সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বর্তমানে তূরীধ্বনির প্রতি সাড়া দেওয়া

বর্তমানে তূরীধ্বনির প্রতি সাড়া দেওয়া

আমরা সবাই বিশ্বাস করি, এই “শেষ কালে” যিহোবা তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো প্রদান করছেন। (২ তীম. ৩:১) কিন্তু, আমাদের সবাইকে যিহোবার বাধ্য হতে হবে। আমরা আমাদের পরিস্থিতিকে প্রান্তরে থাকা ইস্রায়েলীয়দের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করতে পারি। তাদের তূরীধ্বনির প্রতি সাড়া দিতে হয়েছিল।

যিহোবা “মণ্ডলীকে আহ্বান করিবার জন্য ও শিবির সকলের যাত্রার জন্য” মোশিকে দিয়ে পিটান রুপোর দুটো তূরী বানিয়েছিলেন। (গণনা. ১০:২) লোকেদের কী করতে হবে, তা বোঝানোর জন্য যাজকদের আলাদা আলাদা উপায়ে তূরী বাজাতে হতো। (গণনা. ১০:৩-৮) বর্তমানে, ঈশ্বরের লোকেরা একাধিক উপায়ে নির্দেশনা লাভ করে থাকে আর সেগুলোর মধ্যে তিনটে উপায় নিয়ে বিবেচনা করুন, যেগুলো আমাদের প্রাচীনকালের তূরীধ্বনি সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দেয়। এই তিনটে উপায়ের মধ্যে প্রথমটা হল যখন আমাদের বড়ো বড়ো সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়, দ্বিতীয়টা হল যখন প্রাচীনরা প্রশিক্ষণ লাভ করে এবং তৃতীয়টা হল যখন সমস্ত মণ্ডলীর উদ্দেশে দেওয়া নির্দেশনায় রদবদল করা হয়।

যখন আমাদের বড়ো বড়ো সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়

যিহোবা যখন ‘সমস্ত মণ্ডলীকে’ আবাসের পূর্ব দিকের প্রবেশ দ্বারের সামনে একত্রিত করতে চাইতেন, তখন যাজকরা দুটো তূরী বাজাতেন। (গণনা. ১০:৩) ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের লোকেরা আবাসের চারপাশে চারটে ভাগে শিবির স্থাপন করেছিল। তারা সবাই সেই তূরীধ্বনি শুনতে পেত। প্রবেশ দ্বারের কাছে থাকা শিবিরের লোকেরা সম্ভবত কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেখানে আসতে পারত। অন্যেরা আবার দূরে থাকায় তাদের হয়তো সেখানে পৌঁছানোর জন্য আরেকটু বেশি সময় লাগত এবং অতিরিক্ত প্রচেষ্টা করতে হতো। তারা দূরে অথবা কাছে, যেখানেই থাকত, যিহোবা চাইতেন যেন তারা সবাই একত্রিত হয় এবং উপকার লাভ করে।

বর্তমানে, যদিও আমরা আবাসের সামনে একত্রিত হই না কিন্তু আমাদের ঈশ্বরের লোকেদের সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর অন্তর্ভুক্ত হল আঞ্চলিক সম্মেলন এবং অন্যান্য বিশেষ কার্যক্রম, যেখান থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নির্দেশনা লাভ করি। বিশ্বব্যাপী সমস্ত জায়গায় যিহোবার লোকেরা একই কার্যক্রম উপভোগ করে। তাই, যারা এই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সেখানে যোগ দেয়, তারা সুখী লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করা উপভোগ করে। কোনো কোনো ব্যক্তিকে হয়তো অন্যদের চেয়ে অতিরিক্ত পথ যাত্রা করতে হয়। তবে, যারা এই আমন্ত্রণে সাড়া দেয়, তারা এটা উপলব্ধি করে যে, তাদের প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে।

সেইসমস্ত বিচ্ছিন্ন দলের বিষয়ে কী বলা যায়, যারা বড়ো বড়ো সমাবেশের স্থান থেকে অনেক দূরে থাকে? আধুনিক প্রযুক্তির সৌজন্যে সেই ব্যক্তিরা এই একই কার্যক্রম থেকে উপকার লাভ করতে পারে আর তারা এমনকী নিজেদের সেই বড়ো সমাবেশের অংশ বলে মনে করে। উদাহরণ স্বরূপ, বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ের প্রতিনিধির একটা পরিদর্শনের সময়ে বেনিনের শাখা অফিস নাইজারের আরলিটে একটা কার্যক্রম সম্প্রচার করেছিল। আরলিটে অনেক খনি রয়েছে আর এই শহরটা সাহারা মরুভূমিতে অবস্থিত। ভাই, বোন ও আগ্রহী ব্যক্তি মিলিয়ে ২১ জন এই কার্যক্রম দেখেছিল। দূরবর্তী এলাকায় থাকা সত্ত্বেও তারা এটা অনুভব করেছিল যে, তারা সেই বড়ো সম্মেলনের মধ্যেই রয়েছে, যেখানে ৪৪,১৩১ জন উপস্থিত হয়েছিল। একজন ভাই লিখেছিলেন: “এই কার্যক্রম সম্প্রচার করার জন্য আমরা হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এটা আমাদের আবারও উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে যে, আপনারা আমাদের কতটা ভালোবাসেন।”

যখন প্রাচীনদের আরও প্রশিক্ষণ লাভ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়

ইস্রায়েলীয় যাজকরা যখন শুধু একটা তূরী বাজাতেন, তখন ‘[“কেবল,” জুবিলী বাইবেল] অধ্যক্ষগণ, ইস্রায়েলের সহস্রপতিগণকে’ সমাগম তাঁবুর কাছে আসতে হতো। (গণনা. ১০:৪) তারা সেখানে মোশির কাছ থেকে তথ্য ও প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারতেন। এটা তাদের দায়িত্ব পালন করতে সাহায্য করত, যাতে তারা তাদের বংশের যত্ন নিতে পারেন। আপনি যদি সেই অধ্যক্ষদের মধ্যে একজন হতেন, তা হলে আপনি কি সেখানে উপস্থিত থাকার এবং সেখান থেকে উপকার লাভ করার জন্য যথাসাধ্য করতেন না?

বর্তমানে, মণ্ডলীর প্রাচীনরা ইস্রায়েলের ‘অধ্যক্ষগণের’ মতো নন আর তারা তাদের যত্নাধীনে থাকা ঈশ্বরের পালের উপর প্রভুত্ব করেন না। (১ পিতর ৫:১-৩) এর পরিবর্তে, পালের যত্ন নেওয়ার জন্য তারা নিশ্চিতভাবেই তাদের সর্বোত্তমটা করেন। এ ছাড়া, তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়, যেমন কখনো কখনো তাদের রাজ্যের পরিচর্যা বিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর তারা এই প্রশিক্ষণ লাভ করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকেন। এই প্রশিক্ষণগুলোতে প্রাচীনদের শেখানো হয় যে, কীভাবে আরও কার্যকারী উপায়ে মণ্ডলীর বিভিন্ন বিষয়ের যত্ন নেওয়া যায়। এই প্রশিক্ষণের ফলে, প্রাচীনরা এবং মণ্ডলীতে তাদের যত্নাধীনে থাকা ব্যক্তিরা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে পারে। আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে এই বিদ্যালয়ে যোগ না দিয়ে থাকেন, তারপরও আপনি সেই ব্যক্তিদের কাছ থেকে উপকার লাভ করতে পারেন, যারা এই বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন।

যখন আমাদের বিভিন্ন রদবদল করতে হয়

কখনো কখনো ইস্রায়েলীয় যাজকরা এমনভাবে “রণবাদ্য [“তূরী,” NW]” বাজাতেন, যাতে সেটার আওয়াজ ওঠা-নামা করে। এটা ইঙ্গিত দিত যে, যিহোবা চান যেন ইস্রায়েলীয়রা তাদের শিবির স্থানান্তরিত করে। (গণনা. ১০:৫, ৬) লোকেরা সুসংগঠিতভাবে শিবির স্থানান্তরিত করত, তবে এর জন্য তাদের প্রত্যেককে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। কখনো কখনো কেউ কেউ হয়তো ইতস্তত বোধ করত। কেন?

হতে পারে কোনো কোনো ইস্রায়েলীয় মনে করত যে, শিবির স্থানান্তরিত করার আদেশ ঘন ঘন ও অপ্রত্যাশিতভাবে দেওয়া হচ্ছে। “কখন কখন মেঘ সন্ধ্যাকাল অবধি প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত থাকিত।” আবার অন্যান্য সময়ে তাদের কোনো একটা জায়গায় “দুই দিন কিম্বা এক মাস কিম্বা সম্বৎসর” বা এক বছর থাকতে হতো। (গণনা. ৯:২১, ২২) আপনি কি জানেন, ইস্রায়েলীয়দের কত বার শিবির স্থানান্তরিত করতে হয়েছিল? গণনাপুস্তক ৩৩ অধ্যায় জানায়, প্রায় ৪০টা জায়গায় ইস্রায়েলীয়রা শিবির স্থাপন করেছিল।

কখনো কখনো ইস্রায়েলীয়রা এমন জায়গায় শিবির স্থাপন করেছিল, যেখানে ছায়া ছিল। ‘বৃহৎ ও ভয়ঙ্কর প্রান্তরে’ ছায়ার নীচে শিবির স্থাপন করতে পারাটা সত্যিই মনোরম ছিল। (দ্বিতীয়. ১:১৯) তাই, তারা এইরকম ভেবে প্রলুব্ধ হতে পারত যে, এরপর তারা যেখানে যাবে, সেই জায়গাটা এতটা মনোরম হবে না।

শিবির স্থানান্তরিত হওয়ার কাজ একবার শুরু হওয়ার পর কোনো কোনো ইস্রায়েলীয়ের জন্য নিজের সময় না আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা কঠিন ছিল। তূরীর আওয়াজ যখন ওঠা-নামা করত, তখন সেটা সবাই শুনতে পেত কিন্তু সবাই একসঙ্গে শিবির স্থানান্তরিত করতে পারত না। তূরীর আওয়াজের ওঠা-নামা ইঙ্গিত দিত যে, পূর্ব দিকে থাকা যিহূদা, ইষাখর ও সবূলূন বংশের লোকেদের শিবির স্থানান্তরিত করতে হবে। (গণনা. ২:৩-৭; ১০:৫, ৬) তারা চলে যাওয়ার পর, যাজক যখন দ্বিতীয় বার তূরী বাজাতেন এবং সেটার আওয়াজ ওঠা-নামা করত, তখন সেটা দক্ষিণের তিন বংশকে শিবির স্থানান্তরিত করার ইঙ্গিত দিত। সমস্ত শিবির সেখান থেকে চলে না যাওয়া পর্যন্ত যাজক এই কাজ করে চলতেন।

সংগঠনের কোনো কোনো রদবদলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আপনি হয়তো ইতস্তত বোধ করেছেন। আপনি হয়তো ভেবেছেন যে, একের-পর-এক অনেক বেশি পরিবর্তন করা হচ্ছে। অথবা আপনি হয়তো ভেবেছেন, কোনো নির্দিষ্ট একটা বিষয়ে আগের পদ্ধতিই ভালো ছিল এবং পরিবর্তন না হলেই ভালো হতো। কারণ যা-ই হোক না কেন, পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময়ে ধৈর্য ধরাকে আপনি হয়তো কঠিন বলে মনে করেছেন এবং সেগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সময় লেগেছে। তবে, আমরা যদি পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য যথাসাধ্য করি, তা হলে আমরা এটা দেখতে পাব যে, এই পরিবর্তনগুলো উত্তম ফল নিয়ে এসেছে এবং যিহোবা আমাদের কাজে সন্তুষ্ট হয়েছেন।

মোশির দিনে প্রান্তরে যিহোবা লক্ষ লক্ষ পুরুষ, মহিলা ও সন্তানকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাঁর যত্ন ও নির্দেশনা ছাড়া তারা রক্ষা পেতে পারত না। বর্তমানে, শেষকালের এই মন্দ পরিস্থিতিতে যিহোবা আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমরা যাতে তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি এবং আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় রাখতে পারি, সেইজন্য তিনি আমাদের সাহায্য করছেন। তাই, বিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়রা যেভাবে বিভিন্ন ধরনের তূরীধ্বনির প্রতি সাড়া দিয়েছিল, সেভাবে আমরাও সাড়া দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য করতে চাই।