সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১

গান ২ যিহোবা তোমার নাম

যিহোবার গৌরব করুন

যিহোবার গৌরব করুন

২০২৫ সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ: “যিহোবার নামের প্রাপ্য গৌরব তাঁকে দাও।”গীত. ৯৬:৮.

আমরা কী শিখব?

আমরা জানতে পারব যে, আমরা যিহোবাকে কীভাবে তাঁর প্রাপ্য গৌরব দিতে পারি।

১. বর্তমানে বেশিরভাগ লোক শুধুমাত্র কোন বিষয়ে চিন্তা করে?

 বর্তমানে বেশিরভাগ লোক শুধুমাত্র নিজেদের বিষয়ে চিন্তা করে। যেমন, আপনি হয়তো দেখেছেন, কিছু লোক সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করায় অথবা তারা যা-কিছু করেছে, সেগুলো নিয়ে বড়াই করে। খুব কম লোকই রয়েছে, যারা যিহোবার গৌরব করে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, যিহোবার গৌরব করার অর্থ কী এবং কেন আমাদের তাঁর গৌরব করতে হবে। আমরা এটাও জানতে পারব যে, আমরা কীভাবে যিহোবাকে তাঁর প্রাপ্য গৌরব দিতে পারি এবং ভবিষ্যতে যিহোবা কীভাবে নিজের নামের গৌরব নিয়ে আসবেন।

যিহোবার গৌরব করার অর্থ কী?

২. সীনয় পর্বতে যিহোবা কীভাবে তাঁর গৌরব প্রকাশ করেছিলেন? ( ছবিও দেখুন।)

গৌরব শব্দের মানে কী? বাইবেলে যখনই “গৌরব” শব্দটা এসেছে, তখন এটা এমন কিছুকে বোঝায়, যার ফলে একজন ব্যক্তির সম্মান বেড়ে যায় অথবা যাকে দেখে লোকেরা তার প্রতি আকর্ষিত হয়। যিহোবা মিশরের দাসত্ব থেকে ইজরায়েলীয়দের উদ্ধার করার পর পরই চমৎকার উপায়ে নিজের গৌরব প্রকাশ করেছিলেন। একটু কল্পনা করুন, লক্ষ লক্ষ ইজরায়েলীয় সীনয় পর্বতের নীচে দাঁড়িয়ে তাদের ঈশ্বরের কথা শোনার জন্য খুবই উৎসুক হয়ে রয়েছে। এরপর একটা ঘন কালো মেঘ পর্বত ঢেকে দেয়। হঠাৎ এক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয় এবং পর্বত থেকে এমন ধোঁয়া উঠতে থাকে যেন মনে হচ্ছিল, একটা আগ্নেয়গিরি থেকে ধোঁয়া উঠছে। পৃথিবী কাঁপতে শুরু করে, বিদ্যুৎ চমকায় এবং বজ্রপাত হয়। চারিদিকে শিঙার প্রবল আওয়াজ শোনা যায়। (যাত্রা. ১৯:১৬-১৮; ২৪:১৭; গীত. ৬৮:৮) যিহোবার গৌরবের এমন একটা সুন্দর দৃশ্য দেখে ইজরায়েলীয়েরা নিশ্চয়ই অবাক হয়ে গিয়েছিল!

সীনয় পর্বতে যিহোবা ইজরায়েলীয়দের তাঁর গৌরবের অপূর্ব দৃশ্য দেখিয়েছিলেন (২ অনুচ্ছেদ দেখুন)


৩. আমরা কীভাবে যিহোবার গৌরব করতে পারি?

কিন্তু, মানুষ হিসেবে আমরা কি যিহোবার গৌরব করতে পারি? অবশ্যই। কীভাবে? আমরা অন্যদের তাঁর চমৎকার কাজগুলো এবং তাঁর অপূর্ব গুণগুলোর বিষয়ে বলতে পারি। এ ছাড়া, আমরা যখন যিহোবার সাহায্যে কোনো কাজ ভালোভাবে করি, তখন সেটার কৃতিত্ব যিহোবাকে দিতে পারি। (যিশা. ২৬:১২) এক্ষেত্রে আমরা রাজা দায়ূদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। তিনি সবসময় যিহোবার গৌরব করেছিলেন। একবার তিনি ইজরায়েলের পুরো মণ্ডলীর সামনে প্রার্থনায় বলেছিলেন, “হে যিহোবা, মহত্ব, শক্তি, সৌন্দর্য, মহিমা ও প্রতাপ তোমারই কারণ আকাশ ও পৃথিবীতে যা-কিছু রয়েছে, সেগুলো সব তোমারই।” দায়ূদ প্রার্থনা করার পর “পুরো মণ্ডলী . . . ঈশ্বর যিহোবার প্রশংসা করল।”—১ বংশা. ২৯:১১, ২০.

৪. যিশু কীভাবে যিহোবার গৌরব করেছিলেন?

যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি সবসময় তাঁর পিতার গৌরব করেছিলেন। যখনই তিনি কোনো অলৌকিক কাজ করতেন, তখন তিনি লোকদের বলতেন, যিহোবার সাহায্যেই তিনি সেটা করতে পেরেছেন। (মার্ক ৫:১৮-২০) যেভাবে তিনি তাঁর পিতার বিষয়ে কথা বলতেন এবং লোকদের সঙ্গে আচরণ করতেন, সেটা থেকেও বোঝা যায়, তিনি যিহোবার গৌরব করেছিলেন। একবার যিশু একটা সমাজগৃহে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন, সেখানে এমন একজন মহিলা ছিলেন, যিনি মন্দ স্বর্গদূতদের কারণে ১৮ বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন। এই কারণে সেই মহিলা কুঁজো হয়ে গিয়েছিলেন এবং সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারতেন না। একটু চিন্তা করুন, তিনি কত কষ্টের মধ্যে ছিলেন! তার পরিস্থিতি দেখে যিশুর তার উপর করুণা হয়েছিল। তিনি তার কাছে গিয়েছিলেন এবং সদয়ভাবে তাকে বলেছিলেন: “হে নারী, তুমি তোমার অসুস্থতা থেকে মুক্ত হলে।” এরপর যিশু তার উপর হাত রেখেছিলেন এবং সেই মহিলা সঙ্গেসঙ্গে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পেরেছিল আর “ঈশ্বরের গৌরব” করতে শুরু করেছিল। সেই মহিলা যিহোবার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ ছিল কারণ তিনি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। (লূক ১৩:১০-১৩) আর তাই তিনি তাঁর গৌরব করেছিলেন। সেই মহিলার মতো আমাদের কাছেও যিহোবার গৌরব করার অনেক কারণ রয়েছে।

আমরা কেন যিহোবার গৌরব করি?

৫. কেন আমরা যিহোবাকে সমাদর করি?

আমরা যিহোবার গৌরব করি, কারণ আমরা তাঁকে সমাদর করি। আমাদের কাছে যিহোবাকে সমাদর করার অনেক কারণ রয়েছে। যিহোবা হলেন সর্বশক্তিমান, তাঁর এত শক্তি রয়েছে যে, তিনি যা চান, তা-ই করতে পারেন। (গীত. ৯৬:৪-৭) তিনি অনেক প্রজ্ঞাবান এবং এটা তাঁর সৃষ্টি থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। যিহোবাই আমাদের জীবন দিয়েছেন এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু দিয়েছেন। (প্রকা. ৪:১১) যিহোবা হলেন অনুগত। (প্রকা. ১৫:৪) তিনি তাঁর প্রতিটা কাজে সফল হন এবং সবসময় নিজের প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন। (যিহো. ২৩:১৪) তাই, ভাববাদী যিরমিয় তাঁর বিষয়ে বলেছিলেন, “জাতিগণের সমস্ত জ্ঞানী লোকের মধ্যে, তাহাদের সমুদয় রাজ্যের মধ্যে তোমার তুল্য কেহ নাই।” (যির. ১০:৬, ৭) সত্যিই, আমাদের কাছে আমাদের পিতা যিহোবাকে সমাদর করার প্রচুর কারণ রয়েছে। তবে, যিহোবাকে সমাদর করার পাশাপাশি আমরা তাঁকে অনেক ভালোবাসি।

৬. আমরা কেন যিহোবাকে ভালোবাসি?

আমরা যিহোবার গৌরব করি কারণ আমরা তাঁকে অনেক ভালোবাসি। আর আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি কারণ তাঁর অনেক ভালো গুণ রয়েছে। তিনি করুণাময় এবং অনেক দয়ালু। (গীত. ১০৩:১৩; যিশা. ৪৯:১৫) তিনি আমাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখান। আমরা যখন দুঃখের মধ্যে থাকি, তখন তিনিও দুঃখ পান। (সখ. ২:৮) তিনি আমাদের দিকে তাঁর বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছেন এবং তিনি চান যেন আমরা তাঁকে ভালোভাবে জানি এবং তাঁর নিকটবর্তী হই। (গীত. ২৫:১৪; প্রেরিত ১৭:২৭) সেইসঙ্গে যিহোবা অনেক নম্র। “তিনি আকাশ ও পৃথিবীকে দেখার জন্য নীচের দিকে ঝোঁকেন, তিনি দুঃখী ব্যক্তিকে ধুলো থেকে ওঠান।” (গীত. ১১৩:৬, ৭, NW) সত্যিই, আমাদের ঈশ্বর এত ভালো যে, আমরা তাঁর গৌরব না করে থাকতে পারি না! —গীত. ৮৬:১২.

৭. আমাদের কোন বিশেষ সুযোগ রয়েছে?

আমরা যিহোবার গৌরব করি কারণ আমরা চাই যেন প্রত্যেকে তাঁর বিষয়ে জানে। আজ অনেক লোক যিহোবা সম্বন্ধে সত্য জানে না কারণ শয়তান তাঁর বিষয়ে অনেক মিথ্যা কথা ছড়িয়েছে এবং লোকদের মন অন্ধ করে রেখেছে। (২ করি. ৪:৪) এই কারণে লোকেরা মনে করে, ঈশ্বর সবসময় রেগে থাকেন এবং সবসময় লক্ষ রাখেন যে, কখন কাকে শাস্তি দেবেন। তারা এটাও মনে করে, ঈশ্বর কারো জন্য চিন্তা করেন না এবং বর্তমানে জগতে যে-দুঃখকষ্ট রয়েছে, সেটার জন্য তিনিই দায়ী। কিন্তু, আমরা ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্যটা জানি এবং আমাদের কাছে এই সুযোগ রয়েছে যে, আমরা অন্যদের বলি, যিহোবা আসলে কেমন ঈশ্বর যেন তারাও তাঁর গৌরব করতে পারে। (যিশা. ৪৩:১০) ৯৬ গীতে বলা হয়েছে, আমরা কীভাবে যিহোবার গৌরব করতে পারি। আসুন আমরা ঈশ্বরের লিখিত এই গীত নিয়ে আলোচনা করি। এমনটা করার সময় চিন্তা করুন, আপনি কীভাবে যিহোবাকে তাঁর প্রাপ্য গৌরব দিতে পারেন।

আমরা কীভাবে যিহোবাকে তাঁর প্রাপ্য গৌরব দিতে পারি?

৮. একটা উপায় বলুন, যেটার মাধ্যমে আমরা যিহোবার গৌরব করতে পারি। (গীতসংহিতা ৯৬:১-৩)

গীতসংহিতা ৯৬:১-৩ পদ পড়ুন। আমরা যিহোবা সম্বন্ধে যা বলি, সেটার মাধ্যমে আমরা তাঁর গৌরব করতে পারি। এই পদগুলোতে যিহোবার লোকদের বলা হয়েছে, “যিহোবার উদ্দেশে গান গাও,” “তাঁর নামের প্রশংসা করো,” এবং “বিভিন্ন জাতির মধ্যে তাঁর মহিমা সম্বন্ধে ঘোষণা করো।” এই সমস্ত উপায়ে আমরা আমাদের পিতা যিহোবার গৌরব করতে পারি। বিশ্বস্ত যিহুদিরা এবং প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা সাহসের সঙ্গে যিহোবার নামের পক্ষসমর্থন করেছিল। তারা এটা বলার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যায়নি যে, যিহোবা কেমন ঈশ্বর এবং তিনি তাদের জন্য কত কিছু করেছেন। (দানি. ৩:১৬-১৮; প্রেরিত ৪:২৯) বর্তমানে, আমরা কীভাবে যিহোবার নামের পক্ষসমর্থন করতে পারি?

৯-১০. আপনি বোন অ্যাঞ্জেলিনার অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখেছেন? (ছবিও দেখুন।)

অ্যাঞ্জেলিনা নামে একজন বোনের অভিজ্ঞতার উপর মনোযোগ দিন, যিনি আমেরিকাতে থাকেন। a একটা কোম্পানিতে তিনি সবেমাত্র চাকরি পেয়েছিলেন। সেখানে তিনি সাহসের সঙ্গে অন্যদের যিহোবার বিষয়ে বলেছিলেন এবং তাঁর নামের পক্ষসমর্থন করেছিলেন। একবার সেই কোম্পানিতে একটা মিটিং রাখা হয়েছিল, যেখানে সমস্ত নতুন ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই মিটিং-এ সবাইকে নিজের বিষয়ে কিছু বলতে হত। অ্যাঞ্জেলিনা চিন্তা করেছিলেন, কিছু ছবি দেখাবেন এবং তাদের বলবেন যে, তিনি একজন যিহোবার সাক্ষি আর তিনি নিজের জীবনে অনেক সুখী। কিন্তু, অ্যাঞ্জেলিনার আগে যে-ব্যক্তি নিজের বিষয়ে বলছিলেন, তিনি বলেন, তিনি একটা যিহোবার সাক্ষি পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন। এরপর, তিনি যিহোবা এবং সাক্ষিদের বিষয়ে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলতে শুরু করেন। অ্যাঞ্জেলিনা বলেন, “তার কথা শুনে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। কিন্তু, আমি চিন্তা করি, ‘সেই ব্যক্তি যিহোবা সম্বন্ধে কত মিথ্যা কথা বলছে। আমি চুপ করে থাকতে পারব না! আমাকে বলতেই হবে যে, যিহোবা এমন ঈশ্বর নন।’”

১০ সেই ব্যক্তি যখন নিজের কথা শেষ করেন, তখন অ্যাঞ্জেলিনা মনে মনে ছোটো করে প্রার্থনা করেন। এরপর তিনি শান্তভাবে সেই ব্যক্তিকে বলেন, “আমিও এক সাক্ষি পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছি এবং আমি এখনও একজন যিহোবার সাক্ষি।” বোন এটা বলার পর সেই ঘরের পরিবেশ একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু, অ্যাঞ্জেলিনা শান্ত ছিলেন। তিনি সবাইকে সম্মেলনের কিছু ছবি এবং আরও অন্যান্য কিছু ছবি দেখান, যেগুলোতে তাকে এবং তার বন্ধুদের খুবই খুশি দেখাচ্ছে। তিনি কৌশলতার সঙ্গে কাজ করেছিলেন এবং সবাইকে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে বলেছিলেন। (১ পিতর ৩:১৫) এর ফলাফল কী হয়েছিল? অ্যাঞ্জেলিনা যখন তার কথা শেষ করেছিলেন, সেই ব্যক্তি একটু শান্ত হয়ে বলেছিলেন, তার ছোটো বেলার কিছু মধুর স্মৃতি মনে পড়ে গিয়েছে, যখন তিনি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। অ্যাঞ্জেলিনা বলেন, “যিহোবা গৌরব পাওয়ার যোগ্য, তাই আমাদের তাঁর পক্ষসমর্থন করতেই হবে এবং এটা আমাদের জন্য একটা সম্মানের বিষয়।” বর্তমানে যখন কেউ যিহোবার নামের নিন্দা করে, তখন আমাদের কাছে এই সুযোগ রয়েছে, আমরা যেন তাঁর নামের পক্ষ সমর্থন করি এবং তাঁর গৌরব করি।

আমরা আমাদের কথার মাধ্যমে, আমাদের মূল্যবান জিনিস এবং আমাদের আচার-আচরণের মাধ্যমে যিহোবার গৌরব করতে পারি! (৯-১০ অনুচ্ছেদ দেখুন) b


১১. খ্রিস্টানেরা সবসময় গীতসংহিতা ৯৬:৮ পদে দেওয়া নীতি কীভাবে কাজে লাগিয়েছিল?

১১ গীতসংহিতা ৯৬:৮ পদ পড়ুন। আমরা আমাদের মূল্যবান জিনিস দিয়ে যিহোবার গৌরব করতে পারি। যিহোবার সেবকেরা সবসময়ই এমনটা করে এসেছে। (হিতো. ৩:৯) যেমন, অতীতে ইজরায়েলীয়েরা মন্দির নির্মাণ করা এবং সেটার রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য দান দিয়েছিল। (২ রাজা. ১২:৪, ৫; ১ বংশা. ২৯:৩-৯) যিশুর কিছু শিষ্য “নিজেদের সম্পদ ব্যবহার” করে তাঁর এবং তাঁর শিষ্যদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়েছিল। (লূক ৮:১-৩) আর প্রথম শতাব্দীতে যখন কিছু খ্রিস্টান দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছিল, তখন অন্য ভাই-বোনেরা তাদের ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছিল। (প্রেরিত ১১:২৭-২৯) বর্তমানে আমরাও স্বেচ্ছায় দান দেওয়ার মাধ্যমে যিহোবার গৌরব করতে পারি।

১২. আমরা যখন দান দিই, তখন তা থেকে কীভাবে যিহোবার গৌরব হয়? (ছবিও দেখুন।)

১২ একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যেটা থেকে বোঝা যায় যে, আমরা যখন দান দিই, তখন সেটা থেকে যিহোবার গৌরব হয়। ২০২০ সালে জিম্বাবোয়েতে একটা ভয়ানক দুর্ভিক্ষ হয়েছিল এবং এটা অনেক দীর্ঘ সময় ধরে চলেছিল। একটা রিপোর্টে বলা হয়েছে, খাবারের অভাব থাকায় লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির জীবন মৃত্যুর মুখে ছিল। তাদের মধ্যে আমাদের একজন বোন প্রিস্কা ছিলেন। বোন প্রতি বুধবার এবং শুক্রবারে প্রচারে যেতেন। আর দুর্ভিক্ষের সময়েও, তিনি এমনটা করে চলেছিলেন। এমনকী যখন শস্য কাটার সময় এসেছিল, তখনও তিনি প্রচার করে গিয়েছিলেন। তার প্রতিবেশীরা যখন দেখেছিল যে, বোন জমিতে কাজ না করে প্রচারে যাচ্ছেন, তখন তারা তাকে টিটকারি দিত এবং বলত: “তুমি তো না খেতে পেয়ে মরবে।” কিন্তু, বোনের যিহোবার উপর সম্পূর্ণ আস্থা ছিল। তাই তিনি বলতেন, “যিহোবা সবসময় তার সেবকদের যত্ন নেন।” এর কিছু সময় পরই বোন সংগঠনের কাছ থেকে ত্রাণসামগ্রী পেয়েছিলেন। সারা পৃথিবীতে আমাদের ভাই-বোনেরা যে-দান দেয়, সেটার কারণেই জিম্বাবোয়েতে আমাদের ভাই-বোনেরা প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পেয়েছিল। এটা দেখে প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে গিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, “তোমার ঈশ্বর সবসময় তোমাদের যত্ন নিয়েছেন। আমরা তাঁর বিষয়ে আরও জানতে চাই।” এরপর বোনের প্রতিবেশীদের মধ্যে সাত সভাতে যাওয়া শুরু করেছিল।

আমরা আমাদের মূল্যবান জিনিস দিয়ে যিহোবার গৌরব করতে পারি (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন) c


১৩. আমরা আমাদের আচার-আচরণের মাধ্যমে কীভাবে যিহোবার গৌরব করতে পারি? (গীতসংহিতা ৯৬:৯)

১৩ গীতসংহিতা ৯৬:৯ পদ পড়ুন। আমরা আমাদের আচার-আচরণের মাধ্যমে যিহোবার গৌরব করতে পারি। যে-যাজকেরা পবিত্র তাঁবুতে এবং পরবর্তী সময়ে মন্দিরে সেবা করত, তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হত। (যাত্রা. ৪০:৩০-৩২) তাদের মতো আমাদেরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। কিন্তু, এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল, আমাদের আচার-আচরণ যেন শুদ্ধ হয়। (গীত. ২৪:৩, ৪; ১ পিতর ১:১৫, ১৬) আমাদের “পুরোনো ব্যক্তিত্বকে” কাপড়ের মতো খুলে ফেলতে এবং “নতুন ব্যক্তিত্বকে” কাপড়ের মতো পরিধান করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। (কল. ৩:৯, ১০) এর মানে হল, আমাদের এমন কোনো বিষয়ে চিন্তা করা অথবা এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যেগুলো যিহোবা পছন্দ করেন না। এর পরিবর্তে, আমাদের যিহোবার মতো হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত। আমাদের তাঁর মতো চিন্তা করা এবং তাঁর মতো সুন্দর গুণগুলো দেখানো উচিত। যিহোবার সাহায্যে সেই ব্যক্তিরাও নিজেদের পরিবর্তন করতে পারে এবং নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করতে পারে, যারা খারাপ কাজগুলো করে চলেছে অথবা খুবই হিংস্র।

১৪. আপনি জ্যাকের উদাহরণ থেকে কী শিখেছেন? (ছবিও দেখুন।)

১৪ এবার জ্যাকের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি এতটাই ভয়ঙ্কর এবং হিংস্র ছিলেন যে, লোকেরা তাকে ‘রাক্ষস’ বলত। জ্যাক এত খারাপ কাজ করেছিলেন, যে-কারণে তাকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি যখন শাস্তির জন্য জেলে অপেক্ষা করছিলেন, সেই সময়ে একজন ভাই তাকে বাইবেল অধ্যয়ন করাতে শুরু করেন, যিনি প্রায়ই সেই জেলে থাকা ব্যক্তিদের শেখানোর জন্য সেখানে আসতেন। জ্যাক অনেক খারাপ কাজ করেছিলেন। কিন্তু, তিনি নিজের পুরোনো ব্যক্তিত্বকে কাপড়ের মতো খুলে ফেলেছিলেন এবং কিছু সময় পর বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। জ্যাক এতটাই পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তাকে যে-দিন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত, সেই দিন কিছু কারারক্ষী তাকে বিদায় জানাতে এসেছিল এবং তাদের চোখে জল চলে এসেছিল। আর সেখানকার একজন পুলিশ বলেছিলেন, “এই জেলে জ্যাকের মতো খারাপ আর কেউ ছিল না। কিন্তু, এখন তার মতো ভালো আর কেউ নেই।” জ্যাক মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পর ভাই যখন সেই জেলে সভা পরিচালনা করার জন্য আসেন, তখন তার একজন কয়েদির সঙ্গে দেখা হয়। তিনি প্রথম বার আমাদের সভাতে এসেছিলেন। কিন্তু, তিনি কেন সভাতে এসেছিলেন? জ্যাক যেভাবে নিজেকে পরিবর্তন করেছিলেন, সেটা দেখে তিনি এতটাই অভিভূত হয়েছিলেন যে, তিনি যিহোবার বিষয়ে শিখতে চেয়েছিলেন এবং একজন সাক্ষি হতে চেয়েছিলেন। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায় যে, আমরা আমাদের আচার-আচরণের মাধ্যমে আমাদের পিতা যিহোবার গৌরব করতে পারি।—১ পিতর ২:১২.

আমরা আমাদের আচার-আচরণের মাধ্যমে যিহোবার গৌরব করতে পারি (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন) d


খুব শীঘ্রই যিহোবা কীভাবে নিজের নামের গৌরব নিয়ে আসবেন?

১৫. খুব শীঘ্রই যিহোবা কীভাবে নিজের নামের উপর গৌরব নিয়ে আসবেন? (গীতসংহিতা ৯৬:১০-১৩)

১৫ গীতসংহিতা ৯৬:১০-১৩ পদ পড়ুন। ৯৬ গীতের এই শেষ পদগুলোতে বলা হয়েছে, যিহোবা একজন রাজা এবং তিনি কারো পক্ষ না নিয়েই বিচার করবেন। খুব শীঘ্রই তিনি নিজের নামের গৌরব নিয়ে আসবেন। কীভাবে? ন্যায়বিচার করার মাধ্যমে। শীঘ্রই যিহোবা মহতী বাবিল ধ্বংস করে দেবেন, কারণ মিথ্যা ধর্মগুলো তাঁর পবিত্র নামের উপর কলঙ্ক নিয়ে এসেছে। যে-লোকেরা মহতী বাবিলকে ধ্বংস হতে দেখবে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো যিহোবার উপর বিশ্বাস করতে এবং আমাদের সঙ্গে তাঁর সেবা করতে শুরু করবে। (প্রকা. ১৭:৫, ১৬; ১৯:১, ২) আর পরিশেষে আরমাগিদোনের যুদ্ধে যিহোবা শয়তানের এই মন্দ জগৎকে ধ্বংস করে দেবেন এবং সেই সমস্ত লোককে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন, যারা তাঁর বিরোধিতা করে এবং যারা তাঁর নামের উপর নিন্দা নিয়ে এসেছে। কিন্তু, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে এবং তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করে এবং আনন্দের সঙ্গে তাঁর গৌরব করে, তাদের প্রত্যেককে তিনি রক্ষা করবেন। (মার্ক ৮:৩৮; ২ থিষল. ১:৬-১০) খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্ব যখন শেষ হবে এবং চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হবে, তখন যিহোবা নিজের নামের উপর আসা সমস্ত কলঙ্ক মুছে দেবেন এবং নিজের নামকে পুরোপুরিভাবে পবিত্র করবেন। (প্রকা. ২০:৭-১০) সেইসময় “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভুর মহিমাবিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।”—হবক্‌. ২:১৪.

১৬. আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ? (ছবিও দেখুন।)

১৬ কল্পনা করুন, সেই সময়টা কতই-না সুন্দর হবে, যখন প্রত্যেকে যিহোবাকে তাঁর প্রাপ্য গৌরব দেবে! কিন্তু, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই দিন আসছে, আসুন আমরা যিহোবার গৌরব করার একটা সুযোগও হাতছাড়া না করি। আমাদের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই পরিচালকগোষ্ঠী ২০২৫ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ গীতসংহিতা ৯৬:৮ পদ থেকে নিয়েছে, যেখানে লেখা আছে: “যিহোবার নামের প্রাপ্য গৌরব তাঁকে দাও।”

খুব শীঘ্রই প্রত্যেকে যিহোবাকে তাঁর প্রাপ্য গৌরব দেবে! (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

গান ১২ মহান যিহোবা

a কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

b ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: নাটকের আকারে দেখানো হয়েছে যে, অ্যাঞ্জেলিনার প্রতি কী ঘটেছিল।

c ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: নাটকের আকারে দেখানো হয়েছে যে, প্রিস্কার প্রতি কী ঘটেছিল।

d ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: নাটকের আকারে দেখানো হয়েছে যে, জ্যাকের প্রতি কী ঘটেছিল।