সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১

আস্থা রাখুন যে, ঈশ্বরের বাক্যে লেখা প্রতিটা কথা সত্য

আস্থা রাখুন যে, ঈশ্বরের বাক্যে লেখা প্রতিটা কথা সত্য

২০২৩ সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ: “তোমার বাক্যের সমষ্টি সত্য।”—গীত. ১১৯:১৬০.

গান ৯৬ ঈশ্বরের বাক্য—এক অমূল্য সম্পদ

সারাংশ a

১. কেন আজ অনেক লোকের পক্ষে বাইবেল এবং সেটিতে লেখা কথাগুলোর উপর আস্থা রাখাকে কঠিন বলে মনে হয়?

 বর্তমানে, অনেক লোক জানে না, তারা কার উপর আস্থা রাখতে পারে এবং কার উপর আস্থা রাখতে পারে না। তারা সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখে। নেতাদের, বিজ্ঞানীদের, বড়ো বড়ো ব্যবসায়ীদের এবং ধর্মীয় গুরুদের উপর থেকে তাদের আস্থা উঠে যাচ্ছে। যেমন, গির্জার পাদরিদের কথা ধরুন, তারা এমন এমন কাজ করেছে যে, অনেকে তাদের সম্মান করে না বরং তাদের উপর সন্দেহ করে। আর এই কারণে অনেক লোক বাইবেলের উপরও আস্থা রাখতে পারে না।

২. গীতসংহিতা ১১৯:১৬০ পদ অনুযায়ী আমাদের কোন বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া উচিত?

তবে আমরা নিশ্চিত, আমাদের ঈশ্বর যিহোবা হলেন “সত্যের ঈশ্বর” এবং তিনি সবসময় আমাদের মঙ্গল চান। (গীত. ৩১:৫; যিশা. ৪৮:১৭) আমরা জানি, আমরা তাঁর বাক্য বাইবেলের উপরও আস্থা রাখতে পারি কারণ ঈশ্বরের বাক্যে লেখা প্রতিটা কথা সত্য। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:১৬০.) বাইবেল নিয়ে গবেষণা করেন এমন একজন পণ্ডিত ব্যক্তি এই ব্যাপারে একেবারে সঠিক কথা লিখেছিলেন: “ঈশ্বর কখনো মিথ্যা কথা বলেন না। তাঁর প্রতিটা কথা সত্য বলে প্রমাণিত হয়। তাই, ঈশ্বরের লোকদের তাঁর উপর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আর তারা তাঁর বলা কথাগুলোর উপরও আস্থা রাখতে পারে।”

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

আমরা নিজেরা তো নিশ্চিত, বাইবেলে লেখা কথাগুলো সত্য, কিন্তু কীভাবে আমরা অন্যদের এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে সাহায্য করতে পারি? আসুন এইরকম তিনটে বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই, যেগুলো থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আমরা বাইবেলের উপর আস্থা রাখতে পারি: (১) সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইবেলে লেখা কথাগুলো পালটে যায়নি, (২) বাইবেলে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো পরিপূর্ণ হয়েছে এবং (৩) বাইবেলে লেখা কথাগুলো মেনে চলার ফলে লোকদের জীবন আগের চেয়ে ভালো হয়ে গিয়েছে।

বাইবেলে লেখা কথাগুলো পালটে যায়নি

৪. কেন কিছু লোক মনে করে, বাইবেলে লেখা কথাগুলো হয়তো পালটে গিয়েছে?

যিহোবা প্রায় ৪০ জন বিশ্বস্ত ব্যক্তির মাধ্যমে বাইবেলের আলাদা আলাদা বই লিখিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই সময় তারা যেটার উপরে সেই কথাগুলো লিখেছিল, তা অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে, সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক বার সেটার কপি তৈরি করা হয়েছে আর আজ আমাদের কাছে পাণ্ডুলিপির কপিগুলোই আছে। b তাই, অনেক লোক মনে করে, বাইবেলে লেখা কথাগুলো হয়তো পালটে গিয়েছে আর তারা সেগুলোর উপর আস্থা রাখতে পারে না। আপনিও কি কখনো এই বিষয়ে চিন্তা করেছেন? আসুন দেখি, কেন আমরা আস্থা রাখতে পারি, বাইবেলে লেখা কথাগুলো পালটে যায়নি।

প্রতিলিপিকারীরা খুবই সতর্কতার সঙ্গে ইব্রীয় শাস্ত্র-এর কপিগুলো তৈরি করত আর এই বিষয়ে পুরো খেয়াল রাখত, তারা যে-কপিগুলো তৈরি করেছে, সেগুলো যেন একেবারে সঠিক হয় (৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৫. কীভাবে ইব্রীয় শাস্ত্র-এর কপিগুলো তৈরি করা হয়েছিল? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

যিহোবা চাননি, তিনি যে-কথাগুলো লিখিয়েছিলেন, সেগুলো সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পালটে যাক। সেগুলো সুরক্ষিত রাখার জন্য তিনি আজ্ঞা দিয়েছিলেন, ইজরায়েলের প্রত্যেক রাজা যেন মোশির ব্যবস্থার হুবহু কপি তৈরি করে। তিনি এও আজ্ঞা দিয়েছিলেন, লেবীয়েরা যেন লোকদের সেটাতে লেখা কথাগুলো শেখায়। (দ্বিতীয়. ১৭:১৮; ৩১:২৪-২৬; নহি. ৮:৭) পরে, যখন যিহুদি বন্দিদের ব্যাবিলন থেকে মুক্ত করা হয়, তখন থেকে কিছু ব্যক্তি ইব্রীয় শাস্ত্র-এর কপি তৈরি করতে শুরু করে। (ইষ্রা ৭:৬) তাদের প্রতিলিপিকারী বলা হত। তারা খুবই সতর্কতার সঙ্গে কপিগুলো তৈরি করত। পরবর্তী সময়ে তো, তারা কপিগুলো তৈরি করার পর শুধু শব্দই নয় বরং এক একটা অক্ষরও গুনতে শুরু করে, যাতে এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে পারে যে, তারা যা লিখেছে, সেটা সঠিক। তাই এর মানে কি এই, তারা কোনো ভুল করেনি? না। আসলে, তারাও তো মানুষ, তাই না! সেইজন্য তাদের দিয়ে কিছু ছোটোখাটো ভুল হয়েছে। কিন্তু, আজ আমাদের কাছে বাইবেলের পাণ্ডুলিপিগুলোর অনেক কপি আছে আর তাই আমরা সেই ভুলগুলো ধরতে পারি। আসুন, এই বিষয়ে আরও লক্ষ করি।

৬. আজ পণ্ডিত ব্যক্তিরা কীভাবে শনাক্ত করতে পারে যে, বাইবেলের কোনো পাণ্ডুলিপিতে কিছু ভুল আছে কি না?

ধরুন, ১০০ জন লোককে বলা হল, তারা যেন নিজেদের হাতে একটা প্রবন্ধের কপি তৈরি করে। কিন্তু, তাদের মধ্যে এক জন কোনো ভুল করে ফেলে। তার ভুল ধরার একটা উপায় হল বাকি ৯৯ জনের কপির সঙ্গে তার কপি মিলিয়ে দেখা। আজ বাইবেলের পণ্ডিত ব্যক্তিরাও এইরকমই কিছু করে থাকে আর ভুলগুলো ধরার এই উপায়টা খুবই কার্যকরী। বাইবেলের আলাদা আলাদা পাণ্ডুলিপি মিলিয়ে তারা দেখতে পায় যে, কোথাও ভুল হয়েছে কি না কিংবা কিছু বাদ পড়েছে কি না।

৭. কেন আমরা বলতে পারি, প্রতিলিপিকারীরা খুবই সতর্কতার সঙ্গে কপিগুলো তৈরি করত?

এই পাণ্ডুলিপিগুলোর অনেক বার কপি তৈরি করা হয়েছে, তাই হয়তো কিছু লোক মনে করে, সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলোতে লেখা কথাগুলো পালটে গিয়েছে। তবে, প্রতিলিপিকারীরা খুবই সতর্কতার সঙ্গে কপিগুলো তৈরি করত এবং চেষ্টা করত যেন তাদের দিয়ে কোনো ভুল না হয়। কেন আমরা তা বলতে পারি? এই বিষয়ের উপর একটু মনোযোগ দিন। কিছু বছর আগে পর্যন্ত আমাদের কাছে পুরো ইব্রীয় শাস্ত্র-এর যে-সবচেয়ে পুরোনো পাণ্ডুলিপি ছিল, সেটা ১০০৮ কিংবা ১০০৯ খ্রিস্টাব্দের ছিল। এই পাণ্ডুলিপিকে ‘লেনিনগ্রেড কোডেক্স’ বলা হয়। কিন্তু সম্প্রতি, গবেষকেরা বাইবেলের আরও কিছু পাণ্ডুলিপি এবং সেগুলোর অংশ খুঁজে পেয়েছে, যেগুলো ‘লেনিনগ্রেড কোডেক্স’ থেকে প্রায় ১,০০০ বছর পুরোনো। কিছু লোক হয়তো মনে করতে পারে, এই পুরোনো পাণ্ডুলিপিগুলো এবং ‘লেনিনগ্রেড কোডেক্সের’ মধ্যে অনেক পার্থক্য হবে। কিন্তু, এমনটা নয়। পণ্ডিত ব্যক্তিরা যখন সেই পুরোনো পাণ্ডুলিপিগুলোকে ‘লেনিনগ্রেড কোডেক্সের’ সঙ্গে তুলনা করেছে, তখন তারা দেখেছে যে, যদিও একটু-আধটু জায়গায় কিছু শব্দ এদিক-ওদিক হয়েছে, তবে এই দুটোতে লেখা কথাগুলো একইরকম রয়েছে।

৮. খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এর পাণ্ডুলিপিগুলো এবং সেই সময়ের অন্যান্য বইয়ের পাণ্ডুলিপিগুলোর তুলনা করলে কী বোঝা যায়?

যেভাবে প্রতিলিপিকারীরা ইব্রীয় শাস্ত্র-এর কপিগুলো তৈরি করত, একইভাবে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা গ্রিক শাস্ত্র-এর ২৭টা বইয়ের কপিগুলো তৈরি করেছিল। তারা সভাগুলোতে এবং প্রচার করার সময়ে তা ব্যবহার করত। একজন পণ্ডিত ব্যক্তি তুলনা করে দেখেন, আজ আমাদের কাছে খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এর কতগুলো পাণ্ডুলিপি রয়েছে আর প্রথম শতাব্দীতে লেখা অন্যান্য বইয়ের কতগুলো পাণ্ডুলিপি রয়েছে। তিনি এও তুলনা করে দেখেন, সেগুলো কোন অবস্থায় আছে অর্থাৎ সেগুলোর কতগুলো অংশ নেই। তিনি বলেন: ‘অন্য বইগুলোর তুলনায় গ্রিক শাস্ত্র-এর পাণ্ডুলিপির সংখ্যা অনেক বেশি এবং সেগুলো আরও ভালো অবস্থায় রয়েছে।’ অ্যানাটমি অভ্‌ দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট নামক একটা বইয়ে লেখা আছে: “আজ আমরা যদি গ্রিক শাস্ত্র-এর কোনো ভালো অনুবাদ পড়ি, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তাতে সেই কথাগুলোই লেখা আছে, যেগুলো বাইবেলের লেখকেরা শুরুতে লিখেছিল।”

৯. যিশাইয় ৪০:৮ পদ অনুযায়ী বাইবেলের বিষয়ে কী বলা যেতে পারে?

আজ আমাদের কাছে যে-বাইবেল রয়েছে, সেটিতে সেই কথাগুলোই লেখা আছে, যেগুলো শুরুতে বাইবেলের লেখকেরা লিখেছিল। শত শত বছর ধরে প্রতিলিপিকারীরা খুবই সতর্কতার সঙ্গে বাইবেলের পাণ্ডুলিপিগুলোর কপি তৈরি করেছিল। c আর নিশ্চয়ই এই সমস্ত কিছুর পিছনে যিহোবারই হাত ছিল কারণ তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর বাক্য যেন সুরক্ষিতভাবে সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছায়। (পড়ুন, যিশাইয় ৪০:৮.) তবে, কিছু লোক বলতে পারে, ‘মানছি, এত বছর ধরে বাইবেলে লেখা কথাগুলো পালটে যায়নি, কিন্তু এটা থেকে প্রমাণিত হয় না যে, ঈশ্বর এটিকে লিখিয়েছেন।’ তাই আসুন, কিছু প্রমাণের উপর মনোযোগ দিই, যেগুলো থেকে বোঝা যায়, বাইবেল ঈশ্বরই লিখিয়েছিলেন।

বাইবেলে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো পরিপূর্ণ হয়েছে

Left: C. Sappa/DeAgostini/Getty Images; right: Image © Homo Cosmicos/Shutterstock

বাইবেলে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো অতীতেও পরিপূর্ণ হয়েছিল এবং বর্তমানেও পরিপূর্ণ হচ্ছে (১০-১১ অনুচ্ছেদ দেখুন) e

১০. একটা উদাহরণ দিন, যেটা থেকে বোঝা যায় যে, ২ পিতর ১:২১ পদে লেখা কথাগুলো সত্য। (ছবি দেখুন।)

১০ বাইবেলে লেখা অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী সেগুলো পরিপূর্ণ হওয়ার শত শত বছর আগে লেখা হয়েছিল। আর ইতিহাসও এই বিষয়ের সাক্ষি, যেমনটা লেখা ছিল, তেমনটাই হয়েছে। আর এটা জেনে আমরা অবাক হই না কারণ এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো যিহোবা লিখিয়েছিলেন। (পড়ুন, ২ পিতর ১:২১.) একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। খ্রিস্টপূর্ব ৭৭৮ থেকে ৭৩২ সালের মধ্যে যিশাইয় ব্যাবিলন নগর সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন। সেই নগর জয় করা সহজ ছিল না। তবে, তিনি ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, সেই নগর জয় করা হবে। তিনি বলেছিলেন, কোরস নামে একজন ব্যক্তি সেই নগর জয় করবেন এবং এও বলেছিলেন, কীভাবে তিনি তা করবেন। (যিশা. ৪৪:২৭–৪৫:২) এ ছাড়া, যিশাইয় বলেছিলেন, এক সময়ে ব্যাবিলন পাথরের ঢিবিতে পরিণত হবে এবং সেখানে কেউ বাস করবে না। (যিশা. ১৩:১৯, ২০) আর ঠিক এমনটাই হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ সালে মাদীয় ও পারস্য ব্যাবিলনকে জয় করে নেয়। আর আজ ব্যাবিলন নগর ধ্বংসাবস্থায় পড়ে রয়েছে।—চিরকাল জীবন উপভোগ করুন! বইয়ের পাঠ ৩-এর বিষয় ৫-এর সঙ্গে দেওয়া বাবিল নগর ধ্বংসের বিষয়ে বাইবেল ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল শিরোনামের ভিডিওটা দেখুন।

১১. ব্যাখ্যা করুন, দানিয়েল ২:৪১-৪৩ পদে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণী আজ কীভাবে পরিপূর্ণ হচ্ছে।

১১ বাইবেলে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো শুধু অতীতেই পরিপূর্ণ হয়নি বরং বর্তমানেও পরিপূর্ণ হচ্ছে। লক্ষ করুন, দানিয়েল অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তির বিষয়ে কী ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন। (পড়ুন, দানিয়েল ২:৪১-৪৩.) তিনি বলেছিলেন, এই বিশ্বশক্তি লোহার মতো “একাংশ দৃঢ়” হবে, আবার মাটির মতো “একাংশ ভঙ্গুর” হবে। আর তিনি যেমনটা বলেছিলেন, আজ ঠিক তেমনটাই হচ্ছে। এই বিশ্বশক্তি সত্যিই লোহার মতো শক্তিশালী। ব্রিটেন ও আমেরিকা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এক বড়ো ভূমিকা পালন করেছে এবং দু-বার তাদের পক্ষ জয়ী হয়েছে। আর আজ এই বিশ্বশক্তির কাছে বিশাল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী রয়েছে। তবে, এর নাগরিকেরা এর লোহার মতো শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তারা নিজেদের চাহিদা পূরণ করার জন্য ইউনিয়ন তৈরি করে। তারা স্বাধীনতা পাওয়ার এবং নিজেদের নাগরিকত্বের অধিকার পাওয়ার জন্য লড়াই করে আর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। রাজনীতির বিষয়ে ভালো জ্ঞান রয়েছে এইরকম একজন ব্যক্তি সম্প্রতি লিখেছেন: “জগতের সমস্ত বড়ো বড়ো গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে আমেরিকার লোকেরা রাজনীতির ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি বিভক্ত এবং এর সরকারগুলোর মধ্যে খুবই বিশৃঙ্খলা রয়েছে।” আর যদি ব্রিটেনের বিষয়ে দেখি, তা হলে গত কয়েক বছরে সেখানকার লোকেরা এই ব্যাপারে আরও বিভক্ত হয়ে গিয়েছে যে, তাদের ইউরোপীয় সংঘের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা উচিত কি না। এই সমস্ত কারণে অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি যা-কিছু করতে চায়, তা করতে পারে না।

১২. বাইবেলে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো থেকে আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত হই?

১২ বাইবেলে লেখা অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হয়েছে। এর ফলে, আমাদের এই নিশ্চয়তা বেড়ে যায়, যিহোবা ভবিষ্যতের জন্য যে-প্রতিজ্ঞাগুলো করেছেন, সেগুলোও পরিপূর্ণ হবে। একজন গীতরচকের মতো আমরাও ঈশ্বরের কাছ থেকে পরিত্রাণ লাভ করার জন্য অপেক্ষা করে আছি কারণ ‘তাঁর বাক্যে’ আমাদের আশা রয়েছে। (গীত. ১১৯:৮১) যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলে আমাদের এই আশা দিয়েছেন, আমাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে। (যির. ২৯:১১) আমাদের আশা পূরণ হবে কি না, সেটা এই বিষয়ের উপর নির্ভর করে না যে, মানুষ কী করে, কী করে না। এই আশা যিহোবা আমাদের দিয়েছেন, তাই আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, সেটা নিশ্চয়ই পূরণ হবে। তাই আসুন, আমরা বাইবেলে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো ভালোভাবে অধ্যয়ন করি। এর ফলে, আমাদের এই আস্থা বৃদ্ধি পাবে, বাইবেলে লেখা কথাগুলো সত্য।

বাইবেলে দেওয়া পরামর্শগুলো উপকারজনক

১৩. গীতসংহিতা ১১৯:৬৬, ১৩৮ পদ অনুযায়ী আমরা আর কোন কারণে বাইবেলের উপর আস্থা রাখতে পারি?

১৩ বাইবেলে লেখা কথাগুলোর উপর আস্থা রাখার আরেকটা কারণ হল, এগুলো মেনে চলার ফলে আজ অনেক লোক উপকার পাচ্ছে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৬৬, ১৩৮.) যেমন, এমন অনেক স্বামী-স্ত্রী ছিল, যারা ভেবেই নিয়েছিল যে, তারা বিবাহবিচ্ছেদ করবে। কিন্তু, তারা যখন বাইবেলে দেওয়া পরামর্শগুলো মেনেছিল, তখন তাদের সম্পর্ক ভালো হয়ে গিয়েছিল। এখন তাদের বাড়িতে এক ভালো পরিবেশ রয়েছে। তারা তাদের সন্তানদের খুব ভালোভাবে মানুষ করে তুলছে আর বাড়িতে সবাই একে অন্যকে অনেক ভালোবাসে এবং সম্মানও করে।—ইফি. ৫:২২-২৯.

১৪. একটা উদাহরণ দিন, যেটা থেকে বোঝা যায় যে, বাইবেলে দেওয়া পরামর্শগুলো মেনে চলার ফলে লোকদের জীবন পালটে যেতে পারে।

১৪ বাইবেলে দেওয়া পরামর্শগুলো মেনে চলার ফলে বড়ো বড়ো অপরাধীদের জীবনও পালটে গিয়েছে। জ্যাক নামে একজন ব্যক্তির প্রতিও এমনই কিছু ঘটেছিল। d তিনি জেলে বন্দি ছিলেন। তাকে এবং কিছু অন্য অপরাধীকে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল আর তাদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে হিংস্র ছিলেন। একদিন, কয়েক জন ভাই জেলে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করছিল। জ্যাকও সেখানে গিয়ে বসেন এবং তাদের কথা শুনতে থাকেন। সেই ভাইদের আচার-ব্যবহার জ্যাকের এতটাই ভালো লাগে যে, তিনিও বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করে দেন। জ্যাক বাইবেল থেকে যা-কিছু শিখছিলেন, সেগুলো মানতে শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে একজন ভালো ব্যক্তি হয়ে ওঠেন আর সবার সঙ্গে ভালোভাবে আচরণ করতে শুরু করেন। কিছুসময় পর, জ্যাক একজন অবাপ্তাইজিত প্রকাশক হন আর পরে বাপ্তিস্ম নেন। তিনি অন্য অপরাধীদের কাছে খুবই উদ্যোগের সঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে জানাতেন আর তিনি অন্ততপক্ষে চার জনকে বাইবেল অধ্যয়ন করিয়েছেন। যে-দিন জ্যাককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা ছিল, সেই দিন পর্যন্ত তিনি একেবারে পালটে গিয়েছিলেন। তার একজন উকিল বলেন, “২০ বছর আগে আমি যে-জ্যাককে জানতাম, ইনি সেই জ্যাক নন। যিহোবার সাক্ষিরা তাকে যা-কিছু শিখিয়েছে, সেগুলোর কারণে জ্যাক পুরোপুরি পালটে গিয়েছেন।” জ্যাকের শাস্তি তো পালটায়নি, তবে তার উদাহরণ থেকে আমাদের এই আস্থা বৃদ্ধি পায় যে, বাইবেলে দেওয়া পরামর্শগুলো উপকারজনক আর এগুলো মেনে চলার ফলে একজন ব্যক্তির জীবন পালটে যেতে পারে।—যিশা. ১১:৬-৯.

বাইবেলে দেওয়া পরামর্শ মেনে চলার ফলে বিভিন্ন জায়গার লোকেরা নিজেদের পালটাতে পেরেছে (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) f

১৫. বাইবেলের সত্যগুলো মেনে চলার ফলে আজ যিহোবার লোকেরা কীভাবে জগতের লোকদের চেয়ে আলাদা? (ছবি দেখুন।)

১৫ আজ জগৎ যেখানে রাজনীতি, ধনী ও গরিব, গায়ের রং এবং জাতির কারণে বিভক্ত হয়ে আছে, সেখানে যিহোবার লোকদের মধ্যে শান্তি এবং একতা রয়েছে। কেন? কারণ তারা বাইবেলে লেখা কথাগুলো মেনে চলে। (যোহন ১৩:৩৫; ১ করি. ১:১০) এই কথাগুলো আফ্রিকায় বসবাসরত জনের খুব ভালো লেগেছিল। যখন তার দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তখন তিনি সেনাবাহিনীতে ভরতি হন। কিন্তু, কিছুসময় পর তিনি অন্য দেশে পালিয়ে যান। সেখানে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে তার দেখা হয়। জন বলেন: “যারা সত্য ধর্ম অনুসরণ করে, তারা রাজনীতিতে অংশ নেয় না। তাদের মধ্যে একতা থাকে এবং তারা একে অপরকে মন থেকে ভালোবাসে। আগে আমি শুধু নিজের দেশের জন্য চিন্তা করতাম এবং এরজন্য নিজের জীবনও দিতে রাজি ছিলাম। কিন্তু, আমি যখন বাইবেল থেকে বিভিন্ন সত্য সম্বন্ধে শিখি, তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমি শুধু যিহোবার বিষয়ে চিন্তা করব এবং তাঁর কাছে আমার জীবন উৎসর্গ করব।” জন পুরোপুরি পালটে যান। এখন তিনি অন্য দেশ কিংবা জাতির লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন না বরং প্রত্যেককে বাইবেলে দেওয়া শান্তির বার্তা শোনান। সত্যিই, বাইবেলে দেওয়া পরামর্শ প্রতিটা দেশ এবং জাতির লোকের জন্য উপকারজনক। এটা আরেকটা প্রমাণ যে, আমরা বাইবেলের উপর আস্থা রাখতে পারি।

ঈশ্বরের বাক্যে লেখা কথাগুলোর উপর আস্থা রাখুন

১৬. কেন আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখা উচিত?

১৬ এই জগৎ দিন দিন খারাপ থেকে আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে, তাই আমাদের জন্য ঈশ্বরের বাক্যের উপর আস্থা রাখা কঠিন হতে পারে। লোকেরা হয়তো এমন এমন কথা বলবে, যেটার কারণে আমাদের মনে হতে পারে: ‘কী জানি, বাইবেলে লেখা কথাগুলো আদৌ সত্য কি না!’ কিংবা আমাদের মাথায় এইরকম চিন্তা আসতে পারে, ‘যিহোবা কি সত্যিই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের মাধ্যমে আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন?’ তবে, আমাদের যদি বাইবেলের উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস থাকে, তা হলে আমরা লোকদের কথায় কান দেব না আর ‘চিরকাল’ অর্থাৎ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যিহোবার দেওয়া নিয়ম পালন করে চলব। (গীত. ১১৯:১১২) আমরা অন্যদের সত্য সম্বন্ধে বলতে ‘লজ্জিত হব না’ বরং তাদের উৎসাহিত করব যেন তারাও বাইবেলে লেখা কথাগুলো মেনে চলে। (গীত. ১১৯:৪৬) আর আমাদের উপর যতই সমস্যা আসুক না কেন কিংবা তাড়না করা হোক না কেন, আমরা “ধৈর্য ও আনন্দ সহকারে” সমস্ত কিছু সহ্য করতে পারব।—কল. ১:১১; গীত. ১১৯:১৪৩, ১৫৭.

১৭. এই বছরের বার্ষিক শাস্ত্রপদ কোন বিষয়ে আমাদের নিশ্চয়তাকে বৃদ্ধি করবে?

১৭ আমরা খুবই খুশি, যিহোবা আমাদের বাইবেলের সত্যগুলো জানিয়েছেন। আজ জগতের লোকেরা জানে না, তারা কার উপর আস্থা রাখবে এবং কার উপর নয় কিংবা তাদের কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়। কিন্তু, বাইবেলের সত্যগুলো জানার কারণে আমরা বুঝতে পেরেছি, আমাদের জীবনে কী করা উচিত। আমরা বাইবেলের সত্যগুলো জানি, তাই সমস্যা এলেও আমরা সাহসের সঙ্গে কাজ করতে পারি এবং শান্ত থাকতে পারি। শুধু তা-ই নয়, আমাদের কাছে এই আশা রয়েছে, ভবিষ্যতে আমরা ঈশ্বরের রাজ্যে ভালোভাবে জীবন উপভোগ করব। আমরা প্রার্থনা করি, ২০২৩ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ এই বিষয়ে আপনার নিশ্চয়তাকে বৃদ্ধি করবে যে, ঈশ্বরের বাক্যে লেখা প্রতিটা কথা সত্য!—গীত. ১১৯:১৬০.

গান ৯৪ ঈশ্বরের বাক্যের জন্য কৃতজ্ঞ

a ২০২৩ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ পড়ার ফলে আমাদের এই আস্থা বৃদ্ধি পাবে যে, বাইবেল হল ঈশ্বরের বাক্য। এটা গীতসংহিতা ১১৯:১৬০ পদ থেকে নেওয়া হয়েছে, যেখানে লেখা আছে, “তোমার বাক্যের সমষ্টি সত্য।” এর মানে হল, ঈশ্বরের বাক্যে লেখা প্রতিটা কথা সত্য। আপনিও নিশ্চয়ই তা বিশ্বাস করেন। কিন্তু, আজ অনেক লোকের পক্ষে বাইবেল এবং সেটিতে লেখা কথাগুলোর উপর আস্থা রাখাকে কঠিন বলে মনে হয়। এই প্রবন্ধে আমরা এমন তিনটে বিষয়ের উপর মনোযোগ দেব, যেগুলো আমরা অন্যদের বলতে পারি, যাতে তারাও নিশ্চিত হয় যে, বাইবেলের উপর আস্থা রাখা যায় এবং এটিতে দেওয়া পরামর্শ মেনে চললে উপকার পাওয়া যায়।

b “পাণ্ডুলিপি” হল প্রাচীন কালের কোনো নথি, যেটা হাতে লেখা হয়েছে।

c বাইবেলকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আর কী কী করা হয়েছে, তা জানার জন্য jw.org ওয়েবসাইটে যান আর “তারা বাইবেলকে মূল্যবান হিসেবে দেখেছিলেন” শিরোনামের ভিডিওটা সার্চ করুন।

d কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

e ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একসময়ে ব্যাবিলন অনেক বড়ো নগর ছিল। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে সেটা পাথরের ঢিবিতে পরিণত হয়, ঠিক যেমনটা ঈশ্বর ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন।

f ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন যুবক, যিনি আগে যুদ্ধে অন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন, বাইবেল পড়ে শান্তিতে জীবন কাটাতে শেখেন এবং অন্যদেরও সেই বিষয়ে বলেন।