সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২

গান ১৩২ এবার আমরা এক হলাম

স্বামীরা, নিজের স্ত্রীকে সম্মান করুন

স্বামীরা, নিজের স্ত্রীকে সম্মান করুন

“একইভাবে স্বামীরা, . . . তাদের সমাদর করো।”১ পিতর ৩:৭.

আমরা কী শিখব?

আমরা জানতে পারব, একজন স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে কথাবার্তা এবং আচার-আচরণের মাধ্যমে কীভাবে দেখাতে পারেন যে, তিনি তাকে সম্মান করেন।

১. যিহোবা কেন বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন, এটার একটা কারণ ব্যাখ্যা করুন।

 যিহোবা হলেন ‘সুখী ঈশ্বর’ এবং তিনি চান যেন তাঁর সেবকেরাও সুখী হয়। (১ তীম. ১:১১) তাই, তিনি আমাদের এমন অনেক উপহার দিয়েছেন, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবন উপভোগ করতে পারি। (যাকোব ১:১৭) সেগুলোর মধ্যে একটা হল, বিয়ের ব্যবস্থা। একজন পুরুষ এবং মহিলা যখন বিয়ে করে, তখন তারা একে অন্যের কাছে প্রতিজ্ঞা করে যে, তারা সবসময় একে অন্যকে ভালোবাসবে এবং একে অন্যকে গভীরভাবে সম্মান করবে। স্বামী-স্ত্রীরা যখন তাদের এই প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী চলে, তখন তারা দু-জনেই সুখী হয়।—হিতো. ৫:১৮.

২. বর্তমানে কিছু স্বামী তাদের স্ত্রীদের প্রতি কেমন আচরণ করে?

দুঃখের বিষয় হল, বর্তমানে অনেক স্বামী-স্ত্রী তাদের বিয়ের দিনে করা প্রতিজ্ঞা ভুলে যায়, এই কারণে তারা সুখী হয় না। সম্প্রতি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটা রিপোর্টে বলেছিল যে, বর্তমানে কিছু স্বামী তাদের স্ত্রীকে মারধর করে, তার উপর চিৎকার-চেঁচামেচি করে অথবা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এইরকম কিছু স্বামী অন্যদের সামনে দেখায় যে, তারা তাদের স্ত্রীকে সম্মান করে, কিন্তু বাড়িতে তাদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করে। অনেক স্বামী আবার পর্নোগ্রাফি দেখে আর এই কারণে তাদের বিয়ের বন্ধন দুর্বল হয়ে যায়।

৩. কিছু স্বামী কোন কারণে তাদের স্ত্রীদের প্রতি খারাপ আচরণ করে?

কিছু স্বামী তাদের স্ত্রীদের প্রতি খুবই খারাপ আচরণ করে। হতে পারে, তারা তাদের বাবাকে তাদের মায়ের গায়ে হাত তুলতে দেখেছে। এই কারণে তাদের মনে হয় যে, স্ত্রীদের প্রতি এইরকম আচরণ করা ভুল কিছু নয়। কিছু স্বামী আবার এমন এক সমাজে বড়ো হয়ে উঠেছে, যেখানে লোকেরা মনে করে, “আসল পুরুষ” তো তারাই, যারা তাদের স্ত্রীয়ের উপর অধিকার ফলায়। এ ছাড়া, কিছু এমন পুরুষ রয়েছে, যাদের নিজেদের অনুভূতি অথবা রাগ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তা কখনো শেখানো হয়নি। আবার কিছু পুরুষ এমন রয়েছে, যারা প্রায়ই নোংরা ছবি অথবা ভিডিও দেখে, যে-কারণে তারা মনে করে, মহিলারা কেবল যৌন চাহিদা মেটানোর একটা মাধ্যম। কিছু তথ্য থেকে জানা যায় যে, কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালীন এই সমস্যাগুলো আরও বেড়ে গিয়েছিল। কারণ যা-ই হোক না কেন, একজন স্বামীর তার স্ত্রীর প্রতি খারাপ আচরণ করা একেবারেই উচিত নয়।

৪. বিবাহিত ভাইদের বিশেষ করে কোন বিষয়টা খেয়াল রাখা উচিত এবং কেন?

বিবাহিত ভাইদের এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন এই বিষয়ে জগতের মতো দৃষ্টিভঙ্গি না রাখে। a কেন? কারণ একজন পুরুষ যেমনটা চিন্তা করেন, তেমনি কাজও করেন। লক্ষ করুন, প্রেরিত পৌল রোমের অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের কোন বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “এই জগতের লোকদের অনুকরণ কোরো না।” (রোমীয় ১২:১, ২) পৌল যখন রোমের খ্রিস্টানদের এই কথা লিখেছিলেন, তখন সেই মণ্ডলী তৈরি হয়ে অনেক বছর কেটে গিয়েছিল। কিন্তু, তিনি তাদের যা বলেছিলেন, সেটা থেকে বোঝা যায় যে, মণ্ডলীর কিছু ভাই তখনও জগতের লোকদের মতো চিন্তাভাবনা রেখেছিল এবং তাদের মতো আচার-আচরণ করছিল। তাই, পৌল তাদের উৎসাহিত করেছিলেন, তারা যেন তাদের চিন্তাভাবনা এবং আচার-আচরণ পরিবর্তন করে। এই পরামর্শ বর্তমানেও মণ্ডলীর বিবাহিত ভাইদের মেনে চলা উচিত। কিন্তু, দুঃখের বিষয় হল, কিছু ভাই মহিলাদের বিষয়ে জগতের মতো দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছে এবং তাদের স্ত্রীদের প্রতি খুবই খারাপ আচরণ করেছে। তাই, একজন খ্রিস্টান ভাইয়ের তার স্ত্রীর প্রতি কেমন আচরণ করা উচিত আর যিহোবা তার কাছ থেকে কী চান? b এই বিষয়টা আমরা এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদ থেকে জানতে পারব।

৫. প্রথম পিতর ৩:৭ পদ অনুযায়ী একজন স্বামীর তার স্ত্রীর প্রতি কেমন আচরণ করা উচিত?

১ পিতর ৩:৭ পদ পড়ুন। যিহোবা স্বামীদের আজ্ঞা দিয়েছেন, তারা যেন তাদের স্ত্রীদের সম্মান করে। যে-স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের সম্মান করে, তারা তাদের প্রতি সবসময় প্রেমের সঙ্গে আচরণ করে। এই প্রবন্ধে আমরা জানব, একজন স্বামী কীভাবে তার স্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখাতে পারেন? কিন্তু সবচেয়ে প্রথমে আসুন আমরা দেখি যে, একজন স্বামী কেমন আচরণ করার মাধ্যমে তার স্ত্রীর প্রতি অসম্মান দেখিয়ে ফেলতে পারেন।

এমন আচরণ করবেন না, যার ফলে আপনার স্ত্রী অসম্মানিত হবেন

৬. একজন স্বামী যখন তার স্ত্রীকে মারধর করেন, তখন যিহোবার কেমন লাগে? (কলসীয় ৩:১৯)

মারধর করা। যারা মারধর করে, যিহোবা তাদের ঘৃণা করেন। (গীত. ১১:৫) একজন স্বামীর তার স্ত্রীর প্রতি খারাপ আচরণ করুক, এটা যিহোবা একদমই পছন্দ করেন না। (মালাখি ২:১৬; পড়ুন, কলসীয় ৩:১৯.) আর যেমন এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদ ১ পিতর ৩:৭ পদ থেকে বোঝা যায়, একজন স্বামী যদি তার স্ত্রীর প্রতি খারাপ আচরণ করে, তা হলে যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে আর এমনকী যিহোবা হয়তো তার প্রার্থনা শোনা বন্ধ করে দিতে পারেন।

৭. ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২ পদ অনুযায়ী একজন স্বামীর তার স্ত্রীর সঙ্গে কীভাবে কথা বলা উচিত নয়? (“এটার মানে কী?” দেখুন।)

চিৎকার-চেঁচামেচি করা বা খারাপ কথা বলা। কিছু স্বামী রেগে গিয়ে তাদের স্ত্রীদের খারাপ কথা বলে এবং তার উপর চিৎকার-চেঁচামেচি করে। কিন্তু, যিহোবা “রাগ, ক্রোধ, চিৎকার-চেঁচামেচি এবং নিন্দামূলক কথা” c ঘৃণা করেন। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২.) যিহোবা সমস্ত কিছু শোনেন। একজন স্বামী তার ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেও তার স্ত্রীর সঙ্গে যেভাবে কথা বলেন, যিহোবা সেটাও লক্ষ করেন। একজন স্বামী যদি তার স্ত্রীর উপর চিৎকার-চেঁচামেচি করেন অথবা আঘাত দিয়ে কথা বলেন, তা হলে স্ত্রীর সঙ্গে সেই স্বামীর সম্পর্ক তো নষ্ট হবেই আর সেইসঙ্গে যিহোবার সঙ্গে তার বন্ধুত্বও ভেঙে যেতে পারে।—যাকোব ১:২৬.

৮. পর্নোগ্রাফিকে যিহোবা কোন দৃষ্টিতে দেখেন এবং কেন?

পর্নোগ্রাফি দেখা। যিহোবা পর্নোগ্রাফি খুবই ঘৃণা করেন। তাই একজন স্বামী যখন পর্নোগ্রাফি দেখেন, তখন যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়। শুধু তা-ই নয়, এভাবে তিনি তার স্ত্রীর প্রতিও অসম্মান দেখান। d যিহোবা চান যেন একজন স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন। বিশ্বস্ত স্বামীরা অন্য কোনো স্ত্রীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করবে না, এমনকী এমনটা করার কথা চিন্তাও করবে না। যিশু বলেছিলেন, যে-ব্যক্তি কোনো মহিলাকে এমনভাবে দেখে যেটার ফলে তার সেই মহিলার প্রতি কামনা জেগে ওঠে, তা হলে সে ইতিমধ্যেই “মনে মনে” তার সঙ্গে ব্যভিচার করেছে। eমথি ৫:২৮, ২৯.

৯. একজন স্বামী যখন নিজের স্ত্রীর সঙ্গে এমন যৌনসম্পর্ক করেন, যার ফলে স্ত্রী অসম্মানিত হন, তখন যিহোবার কেমন লাগে এবং কেন?

এমন যৌনসম্পর্ক যার ফলে স্ত্রী অসম্মানিত হবেন। কিছু স্বামী তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে এমন যৌনসম্পর্ক করার চাপ দেয়, যার ফলে স্ত্রীর বিবেক তাকে দংশন করে অথবা তিনি মনে করেন, তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে। এমন একজন স্বামী শুধুমাত্র নিজের কামনা পূরণ করতে চান আর তার স্ত্রীর জন্য একটুও চিন্তা করেন না। যিহোবা এইরকম আচরণ খুবই ঘৃণা করেন। যিহোবা চান যেন একজন স্বামী তার স্ত্রীকে ভালোবাসেন এবং তাকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন এবং তার অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখান। (ইফি. ৫:২৮, ২৯) একজন খ্রিস্টান স্বামী যদি নিজের স্ত্রীর উপর এইরকম যৌনসম্পর্ক করার চাপ দেন, তাকে মারধর করেন, তাকে খারাপ কথা বলেন অথবা পর্নোগ্রাফি দেখেন, তা হলে সেই স্বামীর কী করা উচিত? তিনি কীভাবে নিজের চিন্তাভাবনা এবং আচার-আচরণ পরিবর্তন করতে পারেন?

স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করা যেভাবে বন্ধ করা যায়

১০. স্বামীরা যিশুর কাছ থেকে কী শিখতে পারে?

১০ একজন খ্রিস্টান স্বামী যদি তার স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন অথবা তাকে কোনোভাবে অসম্মান করেন, তা হলে কীভাবে তিনি তার নিজের মনোভাব পরিবর্তন করতে পারেন? যিশুকে অনুকরণ করার মাধ্যমে। যদিও যিশু বিবাহিত ছিলেন না, কিন্তু তিনি যেভাবে তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন, সেখান থেকে স্বামীরা শিখতে পারে যে, তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে কীভাবে তাদের আচরণ করা উচিত। (ইফি. ৫:২৫) তাই, আসুন আমরা দেখি যে, যিশু কীভাবে তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

১১. যিশু তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতেন?

১১ যিশু সবসময় তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে প্রেম সহকারে আচরণ করতেন এবং তাদের সম্মান করতেন। যিশু কখনো তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে কঠোরভাবে আচরণ করেননি। তিনি তাদের প্রভু এবং গুরু ছিলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কখনো তাদের উপর নিজের অধিকার ফলাননি। এর পরিবর্তে, তিনি নম্র হয়ে তাদের সেবা করেছিলেন। (যোহন ১৩:১২-১৭) তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “আমার কাছ থেকে শেখো, কারণ আমি মৃদুশীল ও নম্রমনা; এতে তোমরা সতেজতা লাভ করবে।” (মথি ১১:২৮-৩০) লক্ষ করুন, যিশু কোমল স্বভাবের ছিলেন আর কোমল স্বভাব কোনো দুর্বলতার চিহ্ন নয় বরং এটা একটা শক্তির প্রতীক। যে-ব্যক্তি কোমল স্বভাবের হন, তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। রাগিয়ে তোলা হলেও তিনি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন না এবং শান্ত থাকেন।

১২. যিশু লোকদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতেন?

১২ যিশু লোকদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলেছিলেন, তা থেকে তারা সান্ত্বনা এবং সতেজতা লাভ করত। তিনি কখনো তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে খারাপভাবে কথা বলেননি। (লূক ৮:৪৭, ৪৮) এমনকী তাঁর বিরোধীরা যখন তাকে অপমান করেছিল এবং তাঁকে রাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিল, “তখন তিনিও তাদের অপমান করেননি।” (১ পিতর ২:২১-২৩) আর অনেকবার যিশু রেগে গিয়ে উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে চুপ থাকাই সঠিক বলে মনে করেছিলেন। (মথি ২৭:১২-১৪) সত্যিই, যিশু স্বামীদের জন্য কতই-না এক উত্তম উদাহরণ রেখেছেন!

১৩. যেমনটা মথি ১৯:৪-৬ পদে বলা হয়েছে, কীভাবে একজন স্বামী তার “স্ত্রীর প্রতি আসক্ত” থাকতে পারেন? (ছবিও দেখুন।)

১৩ যিশু স্বামীদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেন তারা তাদের স্ত্রীদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে। তিনি তাঁর পিতার বলা কথাগুলো আবারও বলেছিলেন, যিনি বলেছিলেন: একজন স্বামীকে নিজের “স্ত্রীর প্রতি আসক্ত” থাকতে হবে। (পড়ুন, মথি ১৯:৪-৬.) এখানে “আসক্ত” হওয়ার জন্য যে-গ্রিক শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে, সেটার অর্থ হল, “সেঁটে” থাকা। এর মানে একজন স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্ক এতটাই মজবুত হওয়া উচিত যেন সেটা আঠা দিয়ে সেঁটে থাকার মতো। তাই, দু-জনের মধ্যে কেউ যদি এমন কিছু করে যেটার ফলে অন্যজন আঘাত পায়, তা হলে তাদের দু-জনেরই কষ্ট হবে। একজন স্বামীর যদি তার স্ত্রীর সঙ্গে এইরকম মজবুত সম্পর্ক থাকে, তা হলে তিনি যেকোনো ধরনের পর্নোগ্রাফি থেকে দূরে থাকবেন। তিনি সঙ্গেসঙ্গে “মূল্যহীন বিষয়গুলো থেকে” তার ‘চোখ সরিয়ে নেবেন।’ (গীত. ১১৯:৩৭) এভাবে তিনি যেন তার চোখের সঙ্গে চুক্তি করে নিয়েছেন যে, তিনি তার স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো মহিলার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকাবেন না।—ইয়োব ৩১:১.

যে-স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত, সে কখনোই পর্নোগ্রাফি দেখবে না (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন) g


১৪. একজন স্বামীকে যিহোবা এবং নিজের স্ত্রীর সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক ঠিক করার জন্য কোন পদক্ষেপগুলো নিতে হবে?

১৪ একজন স্বামী যদি নিজের স্ত্রীকে মারধর করেন অথবা তাকে খারাপ কথা বলেন, তা হলে তাকে যিহোবা এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক ঠিক করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই পদক্ষেপগুলো কী? প্রথম, তাকে বুঝতে হবে, তিনি যা করছেন, সেটা ভুল। আর তাকে মনে রাখতে হবে, যিহোবার দৃষ্টিতে কোনো কিছুই গোপন নয়। (গীত. ৪৪:২১; উপ. ১২:১৪; ইব্রীয় ৪:১৩) দ্বিতীয়, তাকে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে এবং নিজের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। (হিতো. ২৮:১৩) তৃতীয়, তাকে নিজের ভুলের জন্য আপশোস করতে হবে এবং তার স্ত্রী এবং যিহোবার কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। (প্রেরিত ৩:১৯) তাকে যিহোবার কাছে আন্তরিকভাবে এই বিনতিও করতে হবে, যিহোবা তার মধ্যে যেন নিজেকে পরিবর্তন করার ইচ্ছা দেন এবং তিনি যেন নিজের খারাপ মনোভাব, নিজের কথাবার্তা এবং নিজের আচার-আচরণে পরিবর্তন করতে পারেন। (গীত. ৫১:১০-১২; ২ করি. ১০:৫; ফিলি. ২:১৩) চতুর্থ, তাকে নিজের প্রার্থনা অনুযায়ী কাজও করতে হবে অর্থাৎ তাকে সমস্ত ধরনের হিংসা এবং গালি-গালাজ ঘৃণা করতে হবে। (গীত. ৯৭:১০) পঞ্চম, তাকে দ্রুত মণ্ডলীর প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যারা প্রেমের সঙ্গে তাকে সাহায্য করবেন। (যাকোব ৫:১৪-১৬) ষষ্ঠ, তাকে চিন্তা করতে হবে, তিনি আর এমন কী করতে পারেন, যাতে পরবর্তী সময়ে তিনি কোনো ভুল পদক্ষেপ না নেন। একজন স্বামী যদি পর্নোগ্রাফি দেখেন, তা হলে তাকেও এই ছ-টা পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি নিজের আচার-আচরণ পরিবর্তন করার জন্য যে-পরিশ্রমই করবেন, যিহোবা সেটার উপর আশীর্বাদ দেবেন। (গীত. ৩৭:৫) কিন্তু, শুধুমাত্র এমন আচরণ বন্ধ করাই যথেষ্ট নয়, যার ফলে তার স্ত্রী অসম্মানিত হবেন। একজন স্বামীর তার স্ত্রীকে সম্মানও করতে হবে। তিনি কীভাবে তা করতে পারেন?

কীভাবে আপনি আপনার স্ত্রীকে সম্মান করতে পারেন?

১৫. একজন স্বামী কীভাবে তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন?

১৫ ভালোবাসা প্রকাশ করুন। কিছু বিবাহিত ভাই প্রতিদিনই এমন কিছু-না-কিছু করেন, যেটার মাধ্যমে তার স্ত্রী অনুভব করেন যে, তার স্বামী তাকে অনেক ভালোবাসেন। (১ যোহন ৩:১৮) একজন স্বামী ছোটো ছোটো উপায়ে নিজের স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন। যেমন, তিনি প্রেমের সঙ্গে তার স্ত্রীর হাত ধরতে পারেন অথবা তাকে জড়িয়ে ধরতে পারেন। তিনি চাইলে তাকে ম্যাসেজ পাঠাতে পারেন, যেমন তিনি লিখতে পারেন, “তোমার কথা খুব মনে পড়ছে” অথবা জিজ্ঞেস করতে পারেন, “তুমি ঠিক আছ তো?” কখনো কখনো তিনি কার্ডে তার স্ত্রীকে লিখতে পারেন যে, তিনি তাকে কতটা ভালোবাসেন। একজন স্বামী এমনটা করার মাধ্যমে তার স্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখান আর এভাবে তাদের বিয়ের বন্ধন আরও মজবুত হবে।

১৬. কেন একজন স্বামীর নিজের স্ত্রীকে প্রশংসা করা উচিত?

১৬ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। একজন স্বামী যদি নিজের স্ত্রীকে সম্মান করেন, তা হলে তিনি তাকে বলবেন যে, তিনি তার প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ এবং তিনি তার স্ত্রীকে উৎসাহিতও করবেন। যেমন, তিনি এই বিষয়টার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন যে, তার স্ত্রী তাকে সহযোগিতা করার জন্য কত কিছু করেন। (কল. ৩:১৫) একজন স্বামী যখন মন থেকে নিজের স্ত্রীকে প্রশংসা করবেন, তখন স্ত্রী অনেক খুশি হবেন আর তিনি অনুভব করবেন যে, তার স্বামী তার জন্য চিন্তা করেন, তাকে ভালোবাসেন এবং তাকে সম্মান করেন।—হিতো. ৩১:২৮.

১৭. একজন স্বামী কীভাবে দেখাতে পারেন যে, তিনি নিজের স্ত্রীকে সম্মান করেন?

১৭ প্রেম ও সম্মানের সঙ্গে আচরণ করুন। যে-স্বামী নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসেন, তিনি তাকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন। তিনি এটা স্বীকার করেন যে, তার স্ত্রী যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এক সুন্দর উপহার। (হিতো. ১৮:২২; ৩১:১০) তাই তিনি সবসময় তার সঙ্গে প্রেম ও সম্মানের সঙ্গে আচরণ করেন, এমনকী যৌন সম্পর্ক করার সময়েও। তিনি নিজের স্ত্রীকে এমন কিছু করার জন্য জোর করবেন না, যেটা তার খারাপ লাগবে অথবা তার বিবেক দংশন করবে। f তিনি এটাও খেয়াল রাখবেন, যেন তার নিজের বিবেকও শুদ্ধ থাকে এবং যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্কে কোনো ফাটল না ধরে।—প্রেরিত ২৪:১৬.

১৮. স্বামীদের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে? (এ ছাড়া, “ স্ত্রীকে সম্মান করার চারটে পরামর্শ” শিরোনামের বাক্স দেখুন।)

১৮ স্বামীরা, নিশ্চিত থাকুন, আপনি আপনার স্ত্রীকে সম্মান করার জন্য যা-কিছুই করেন, যিহোবা সেটা লক্ষ করেন এবং এর প্রতি তিনি উপলব্ধি দেখান। তাই দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন যেন আপনি এমন কিছু না করেন, যার ফলে আপনার স্ত্রী অসম্মানিত হবেন। এর পরিবর্তে, আপনি তার সঙ্গে প্রেম ও সম্মানের সঙ্গে আচরণ করুন এবং তার প্রতি প্রেম প্রকাশ করুন। আপনি যখন এমনটা করবেন, তখন আপনার স্ত্রী বুঝতে পারবেন যে, আপনি তাকে ভালোবাসেন এবং তাকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন। তাই আপনার স্ত্রীকে সম্মান করুন আর এমনটা করার মাধ্যমে আপনি নিখিলবিশ্বের মালিক যিহোবার সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব বজায় রাখতে পারবেন।—গীত. ২৫:১৪.

গান ১৩১ “ঈশ্বর যা যুক্ত করেছেন”

a স্বামীরা, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “আপনি কি মহিলাদের সঙ্গে যিহোবার মতো করে আচরণ করেন?” শিরোনামের প্রবন্ধটা অবশ্যই পড়ুন।

b যদি আপনার স্বামী অথবা স্ত্রী আপনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, তা হলে “পরিবারের কোনো সদস্য আপনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে আপনি কী করবেন?” শিরোনামের ইংরেজি প্রবন্ধটা পড়া আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। এই প্রবন্ধটা আপনি jw.org ওয়েবসাইটে এবং JW লাইব্রেরির “অন্যান্য বিষয়”-এর অধীনে পাবেন।

c এটার মানে কী? এখানে “গালিগালাজ” এর মানে শুধুমাত্র কাউকে ছোটো করার জন্য তাকে নোংরা ভাষা ব্যবহার করে ডাকাই নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে কাউকে অপমান করা, সবসময় তার নামে খারাপ কথা বলা অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে আঘাত দেওয়া কিংবা তাকে বদনাম করাও অন্তর্ভুক্ত।

d jw.org-এ এবং JW লাইব্রেরি থেকে “পর্নোগ্রাফি আপনার বিয়েকে ভেঙে দিতে পারে” শিরোনামের প্রবন্ধটা পড়ুন।

e একজন স্ত্রীর স্বামী যদি পর্নোগ্রাফি দেখেন, তা হলে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “যখন আমার বিবাহসাথি পর্নোগ্রাফি দেখে, তখন আমি কী করতে পারি?” শিরোনামের প্রবন্ধটা অনেক সাহায্য করতে পারে।

f বাইবেলে স্পষ্টভাবে বলা নেই যে, একজন স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে কোন ধরনের যৌন সম্পর্ক সঠিক এবং কোন ধরনের ভুল। তাই, স্বামী-স্ত্রীদের ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা এই ক্ষেত্রে কী করবে। কিন্তু, তাদের এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যে, তারা যা-কিছুই করুক না কেন, তারা যিহোবাকে সম্মান করবে, একে অপরকে খুশি করবে এবং তাদের এক শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখবে। সাধারণত স্বামী ও স্ত্রী এই ব্যক্তিগত বিষয়টা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করবে না।

g ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাইয়ের সহকর্মীরা তাকে একটি ম্যাগাজিন থেকে নোংরা ছবি দেখানোর চেষ্টা করছে।