সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১

গান ৩৮ তিনি সবল করবেন তোমায়

যিহোবার উপর নির্ভর করলে আপনি ভয় কাটিয়ে উঠতে পারবেন

যিহোবার উপর নির্ভর করলে আপনি ভয় কাটিয়ে উঠতে পারবেন

২০২৪ সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ: “যে সময়ে আমার ভয় লাগে, আমি তোমাতে নির্ভর করিব।”গীত. ৫৬:৩.

আমরা কী শিখব?

কীভাবে আমরা যিহোবার উপর নির্ভর করতে পারি এবং কীভাবে নিজেদের ভয় কাটিয়ে উঠতে পারি।

১. কেন আমরা কখনো কখনো ভয় পাই?

 আমরা প্রত্যেকেই কোনো-না-কোনো সময়ে ভয় পাই। এটা ঠিক যে, আমরা মৃত ব্যক্তিদের এবং মন্দ স্বর্গদূতদের ভয় পাই না আর এটা ভেবেও ভয় পাই না, ভবিষ্যতে এই জগতের কী হবে। কেন? কারণ আমরা এই বিষয়ে সত্যটা জেনেছি। কিন্তু, আমরা আজ এমন এক সময়ে রয়েছি, যখন আমরা চারিদিকে “ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর দৃশ্য” দেখতে পাই। চারিদিকে যুদ্ধ হচ্ছে, অপরাধ বেড়েই চলেছে এবং বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এগুলোর কারণে অনেকসময় আমরা ভয় পেয়ে যাই। (লূক ২১:১১) অথবা আমরা হয়তো লোকদের ভয় পাই, যেমন সেই আধিকারিকদের ভয় পাই, যারা আমাদের উপর বিভিন্ন চাপ নিয়ে আসে। কিংবা আমরা পরিবারের সদস্যদের ভয় পাই কারণ তারা আমাদের বিরোধিতা করে। কিছু লোক এই ভেবে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ে যে, তারা কীভাবে তাদের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠবে কিংবা কাল যদি কিছু হয়ে যায়, তা হলে কী হবে।

২. দায়ূদ যখন গাতে ছিলেন, তখন কী হয়েছিল?

কখনো কখনো রাজা দায়ূদও অনেক ভয় পেয়ে যেতেন। তিনি যখন রাজা শৌলের কাছ থেকে নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তখন পালাতে পালাতে তিনি পলেষ্টীয়ের গাত নগরে গিয়ে পৌঁছেছিলেন। কিছুসময় পরই গাতের রাজা আখীশ জানতে পেরেছিলেন যে, দায়ূদ একজন বীর যোদ্ধা এবং দায়ূদের প্রশংসায় এই গান গাওয়া হয়েছিল: “দায়ূদ মারলেন লক্ষ লক্ষ।” সেইসময় দায়ূদ ‘খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন।’ (১ শমূ. ২১:১০-১২, NW) দায়ূদের চিন্তা হচ্ছিল যে, আখীশ তার প্রতি কী করবেন। তখন দায়ূদ কীভাবে তার ভয় কাটিয়ে উঠেছিলেন?

৩. গীতসংহিতা ৫৬:১-৩, ১১ পদ অনুযায়ী কীভাবে দায়ূদ তার ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন?

গীতসংহিতা ৫৬ অধ্যায়ে আমরা পড়ি যে, গাত নগরে থাকার সময়ে তার কেমন লাগছিল। সেখানে এও লেখা আছে, কেন তিনি ভয় পেয়েছিলেন এবং কীভাবে তিনি সেই ভয় কাটিয়ে উঠেছিলেন। দায়ূদ যখন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন, তখন তিনি যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৫৬:১-৩, ১১.) আর যিহোবা তার নির্ভরতা ভাঙেননি। যিহোবার সাহায্যে দায়ূদ একটা উপায় খুঁজে বের করেছিলেন। উপায়টা একটু অদ্ভুত ছিল, কিন্তু সেটা কাজ করেছিল। দায়ূদ পাগল হওয়ার ভান করেছিলেন। এটা দেখে আখীশ দায়ূদকে মেরে ফেলার পরিবর্তে তাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। এর ফলে, দায়ূদের জীবন রক্ষা পেয়েছিল।—১ শমূ. ২১:১৩–২২:১.

৪. যিহোবার উপর নির্ভরতা বাড়ানোর জন্য আমাদের কী করতে হবে? উদাহরণ দিয়ে বোঝান।

আমরাও যিহোবার উপর নির্ভর করার মাধ্যমে নিজেদের ভয় কাটিয়ে উঠতে পারি। কিন্তু আমরা যখন ভয় পেয়ে যাই, তখন তাঁর উপর নির্ভর করা আমাদের জন্য হয়তো কঠিন হয়ে যায়। এইরকম পরিস্থিতিতেও আপনি কীভাবে যিহোবার উপর আপনার নির্ভরতা বাড়াতে পারেন? এই উদাহরণের উপর একটু মনোযোগ দিন। আপনার একটা গুরুতর রোগ ধরা পড়েছে। প্রথম প্রথম আপনি ভয় পেতে পারেন। কিন্তু ডাক্তারের উপর আপনার যদি নির্ভরতা বা আস্থা থাকে, তা হলে আপনার ভয় কম লাগতে পারে কারণ সেই ডাক্তার এমন অনেক ব্যক্তিকে সুস্থ করেছেন, যাদের একই রোগ ছিল। তিনি আপনার কথা মন দিয়ে শোনেন এবং আপনাকে নিশ্চয়তা দেন যে, তিনি আপনার পরিস্থিতি বোঝেন। তিনি আপনাকে এমন চিকিৎসার বিষয়েও বলতে পারেন, যেটার ফলে অনেক লোক উপকার পেয়েছে। এবার আপনি হয়তো নিশ্চিন্ত হয়েছেন। একইভাবে আমরা যখন চিন্তা করব যে, যিহোবা এখনও পর্যন্ত কী কী করেছেন, বর্তমানে কী করছেন এবং ভবিষ্যতে কী কী করবেন, তখন তাঁর উপর আমাদের নির্ভরতা বেড়ে যাবে। গীতসংহিতা ৫৬ অধ্যায়ে দায়ূদের লেখা কথাগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়ার সময়ে লক্ষ করুন, আপনি কীভাবে যিহোবার উপর আপনার নির্ভরতা বাড়াতে পারেন এবং কীভাবে আপনার ভয় কাটিয়ে উঠতে পারেন।

যিহোবা এখনও পর্যন্ত কী কী করেছেন?

৫. নিজের ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য দায়ূদ কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন? (গীতসংহিতা ৫৬:১২, ১৩)

দায়ূদের জীবন যখন ঝুঁকির মুখে ছিল, তখন তিনি এই বিষয়টার উপর মনোযোগ দিয়েছিলেন যে, যিহোবা এখনও পর্যন্ত কোন কোন ভালো কাজ করেছেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৫৬:১২, ১৩.) দায়ূদ সবসময় তা করতেন। অনেক বার তিনি যিহোবার সৃষ্টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন। এর ফলে তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন, যিহোবা কতটা শক্তিশালী এবং লোকদের কতটা ভালোবাসেন। (গীত. ৬৫:৬-৯) দায়ূদ এই বিষয় নিয়েও চিন্তা করতেন, যিহোবা অন্যদের জন্য কী কী করেছেন। (গীত. ৩১:১৯; ৩৭:২৫, ২৬) আর বিশেষ করে তিনি এই বিষয়েও গভীরভাবে চিন্তা করতেন, যিহোবা তার জন্য কী কী করেছেন। তিনি যখন তার মায়ের গর্ভে ছিলেন, তখন থেকেই যিহোবা তার যত্ন নিয়েছিলেন এবং তাকে সুরক্ষিত রেখেছিলেন। (গীত. ২২:৯, ১০; ৩১:১৯; ৩৭:২৫, ২৬) একটু কল্পনা করুন, এই বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সময়ে যিহোবার উপর দায়ূদের নির্ভরতা কতটা বেড়ে গিয়েছিল।

দায়ূদ যখন চিন্তা করেছিলেন, যিহোবা এখনও পর্যন্ত কী কী করেছেন, বর্তমানে কী করছেন এবং ভবিষ্যতে কী কী করবেন, তখন যিহোবার উপর তার নির্ভরতা বেড়ে গিয়েছিল (৫, ৮, ১২ অনুচ্ছেদ দেখুন) d


৬. আমাদের যখন ভয় লাগে, তখন কীভাবে আমরা যিহোবার উপর আমাদের নির্ভরতা বাড়াতে পারি?

আপনার যখন ভয় লাগে, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘যিহোবা এখনও পর্যন্ত কী কী করেছেন?’ আপনি তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। আপনি পাখিদের এবং বিভিন্ন ফুল ভালো করে লক্ষ করতে পারেন। তারা ঈশ্বরের গুণ দেখায় না এবং তাঁর উপাসনাও করে না। তা সত্ত্বেও, যিহোবা তাদের যত্ন নেন। তাহলে, যিহোবা কি আপনার আরও বেশি যত্ন নেবেন না? এভাবে সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে যিহোবার উপর আপনার নির্ভরতা আরও বেড়ে যাবে। (মথি ৬:২৫-৩২) এও চিন্তা করুন, যিহোবা তাঁর দাসদের জন্য এখনও পর্যন্ত কী কী করেছেন। আপনি বাইবেলে বলা সেই ব্যক্তিদের বিষয়ে পড়তে পারেন, যারা ঈশ্বরের উপর দৃঢ়বিশ্বাস রেখেছিল। কিংবা আপনি বর্তমান দিনের কোনো ভাই অথবা বোনের অভিজ্ঞতা পড়তে পারেন। a এ ছাড়া আপনি চিন্তা করতে পারেন, যিহোবা আপনার জন্য কী কী করেছেন। যেমন, তিনি কীভাবে আপনাকে তাঁর কাছে আকর্ষণ করেছেন? (যোহন ৬:৪৪) তিনি কীভাবে আপনার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন? (১ যোহন ৫:১৪) তিনি যে তাঁর পুত্রের বলিদান দিয়েছেন, সেটা থেকে কীভাবে আপনি প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছেন?—ইফি. ১:৭; ইব্রীয় ৪:১৪-১৬.

আমরা যদি চিন্তা করি, যিহোবা এখনও পর্যন্ত কী কী করেছেন, বর্তমানে কী করছেন এবং ভবিষ্যতে কী কী করবেন, তা হলে যিহোবার উপর আমাদের নির্ভরতা বেড়ে যাবে (৬, ৯-১০, ১৩-১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন) e


৭. কীভাবে বোন ভ্যানেসা ভাববাদী দানিয়েলের বিষয়ে চিন্তা করার ফলে নিজের ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন?

হাইতিতে থাকা বোন ভ্যানেসার b প্রতি এমন কিছু ঘটেছিল, যেটার কারণে তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তার এলাকার একজন ব্যক্তি প্রতিদিন তাকে ফোন করতে এবং ম্যাসেজ পাঠাতে শুরু করেছিল। সেই ব্যক্তি ভ্যানেসার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু, বোন তাকে স্পষ্টভাবে না করে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে সেই ব্যক্তি বোনকে আরও বেশি বিরক্ত করতে শুরু করেছিল আর এমনকী তাকে হুমকিও দিয়েছিল। বোন ভ্যানেসা বলেন: “আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” কীভাবে বোন তার ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন? তিনি নিজের সুরক্ষার জন্য কিছু কাজ করেছিলেন। একজন প্রাচীনের সাহায্যে তিনি পুলিশের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন। এ ছাড়া তিনি চিন্তা করেছিলেন, কীভাবে অতীতে যিহোবা তাঁর দাসদের সুরক্ষা জুগিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সবার প্রথমে আমার ভাববাদী দানিয়েলের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। তাকে সিংহের গর্তে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, যদিও তার কোনো দোষ ছিল না। কিন্তু, যিহোবা তাকে রক্ষা করেছিলেন। আমিও সমস্ত কিছু যিহোবার হাতে ছেড়ে দিয়েছিলাম এবং তাঁকে বলেছিলাম যেন তিনি এই বিষয়টা সামলে নেন। এরপর, আমার আর ভয় লাগেনি।”—দানি. ৬:১২-২২.

যিহোবা বর্তমানে কী করছেন?

৮. দায়ূদ কোন বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন? (গীতসংহিতা ৫৬:৮)

দায়ূদ যখন গাত নগরে ছিলেন, তখন তার জীবন ঝুঁকির মুখে ছিল ঠিকই, কিন্তু তিনি ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েননি। তিনি চিন্তা করেছিলেন, সেইসময় যিহোবা তার জন্য কী করছেন। দায়ূদ বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবা তাকে সুরক্ষা জোগাচ্ছেন, তাকে সঠিক পথ দেখাচ্ছেন এবং তিনি তার পরিস্থিতি বোঝেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৫৬:৮.) যোনাথন এবং মহাযাজক অহীমেলকের মতো দায়ূদের কিছু বিশ্বস্ত বন্ধু ছিল, যারা তাকে উৎসাহ দিয়েছিল এবং সাহায্য করেছিল। (১ শমূ. ২০:৪১, ৪২; ২১:৬, ৮, ৯) আর যিহোবা তাকে রাজা শৌলের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন, যিনি তাকে মেরে ফেলার জন্য তার পিছু ধাওয়া করছিলেন। দায়ূদ পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা তার পরিস্থিতি এবং সমস্যার বিষয়ে খুব ভালোভাবে জানেন।

৯. আপনি যখন ভয় পান, তখন যিহোবা কোন বিষয়টা লক্ষ করেন?

আপনার উপর যখন সমস্যা আসে এবং আপনি ভয় পেয়ে যান, তখন মনে রাখবেন যে, যিহোবা এই বিষয়টা লক্ষ করেন, আপনি কোন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং তিনি বোঝেন, আপনার কেমন লাগছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রাচীন কালে ইজরায়েলীয়েরা যখন মিশরে দাস হিসেবে ছিল, তখন যিহোবা শুধুমাত্র তাদের সমস্যাই দেখেননি, কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের ‘দুঃখও’ দেখেছিলেন। (যাত্রা. ৩:৭) দায়ূদও তার একটা গানে গেয়েছিলেন যে, যিহোবা শুধুমাত্র তার “দুঃখ” দেখেন না, কিন্তু সেইসঙ্গে তার “প্রাণের তত্ত্ব” নেন। (গীত. ৩১:৭) আর অনেক বার যিহোবার লোকেরা যখন নিজেদের ভুলের কারণে সমস্যা ডেকে এনেছিল, তখন তাদের কষ্ট দেখে ‘তিনিও দুঃখিত হয়েছিলেন।’ (যিশা. ৬৩:৯) তাই যখনই আপনি ভয় পান, মনে রাখবেন: যিহোবা আপনার পরিস্থিতি বোঝেন আর তিনি আপনাকে ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছেন।

১০. কেন আপনি নিশ্চিত, যিহোবা আপনার জন্য চিন্তা করেন এবং যেকোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আপনাকে সাহায্য করবেন?

১০ আপনি কি কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং আপনার খুব ভয় লাগছে? সেইসময় আপনি হয়তো দেখতে পান না, যিহোবা কীভাবে আপনাকে সাহায্য করছেন। এইরকম ক্ষেত্রে আপনি কী করতে পারেন? যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন যেন আপনি তাঁর সাহায্যের হাত দেখতে পান। (২ রাজা. ৬:১৫-১৭) এরপর চিন্তা করুন: সভায় কোনো বক্তৃতা শুনে অথবা কারো উত্তর শুনে কি আপনি উৎসাহিত হয়েছেন? কোনো প্রকাশনা পড়ে, কোনো ভিডিও দেখে অথবা কোনো ভিডিও গান শুনে কি যিহোবার উপর আপনার নির্ভরতা আরও বেড়ে গিয়েছে? কোনো ভাই কিংবা বোন আপনাকে এমন কিছু বলেছেন অথবা বাইবেলের কোনো পদ দেখিয়েছেন, যেটা আপনার ভালো লেগেছে? অনেকসময় আমরা হয়তো এটাকে খুবই হালকাভাবে দেখি যে, ভাই-বোনেরা আমাদের কতটা ভালোবাসে এবং বাইবেল থেকে আমরা কত উৎসাহ পাই। কিন্তু, এগুলো হল যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া মূল্যবান উপহার। (যিশা. ৬৫:১৩; মার্ক ১০:২৯, ৩০) এগুলো প্রমাণ দেয় যে, তিনি আপনার জন্য কত চিন্তা করেন আর আপনি পুরোপুরিভাবে তাঁর উপর নির্ভর করতে পারেন।

১১. কীভাবে বোন আইডা নিজের ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন?

১১ বোন আইডার উদাহরণের উপর একটু মনোযোগ দিন, যিনি সেনেগালে থাকেন। তিনি লক্ষ করেছিলেন, কীভাবে যিহোবা কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য তাকে সাহায্য করেছেন। তিনি তার ভাই-বোনদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো ছিলেন, তাই তার বাবা-মা চেয়েছিল যেন তিনি টাকা রোজগার করেন এবং সংসার সামলান। কিন্তু, বোন যখন তার জীবনকে সাদাসিধে করার মাধ্যমে অগ্রগামীর সেবা শুরু করেছিলেন, তখন তাদের আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এই কারণে, তার পরিবারের সদস্যেরা তাকে বকাঝকা করত এবং উলটোপালটা কথা শোনাত। বোন আইডা বলেন, “আমি এই ভেবে ভয় পাচ্ছিলাম যে, আমি আর বাবা-মাকে সাহায্য করতে পারব না এবং সবাই আমাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করবে। আমি যিহোবাকেও দোষ দিয়েছিলাম যে, কেন তিনি আমার সঙ্গে এমনটা করলেন।” কিন্তু, একবার বোন সভায় একটা বক্তৃতা শুনেছিলেন। তিনি বলেন, “সেই ভাই তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, আমাদের মনে যখন কোনো আঘাত আসে, তখন যিহোবা সেই বিষয়ে খুব ভালোভাবে জানেন। আমাকে প্রাচীনেরা এবং ভাই-বোনেরা অনেক ভালো পরামর্শ দিয়েছিল। ধীরে ধীরে আমি আবারও নিশ্চিত হই, যিহোবা আমাকে ভালোবাসেন। এরপর থেকে প্রার্থনা করার সময়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত থাকি, যিহোবা আমাকে সাহায্য করবেন। আর আমি যখন দেখি যে, যিহোবা কীভাবে আমার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন, তখন আমি অনেক স্বস্তি পাই।” কিছুসময় পর বোন আইডা একটা ভালো চাকরি খুঁজে পেয়েছিলেন। এর ফলে, তিনি ভালোভাবে অগ্রগামীর সেবা করতে পারছিলেন আর সেইসঙ্গে তার বাবা-মা এবং অন্যদের সাহায্য করতে পারছিলেন। বোন বলেন, “আমি যিহোবার উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে শিখেছি। এখন প্রায়ই আমি যখন তাঁর কাছে প্রার্থনা করি, তখন আমার ভয় দূর হয়ে যায়।”

যিহোবা ভবিষ্যতে কী কী করবেন?

১২. গীতসংহিতা ৫৬:৯ পদ অনুযায়ী দায়ূদ কোন বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন?

১২ গীতসংহিতা ৫৬:৯ পদ পড়ুন। এই পদে আরেকটা উপায় বলা হয়েছে, যেটার মাধ্যমে দায়ূদ তার ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তার জীবন যখন ঝুঁকির মুখে ছিল, তখন তিনি এই বিষয়টা নিয়েও চিন্তা করেছিলেন যে, যিহোবা ভবিষ্যতে তার জন্য কী কী করবেন। দায়ূদ জানতেন, যিহোবা সঠিক সময়ে তাকে রক্ষা করবেন কারণ তিনি বলেছিলেন যে, দায়ূদই ইজরায়েলের পরবর্তী রাজা হবেন। (১ শমূ. ১৬:১, ১৩) আর দায়ূদ নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা যা বলেন, সেটা হবেই হবে!

১৩. আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?

১৩ যিহোবা আপনার জন্য কোন প্রতিজ্ঞা করেছেন? আমরা এটা তো আশা করতে পারি না যে, আমাদের উপর কোনো সমস্যাই আসবে না। c কিন্তু যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, নতুন জগতে তিনি সমস্ত সমস্যা দূর করে দেবেন। এমন কোনো সমস্যা নেই, যেটা তিনি দূর করতে পারবেন না। (যিশা. ২৫:৭-৯) যিহোবা ঈশ্বরের এত শক্তি রয়েছে যে, তিনি আমাদের একেবারে সুস্থসবল করতে পারেন এবং আমাদের হৃদয়ে থাকা যেকোনো ক্ষত সারিয়ে তুলতে পারেন। নতুন জগতে কেউ আমাদের বিরোধিতা করবে না। শুধু তা-ই নয়, এখন যারা মৃত্যুতে ঘুমিয়ে রয়েছে, নতুন জগতে তিনি তাদের পুনরুত্থিত করবেন।—১ যোহন ৪:৪.

১৪. আমরা কী নিয়ে চিন্তা করতে পারি?

১৪ আপনার যখন ভয় লাগবে, তখন চিন্তা করুন, ভবিষ্যতে যিহোবা আপনার জন্য কী কী করবেন। চিন্তা করুন, সেইসময় আপনার কেমন লাগবে, যখন শয়তানকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে, দুষ্ট লোকদের পরিবর্তে সৎ লোকেরা থাকবে এবং আমরা সবাই দিন দিন নিখুঁত হয়ে যাব। আমরা কীভাবে ভবিষ্যতে পাওয়া আশীর্বাদগুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারি, সেই বিষয়ে ২০১৪ সালের আঞ্চলিক সম্মেলনে একটা ভিডিও দেখানো হয়েছিল। সেই ভিডিওতে একজন বাবা তার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন যে, ২ তীমথিয় ৩:১-৫ পদ যদি পরমদেশের বিষয়ে লেখা হত, তা হলে এটা এমন হত: “নতুন জগতে পরিস্থিতি ভালো থাকবে এবং আমরা নিশ্চিন্তে থাকব। কারণ লোকেরা অন্যদের ভালোবাসবে, সত্যকে ভালোবাসবে, গর্ব করবে না, শান্ত হবে, একে অন্যের প্রশংসা করবে, বাবা-মায়ের বাধ্য হবে, কৃতজ্ঞ হবে, আনুগত্য দেখাবে, স্নেহ দেখাবে, মেনে নিতে ইচ্ছুক হবে, অপবাদ দেবে না, সংযমী হবে, হিংস্র হবে না, সবসময় ভালো কাজ করবে, বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করবে না, অহংকারী হবে না, আমোদপ্রমোদকে ভালোবাসবে না বরং ঈশ্বরকে ভালোবাসবে। তারা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি দেখানোর কাজ করবে। তুমি এইরকম লোকদের কাছে থেকো।” আপনি কি আপনার পরিবারের সদস্য অথবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেন যে, পরমদেশে জীবন কেমন হবে?

১৫. কীভাবে বোন তানিয়া নিজের ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন?

১৫ উত্তর ম্যাসিডোনিয়ায় থাকা বোন তানিয়ার উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। বোন তানিয়া যখন বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন, তখন তার বাবা-মা তার বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু বোন এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, ভবিষ্যতে যিহোবা তার জন্য কী কী করবেন। এভাবে, তিনি তার ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন এবং যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পেরেছিলেন। বোন তানিয়া বলেন: “আমি যে-বিষয়ে ভয় পাচ্ছিলাম, ঠিক সেটাই ঘটেছিল। প্রতিটা সভার পর আমার মা আমাকে মারত। বাবা-মা দু-জনেই আমাকে হুমকি দিয়েছিল যে, আমি যদি যিহোবার সাক্ষি হই, তা হলে তারা আমাকে মেরে ফেলবে।” এরপর একদিন, তারা বোন তানিয়াকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল। তখন বোন তানিয়া কী করেছিলেন? তিনি বলেন: “আমি চিন্তা করেছিলাম, আমি যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তা হলে এতটা আনন্দ পাব, যেটা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারব না। আর আমার এই আনন্দ সবসময় বজায় থাকবে। আমি এও চিন্তা করেছিলাম, এখন আমাকে যা-কিছু ত্যাগ করতে হোক না কেন, সেগুলোর চেয়েও বেশি যিহোবা আমাকে নতুন জগতে পুরস্কার দেবেন। সেইসময় কোনো খারাপ স্মৃতির কারণে আমি কষ্ট পাব না।” বোন তানিয়া যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পেরেছিলেন এবং তাঁর সাহায্যে একটা ঘর খুঁজে পেয়েছিলেন। এখন বোন তানিয়া একজন বিশ্বস্ত ভাইকে বিয়ে করেছেন এবং তারা দু-জনেই আনন্দের সঙ্গে পূর্ণসময়ের সেবা করছেন।

এখন থেকেই যিহোবার উপর আপনার নির্ভরতা বাড়ান

১৬. আমরা যখন লূক ২১:২৬-২৮ পদে লেখা কথাগুলো ঘটতে দেখব, তখন কেন আমরা ভয় পাব না?

১৬ মহাক্লেশের সময়ে “লোকেরা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে,” কিন্তু ঈশ্বরের লোকেরা ভয় পাবে না, তারা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। (পড়ুন, লূক ২১:২৬-২৮.) কেন আমরা ভয় পাব না? কারণ আমরা আগে থেকেই যিহোবার উপর নির্ভর করতে শিখেছি। আগের অনুচ্ছেদে উল্লেখিত বোন তানিয়া বলেন, অতীতে সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার ফলে তিনি এখন অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারছেন। তিনি বলেন: “আমি দেখেছি, অনেক খারাপ পরিস্থিতিতেও যিহোবা আমাদের জন্য ভালো কিছু করতে পারেন। কখনো কখনো মনে হতে পারে, লোকেরা যা বলবে, আমাদের তা-ই করতে হবে। কিন্তু সত্যিটা হল, যিহোবা তাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। আর আমাদের সমস্যাগুলো যত বড়োই হোক না কেন, একদিন সেগুলো শেষ হবেই হবে।”

১৭. ২০২৪ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ কীভাবে আমাদের সাহায্য করবে? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৭ আমরা প্রত্যেকেই কোনো-না-কোনো কারণে ভয় পাই। তবে, দায়ূদের মতো আমরাও ভয় কাটিয়ে উঠতে পারি। দায়ূদ যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন: “যে সময়ে আমার ভয় লাগে, আমি তোমাতে নির্ভর করিব।” তার এই প্রার্থনাই ২০২৪ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ। (গীত. ৫৬:৩) বাইবেল সম্বন্ধে তথ্য দেয় এমন একটা বইয়ে এই পদের বিষয়ে বলা আছে, দায়ূদ ‘সেই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতেন না, যেগুলোর কারণে তিনি ভয় পেতেন এবং সবসময় সমস্যাগুলোর উপরই মনোযোগ দিতেন না বরং তাঁর দিকে সাহায্যের জন্য তাকিয়ে ছিলেন, যিনি তাকে রক্ষা করতেন।’ তাই, পরবর্তী মাসগুলোতে আমাদের এই বার্ষিক শাস্ত্রপদ নিয়ে চিন্তা করুন, বিশেষ করে যখন আপনার ভয় লাগে। কিছুটা সময় বের করে চিন্তা করুন, যিহোবা এখনও পর্যন্ত কী কী করেছেন, বর্তমানে কী করছেন এবং ভবিষ্যতে কী কী করবেন। তখন দায়ূদের মতো আপনিও বলতে পারবেন, “আমি ঈশ্বরে নির্ভর করিয়াছি, ভয় করিব না।”—গীত. ৫৬:৪.

একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে একজন বোন বার্ষিক শাস্ত্রপদ নিয়ে চিন্তা করছেন (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

কীভাবে নীচে দেওয়া বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করলে আপনি আপনার ভয় কাটিয়ে উঠতে পারবেন?

  • যিহোবা এখনও পর্যন্ত কী কী করেছেন।

  • যিহোবা বর্তমানে কী করছেন।

  • যিহোবা ভবিষ্যতে কী কী করবেন।

গান ৭ যিহোবা আমার বল

a আপনি যদি jw.org ওয়েবসাইটের সার্চ বক্সে “তাদের বিশ্বাস অনুকরণ করুন” অথবা “অভিজ্ঞতা” টাইপ করেন, তা হলে আপনি এমন অনেক তথ্য পাবেন, যেগুলো আপনার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করবে।

b কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

d ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: দায়ূদ চিন্তা করেছিলেন, যিহোবা তাকে ভাল্লুককে মেরে ফেলার শক্তি দিয়েছিলেন, যিহোবা তাকে বর্তমানে অহীমেলকের মাধ্যমে সাহায্য করছেন এবং যিহোবা তাকে ভবিষ্যতে রাজা করবেন।

e ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাই জেলে বন্দি থাকার সময়ে চিন্তা করছেন, যিহোবা তাকে সিগারেট খাওয়া ছাড়তে সাহায্য করেছেন, যিহোবা তাকে তার পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে পাওয়া চিঠির মাধ্যমে উৎসাহ দিচ্ছেন এবং যিহোবা তাকে ভবিষ্যতে পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকালের জীবন দেবেন।