঁর পুত্রকে ভালোবাসে এমন প্রত্যেক ব্যক্তি স্মরণার্থ সভায় যোগ দিতে চাইবে।

যিহোবার দেওয়া প্রত্যাশার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিন

১৬. কোন কোন ক্ষেত্রে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের এবং আরও মেষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই?

১৬ কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের এবং আরও মেষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এমন নয় যে, যিহোবা একটা দলকে অন্য দলের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। উভয় দলই তাঁর কাছে সমানভাবে মূল্যবান। কারণ অভিষিক্ত ব্যক্তিদের এবং আরও মেষকে ক্রয় করার জন্য তিনি একই মূল্য দিয়েছেন—তাঁর প্রিয় পুত্রের জীবন। এই দুই দলের মধ্যে পার্থক্যটা এই যে, তাদের আশা ভিন্ন। কিন্তু, উভয় দলকেই ঈশ্বরের প্রতি ও খ্রিস্টের প্রতি “সাধু [“অনুগত,” NW]” থাকতে হবে। (গীত. ৩১:২৩) আর মনে রাখবেন, যিহোবা প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁর পবিত্র শক্তি দেন, তা সেই ব্যক্তি অভিষিক্ত কিংবা আরও মেষ, যে-ই হোন না কেন।

১৭. অভিষিক্ত ব্যক্তিদের অবশিষ্টাংশ কোন বিষয়গুলোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছে?

১৭ অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা স্বর্গীয় আশা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। ঈশ্বর তাদের এই আশা প্রদান করেন। তারা তাদের আশা নিয়ে চিন্তা করে এবং প্রার্থনা করে আর তারা স্বর্গে তাদের পুরস্কার লাভ করার জন্য উৎসুক। তারা এমনকী কল্পনাও করতে পারে না, স্বর্গে তাদের দেহ কেমন হবে। (ফিলি. ৩:২০, ২১; ১ যোহন ৩:২) তবুও তারা যিহোবার, যিশুর, স্বর্গদূতদের এবং বাকি অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ও সেইসঙ্গে স্বর্গীয় রাজ্যে তাদের সঙ্গে থাকার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছে।

১৮. আরও মেষ কোন বিষয়গুলোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছে?

১৮ আরও মেষ চিরকাল পরমদেশ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছে। এটা সমস্ত মানুষের এক স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা। (উপ. ৩:১১) তারা সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছে, যখন তারা পুরো গ্রহকে পরমদেশে পরিণত করায় সাহায্য করবে। তারা সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে, যখন তারা বাড়ি নির্মাণ করবে, বাগান করবে এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে নিখুঁত স্বাস্থ্য উপভোগ করবে। (যিশা. ৬৫:২১-২৩) তারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়, যেমন পাহাড়পর্বতে, বনজঙ্গলে ও সমুদ্রে ভ্রমণ করার এবং যিহোবার সৃষ্টি সম্বন্ধে ভালোভাবে জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তারা এটা জেনে খুবই রোমাঞ্চিত যে, যিহোবার সঙ্গে তাদের বন্ধন আরও দৃঢ় হবে আর তারা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হবে।

১৯. স্মরণার্থ সভা আমাদের প্রত্যেককে কোন সুযোগ প্রদান করে আর এই বছর স্মরণার্থ সভা কোন তারিখে হবে?

১৯ যিহোবা তাঁর প্রত্যেক উৎসর্গীকৃত দাসকে ভবিষ্যতের জন্য এক চমৎকার আশা প্রদান করেছেন। (যির. ২৯:১১) খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ সভা আমাদের প্রত্যেকের জন্য এক অপূর্ব সুযোগ প্রদান করে। সেটা কী? আমরা যাতে অনন্তজীবন উপভোগ করতে পারি, সেইজন্য ঈশ্বর ও খ্রিস্ট যে-মুক্তির মূল্য জুগিয়েছেন, সেটার জন্য আমরা তাঁদের প্রশংসা করতে পারি। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, স্মরণার্থ সভা হল প্রকৃত খ্রিস্টানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্য, যেটাতে তারা একসঙ্গে মিলিত হয়। এটা ২০২১ সালের ২৭ মার্চ, শনিবার সূর্যাস্তের পর অনুষ্ঠিত হবে। এই বছর অনেকে স্বাধীনভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় যোগ দিতে পারবে। অন্যেরা বিরোধিতা সত্ত্বেও যোগ দেবে। আবার কেউ কেউ জেলে বন্দি অবস্থায় এই স্মরণার্থ সভা করবে। যা-ই হোক না কেন, আমরা প্রত্যেকে যেন স্মরণে রাখি যে, যিহোবা, যিশু, স্বর্গদূতেরা এবং পুনরুত্থিত অভিষিক্ত ব্যক্তিরা আমাদের দেখছে। প্রতিটা মণ্ডলী ও দল এবং ব্যক্তি-বিশেষেরা যেন খুব ভালোভাবে স্মরণার্থ সভা করতে সক্ষম হয়!

গান সংখ্যা ৪৯ যিহোবা মোদের আশ্রয়

^ অনু. 5 ২০২১ সালের ২৭ মার্চ যিহোবার সাক্ষিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক দিন। সেই দিন সন্ধ্যায় আমরা খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ সভায় যোগ দেব। যারা স্মরণার্থ সভায় যোগ দেবে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সেই দলের অংশ, যাদের যিশু “আরও মেষ” বলে উল্লেখ করেছিলেন। এই দল সম্বন্ধে ১৯৩৫ সালে কোন আগ্রহজনক সত্য প্রকাশ করা হয়েছিল? মহাক্লেশের পর আরও মেষের কোন রোমাঞ্চকর প্রত্যাশা বাস্তবে পরিণত হবে? আরও মেষ যখন স্মরণার্থ সভায় যোগ দেয়, তখন কীভাবে তারা ঈশ্বর ও খ্রিস্টের প্রশংসা করতে পারে?

^ অনু. 2 এই অভিব্যক্তির অর্থ: আরও মেষের অন্তর্ভুক্ত হল সেই ব্যক্তিরা, যাদের শেষকালজুড়ে একত্রিত করা হয়েছে। তারা খ্রিস্টকে অনুসরণ করে আর তাদের চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার প্রত্যাশা রয়েছে। বিরাট জনতা হল আরও মেষের সেই ব্যক্তিরা, যারা মহাক্লেশের সময় খ্রিস্ট যখন মানবজাতির বিচার করবেন, তখন বেঁচে থাকবে আর তারা মহাক্লেশ পার হয়ে আসবে।

^ অনু. 4 এই অভিব্যক্তির অর্থ: “অবশিষ্টাংশ” শব্দটা অবশিষ্ট অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নির্দেশ করে, যারা এখনও পৃথিবীতে বেঁচে আছে এবং যারা প্রভুর সান্ধ্যভোজে রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করে থাকে।