সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৫

“আমিই আপন মেষগণের অন্বেষণ করিব”

“আমিই আপন মেষগণের অন্বেষণ করিব”

‘আমিই আপন মেষগণের অন্বেষণ করিব। তাহাদিগকে খুঁজিয়া বাহির করিব। আমি ভগ্নাঙ্গের ক্ষত বাঁধিব, ও পীড়িতকে সবল করিব।’—যিহি. ৩৪:১১, ১৬.

গান সংখ্যা ৩ “ঈশ্বর প্রেম”

সারাংশ *

১. কীভাবে যিহোবা একজন স্তন্যদাত্রী মায়ের মতো?

“স্ত্রীলোক কি আপন স্তন্যপায়ী শিশুকে ভুলিয়া যাইতে পারে?” যিহোবা ভাববাদী যিশাইয়ের দিনে এই প্রশ্নটাই জিজ্ঞেস করেছিলেন। ঈশ্বর তাঁর লোকেদের বলেছিলেন, “বরং তাহারা ভুলিয়া যাইতে পারে, তথাপি আমি তোমাকে ভুলিয়া যাইব না।” (যিশা. ৪৯:১৫) তিনি সাধারণত নিজেকে একজন মায়ের সঙ্গে তুলনা করেন না কিন্তু এখানে তিনি তা করেছেন। যিহোবা একজন মা ও তার সন্তানের মধ্যে থাকা বন্ধনকে ব্যবহার করে এটা প্রকাশ করেছেন যে, তাঁর দাসদের সঙ্গে তাঁর কতটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বেশিরভাগ মা বোন জেনির মতো অনুভব করেন, যিনি বলেছিলেন, “আপনি যখন আপনার সন্তানকে স্তন্যপান করান, তখন তার সঙ্গে আপনার এক বিশেষ বন্ধন গড়ে ওঠে, যেটা সারাজীবন টিকে থাকে।”

২. যিহোবার সন্তানদের মধ্যে কোনো একজন যখন তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে যান, তখন যিহোবা কেমন অনুভব করেন?

যিহোবার সন্তানদের মধ্যে এমনকী একজনও যখন খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করা এবং প্রচার কাজে অংশ নেওয়া বন্ধ করে দেন, তখন তিনি তা লক্ষ করেন। তা হলে চিন্তা করুন, প্রতি বছর তিনি যখন তাঁর হাজার হাজার দাসকে নিষ্ক্রিয় * হয়ে যেতে দেখেন, তখন তিনি কতটা দুঃখ পান!

৩. যিহোবা কী চান?

নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে এমন প্রিয় ভাই-বোনদের মধ্যে অনেকেই মণ্ডলীতে ফিরে আসে এবং তাদের সাদরে গ্রহণ করা হয়। যিহোবা চান যেন তারা ফিরে আসে আর আমরাও তা-ই চাই। (১ পিতর ২:২৫) কীভাবে আমরা তাদের ফিরে আসার জন্য সাহায্য করতে পারি? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে এটা জানা ভালো হবে কেন কোনো ব্যক্তি সভায় যোগ দেওয়া এবং পরিচর্যায় অংশ নেওয়া বন্ধ করে দেন।

কেন কোনো কোনো ব্যক্তি যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেয়?

৪. কীভাবে জাগতিক কাজ কোনো কোনো ব্যক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে?

কোনো কোনো ব্যক্তির জন্য জাগতিক কাজ করাই হল তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বসবাসরত হেমন্ত * নামে একজন ভাই স্বীকার করেন, “আমি জাগতিক কাজে অনেক বেশি সময় ও শক্তি ব্যয় করতাম। আমি বোকার মতো ভেবেছিলাম, আমার কাছে যদি অনেক বেশি অর্থ থাকে, তা হলে আমি আরও ভালোভাবে যিহোবার সেবা করতে পারব। তাই, আমি কাজের পিছনে অনেক বেশি সময় ব্যয় করতাম। আমি সভায় যোগ দেওয়া বাদ দিতে শুরু করি আর এই সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পরিশেষে আমি মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিই। এই জগৎকে দেখে মনে হয় যেন শয়তান এটাকে এমনভাবে সাজিয়েছে, যাতে লোকেরা একটু একটু করে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যায়।”

৫. কীভাবে একজন বোন একের-পর-এক সমস্যার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন?

কোনো কোনো ভাই-বোন বিভিন্ন সমস্যার দ্বারা জর্জরিত হয়ে রয়েছে। অ্যানি নামে একজন মা ব্রিটেনে বাস করেন এবং তার পাঁচ জন সন্তান রয়েছে। অ্যানি ব্যাখ্যা করেন, “আমার এক সন্তান শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। পরবর্তী সময় আমার এক মেয়েকে সমাজচ্যুত করা হয় এবং আমার এক ছেলের মানসিক রোগ ধরা পড়ে। আমি এতটাই হতাশ হয়ে যাই যে, সভায় যোগ দেওয়া এবং পরিচর্যায় অংশ নেওয়া বন্ধ করে দিই। শেষে আমি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাই।” বোন অ্যানি এবং তার পরিবারের সদস্যদের মতো অনেক ভাই-বোনকে প্রতিদিন বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এই ভাই-বোনদের কথা চিন্তা করে আমরা দুঃখিত হই!

৬. কলসীয় ৩:১৩ পদের পরামর্শ কাজে না লাগানোর ফলে কীভাবে একজন ব্যক্তি যিহোবার লোকেদের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারেন?

কলসীয় ৩:১৩ পদ পড়ুন। যিহোবার দাসদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো সহবিশ্বাসীদের কাছ থেকে দুঃখ পেয়েছে। প্রেরিত পৌল এটা স্বীকার করেছিলেন যে, কখনো কখনো আমাদের কাছে কোনো ভাই অথবা বোনের বিরুদ্ধে “দোষ দিবার” উপযুক্ত “কারণ” থাকবে। আমরা হয়তো অবিচারের শিকার হয়েছি। আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে আমরা হয়তো ভিতরে ভিতরে খুবই রেগে যেতে পারি। আর এই তিক্ততার অনুভূতির কারণে একজন ব্যক্তি হয়তো যিহোবার লোকেদের কাছ থেকে পরিশেষে দূরে সরে যেতে পারেন। দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসরত পিটার নামে একজন ভাইয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিবেচনা করুন। তার উপর মন্দ কাজ করার মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয় আর এর ফলে, তাকে মণ্ডলীতে বিশেষ সুযোগ হারাতে হয়। তিনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? ভাই পিটার বলেন,“আমি খুবই রেগে যাই এবং মণ্ডলী থেকে দূরে সরে যাই।”

৭. বিবেকের দংশন একজন ব্যক্তির উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে?

অতীতে ঈশ্বরের কোনো আইন লঙ্ঘন করার ফলে একজন ব্যক্তি হয়তো বিবেকের দংশন ভোগ করতে পারেন এবং নিজেকে ঈশ্বরের প্রেমের অযোগ্য বলে মনে করতে পারেন। তিনি এমনকী অনুতপ্ত হওয়ার এবং করুণা লাভ করার পরও মনে করতে পারেন, ঈশ্বরের লোক হওয়ার যোগ্যতা তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। ফ্রান্সিসকো নামে একজন ভাই এমনটাই অনুভব করেছিলেন। তিনি বলেন, “যৌন অনৈতিকতায় লিপ্ত হওয়ার কারণে আমাকে তিরস্কার করা হয়েছিল। যদিও আমি শুরুতে নিয়মিতভাবে সভায় যোগ দিতাম, কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমি হতাশ হয়ে পড়ি এবং ভাবি যে, আমার আর যিহোবার লোকেদের মাঝে থাকার যোগ্যতা নেই। আমি বিবেকের দংশন বোধ করি এবং এটা ধরে নিই যে, যিহোবা আমাকে ক্ষমা করেননি। এক সময় আমি মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিই।” আপনি সেই ভাই-বোনদের সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেন, যারা এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়? আপনি কি তাদের জন্য সহমর্মিতা বোধ করেন? আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যিহোবা তাদের সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেন?

যিহোবা তাঁর মেষদের ভালোবাসেন

একজন ইস্রায়েলীয় মেষপালক একটি হারানো মেষের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতেন (৮-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৮. যিহোবা কী সেই ব্যক্তিদের ভুলে যান, যারা এক সময় তাঁর সেবা করত? ব্যাখ্যা করুন।

যিহোবা সেই লোকেদের ভুলে যান না, যারা এক সময় তাঁর সেবা করত কিন্তু এখন তাঁর লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছে; আর তিনি সেই কাজগুলো ভুলে যান না, যেগুলো তারা তাঁর সেবায় করেছে। (ইব্রীয় ৬:১০) যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকেদের দেখাশোনা করেন বা যত্ন নেন, তা দেখানোর জন্য ভাববাদী যিশাইয় একটা চমৎকার দৃষ্টান্ত লিপিবদ্ধ করেছিলেন। যিশাইয় যিহোবার বিষয়ে লিখেছিলেন, “তিনি মেষপালকের ন্যায় আপন পাল চরাইবেন, তিনি শাবকদিগকে বাহুতে সংগ্রহ করিবেন, এবং কোলে করিয়া বহন করিবেন।” (যিশা. ৪০:১১) একজন মেষ যখন পাল থেকে দূরে সরে যায়, তখন মহান মেষপালক কেমন অনুভব করেন? যিশু সেই সময় যিহোবার অনুভূতি সম্বন্ধে প্রকাশ করেছিলেন, যখন তিনি তাঁর শিষ্যদের জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তোমাদের কেমন বোধ হয়? কোন ব্যক্তির যদি এক শত মেষ থাকে, আর তাহাদের মধ্যে একটী হারাইয়া যায়, তবে সে কি অন্য নিরানব্বইটা ছাড়িয়া পর্ব্বতে গিয়া ঐ হারান মেষটীর অন্বেষণ করে না? আর যদি সে কোন ক্রমে সেটী পায়, তবে আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে নিরানব্বইটা হারাইয়া যায় নাই, তাহাদের অপেক্ষা সেইটীর নিমিত্ত সে অধিক আনন্দ করে।”—মথি ১৮:১২, ১৩.

৯. বাইবেলের সময়ে একজন মেষপালক কীভাবে তার মেষপালের যত্ন নিতেন? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

কেন আমরা যিহোবাকে একজন মেষপালকের সঙ্গে তুলনা করতে পারি? কারণ বাইবেলের সময়ে একজন মেষপালক খুব ভালোভাবে তার মেষদের যত্ন নিতেন। উদাহরণ স্বরূপ, দায়ূদ তার পালকে রক্ষা করার জন্য একটি সিংহ ও একটি ভাল্লুকের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। (১ শমূ. ১৭:৩৪, ৩৫) একজন উত্তম মেষপালক যেহেতু তার পালের উপর নজর রাখেন, তাই তার পাল থেকে একটি মেষও যদি হারিয়ে যায়, তা হলে তিনি তা বুঝতে পারেন। (যোহন ১০:৩, ১৪) এই ধরনের একজন মেষপালক তার নিরানব্বইটা মেষকে একটা সুরক্ষিত জায়গায় রেখে অথবা সহমেষপালকদের যত্নাধীনে রেখে সেই হারানো মেষকে খোঁজার জন্য বের হন। যিশু এই দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে আমাদের সত্য সম্বন্ধে শিখিয়েছিলেন: “এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে এক জনও যে বিনষ্ট হয়, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার এমন ইচ্ছা নয়।”—মথি ১৮:১৪.

প্রাচীন ইস্রায়েলের একজন মেষপালক হারিয়ে যাওয়া একটি মেষের যত্ন নিচ্ছেন (অনুচ্ছেদ ৯ দেখুন)

যিহোবা তাঁর মেষদের খোঁজেন

১০. যিহিষ্কেল ৩৪:১১-১৬ পদ অনুযায়ী যিহোবা তাঁর হারানো মেষদের প্রতি কী করার প্রতিজ্ঞা করেছেন?

১০ যিহোবা আমাদের প্রত্যেককে ভালোবাসেন আর এর অন্তর্ভুক্ত হল সেই ‘ক্ষুদ্রগণ,’ যারা তাঁর পাল থেকে দূরে সরে গিয়েছে। ভাববাদী যিহিষ্কেলের মাধ্যমে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি তাঁর হারানো মেষদের খুঁজবেন এবং তাঁর সঙ্গে পুনরায় এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তুলতে তাদের সাহায্য করবেন। আর তিনি বলেন যে, তিনি তাদের উদ্ধার করার জন্য কী করবেন। তিনি যা করবেন, সেটা অনেকটা ইস্রায়েলীয় মেষপালকরা কোনো মেষ হারিয়ে গেলে যা করে, সেটার মতো। (পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩৪:১১-১৬.) প্রথমে, সেই মেষপালক মেষকে খুঁজবেন আর তা করার জন্য অনেক সময় ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন হতে পারে। আর সেই হারানো মেষকে খুঁজে পাওয়ার পর মেষপালক সেই মেষকে পালে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। এ ছাড়া, সেই মেষ যদি আহত অথবা ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকে, তা হলে মেষপালক প্রেমের সঙ্গে সেই দুর্বল মেষকে সাহায্য করবেন, তার ক্ষত বেঁধে দেবেন, তাকে বহন করবেন এবং খেতে দেবেন। ‘ঈশ্বরের পালের’ পালক হিসেবে প্রাচীনদেরও এই একই পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে তারা এমন কোনো ব্যক্তিকে সাহায্য করতে পারেন, যিনি মণ্ডলী থেকে দূরে সরে গিয়েছেন। (১ পিতর ৫:২, ৩) প্রাচীনরা তাদের খোঁজেন, তাদের পালে ফিরে আসতে সাহায্য করেন এবং যিহোবার বন্ধু হয়ে ওঠার জন্য তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখান। *

১১. একজন উত্তম মেষপালক কী বুঝতেন?

১১ একজন উত্তম মেষপালক এটা বুঝতেন যে, মেষেরা হারিয়ে যেতে পারে। আর একটি মেষ পাল ছেড়ে চলে গেলে মেষপালক সেটির প্রতি রূঢ় আচরণ করতেন না। যিহোবার কোনো কোনো দাস যখন কিছু সময়ের জন্য তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, তখন তিনি কীভাবে তাদের সাহায্য করেছিলেন, সেই উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করুন।

১২. যিহোবা যোনার সঙ্গে কীভাবে আচরণ করেছিলেন?

১২ ভাববাদী যোনা তার কার্যভার ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তারপরও, যিহোবা তাকে প্রত্যাখ্যান করেননি। একজন উত্তম মেষপালকের মতো যিহোবা তাকে উদ্ধার করেছিলেন এবং তার কার্যভার সম্পাদন করার জন্য তাকে প্রয়োজনীয় শক্তি লাভ করতে সাহায্য করেছিলেন। (যোনা ২:৭; ৩:১, ২) পরবর্তী সময়ে, ঈশ্বর যোনাকে মানুষের জীবনের মূল্য সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করার জন্য একটা এরণ্ড বা লাউ গাছ ব্যবহার করেছিলেন। (যোনা ৪:১০, ১১) আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়টা কী? প্রাচীনরা যেন দ্রুত নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের সম্বন্ধে হাল ছেড়ে না দেন। এর পরিবর্তে, প্রাচীনরা এটা বোঝার চেষ্টা করেন যে, কেন একটি মেষ পাল থেকে দূরে সরে গিয়েছে। আর সেই মেষ যখন যিহোবার কাছে ফিরে আসে, তখন প্রাচীনরা ক্রমাগত তার প্রতি প্রেমময় আগ্রহ দেখিয়ে থাকেন।

১৩. গীতসংহিতা ৭৩ গীতের লেখকের প্রতি যিহোবা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৩ গীতসংহিতা ৭৩ গীতের লেখক দুষ্ট ব্যক্তিদের সবসময় সাফল্য লাভ করতে দেখে নিরুৎসাহিত হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এই বিষয়ে উদ্‌বিগ্ন ছিলেন যে, ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার ফলে আদৌ কোনো উপকার আসে কি না। (গীত. ৭৩:১২, ১৩, ১৬) যিহোবা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি সেই ব্যক্তির উপর দোষারোপ করেননি। সত্যি বলতে কী, ঈশ্বর গীতরচকের সেই কথাগুলো বাইবেলে নথিভুক্ত করিয়ে রেখেছেন। পরিশেষে, গীতরচক এটা উপলব্ধি করেছিলেন যে, যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি মূল্যবান এবং জীবনকে উদ্দেশ্যপূর্ণ করে তোলে। (গীত. ৭৩:২৩, ২৪, ২৬, ২৮) আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়টা কী? প্রাচীনরা যেন দ্রুত সেই ব্যক্তিদের বিচার না করেন, যারা যিহোবার সেবা করার উপকারিতা সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে শুরু করে। দোষারোপ করার পরিবর্তে প্রাচীনরা যেন অবশ্যই এটা বোঝার চেষ্টা করেন যে, কেন সেই ব্যক্তিরা এই ভাবে কথা বলছে এবং কাজ করছে। তারপর, প্রাচীনরা বাইবেল ব্যবহার করে তাদের উৎসাহিত করতে পারবেন।

১৪. কেন এলিয়ের সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছিল এবং কীভাবে যিহোবা তা প্রদান করেছিলেন?

১৪ ভাববাদী এলিয়ের কথা বিবেচনা করুন, যিনি রানি ঈষেবলের কাছ থেকে পালাচ্ছিলেন। (১ রাজা. ১৯:১-৩) তিনি ভেবেছিলেন, আর কেউই যিহোবার ভাববাদী হিসেবে সেবা করছেন না এবং মনে করেছিলেন, তার সেবার কোনো মূল্য নেই। এলিয় এতটাই নিরুৎসাহিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি মরে যেতে চেয়েছিলেন। (১ রাজা. ১৯:৪, ১০) এলিয়ের উপর দোষারোপ করার পরিবর্তে যিহোবা তাকে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, এলিয় একা নন, তিনি ঈশ্বরের ক্ষমতার উপর আস্থা রাখতে পারেন এবং এখনও তার অনেক কাজ করার বাকি রয়েছে। যিহোবা সদয়ভাবে এলিয়ের উদ্‌বিগ্নতার বিষয়গুলো শুনেছিলেন এবং তাকে নতুন নতুন কার্যভার দিয়েছিলেন। (১ রাজা. ১৯:১১-১৬, ১৮) আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়টা কী? আমাদের সবারই বিশেষভাবে প্রাচীনদের যিহোবার মেষদের সঙ্গে সদয়ভাবে আচরণ করা উচিত। একজন ব্যক্তি যখন প্রাচীনদের কাছে হৃদয় উজাড় করে নিজের তিক্তার অনুভূতি সম্বন্ধে অথবা তিনি যে নিজেকে যিহোবার করুণা লাভের অযোগ্য বলে মনে করেন, সেই অনুভূতি সম্বন্ধে প্রকাশ করেন, তখন প্রাচীনরা মন দিয়ে তা শুনবেন। তারপর, প্রাচীনরা সেই হারানো মেষকে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করবেন যে, যিহোবা তাকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন।

ঈশ্বরের হারানো মেষদের বিষয়ে আমাদের কেমন অনুভব করা উচিত?

১৫. যোহন ৬:৩৯ পদ অনুযায়ী যিশু কীভাবে তাঁর পিতার মেষদের দেখেছিলেন?

১৫ যিহোবার হারানো মেষদের সম্বন্ধে আমরা কেমন অনুভব করি বলে তিনি চান? যিশু আমাদের জন্য আদর্শ স্থাপন করেছেন। যিশু জানতেন, যিহোবার দৃষ্টিতে তাঁর সমস্ত মেষই মূল্যবান আর তাই যিশু ‘ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষকে’ যিহোবার কাছে ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য করেছিলেন। (মথি ১৫:২৪; লূক ১৯:৯, ১০) এ ছাড়া, যিহোবার কোনো মেষ যাতে হারিয়ে না যায়, সেইজন্য একজন উত্তম মেষপালক হিসেবে যিশু তাঁর যথাসাধ্য করেছিলেন।—পড়ুন, যোহন ৬:৩৯.

১৬-১৭. যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে, এমন ব্যক্তিদের সাহায্য করার বিষয়ে প্রাচীনদের কেমন অনুভব করা উচিত? (“ একজন হারানো মেষ হয়তো কেমন অনুভব করেন?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)

১৬ প্রেরিত পৌল ইফিষের মণ্ডলীর প্রাচীনদের যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করার বিষয়ে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। “তোমাদিগকে . . . এই প্রকারে পরিশ্রম করিয়া দুর্ব্বলদিগের সাহায্য করিতে হইবে, এবং প্রভু যীশুর বাক্য স্মরণ করা উচিত, কেননা তিনি আপনি বলিয়াছেন, গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য” বা সুখী “হইবার বিষয়।” (প্রেরিত ২০:১৭, ৩৫) স্পষ্টই, বর্তমানে প্রাচীনদের এই ক্ষেত্রে বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। মাইকেল নামে স্পেনের একজন প্রাচীন ব্যাখ্যা করেন, “আমি যখন এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করি যে, যিহোবা তাঁর হারানো মেষদের কতটা যত্ন নেন, তখন আমি সেই মেষদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য করতে অনুপ্রাণিত হই। আমি জানি, যিহোবা আমার কাছ থেকে এটাই আশা করেন।”

১৭ এই প্রবন্ধে উল্লেখিত যে-ব্যক্তিরা যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, তাদের তাঁর কাছে ফিরে আসার জন্য সাহায্য করা হয়েছে। বর্তমানে, এইরকম অনেক ব্যক্তি রয়েছে, যারা যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে এবং তাঁর কাছে ফিরে আসতে চায়। পরবর্তী প্রবন্ধে, আমরা আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করব যে, তাদের যিহোবার কাছে ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য আমরা কী করতে পারি।

গান সংখ্যা ৫৫ অবশেষে—অনন্ত এই জীবন!

^ অনু. 5 কেন কোনো কোনো ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করার পরও মণ্ডলী থেকে দূরে সরে গিয়েছে? ঈশ্বর তাদের সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেন? এই প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, বাইবেলের সময়ে যে-ব্যক্তিরা কিছু সময়ের জন্য যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, তাদের যেভাবে তিনি সাহায্য করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি, তা নিয়েও আলোচনা করা হবে।

^ অনু. 2 এই অভিব্যক্তির অর্থ: একজন নিষ্ক্রিয় প্রকাশক হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ছয় মাস অথবা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার কাজে অংশ নেননি এবং সেটার রিপোর্ট দেননি। কিন্তু, নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিরা এখনও আমাদের ভাই-বোন আর আমরা তাদের ভালোবাসি।

^ অনু. 4 কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ অনু. 10 পরবর্তী প্রবন্ধে নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলো প্রাচীনরা অনুসরণ করতে পারেন।

^ অনু. 60 ছবি সম্বন্ধে: একটি হারানো মেষের বিষয়ে চিন্তিত হওয়ায় একজন ইস্রায়েলীয় মেষপালক সেটিকে খুঁজবেন এবং পালে ফিরে আসতে সাহায্য করবেন। বর্তমানে, আধ্যাত্মিক মেষপালকরাও একই বিষয় করে থাকেন।

^ অনু. 64 ছবি সম্বন্ধে: একজন নিষ্ক্রিয় বোন বাস থেকে লক্ষ করছেন যে, দুই জন সাক্ষি আনন্দের সঙ্গে জনসাধারণ্যে সাক্ষ্যদান করছেন।