সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫

“তোমাদের সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করো”

“তোমাদের সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করো”

“তোমরা কীভাবে চলছ, তা ভালোভাবে লক্ষ করো। মূর্খ ব্যক্তির মতো না চলে বরং বিজ্ঞ ব্যক্তির মতো চলো, তোমাদের সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করো।”—ইফি. ৫:১৫, ১৬.

গান ৪৯ যিহোবা মোদের আশ্রয়

সারাংশ *

১. যিহোবার সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য আমরা কী করি?

 আমরা যখন আমাদের কাছের মানুষের সঙ্গে সময় কাটাই, তখন আমাদের খুব ভালো লাগে। যেমন, স্বামী-স্ত্রীদের একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাতে, তরুণ-তরুণীদের তাদের বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যেতে এবং আমাদের সবারই মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে মেলামেশা করতে ভালো লাগে। তবে, আমরা যখন যিহোবার সঙ্গে সময় কাটাই, তখন আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। আমরা তাঁর কাছে প্রার্থনা করার, তাঁর বাক্য বাইবেল পড়ার এবং তাঁর উদ্দেশ্য ও গুণাবলি নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে তা করি। সত্যিই, যিহোবার সঙ্গে সময় কাটানো আমাদের জন্য কতই-না বড়ো এক সুযোগ!—গীত. ১৩৯:১৭.

২. যিহোবার জন্য সময় বের করা কেন কঠিন হতে পারে?

কখনো কখনো যিহোবার জন্য সময় বের করা আমাদের পক্ষে কঠিন হতে পারে। আমাদের প্রতিদিন অনেক কাজ করতে হয়, যেমন আমাদের কাজের জায়গায় যেতে হয়, পরিবারের দেখাশোনা করতে হয় এবং আরও অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতে হয়। এগুলোর কারণে আমাদের মনে হতে পারে যে, প্রার্থনা করা, অধ্যয়ন করা এবং ধ্যান করার জন্য আমাদের হাতে একদমই সময় নেই।

৩. আর কোন কারণে যিহোবার জন্য সময় বের করা কঠিন হতে পারে?

আরও কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো করা ভুল নয়। কিন্তু, আমরা যদি সেগুলোর পিছনে অতিরিক্ত সময় দিই, তা হলে আমরা যিহোবার জন্য সময় বের করতে পারব না। যেমন, বিনোদন। এটা ঠিক যে, বিশ্রাম নেওয়া এবং গঠনমূলক বিনোদন উপভোগ করা প্রয়োজন। তবে, আমরা যদি এগুলোর পিছনে অতিরিক্ত সময় দিই, তা হলে আমাদের কাছে যিহোবার জন্য সময় থাকবে না। আমাদের মনে রাখা উচিত, বিনোদনই সব কিছু নয়।—হিতো. ২৫:২৭; ১ তীম. ৪:৮.

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী জানব?

এই প্রবন্ধে আমরা জানব, কেন আমাদের এটা নির্ধারণ করতে হবে যে, কোন কাজগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এও জানব, যিহোবার সঙ্গে ভালোভাবে সময় কাটানোর জন্য আমাদের কী করতে হবে এবং তা করলে আমরা কোন কোন উপকার লাভ করব।

সঠিক সিদ্ধান্ত নিন এবং বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখুন

৫. ইফিষীয় ৫:১৫-১৭ পদ পড়ে কীভাবে একজন তরুণ কিংবা তরুণী সঠিক কেরিয়ার বাছাই করতে পারে?

আপনি জীবনে কী করবেন, সেই বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। তরুণ-তরুণীরা প্রায় নিজেদের কেরিয়ার নিয়ে চিন্তা করে। একদিকে, তাদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং আত্মীয়স্বজন, যারা যিহোবার সাক্ষি নয়, তারা হয়তো তাদের কোনো কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে ভরতি হওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়, যাতে ভবিষ্যতে তারা একটা ভালো চাকরি পায় এবং অনেক টাকাপয়সা রোজগার করে। তবে, এই ধরনের পড়াশোনা করতে অনেক বছর লেগে যেতে পারে। অপর দিকে, তাদের সাক্ষি বাবা-মা এবং মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা তাদের উৎসাহ দেয় যেন তারা তাদের জীবন যিহোবার সেবায় বিলিয়ে দেয়। একজন তরুণ কিংবা তরুণী যদি যিহোবাকে ভালোবাসে, তা হলে সে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কী করতে পারে? সে ইফিষীয় ৫:১৫-১৭ পদ পড়তে পারে এবং তা নিয়ে ধ্যান করতে পারে। (পড়ুন।) এরপর, সে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারে: ‘আমার জন্য “যিহোবার ইচ্ছা” কী? আমি এমন কোন কেরিয়ার বাছাই করতে পারি, যেটা তাঁকে খুশি করবে এবং যেটার মাধ্যমে আমি আমার সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করতে পারব?’ আমাদের সবাইকে এটা মনে রাখা উচিত যে, আমরা “মন্দ সময়ে বাস করছি” আর খুব শীঘ্রই শয়তানের এই জগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই, বুদ্ধিমানের কাজ হবে যেন আমরা এমনভাবে জীবনযাপন করি, যেটা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে।

৬. মরিয়ম কী করেছিলেন আর তা করা কেন সঠিক ছিল?

বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখুন। ধরুন, আমাদের দুটো কাজ করতে হবে আর দুটো কাজই ভুল নয়। কিন্তু, আমাদের কাছে বেশি সময় নেই। এইরকম ক্ষেত্রে আমাদের সেই কাজটা করতে হবে, যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর অন্যটা করা বাদ দিতে হবে। এটা বোঝার জন্য আসুন দেখি, যিশু যখন মার্থা এবং তার বোন মরিয়মের বাড়িতে গিয়েছিলেন, তখন কী ঘটেছিল। যিশু তাদের বাড়িতে আসার কারণে মার্থা অনেক আনন্দিত ছিলেন এবং তাঁর জন্য অনেক খাবার প্রস্তুত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, মরিয়ম মার্থাকে সাহায্য করার পরিবর্তে যিশুর কাছে বসে তাঁর কথা শুনছিলেন। যদিও মার্থা যিশুর জন্য যা-কিছু করতে চেয়েছিলেন, সেগুলো ভুল ছিল না, কিন্তু যিশু বলেছিলেন, মরিয়ম “সর্বোত্তম বিষয়টাই বেছে” নিয়েছেন। (লূক ১০:৩৮-৪২, পাদটীকা) সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মরিয়ম হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন যে, তিনি সে-দিন কী খেয়েছিলেন। কিন্তু, তার হয়তো নিশ্চয়ই এটা মনে ছিল যে, তিনি যিশুর কাছ থেকে কী শিখেছিলেন। যদিও মরিয়ম যিশুর সঙ্গে অল্প সময় ব্যয় করেছিলেন, কিন্তু সেই সময়টাই তার কাছে অনেক মূল্যবান ছিল। একইভাবে, যিহোবার সঙ্গে আমরা যেটুকু সময় কাটাই, সেটা আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান। তাই, আমাদের সেই সময়ের সদ্‌ব্যবহার করা উচিত। কীভাবে? আসুন, তা লক্ষ করি।

যিহোবার সঙ্গে ভালোভাবে সময় কাটান

৭. কেন প্রার্থনা, অধ্যয়ন ও ধ্যান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ?

মনে রাখবেন, প্রার্থনা, অধ্যয়ন ও ধ্যান আমাদের উপাসনার এক অংশ। আমরা যখন প্রার্থনা করি, তখন আমরা আমাদের পিতা যিহোবার সঙ্গে কথা বলি, যিনি আমাদের অনেক ভালোবাসেন। (গীত. ৫:৭) আমরা যখন বাইবেল অধ্যয়ন করি, তখন আমরা সেই ঈশ্বরের “জ্ঞান” লাভ করি, যিনি হলেন প্রজ্ঞার উৎস। (হিতো. ২:১-৫) আমরা যখন ধ্যান করি, তখন আমরা যিহোবার অপূর্ব গুণাবলি সম্বন্ধে শিখতে পারি এবং মনে রাখতে পারি যে, তিনি মানবজাতির জন্য কী কী করতে চলেছেন। যিহোবার সঙ্গে সময় কাটানোর এর চেয়ে ভালো উপায় কি আর কিছু হতে পারে? তাই, আমরা এগুলোর জন্য যে-সময় ব্যয় করি, আমাদের সেটার সদ্‌ব্যবহার করা উচিত। তা করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

আপনি কি কোনো শান্ত পরিবেশে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করতে পারেন? (৮-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৮. (ক) কেন যিশু প্রান্তরে গিয়েছিলেন? (খ) এটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

যদি সম্ভব হয়, তা হলে একটা শান্ত পরিবেশ বাছাই করুন। যিশুর উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। পৃথিবীতে তাঁর সেবা শুরু করার আগে তিনি ৪০ দিন প্রান্তরে ছিলেন। (লূক ৪:১, ২) সেই শান্ত পরিবেশে যিশু যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পেরেছিলেন এবং চিন্তা করতে পেরেছিলেন যে, তাঁর জন্য যিহোবার ইচ্ছা কী। এর ফলে, যিশু সেই সমস্ত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে পেরেছিলেন, যেগুলোর মুখোমুখি তিনি খুব শীঘ্রই হতে যাচ্ছিলেন। যিশুর কাছ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন? আপনার পরিবারে যদি অনেক সদস্য থাকে, তা হলে আপনার পক্ষে একটা শান্ত পরিবেশ খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে। এইরকম ক্ষেত্রে আপনি ঘরের বাইরে কোনো শান্ত জায়গায় যেতে পারেন। ফ্রান্সে বসবাসরত জুলি নামে একজন বোন এইরকমই করেন। তিনি তার স্বামীর সঙ্গে ছোট্ট একটা ঘরে থাকেন আর তার পক্ষে একা কোনো বিক্ষেপ ছাড়া যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা সহজ নয়। জুলি বলেন: “আমি রোজ পার্কে যাই কারণ সেখানে আমি একা মন খুলে যিহোবার সঙ্গে কথা বলতে পারি।”

৯. ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও যিশু কী করেছিলেন?

যিশু অনেক ব্যস্ত থাকতেন। তিনি যেখানেই যেতেন, সেখানেই লোকেরা জড়ো হয়ে যেত আর তাঁকে সবাইকে সময় দিতে হত। একবার, তিনি যেখানে ছিলেন, সেখানে “নগরের সমস্ত লোক . . . জড়ো হল।” তারপরও, তিনি যিহোবার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য সময় বের করে নেন। পরের দিন সূর্য ওঠার আগেই, তিনি “একটা নির্জন জায়গায়” গেলেন এবং সেখানে তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করলেন।—মার্ক ১:৩২-৩৫.

১০-১১. মথি ২৬:৪০, ৪১ পদ অনুযায়ী যিশু তাঁর শিষ্যদের কী করতে বলেছিলেন, কিন্তু তারা কী করেছিলেন?

১০ যিশু তাঁর পার্থিব জীবনের শেষ রাতে আবারও প্রার্থনা ও ধ্যান করার জন্য একটা নির্জন স্থানে যান। তিনি তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে গেৎশিমানী বাগানে যান। (মথি ২৬:৩৬) সেই রাতে তিনি তাঁর শিষ্যদের এক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন।

১১ তারা যখন গেৎশিমানী বাগানে পৌঁছান, তখন হয়তো মাঝরাত হয়ে গিয়েছিল। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেন, “জেগে থাকো।” তারপর, তিনি প্রার্থনা করতে চলে যান। (মথি ২৬:৩৭-৩৯) কিন্তু, তাঁর শিষ্যেরা ঘুমিয়ে পড়েন। যিশু যখন ফিরে আসেন, তখন তিনি তাদের বলেন: “জেগে থাকো এবং ক্রমাগত প্রার্থনা করো।” (পড়ুন, মথি ২৬:৪০, ৪১.) যিশু এও বলেন, “দেহ দুর্বল” অর্থাৎ তিনি জানতেন যে, তাঁর শিষ্যেরা অনেক চাপের মধ্যে রয়েছেন আর সেইসঙ্গে ক্লান্ত রয়েছেন। তা সত্ত্বেও, যিশু তাদের ক্রমাগত প্রার্থনা করতে বলেন। কিন্তু, এরপর দু-বার যিশু যখন প্রার্থনা করে ফিরে আসেন, তখন দু-বারই দেখেন যে, তাঁর শিষ্যেরা প্রার্থনা করার পরিবর্তে ঘুমাচ্ছেন।—মথি ২৬:৪২-৪৫.

আপনি কি সেইসময় প্রার্থনা করতে পারেন, যখন আপনি বেশি ক্লান্ত থাকেন না? (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. যখন আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি আর আমাদের প্রার্থনা করার শক্তি থাকে না, তখন আমরা কী করতে পারি?

১২ সঠিক সময় বাছাই করুন। কখনো কখনো আমরা এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ি যে, আমাদের প্রার্থনা করার শক্তি থাকে না। এই ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি? আমরা আমাদের প্রার্থনা করার সময় পরিবর্তন করতে পারি। কিছু ব্যক্তি রাতের বেলায় প্রার্থনা করত আর সেইসময় তারা খুব ক্লান্ত থাকত। তাই, তারা সন্ধ্যে বেলায় প্রার্থনা করা বেছে নিয়েছে। আবার অনেকে সোজা হয়ে বসে অথবা হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করে। এভাবে, তারা আরও মনোযোগ দিয়ে প্রার্থনা করতে পারে। আমরাও তা করতে পারি। কিন্তু, অনেকসময় আমরা এতটাই চাপের মধ্যে অথবা হতাশার মধ্যে থাকি যে, সেইসময় হয়তো আমাদের প্রার্থনা করতে ইচ্ছা করে না। তারপরও, আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত এবং তাঁকে আমাদের মনের কথা খুলে বলা উচিত। আমরা আস্থা থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের অনুভূতি নিশ্চয়ই বুঝবেন।—গীত. ১৩৯:৪.

যদি জরুরি না হয়ে থাকে, তা হলে সভা চলাকালীন ই-মেল পাঠানো কিংবা মেসেজ করা এবং তা দেখা এড়িয়ে চলুন (১৩-১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. আমরা যখন যিহোবার সঙ্গে সময় কাটাই, তখন কীভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো আমাদের বিক্ষিপ্ত করতে পারে?

১৩ মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হতে দেবেন না। যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব করার জন্য শুধু প্রার্থনা করাই যথেষ্ট নয়। আমাদের বাইবেল অধ্যয়ন করতে হবে এবং সভাগুলোতে যোগ দিতে হবে। তাই, আমরা এমন কী করতে পারি, যাতে আমরা মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করতে এবং মন দিয়ে সভাগুলো শুনতে পারি? আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘কোন বিষয়গুলো আমাকে বিক্ষিপ্ত করতে পারে?’ বর্তমানে, লক্ষ লক্ষ লোকের কাছে স্মার্টফোন কিংবা অন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো রয়েছে, যেগুলো সত্যিই অনেক কাজে লাগে। তবে, আমরা যখন যিহোবার সঙ্গে সময় কাটাই, তখন যদি কেউ আমাদের ফোন করে, ই-মেল কিংবা মেসেজ পাঠায়, তখন আমরা বিক্ষিপ্ত হয়ে যেতে পারি। সম্মেলনগুলোতে কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে আমাদের প্রায়ই বলা হয়, আমরা যেন আমাদের ফোন অথবা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস এমনভাবে সেট করে রাখি, যাতে সেটা অন্যদের বিক্ষিপ্ত না করে। আমরা যখন যিহোবার সঙ্গে সময় কাটাই, তখনও কি আমরা এমন কিছু করতে পারি, যাতে আমরা বিক্ষিপ্ত হয়ে না পড়ি? ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো অন্য উপায়েও আমাদের বিক্ষিপ্ত করতে পারে। কিছু গবেষক বলেছে যে, মনোযোগ দিয়ে কোনো কাজ করার সময় আমাদের কাছে শুধু ফোন থাকাটাই আমাদের বিক্ষিপ্ত করতে পারে। তাদের মধ্যে একজন বলেন: ‘ফোন কাছে থাকলে আমাদের মনোযোগ কাজের উপর আর থাকে না বরং অন্য কোনো বিষয়ের উপর চলে যায়। যেমন, আমরা হয়তো চিন্তা করতে শুরু করি, সেই লোকেরা নতুন কী পোস্ট করেছে, যাদের নম্বর আমার ফোনে আছে।’

১৪. ফিলিপীয় ৪:৬, ৭ পদ অনুযায়ী মনোযোগ দেওয়ার জন্য আমাদের কী করা উচিত?

১৪ মনোযোগ দেওয়ার জন্য যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চান। ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার সময় কিংবা সভা চলাকালীন আপনি যদি বিক্ষিপ্ত হতে শুরু করেন, তা হলে যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চান। আপনি যদি কোনো বিষয়ে চিন্তিত থাকেন, তবুও মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন। যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন এবং শান্তি চান। ঈশ্বরের সেই শান্তি শুধুমাত্র আপনার হৃদয়কে নয়, কিন্তু আপনার ‘চিন্তাভাবনাকেও’ রক্ষা করবে।—পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৬, ৭ এবং পাদটীকা।

যিহোবার সঙ্গে সময় কাটালে আপনি উপকৃত হবেন

১৫. যিহোবার সঙ্গে সময় কাটানোর প্রথম উপকার কী?

১৫ আপনি যদি সময় বের করে যিহোবার সঙ্গে কথা বলেন, তাঁর কথা শোনেন এবং তাঁর সম্বন্ধে চিন্তা করেন, তা হলে আপনি অনেক উপকার লাভ করবেন। প্রথম উপকার হল, আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। বাইবেলে লেখা রয়েছে: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে।” (হিতো. ১৩:২০) যিহোবা হলেন সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি। তাই, আপনি যখন তাঁর সঙ্গে সময় কাটাবেন, তখন আপনিও জ্ঞানী হয়ে উঠবেন। আপনি জানতে পারবেন যে, কোন কাজগুলো করলে তিনি খুশি হবেন এবং কোন কাজগুলো করলে তিনি দুঃখ পাবেন। এর ফলে, আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

১৬. যিহোবার সঙ্গে সময় কাটানোর দ্বিতীয় উপকার কী?

১৬ দ্বিতীয় উপকার হল, আপনি অন্যদের ভালোভাবে শেখাতে পারবেন। আমরা যখন বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করি, তখন আমার চাই যেন বাইবেল ছাত্র যিহোবার নিকটবর্তী হয়। এরজন্য আমাদের কী করতে হবে? আমাদের যতবেশি সম্ভব যিহোবার সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমরা যদি তা করি, তা হলে যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও বৃদ্ধি পাবে আর আমরা আমাদের ছাত্রকেও তাঁকে ভালোবাসতে শেখাতে পারব। যিশুর উদাহরণ বিবেচনা করুন। তিনি যিহোবাকে অনেক ভালোভাবে জানতেন এবং তাঁকে খুব ভালোবাসতেন। তাই, তিনি তাঁর শিষ্যদের যিহোবা সম্বন্ধে এমনভাবে শিখিয়েছিলেন যে, তারাও যিহোবাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিল।—যোহন ১৭:২৫, ২৬.

১৭. যিহোবার সঙ্গে সময় কাটালে কীভাবে আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হবে?

১৭ তৃতীয় উপকার হল, আপনার বিশ্বাস শক্তিশালী হবে। প্রত্যেক বার যখন আপনি যিহোবার কাছে কোনো বিষয়ে পরামর্শ কিংবা সাহায্য চান এবং তিনি সেটার উত্তর দেন, তখন তাঁর উপর আপনার বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয়। (১ যোহন ৫:১৫) এ ছাড়া, বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য আপনাকে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করতে হবে, কারণ “বাক্য শোনার পরই একজন ব্যক্তি বিশ্বাস করে।” (রোমীয় ১০:১৭) তবে, বাইবেল পড়ে শুধু জ্ঞান নেওয়াই যথেষ্ট নয়, আপনাকে আরও কিছু করতে হবে।

১৮. একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন, কেন ধ্যান করা গুরুত্বপূর্ণ।

১৮ আমাদের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো নিয়ে ধ্যান করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, গীতসংহিতা ৭৭ গীতের লেখকের কথা চিন্তা করুন। তার মনে হয়েছিল, তার উপর এবং সেইসঙ্গে অন্য ইজরায়েলীয়দের উপর যিহোবা রেগে আছেন। (২-৮ পদ) নিজের বিশ্বাস শক্তিশালী করার জন্য তিনি কী করেছিলেন? তিনি যিহোবাকে বলেছিলেন: ‘আমি তোমার সমস্ত কর্ম্ম ধ্যান করিব, তোমার ক্রিয়া সকল আলোচনা করিব।’ (১২ পদ) যদিও তিনি জানতেন যে, অতীতে যিহোবা কীভাবে তাঁর দাসদের সাহায্য করেছিলেন, তবুও তার মনে এই প্রশ্ন এসেছিল, “ঈশ্বর কি প্রসন্ন হইতে ভুলিয়া গিয়াছেন? তিনি ক্রোধে কি আপন করুণা রুদ্ধ করিয়াছেন?” (৯ পদ) তবে, যিহোবা যা করেছিলেন এবং যেভাবে তিনি অতীতে তাঁর দাসদের প্রতি করুণা ও সমবেদনা দেখিয়েছিলেন, তা নিয়ে ধ্যান করার ফলে ৭৭ গীতের লেখক নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, যিহোবা কখনো তাঁর দাসদের পরিত্যাগ করবেন না। (১১, ১৫ পদ) একইভাবে, যিহোবা এখনও পর্যন্ত তাঁর দাসদের জন্য আর সেইসঙ্গে আপনার জন্য যা যা করেছেন, শুধু এটুকু জানাই যথেষ্ট নয়। আপনাকে তা নিয়ে ধ্যান করতে হবে। তখনই আপনার বিশ্বাস শক্তিশালী হবে।

১৯. যিহোবার সঙ্গে সময় কাটানোর সবচেয়ে বড়ো উপকার কী?

১৯ চতুর্থ এবং সবচেয়ে বড়ো উপকার হল, যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা আরও গভীর হবে। যিহোবার প্রতি ভালোবাসা আপনাকে তাঁর বাধ্য হতে, তাঁকে খুশি করার জন্য ত্যাগস্বীকার করতে এবং যেকোনো পরীক্ষা সহ্য করতে অনুপ্রাণিত করবে। (মথি ২২:৩৭-৩৯; ১ করি. ১৩:৪, ৭; ১ যোহন ৫:৩) যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের চেয়ে আর কোনো কিছুই বেশি মূল্যবান হতে পারে না!—গীত. ৬৩:১-৮.

২০. যিহোবার সঙ্গে ভালোভাবে সময় কাটানোর জন্য আপনি কী করবেন?

২০ মনে রাখবেন, প্রার্থনা, অধ্যয়ন ও ধ্যান আমাদের উপাসনার এক অংশ। যিশুর মতো একটা শান্ত পরিবেশে গিয়ে যিহোবার সঙ্গে সময় কাটান। যে-বিষয়গুলো আপনাকে বিক্ষিপ্ত করতে পারে, সেগুলো নিজের কাছ থেকে দূরে রাখুন। আপনার যদি মনে হয়, আপনি বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ছেন, তা হলে যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চান। আপনি যদি আপনার সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করেন, তা হলে যিহোবা আপনাকে নতুন জগতে চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ দেবেন।—মার্ক ৪:২৪.

গান ২৭ নাও পক্ষ যিহোবার!

^ যিহোবা হলেন আমাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু আর আমরা কখনোই চাই না, তাঁর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাক। আমরা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে চাই এবং তাঁকে আরও ভালোভাবে জানতে চাই। কাউকে জানার জন্য সময় লাগে। একইভাবে, যিহোবাকে জানার জন্যও সময় লাগে। তবে, দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততার মধ্যে কীভাবে আমরা যিহোবাকে জানার জন্য সময় বের করতে পারি এবং তা করা আমাদের জন্য কোন কোন উপকার নিয়ে আসতে পারে?