অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১
শান্তভাব বজায় রাখুন এবং যিহোবার উপর নির্ভর করুন
২০২১ সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ: “সুস্থির থাকিয়া বিশ্বাস করিলে তোমাদের পরাক্রম হইবে।”—যিশা. ৩০:১৫.
গান সংখ্যা ২৩ যিহোবা, মোদের বল
সারাংশ *
১. আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো রাজা দায়ূদের মতো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে?
আমরা সবাই এক শান্তিপূর্ণ জীবন চাই। আমরা কেউই উদ্বিগ্ন হতে চাই না। কিন্তু, কখনো কখনো আমাদের হয়তো ভাবনা বা উদ্বিগ্নতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়। এই কারণে, যিহোবার দাসদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো যিহোবাকে রাজা দায়ূদের মতো একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে: “কত কাল আমি প্রাণের মধ্যে ভাবনা করিব, চিত্তের মধ্যে বিষাদকে দিনমানে রাখিব?”—গীত. ১৩:২.
২. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
২ যদিও আমরা উদ্বিগ্নতা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারি না, তবে তা কমানোর জন্য আমরা অনেক কিছু করতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা প্রথমে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলোর কারণে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারি। এরপর আমরা ছয়টা ব্যাবহারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো আমাদের সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় শান্তভাব বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে।
কোন কোন কারণে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারি?
৩. আমরা কোন কোন চাপের মুখোমুখি হই এবং সেগুলোর উপর আমাদের কতটা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে?
৩ যে-কারণগুলোর জন্য আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারি, সেগুলোর কোনো কোনোটার উপর আমাদের হয়তো সামান্য নিয়ন্ত্রণ থাকে অথবা কোনো নিয়ন্ত্রণই থাকে না। উদাহরণ স্বরূপ, প্রতি বছর খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের মূল্য কতটা বৃদ্ধি পাবে, তা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। এ ছাড়া, আমরা আমাদের সেইসমস্ত সহকর্মী অথবা সহপাঠীর মনোভাবকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, যারা হয়তো আমাদের অসৎ হওয়ার বা অনৈতিক কাজ করার জন্য প্রলোভনে ফেলার চেষ্টা করে। আর আমাদের এলাকায় যে-অপরাধগুলো ঘটে থাকে, সেগুলো আমরা থামাতে পারি না। আমরা এই সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই কারণ আমরা এমন একটা জগতে বাস করি, যেখানে বেশিরভাগ লোক বাইবেলের নীতির উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয় না। এ ছাড়া, শয়তান অর্থাৎ এই জগতের ঈশ্বর জানে যে, কোনো কোনো লোক ‘এই বিধিব্যবস্থার মথি ১৩:২২; ১ যোহন ৫:১৯) এতে কোনো সন্দেহ নেই, এই জগৎ চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে পরিপূর্ণ!
উদ্বিগ্নতার’ কারণে যিহোবার সেবা করবে না। (৪. আমরা যদি আমাদের সমস্যাগুলোর কারণে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি, তা হলে কী হতে পারে?
৪ আমরা সমস্যাগুলোর কারণে এতটাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারি যে, আমরা আর অন্য কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করতে পারি না। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা হয়তো এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারি, আমাদের প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য আমরা হয়তো যথেষ্ট টাকাপয়সা উপার্জন করতে পারব না অথবা আমরা অসুস্থ হয়ে গেলে কাজে যেতে পারব না, এমনকী আমাদের চাকরি হারিয়ে ফেলব। এ ছাড়া, আমরা হয়তো এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারি যে, আমাদের সামনে যখন ঈশ্বরের আইন ভাঙার জন্য প্রলোভন আসবে, তখন আমরা অবিশ্বস্ত হয়ে পড়ব। খুব শীঘ্রই শয়তান তার নিয়ন্ত্রণে থাকা লোকদের পরিচালিত করবে যেন তারা ঈশ্বরের লোকদের আক্রমণ করে। তাই, আমরা হয়তো এই ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারি, সেই আক্রমণের সময় আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাব। আমরা হয়তো ভাবতে পারি, ‘এই ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন হওয়া কি আমার পক্ষে ভুল?’
৫. যিশু সেইসময় কি বুঝিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “উদ্বিগ্ন হোয়ো না”?
৫ আমরা জানি যে, যিশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “উদ্বিগ্ন হোয়ো না।” (মথি ৬:২৫) যিশু কি এটা বুঝিয়েছিলেন, কোনো কিছু নিয়েই আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়? কখনোই না! মনে রাখবেন, অতীতে যিহোবার কিছু অনুগত দাস উদ্বিগ্নতার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও, যিহোবা তাদের উপর সন্তুষ্ট ছিলেন। * (১ রাজা. ১৯:৪; গীত. ৬:৩) যিশু আসলে আমাদের সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। তিনি চাননি, আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পাওয়ার ব্যাপারে এতটাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি যে, এর ফলে আমরা যিহোবার সেবা করাকে আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করা বাদ দিই। তাহলে, আমরা সেইসময় কি করতে পারি, যখন আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি?—“ যেভাবে এটা করা যায়” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
ছয়টা বিষয় আমাদের শান্তভাব বজায় রাখতে সাহায্য করবে
৬. ফিলিপীয় ৪:৬, ৭ পদ অনুযায়ী কীভাবে আমরা শান্তি লাভ করতে পারি?
৬ (১) বার বার প্রার্থনা করুন। যে-খ্রিস্টানেরা চাপের মধ্যে রয়েছে, তারা যখন আন্তরিক প্রার্থনায় যিহোবার কাছে সাহায্য চায়, তখন তারা স্বস্তি লাভ করে। (১ পিতর ৫:৭) আপনার প্রার্থনার উত্তর হিসেবে আপনি “ঈশ্বরের সেই শান্তি” লাভ করতে পারেন, “যে-শান্তির কথা মানুষ চিন্তাও করতে পারে না।” (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.) যিহোবা তাঁর পরাক্রমী পবিত্র শক্তির মাধ্যমে আপনাকে সেই শান্তি প্রদান করবেন।—গালা. ৫:২২.
৭. আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন আমাদের কী মনে রাখা উচিত?
৭ আপনি যখন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন, তখন হৃদয় উজাড় করে তাঁর সঙ্গে কথা বলুন। আপনার সমস্যা সম্বন্ধে নির্দিষ্টভাবে তাঁকে জানান এবং সেই সম্বন্ধে আপনি কেমন অনুভব করেন, তা তাঁর কাছে খুলে বলুন। যদি সেই সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান থাকে, তা হলে সেটা খুঁজে বের করার জন্য তাঁর কাছে প্রজ্ঞা চান এবং সেই অনুযায়ী কাজ করার জন্য তাঁর কাছে শক্তি চান। যদি সেই সমস্যা সমাধান করার কোনো উপায় আপনার হাতে না থাকে, তা হলে বিষয়টা নিয়ে যাতে আপনি অযথা উদ্বিগ্ন হয়ে না পড়েন, সেইজন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চান। আপনি যখন নির্দিষ্টভাবে প্রার্থনা করবেন, তখন কীভাবে যিহোবা সেগুলোর উত্তর দেন, তা আপনি আরও স্পষ্টভাবে দেখত পাবেন। প্রার্থনা করার পর পরই যদি উত্তর না পান, তা হলে হাল ছেড়ে দেবেন না। যিহোবা চান যেন আপনি কেবল নির্দিষ্টভাবেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে বার বার প্রার্থনা করেন।—লূক ১১:৮-১০.
৮. আমাদের প্রার্থনায় কী অন্তর্ভুক্ত করা উচিত?
৮ আপনি যখন প্রার্থনায় যিহোবার উপর আপনার উদ্বিগ্নতার ভার অর্পণ করেন, তখন ধন্যবাদমূলক বাক্য অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না। আমরা যে-সমস্ত আশীর্বাদ লাভ করেছি, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করা আমাদের জন্য ভালো ২ বংশা. ১৮:৩১; রোমীয় ৮:২৬.
আর তা এমনকী সেইসময়েও, যখন আমাদের পরিস্থিতি বিশেষভাবে কঠিন থাকে। কখনো কখনো আপনি যদি আপনার চরম অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য সঠিক শব্দ খুঁজে না পান, তা হলে মনে রাখবেন, যিহোবা আমাদের এইরকম সাধারণ প্রার্থনারও উত্তর দেন, ‘দয়া করে সাহায্য করো!’—৯. কীভাবে প্রকৃত নিরাপত্তা লাভ করা যেতে পারে?
৯ (২) যিহোবার প্রজ্ঞার উপর নির্ভর করুন, আপনার নিজের প্রজ্ঞার উপর নয়। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে, যিহূদার লোকেরা অশূরীয়দের হুমকির মুখোমুখি হয়েছিল। যিহূদার লোকেরা চায়নি যে, অশূরীয়েরা তাদের পরাজিত করুক আর তাই তারা মিশরীয়দের কাছে সাহায্য চেয়েছিল। (যিশা. ৩০:১, ২) যিহোবা তাদের সাবধান করে দিয়েছিলেন, তারা যদি মিশরীয়দের উপর নির্ভর করে, তা হলে পরিশেষে তাদের উপর বিপর্যয় আসবে। (যিশা. ৩০:৭, ১২, ১৩) যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা লোকদের বলেছিলেন যে, কীভাবে তারা প্রকৃত নিরাপত্তা লাভ করতে পারে। ভাববাদী বলেছিলেন: “সুস্থির থাকিয়া বিশ্বাস করিলে তোমাদের পরাক্রম হইবে।”—যিশা. ৩০:১৫খ.
১০. এমন কিছু পরিস্থিতি কী, যে-পরিস্থিতিগুলোতে আমরা যিহোবার উপর আমাদের নির্ভরতা দেখাতে পারি?
১০ কীভাবে আমরা যিহোবার উপর আমাদের বিশ্বাস বা নির্ভরতা দেখাতে পারি? কয়েকটা উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করুন। ধরুন, আপনাকে খুবই ভালো বেতনের একটা চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেটার পিছনে আপনাকে প্রচুর সময় দিতে হবে এবং যেটার কারণে আপনি এখন যিহোবার সেবায় যতটা সময় ব্যয় করছেন, ততটা করতে পারবেন না। অথবা ধরুন, কাজের জায়গায় কেউ আপনার প্রতি রোমান্টিক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, কিন্তু সেই ব্যক্তি ঈশ্বরের বাপ্তাইজিত দাস নন। কিংবা কল্পনা করুন, পরিবারের কোনো প্রিয় সদস্য আপনাকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন: “হয় আমাকে, না-হয় তোমার ঈশ্বরকে বেছে নাও।” উল্লেখিত প্রতিটা পরিস্থিতিতে, আপনাকে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কিন্তু প্রতিটা পরিস্থিতিতে যিহোবা আপনাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন। (মথি ৬:৩৩; ১০:৩৭; ১ করি. ৭:৩৯) এখন প্রশ্ন হল, আপনি কি যিহোবার উপর নির্ভর করবেন এবং তাঁর নির্দেশনার প্রতি বাধ্য হবেন?
১১. বিরোধিতার মুখে শান্তভাব বজায় রাখার জন্য আমরা বাইবেলের কোন বিবরণগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করতে পারি?
১১ (৩) উত্তম ও মন্দ উদাহরণগুলো থেকে শিখুন। বাইবেলে এমন অনেক বিবরণ রয়েছে, যেগুলো সুস্থির থাকার বা শান্তভাব বজায় রাখার এবং যিহোবার উপর নির্ভর করার মূল্য সম্বন্ধে তুলে ধরে। এই বিবরণগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করার সময় লক্ষ করুন, কী ঈশ্বরের দাসদের চরম বিরোধিতার মুখে শান্তভাব বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, যিহুদি সর্বোচ্চ আদালত যখন প্রেরিতদের প্রচার বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিল, তখন তারা ভয় পেয়ে যাননি। এর পরিবর্তে, তারা সাহসের সঙ্গে বলেছিলেন: “মানুষের প্রতি নয়, বরং ঈশ্বরের প্রতিই আমাদের বাধ্য হতে হবে।” (প্রেরিত ৫:২৯) এমনকী প্রহার সহ্য করার পরও প্রেরিতেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েননি। কেন? কারণ তারা জানতেন যে, যিহোবা তাদের পক্ষে রয়েছেন এবং তিনি তাদের উপর সন্তুষ্ট আছেন। তাই, তারা সুসমাচার প্রচার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। (প্রেরিত ৫:৪০-৪২) একইভাবে, শিষ্য স্তিফান যখন মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন তিনি এতটাই শান্তভাব বজায় রেখেছিলেন যে, তার মুখ “স্বর্গদূতের মতো শান্ত” দেখাচ্ছিল। (প্রেরিত ৬:১২-১৫) কেন? কারণ তিনি এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা তাঁর উপর সন্তুষ্ট আছেন।
১২. প্রথম পিতর ৩:১৪ এবং ৪:১৪ পদ অনুযায়ী কেন আমরা সেইসময় সুখী হতে পারি, যখন আমাদের উপর তাড়না আসে?
১২ প্রেরিতেরা এই বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছিলেন যে, যিহোবা তাদের সঙ্গে আছেন। তিনি তাদের অলৌকিক কাজ করার শক্তি দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ৫:১২-১৬; ৬:৮) বর্তমানে, যিহোবা আমাদের অলৌকিক কাজ করার শক্তি দেন না। তবে, তাঁর বাক্যের মাধ্যমে যিহোবা আমাদের প্রেমের সঙ্গে এই আশ্বাস দেন যে, আমরা যখন ধার্মিক হওয়ার কারণে কষ্ট ভোগ করি, তখন তিনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট হন আর তাঁর পবিত্র শক্তি আমাদের সঙ্গে রয়েছে। (পড়ুন, ১ পিতর ৩:১৪; ৪:১৪.) তাই, ভবিষ্যতে আমাদের উপর যদি তাড়না আসে, তা হলে আমরা কী করব, সেটা নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, আমাদের এই আস্থাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমাদের সর্বোত্তমটা করা উচিত যে, যিহোবা আমাদের সমর্থন জোগাতে এবং রক্ষা করতে পারেন। প্রথম শতাব্দীর সেই খ্রিস্টানদের মতো আমাদের যিশুর এই প্রতিজ্ঞার উপর নির্ভর করতে হবে: “আমি তোমাদের এমন কথা ও প্রজ্ঞা জুগিয়ে দেব যে, তোমাদের সমস্ত বিরোধী একত্রে মিলেও তা প্রতিরোধ করতে অথবা খণ্ডন করতে পারবে না।” আমাদের এই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে: “তোমরা শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরার দ্বারা তোমাদের জীবন রক্ষা করবে।” (লূক ২১:১২-১৯) আর কখনো ভুলে যাবেন না, যিহোবা তাঁর সেইসমস্ত দাসের খুঁটিনাটি সমস্ত কিছু স্মরণে রাখেন, যারা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থেকে মারা গিয়েছে। আর তিনি সেগুলো মনে রেখে তাদের পুনরুত্থিত করবেন।
১৩. কীভাবে আমরা সেই ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা নিয়ে অধ্যয়ন করা থেকে উপকার লাভ করতে পারি, যারা শান্তভাব বজায় রাখতে এবং যিহোবার উপর নির্ভর করতে ব্যর্থ হয়েছিল?
১৩ এ ছাড়া, আমরা সেই ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা থেকেও শিখতে পারি, যারা শান্তভাব বজায় রাখতে এবং যিহোবার উপর নির্ভর করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাদের মন্দ উদাহরণ নিয়ে অধ্যয়ন করা আমাদের তাদের মতো একইরকম ভুল করা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আসা যখন যিহূদার রাজা হয়েছিলেন এবং এক বিশাল সেনাবাহিনী তাকে আক্রমণ করতে এসেছিল, তখন তিনি যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন আর এতে যিহোবা তাকে জয় লাভ করতে সাহায্য করেছিলেন। (২ বংশা. ১৪:৯-১২) পরবর্তী সময়ে, ইজরায়েলের রাজা বাশা খুবই অল্প সেনাবাহিনী নিয়ে আসাকে আক্রমণ করতে এসেছিলেন। কিন্তু, সেই সময় আসা রক্ষার জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করেননি, যেমনটা তিনি অতীতে করেছিলেন। এর পরিবর্তে, তিনি সাহায্যের জন্য অরামীয়দের অর্থ প্রদান করেছিলেন। (২ বংশা. ১৬:১-৩) আর তার জীবনের শেষের দিকে, যখন তিনি গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়েছিলেন, তখন তিনি সাহায্যের জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করেননি।—২ বংশা. ১৬:১২.
১৪. আসার ভুল থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৪ প্রথমদিকে, আসা যখন বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন তিনি যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে তিনি সাহায্যের জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি নিজেই নিজের সমস্যাগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করেছিলেন। শুরুতে, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সাহায্যের জন্য অরামীয়দের উপর নির্ভর করার বিষয়ে আসার পরিকল্পনা হয়তো অনেক ব্যাবহারিক বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু, তার সাফল্য বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। যিহোবা তাকে একজন ভাববাদীর মাধ্যমে বলেছিলেন: “আপনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপরে নির্ভর না করিয়া অরাম-রাজের উপরে নির্ভর করিলেন, এই জন্য অরাম-রাজের সৈন্য আপনার হস্ত এড়াইল।” (২ বংশা. ১৬:৭) আমাদের এইরকম চিন্তা করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যে, যিহোবার বাক্যের মাধ্যমে তাঁর কাছে নির্দেশনা না চেয়ে আমরা নিজেরাই নিজেদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারব। এমনকী আমাদের যখন দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখনও আমাদের শান্তভাব বজায় রেখে যিহোবার উপর নির্ভর করা উচিত আর তিনি আমাদের সফল হতে সাহায্য করবেন।
১৫. বাইবেল পাঠ করার সময় আমরা হয়তো কী করতে পারি?
১৫ (৪) বাইবেলের পদ মুখস্থ করুন। আপনি যখন বাইবেলের সেই পদগুলো খুঁজে পান, যেগুলো দেখায় যে, শান্তভাব বজায় রাখার এবং যিহোবার উপর নির্ভর করার মাধ্যমে পরাক্রম বা শক্তি লাভ করা যায়, তখন সেগুলো মুখস্থ করার চেষ্টা করুন। সেগুলো জোরে জোরে পড়া অথবা লিখে রাখা এবং মাঝে মাঝে দেখা হয়তো আপনার জন্য সাহায্যকারী হতে পারে। যিহোশূয়কে আদেশ দেওয়া হয়েছিল, যেন তিনি বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করার জন্য নিয়মিতভাবে নীচুস্বরে ব্যবস্থা পাঠ করেন এবং তা নিয়ে ধ্যান করেন। এ ছাড়া, ব্যবস্থা পাঠ করা তাকে ভয় না পেয়ে বরং ঈশ্বরের লোকদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সাহসী হতে সাহায্য করবে। (যিহো. ১:৮, ৯) ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া অনেক পদ আপনাকে এমন পরিস্থিতিগুলোতে মনের ও হৃদয়ের শান্তি দিতে পারে, যে-পরিস্থিতিগুলোতে সাধারণত আপনি উদ্বিগ্ন বা ভীত হয়ে পড়েন।—গীত. ২৭:১-৩; হিতো. ৩:২৫, ২৬.
১৬. শান্তভাব বজায় রাখার এবং তাঁর উপর নির্ভর করার জন্য কীভাবে যিহোবা মণ্ডলীকে ব্যবহার করেন?
১৬ (৫) ঈশ্বরের লোকদের সঙ্গে মেলামেশা করুন। শান্তভাব বজায় রাখার এবং তাঁর উপর নির্ভর করার জন্য ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এ ছাড়া, মণ্ডলীতে আমরা যখন ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছে আমাদের অনুভূতি প্রকাশ করি, তখন অনেক উৎসাহ লাভ করি। একজন বন্ধুর “উত্তম বাক্য” আমাদের উদ্বিগ্নতা কমাতে সাহায্য করে।—হিতো. ১২:২৫.
যিহোবা আমাদের ভাই-বোনদের ব্যবহার করেন। সভাগুলোতে আমরা বক্তৃতা, শ্রোতাদের মন্তব্য এবং আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে উৎসাহমূলক কথাবার্তা থেকে উপকার লাভ করি। (১৭. ইব্রীয় ৬:১৯ পদ অনুযায়ী, কীভাবে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমাদের শান্তভাব বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে?
১৭ (৬) আপনার প্রত্যাশাকে দৃঢ় রাখুন। ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা “আমাদের জীবনের জন্য এক নোঙরের মতো” কাজ করে, বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতি অথবা উদ্বিগ্নতা সত্ত্বেও আমাদের দৃঢ় থাকতে সাহায্য করে। (পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১৯.) এমন এক ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যিহোবার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ধ্যান করুন, যখন নেতিবাচক চিন্তাভাবনা আর থাকবে না। (যিশা. ৬৫:১৭) নিজেকে শান্তিপূর্ণ নতুন জগতে কল্পনা করুন, যেখানে দুর্দশামূলক পরিস্থিতিগুলো আর থাকবে না। (মীখা ৪:৪) এ ছাড়া, অন্যদের কাছে আপনার প্রত্যাশা নিয়ে কথা বলার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রত্যাশাকে দৃঢ় করতে পারবেন। প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজ করার জন্য আপনার যথাসাধ্য করুন। আপনি যদি তা করেন, তা হলে আপনার “প্রত্যাশা শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত থাকবে।”—ইব্রীয় ৬:১১.
১৮. ভবিষ্যতে আমরা কোন সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে পারি আর কীভাবে আমরা সেগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি?
১৮ যেহেতু আমরা এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময়ে বাস করছি, তাই আমরা আরও বেশি সমস্যার মুখোমুখি হব, যেগুলোর কারণে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারি। ২০২১ সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ আমাদের সেই সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার এবং শান্তভাব বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে, তবে আমাদের নিজেদের শক্তিতে নয় বরং যিহোবার উপর আমাদের নির্ভরতার মাধ্যমে। আসন্ন এই বছরে, আসুন আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে দেখাই যে, যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার উপর আমাদের বিশ্বাস রয়েছে: “সুস্থির থাকিয়া বিশ্বাস করিলে তোমাদের পরাক্রম হইবে।”—যিশা. ৩০:১৫.
গান সংখ্যা ৪৯ যিহোবা মোদের আশ্রয়
^ অনু. 5 ২০২১ সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ, এখন ও ভবিষ্যতে বিভিন্ন চাপপূর্ণ পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় যিহোবার উপর আমাদের নির্ভরতার গুরুত্ব সম্বন্ধে তুলে ধরে। এই প্রবন্ধে আমরা এমন কিছু ব্যাবহারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো আমরা আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদে পাওয়া পরামর্শ কাজে লাগানোর সময় করতে পারি।
^ অনু. 5 কয়েক জন বিশ্বস্ত ভাই ও বোন এমন অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করেন, যেগুলো সেইসমস্ত স্বাভাবিক উদ্বিগ্নতার চেয়ে আরও চরম, যেগুলোর বিষয়ে যিশু আলোচনা করছিলেন। তাদের উদ্বিগ্নতা অথবা আতঙ্ক হল এক গুরুতর অসুস্থতা।
^ অনু. 63 ছবি সম্বন্ধে: (১) একজন বোন দিনের বিভিন্ন সময় তার উদ্বিগ্নতাগুলো নিয়ে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করছেন।
^ অনু. 65 ছবি সম্বন্ধে: (২) কাজের জায়গায় দুপুরের বিরতির সময় তিনি প্রজ্ঞার জন্য ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করছেন।
^ অনু. 67 ছবি সম্বন্ধে: (৩) তিনি বাইবেলে পাওয়া উত্তম উদাহরণ এবং মন্দ উদাহরণগুলো নিয়ে ধ্যান করছেন।
^ অনু. 69 ছবি সম্বন্ধে: (৪) তিনি তার রেফ্রিজারেটারে এক উৎসাহজনক শাস্ত্রপদ লাগিয়ে রাখছেন, যেটা তিনি মুখস্থ করতে চান।
^ অনু. 71 ছবি সম্বন্ধে: (৫) পরিচর্যার সময় তিনি ভালো বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা উপভোগ করছেন।
^ অনু. 73 ছবি সম্বন্ধে: (৬) ভবিষ্যতের বিষয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে তিনি তারা প্রত্যাশাকে দৃঢ় করছেন।