সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি মহিলাদের সঙ্গে যিহোবার মতো করে আচরণ করেন?

আপনি কি মহিলাদের সঙ্গে যিহোবার মতো করে আচরণ করেন?

ভাইদের জন্য এটা কত খুশির বিষয় যে, তারা অনেক বিশ্বস্ত বোনের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারে। এই বোনেরা যিহোবার সেবা করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে, তাই আমরা তাদের খুব ভালোবাসি এবং তাদের অনেক মূল্যবান হিসেবে দেখি! a তাই ভাইয়েরা, বোনদের সঙ্গে প্রেম সহকারে আচরণ করুন, তাদের প্রতি সম্মান দেখান এবং কখনো তাদের প্রতি ভেদাভেদের মনোভাব দেখাবেন না। কিন্তু আমরা যেহেতু নিখুঁত নই, তাই অনেকসময় আমাদের পক্ষে এমনটা করা হয়তো কঠিন হয়ে পড়ে। আর অনেক ভাইয়ের জন্য কিছু অন্য কারণে এমনটা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

আমাদের কিছু ভাই এমন সংস্কৃতিতে বড়ো হয়ে উঠেছে, যেখানে মহিলাদের পুরুষদের চেয়ে নীচু চোখে দেখা হয়। উদাহরণ স্বরূপ, বলিভিয়ায় থাকা হান্স নামে একজন সীমা অধ্যক্ষ বলেন: “কিছু পুরুষ এমন পরিবেশে বড়ো হয়েছে, যেখানে লোকেরা মনে করে, মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের স্থান উঁচু। তাই, তারা নিজেদের বড়ো বলে মনে করে এবং প্রায়ই মহিলাদের প্রতি খারাপ আচরণ করে।” তাইওয়ানে থাকা শেনশিয়েন নামে একজন প্রাচীন বলেন: “আমি যেখানে থাকি, সেখানকার বেশিরভাগ লোক মনে করে, মহিলাদের কখনো পুরুষদের কথার মাঝে কথা বলা উচিত নয়। আর যদি একজন পুরুষ কোনো ব্যাপারে একজন মহিলার মতামত জানান, তা হলে কখনো কখনো অন্যেরা সেই পুরুষকে নীচু চোখে দেখে।” আবার কিছু পুরুষ যদিও সরাসরি মহিলাদের প্রতি ভেদাভেদের মনোভাব দেখায় না, তবে তারা হয়তো অন্য উপায়ে দেখাতে পারে, তারা মহিলাদের নীচু চোখে দেখে। যেমন, তারা হয়তো মহিলাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করে।

তবে আনন্দের বিষয় হল, একজন ব্যক্তি যে-সংস্কৃতিতেই বড়ো হয়ে উঠুক না কেন, তিনি পালটাতে পারেন। তিনি এমনটা চিন্তা করা শিখতে পারেন যে, পুরুষ ও মহিলা সমান সমান। (ইফি. ৪:২২-২৪) এমনটা করার জন্য তাকে যিহোবার মতো হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কীভাবে যিহোবা মহিলাদের সঙ্গে আচরণ করেন, ভাইয়েরা কীভাবে যিহোবার মতো চিন্তাভাবনা গ্রহণ করতে পারে আর সেইসঙ্গে বোনদের সমাদর করার বিষয়ে প্রাচীনেরা কীভাবে এক উত্তম উদাহরণ রাখতে পারেন।

যিহোবা মহিলাদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করেন?

মহিলাদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা উচিত, এই বিষয়ে যিহোবা আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ রেখেছেন। যিহোবা পৃথিবীতে থাকা তাঁর সমস্ত সন্তানের জন্য অনেক চিন্তা করেন এবং তাদের খুব ভালোবাসেন। (যোহন ৩:১৬) আর যে-মহিলারা বিশ্বস্তভাবে তাঁর সেবা করে, তিনি তাদের প্রিয় মেয়ে হিসেবে দেখেন। আসুন লক্ষ করি, যিহোবা কোন কোন উপায়ে মহিলাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে থাকেন।

যিহোবা তাদের সঙ্গে পক্ষপাতিত্ব করেন না। যিহোবা পুরুষ ও মহিলাকে তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন। (আদি. ১:২৭) আর এমনটা নয় যে, তিনি পুরুষদের মহিলাদের চেয়ে বেশি পছন্দ করেন কিংবা পুরুষদের মহিলাদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান ও যোগ্য হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। (২ বংশা. ১৯:৭) যিহোবা পুরুষ ও মহিলাদের এমন দক্ষতা দিয়েছেন যেন তারা বাইবেলের সত্যগুলো বুঝতে পারে এবং তাঁর মতো অপূর্ব গুণ দেখাতে পারে। যিহোবা এমন প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলাকে ভালোবাসেন, যারা তাঁর উপর বিশ্বাস করে। তিনি পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই এক চমৎকার আশা দিয়েছেন, তা সেটা পরমদেশ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা কিংবা স্বর্গে রাজা ও যাজক হিসেবে সেবা করার আশা, যেটাই হোক না কেন। (২ পিতর ১:১) এখান থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যিহোবা মহিলাদের সঙ্গে কোনোভাবেই পক্ষপাতিত্ব করেন না।

যিহোবা তাদের কথা শোনেন। তিনি এই বিষয়ে মনোযোগ দেন যে, মহিলারা কেমন অনুভব করে এবং তারা কোন বিষয়ে চিন্তিত ও উদ্‌বিগ্ন। উদাহরণ স্বরূপ, যখন রাহেল ও হান্না হৃদয় উজাড় করে যিহোবাকে বলেছিলেন, তারা কেমন অনুভব করছেন, তখন যিহোবা তাদের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন। (আদি. ৩০:২২; ১ শমূ. ১:১০, ১১, ১৯, ২০) যিহোবা বাইবেলে এমন বিবরণও লিখিয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে, পুরুষেরা মহিলাদের কথা শুনেছিল। যেমন, বাইবেল থেকে আমরা পড়ি, অব্রাহাম যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করে তার স্ত্রী সারার কথা শুনেছিলেন। (আদি. ২১:১২-১৪) রাজা দায়ূদ অবীগলের কথা শুনেছিলেন। দায়ূদ এও বলেছিলেন, যিহোবাই অবীগলকে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য পাঠিয়েছেন। (১ শমূ. ২৫:৩২-৩৫) যিশুও, যিনি হুবহু তাঁর পিতার মতো, তিনি তাঁর মা মরিয়মের কথা শুনেছিলেন। (যোহন ২:৩-১০) এই উদাহরণগুলো থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যিহোবা মহিলাদের সম্মান করেন।

যিহোবা তাদের উপর আস্থা রাখেন। যেমন হবার উপর যিহোবার আস্থা ছিল, তাই তিনি পুরো পৃথিবীর দেখাশোনা করার জন্য আদমের পাশাপাশি হবাকেও দায়িত্ব দিয়েছিলেন। (আদি. ১:২৮) এমনটা করার মাধ্যমে যিহোবা দেখিয়েছিলেন, তিনি হবাকে তার স্বামী আদমের চেয়ে কম যোগ্য বলে নয় বরং তাকে এমন এক সঙ্গী হিসেবে দেখেন, যিনি আদমকে সমর্থন করবেন। এ ছাড়া, দবোরা এবং হুল্‌দার উপরও যিহোবার আস্থা ছিল। সেইজন্যই তিনি তাদের ভাববাদিনী হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন, যাতে তারা তাঁর লোকদের পরামর্শ দিতে পারেন আর এমনকী রাজা ও বিচারককেও পরামর্শ দিতে পারেন। (বিচার. ৪:৪-৯; ২ রাজা. ২২:১৪-২০) আজও যিহোবা খ্রিস্টান বোনদের উপর আস্থা রাখেন, তাই তিনি তাদের আলাদা আলাদা কাজ দিয়েছেন। অনেক বিশ্বস্ত বোন প্রচারক, অগ্রগামী এবং মিশনারি হিসেবে সেবা করছে। তারা কিংডম হল এবং শাখা অফিস ডিজাইন ও নির্মাণ আর সেইসঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ কাজেও সাহায্য করে থাকে। আর অনেক বোন বেথেল এবং অনুবাদ বিভাগেও কাজ করে। এই বোনেরা এক বড়ো বাহিনীর মতো, যাদের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর ইচ্ছা পূরণ করেন। (গীত. ৬৮:১১) এখান থেকে বোঝা যায়, যিহোবা কোনোভাবেই মহিলাদের দুর্বল এবং অযোগ্য বলে মনে করেন না।

ভাইয়েরা কীভাবে যিহোবার মতো করে বোনদের সঙ্গে আচরণ করতে পারে?

ভাইয়েরা, আপনারা কি বোনদের সঙ্গে সেভাবে আচরণ করেন, যেভাবে যিহোবা তাদের সঙ্গে আচরণ করেন? এটা জানার জন্য আপনাকে ভালো করে চিন্তা করতে হবে, মহিলাদের বিষয়ে আপনার চিন্তাধারা কেমন এবং আপনি তাদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করেন। এরজন্য আপনাকে কারো কাছ থেকে সাহায্য নিতে হতে পারে। যেমন, একজন ডাক্তার কিছু মেশিনের সাহায্যে এটা জানতে পারেন, একজন ব্যক্তির হৃৎপিণ্ডের অবস্থা কেমন। একইভাবে, একজন ভালো বন্ধু এবং ঈশ্বরের বাক্যের সাহায্যে আপনি জানতে পারেন, মহিলাদের সম্বন্ধে আপনার চিন্তাধারা কেমন এবং আপনার চিন্তাধারা যিহোবার মতো কি না।

একজন ভালো বন্ধুকে জিজ্ঞেস করুন। (হিতো. ১৮:১৭) আমাদের এমন এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা উচিত, যার উপর আমাদের আস্থা রয়েছে এবং যে আমাদের ভালোবাসে, তবে আমাদের সম্বন্ধে সত্য কথাও বলে। তাকে জিজ্ঞেস করুন: “তোমার কী মনে হয়, আমি বোনদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করি? আমার আচরণ থেকে বোনেরা কি বুঝতে পারে, আমি তাদের সম্মান করি? এই বিষয়ে কোথায় আমাকে উন্নতি করতে হবে?” আপনার বন্ধু যদি আপনাকে বলে যে, আপনি কোথায় উন্নতি করতে পারেন, তা হলে অজুহাত না দেখিয়ে ইচ্ছুক মনে নিজেকে পরিবর্তন করুন।

ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করুন। বোনদের বিষয়ে আমাদের চিন্তাধারা কেমন এবং আমরা কীভাবে তাদের সঙ্গে আচরণ করি, এটা জানার সবচেয়ে উত্তম উপায় হল, ঈশ্বরের বাক্য পরীক্ষা করে দেখা। (ইব্রীয় ৪:১২) আমরা যখন বাইবেল অধ্যয়ন করব, তখন আমরা এমন ব্যক্তিদের সম্বন্ধে জানতে পারব, যারা মহিলাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছিল আর এমন ব্যক্তিদের সম্বন্ধেও জানতে পারব, যারা উত্তম আচরণ করেনি। এরপর, আমরা তাদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে দেখতে পারি। ফলে আমরা জানতে পারব, আমাদের আচরণ ভালো না কি খারাপ। শুধু তা-ই নয়, আমাদের খেয়াল রাখা উচিত, আমরা যেন কোনো একটা শাস্ত্রপদকে ধরে বসে না থাকি কারণ এভাবে আমরা শাস্ত্রের কথাগুলোর ভুল অর্থ বের করে ফেলতে পারি। এর পরিবর্তে, আমাদের অন্যান্য শাস্ত্রপদের উপরও মনোযোগ দেওয়া উচিত। উদাহরণ স্বরূপ, ১ পিতর ৩:৭ পদে স্ত্রীদের ‘ভঙ্গুর পাত্র’ বলা হয়েছে। b তাই, এর মানে কি এই যে, স্ত্রীরা স্বামীদের তুলনায় কম যোগ্য কিংবা কম বুদ্ধিমান? না, তা নয়। আমরা যদি গালাতীয় ৩:২৬-২৯ পদ পড়ি, সেখানে বলা হয়েছে, যিহোবা পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরও যিশুর সঙ্গে স্বর্গে শাসন করার জন্য বাছাই করেছেন। এভাবে, আমরা যখন ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করব এবং কোনো ভালো বন্ধুকে জিজ্ঞেস করব যে, মহিলাদের সঙ্গে আমরা কেমন আচরণ করি, তখন আমরা বোনদের প্রতি সম্মান দেখাতে পারব।

বোনদের প্রতি সম্মান দেখানোর ক্ষেত্রে কেন প্রাচীনেরা এক উত্তম উদাহরণ রাখেন?

মণ্ডলীর ভাই-বোনদের প্রতি সম্মান দেখানোর ক্ষেত্রে প্রাচীনদের কাছ থেকেও আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। এই ক্ষেত্রে প্রাচীনেরা আমাদের সবার জন্য এক উত্তম উদাহরণ। তারা কোন কোন উপায়ে তা করেন? আসুন, কিছু বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই।

প্রাচীনেরা বোনদের প্রশংসা করেন। এই ব্যাপারে প্রেরিত পৌল প্রাচীনদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ রেখেছেন। তিনি যখন রোমের মণ্ডলীর উদ্দেশে চিঠি লিখেছিলেন, তখন তিনি অনেক বোনের নাম উল্লেখ করে তাদের প্রশংসা করেছিলেন। (রোমীয় ১৬:১২) চিন্তা করুন, যখন পৌলের চিঠি সেই মণ্ডলীতে পড়া হয়েছিল, তখন সেই বোনেরা কতই-না আনন্দিত হয়েছিল! ঠিক একইভাবে, আজ যখন প্রাচীনেরা বোনদের ভালো গুণগুলোর উপর মনোযোগ দেন আর দেখেন যে, তারা যিহোবার জন্য কত কিছু করে, তখন তারা নির্দিষ্টভাবে তাদের প্রশংসা করেন। এর ফলে বোনেরা বুঝতে পারে, ভাইয়েরা তাদের সম্মান করে এবং তাদের অনেক মূল্যবান হিসেবে দেখে। কখনো কখনো একজন প্রাচীন যখন একজন বোনকে উৎসাহজনক কোনো কথা বলেন, তখন সেই বোন হয়তো অনেক শক্তি লাভ করেন। হতে পারে, সেইসময়ে বোনের সেই উৎসাহের প্রয়োজন ছিল, যাতে তিনি বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে চলতে পারেন।—হিতো. ১৫:২৩.

প্রশংসা করুন

প্রাচীনেরা বোনদের মন থেকে প্রশংসা করেন এবং নির্দিষ্টভাবে বলেন, বোনদের কোন বিষয়গুলো তাদের ভালো লেগেছে। এমনটা করা কেন ভালো? বোন জেসিকা বলেন: “যখন ভাইয়েরা কোনো বোনকে এই কথা বলেন যে, ‘তিনি অনেক ভালো কাজ করেছেন,’ তখন এটা শুনে খুব ভালো লাগে। তবে, যখন ভাইয়েরা নির্দিষ্টভাবে বলেন, কোন বিষয়টা ভালো লেগেছে, তখন আমরা আরও খুশি হই। যেমন, তারা হয়তো বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের সভাতে শান্তভাবে বসতে শেখাই কিংবা সময় বের করে আমাদের বাইবেল ছাত্রদের সভার জন্য নিয়ে আসতে যাই। এইরকম কথা শুনলে আমাদের আরও বেশি ভালো লাগে।” তাই প্রাচীনেরা যখন নির্দিষ্টভাবে বলেন, বোনদের কোন বিষয়গুলো তাদের ভালো লাগে, তখন বোনেরা বুঝতে পারে যে, তারা মণ্ডলীর জন্য অনেক অর্থ রাখে এবং সবাই তাদের মূল্যবান হিসেবে দেখে।

প্রাচীনেরা বোনদের কথা শোনেন। প্রাচীনেরা নম্র হয়ে থাকেন আর এমনটা চিন্তা করেন না যে, কেবল তাদের কাছেই উত্তম পরামর্শ রয়েছে। তারা বোনদের কাছ থেকেও পরামর্শ নেন এবং বোনেরা যখন কথা বলে, তখন তারা মন দিয়ে তাদের কথা শোনেন। এমনটা করার দ্বারা প্রাচীনেরা বোনদের উৎসাহিত করেন আর এর ফলে তাদেরও উপকার হয়। কীভাবে? ভাই জেরার্ডো, যিনি বেথেলে সেবা করেন এবং একজন প্রাচীন, তিনি বলেন: “আমি প্রায়ই বোনদের কাছ থেকে পরামর্শ নিই এবং এর ফলে, আমি আমার কাজ আরও ভালো করে করতে পারি। এমন অনেক কাজ আছে, যেগুলো করার ক্ষেত্রে ভাইদের চেয়ে বোনদের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে।” মণ্ডলীতে অনেক বোন অগ্রগামী হিসেবে সেবা করে, তাই তারা নিজেদের এলাকার লোকদের খুব ভালোভাবে জানে। ব্রায়েন নামে একজন প্রাচীন বলেন: “আমাদের বোনদের মধ্যে এমন অনেক গুণ ও দক্ষতা রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে সংগঠন অনেক উপকৃত হয়। তাই, বোনদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন!”

শুনুন

বিজ্ঞ প্রাচীনেরা বোনদের পরামর্শ সঙ্গেসঙ্গে অগ্রাহ্য করেন না। কেন? এই বিষয়ে একজন প্রাচীন ভাই এডওয়ার্ড বলেন: “অনেকসময় হতে পারে, কোনো বোনের পরামর্শ এবং তার অভিজ্ঞতা থেকে একজন ভাই কোনো বিষয়কে আরও ভালো করে বুঝতে পেরেছে এবং অন্যদের চেয়ে আরও বেশি সহানুভূতি দেখাতে শিখেছে।” (হিতো. ১:৫) যদি একজন প্রাচীনের মনে হয়, কোনো বোনের পরামর্শ সঠিক নয়, তারপরও তিনি সেই বোনকে তার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ দিতে পারেন। তিনি তাকে এই বিষয়ে প্রশংসা করতে পারেন যে, তিনি এটা নিয়ে চিন্তা করেছেন এবং নিজের মতামত জানিয়েছেন।

প্রাচীনেরা বোনদের ট্রেনিং দেন। প্রাচীনেরা দূর পর্যন্ত চিন্তা করেন, তাই তারা বোনদের আলাদা আলাদা কাজ শেখান। উদাহরণ স্বরূপ, তারা হয়তো বোনদের শেখান, কীভাবে ক্ষেত্রের পরিচর্যা সভা পরিচালনা করতে হয়, যাতে কোনো বাপ্তাইজিত ভাই না থাকলে তারা সেই সভা পরিচালনা করতে পারে। এ ছাড়া, সংগঠনের বিল্ডিংগুলো নির্মাণ এবং সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ কাজে সাহায্য করার জন্য তারা হয়তো বোনদের কিছু যন্ত্রপাতি ও মেশিন চালাতে শেখান। বেথেলেও বোনদের আলাদা আলাদা কাজ করার ট্রেনিং দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ, কেনাকাটা বিভাগ, অ্যাকাউন্ট বিভাগ এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিং আর সেইসঙ্গে এইরকমই অন্যান্য বিভাগ। প্রাচীনেরা যখন বোনদের কোনো ট্রেনিং দেন, তখন তারা দেখান যে, বোনদের উপর তাদের এই আস্থা আছে, তারা সেই কাজ ভালো করে করতে পারবে।

ট্রেনিং দিন

যে-বোনদের প্রাচীনেরা ট্রেনিং দিয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকে অন্যদেরও সাহায্য করতে পারে। যেমন, যে-বোনদের নির্মাণ কাজের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, তারা কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর অন্যদের ঘর আবারও তৈরি করতে সাহায্য করে। আর যে-বোনদের জনসাধারণ্যে সাক্ষ্যদানের বিষয়ে শেখানো হয়েছে, তারা অন্য বোনদের এই দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তাই, যে-বোনদের প্রাচীনেরা সময় বের করে ট্রেনিং দেন, তাদের কেমন লাগে? বোন জেনিফার বলেন: “আমি যখন একটা কিংডম হল নির্মাণ কাজে সাহায্য করছিলাম, তখন আমাদের এক ওভারসিয়ার সময় বের করে আমাকে ট্রেনিং দিয়েছিলেন। আমি যখন কোনো কাজ করতাম, তখন তিনি সেটা লক্ষ করতেন এবং আমার প্রশংসা করতেন। আমার উপর সেই ভাইয়ের অনেক আস্থা ছিল, তাই আমার মনে হত, আমিও যিহোবার কাজ করতে পারি। তার সঙ্গে কাজ করে আমার খুব ভালো লেগেছিল।”

আমাদের বোনেরা হল আমাদের পরিবার

আমরা আমাদের বিশ্বস্ত বোনদের খুব ভালোবাসি, ঠিক যেমনটা যিহোবা তাদের ভালোবাসেন। তারা আমাদের পরিবারের অংশ। (১ তীম. ৫:১, ২) আমাদের বোনদের উপর আমরা গর্বিত এবং তাদের সঙ্গে কাজ করে আমরা অনেক আনন্দিত হই! আমাদের এটা জেনেও খুব ভালো লাগে যে, আমাদের বোনেরা এটা অনুভব করতে পারে, আমরা তাদের ভালোবাসি এবং তাদের সমর্থন করি। বোন ভ্যানেসা বলেন: “আমি যিহোবার প্রতি খুব কৃতজ্ঞ কারণ তিনি আমাদের তাঁর সংগঠনের অংশ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। তাঁর সংগঠনে এমন অনেক ভাই রয়েছে, যারা আমাকে উৎসাহ প্রদান করে।” তাইওয়ানে থাকা একজন বোন বলেন: “আমি এই বিষয়টার জন্য খুবই কৃতজ্ঞ কারণ যিহোবা এবং তাঁর সংগঠন মহিলাদের প্রতি খুব সম্মান দেখায় এবং আমাদের অনুভূতি বোঝে। এর ফলে, ঈশ্বরের উপর আমার বিশ্বাস আরও বেড়ে যায় আর আমি যিহোবার সংগঠনের অংশ হতে পেরে অনেক খুশি।”

যিহোবা যখন দেখেন, ভাইয়েরা ঠিক সেভাবে বোনদের সঙ্গে আচরণ করে, যেভাবে তিনি করেন, তখন তিনি কতই-না আনন্দিত হন! (হিতো. ২৭:১১) স্কটল্যান্ডের একজন প্রাচীন ভাই বেঞ্জামিন বলেন: “আজ জগতে অনেক পুরুষ মহিলাদের একদমই সম্মান করে না। তাই আমরা চাই, যখন আমাদের বোনেরা কিংডম হলে আসে, তখন তারা যেন এটা অনুভব করে যে, আমরা তাদের ভালোবাসি এবং তাদের সম্মান করি।” তাই আসুন, আমরা সবাই যিহোবার মতো হওয়ার চেষ্টা করি এবং আমাদের প্রেমময় বোনদের প্রতি সেই সম্মান ও ভালোবাসা দেখাই, যেটা তাদের পাওয়া উচিত।—রোমীয় ১২:১০.

a এই প্রবন্ধে যে-“বোন” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা কারো নিজের বোনকে নয় বরং খ্রিস্টান বোনকে বোঝানো হয়েছে।

b ‘ভঙ্গুর পাত্র’ শব্দগুলোর মানে আরও ভালো করে বোঝার জন্য ২০০৬ সালের ১৫ মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “এক ‘দুর্ব্বল পাত্রের’ মূল্য” প্রবন্ধটা এবং ২০০৫ সালের ১ মার্চ প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “বিবাহিত দম্পতিদের জন্য বিজ্ঞ নির্দেশনা” প্রবন্ধটা দেখুন।