সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪

স্মরণার্থ দিবস পালন করার জন্য আপনার প্রচেষ্টা দেখে যিহোবা আশীর্বাদ করবেন!

স্মরণার্থ দিবস পালন করার জন্য আপনার প্রচেষ্টা দেখে যিহোবা আশীর্বাদ করবেন!

“আমার স্মরণে এটা কোরো।”—লূক ২২:১৯.

গান ১৯ প্রভুর সান্ধ্যভোজ

সারাংশ a

১-২. কেন আমরা প্রতি বছর স্মরণার্থ সভায় যোগ দিই?

 যিশু খ্রিস্ট প্রায় ২,০০০ বছর আগে আমাদের জন্য তাঁর জীবন দিয়েছিলেন। তাঁর এই বলিদানের কারণে আজ আমাদের কাছে চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ রয়েছে। মারা যাওয়ার আগের রাতে যিশু তাঁর শিষ্যদের আজ্ঞা দিয়েছিলেন, তারা যেন তাঁর বলিদান স্মরণ করার জন্য একটা সাধারণ অনুষ্ঠান করে এবং সেখানে রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করে।—১ করি. ১১:২৩-২৬.

আমরাও যিশুর এই আজ্ঞা পালন করি, কারণ আমরা তাঁকে অনেক ভালোবাসি। (যোহন ১৪:১৫) প্রতি বছর স্মরণার্থ মরসুমে আমরা এই বিষয়ে ধ্যান করি যে, যিশুর বলিদানের কারণে আমরা কত আশীর্বাদ লাভ করি। আর এটার জন্য আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার মাধ্যমে তাঁকে ধন্যবাদও দিই। এখান থেকে বোঝা যায়, সেই বলিদানের প্রতি আমরা কতটা উপলব্ধি দেখাই। আমরা আরও উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করি আর যত বেশি সম্ভব লোককে স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। আর আমরা নিজেরাও এই বিশেষ সভায় যোগ দেওয়ার কঠোর প্রচেষ্টা করি এবং খেয়াল রাখি যেন কোনো কিছুই সেই সভায় যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের বাধা না দেয়।

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?

যিহোবার লোকেরা স্মরণার্থ দিবস পালন করাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। এই প্রবন্ধে আমরা এইরকম তিনটে বিশেষ বিষয়ের উপর মনোযোগ দেব, যেগুলো থেকে তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। (১) তারা স্মরণার্থ দিবস সেভাবে পালন করে, যেভাবে যিশু শিখিয়েছিলেন, (২) তারা অন্য লোকদেরও স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায় আর (৩) তারা অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও স্মরণার্থ দিবস পালন করে।

আমরা সেভাবে স্মরণার্থ দিবস পালন করি, যেভাবে যিশু শিখিয়েছিলেন

৪. প্রতি বছর স্মরণার্থ সভার বক্তৃতায় কোন বিষয়গুলো বলা হয়ে থাকে আর কেন আমাদের সেগুলোকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়? (লূক ২২:১৯, ২০)

প্রতি বছর স্মরণার্থ সভায় আমরা একটা বক্তৃতা শুনি, যেখানে অনেক বিষয়ে বলা হয়ে থাকে। যেমন সেখানে আমাদের বলা হয়, কেন মানবজাতির মুক্তির মূল্যের প্রয়োজন রয়েছে এবং কীভাবে এক জন ব্যক্তির মৃত্যুর দ্বারা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির পাপ ক্ষমা হতে পারে। আমাদের এও মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে, রুটি ও দ্রাক্ষারস কোন বিষয়গুলোকে চিত্রিত করে এবং কারা সেগুলো গ্রহণ করতে পারে। (পড়ুন, লূক ২২:১৯, ২০.) আমরা সেই আশীর্বাদগুলোর উপরও মনোযোগ দিই, যেগুলো আমরা পরমদেশে লাভ করব। (যিশা. ৩৫:৫, ৬; ৬৫:১৭, ২১-২৩) বাইবেলের এই সত্যগুলো খুবই মূল্যবান, তাই আমাদের এগুলোকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। জগতে কোটি কোটি লোক এগুলো জানে না এবং এটাও বুঝতে পারে না যে, যিশুর বলিদান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর যারা যিশুর মৃত্যু স্মরণ করেও থাকে, তারা সেই উপায়ে স্মরণ করে না, যেমনটা যিশু শিখিয়েছিলেন। আসুন দেখি কেন।

৫. প্রেরিতদের মৃত্যুর পর লোকেরা কীভাবে যিশুর মৃত্যু স্মরণ করতে শুরু করে?

প্রেরিতেরা মারা যাওয়ার কিছুসময় পর, মণ্ডলীতে মিথ্যা খ্রিস্টানেরা ঢুকে পড়ে। (মথি ১৩:২৪-২৭, ৩৭-৩৯) তারা “বিকৃত শিক্ষা দেয়, যেন তারা শিষ্যদের নিজেদের দলে টেনে নিতে পারে।” (প্রেরিত ২০:২৯, ৩০) সেই ‘বিকৃত শিক্ষাগুলোর’ মধ্যে একটা বিষয় এও ছিল, যিশুকে বার বার বলিদান দিতে হবে, তা হলেই আমাদের পাপ ক্ষমা হবে। কিন্তু, বাইবেলে লেখা আছে, “খ্রিস্টও অনেকের পাপ বহন করার জন্য এক বার, চিরকালের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।” (ইব্রীয় ৯:২৭, ২৮) আজ অনেক সাধারণ লোক এই মিথ্যা শিক্ষার উপর বিশ্বাস করে। তারা “মিশা” বা “মাস্‌”-এর জন্য অনেক বার চার্চে যায়। আর কিছু লোক তো প্রতিদিন সেখানে যায়। b আবার কিছু চার্চের লোকেরা এটা মাঝে মাঝে পালন করে, কিন্তু তাদের মধ্যে বেশিরভাগই জানে না যে, যিশু কেন মারা গিয়েছিলেন। অপর দিকে অন্যেরা বলে, যিশুর বলিদানের কারণে আমরা পাপের ক্ষমা পেতে পারি না। তাই, কিছু লোক হয়তো এভাবে চিন্তা করে, ‘যিশুর বলিদানের উপর বিশ্বাস করার মাধ্যমে সত্যিই কি আমাদের পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে?’ কিন্তু আসুন দেখি, সত্য খ্রিস্টানেরা কীভাবে অন্যদের বুঝতে সাহায্য করেছিল, যিশু কেন মারা গিয়েছিলেন আর তাঁর মৃত্যু স্মরণ করার সঠিক উপায় কী।

৬. আঠেরো-শো বাহাত্তর সালের মধ্যে কিছু বাইবেল ছাত্র কী বুঝতে পারে?

আঠেরো-শো সত্তর সালে চার্লস টেজ রাসেল এবং আরও কিছু বাইবেল ছাত্র গভীরভাবে বাইবেল নিয়ে অধ্যয়ন করতে শুরু করে। তারা জানতে চেয়েছিল, যিশু কেন মারা গিয়েছিলেন, তাঁর বলিদানের কারণে কী সম্ভব হয়েছিল আর তাঁর মৃত্যু কীভাবে স্মরণ করা উচিত। ১৮৭২ সালের মধ্যে এই ব্যক্তিরা বুঝতে পেরেছিল, যিশুর মুক্তির মূল্যের উপর ভিত্তি করে সমস্ত মানুষের পাপ ক্ষমা করা যেতে পারে। তারা এই তথ্য শুধু নিজেদের কাছেই রাখেনি। তারা বিভিন্ন বই, খবরের কাগজ এবং পত্রিকার মাধ্যমে লোকদের এগুলো জানিয়েছিল। এর কিছুসময় পর, তারা বছরে শুধু এক বার যিশুর মৃত্যু স্মরণ করার জন্য একত্রিত হতে শুরু করে, ঠিক যেমনটা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা করত।

৭. বাইবেল ছাত্রেরা যে-তথ্য জানতে পেরেছিল, তা থেকে আজ কীভাবে আমরা উপকার পাচ্ছি?

অনেক বছর আগে সেই বাইবেল ছাত্রেরা যে-তথ্য জানতে পেরেছিল, তা থেকে আজ আমরাও উপকার পাচ্ছি। কীভাবে? যিহোবার আশীর্বাদে আমরা জানতে পেরেছি, যিশু কেন মারা গিয়েছিলেন এবং তাঁর মৃত্যুর কারণে কী সম্ভব হয়েছে। (১ যোহন ২:১, ২) আমরা বাইবেল থেকে এও জানতে পেরেছি, যারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে, তাদের মধ্যে কিছু লোক স্বর্গে অমর জীবন লাভ করবে এবং বেশিরভাগ লোক এই পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকবে। আমরা যখন এই বিষয়ে চিন্তা করি যে, যিহোবা আমাদের কতটা ভালোবাসেন আর আমরা যিশুর বলিদান থেকে কত আশীর্বাদ পাচ্ছি, তখন আমরা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হই। (১ পিতর ৩:১৮; ১ যোহন ৪:৯) তাই, অতীতের বিশ্বস্ত ভাইদের মতো আমরা অন্যদেরও স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাই আর এটা সেভাবে পালন করি, যেভাবে যিশু শিখিয়েছিলেন।

আমরা অন্যদেরও স্মরণার্থ সভায় আমন্ত্রণ জানাই

স্মরণার্থ সভার আমন্ত্রণপত্র বিতরণের অভিযানে আরও বেশি করে অংশ নেওয়ার জন্য আপনি কী করতে পারেন? (৮-১০ অনুচ্ছেদ দেখুন) e

৮. যিহোবার লোকেরা অন্যদের স্মরণার্থ সভায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কী কী করেছে? (ছবি দেখুন।)

বহু বছর ধরে যিহোবার লোকেরা অন্যদের স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে। যেমন, ১৮৮১ সালে ভাই-বোনদের বলা হয়েছিল, তারা যেন পেনসিলভানিয়ার অ্যালিগেনি শহরে একজন ভাইয়ের ঘরে একত্রিত হয়, যাতে তারা সবাই একসঙ্গে স্মরণার্থ দিবস পালন করতে পারে। পরে প্রতিটা মণ্ডলী নিজ নিজ এলাকায় স্মরণার্থ দিবস পালন করার জন্য একত্রিত হতে শুরু করে। এরপর ১৯৪০ সালে মার্চ মাসে ভাই-বোনদের বলা হয়, তারা যেন এই বিশেষ সভায় সেই লোকদেরও আমন্ত্রণ জানায়, যারা আরও জানতে চায়। ১৯৬০ সালে প্রথম বার মণ্ডলীগুলোকে বেথেল থেকে স্মরণার্থ সভার আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়, যাতে তারা এগুলো লোকদের দিতে পারে। তখন থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত আমরা লোকদের স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য কোটি কোটি আমন্ত্রণপত্র দিয়েছি। কিন্তু, স্মরণার্থ সভায় লোকদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কেন আমরা এত পরিশ্রম করি আর এত সময় ব্যয় করি?

৯-১০. আমরা কাদের স্মরণার্থ সভার জন্য আমন্ত্রণ জানাই আর কীভাবে তারা এখান থেকে উপকৃত হয়? (যোহন ৩:১৬)

অন্যদের স্মরণার্থ সভায় আমন্ত্রণ জানানোর একটা কারণ হল আমরা চাই, যারা যিহোবার বিষয়ে জানে না, তারা যেন জানতে পারে, যিহোবা ও যিশু তাদের জন্য কী করেছেন। (পড়ুন, যোহন ৩:১৬.) আমাদের ইচ্ছা এই যেন তারা স্মরণার্থ সভার বক্তৃতা শুনে যিহোবা সম্বন্ধে আরও জানতে চায় এবং পরে তাঁর একজন উপাসক হয়ে ওঠে। কিন্তু, আমরা অন্য ব্যক্তিদেরও স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাই।

১০ আমরা সেই ব্যক্তিদেরও আমন্ত্রণ জানাই, যারা কিছুসময় ধরে যিহোবার সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে আমরা তাদের মনে করিয়ে দিই যে, যিহোবা এখনও তাদের খুব ভালোবাসেন। আর যারা আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করে, তারা যখন স্মরণার্থ সভায় আসে, তখন আমরা তাদের দেখে অনেক খুশি হই। যখন তারা স্মরণার্থ সভায় যোগ দেয়, তখন তারা মনে করতে পারে যে, আগে যখন তারা যিহোবার সেবা করত, তখন তারা কত আনন্দে থাকত। বোন মণিকার উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। c তিনি অনেক বছর ধরে যিহোবার সেবা করছিলেন না। তবে, কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালীন তিনি আবারও প্রচার করতে শুরু করেন। ২০২১ সালে স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার পর, বোন বলেন: “এই বছর স্মরণার্থ সভা আমার জন্য খুবই বিশেষ ছিল। কুড়ি বছর ধরে আমি লোকদের কাছে প্রচার করিনি। কিন্তু এত বছর পর, যখন আমি লোকদের কাছে প্রচার করি এবং তাদের স্মরণার্থ সভার জন্য আমন্ত্রণ জানাই, তখন আমি খুব খুশি হই। যিহোবা ও যিশু আমার জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর জন্য আমি তাঁদের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। তাই, আমি পুরো উদ্যোগের সঙ্গে লোকদের স্মরণার্থ সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছি।” (গীত. ১০৩:১-৪) লোকেরা স্মরণার্থ সভায় আসুক কিংবা না-ই আসুক, আমরা উদ্যোগের সঙ্গে তাদের স্মরণার্থ সভার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে যাব। আর মনে রাখব, যিহোবা আমাদের পরিশ্রম দেখে খুশি হন।

১১. স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আমরা লোকদের আমন্ত্রণ জানানোর যে-প্রচেষ্টা করি, সেটার উপর যিহোবা কীভাবে আশীর্বাদ দিয়েছেন? (হগয় ২:৭)

১১ আমরা যখন লোকদের স্মরণার্থ সভায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর প্রচেষ্টা করি, তখন যিহোবা আমাদের আশীর্বাদ দেন। যেমন, ২০২১ সালে যখন কোভিড-১৯ অতিমারি চলছিল আর লোকেরা একত্রিত হতে পারছিল না, তখনও ২,১৩,৬৭,৬০৩ জন লোক স্মরণার্থ সভায় যোগ দিয়েছিল। সারা পৃথিবীতে যত জন যিহোবার সাক্ষি রয়েছে, তাদের থেকে প্রায় আড়াই গুণের চেয়েও বেশি লোক স্মরণার্থ সভায় যোগ দিয়েছিল। যিহোবা শুধু এটা দেখেন না যে, কত জন লোক এই সভায় যোগ দিয়েছে, কিন্তু তিনি তাদের মন দেখেন। (লূক ১৫:৭; ১ তীম. ২:৩, ৪) তাই, আমরা যদি লোকদের স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর চেষ্টা করি, তা হলে যিহোবা আমাদের নিশ্চয়ই সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের খুঁজে পেতে সাহায্য করবেন।—পড়ুন, হগয় ২:৭.

আমরা অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও স্মরণার্থ দিবস পালন করি

আমরা যখন স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি, তখন যিহোবা আমাদের আশীর্বাদ করেন (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন) f

১২. কেন কিছু ভাই-বোনের জন্য স্মরণার্থ দিবস পালন করা কঠিন হতে পারে? (ছবি দেখুন।)

১২ যিশু বলেছিলেন, শেষকালে বিভিন্ন সমস্যা আসবে। যেমন, আমাদের পরিবারের সদস্যেরা আমাদের বিরোধিতা করবে, আমাদের উপর তাড়না করা হবে, যুদ্ধ হবে, মহামারি ছড়িয়ে পড়বে এবং আরও অনেক কিছু হবে। (মথি ১০:৩৬; মার্ক ১৩:৯; লূক ২১:১০, ১১) কখনো কখনো এইসব কারণে আমাদের জন্য স্মরণার্থ দিবস পালন করা কঠিন হতে পারে। আসুন দেখি, কিছু ভাই-বোন কীভাবে এই সমস্ত বাধা কাটিয়ে উঠেছে এবং যিহোবা কীভাবে তাদের সাহায্য করেছেন।

১৩. যিহোবা যখন দেখেছিলেন, ভাই আরটম স্থির করেছেন যে, তিনি জেলেই স্মরণার্থ দিবস পালন করবেন, তখন যিহোবা ভাইকে কোন আশীর্বাদ দিয়েছিলেন?

১৩ জেল। যিহোবার সেবা করার কারণে আমাদের অনেক ভাই-বোন জেলে বন্দি রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তারা স্মরণার্থ দিবস পালন করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে। ভাই আরটমের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। ২০২০ সালের স্মরণার্থের সময়ে তিনি জেলে ছিলেন। তাকে জেলের একটা ছোটো ঘরে রাখা হয়েছিল। কখনো কখনো তিনি ছাড়া আরও চার জন অপরাধী সেখানে থাকত। এইরকম অবস্থায় তিনি কীভাবে স্মরণার্থ দিবস পালন করেছিলেন? তিনি স্মরণার্থ দিবস পালন করার জন্য যাহোক করে জিনিসপত্র জোগাড় করেছিলেন এবং চিন্তা করেছিলেন, তিনি নিজের জন্য স্মরণার্থের বক্তৃতা দেবেন। কিন্তু, তার সঙ্গে যে-অপরাধীরা থাকত, তারা অনেক গালিগালাজ করত এবং সিগারেট খেত। তাই, ভাই তাদের বলেন, তারা যেন শুধুমাত্র এক ঘণ্টার জন্য গালিগালাজ না করে এবং সিগারেট না খায়। আশ্চর্যের বিষয় হল, তারা মেনে নিয়েছিল। ভাই বলেন, “আমি তাদের জিজ্ঞেস করি, তারা স্মরণার্থের বিষয়ে কিছু জানতে চায় কি না।” প্রথমে তারা না বলে, কিন্তু তারা যখন ভাইকে স্মরণার্থ দিবস পালন করতে দেখে, তখন পরে তারা ভাইকে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে।

১৪. কোভিড-১৯ অতিমারির সময়েও কীভাবে যিহোবার লোকেরা স্মরণার্থ দিবস পালন করেছিল?

১৪ কোভিড-১৯ অতিমারি। এই অতিমারি যখন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন যিহোবার লোকেরা স্মরণার্থ দিবস পালন করার জন্য একত্রিত হতে পারছিল না। কিন্তু তারপরও তারা একসঙ্গে স্মরণার্থ দিবস পালন করেছিল। d কীভাবে? যে-মণ্ডলীগুলোর কাছে ইন্টারনেটের সুবিধা ছিল, তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্মরণার্থ দিবস পালন করেছিল। কিন্তু, যে-মণ্ডলীগুলোর কাছে ইন্টারনেট ছিল না, তারা কীভাবে স্মরণার্থ দিবস পালন করেছিল? কোনো কোনো দেশে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যেন ভাই-বোনেরা টিভিতে স্মরণার্থ সভার বক্তৃতা দেখতে পায় অথবা রেডিওতে তা শুনতে পায়। এ ছাড়া, ৫০০-রও বেশি ভাষায় স্মরণার্থের বক্তৃতার রেকর্ডিং তৈরি করা হয়েছিল। এই রেকর্ডিংগুলো সেইসমস্ত ভাই-বোনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল, যারা বিছিন্ন এলাকায় থাকে। আর এভাবে তারাও স্মরণার্থ দিবস পালন করতে পেরেছিল।

১৫. আপনি সুনিতার কাছ থেকে কী শিখতে পারেন?

১৫ পরিবারের কাছ থেকে বিরোধিতা। কারো কারো পক্ষে স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়া এই জন্যও কঠিন হয়ে পড়ে কারণ তাদের পরিবারের সদস্যেরা তাদের বিরোধিতা করে। লক্ষ করুন, সুনিতা নামে একজন বাইবেল ছাত্রীর প্রতি কী ঘটেছিল। ২০২১ সালের স্মরণার্থ দিবসের একদিন আগে তিনি সেই বোনকে ফোন করেছিলেন, যিনি তাকে বাইবেল অধ্যয়ন করাচ্ছিলেন। সেই ছাত্রী বোনকে বলেন, তিনি স্মরণার্থ সভায় যোগ দিতে পারবেন না কারণ তার পরিবারের সদস্যেরা তার বিরোধিতা করছে। এটা শুনে বোন তাকে লূক ২২:৪৪ পদ পড়ে শোনান। এরপর বোন তাকে বোঝান, আমাদের সামনে যখন কোনো বাধা আসে, তখন আমরা যিশুর মতো যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি আর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি, তিনি আমাদের সাহায্য করবেন। পরের দিন সুনিতা রুটি ও দ্রাক্ষারসের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং jw.org ওয়েবসাইটে সকালের উপাসনা দেখেছিলেন, যেটা বিশেষভাবে স্মরণার্থ দিবসের জন্য প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। পরে, সন্ধ্যা বেলায় তিনি তার রুমে চলে যান এবং ফোনের মাধ্যমে স্মরণার্থ সভায় যোগ দেন। এরপর সুনিতা সেই বোনকে লেখেন, “গতকাল আপনার সঙ্গে কথা বলে আমি অনেক উৎসাহ পেয়েছিলাম। স্মরণার্থ দিবস পালন করার জন্য আমার পক্ষে যা করা সম্ভব, আমি তা-ই করেছিলাম। আর বাকিটা যিহোবা সামলে নিয়েছিলেন। আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না, আমি কতটা খুশি আর যিহোবার প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ!” আপনার কী মনে হয়, আপনার সামনেও যদি এইরকম কোনো বাধা আসে, তা হলে যিহোবা কি আপনাকে সাহায্য করবেন?

১৬. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, আমরা যখন স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করব, তখন যিহোবা আমাদের আশীর্বাদ করবেন? (রোমীয় ৮:৩১, ৩২)

১৬ যিহোবা যখন দেখেন, আমরা স্মরণার্থ দিবস পালন করার জন্য কতটা পরিশ্রম করছি এবং যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের প্রতি কতটা কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছি, তখন তিনি অনেক খুশি হন এবং আমাদের আশীর্বাদ করেন। (পড়ুন, রোমীয় ৮:৩১, ৩২.) তাই আসুন, আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই যেন এই বছর স্মরণার্থ সভায় আমরা অবশ্যই যোগ দিই এবং স্মরণার্থ মরসুমে আরও উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার সেবা করার প্রচেষ্টা করি!

গান ১৮ মুক্তির মূল্যের জন্য কৃতজ্ঞ

a মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩ সালে পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ লোক যিশুর মৃত্যুর স্মরণার্থ দিবস পালন করবে। অনেক লোক প্রথম বার এতে যোগ দেবে। সেখানে এমন কিছু সাক্ষিও আসবে, যারা অনেক বছর ধরে স্মরণার্থ সভায় যোগ দেয়নি। আবার কিছু লোক বিভিন্ন বাধা কাটিয়ে এতে যোগ দেবে। আমাদের পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, যখন আমরা স্মরণার্থ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করব, তখন যিহোবা তা দেখে খুব খুশি হবেন।

b যে-লোকেরা “মাস্‌”-এ যায়, তারা বিশ্বাস করে যে, তারা যখন রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করে, তখন তা যিশুর শরীর ও রক্তে পরিণত হয়ে যায়। তারা মনে করে, প্রতি বার তারা যখন রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করে, তখন যিশুর শরীর ও রক্ত উৎসর্গ করা হয়।

c কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

d এ ছাড়া, jw.org ইংরেজি ওয়েবসাইটে “2021 Memorial Commemoration” শিরোনামের প্রবন্ধগুলো দেখুন।

e ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: ১৯৬০ সালের পর থেকে স্মরণার্থ দিবসের আমন্ত্রণপত্র আরও উন্নত হচ্ছে। আজ আমরা লোকদের এগুলোর ছাপানো কপি এবং ইলেকট্রনিক কপি দিতে পারি।

f ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: বাইরে দাঙ্গা ও লড়াই চলছে, কিন্তু কিছু ভাই-বোন স্মরণার্থ দিবস পালন করার জন্য একত্রিত হয়েছে।