সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪

গান ৩০ যিহোবা আমার পিতা, ঈশ্বর ও বন্ধু

যিহোবা আপনার প্রতি স্নেহ দেখান

যিহোবা আপনার প্রতি স্নেহ দেখান

“যিহোবা অত্যন্ত স্নেহময়।”যাকোব ৫:১১.

আমরা কী শিখব?

যিহোবা আমাদের সবাইকে ভালোবাসেন, এটা জেনে কীভাবে তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়, আমরা সুরক্ষা এবং সতেজতা লাভ করি এবং বুঝতে পারি যে, তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন?

১. যখন আপনি যিহোবার বিষয়ে চিন্তা করেন, তখন আপনার মনে কোন ছবি ভেসে ওঠে?

 আপনি কি কখনো চিন্তা করেছেন, যিহোবা দেখতে কেমন? আপনি যখন তাঁর কাছে প্রার্থনা করেন, তখন আপনি কী চিন্তা করেন? আমরা যিহোবাকে কখনো দেখতে পারব না, কিন্তু বাইবেলে তাঁর বিষয়ে অনেক কিছু বলা হয়েছে। এটিতে বলা হয়েছে, তিনি হলেন “সূর্য” ও “ঢাল” এবং “গ্রাসকারী আগুন।” (গীত. ৮৪:১১; ইব্রীয় ১২:২৯) আরেকটা জায়গায় তাঁর বিষয়ে লেখা রয়েছে, তিনি উজ্জ্বল ধাতুর মতো ঝলমল করছেন এবং নীলকান্ত মণির সিংহাসনে বসে আছেন। আর বৃষ্টির দিনে মেঘের মধ্যে মেঘধনুকের মতো তাঁর চারপাশে উজ্জ্বল আলো রয়েছে। (যিশা. ১:২৬-২৮) এই সমস্ত কিছু পড়ে আমরা হয়তো অভিভূত হয়ে যাই এবং চিন্তা করি, যিহোবা কত মহান এবং তাঁর সামনে আমরা কিছুই নই।

২. কেন কিছু লোক যিহোবার নিকটবর্তী হওয়াকে কঠিন বলে মনে করে?

আমরা যিহোবাকে দেখতে পাই না, তাই এটা হয়তো বিশ্বাস করা কঠিন হতে পারে যে, তিনি আমাদের ভালোবাসেন। কিংবা এটাও হতে পারে, কিছু ব্যক্তি তাদের জীবনে অনেক কিছু সহ্য করেছে। তাই, তাদের এটা বিশ্বাস করা কঠিন হয় যে, যিহোবা তাদের ভালোবাসতে পারেন। যিহোবা এই সমস্ত কিছু ভালোভাবে বোঝেন এবং তিনি এটা জানেন, কেন কিছু ব্যক্তির পক্ষে তাঁর নিকটবর্তী হওয়া কঠিন বলে মনে হয়। তাই, তিনি তাঁর বাক্যে এই বিষয়টা স্পষ্টভাবে বলেছেন, তিনি কেমন ঈশ্বর।

৩. কেন আমাদের যিহোবা এবং তাঁর প্রেমের বিষয়ে ভালোভাবে জানতে হবে?

যিহোবা কেমন ঈশ্বর, এক কথায় বললে তিনি হলেন প্রেম। বাইবেলে লেখা রয়েছে, “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) তিনি যা-কিছু করেন, তা প্রেমের কারণেই করেন। যিহোবার প্রেমের কোনো সীমা নেই, তাই তিনি সেই ব্যক্তিদেরও ভালোবাসেন, যারা তাঁকে ভালোবাসে না। (মথি ৫:৪৪, ৪৫) এই প্রবন্ধে আমরা যিহোবা এবং তাঁর প্রেমের বিষয়ে আরও ভালোভাবে জানব। আমরা যত বেশি আমাদের ঈশ্বর সম্বন্ধে জানব, তত বেশি তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা বেড়ে যাবে।

যিহোবা আমাদের অনেক ভালোবাসেন

৪. যিহোবা যেভাবে আপনাকে ভালোবাসেন, সেই বিষয়ে চিন্তা করে আপনার কেমন লাগে? (ছবিও দেখুন।)

‘যিহোবা অত্যন্ত স্নেহময় ঈশ্বর।’ (যাকোব ৫:১১) বাইবেলে বলা হয়েছে, তিনি একজন মায়ের মতো নিজের সন্তানদের অনেক ভালোবাসেন। (যিশা. ৬৬:১২, ১৩) চিন্তা করুন, একজন মা কত প্রেমের সঙ্গে তার ছোট্ট শিশুর যত্ন নেন। তিনি তাকে কোলে তোলেন, তাকে আদর করেন এবং মিষ্টিভাবে তার সঙ্গে কথা বলেন। সেই শিশু যখন ব্যথা পায় এবং কাঁদে, তখন তার মা বুঝতে পারেন যে, ওর কী প্রয়োজন এবং মা তখন ওর জন্য সেটাই করেন। একইভাবে আমরা যখন দুঃখের মধ্যে থাকি, তখন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, সেই মায়ের মতো যিহোবাও আমাদের অনেক ভালোবাসেন। গীতসংহিতার একজন লেখকও এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন, তাই তিনি বলেছিলেন, “আমার আন্তরিক ভাবনার বৃদ্ধিকালে তোমার দত্ত সান্ত্বনা আমার প্রাণকে আহ্লাদিত করে।”—গীত. ৯৪:১৯.

“মাতা যেমন আপন পুত্ত্রকে সান্ত্বনা করে, তেমনি আমি তোমাদিগকে সান্ত্বনা করিব” (৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)


৫. যিহোবার অটল প্রেম সম্বন্ধে আপনি কেমন অনুভব করেন?

যিহোবা সবসময় অটল প্রেম দেখান। (গীত. ১০৩:৮) আমরা যখন কোনো ভুল করে ফেলি, তারপরও তিনি আমাদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো বন্ধ করে দেন না। ইজরায়েলীয়দের কথাই ধরুন। তারা বার বার যিহোবাকে কষ্ট দিয়েছিল, তারপরও যে-লোকেরা অনুতপ্ত হয়েছিল, যিহোবা তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো বন্ধ করেননি। তিনি তাদের বলেছিলেন, ‘তোমরা আমার দৃষ্টিতে বহুমূল্য ও সম্ভ্রান্ত, আমি তোমাদের প্রেম করিয়াছি।’ (যিশা. ৪৩:৪, ৫) যিহোবা পালটে যাননি, তিনি আজও আমাদের অনেক ভালোবাসেন। আমরা যদি কোনো গুরুতর ভুল করে ফেলি, তারপরও তিনি আমাদের ছেড়ে দেন না। আমরা যদি অনুতপ্ত হই এবং তাঁর কাছে ফিরে আসি, তা হলে আমরা বুঝতে পারব, তিনি আমাদের আগের মতোই ভালোবাসেন। তিনি কথা দিয়েছেন যে, তিনি আমাদের ‘প্রচুররূপে ক্ষমা করবেন।’ (যিশা. ৫৫:৭) তিনি যখন আমাদের ক্ষমা করে দেন, তখন আমরা তাঁর ‘প্রশান্তি’ অনুভব করতে পারি।—প্রেরিত ৩:১৯.

৬. সখরিয় ২:৮ পদ থেকে আমরা যিহোবার বিষয়ে কী জানতে পারি?

সখরিয় ২:৮ পদ পড়ুন। যিহোবা বলেছেন, আমরা তাঁর চোখের মণি। আমাদের চোখ আমাদের শরীরের সবচেয়ে মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আর আমরা পুরোপুরি চেষ্টা করি যেন সেটা সুরক্ষিত থাকে এবং আঘাত না পায়। তাই যিহোবা যেন এমনটা বলছিলেন, ‘যে-কেউ তোমাদের, আমার লোকদের, ক্ষতি করার চেষ্টা করে, সে আমার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসে হাত দিচ্ছে।’ যিহোবা আমাদের খুব ভালোবাসেন, তাই তিনি জানেন যে, আমরা কেমন অনুভব করি আর তিনি আমাদের সুরক্ষা জোগানোর জন্য সঙ্গেসঙ্গে কিছু করেন। আমরা যখন কষ্ট পাই, তখন তিনিও খুব কষ্ট পান। তাই আমরা পুরো আস্থার সঙ্গে বলতে পারি: “চোখের মণির মত করে তুমি আমাকে রক্ষা কর।”—গীত. ১৭:৮; বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

৭. কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন?

যিহোবা চান যেন আপনি এই বিষয়ে নিশ্চিত হন যে, তিনি আপনাকে কতটা ভালোবাসেন। কেন? কারণ তিনি বোঝেন, কখনো কখনো তা করা আপনার জন্য কঠিন হতে পারে। আপনি হয়তো জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন অথবা এখনই কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাই, কীভাবে আপনি এই বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে পারেন, যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন? এটা করার একটা উপায় হল, এই বিষয়ে জানা যে, যিহোবা যিশুর প্রতি, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের প্রতি এবং আমাদের প্রত্যেকের প্রতি কীভাবে তাঁর ভালোবাসা দেখিয়েছেন।

কীভাবে যিহোবা তাঁর ভালোবাসা দেখিয়েছেন?

৮. যিশু কেন এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে, তাঁর পিতা তাঁকে ভালোবাসেন?

যিহোবা এবং তাঁর পুত্র একসঙ্গে যতটা সময় কাটিয়েছেন, ততটা সময় এই পৃথিবীতে আর কেউ কাটায়নি। তারা কোটি কোটি বছর ধরে স্বর্গে একসঙ্গে রয়েছেন। তাই চিন্তা করুন, তাঁদের সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ এবং তাঁরা একে অন্যকে কতটা ভালোবাসেন! যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন যিহোবা স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, তিনি তাঁকে খুব ভালোবাসেন। এই কথাটা আমরা মথি ১৭:৫ পদ পড়ে জানতে পারি। যিহোবা চাইলে শুধু এতটুকুই বলতে পারতেন, ‘তাঁর উপর আমি খুব সন্তুষ্ট।’ কিন্তু তিনি বলেছিলেন, “ইনি আমার প্রিয় পুত্র।” কেন তিনি এই কথাটা বলেছিলেন? যাতে আমরা জানতে পারি, তিনি তাঁর পুত্রকে কতটা ভালোবাসেন। যিহোবা যিশুকে নিয়ে অনেক গর্ব অনুভব করেছিলেন, বিশেষ করে কারণ যিশু ইচ্ছুক মনে নিজের জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। (ইফি. ১:৭) যিশু কখনো যিহোবার ভালোবাসার উপর সন্দেহ করতেন না। তিনি প্রতিটা মুহূর্তে এটা অনুভব করতেন যে, যিহোবা তাঁকে কতটা ভালোবাসেন। আর তিনি অনেক বার দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে লোকদের বলেছিলেন, তাঁর পিতা তাদের ভালোবাসেন।—যোহন ৩:৩৫; ১০:১৭; ১৭:২৪.

৯. বাইবেলে লেখা কোন বিষয়টা থেকে বোঝা যায়, যিহোবা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের ভালোবাসেন? বোঝান। (রোমীয় ৫:৫)

যিহোবা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের প্রতিও তাঁর ভালোবাসা দেখিয়েছেন। রোমীয় ৫:৫ পদ থেকে বোঝা যায় যে, তিনি তাদের কতটা ভালোবাসেন। (পড়ুন।) সেখানে লেখা আছে: “তাদের হৃদয়কে ঈশ্বরের প্রেম দিয়ে পূর্ণ করা হয়েছে।” একটা শব্দকোষে বলা হয়েছে, এই শব্দগুলোর মানে এভাবে বলা হয়েছে: যিহোবা তাদের এত বেশি ভালোবাসেন যেন তাদের হৃদয়ে ভালোবাসার ধারা বইছে। অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা জানে যে, ঈশ্বর তাদের ভালোবাসেন। (যিহূদা ১) যোহন লিখেছিলেন, “দেখো, আমাদের প্রতি পিতার প্রেম এত মহৎ যে, আমাদের ঈশ্বরের সন্তান বলে ডাকা হয়!” (১ যোহন ৩:১) এর থেকে বোঝা যায়, অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা যিহোবার ভালোবাসা সম্বন্ধে কেমন অনুভব করে। কিন্তু, যিহোবা কি শুধু অভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরই ভালোবাসেন? না। যিহোবা দেখিয়েছেন, তিনি আমাদের সবাইকে ভালোবাসেন।

১০. যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন, এর সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ কী?

১০ যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন, এর সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ কী? মুক্তির মূল্য। এর চেয়ে বড়ো প্রমাণ আর কীই-বা হতে পারে! (যোহন ৩:১৬; রোমীয় ৫:৮) যিহোবা সমস্ত মানুষের জন্য তাঁর প্রিয় পুত্রকে বলি হিসেবে দিয়েছেন, যাতে আমাদের পাপ ক্ষমা হতে পারে এবং আমরা যিহোবার বন্ধু হতে পারি। (১ যোহন ৪:১০) যিহোবা ও যিশু আমাদের জন্য কত কিছুই-না করেছেন। যখন আমরা এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করি, তখন আমরা বুঝতে পারি, তাঁরা আমাদের প্রত্যেককে কতটা ভালোবাসেন। (গালা. ২:২০) যিহোবা শুধু ন্যায়বিচার করার জন্যই নয়, কিন্তু তিনি আমাদের ভালোবাসেন বলে মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর ভালোবাসা দেখানোর জন্য যিহোবা নিজের একজাত এবং প্রিয় পুত্রকে আমাদের জন্য কষ্ট পেয়ে মারা যেতে দিয়েছেন।

১১. যিরমিয় ৩১:৩ পদ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১১ আমরা যেমনটা দেখলাম, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন এবং তিনি এই ভালোবাসা দেখান। (পড়ুন, যিরমিয় ৩১:৩.) তিনি আমাদের ভালোবাসেন, তাই তিনি আমাদের তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেন। (তুলনা করুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৭, ৮.) কোনো ব্যক্তি বা কোনো কিছুই তাঁর ভালোবাসা থেকে আমাদের আলাদা করতে পারবে না। (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) আপনি যখন যিহোবার ভালোবাসা সম্বন্ধে চিন্তা করেন, তখন আপনার কেমন লাগে? গীতসংহিতা ২৩ অধ্যায় পড়ে দেখুন। যিহোবা যে আমাদের ভালোবাসেন এবং আমাদের যত্ন নেন, এই বিষয়টা চিন্তা করে আপনি হয়তো দায়ূদের মতোই অনুভব করবেন।

যিহোবার কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়ে আপনার কেমন লাগে?

১২. তেইশ গীতে দায়ূদ কী বলেছিলেন? বোঝান।

১২ গীতসংহিতা ২৩:১-৬ পদ পড়ুন। ২৩ গীতে দায়ূদ বলেছিলেন, তিনি নিশ্চিত যে, যিহোবা তাকে ভালোবাসেন এবং তার জন্য চিন্তা করেন। যিহোবাকে মেষপালক বলার মাধ্যমে দায়ূদ বুঝিয়েছিলেন যে, তার সঙ্গে যিহোবার সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ। যিহোবার বলা পথে চলার মাধ্যমে দায়ূদ সুরক্ষিত অনুভব করেছিলেন। আর তিনি সবসময় যিহোবার উপর নির্ভর করতেন। দায়ূদ জানতেন, যিহোবা সারাজীবন ধরে তার প্রতি অটল প্রেম দেখাবেন। দায়ূদ কেন এত নিশ্চিত ছিলেন?

১৩. দায়ূদ কেন এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা তাকে সামলাবেন?

১৩ “আমার অভাব হইবে না।” দায়ূদ অনুভব করেছিলেন, যিহোবা তার যত্ন নেবেন। কেন? কারণ যিহোবা সবসময় তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দিয়েছিলেন। দায়ূদ এও জানতেন, যিহোবা হলেন তার বন্ধু এবং তিনি তার উপর খুশি। তাই দায়ূদ পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন, ভবিষ্যতে যা-ই ঘটুক না কেন, যিহোবা তাকে সামলাবেন। দায়ূদ জানতেন, যিহোবা তাকে এত ভালোবাসেন যে, তিনি সবসময় তার যত্ন নেবেন। তাই, উদ্‌বিগ্নতা থাকা সত্ত্বেও দায়ূদ আনন্দে থাকতে পেরেছিলেন।—গীত. ১৬:১১.

১৪. কীভাবে যিহোবা আমাদের আরও ভালোভাবে যত্ন নিতে পারেন?

১৪ যিহোবা আমাদের খুব ভালোভাবে যত্ন নেন আর আমাদের প্রতি যখন খারাপ কিছু ঘটে, তখন তিনি আরও বেশি করে আমাদের যত্ন নেন। ক্লেয়ার a নামে একজন বোনও এইরকম অনুভব করেছিলেন। তিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেথেলে সেবা করেছেন। কিন্তু, একবার তার উপর অনেক সমস্যা একসঙ্গে এসেছিল। তার বাবার স্ট্রোক হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তার এক নিজের বোনকে সমাজচ্যুত করা হয়েছিল। তাদের পরিবারের একটা ছোটো ব্যাবসা ছিল, সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং তারা তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছিল। বোন বুঝতে পারছিলেন না, তিনি কী করবেন। সেইসময় কীভাবে যিহোবা তাদের যত্ন নিয়েছিলেন? বোন বলেন, “প্রত্যেকটা দিন যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের কোনো কিছুরই অভাব হয়নি। অনেকসময় আমরা যা চেয়েছিলাম, সেটার চেয়েও বেশি যিহোবা আমাদের জন্য করেছিলেন। আমার প্রায়ই সেই মুহূর্তগুলো মনে পড়ে, যখন যিহোবা আমাদের খুব ভালোভাবে যত্ন নিয়েছিলেন। আমি জীবনে সেগুলো ভুলতে পারব না। এগুলোর কারণেই আমি আমার সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি।”

১৫. কেন দায়ূদ সতেজতা অনুভব করেছিলেন? (ছবিও দেখুন।)

১৫ “তিনি আমার প্রাণ ফিরাইয়া আনেন।” দায়ূদের উপর যখন একের পর এক সমস্যাগুলো এসেছিল, তখন তিনি অনেক হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। (গীত. ১৮:৪-৬) অনেকসময় তিনি প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়তেন, ভিতর থেকে একেবারে ভেঙে পড়তেন। এইরকম সময়ে যিহোবার ভালোবাসা এবং তাঁর যত্ন পেয়ে তিনি সতেজতা অনুভব করেছিলেন। যিহোবা যেন তাঁর বন্ধুকে “তৃণভূষিত চরাণীতে” এবং “বিশ্রাম-জলের ধারে ধারে” নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন দায়ূদ যেন আবারও জীবন ফিরে পেয়েছিলেন অর্থাৎ তিনি আবারও শক্তি পেয়েছিলেন এবং আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করে গিয়েছিলেন।—গীত. ১৮:২৮-৩২.

যিহোবা দায়ূদকে অনেক ভালোবাসতেন এবং তার জন্য চিন্তা করতেন। তাই, দায়ূদ যখন নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য পালাচ্ছিলেন, তখন তিনি সতেজতা লাভ করেছিলেন (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১৬. যিহোবার অটল প্রেমের কারণে কীভাবে আপনি শক্তি পেয়েছেন?

১৬ দায়ূদের মতো আজ আমরাও যিহোবার অটল প্রেমের কারণে সমস্যার মধ্যেও স্থির থাকতে পারি। (বিলাপ ৩:২২; কল. ১:১১) বোন রেচেলের জীবনে কী ঘটেছে, তা লক্ষ করুন। কোভিড-১৯ অতিমারির সময়ে তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল এবং সে যিহোবাকেও ছেড়ে দিয়েছিল। সেই সময়ে বোনের মন একেবারে ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু, যিহোবা তাকে কীভাবে সামলেছিলেন? বোন বলেন, “যিহোবা কখনো আমাকে মনে করতে দেননি যে, তিনি আমাকে ভালোবাসেন না। তিনি আমার বন্ধুদের মাধ্যমে আমার যত্ন নিয়েছিলেন। তারা আমার সঙ্গে সময় কাটাত, আমার জন্য খাবার নিয়ে আসত, আমাকে উৎসাহিত করার জন্য কিছু ম্যাসেজ পাঠাত অথবা বাইবেলের কিছু পদ লিখে পাঠাত। তারা যখনই আমার দিকে তাকাত, তখনই তাদের মুখে হাসি থাকত। তারা আমাকে সবসময় বোঝাত, যিহোবা আমার জন্য কত চিন্তা করেন। তাই, আমি সবসময় যিহোবাকে থ্যাংক ইউ বলি কারণ তিনি আমাকে এত বড়ো একটা পরিবার দিয়েছেন, যেখানে সবাই আমাকে ভালোবাসে।”

১৭. কেন দায়ূদ বলেছিলেন, “আমি ভয় করিব না”?

১৭ ‘আমি ভয় করিব না, কেননা তুমি আমার সঙ্গে সঙ্গে আছ।’ দায়ূদের অনেক শত্রু ছিল, যারা খুবই শক্তিশালী ছিল। আর অনেকসময় দায়ূদের জীবন ঝুঁকির মুখে ছিল। কিন্তু যিহোবা দায়ূদকে ভালোবাসতেন, তাই দায়ূদ নিজেকে সুরক্ষিত মনে করেছিলেন। দায়ূদ দেখতে পেয়েছিলেন যে, কীভাবে যিহোবা প্রতিটা মুহূর্তে তাকে সাহায্য করছেন এবং তা দেখে তিনি অনেক স্বস্তি পেয়েছিলেন। তাই তিনি বলেছিলেন, ‘সদাপ্রভু আমাকে আমার সকল আশঙ্কা হইতে উদ্ধার করিলেন।’ (গীত. ৩৪:৪) কখনো কখনো দায়ূদ ভয় পেতেন, কিন্তু তিনি জানতেন, যিহোবা তাকে ভালোবাসেন। তাই, তিনি তার ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন।

১৮. যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন, এই বিষয়টা মনে রেখে কীভাবে আমরা সেইসময়ও আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করতে পারি, যখন আমাদের ভয় লাগে?

১৮ কখনো কখনো আমরা খুব ভয় পাই। কিন্তু আমরা যদি মনে রাখি, যিহোবা আমাদের কতটা ভালোবাসেন, তা হলে আমরা সাহস লাভ করব। কীভাবে? বোন সুশির উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যিনি একজন অগ্রগামী। তিনি বলেন, তার ছেলে যখন আত্মহত্যা করেছিল, তখন সেটা তার উপর এবং তার স্বামীর উপর কেমন প্রভাব ফেলেছিল: “যখন হঠাৎ করে এইরকম কোনো ঘটনা ঘটে, তখন বুকে খুব জোর ধাক্কা লাগে। আপনি নিজেকে খুবই একা বলে মনে করেন। আর হয়তো এই ভেবে খুব ভয় পান যে, জানি না কাল কী হবে। কিন্তু, সেইসময় যিহোবা আমাদের খুব ভালোভাবে যত্ন নিয়েছিলেন। মনে হয়েছিল যেন তিনি আমাদের কোলে তুলে নিয়েছেন এবং আমরা নিজেদের সুরক্ষিত বলে মনে করেছিলাম।” বোন রেচেল, যার বিষয়ে আগে উল্লেখ করা হয়েছিল, তিনি বলেন, “একদিন রাতে আমি খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমি অতিরিক্ত চিন্তা করছিলাম আর আমার খুব ভয় লাগছিল। আমি কেঁদে কেঁদে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম আর সঙ্গেসঙ্গে আমার মনে হয়েছিল যেন যিহোবা আমাকে একজন মায়ের মতো কোলে নিয়েছেন। আমার মন একেবারে শান্ত হয়ে গিয়েছিল এবং আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। সেই রাতের কথা আমি জীবনে ভুলতে পারব না।” তাসোস নামে একজন প্রাচীন সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যেটার কারণে তাকে চার বছর জেলে রাখা হয়েছিল। সেইসময় কীভাবে ভাই বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবা তাকে ভালোবাসেন এবং তার জন্য চিন্তা করেন? ভাই বলেন, “আমার যা দরকার ছিল, যিহোবা শুধুমাত্র সেই বিষয়ে যত্ন নেননি, কিন্তু তিনি সেটার চেয়েও বেশি কিছু করেছিলেন। ফলে, আমি তাঁর উপর আরও বেশি করে নির্ভর করতে পেরেছিলাম। জেলের পরিবেশ খুবই খারাপ ছিল। তবে, যিহোবার পবিত্র শক্তির সাহায্যে আমি আনন্দে থাকতে পেরেছিলাম। এভাবে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমি যত বেশি যিহোবার উপর নির্ভর করব, তত বেশি আমি তাঁর ভালোবাসা বুঝতে পারব। তাই, জেলে থাকার সময়েই আমি অগ্রগামীর কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম।”

আপনার প্রেমময় পিতা যিহোবার নিকটবর্তী হোন

১৯. (ক) আমরা যদি এই বিষয়ে নিশ্চিত হই যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন, তা হলে আমরা কীভাবে প্রার্থনা করতে পারি? (খ) যিহোবার ভালোবাসা সম্বন্ধে কোন বিষয়টা আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে? (“ যে-পদগুলো দেখায়, যিহোবা আমাদের কতটা ভালোবাসেন” বক্সটা দেখুন।)

১৯ আমরা যে-অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে আলোচনা করলাম, সেগুলো দেখায়, ‘প্রেমের ঈশ্বর’ যিহোবা সবসময় আমাদের সঙ্গে আছেন। (২ করি. ১৩:১১) তিনি আমাদের প্রত্যেকের জন্য চিন্তা করেন। আমরা সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি, ‘সদাপ্রভুর অটল ভালোবাসা আমাদের ঘিরে রাখে।’ (গীত. ৩২:১০; বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) আমরা যত বেশি এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করব যে, যিহোবা আমাদের কত ভালোবাসেন, তত বেশি তিনি আমাদের কাছে বাস্তব হয়ে উঠবেন এবং আমরা তাঁর নিকটবর্তী হতে পারব। আমরা মন খুলে তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে পারব এবং বলতে পারব, তাঁর ভালোবাসা ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারি না। আমরা তাঁকে আমাদের মনের সমস্ত চিন্তা এবং আমাদের সমস্যাগুলোর বিষয়ে বলতে পারব আর নিশ্চিত থাকব যে, তিনি আমাদের বোঝেন এবং আমাদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত।—গীত. ১৪৫:১৮, ১৯.

২০. যিহোবার ভালোবাসা কীভাবে আমাদের তাঁর প্রতি আকর্ষণ করে?

২০ শীত কালে যদি কোথাও আগুন জ্বলে, তা হলে আমরা সেটার দিকে যাই। একইভাবে, যিহোবার ভালোবাসাও খুব শীতে জ্বলতে থাকা আগুনের মতো, যেটার উষ্ণতা আমাদের তাঁর প্রতি আকর্ষণ করে। এই ভালোবাসা অনেক শক্তিশালী আর একইসঙ্গে অনেক কোমল। সত্যিই, যিহোবা আমাদের খুব ভালোবাসেন। তাই আসুন, আমরাও সবাই মন থেকে বলি, ‘যিহোবা, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।’—গীত. ১১৬:১.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

  • যিহোবার ভালোবাসা সম্বন্ধে আপনি কী বলবেন?

  • আপনি কেন এই বিষয়ে আস্থা রাখতে পারেন যে, যিহোবা আপনাকে খুব ভালোবাসেন?

  • যিহোবার ভালোবাসা পেয়ে আপনার কেমন লাগছে?

গান ৪ যিহোবা প্রেমময় পালক

a কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।