অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২
যিশুর ছোটো ভাইয়ের কাছ থেকে শিখুন
“আমি যাকোব, ঈশ্বরের এবং প্রভু যিশু খ্রিস্টের একজন দাস।”—যাকোব ১:১.
গান ১১ যিহোবার চিত্তকে আনন্দিত করা
সারাংশ *
১. যাকোব কেমন পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন?
যাকোব এমন এক পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন, যাদের যিহোবার সঙ্গে এক ভালো সম্পর্ক ছিল। তার বাবা-মা যোষেফ ও মরিয়ম যিহোবাকে খুব ভালোবাসতেন আর মনপ্রাণ দিয়ে তাঁর সেবা করতেন। শুধু তা-ই নয়, তার বড়ো ভাই যিশু প্রতিজ্ঞাত মশীহ হয়ে উঠেছিলেন। সত্যিই, যাকোব কতই-না এক উত্তম পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন! *
২. যাকোবের কাছে কী সুযোগ ছিল?
২ যাকোব তার বড়ো ভাই যিশুর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারতেন। (মথি ১৩:৫৫) উদাহরণ স্বরূপ, যিশুর বয়স যখন ১২ বছর ছিল, তখন তাঁর শাস্ত্র সম্বন্ধে এত জ্ঞান ছিল যে, জেরুসালেমের বড়ো বড়ো গুরুরা তাঁর কথা শুনে অবাক হয়ে যেত। (লূক ২:৪৬, ৪৭) যাকোব হয়তো যিশুর সঙ্গে কাঠের কাজ করতেন আর সেই কাজ করার সময় তিনি তাঁকে আরও ভালোভাবে জানতে পেরেছিলেন। ভাই নেথেন এইচ. নর প্রায়ই বলতেন: “যখন আপনি কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করেন, তখন আপনি তাকে আরও ভালোভাবে জানতে পারেন।” * যাকোব হয়তো এই বিষয়টা লক্ষ করেছিলেন যে, “যিশু প্রজ্ঞায় ও বয়সে এবং ঈশ্বরের ও মানুষের ভালোবাসায় বৃদ্ধি পেতে থাকলেন।” (লূক ২:৫২) এইসমস্ত কারণে যাকোব যিশুর প্রথম শিষ্য হতে পারতেন, কিন্তু এমনটা হয়নি।
৩. যিশু বেঁচে থাকাকালীন যাকোব কি তাঁর শিষ্য হয়েছিলেন? ব্যাখ্যা করুন।
৩ যিশু বেঁচে থাকাকালীন যাকোব তাঁর শিষ্য হননি। (যোহন ৭:৩-৫) যাকোব হয়তো যিশুর সেই আত্মীয়স্বজনের মধ্যে একজন ছিলেন, যারা যিশুকে বলেছিল: “ওর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।” (মার্ক ৩:২১) যিশু যখন যাতনাদণ্ডে মারা গিয়েছিলেন, তখন তাঁর মা মরিয়মের সঙ্গে যাকোবও সেখানে উপস্থিত ছিলেন কি না, সেই বিষয়ে বাইবেল কিছু জানায় না।—যোহন ১৯:২৫-২৭.
৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?
৪ পরবর্তী সময়ে, যাকোব যিশুর উপর বিশ্বাস করেছিলেন এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর একজন প্রাচীন হয়েছিলেন। এই প্রবন্ধে আমরা যাকোবের কাছ থেকে দুটো বিষয় শিখব: (১) কেন আমাদের নম্রতা বজায় রাখা উচিত এবং (২) কীভাবে আমরা একজন উত্তম শিক্ষক হতে পারি।
যাকোবের মতো নম্রতা বজায় রাখুন
৫. পুনরুত্থিত হওয়ার পর যিশু যখন যাকোবকে দেখা দিয়েছিলেন, তখন যাকোব কী করেছিলেন?
৫ যাকোব কখন যিশুর শিষ্য হয়েছিলেন? যিশু পুনরুত্থিত হওয়ার পর “যাকোবকে এবং পরে সমস্ত প্রেরিতকে দেখা” দিয়েছিলেন। (১ করি. ১৫:৭) যিশুর সঙ্গে দেখা হওয়ার ঠিক পরই যাকোব তাঁর শিষ্য হয়েছিলেন। যখন জেরুসালেমে সমস্ত প্রেরিত উপরের ঘরে পবিত্র শক্তি লাভ করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন যাকোবও সেখানে ছিলেন। (প্রেরিত ১:১৩, ১৪) পরবর্তী সময়ে, যাকোব প্রথম শতাব্দীর পরিচালকগোষ্ঠীর একজন সদস্য হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৫:৬, ১৩-২২; গালা. ২:৯) ৬২ খ্রিস্টাব্দের কিছুসময় আগে যিহোবা তাকে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে চিঠি লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। সেই চিঠি থেকে আজ আমরা সমস্ত খ্রিস্টান উপকৃত হই, তা আমাদের বেঁচে থাকার আশা স্বর্গে হোক কিংবা পৃথিবীতে। (যাকোব ১:১) প্রথম শতাব্দীর ইতিহাসবেত্তা জোসিফাসের কথা অনুযায়ী, যিহুদি মহাযাজক অননিয়, যিনি হান্নার ছেলে ছিলেন, তিনি যাকোবকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত যাকোব যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন।
৬. যাকোব এবং ধর্মীয় গুরুদের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল?
৬ যাকোব নম্র ছিলেন। কীভাবে আমরা তা বলতে পারি? যাকোব যখন এই বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছিলেন যে, যিশুই হলেন ঈশ্বরের পুত্র, তখন তিনি সঙ্গেসঙ্গে যিশুর উপর বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু, যখন ধর্মীয় গুরুরা সেই বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছিল, তখন তারা যিশুর উপর বিশ্বাস করেনি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জেরুসালেমের প্রধান যাজকেরা এই বিষয়টা অস্বীকার করতে পারেনি যে, লাসারকে যিশুই পুনরুত্থিত করেছিলেন। তবে, যিশুকে যে যিহোবা পাঠিয়েছেন, তা বিশ্বাস করার পরিবর্তে তারা যিশু ও লাসার উভয়কে হত্যা করতে চেয়েছিল। (যোহন ১১:৫৩; ১২:৯-১১) পরে, যখন যিশু পুনরুত্থিত হয়েছিলেন, তখন তারা তাঁর পুনরুত্থানের বিষয়টা গোপন করার চেষ্টা করেছিল। (মথি ২৮:১১-১৫) সেই ধর্মীয় গুরুরা এতটাই গর্বিত ছিল যে, তারা মশীহকেই প্রত্যাখ্যান করেছিল।
৭. কেন আমাদের গর্ব করা উচিত নয়?
৭ শিক্ষা: গর্ব করা এড়িয়ে চলুন এবং যিহোবার কাছ থেকে শেখার জন্য প্রস্তুত থাকুন। যেমন, বেশিরভাগ সময় হৃদ্রোগের কারণে প্রধান ধমনিগুলো স্বাভাবিকভাবে শক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে, রক্ত চলাচলে সমস্যা দেখা দেয় এবং আমাদের হৃৎপিণ্ড ঠিকঠাক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। একইভাবে, গর্ব আমাদের রূপক হৃদয়কে কঠিন করে দিতে পারে আর আমরা যিহোবার আজ্ঞাগুলো পালন করা বন্ধ করে দিতে পারি। ফরীশীদের প্রতি এমনই কিছু ঘটেছিল। তারা নিজেদের হৃদয়কে এতটাই কঠিন করেছিল যে, এর ফলে তারা এই বিষয়টা দেখতে ব্যর্থ হয়েছিল, যিশু ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন এবং তাঁর উপর ঈশ্বরের পবিত্র শক্তি রয়েছে। (যোহন ১২:৩৭-৪০) গর্বিত হওয়ার কারণে তারা অনন্তজীবন লাভ করার সুযোগ হারিয়েছিল। (মথি ২৩:১৩, ৩৩) সত্যিই, এটা কতই-না গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা ঈশ্বরের বাক্য এবং তাঁর পবিত্র শক্তির নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনযাপন করি আর নিজেকে এবং নিজের চিন্তাভাবনায় রদবদল করি! (যাকোব ৩:১৭) যাকোব নম্র ছিলেন, তাই তিনি যিহোবার কাছ থেকে শিখতে পেরেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি অন্যদেরও ভালোভাবে শেখাতে পেরেছিলেন।
যাকোবের মতো উত্তম শিক্ষক হোন
৮. কীভাবে আমরা একজন উত্তম শিক্ষক হতে পারি?
৮ যাকোব বেশি পড়াশোনা জানতেন না। সেই সময়কার ধর্মীয় গুরুরা প্রেরিত পিতর ও যোহনের মতো যাকোবকেও হয়তো “অশিক্ষিত এবং সাধারণ ব্যক্তি” হিসেবে দেখত। (প্রেরিত ৪:১৩) কিন্তু, আমরা যদি বাইবেল থেকে যাকোবের বই পড়ি, তা হলে আমরা বুঝতে পারব যে, তিনি একজন উত্তম শিক্ষক ছিলেন। যাকোবের মতো আমরাও হয়তো বেশি পড়াশোনা জানি না। তবে, যিহোবার পবিত্র শক্তির সাহায্যে এবং সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা একজন উত্তম শিক্ষক হতে পারি। আসুন, এখন আলোচনা করে দেখি, কীভাবে যাকোব লোকদের শেখাতেন।
৯. কীভাবে যাকোব লোকদের শেখাতেন?
৯ যাকোব কঠিন শব্দ ব্যবহার করতেন না আর কোনো বিষয়কে জটিলভাবে ব্যাখ্যা করতেন না। এর ফলে লোকেরা বুঝতে পারত, তাদের কী করতে হবে আর কীভাবে তা করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, যাকোব খুবই সরল শব্দ ব্যবহার করার মাধ্যমে এবং সহজ পদ্ধতিতে বুঝিয়েছিলেন যে, খ্রিস্টানদের অন্যায় সহ্য করার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত এবং প্রতিশোধ নেওয়া উচিত নয়। তিনি লিখেছিলেন: “যারা পরীক্ষার মধ্যেও ধৈর্য ধরে, আমরা তাদের সুখী বলে গণ্য করি। তোমরা ইয়োবের ধৈর্যের কথা শুনেছ এবং যিহোবা তাকে যে-সমস্ত আশীর্বাদ করেছিলেন, সেগুলোও জেনেছ। আর তোমরা এভাবে বুঝতে পেরেছ যে, যিহোবা অত্যন্ত স্নেহময় ও করুণাময়।” (যাকোব ৫:১১) লক্ষ করুন, যাকোব শাস্ত্র থেকেই বুঝিয়েছিলেন যে, ঈশ্বর সেই লোকদের পুরস্কার দেন, যারা ইয়োবের মতো তাঁর প্রতি অনুগত থাকে। এভাবে, যাকোব নিজের উপর নয় বরং যিহোবার উপর লোকদের মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিলেন।
১০. কীভাবে আমরা যাকোবের মতো অন্যদের শেখাতে পারি?
১০ শিক্ষা: সহজসরল শব্দ ব্যবহার করুন এবং ঈশ্বরের বাক্য থেকে শেখান। আমরা যখন অন্যদের শেখাই, তখন তাদের কাছে নিজেদের জ্ঞান জাহির করা উচিত নয়। আমাদের এই বিষয়ের উপর লোকদের মনোযোগ আকর্ষণ করানো উচিত যে, যিহোবা কতটা প্রজ্ঞাবান এবং তিনি আমাদের জন্য কতটা চিন্তা করেন। (রোমীয় ১১:৩৩) তবে, আমরা এটা তখনই করতে পারব, যখন আমরা ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল থেকে তাদের শেখাব। উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের বাইবেল ছাত্রদের এইরকম বলা উচিত নয়, তার জায়গায় যদি আমরা থাকতাম, তা হলে কী করতাম। এর পরিবর্তে, আমাদের বাইবেল থেকে তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা উচিত। আমরা বাইবেল থেকে তাদের কিছু উদাহরণ বলতে পারি। আমরা তাদের এও বলতে পারি, কোনো বিষয়কে যিহোবা কীভাবে দেখেন। এভাবে, তারা যে-সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা আমাদের খুশি করার জন্য নয় বরং যিহোবাকে খুশি করার জন্য নেবে।
১১. (ক) যাকোবের দিনের কিছু খ্রিস্টানের মধ্যে কোন দুর্বলতাগুলো ছিল? (খ) যাকোব ৫:১৩-১৫ পদ অনুযায়ী তিনি তাদের কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন?
১১ যাকোব লোকদের পরিস্থিতি জানতেন। তিনি জানতেন, কিছু খ্রিস্টান ভাই-বোনের মধ্যে কোন দুর্বলতাগুলো রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, কিছু খ্রিস্টান বাইবেলে দেওয়া পরামর্শ মেনে চলত না। (যাকোব ১:২২) কিছু খ্রিস্টান ধনী ও গরিবের মধ্যে পার্থক্য করত। (যাকোব ২:১-৩) আবার কিছু খ্রিস্টান চিন্তাভাবনা না করেই কথা বলত। (যাকোব ৩:৮-১০) যদিও তাদের মধ্যে বিভিন্ন দুর্বলতা ছিল, কিন্তু যাকোব তাদের সম্বন্ধে এইরকমটা চিন্তা করেননি যে, তারা নিজেদের কখনো পরিবর্তন করবে না। তিনি তাদের প্রেমের সঙ্গে অথচ স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, তাদের কী করা উচিত। তিনি তাদের এই বিষয়ে উৎসাহিত করেছিলেন যেন তারা প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়।—পড়ুন, যাকোব ৫:১৩-১৫.
১২. বাইবেল ছাত্রদের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আমাদের কী করা উচিত?
১২ শিক্ষা: অন্যদের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করুন এবং আশা ছেড়ে দেবেন না। আমাদের কিছু বাইবেল ছাত্রের হয়তো বাইবেলে দেওয়া পরামর্শ মেনে চলা কঠিন বলে মনে হয়। (যাকোব ৪:১-৪) তাদের মন্দ অভ্যাস ত্যাগ করার কিংবা ভালো গুণ গড়ে তোলার জন্য সময় লাগতে পারে। কিন্তু, যাকোবের মতো আমাদেরও সাহসের সঙ্গে আমাদের বাইবেল ছাত্রদের বলা উচিত, তাদের কোন বিষয়গুলো পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের আশা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। সেই ছাত্র যদি নম্র হন, তা হলে যিহোবা তাকে নিজের প্রতি আকর্ষণ করবেন এবং তাকে পরিবর্তন করার জন্য সাহস জোগাবেন।—যাকোব ৪:১০.
১৩. (ক) যাকোব ৩:২ পদে যাকোব কী বলেছিলেন? (খ) এখান থেকে আমরা কী জানতে পারি?
১৩ যাকোব নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা বলে মনে করতেন না। যাকোব এইরকমটা চিন্তা করেননি, ‘আমি তো যিশুর ভাই আর আমার কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে, তাই আমি একজন বিশেষ ব্যক্তি!’ এর পরিবর্তে, তিনি অন্য খ্রিস্টানদের ‘আমার প্রিয় ভাই’ বলে সম্বোধন করতেন। (যাকোব ১:১৬, ১৯; ২:৫) তিনি কখনো এমনটা জাহির করতেন না যে, তার দ্বারা কোনো ভুল হবে না। এর পরিবর্তে, তিনি বলেছিলেন, “আমরা সকলে বিভিন্ন সময় ভুল করে থাকি।”—পড়ুন, যাকোব ৩:২.
১৪. কেন আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, আমরাও অনেকসময় ভুল করি?
১৪ শিক্ষা: মনে রাখবেন, আমরাও অনেকসময় ভুল করি। আমরা যদি আমাদের বাইবেল ছাত্রদের সামনে এমনটা দেখাই যে, আমাদের দিয়ে কখনোই কোনো ভুল হয় না, তা হলে তারা হয়তো হতাশ হয়ে পড়বে। তাদের মনে হবে, তারা ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো ভালোভাবে পালন করতে পারবে না। কিন্তু, আমরা যদি সত্যি কথা বলি যে, কখনো কখনো আমাদের পক্ষেও ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো মেনে চলা সহজ হয় না আর সেইসময় আমাদের তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তা হলে এটা তাদের উৎসাহিত করবে। তাদের মনে হবে, তারাও যিহোবার সেবা করতে পারবে।
১৫. যাকোব কেমন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতেন? (যাকোব ৩:২-৬, ১০-১২)
১৫ যাকোব কার্যকরী দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতেন। এটা ঠিক যে, পবিত্র শক্তি যাকোবকে সাহায্য করেছিল। কিন্তু, তিনি দৃষ্টান্ত ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তার বড়ো ভাই যিশুর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছিলেন। তিনি তার লেখা চিঠিতে সহজসরল দৃষ্টান্তগুলো ব্যবহার করেছিলেন। তাই, লোকেরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিল, তাদের কী করতে হবে।—পড়ুন, যাকোব ৩:২-৬, ১০-১২.
১৬. কেন আমাদের কার্যকরী দৃষ্টান্ত ব্যবহার করা উচিত?
১৬ শিক্ষা: কার্যকরী দৃষ্টান্ত ব্যবহার করুন। আপনি যখন কার্যকরী দৃষ্টান্ত ব্যবহার করবেন, তখন লোকেরা যে শুধু আপনার কথা শুনবে এমন নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে তারা সেই বিষয়টা নিয়ে কল্পনাও করবে। কল্পনা করার ফলে, তারা বাইবেলের সত্যগুলো মনে রাখতে পারবে। দৃষ্টান্ত ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যিশু অনেক দক্ষ ছিলেন। তাঁর মতো যাকোবও কার্যকরী দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতেন। এখন আসুন, যাকোবের দেওয়া একটা দৃষ্টান্তের উপর মনোযোগ দিই।
১৭. কেন এটা বলা যেতে পারে যে, যাকোব ১:২২-২৫ পদে দেওয়া দৃষ্টান্ত কার্যকরী?
১৭ যাকোব লোকদের এই বিষয়টা শেখাতে চেয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের বাক্য শুধু পড়াই যথেষ্ট নয়। আমরা যা পড়ি, সেই অনুযায়ী আমাদের জীবনযাপন করা উচিত। এই বিষয়টা বোঝানোর জন্য তিনি একটা আয়নার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন। (পড়ুন, যাকোব ১:২২-২৫.) আয়না সম্বন্ধে সেই সময়কার প্রায় সব লোকই জানত। তিনি বলেছিলেন, যদি একজন ব্যক্তি আয়নায় নিজের চেহারা দেখেন এবং বুঝতে পারেন যে, তার চেহারায় কিছু লেগে রয়েছে, তা সত্ত্বেও তিনি যদি কিছু না করেন, তা হলে তার আয়না দেখে কোনো লাভ নেই। একইভাবে, একজন ব্যক্তি যদি বাইবেল পড়েন এবং বুঝতে পারেন যে, তাকে কিছু পরিবর্তন করতে হবে, তা সত্ত্বেও তিনি যদি কিছু না করেন, তা হলে বাইবেল পড়ে তার কোনো লাভ নেই।
১৮. দৃষ্টান্ত ব্যবহার করার সময় আমাদের কোন তিনটে বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?
১৮ দৃষ্টান্ত ব্যবহার করার সময় আমরা যাকোবের মতো তিনটে বিষয় খেয়াল রাখতে পারি। দৃষ্টান্ত এমন হওয়া উচিত, (১) যেটা থেকে মূল বিষয়টা স্পষ্ট হবে, (২) যেটা বোঝা সহজ হবে এবং (৩) যেটা থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে যে, আমরা কী শেখাতে চাইছি। যদি আপনার পক্ষে উপযুক্ত দৃষ্টান্ত ব্যবহার করা কঠিন বলে মনে হয়, তা হলে আপনি ওয়াচ টাওয়ার পাবলিকেশনস্ ইনডেক্স-এ দেওয়া “দৃষ্টান্ত” (Illustrations) শিরোনামের অধীনে দেখতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন, দৃষ্টান্ত একটা লাউডস্পিকারের মতো। লাউডস্পিকার থেকে যেমন জোরে আওয়াজ বের হয়, ঠিক তেমনই দৃষ্টান্ত মূল বিষয়গুলোকে স্পষ্ট করে তোলে। তাই, আমাদের অতিরিক্ত দৃষ্টান্ত ব্যবহার করা উচিত নয়। যদি তা করি, তা হলে লোকেরা বুঝতে পারবে না যে, আমরা আসলে কী বলতে চাইছি। আমরা যতবেশি সম্ভব লোককে যিহোবার পরিবারের অংশ হয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য আমাদের শেখানোর দক্ষতা বৃদ্ধি করতে চাই, লোকদের মনোযোগ নিজেদের উপর আকর্ষণ করানোর জন্য নয়।
১৯. আমরা যদি আমাদের ভাই-বোনদের ভালোবাসি, তা হলে আমরা কী করব?
১৯ যাকোব তার বড়ো ভাই যিশুর কাছ থেকে শেখার এক বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলেন। যদিও আমরা আজ এই সুযোগ পাইনি, তবে যিহোবা আমাদের এক বড়ো পরিবারের অংশ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আমাদের এই পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসতে হবে। এমনটা আমরা তখনই করতে পারব, যখন আমরা তাদের সঙ্গে সময় কাটাব, তাদের কাছ থেকে শিখব এবং তাদের সঙ্গে মিলে প্রচার আর শেখানোর কাজে অংশ নেব। আমাদের প্রতিটা ক্ষেত্রে, যেমন নিজেদের চিন্তাভাবনায়, আচার-আচরণে এবং অন্যদের শেখানোর ক্ষেত্রে যাকোবের মতো হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে যিহোবার প্রশংসা হবে এবং সৎহৃদয়ের লোকেরা তাঁর দিকে আকর্ষিত হবে।
গান ৩৫ ঈশ্বরের ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা
^ যাকোব যিশুর ভাই ছিলেন, তাই তিনি খুব ভালোভাবে যিশুকে জানতেন। যাকোব সেই ভাইদের মধ্যে একজন ছিলেন, যারা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে নেতৃত্ব নিয়েছিলেন। এই প্রবন্ধে আমরা তার জীবন আর সেইসঙ্গে তার শিক্ষাগুলো থেকে শিখতে পারব।
^ যদিও যাকোব যিশুর ভাই, তবে তাদের বাবা আলাদা ছিলেন। যাকোবের বাবা যোষেফ ছিলেন এবং যিশুর বাবা যিহোবা ছিলেন। এই যাকোবই হয়তো বাইবেলের যাকোব বইটা লিখেছিলেন।
^ ভাই নর একজন অভিষিক্ত খ্রিস্টান এবং পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি মারা যান।
^ ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যাকোব আগুনের দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে বুঝিয়েছিলেন যে, চিন্তাভাবনা না করে কথা বলার পরিণতি কী হতে পারে। এই দৃষ্টান্ত বোঝা সহজ ছিল।