সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩

গান ৭ যিহোবা আমার বল

আপনার জীবন যখন ঝুঁকির মুখে থাকে, তখন যিহোবা আপনাকে সাহায্য করবেন

আপনার জীবন যখন ঝুঁকির মুখে থাকে, তখন যিহোবা আপনাকে সাহায্য করবেন

“হে সদাপ্রভু, তোমার দয়া আমাকে সুস্থির রাখিত।”গীত. ৯৪:১৮.

আমরা কী শিখব?

আমরা যখন সমস্যার মধ্যে থাকি, তখন যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১-২. যিহোবার বিশ্বস্ত সেবকেরা কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়?

 আমাদের জীবনে যখন হঠাৎ করে কোনো সমস্যা আসে, তখন রাতারাতি সমস্ত কিছু ওলটপালট হয়ে যায়। লুইস নামে একজন ভাইয়ের কথা চিন্তা করুন। a তিনি বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে যাচ্ছিলেন। তারপর একদিন হঠাৎ ডাক্তার তাকে বলে যে, তার ক্যানসার হয়েছে এবং তিনি কয়েক মাসই বাঁচবেন। বোন মনিকা এবং তার স্বামী উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার সেবা করতেন। তার স্বামী একজন প্রাচীন ছিলেন। কিন্তু, একদিন বোন জানতে পারেন যে, তার স্বামী অনেক বছর ধরে তার চোখের আড়ালে পাপ করে যাচ্ছেন। অলিভিয়া নামে একজন অবিবাহিত বোনকে বাধ্য হয়ে তার ঘর ছাড়তে হয়েছিল কারণ তাদের এলাকায় একটা ঘূর্ণিঝড় আসতে যাচ্ছিল। ঝড়ের পর যখন বোন ফিরে এসেছিলেন, তখন তিনি দেখতে পেয়েছিলেন, তার বাড়ি একেবারে তছনছ হয়ে গিয়েছে। এই ভাই-বোনদের জীবন চোখের পলকে পালটে গিয়েছিল। আপনার প্রতিও হয়তো এইরকম কোনো ঘটনা ঘটেছে, তাই আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন যে, এইরকম কিছু ঘটলে একজন ব্যক্তির মনের অবস্থা কেমন হয়।

আশেপাশের লোকদের মতো যিহোবার বিশ্বস্ত সেবকদের উপরও সমস্যা আসে। এ ছাড়া, যেহেতু তারা যিহোবার সেবা করে, তাই লোকেরা তাদের বিরোধিতা করে অথবা তাদের উপর তাড়না নিয়ে আসে। যিহোবা হয়তো আমাদের এই ধরনের সমস্যাগুলো থেকে বাঁচাবেন না, কিন্তু তিনি কথা দিয়েছেন, এগুলো সহ্য করার জন্য তিনি আমাদের অবশ্যই সাহায্য করবেন। (যিশা. ৪১:১০) তাঁর সাহায্যে আমরা যেকোনো সমস্যার সময়েও আনন্দে থাকতে পারি, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি এবং তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, আমরা যখন সমস্যার জালে জড়িয়ে পড়ি, তখন যিহোবা কোন চারটে উপায়ে আমাদের সাহায্য করেন। আমরা এও আলোচনা করব, তাঁর কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে।

যিহোবা আপনাকে সুরক্ষা জোগাবেন

৩. যখন আমাদের প্রতি খারাপ কিছু ঘটে, তখন কী করা কঠিন হয়ে পড়ে?

কোন সমস্যা আসতে পারে? যখন আমাদের প্রতি খারাপ কিছু ঘটে, তখন আমরা হয়তো ঠিকভাবে চিন্তা করতে পারি না এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। কেন? কারণ সেইসময় আমাদের মন একেবারে ভেঙে যায় এবং অতিরিক্ত চিন্তা করার ফলে আমাদের মাথা কাজ করে না। আমাদের মনে হতে পারে, চারিদিকটা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে রয়েছে এবং আমরা কোন দিকে যাব, তা বুঝতে পারি না। লক্ষ করুন, আগে যে-বোনদের বিষয়ে বলা হয়েছে, তাদের উপর যখন সমস্যা এসেছিল, তখন তাদের কেমন লেগেছিল। বোন অলিভিয়া বলেন, “ঝড়ের কারণে যখন আমার বাড়িটা তছনছ হয়ে গিয়েছিল, তখন আমার মনে হয়েছিল যেন আমার সমস্ত কিছু হারিয়ে গিয়েছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না, এবার কী করব, কোথায় যাব।” আর লক্ষ করুন, বোন মনিকার সঙ্গে যখন তার স্বামী বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, তখন বোনের কেমন লেগেছিল: “আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে, ও আমার সঙ্গে এমনটা করবে। মনে হয়েছিল যেন কেউ আমার বুকের বাঁ-পাশে ছুরি মেরেছে। আমি কোনো কাজই করতে পারছিলাম না। আমি ভিতর থেকে একেবারে মরে গিয়েছিলাম।” এইরকম পরিস্থিতিতেও আপনি আস্থা রাখতে পারেন যে, যিহোবা আপনাকে সাহায্য করবেন।

৪. ফিলিপীয় ৪:৬, ৭ পদ অনুযায়ী যিহোবা আমাদের কাছে কোন প্রতিজ্ঞা করেছেন?

যিহোবা কীভাবে সাহায্য করেন? তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি আমাদের সেই শান্তি দেবেন, যেটাকে বাইবেলে ‘ঈশ্বরের শান্তি’ বলা হয়েছে। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.) এটা এমন এক স্বস্তি, যেটা শুধুমাত্র তখনই আমরা পেতে পারি, যখন যিহোবার সঙ্গে আমাদের এক দৃঢ় ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। এই শান্তির কথা মানুষ চিন্তাও করতে পারে না। এটা এমন এক অনুভূতি, যেটা শব্দে বোঝানো যায় না। কখনো কি এমনটা হয়েছে, আপনি হৃদয় উজাড় করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছেন এবং সঙ্গেসঙ্গে আপনার মন শান্ত হয়ে গিয়েছে? এটাই হল “ঈশ্বরের সেই শান্তি।”

৫. ঈশ্বরের শান্তি আমাদের হৃদয় ও মনকে কীভাবে রক্ষা করে?

ফিলিপীয় ৪:৭ পদে এও বলা হয়েছে, ঈশ্বরের শান্তি “তোমাদের হৃদয় ও মনকে রক্ষা করবে।” এখানে যে-শব্দকে “রক্ষা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা প্রায়ই এমন সৈনিকদের বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হত, যারা নগরের প্রবেশদ্বারে থাকত, যাতে শত্রুরা তাদের উপর আক্রমণ না করে। এই কারণে নগরের লোকেরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারত। তারা জানত যে, নগরের প্রবেশদ্বারে সৈনিকেরা পাহারা দিচ্ছে। একইভাবে, ঈশ্বরের শান্তি যখন আমাদের হৃদয় ও মনকে রক্ষা করে, তখন আমরা মনের শান্তি পাই কারণ আমরা জানি, আমরা সুরক্ষিত। (গীত. ৪:৮) হান্নার মতো আমাদের পরিস্থিতি যদি সঙ্গেসঙ্গে ঠিক না-ও হয়, তারপরও আমরা অনেকটা হলেও মনের শান্তি পেতে পারি। (১ শমূ. ১:১৬-১৮) আর আমাদের মন যখন শান্ত থাকবে, তখন আমরা ঠিকমতো চিন্তা করতে পারব এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব।

যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি মনের শান্তি পাচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রার্থনা করুন কারণ ‘ঈশ্বরের শান্তি’ আপনার হৃদয় ও মনকে রক্ষা করবে (৪-৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)


৬. ঈশ্বরের শান্তি লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (ছবিও দেখুন।)

আমাদের কী করতে হবে? আপনি যখন অনেক সমস্যায় থাকেন, তখন পাহারাদ্বারকে ডাকুন। এর মানে হল, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রার্থনা করে যান, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি ঈশ্বরের শান্তি পাচ্ছেন। (লূক ১১:৯; ১ থিষল. ৫:১৭) ভাই লুইসের উদাহরণের উপর আবারও মনোযোগ দিন। তিনি বলেন, যখন তিনি এবং তার স্ত্রী এনা জানতে পেরেছিলেন যে, তিনি আর কয়েক মাস বাঁচবেন, তখন তারা কী করেছিল। ভাই বলেন, “এইরকম সময়ে চিকিৎসা এবং অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক কঠিন হয়। কিন্তু আমরা যখন প্রার্থনা করেছিলাম, তখন আমরা সেই শান্তি পেয়েছিলাম, যেটা আমাদের খুবই দরকার ছিল।” ভাই এবং তার স্ত্রী বার বার হৃদয় উজাড় করে যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলেন যেন তিনি তাদের শান্তি, স্বস্তি ও প্রজ্ঞা দেন, যাতে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আর যিহোবার তাদের বিনতি শুনেছিলেন। আপনি যদি এই মুহূর্তে কোনো সমস্যার মধ্যে থাকেন, তা হলে বার বার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। তখন যিহোবা আপনাকে এমন শান্তি দেবেন, যেটা আপনার মন ও হৃদয়কে রক্ষা করবে।—রোমীয় ১২:১২.

যিহোবা আপনাকে সামলাবেন

৭. যখন আমরা অনেক সমস্যার মধ্যে থাকি, তখন আমাদের কেমন লাগে?

কোন সমস্যা আসতে পারে? আমরা যখন কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাই, তখন আমাদের মুড সবসময় ঠিক থাকে না। আমরা ঠিকমতো চিন্তা করতে পারি না আর হয়তো আমাদের আচার-ব্যবহার বার বার পালটাতে থাকে। যেমন একটা উত্তাল সমুদ্রে জাহাজ ঢেউয়ের কারণে এদিক-ওদিক দুলতে থাকে, ঠিক একইভাবে এই কঠিন পরিস্থিতির কারণে আমাদের আবেগ অনুভূতিও বার বার পালটাতে থাকে। ভাই লুইস মারা যাওয়ার পর বোন এনাও এমনটাই অনুভব করেছিলেন। তিনি বলেন: “অনেক বার আমি নিজেকে খুবই একা মনে করতাম। আমার পরিস্থিতির কারণে আমি অনেক কাঁদতাম আর আমি এটা ভেবেও রেগে যেতাম যে, কেন ও আমাকে ছেড়ে চলে গেল।” কখনো কখনো একাকিত্বের অনুভূতি বোনকে ঘিরে ধরত। আর তাকে যখন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হত, যেটা আগে ভাই লুইস নিতেন, তখন বোন অনেক উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়তেন। অনেকসময় তার মনে হত, তিনি সমুদ্রের মাঝে ঝড়ের কবলে পড়েছেন। তাই, আমরা যখন চিন্তায় এবং উদ্‌বিগ্নতায় ডুবে যাই, তখন যিহোবা কীভাবে আমাদের সাহায্য করেন?

৮. গীতসংহিতা ৯৪:১৮ পদ অনুযায়ী যিহোবার কোন কথাগুলোর উপর আমরা আস্থা রাখতে পারি?

যিহোবা কীভাবে সাহায্য করেন? তিনি আমাদের এই আস্থা দেন, যে তিনি আমাদের সামলাবেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৯৪:১৮.) একটা জাহাজ যখন ঝড়ের কবলে পড়ে, তখন সেটা এত দুলতে থাকে যে, মনে হতে পারে যেন সেটা ডুবে যাবে। তাই, অনেক জাহাজের নীচের দিকে দুটো যন্ত্র (স্টেবিলাইজার) থাকে। এগুলোর কারণে ঝড়ের মধ্যেও জাহাজ অতিরিক্ত দোলে না এবং স্থির থাকে। জাহাজের লোকেরা ভয় পায় না এবং তারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। কিন্তু, অনেকসময় এই যন্ত্র একমাত্র তখনই ভালো করে কাজ করে, যখন জাহাজ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। একইভাবে সমস্যার মধ্যেও আমরা যদি সামনের দিকে এগিয়ে যাই অর্থাৎ বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিহোবার সেবা করে চলি, তা হলে তিনি আমাদের সামলাবেন।

আমাদের প্রকাশনা থেকে গবেষণা করুন, যেটার মাধ্যমে আপনি নিজেকে সামলাতে পারবেন (৮-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)


৯. গবেষণা করার মাধ্যমে কীভাবে আমরা নিজেদের সামলাতে পারি? (ছবিও দেখুন।)

আমাদের কী করতে হবে? আপনার যদি মনে হয় যে, আপনি অতিরিক্ত ইমোশনাল হয়ে পড়ছেন, তা হলে ক্রমাগত প্রার্থনা করুন এবং সভায় ও প্রচারে যাওয়ার সম্পূর্ণ চেষ্টা করুন। আপনি আগে যতটা করতেন, ততটা হয়তো এখন আর করতে পারছেন না। কিন্তু, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে এমন কিছু আশা করেন না, যেটা আমরা করতে পারব না। (তুলনা করুন, লূক ২১:১-৪.) ব্যক্তিগত অধ্যয়ন এবং সেই বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য সময় বের করুন। কেন? কারণ যিহোবা তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে বাইবেলের উপর ভিত্তি করে এমন অনেক তথ্য দিয়েছেন, যেগুলো আমাদের ঝড়ের মধ্যেও স্থির থাকতে সাহায্য করবে। আপনি যিহোবার সাক্ষিদের গবেষণা নির্দেশিকা এবং JW লাইব্রেরি অ্যাপে গবেষণা করে সেই তথ্যগুলো পেতে পারেন, যেগুলো আপনি খুঁজছেন। আবারও বোন মনিকার উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি বলেন যে, তিনি যখন অতিরিক্ত ইমোশনাল হয়ে পড়তেন, তখন তিনি গবেষণা করতেন। যেমন, কখনো কখনো তিনি “রাগ” শব্দটা টাইপ করতেন। আবার কখনো কখনো “বিশ্বাসঘাতকতা” কিংবা “বিশ্বস্ত” এই শব্দগুলো টাইপ করতেন। তারপর তিনি সেই প্রবন্ধগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত পড়তেন, যতক্ষণ না তার মন শান্ত হত। তিনি বলেন, “আমি যখন গবেষণা করতে বসতাম, তখন আমি অতিরিক্ত চিন্তা করতাম। মনে যা আসত, তা-ই টাইপ করতাম। কিন্তু, কিছুসময় পর আমার মন শান্ত হয়ে যেত। মনে হত যেন যিহোবা আমার গলা জড়িয়ে ধরেছেন। পড়তে পড়তে আমি বুঝতে পারতাম, যিহোবা আমার মনের অবস্থা বোঝেন এবং তিনি আমাকে সাহায্য করছেন।” যিহোবার সাহায্যে আপনিও নিজেকে সামলাতে পারবেন এবং নিজের মনকে শান্ত রাখতে পারবেন।—গীত. ১১৯:১৪৩, ১৪৪.

যিহোবা আপনার পাশে থাকবেন

১০. আমাদের প্রতি যখন খারাপ কিছু ঘটে, তখন আমরা কেমন অনুভব করি?

১০ কোন সমস্যা আসতে পারে? আমাদের প্রতি যখন খারাপ কিছু ঘটে, তখন কোনো দিন আমরা হয়তো ঠিক থাকি, কিন্তু কোনো দিন আমরা হয়তো এত দুঃখে থাকি যে, কিছুই করতে ইচ্ছা করে না। আমরা হয়তো নিজেকে এমন এক খেলোয়াড়ের মতো মনে করতে পারি, যে একটা সময়ে খুব জোরে দৌড়াত, কিন্তু চোট পাওয়ার পর এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। আমরা আগে যে-কাজ খুব সহজেই করে নিতাম, এখন সেই কাজ করতে অনেক কঠিন লাগে। অথবা একটা সময়ে আমরা যে-কাজগুলো করে খুশি হতাম, এখন সেগুলো আর করতে ইচ্ছা করে না। এলিয়ের মতো আমাদেরও হয়তো ওঠার শক্তি থাকে না, মনে হয় যেন সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকি। (১ রাজা. ১৯:৫-৭) কিন্তু যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, আমরা যখন নিজেদের দুর্বল বলে মনে করি, তখন তিনি আমাদের সাহায্য করবেন।

১১. যিহোবা আর কোন উপায়ে আমাদের সাহায্য করেন? (গীতসংহিতা ১৮:১৮)

১১ যিহোবা কীভাবে আমাদের সাহায্য করেন? যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি আমাদের পাশে থাকবেন বা সাহায্য করবেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৮:১৮.) একজন খেলোয়াড় যখন চোট পায়, তখন সে নিজে থেকে হাঁটতে পারে না, তার সাহায্যের প্রয়োজন হয়। একইভাবে, উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার সেবা করে চলার জন্য আমাদেরও সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। আমরা যখন নিজেদের দুর্বল বলে মনে করি, তখন যিহোবা আমাদের বলেন, “কেননা আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর তোমার দক্ষিণ হস্ত ধারণ করিব; তোমাকে বলিব, ভয় করিও না, আমি তোমার সাহায্য করিব।” (যিশা. ৪১:১৩) যিহোবা রাজা দায়ূদকেও সাহায্য করেছিলেন। শত্রুরা যখন তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছিল এবং তার উপর যখন একটার পর একটা সমস্যা এসেই যাচ্ছিল, তখন তিনি যিহোবাকে বলেছিলেন, “তোমার দক্ষিণ হস্ত আমাকে ধারণ করিয়াছে।” (গীত. ১৮:৩৫) তবে, যিহোবা কীভাবে আমাদের ধারণ করেন অর্থাৎ আমাদের সাহায্য করেন?

আপনার পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব অথবা প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার ক্ষেত্রে ইতস্তত বোধ করবেন না (১১-১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১২. আমরা যখন দুর্বল হয়ে পড়ি, তখন যিহোবা কাদের মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেন?

১২ যিহোবা প্রায়ই অন্যদের আমাদের সাহায্য করার জন্য পরিচালিত করেন। এভাবে, তিনি আমাদের সাহায্য করেন। যেমন একবার দায়ূদ যখন নিজেকে দুর্বল বলে মনে করছিলেন, সেইসময় তার বন্ধু যোনাথন তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি দায়ূদকে উৎসাহিত করেছিলেন এবং তাকে সাহায্য করেছিলেন। (১ শমূ. ২৩:১৬, ১৭) আর যখন এলিয়ের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল, তখন যিহোবা ইলীশায়ের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করেছিলেন। (১ রাজা. ১৯:১৬, ২১; ২ রাজা. ২:২) বর্তমানে যিহোবা হয়তো আমাদের পরিবারের সদস্যদের, বন্ধুদের কিংবা প্রাচীনদের মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেন। কিন্তু, আমরা যখন দুঃখের মধ্যে থাকি, তখন হয়তো আমাদের কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করে না। আমরা একা একা থাকতে চাই আর এই অনুভূতি স্বাভাবিক। তাই, যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি?

১৩. যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (ছবিও দেখুন।)

১৩ আমাদের কী করতে হবে? আমাদের হয়তো অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করতে ইচ্ছা করে না। তবে, এই বিষয় নিয়ে আমাদের অতিরিক্ত চিন্তা করা উচিত নয়। আমরা যখন অন্যদের থেকে নিজেদের আলাদা করে রাখি, তখন আমরা শুধু নিজেদের বিষয়ে চিন্তা করি এবং নিজেদের সমস্যায় জড়িয়ে থাকি। এই কারণে আমরা হয়তো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারি। (হিতো. ১৮:১) এটা ঠিক যে, আমরা কখনো কখনো কিছুসময়ের জন্য একা থাকতে চাই। আর অন্যেরা যখন আমাদের প্রতি খারাপ কিছু করে, তখন আমরা হয়তো নিজেদের আরও গুটিয়ে নিই। এটা ভুল নয়। আমরা যদি বেশ কিছুসময় ধরে একা থাকি, তা হলে এটা এমন হবে যেন যিহোবা আমাদের সাহায্য করতে চাইছেন, কিন্তু আমরা তাঁর সাহায্য নিচ্ছি না। তাই, যখন আপনি দুঃখে কিংবা হতাশায় থাকেন, তখন আপনি হয়তো অন্যদের সঙ্গে দেখা করতে চান না। তারপরও যখন আপনার পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব অথবা প্রাচীনেরা সাহায্য করতে আসে, তখন তাদের সাহায্য নিন। মনে রাখবেন, যিহোবা আসলে তাদের মাধ্যমেই আপনাকে সাহায্য করছেন।—হিতো. ১৭:১৭; যিশা. ৩২:১, ২.

যিহোবা আপনাকে সান্ত্বনা দেবেন

১৪. কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের খুব ভয় লাগে?

১৪ কোন সমস্যা আসতে পারে? কখনো কখনো আমরা হয়তো অনেক ভয় পাই। বাইবেলে বলা হয়েছে যে, যিহোবার কিছু বিশ্বস্ত দাসদের যখন তাদের শত্রুরা মেরে ফেলার চেষ্টা করছিল কিংবা তারা যখন অন্য সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তারা ভয় পেয়ে গিয়েছিল এবং থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছিল। (গীত. ১৮:৪; ৫৫:১,) একইভাবে, আমরা যিহোবার সেবা করি বলে আমাদের সহপাঠীরা, সহকর্মীরা, পরিবারের সদস্যেরা অথবা সরকার হয়তো আমাদের বিরোধিতা করে। কিংবা এটাও হতে পারে, কোনো গুরুতর রোগের কারণে আমাদের জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এইরকম পরিস্থিতিতে আমরা হয়তো অনেক ভয় পেয়ে যাই এবং নিজেদের অসহায় বলে মনে করি। আমরা নিজেদের একটা শিশুর মতো মনে করতে পারি, যে কিছুই করতে পারে না। এইরকম পরিস্থিতিতে যিহোবা কীভাবে আমাদের সাহায্য করেন?

১৫. গীতসংহিতা ৯৪:১৯ পদের কথাগুলো থেকে কোন বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি?

১৫ যিহোবা কীভাবে আমাদের সাহায্য করেন? যিহোবা আমাদের সান্ত্বনা দেন এবং আমাদের স্বস্তি জোগান। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৯৪:১৯.) এই পদ পড়ে আমরা হয়তো একটা ছোটো মেয়ের কথা চিন্তা করতে পারি, যে অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছে এবং ঘুমাতে পারছে না কারণ বাইরে মেঘ ডাকছে এবং বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। কিন্তু, সেইসময় তার বাবা আসে, তাকে নিজের কোলে তুলে নেয় এবং সে যতক্ষণ না ঘুমোচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে কোলে নিয়ে থাকে। ঝড় এখনও থেমে যায়নি, কিন্তু সেই মেয়ে তার বাবার কোলে এতটাই সুরক্ষিত বোধ করে যে, তার ভয় একদমই উধাও হয়ে যায়। ঠিক একইভাবে আমরাও যখন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাই এবং আমাদের ভয় লাগে, তখন আমরাও চাই যেন যিহোবা আমাদের তার কোলে তুলে নেন এবং আমাদের মন যতক্ষণ না শান্ত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কোলে নিয়ে থাকেন। কিন্তু, যিহোবার কাছ থেকে এমন সান্ত্বনা লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

বাইবেল পড়ুন এবং যিহোবার কাছ থেকে সান্ত্বনা লাভ করুন (১৫-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১৬. যিহোবার কাছ থেকে সান্ত্বনা লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (ছবিও দেখুন।)

১৬ আমাদের কী করতে হবে? প্রার্থনা করুন এবং বাইবেল পড়ুন, এভাবে যিহোবার সঙ্গে সময় কাটান। (গীত. ৭৭:১, ১২-১৪) এটা করার একটা অভ্যাস গড়ে তুললে যখনই আপনি উদ্‌বিগ্ন হবেন, তখন সবচেয়ে প্রথমে আপনি যিহোবাকেই ডাকবেন। তাঁকে আপনার সমস্ত চিন্তার বিষয় বলুন আর তাঁকে বলুন, আপনি কেন ভয় পাচ্ছেন। এরপর বাইবেল পড়ুন এবং যিহোবার কথাও শুনুন, তখন আপনি অনুভব করতে পারবেন, যিহোবা আপনাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। (গীত. ১১৯:২৮) যখনই আপনার ভয় লাগবে, তখনই আপনি বাইবেলের কোনো অংশ পড়ে সান্ত্বনা লাভ করতে পারেন। যেমন আপনি ইয়োব, গীতসংহিতা ও হিতোপদেশ বই পড়ে কিংবা মথি ৬ অধ্যায় পড়ে সাহস লাভ করতে পারেন। যখন আপনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করবেন এবং বাইবেল পড়বেন, তখন আপনি অনেক সান্ত্বনা লাভ করবেন।

১৭. আমরা কোন বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি?

১৭ আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি, যখন আমরা সমস্যার মধ্যে জড়িয়ে পড়ি, তখন যিহোবা আমাদের একা ছেড়ে দেবেন না। তিনি আমাদের সাহায্য করবেন। (গীত. ২৩:৪; ৯৪:১৪) যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি আমাদের সুরক্ষা জোগাবেন, আমাদের সামলাবেন, আমাদের পাশে থাকবেন এবং আমাদের সান্ত্বনা দেবেন। যিশাইয় ২৬:৩ পদে যিহোবা সম্বন্ধে লেখা রয়েছে, “যাহার মন তোমাতে সুস্থির, তুমি তাহাকে শান্তিতে, শান্তিতেই রাখিবে, কেননা তোমাতেই তাহার নির্ভর।” তাই যিহোবার উপর নির্ভর করুন এবং তিনি যে-উপায়ে আপনাকে সাহায্য করছেন, সেগুলো থেকে পুরোপুরি উপকার লাভ করুন। আপনি যদি এমনটা করেন, তা হলে আপনি আবারও শক্তি ফিরে পাবেন এবং সমস্যা এলেও আপনি স্থির থাকতে পারবেন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

  • আমাদের বিশেষ করে কখন যিহোবার সাহায্যের প্রয়োজন হয়?

  • যখন আমরা সমস্যার জালে জড়িয়ে পড়ি, তখন কোন চারটে উপায়ে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন?

  • যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

গান ১২ মহান যিহোবা

a কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।