সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২

গান ১৯ প্রভুর সান্ধ্যভোজ

আপনি কি বছরের সবচেয়ে বিশেষ দিনটার জন্য প্রস্তুত?

আপনি কি বছরের সবচেয়ে বিশেষ দিনটার জন্য প্রস্তুত?

“আমার স্মরণে এটা কোরো।”লূক ২২:১৯.

আমরা কী শিখব?

স্মরণার্থ সভা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, আমরা এটার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে পারি এবং এখানে যোগ দেওয়ার জন্য আমরা অন্যদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

১. স্মরণার্থ দিবস কেন বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন? (লূক ২২:১৯, ২০)

 যিহোবার লোকেরা প্রতি বছর যিশুর মৃত্যুর দিন স্মরণ করে। এটাকে স্মরণার্থ দিবস বলা হয়। এই দিনটা স্মরণ করার জন্য যিশু তাঁর শিষ্যদের আজ্ঞা দিয়েছিলেন। এটা আমাদের কাছে বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। (পড়ুন, লূক ২২:১৯, ২০.) আমরা প্রত্যেকে এই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকি। কেন? আসুন, কিছু কারণ লক্ষ করি।

২. কেন আমরা স্মরণার্থ দিবসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকি?

স্মরণার্থ দিবসের কারণে আমরা এই বিষয়টার উপর মনোযোগ দিতে পারি, মুক্তির মূল্য আমাদের কাছে কতটা মূল্যবান এবং এটার কোন কোন উপকার রয়েছে। আর আমরা এই বিষয়টার উপর মনোযোগ দিতে পারি, কীভাবে আমরা যিশুর বলিদানের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি। (২ করি. ৫:১৪, ১৫) আমরা “পরস্পরকে উৎসাহিত” করারও সুযোগ পাই। (রোমীয় ১:১২) প্রতি বছর এমন অনেক ভাই-বোন স্মরণার্থ সভায় যোগ দেয়, যারা অনেক দিন ধরে সভাতে যোগ দিচ্ছে না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ যিহোবার কাছে ফিরে আসে কারণ এই সময়ে ভাই-বোনেরা তাদের প্রেমের সঙ্গে স্বাগত জানায়। আগ্রহী ব্যক্তিরা যখন স্মরণার্থ সভায় আসে, তারা সেখানে যা-কিছু দেখে ও শোনে, সেই কারণে তারা বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করে আর জীবনের পথে চলতে শুরু করে। এই সমস্ত কারণে স্মরণার্থ দিবস আমাদের কাছে খুবই বিশেষ একটা দিন।

৩. স্মরণার্থ দিবসের কারণে সারা পৃথিবীতে যিহোবার লোকদের মধ্যে একতার বন্ধন কীভাবে দৃঢ় হয়? (ছবিও দেখুন।)

আমরা এই কারণেও স্মরণার্থ দিবসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি, কারণ এর ফলে আমাদের মধ্যে একতার বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। পৃথিবীর আলাদা আলাদা জায়গায় সূর্যাস্তের পর যিহোবার লোকেরা স্মরণার্থ দিবস পালন করার জন্য একত্রিত হয়। আমরা সবাই একই বক্তৃতা শুনি, যেখানে আমাদের বোঝানো হয় যে, মুক্তির মূল্য আমাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যিহোবার প্রশংসা করার জন্য দুটো গান গাই এবং লোকদের সামনে রুটি ও দ্রাক্ষারস ঘোরানো হয়। এই সভাতে চারটে প্রার্থনা করা হয়, যেগুলোর শেষে আমরা হৃদয় থেকে “আমেন” বলি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সারা পৃথিবীতে সমস্ত মণ্ডলী একই উপায়ে স্মরণার্থ দিবস পালন করে। তাই চিন্তা করুন, যিহোবা ও যিশু যখন স্বর্গ থেকে দেখেন যে, আমরা কীভাবে একত্রিত হয়ে তাঁদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছি, তখন তাঁরা কতটা খুশি হন!

স্মরণার্থ দিবস সারা পৃথিবীতে থাকা ভাই-বোনদের একতার বন্ধনে বেঁধে রাখে (৩ অনুচ্ছেদ দেখুন) f


৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী জানব?

এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে প্রশ্নের উত্তর জানতে পারব: আমরা স্মরণার্থ দিবসের জন্য কীভাবে নিজেদের হৃদয়কে প্রস্তুত করতে পারি? এটা থেকে উপকার লাভ করার জন্য আমরা অন্যদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি? যে-ভাই-বোনেরা অনেক দিন ধরে সভাতে যোগ দিচ্ছে না, তাদের আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানলে আমরা সেই বিশেষ দিনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারব।

স্মরণার্থ দিবসের জন্য নিজের হৃদয়কে প্রস্তুত করুন

৫. (ক) কেন আমাদের এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করা উচিত, মুক্তির মূল্য আমাদের কাছে কতটা মূল্যবান? (গীতসংহিতা ৪৯:৭, ৮) (খ) যিশু কেন মারা গিয়েছিলেন? ভিডিও থেকে আপনি কী শিখেছেন?

স্মরণার্থ দিবসের জন্য নিজেদের হৃদয়কে প্রস্তুত করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল, এই বিষয়ে চিন্তা করা যে, মুক্তির মূল্য আমাদের কাছে কতটা মূল্যবান এবং এর ফলে কত কিছু সম্ভব হয়েছে। আসলে, পাপ ও মৃত্যু থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য আমরা নিজেরা কিছুই করতে পারতাম না। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৪৯:৭, ৮; যিশু কেন মারা গিয়েছিলেন? ভিডিওটাও দেখুন।) a তাই, যিহোবা ও যিশু আমাদের জন্য কতই-না বড়ো এক মূল্য জুগিয়েছেন! যিহোবা আমাদের উদ্ধার করার জন্য নিজের পুত্রকে বলি হিসেবে দান করেছেন। (রোমীয় ৬:২৩) চিন্তা করুন, যিহোবা ও যিশু আমাদের জন্য কত কিছু সহ্য করেছেন। যত বেশি আমরা এই বিষয়ে চিন্তা করব, তত বেশি মুক্তির মূল্যের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা বেড়ে যাবে। যিহোবা ও যিশু আমাদের জন্য যা-কিছু ত্যাগস্বীকার করেছেন, আসুন সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা বিষয় লক্ষ করি। প্রথমে আমরা মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থার উপর মনোযোগ দিই।

৬. মুক্তির মূল্য কী? বোঝান।

মুক্তির মূল্য হল এমন এক মূল্য, যা কোনো কিছুকে উদ্ধার করার বা কোনো কিছুকে ফিরে পাওয়ার জন্য দেওয়া হয়। যখন প্রথম পুরুষ আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তখন তিনি নিখুঁত ছিলেন এবং তিনি অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি যখন পাপ করেছিলেন, তখন তিনি চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ হারিয়েছিলেন। এই সুযোগ তার বংশধরেরাও হারিয়েছিল। আদম যা-কিছু হারিয়েছিলেন, সেগুলো ফিরে পাওয়ার জন্য যিশু নিজের নিখুঁত জীবন বলি হিসেবে দিয়েছিলেন। যিশু যখন পৃথিবীতে এসেছিলেন, তখন তিনি “কোনো পাপ করেননি কিংবা প্রতারণামূলক কথাও বলেননি।” (১ পিতর ২:২২) তিনি যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন তিনি নিখুঁত ছিলেন, ঠিক যেমন আদম পাপ করার আগে নিখুঁত ছিলেন। তাই, নিজের নিখুঁত জীবন দেওয়ার মাধ্যমে যিশু এক সমরূপ মুক্তির মূল্য দিয়েছিলেন।—১ করি. ১৫:৪৫; ১ তীম. ২:৬.

৭. যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি কোন সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন?

যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তাঁকে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তিনি সবসময় তাঁর পিতা যিহোবার বাধ্য ছিলেন। যিশু যখন ছোটো ছিলেন, তখন তিনি তাঁর বাবা-মায়ের বাধ্য ছিলেন, যদিও তারা নিখুঁত ছিলেন না। (লূক ২:৫১) আর তিনি যখন একজন অল্পবয়সি ছিলেন, সেই সময় হয়তো তাঁর উপর চাপ এসেছিল যেন তিনি তাঁর বাবা-মায়ের বাধ্য না হন এবং যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত না থাকেন। যিশু যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গিয়েছিলেন, সেই সময় শয়তান তাঁকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল যেন তিনি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত না থাকেন। (মথি ৪:১-১১) শয়তান স্থির করে নিয়েছিল, সে যিশুকে দিয়ে পাপ করাবেই, যাতে তিনি মুক্তির মূল্য না দিতে পারেন।

৮. যিশু আর কোন সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন?

যিশু যখন পৃথিবীতে তাঁর সেবা শুরু করেছিলেন, তখন তাঁকে আরও কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তাঁর শত্রুরা তাঁকে তাড়না করেছিল আর এমনকী তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। (লূক ৪:২৮, ২৯; ১৩:৩১) তাঁর শিষ্যেরা যে-ভুলগুলো করেছিল, সেগুলোর পরিণতি তাঁকেই ভোগ করতে হয়েছিল। (মার্ক ৯:৩৩, ৩৪) আর যখন তাঁর বিচার করা হয়েছিল, তখন লোকেরা তাঁকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করেছিল এবং অনেক কষ্ট দিয়েছিল। তাঁকে একজন অপরাধীর মতো খুবই নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল। (ইব্রীয় ১২:১-৩) মারা যাওয়ার আগের মুহূর্তগুলোতে তাঁকে যে-কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল, সেগুলো তাঁকে যিহোবার সাহায্য ছাড়াই সহ্য করতে হয়েছিল। bমথি ২৭:৪৬.

৯. যিশু আমাদের জন্য যে মুক্তির মূল্য দিয়েছেন, সেই বিষয়ে চিন্তা করে আমাদের কেমন লাগে? (১ পিতর ১:৮)

মুক্তির মূল্য দেওয়ার জন্য যিশুকে কত কিছুই-না সহ্য করতে হয়েছে! আমরা যখন এই বিষয়ে চিন্তা করি, তখন আমাদের হৃদয় তাঁর প্রতি ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে, তাই না?—পড়ুন, ১ পিতর ১:৮.

১০. মুক্তির মূল্য জোগানোর জন্য যিহোবাকে কী সহ্য করতে হয়েছিল?

১০ একটু চিন্তা করুন, যিহোবাকে কত কিছু সহ্য করতে হয়েছিল যেন যিশু মুক্তির মূল্য দিতে পারেন। একজন বাবা এবং তার ছেলের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ হয়। তাহলে কল্পনা করুন, যিহোবার সঙ্গে যিশুর সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ! (হিতো. ৮:৩০) চিন্তা করুন, যিহোবা যখন দেখেছিলেন যে, যিশু পৃথিবীতে এত কষ্ট সহ্য করছেন, তখন তাঁর কেমন লেগেছিল। যিহোবা যখন দেখেছিলেন, লোকেরা কীভাবে তাঁর পুত্রকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করছে, তাঁকে কষ্ট দিচ্ছে এবং তাঁকে তাড়না করছে, তখন যিহোবার হৃদয় সত্যিই অনেক দুঃখে ভরে গিয়েছিল।

১১. যিশুকে যখন মেরে ফেলা হয়েছিল, তখন যিহোবার কেমন লেগেছিল? বোঝান।

১১ কোনো বাবা-মায়ের যদি সন্তান মারা যায়, তা হলে তারা ভালোভাবেই বোঝেন যে, সন্তান হারানোর কষ্ট কতটা যন্ত্রণাদায়ক। যদিও আমরা বিশ্বাস করি, যারা মারা গিয়েছে, যিহোবা তাদের একদিন পুনরুত্থিত করবেন, তা সত্ত্বেও প্রিয়জনের মৃত্যুর কষ্ট সহ্য করা অনেক কঠিন। তাই চিন্তা করুন, ৩৩ খ্রিস্টাব্দে ১৪ নিশান যখন যিহোবা দেখেছিলেন যে, কীভাবে তাঁর প্রিয় পুত্রকে তিলে তিলে মেরে ফেলা হচ্ছে, তখন তিনি কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন। cমথি ৩:১৭.

১২. স্মরণার্থ দিবসের জন্য কীভাবে আমরা আমাদের হৃদয়কে প্রস্তুত করতে পারি?

১২ স্মরণার্থ দিবসের আগে আপনি ব্যক্তিগত অধ্যয়নে কিংবা পারিবারিক উপাসনায় মুক্তির মূল্যের বিষয়ে আরও ভালোভাবে অধ্যয়ন করতে পারেন। আপনি চাইলে যিহোবার সাক্ষিদের গবেষণা নির্দেশিকা কিংবা অন্যান্য প্রকাশনার সাহায্যে এই বিষয়ে গবেষণা করতে পারেন, যাতে আপনি মুক্তির মূল্যের বিষয়ে ভালোভাবে বুঝতে পারেন। d এ ছাড়া, আমাদের খ্রিস্টীয় জীবন ও পরিচর্যা—সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-এ স্মরণার্থ দিবসের জন্য বাইবেল পাঠের যে-তালিকা দেওয়া থাকে, সেই অনুযায়ী আপনি বাইবেল পড়তে পারেন। স্মরণার্থ দিবসের জন্য সকালের উপাসনার যে-ভিডিও তৈরি করা হয়, সেটা দেখতে ভুলবেন না। আমরা যখন এভাবে স্মরণার্থ দিবসের জন্য আমাদের হৃদয়কে প্রস্তুত করব, তখন আমরা এটা থেকে অন্যদেরও উপকার লাভ করার জন্য সাহায্য করতে পারব।—ইষ্রা ৭:১০.

স্মরণার্থ দিবস থেকে উপকার লাভ করার জন্য অন্যদের সাহায্য করুন

১৩. লোকেরা যাতে স্মরণার্থ দিবস থেকে উপকার লাভ করে, সেইজন্য সবচেয়ে প্রথমে আমাদের কী করতে হবে?

১৩ স্মরণার্থ দিবস থেকে উপকার লাভ করার জন্য আমরা অন্যদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি? সবচেয়ে প্রথমে আমাদের লোকদের আমন্ত্রণপত্র দিতে হবে। আমরা প্রচার করার সময়ে আমন্ত্রণপত্র দিতে পারি। আমরা প্রচারের সময়ে তো আমন্ত্রণপত্র দেবই, কিন্তু সেইসঙ্গে আমরা কিছু ব্যক্তির নাম লিখতে পারি, যাদের আমরা আমন্ত্রণ জানাতে চাই, যেমন আমাদের আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী, সহপাঠী কিংবা অন্যান্য লোক। আমাদের কাছে যদি ছাপানো আমন্ত্রণপত্র না থাকে, তা হলে আমরা ফোন কিংবা ট্যাবলেটের মাধ্যমে লোকদের আমন্ত্রণপত্র পাঠাতে পারি। আসুন, আমরা যত বেশি সম্ভব লোককে আমন্ত্রণপত্র দিই কারণ আমরা জানি না, কারা কারা আসবে।—উপ. ১১:৬.

১৪. উদাহরণের সাহায্য বোঝান, আমরা যখন কোনো পরিচিত ব্যক্তিকে আলাদাভাবে আমন্ত্রণ জানাই, তখন সেটার কোন উপকার আসতে পারে।

১৪ আমরা যখন কোনো পরিচিত ব্যক্তিকে আমন্ত্রণপত্র দিই এবং তাকে বলি যে, এটা বিশেষভাবে তার জন্য, তখন এটা তার হৃদয় স্পর্শ করতে পারে এবং তার স্মরণার্থ সভায় আসার ইচ্ছা হতে পারে। লক্ষ করুন, একজন বোনের প্রতি কী ঘটেছিল। তার স্বামী সত্যে ছিলেন না। একদিন তার স্বামী আনন্দের সঙ্গে তাকে বলেন, তিনি স্মরণার্থ সভায় যেতে চান। এটা শুনে বোন অবাক হয়ে যান, কারণ বোন আগেও তাকে অনেক বার সভাতে আসার জন্য বলেছিলেন, কিন্তু তিনি যাননি। তাহলে, এখন এমন কী ঘটেছিল? তার স্বামী তাকে বলেন, তিনি অন্য একজন ব্যক্তির কাছ থেকে আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন। তিনি বলেন, মণ্ডলীর একজন প্রাচীন, যাকে তিনি ভালোভাবেই চেনেন, তিনি এই আমন্ত্রণপত্র দিয়েছেন। বোনের স্বামী সেই বছর স্মরণার্থ সভায় যান এবং পরের বছরগুলোতেও তিনি ক্রমাগত স্মরণার্থ সভায় যোগ দেন।

১৫. আমরা যখন কাউকে স্মরণার্থ সভায় আমন্ত্রণ জানাই, তখন আমাদের কোন বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে?

১৫ আমরা যখন কাউকে স্মরণার্থ সভায় আমন্ত্রণ জানাই, তখন তার মনে হয়তো কিছু প্রশ্ন আসতে পারে, বিশেষ করে তিনি যদি আগে আমাদের সভায় না এসে থাকেন। তাই আগে থেকে চিন্তা করুন, লোকেরা কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারে এবং আপনি কীভাবে তাদের উত্তর দিতে পারেন। (কল. ৪:৬) যেমন, কিছু লোকের মনে হয়তো এইরকম প্রশ্ন আসতে পারে, ‘সেই অনুষ্ঠানে কী হবে?’ ‘সেটা কতক্ষণ ধরে চলবে?’ ‘সেখানে আমাদের কেমন জামাকাপড় পরে যেতে হবে?’ ‘সেখানে যারা আসবে, তাদের কি টাকাপয়সা দিতে হবে?’ ‘সেখানে কি চাঁদা তোলা হবে?’ আপনি যদি কাউকে সভায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান, তা হলে আপনি তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘আপনি কি এই বিষয়ে আরও জানতে চান?’ তার মনে যদি কিছু প্রশ্ন থাকে, তা হলে আপনি সেগুলোর উত্তর দিতে পারেন। আপনি তাকে যিশুর মৃত্যু স্মরণ করুন এবং কিংডম হলে কী হয়? ভিডিও দেখাতে পারেন। এভাবে তিনি বুঝতে পারবেন, আমাদের সভা কীভাবে পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া, আপনি তার সঙ্গে চিরকাল জীবন উপভোগ করুন! বইয়ের পাঠ ২৮-এ দেওয়া কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন।

১৬. লোকেরা যখন স্মরণার্থ সভায় যোগ দেয়, তখন তাদের মনে কোন কোন প্রশ্ন আসতে পারে?

১৬ যে-নতুন ব্যক্তিরা স্মরণার্থ সভায় যোগ দেবে, তাদের মনে হয়তো আরও কিছু প্রশ্ন আসতে পারে। তারা হয়তো জানতে চাইবে, কেন কেউই রুটি এবং দ্রাক্ষারস খায়নি? অথবা কেন কেবলমাত্র অল্প কিছু লোকই তা খেয়েছে? তারা হয়তো এটাও জানতে চাইবে, আমাদের স্মরণার্থ সভা কোন কোন দিনে হয় অথবা আমাদের প্রতিটা সভা এভাবেই হয় কি না। যদিও এর মধ্যে কিছু বিষয়ে স্মরণার্থ সভার বক্তৃতায় বলা হয়, কিন্তু তারপরও আমাদের হয়তো নতুন ব্যক্তিদের আরও ভালো করে বোঝাতে হবে। এইরকম কিছু প্রশ্নের উত্তর jw.org ওয়েবসাইটে “কেন যিহোবার সাক্ষিরা অন্যদের চেয়ে ভিন্ন উপায়ে প্রভুর সান্ধ্যভোজ পালন করে থাকে?” প্রবন্ধে বলা হয়েছে। আপনি এর মাধ্যমেও তাকে বোঝাতে পারেন। আমরা চাই যেন এমন ব্যক্তিরা স্মরণার্থ সভা থেকে উপকার লাভ করে, যাদের “সঠিক মনোভাব” রয়েছে। তাই আমরা স্মরণার্থ সভার আগে, স্মরণার্থ সভা চলাকালীন এবং স্মরণার্থ সভার পরে তাদের সাহায্য করার জন্য প্রচেষ্টা করে থাকি।—প্রেরিত ১৩:৪৮.

যারা অনেক দিন ধরে সভাতে ও প্রচারে যোগ দিচ্ছে না, তাদের সাহায্য করুন

১৭. কীভাবে প্রাচীনেরা সেই ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারেন, যারা অনেক দিন ধরে সভাতে যোগ দিচ্ছে না? (যিহিষ্কেল ৩৪:১২, ১৬)

১৭ স্মরণার্থ মরসুমে কীভাবে প্রাচীনেরা সেই ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারেন, যারা অনেক দিন ধরে সভাতে যোগ দিচ্ছে না? এটা বুঝতে সাহায্য করুন যে, তাদের প্রতি আপনাদের চিন্তা রয়েছে। (পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩৪:১২, ১৬.) স্মরণার্থ সভার আগে যত সম্ভব এই ধরনের ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করুন। তাদের আশ্বস্ত করুন যে, আপনারা তাদের ভালোবাসেন এবং সব দিক দিয়ে তাদের সাহায্য করতে চান। তাদের স্মরণার্থ সভার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তারা যদি সভায় আসে, তা হলে প্রেমের সঙ্গে তাদের স্বাগত জানান। স্মরণার্থ সভার পরেও এই ভাই-বোনদের সঙ্গে ক্রমাগত কথা বলুন এবং তাদের সঙ্গে দেখা করুন। তাদের সেই সমস্ত সাহায্য দিন, যেটার মাধ্যমে তারা আবারও যিহোবার কাছে ফিরে আসতে পারে।—১ পিতর ২:২৫.

১৮. আমরা সেই ভাই-বোনদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি, যারা অনেক দিন ধরে সভাতে যোগ দিচ্ছে না? (রোমীয় ১২:১০)

১৮ স্মরণার্থ সভায় যখন এইরকম ভাই-বোনেরা আসবে, তখন মণ্ডলীর প্রত্যেকে তাদের সাহায্য করতে পারে। কীভাবে? প্রেমের সঙ্গে তাদের স্বাগত জানান, তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করুন এবং তাদের প্রতি সম্মান দেখান। (পড়ুন, রোমীয় ১২:১০.) চিন্তা করুন, সভায় আসতে তারা কতটা লজ্জা পাচ্ছে। তারা হয়তো ভাবছে যে, সভায় গেলে ভাই-বোনেরা তাদের দেখে কী বলবে অথবা তাদের সম্বন্ধে কী ভাববে। e তাই, তাদের এমন কিছু জিজ্ঞেস করবেন না অথবা এমন কিছু বলবেন না, যেটার কারণে তারা লজ্জায় পড়তে পারে অথবা তাদের খারাপ লাগতে পারে। (১ থিষল. ৫:১১) মাথায় রাখবেন, এই ব্যক্তিরা আমাদের ভাই-বোন এবং যিহোবার মূল্যবান মেষ। তাই, এই ব্যক্তিদের সঙ্গে আবারও মিলে যিহোবার উপাসনা করা আমাদের জন্য কতই-না আনন্দের এক বিষয় হবে!—গীত. ১১৯:১৭৬; প্রেরিত ২০:৩৫.

১৯. মুক্তির মূল্য নিয়ে চিন্তা করার ফলে কোন কোন উপকার আসে?

১৯ যিশু যে প্রতি বছর আমাদের তাঁর মৃত্যু স্মরণ করতে বলেছেন, এটার জন্য আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ! এটা করার ফলে আমরা নিজেরা উপকার পাই এবং অন্যদেরও উপকার পেতে সাহায্য করি। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) আমরা যিহোবা ও যিশুকে আরও বেশি ভালোবাসতে পারি এবং আমরা দেখাতে পারি যে, তাঁরা আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর কারণে আমরা তাঁদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। ভাই-বোনদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয় এবং আমরা হয়তো অন্যদের এটা শেখানোর সুযোগ পাই যে, তারাও মুক্তির মূল্যের ফলে প্রচুর আশীর্বাদ পেতে পারে। আসুন, আমরা মনপ্রাণ দিয়ে স্মরণার্থ সভার জন্য প্রস্তুতি নিই কারণ এটা বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

  • কীভাবে আমরা স্মরণার্থ দিবসের জন্য নিজেদের হৃদয়কে প্রস্তুত করতে পারি?

  • স্মরণার্থ দিবস থেকে উপকার লাভ করার জন্য আমরা কীভাবে অন্যদের সাহায্য করতে পারি?

  • আমরা সেই ভাই-বোনদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি, যারা অনেক দিন ধরে সভাতে যোগ দিচ্ছে না?

গান ১৮ মুক্তির মূল্যের জন্য কৃতজ্ঞ

a এই প্রবন্ধে যে-ভিডিও ও প্রবন্ধগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো দেখার জন্য jw.org ওয়েবসাইটে গিয়ে সার্চ বক্সে টাইপ করুন।

b ২০২১ সালে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার এপ্রিল মাসে দেওয়া “পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন” দেখুন।

d গবেষণার জন্য কিছু পরামর্শ” বক্সটা দেখুন।

e ভাই-বোনেরা কেমন আচরণ করেছিল?” বক্স এবং ছবি দেখুন। একজন ভাই অনেক দিন ধরে সভাতে যোগ দেন না। কিংডম হলে যেতে তার লজ্জা লাগে, কিন্তু তিনি সাহস করে সেখানে যান। সেখানে সবাই তাকে প্রেম ও আনন্দের সঙ্গে স্বাগত জানায় এবং সবার সঙ্গে দেখা করে তার খুব ভালো লাগে।

f ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: পৃথিবীর এক প্রান্তে থাকা যিহোবার সাক্ষিরা স্মরণার্থ দিবস পালন করছে এবং অন্যান্য দেশে ভাই-বোনেরা এই বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।