সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৫

“এই সামান্য ব্যক্তিদের” আঘাত দেবেন না

“এই সামান্য ব্যক্তিদের” আঘাত দেবেন না

“তোমরা এই সামান্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকেও তুচ্ছ কোরো না।”—মথি ১৮:১০.

গান ৩৯ আমাদের শান্তির অধিকার

সারাংশ *

১. কেন যিহোবা আপনাকে তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেছেন?

এই জগতে কোটি কোটি ব্যক্তির মধ্যে যিহোবা যখন আপনাকে দেখেছেন, তখন তিনি লক্ষ করেছেন, আপনার মন খুব ভালো আর আপনি একদিন তাঁকে অবশ্যই ভালোবাসবেন। (যোহন ৬:৪৪) তাই, তিনি আপনাকে তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেছেন। (১ বংশা. ২৮:৯) এটা কতই-না খুশির বিষয় যে, যিহোবা আপনাকে জানেন, আপনাকে বোঝেন আর আপনাকে ভালোবাসেন।

২. কীভাবে যিশু বুঝতে সাহায্য করেছিলেন, যিহোবা তাঁর প্রত্যেক মেষের জন্য চিন্তা করেন?

ঠিক যেমন আপনার প্রতি যিহোবার চিন্তা রয়েছে, একইভাবে বাকি ভাই-বোনদের প্রতিও তাঁর চিন্তা রয়েছে। এই বিষয়টা বোঝানোর জন্য যিশু হারানো মেষের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন। যখন ১০০টা মেষের মধ্যে একটা মেষ হারিয়ে যায়, তখন মেষপালক ‘বাকি ৯৯টা মেষ পর্বতে রেখে সেই মেষটা খোঁজার জন্য যায়, যেটা ভুল পথে চলে গিয়েছে।’ সে যখন সেই মেষকে খুঁজে পায়, তখন তার উপর রাগ করার পরিবর্তে আনন্দ করে। যিশু যিহোবাকে একজন মেষপালকের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যিহোবা তাঁর প্রত্যেক মেষকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন। যিশু বলেছিলেন: “আমার স্বর্গস্থ পিতাও চান না যে, এই সামান্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজনও বিনষ্ট হয়ে যাক।”—মথি ১৮:১২-১৪.

৩. এই প্রবন্ধে কী নিয়ে আলোচনা করা হবে?

আমরা কখনোই চাইব না, আমাদের কারণে কোনো ভাই কিংবা বোন আঘাত পাক। এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে, আমরা কী করতে পারি, যাতে আমাদের কারণে কেউ আঘাত না পায়? আর কেউ যখন আমাদের আঘাত দেয়, তখন আমাদের কী করা উচিত? কিন্তু, এর আগে আসুন দেখি, মথি ১৮ অধ্যায়ে যিশু যাদের ‘সামান্য ব্যক্তি’ বলে উল্লেখ করেছেন, তারা আসলে কারা।

‘এই সামান্য ব্যক্তিরা’ কারা?

৪. যিশু কাদের ‘সামান্য ব্যক্তি’ বলে উল্লেখ করেছেন?

যিশু যাদের ‘সামান্য ব্যক্তি’ বলে উল্লেখ করেছেন, তারা আসলে তাঁর শিষ্য। যদিও এই শিষ্যদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সের ব্যক্তি রয়েছে, তবে তারা সবাই “অল্পবয়সি ছেলে-মেয়েদের মতো” কারণ তারা যিশুর কাছ থেকে শেখার জন্য ইচ্ছুক রয়েছে। (মথি ১৮:৩) যদিও তারা আলাদা আলাদা সংস্কৃতি ও জায়গা থেকে এসেছে, কিন্তু তারা সবাই যিশুর উপর বিশ্বাস করে এবং তাঁকে ভালোবাসে। আর যিশুও তাদের খুব ভালোবাসেন।—মথি ১৮:৬; যোহন ১:১২.

৫. কেউ যখন যিহোবার উপাসকদের আঘাত দেয়, তখন তিনি কেমন অনুভব করেন?

সেই ‘সামান্য ব্যক্তিরা’ অর্থাৎ সমস্ত শিষ্য যিহোবার কাছে খুবই মূল্যবান, ঠিক যেমন ছোটো সন্তানেরা আমাদের কাছে মূল্যবান। আমরা সন্তানদের বিপদ থেকে রক্ষা করতে চাই কারণ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের তুলনায় তাদের শক্তি, অভিজ্ঞতা এবং বোঝার ক্ষমতা কম থাকে। কেউ যখন কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে আঘাত দেয়, তখন আমাদের খারাপ লাগে। কিন্তু, কেউ যখন কোনো সন্তানকে আঘাত দেয়, তখন আমাদের আরও বেশি খারাপ লাগে আর এমনকী আমরা রেগেও যাই। যিহোবাও আমাদের সুরক্ষা জোগাতে চান। তিনি যখন দেখেন, কেউ তাঁর উপাসকদের আঘাত দেয়, তখন তাঁর খারাপ লাগে আর এমনকী তিনি রেগেও যান।—যিশা. ৬৩:৯; মার্ক ৯:৪২.

৬. প্রথম করিন্থীয় ১:২৬-২৯ পদ অনুযায়ী জগৎ যিশুর শিষ্যদের কীভাবে দেখে থাকে?

যিশুর শিষ্যেরা আর কোন অর্থে “সামান্য ব্যক্তিদের” মতো? জগৎ সেই লোকদের সম্মান করে থাকে, যাদের অনেক টাকাপয়সা, খ্যাতি ও ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু, যিশুর শিষ্যদের কাছে সাধারণত এই সমস্ত কিছু থাকে না। তাই, জগৎ তাদের তুচ্ছ এবং ‘সামান্য ব্যক্তি’ বলে মনে করে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১:২৬-২৯.) কিন্তু, যিহোবা তাদের এভাবে দেখেন না।

৭. আমরা আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে কেমন আচরণ করি বলে যিহোবা আশা করেন?

যিহোবা তাঁর সমস্ত দাসকে ভালোবাসেন, তা তারা সত্যে নতুন হোক কিংবা অনেক বছর ধরে তাঁর সেবা করুক না কেন। যিহোবা আমাদের সমস্ত ভাই-বোনকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন, তাই আমাদেরও তাদের মূল্যবান হিসেবে দেখতে হবে। আমরা শুধুমাত্র কিছু ভাই-বোনের প্রতি নয় বরং “সমগ্র ভ্রাতৃসমাজের প্রতি প্রেম” দেখাতে চাই। (১ পিতর ২:১৭) আমাদের ভাই-বোনদের আঘাত দেওয়া উচিত নয়। আমাদের কারণে যদি কেউ আঘাত পায়, তা হলে আমরা এইরকম চিন্তা করব না, ‘সামান্য একটা বিষয়কে এত বড়ো করে দেখার কী আছে? ওর বিষয়টা ভুলে যাওয়া উচিত আর ক্ষমা করে দেওয়া উচিত!’ এটা ভুলে যাবেন না যে, লোকেরা অনেক কারণে আঘাত পেতে পারে। কোনো কোনো ব্যক্তি যেভাবে বড়ো হয়ে উঠেছে, সেটার কারণে নিজেকে অন্যদের চেয়ে গুরুত্বহীন বলে মনে করতে পারে। আবার কিছু ব্যক্তি সত্যে নতুন আর অন্যদের ক্ষমা করার বিষয় শিখছে। কারণ যা-ই হোক না কেন, আমাদের মিটমাট করার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে। আমরা যদি একটুতেই রেগে যাই, তা হলে এটা ভালো বিষয় নয়। আমাদের নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। এমনটা করার মাধ্যমেই আমরা আনন্দে থাকতে পারব আর ভাই-বোনদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো থাকবে।

অন্যদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করুন

৮. যিশুর সময়কার যিহুদিদের চিন্তাধারা কেমন ছিল?

কেন যিশু “এই সামান্য ব্যক্তিদের” সম্বন্ধে বলেছিলেন? যিশুর শিষ্যেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “স্বর্গরাজ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কে?” (মথি ১৮:১) তারা এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন কারণ যিহুদি সমাজে বিশেষ পদ ও খ্যাতি থাকাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হত। একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন: “লোকেরা সমাজে ধনসম্পদ, সম্মান, খ্যাতি ও ক্ষমতা পাওয়ার জন্যই বেঁচে থাকত আর প্রয়োজনে এগুলোর জন্য জীবনও দিয়ে দিত।”

৯. যিশু তাঁর শিষ্যদের কী করতে বলেছিলেন?

যিশুর শিষ্যেরাও এইরকম চিন্তা করত। তাই, যিশু জানতেন যে, এই চিন্তা দূর করার জন্য তাদের অনেক প্রচেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে যেন এমনটা না হয়। বরং তোমাদের মধ্যে যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সে যেন সবচেয়ে ক্ষুদ্র হয় আর তোমাদের মধ্যে যে নেতৃত্ব নেয়, সে যেন একজন সেবক হয়।” (লূক ২২:২৬) আমরা তখনই “সবচেয়ে ক্ষুদ্র” হব, যখন আমরা ‘অন্যদের নিজেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে’ করব। (ফিলি. ২:৩) আমরা যদি এইরকমটা মনে করি, তা হলে আমরা কখনো অন্যদের আঘাত দেব না।

১০. পৌলের দেওয়া কোন পরামর্শ আমাদের মনে রাখতে হবে?

১০ আমাদের অন্যদের ভালো গুণগুলোর উপর মনোযোগ দিতে হবে। যদি তা করি, তা হলেই আমরা বুঝতে পারব, প্রত্যেক ভাই কিংবা বোন কোনো-না-কোনো দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। প্রেরিত পৌল করিন্থীয়দের যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেটা আমাদেরও মনে রাখতে হবে। তিনি বলেছিলেন: “তোমার এমন কী আছে, যা তোমাকে অন্যের চেয়ে বিশেষ কেউ করে তোলে বলে তুমি মনে কর? তোমার যা-কিছু আছে, সেগুলো কি ঈশ্বরই তোমাকে দেননি? তিনি যদি তোমাকে সমস্ত কিছু দিয়ে থাকেন, তা হলে কেন তুমি এমনভাবে গর্ব কর, যেন তুমি সেগুলো নিজের শক্তিতে পেয়েছ?” (১ করি. ৪:৭) আমাদের কখনোই লোকদের মনোযোগ নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করানো উচিত নয় কিংবা এইরকম চিন্তা করা উচিত নয়, আমরা অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো ভাই যদি খুব ভালো বক্তৃতা দেন অথবা কোনো বোন যদি বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে থাকেন, তা হলে তাদের সমস্ত প্রশংসা যিহোবাকে দেওয়া উচিত।

“হৃদয় থেকে ক্ষমা” করুন

১১. যিশু একজন রাজা ও তার দাস সম্বন্ধে দৃষ্টান্ত তুলে ধরার মাধ্যমে কী শেখাতে চেয়েছিলেন?

১১ যিশু তাঁর শিষ্যদের প্রথমে এটা বোঝান, তারা যেন অন্যদের আঘাত না দেয়। এরপর, তিনি একটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। একজন দাস রাজার কাছ থেকে অনেক ঋণ নেয়। যখন সে সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি, তখন রাজা তার সমস্ত ঋণ ক্ষমা করে দেন। কিন্তু, সেই দাস তার একজন সহদাসকে ক্ষমা করেনি, যে তার কাছ থেকে সামান্য ঋণ নিয়েছিল। রাজা যখন সেই দাসের নিষ্ঠুর আচরণ সম্বন্ধে জানতে পারেন, তখন তিনি সেই দাসকে কারাগারে বন্দি করেন। যিশু এই দৃষ্টান্তের মাধ্যমে কী শেখাতে চেয়েছিলেন? তিনি বলেন: “আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের সঙ্গে একই আচরণ করবেন, যদি তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের ভাইকে হৃদয় থেকে ক্ষমা না কর।”—মথি ১৮:২১-৩৫.

১২. আমরা যখন অন্যদের ক্ষমা করি না, তখন কী হয়?

১২ সেই দাস তার সহদাসের প্রতি করুণা দেখায়নি। এটা যেমন তাকে ক্ষতি করেছিল, তেমনি অন্যদের উপরও খারাপ প্রভাব ফেলেছিল। কীভাবে? প্রথমত, সে তার সহদাসকে “ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত . . . কারাগারে বন্দি করে রাখল।” দ্বিতীয়ত, “এই ঘটনা দেখে অন্য সহদাসেরা অত্যন্ত দুঃখিত হল।” আমাদের কাজের কারণেও অন্যেরা আঘাত পেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যখন কাউকে ক্ষমা করি না, তার প্রতি প্রেম দেখাই না এবং তাকে এড়িয়ে চলি বা দেখেও না দেখার ভান করি, তখন তার খুব খারাপ লাগে। আর সেইসঙ্গে যখন মণ্ডলীর অন্য ভাই-বোনেরা এই বিষয়গুলো দেখে, তখন তাদেরও খারাপ লাগে।

আপনি কি রাগ করে থাকবেন, না কি হৃদয় থেকে ক্ষমা করে দেবেন? (১৩-১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৩. একজন অগ্রগামী বোনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৩ আমরা যখন ভাই-বোনদের ক্ষমা করি, তখন আমাদের ভালো লাগে এবং অন্যেরাও আনন্দিত হয়। ক্রিস্টাল * নামে একজন অগ্রগামী বোন বলেন: “মণ্ডলীর একজন বোন আমার সঙ্গে এমনভাবে কথা বলতেন, যেটা প্রায়ই আমাকে আঘাত দিত। তার কথা আমার হৃদয়ে তিরের মতো গেঁথে যেত। আমি তার সঙ্গে প্রচারে যেতে চাইতাম না। প্রচারের প্রতি আমার উদ্যোগ কমতে থাকে আর জীবনে আনন্দ হারিয়ে যেতে শুরু করে।” ক্রিস্টালের মনে হয়েছিল, তার রাগ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তা সত্ত্বেও, তিনি রাগ করে থাকেননি কিংবা নিজের বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করেননি। তিনি ১৯৯৯ সালের ১৫ অক্টোবর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার একটা প্রবন্ধ পড়েন, যেটার বিষয় ছিল “মন থেকে ক্ষমা করুন।” তিনি সেই প্রবন্ধে দেওয়া বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগান এবং সেই বোনকে ক্ষমা করে দেন। ক্রিস্টাল বলেন: “এখন আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমরা সবাই একজন উত্তম খ্রিস্টান হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করছি আর যিহোবা প্রতিদিন আমাদের ক্ষমা করে থাকেন। সেই বোনকে ক্ষমা করার পর আমার মন হালকা হয়ে যায়; আবারও আমার জীবনে আনন্দ ফিরে আসে।”

১৪. (ক) মথি ১৮:২১, ২২ পদ অনুযায়ী প্রেরিত পিতর হয়তো কী করাকে কঠিন বলে মনে করতেন? (খ) অন্যদের ক্ষমা করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১৪ এটা ঠিক যে, আমরা অন্যদের ক্ষমা করতে চাই। কিন্তু, এমনটা করা সহজ না-ও হতে পারে। প্রেরিত পিতরেরও প্রতি বার ক্ষমা করাকে হয়তো কঠিন বলে মনে হত। (পড়ুন, মথি ১৮:২১, ২২.) অন্যদের ক্ষমা করার জন্য আমাদের কী করতে হবে? প্রথমত, আমাদের এই বিষয় চিন্তা করতে হবে যে, যিহোবা আমাদের বার বার ক্ষমা করেন। (মথি ১৮:৩২, ৩৩) আমরা যদিও তাঁর ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নই, তা সত্ত্বেও তিনি মন থেকে আমাদের ক্ষমা করে দেন। (গীত. ১০৩:৮-১০) একইসঙ্গে, ‘আমরা পরস্পরের প্রতি প্রেম দেখাতে বাধ্য’ অর্থাৎ ভাই-বোনদের ক্ষমা করব কি করব না, সেটা আমাদের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়নি। তাই, আমাদের অবশ্যই ভাই-বোনদের ক্ষমা করতে হবে। (১ যোহন ৪:১১) দ্বিতীয়ত, আমাদের চিন্তা করতে হবে, আমরা যখন একজন ব্যক্তিকে ক্ষমা করি, তখন সেটার ফলাফল কী হয়। সেই ব্যক্তি অনেক উপকৃত হন, মণ্ডলীতে একতা বজায় থাকে, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বজায় থাকে আর আমাদের মনের বোঝা হালকা হয়ে যায়। (২ করি. ২:৭; কল. ৩:১৪) তৃতীয়ত, আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে হবে, যিনি আমাদের ক্ষমা করার আজ্ঞা দিয়েছেন। আমরা কখনোই শয়তানকে সুযোগ দেব না, যাতে সে ভাই-বোনদের সঙ্গে আমাদের উত্তম সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। (ইফি. ৪:২৬, ২৭) তাই, মণ্ডলীতে শান্তি বজায় রাখার জন্য আমাদের যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য নিতে হবে।

অন্যদের কারণে বিশ্বাসে দুর্বল হয়ে পড়বেন না

১৫. কোনো ভাই কিংবা বোনের আচরণ যদি আমাদের কষ্ট দিচ্ছে, তা হলে আমাদের কী করা উচিত? (কলসীয় ৩:১৩)

১৫ কোনো ভাই কিংবা বোনের আচরণ যদি আমাদের কষ্ট দিচ্ছে, তা হলে আমাদের কী করা উচিত? আমাদের শান্তি বজায় রাখার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা করা উচিত। আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে নিজের মনের কথা খুলে বলা উচিত। আমাদের সেই ভাই কিংবা বোনের জন্যও প্রার্থনা করা উচিত। আর যিহোবার কাছ থেকে এই বিষয়ে সাহায্য চাওয়া উচিত যে, যিহোবা তার মধ্যে যে-ভালো গুণগুলো লক্ষ করেন, আমরাও যেন তার সেই গুণগুলো দেখতে পারি। (লূক ৬:২৮) আমরা যদি তার ভুলগুলো ক্ষমা করতে না পারি, তা হলে তার সঙ্গে আমাদের কথা বলা উচিত। আমাদের এইরকম চিন্তা করা উচিত নয়, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের আঘাত দিয়েছেন। (মথি ৫:২৩, ২৪; ১ করি. ১৩:৭) আমাদের তার কথা শুনতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু, তিনি যদি মিটমাট করতে না চান, তা হলে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং “সবসময় একে অন্যকে সহ্য” করতে হবে। (পড়ুন, কলসীয় ৩:১৩.) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমাদের তার উপর রেগে থাকা উচিত নয়। যদি রেগে থাকি, তা হলে যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই মনে রাখবেন, অন্যদের কারণে আমাদের বিশ্বাস যেন দুর্বল হয়ে না পড়ে। এভাবে, আমরা প্রমাণ করতে পারব, আমরা সমস্ত কিছুর চেয়ে যিহোবাকে বেশি ভালোবাসি।—গীত. ১১৯:১৬৫.

১৬. আমাদের প্রত্যেকের কোন দায়িত্ব রয়েছে?

১৬ আমরা এই বিষয়ে খুব খুশি যে, আজ আমরা ‘এক জন মেষপালকের’ অধীনে “একটা পাল” হিসেবে একতাবদ্ধভাবে যিহোবার সেবা করে চলেছি। (যোহন ১০:১৬) যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য সংগঠিত (ইংরেজি) বইয়ের ১৬৫ পৃষ্ঠা জানায়: “যেহেতু আপনি এখন এই ভ্রাতৃসমাজ থেকে উপকার পাচ্ছেন, তাই আপনার দায়িত্ব হল, তা বজায় রাখা।” এরজন্য আমাদের “নিজেদের প্রশিক্ষিত করতে হবে, যাতে আমরা যিহোবার মতো করে ভাই-বোনদের দেখতে পারি।” যিহোবার দৃষ্টিতে এই ‘সামান্য ব্যক্তিরা’ অর্থাৎ সমস্ত ভাই-বোন খুবই মূল্যবান। তাই, আমাদেরও তাদের মূল্যবান হিসেবে দেখা উচিত। তাদের যত্ন নেওয়ার এবং সাহায্য করার জন্য আমরা যা-কিছু করি, সেগুলো যিহোবা লক্ষ করেন এবং উচ্চমূল্য দিয়ে থাকেন।—মথি ১০:৪২.

১৭. আমরা কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

১৭ আমরা ভাই-বোনদের খুব ভালোবাসি। তাই, আমরা “কোনো ভাইয়ের সামনে এমন কিছু না রাখার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই, যেটা তার বিশ্বাসের পক্ষে বাধাস্বরূপ হতে পারে বা যেটার জন্য সে বিপথে চলে যেতে পারে।” (রোমীয় ১৪:১৩) আমরা অন্যদের চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করব না, ভাই-বোনদের মন থেকে ক্ষমা করব আর আমরা নিজেরাও তাদের কারণে বিশ্বাসে দুর্বল হয়ে পড়ব না। তাই আসুন, আমরা “এমন সমস্ত কিছু করার জন্য যথাসাধ্য করি, যা শান্তি গড়ে তোলে এবং একে অন্যকে গেঁথে তোলে।”—রোমীয় ১৪:১৯.

গান ৩৫ ঈশ্বরের ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা

^ অনু. 5 আমরা সবাই অসিদ্ধ। আমরা প্রায়ই এমন কিছু বলি অথবা করি, যেটা আমাদের ভাই-বোনদের অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারে। সেইসময় আমরা কী করি? আমরা কি সঙ্গেসঙ্গে ক্ষমা চাই? না কি আমরা এইরকম চিন্তা করি, ‘তাদের খারাপ লেগেছে, মানে এটা তাদের সমস্যা। এতে আমি কী করতে পারি?’ আবার হতে পারে, আমরা একটুতেই অন্যদের কথায় ও কাজে বিরক্ত হই। সেইসময় আমরা কি এইরকম চিন্তা করি, ‘আমি তো এইরকমই, আমি পরিবর্তন হব না!’ না কি আমরা এইরকম চিন্তা করি, ‘এটা তো ভালো বিষয় নয়। আমাকে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে!’

^ অনু. 13 নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ অনু. 54 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: মণ্ডলীর একজন বোন অন্য বোনের উপর রেগে আছেন। তারা একসঙ্গে কথা বলে বিষয়টা মিটমাট করেন। পরে, তারা বিষয়টা ভুলে গিয়ে আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করছেন।