সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৭

কেন যিহোবাকে ভয় করবেন?

কেন যিহোবাকে ভয় করবেন?

“যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব কেবল তারা করতে পারে, যারা তাঁকে ভয় করে।”—গীত. ২৫:১৪, NW.

গান ৭ যিহোবার আমার বল

সারাংশ a

১-২. গীতসংহিতা ২৫:১৪ পদ অনুযায়ী আমরা যদি যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব করতে চাই, তা হলে আমাদের কী করতে হবে?

 আপনি যদি কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চান, তা হলে কী মনে হয় আপনার, আপনাকে কী করতে হবে? আপনি হয়তো বলবেন, দু-জনের মধ্যে ভালোবাসা থাকা উচিত, একে অন্যকে সমর্থন করা উচিত, তা হলেই বন্ধুত্ব বজায় থাকবে। কিন্তু, আমাদের কি নিজেদের বন্ধুদের ভয় পাওয়া উচিত? আপনি হয়তো চিন্তা করছেন, ‘না, বন্ধুকে কে ভয় পায়?’ তবে, এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদে যেমনটা বলা হয়েছে, কেউ যদি যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব করতে চায়, তা হলে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সে যেন তাঁকে “ভয় করে।”—পড়ুন, গীতসংহিতা ২৫:১৪. b

আমরা যত বছর ধরেই যিহোবার সেবা করি না কেন, আমাদের সবার তাঁকে ভয় করা উচিত। কিন্তু, ঈশ্বরকে ভয় করার মানে কী? কীভাবে আমরা নিজেদের ভিতরে ঈশ্বরের প্রতি ভয় গড়ে তুলতে পারি? আর ঈশ্বরকে ভয় করার ব্যাপারে আমরা অতীতের একজন অধ্যক্ষ ওবদিয়, মহাযাজক যিহোয়াদা এবং রাজা যিহোয়াশের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?

ঈশ্বরকে ভয় করার মানে কী?

৩. অনেকসময় কেন আমাদের ভয় লাগতে পারে আর এই ধরনের ভয় থাকা কেন ভালো?

অনেকসময় ভয়ের কারণে আমরা এমন কোনো কাজ করা এড়িয়ে চলি, যেটার ফলে আমাদের ক্ষতি হতে পারে অথবা আঘাত লাগতে পারে। এই ধরনের ভয় থাকা ভালো বিষয়। যেমন, আমরা যদি কোনো পর্বতের উপরে হাঁটি, তা হলে আমরা ধার দিয়ে হাঁটি না কারণ আমাদের নীচে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। অথবা আমরা যদি বুঝতে পারি, কোথাও বিপদ রয়েছে, তা হলে আমরা সেখান থেকে দ্রুত চলে যাই কারণ আমাদের আঘাত লাগার ভয় থাকে। আর আমরা এই চেষ্টা করি যেন আমরা আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে খারাপভাবে আচরণ না করি কিংবা খারাপভাবে কথা না বলি কারণ আমাদের ভয় হয়, আমাদের বন্ধুত্ব যেন ভেঙে না যায়।

৪. শয়তান কী চায়?

শয়তান চায়, আমরা যেন যিহোবার প্রতি আতঙ্কজনক ভয় গড়ে তুলি। সে আমাদের মনে সেই কথাগুলো ঢুকিয়ে দিতে চায়, যেগুলো অনেক বছর আগে ইলীফস ইয়োবকে বলেছিলেন। সেই কথাগুলো হল, যিহোবা সবসময় রেগে থাকেন এবং এই সুযোগ খুঁজতে থাকেন যে, কখন কাকে শাস্তি দেবেন আর যিহোবাকে খুশি করা একেবারে অসম্ভব। (ইয়োব ৪:১৮, ১৯) শয়তান চায়, আমরা যিহোবার বিষয়ে এইরকম চিন্তা করি এবং তাঁকে এতটাই ভয় পাই যে, তাঁর সেবা করা বন্ধ করে দিই। আমরা যদি শয়তানের এই ফাঁদে পড়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে চাই, তা হলে আমাদের ভিতরে যিহোবার প্রতি সঠিক প্রকারের ভয় গড়ে তুলতে হবে।

৫. ঈশ্বরকে ভয় করার মানে কী?

যে-ব্যক্তির মনে ঈশ্বরের প্রতি সঠিক প্রকারের ভয় থাকে, তিনি তাঁকে ভালোবাসেন এবং এমন কোনো কাজ করতে চান না, যেটার ফলে যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। যিশুর মনেও যিহোবার প্রতি এই ধরনের “ভয়” ছিল। (ইব্রীয় ৫:৭) যিশু যিহোবাকে দেখে আতঙ্কিত হতেন না। (যিশা. ১১:২, ৩) এর পরিবর্তে, যিশু তাঁকে খুব ভালোবাসতেন এবং সবসময় তাঁর বাধ্য থাকতে চাইতেন। (যোহন ১৪:২১, ৩১) যিশুর মতো আমাদের মনেও যিহোবার প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে এবং আমরা তাঁকে অনেক সমাদর করি। এর কারণ হল যিহোবা হলেন একজন প্রেমময় ঈশ্বর, তিনি অনেক প্রজ্ঞাবান ও শক্তিশালী এবং সবসময় ন্যায়বিচার করেন। আর আমরা যখন মনে রাখি, যিহোবা কেমন ঈশ্বর, আমাদের কতটা ভালোবাসেন, তখন আমরা প্রতিটা কাজ ভেবে-চিন্তে করি। আমরা এটা ভুলে যাই না, আমরা যা-কিছু করি, সেগুলো যিহোবার উপর প্রভাব ফেলে। আমরা যদি তাঁর আজ্ঞা পালন করি, তা হলে তিনি খুব আনন্দিত হবেন। অপর দিকে, আমরা যদি তাঁর আজ্ঞা পালন না করি, তা হলে তিনি খুব দুঃখ পাবেন।—গীত. ৭৮:৪১; হিতো. ২৭:১১.

আমরা ঈশ্বরকে ভয় করা শিখতে পারি

৬. আপনার মনে যিহোবার প্রতি ভয় গড়ে তোলার একটা উপায় কী? (গীতসংহিতা ৩৪:১১)

আমরা যিহোবার প্রতি ভয় নিয়ে জন্মগ্রহণ করি না। তাই, আমাদের শিখতে হবে যে, কীভাবে আমরা তাঁকে ভয় করতে পারি। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৪:১১.) এমনটা করার একটা উপায় হল, যিহোবার সৃষ্টির বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করা। আমরা যখন ‘যিহোবার সৃষ্ট বিষয়গুলোর’ উপর মনোযোগ দিই, তখন আমরা বুঝতে পারি, তিনি কতটা প্রজ্ঞাবান, তাঁর কত শক্তি রয়েছে এবং তিনি আমাদের কত ভালোবাসেন। আর যত বেশি আমরা এই বিষয়ে চিন্তা করি, তত বেশি আমাদের মনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায় এবং আমরা আরও বেশি তাঁকে সমাদর করতে শুরু করি। (রোমীয় ১:২০) অ্যানি নামে একজন বোন বলেন: “যিহোবার সৃষ্টি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তিনি কতটা প্রজ্ঞাবান। যখনই আমি তাঁর সৃষ্টির বিষয়গুলো লক্ষ করি, তখনই আমি নিশ্চিত হয়ে যাই যে, যিহোবা যা-কিছু বলেন, সেগুলো আমার ভালোর জন্যই বলেন।” বোন এই বিষয়ে অনেক বার চিন্তা করেছিলেন, তাই তিনি বলতে পেরেছিলেন: “আমি এমন কোনো কাজ করতে চাই না, যেটার কারণে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে।” আপনি কি এই সপ্তাহে একটু সময় বের করে যিহোবার সৃষ্টির কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে পারেন? এমনটা করার মাধ্যমে যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা আরও বেড়ে যাবে এবং আপনি তাঁকে আরও সমাদর করতে শুরু করবেন।—গীত. ১১১:২, ৩.

৭. প্রার্থনা করার মাধ্যমে কীভাবে আমরা নিজেদের মনে যিহোবার প্রতি ভয় গড়ে তুলতে পারি?

যিহোবার প্রতি ভয় গড়ে তোলার আরেকটা উপায় হল, তাঁর কাছে ক্রমাগত প্রার্থনা করা। প্রতি বার আমরা যখন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তখন তিনি আমাদের কাছে আরও বাস্তব হয়ে যান এবং আমরা তাঁকে আরও ভালো করে জানতে পারি। কীভাবে? যখনই আমরা যিহোবার কাছে কোনো পরীক্ষা সহ্য করার জন্য শক্তি চাই, তখনই আমরা এই বিষয়টা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি, যিহোবার কত শক্তি রয়েছে। আমরা যখন তাঁকে ধন্যবাদ দিই, তিনি আমাদের জন্য তাঁর নিজের পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছেন, তখন আমাদের মনে পড়ে যায়, যিহোবা আমাদের কতটা ভালোবাসেন। আর যখন আমরা কোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য তাঁর কাছ থেকে সাহায্য চাই, তখন আমরা আরও নিশ্চিত হই, যিহোবা কতটা প্রজ্ঞাবান। এভাবে প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে আরও সমাদর করতে শুরু করি এবং আমাদের এই সংকল্প আরও দৃঢ় হয়ে যায় যে, আমরা এমন কোনো কাজ করব না, যেটার ফলে যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙে যাবে।

৮. আমরা যদি যিহোবার প্রতি ভয় বজায় রাখতে চাই, তা হলে আমাদের কী করতে হবে?

আমরা সবাই চাই যেন যিহোবার প্রতি আমাদের ভয় বজায় থাকে। এরজন্য এটাও গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা বাইবেলে দেওয়া ভালো ও মন্দ উদাহরণগুলো থেকে শিখি। তাই আসুন, যিহোবার দু-জন অনুগত সেবকের উপর মনোযোগ দিই আর দেখি, আমরা তাদের কাছ থেকে কী শিখতে পারি। সবচেয়ে প্রথমে আমরা রাজা আহাবের রাজপ্রাসাদের অধ্যক্ষ ওবদিয়ের কাছ থেকে শিখব। এরপর, আমরা মহাযাজক যিহোয়াদার উদাহরণের উপর মনোযোগ দেব। তারপর আমরা দেখব, যিহূদার রাজা যিহোয়াশের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি, যিনি প্রথম দিকে যিহোবার সেবা করতেন, কিন্তু পরে তিনি যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

ওবদিয়ের মতো সাহসী হোন

৯. যিহোবাকে ভয় করার কারণে ওবদিয় কেমন ব্যক্তি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন? (১ রাজাবলি ১৮:৩, ১২)

বাইবেলে সবচেয়ে প্রথমে যেখানে ওবদিয়ের c বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে লেখা রয়েছে, “ওবদিয় যিহোবাকে খুবই ভয় করতেন।” (পড়ুন, ১ রাজাবলি ১৮:৩, ১২, NW.) ঈশ্বরকে ভয় করার কারণে ওবদিয় খুবই সৎ এবং নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। আর এই কারণেই রাজা তাকে রাজপ্রাসাদের অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। (তুলনা করুন, নহিমিয় ৭:২.) এ ছাড়া, ঈশ্বরকে ভয় করার কারণে ওবদিয় অনেক সাহসের সঙ্গেও কাজ করতে পেরেছিলেন। আর সত্যিই তার অনেক সাহসের প্রয়োজন ছিল। এর কারণ হল, সেই সময়ে রাজা আহাব শাসন করছিলেন, যার বিষয়ে বাইবেলে লেখা আছে, “আহাবের আগে যে-সমস্ত রাজা ছিলেন, তাদের সবার চেয়ে তিনি যিহোবার দৃষ্টিতে আরও বেশি মন্দ ছিলেন।” (১ রাজা. ১৬:৩০, NW) শুধু তা-ই নয়, আহাবের স্ত্রী ঈষেবল বাল দেবতাদের উপাসনা করতেন এবং যিহোবাকে এতটা ঘৃণা করতেন যে, তিনি ইজরায়েলের দশ বংশের রাজ্যে থাকা যিহোবার সমস্ত সেবককে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি যিহোবার অনেক ভাববাদীকেও হত্যা করিয়েছিলেন। (১ রাজা. ১৮:৪) তাই, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ওবদিয় খুবই কঠিন সময়ে যিহোবার সেবা করতেন।

১০. কেন আমরা বলতে পারি, ওবদিয় খুবই সাহসী ছিলেন?

১০ ওবদিয় সত্যিই খুব সাহসী ছিলেন। কেন আমরা তা বলতে পারি? ঈষেবল যখন যিহোবার ভাববাদীদের মেরে ফেলার চেষ্টা করছিলেন, তখন ওবদিয় ‘যিহোবার এক-শো জন ভাববাদীকে পঞ্চাশ পঞ্চাশ জনের দলে ভাগ করে গুহাতে লুকিয়ে রেখেছিলেন এবং তাদের রুটি ও জল জুগিয়েছিলেন।’ (১ রাজা. ১৮:১৩, ১৪, NW) ওবদিয় যদি ধরা পড়তেন, তা হলে ঈষেবল তাকেও মেরে ফেলতেন। ওবদিয়ও হয়তো ভয় পাচ্ছিলেন কারণ আর পাঁচ জনের মতো তিনিও মারা যেতে চাননি। কিন্তু, তিনি সাহসের সঙ্গে কাজ করেছিলেন কারণ তার কাছে নিজের জীবনের চেয়ে যিহোবা ও সেইসঙ্গে তাঁর সেবকেরা বেশি মূল্যবান ছিল।

একজন ভাই সাহসের সঙ্গে কাজ করছেন এবং এমন একটা এলাকায় ভাই-বোনদের প্রকাশনা পৌঁছে দিচ্ছেন, যেখানে আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন) e

১১. আজ যিহোবার সেবকেরা কীভাবে ওবদিয়ের মতো সাহসের সঙ্গে কাজ করে থাকে? (ছবিও দেখুন।)

১১ আজ আমাদের অনেক ভাই-বোন এমন এলাকায় থাকে, যেখানে আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারা সেখানকার কর্তৃপক্ষদের সমাদর করে ঠিকই, কিন্তু ওবদিয়ের মতো তারা কোনো পরিস্থিতিতেই যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে না। (মথি ২২:২১) তারা ঈশ্বরকে ভয় করে, তাই মানুষের প্রতি বাধ্য হওয়ার পরিবর্তে তারা ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য থাকে। (প্রেরিত ৫:২৯) তারা যিহোবার উপাসনা করার জন্য লুকিয়ে একত্রিত হয় এবং প্রচার কাজেও রত থাকে। (মথি ১০:১৬, ২৮) এ ছাড়া, তারা এই বিষয়ে খেয়াল রাখে যেন ভাই-বোনেরা বাইবেলভিত্তিক বিভিন্ন প্রকাশনা পেতে পারে, যাতে তারা ক্রমাগত যিহোবার নিকটবর্তী থাকে। ভাই হেনরির উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি আফ্রিকার এমন একটা এলাকায় থাকেন, যেখানে কিছুসময়ের জন্য আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। সেই সময়ে ভাই হেনরি নিজে থেকে এগিয়ে এসে বলেছিলেন, তিনি ভাই-বোনদের কাছে প্রকাশনা পৌঁছে দেবেন। তিনি লিখেছিলেন: “আমি খুবই লাজুক স্বভাবের। তারপরও, যিহোবাকে সমাদর করার ফলে আমি সাহস অর্জন করতে পেরেছিলাম।” আপনার কি মনে হয়, আপনিও ভাই হেনরির মতো সাহসের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন? আপনি যদি ঈশ্বরকে ভয় করেন, তা হলে আপনিও সাহসী হতে পারবেন!

মহাযাজক যিহোয়াদার মতো অনুগত থাকুন

১২. মহাযাজক যিহোয়াদা এবং তার স্ত্রী কীভাবে দেখিয়েছিলেন, তারা যিহোবার প্রতি অনুগত?

১২ মহাযাজক যিহোয়াদা যিহোবাকে ভয় করতেন, তাই তিনি যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন এবং অন্যদেরও তাঁর উপাসনা করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। কেন আমরা তা বলতে পারি? এটা সেই সময়ের কথা, যখন ঈষেবলের মেয়ে অথলিয়া যিহূদার সিংহাসন দখল করেছিলেন আর নিজে রানি হয়েছিলেন। সবাই অথলিয়াকে খুবই ভয় পেত কারণ তিনি খুবই নিষ্ঠুর ছিলেন। রানি হওয়ার জন্য তিনি এতটাই উঠে-পড়ে লেগেছিলেন যে, তিনি পুরো রাজবংশকে বিনষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি তার নাতিদেরও ছাড়েননি। (২ বংশা. ২২:১০, ১১) তবে, তার এক নাতি যিহোয়াশ বেঁচে গিয়েছিলেন কারণ যিহোয়াদা এবং তার স্ত্রী যিহোশাবৎ তাকে অথলিয়ার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন এবং তার দেখাশোনা করেছিলেন। এভাবে তারা এই বিষয়ে খেয়াল রেখেছিলেন যে, রাজা দায়ূদের বংশ থেকেই যেন কেউ রাজা হয়। সেইসময় হয়তো যিহোয়াদার অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, তিনি অথলিয়াকে ভয় পাননি। এর পরিবর্তে, তিনি যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন।—হিতো. ২৯:২৫.

১৩. যিহোয়াদা আবারও কীভাবে প্রমাণ করেছিলেন, তিনি যিহোবার প্রতি অনুগত?

১৩ যিহোয়াশের বয়স যখন সাত বছর ছিল, তখন যিহোয়াদা আবারও প্রমাণ করেছিলেন, তিনি যিহোবার প্রতি অনুগত। তিনি একটা পরিকল্পনা করেছিলেন। যদি সেটা সফল হয়ে যেত, তা হলে যিহোয়াশ রাজা হয়ে যেতেন, যিনি দায়ূদের বংশধর ছিলেন। কিন্তু, সেটা যদি সফল না হত, তা হলে তার জীবন চলে যেতে পারত। অধ্যক্ষেরা ও লেবীয়েরা যিহোয়াদাকে পুরোপুরি সমর্থন করেছিল এবং যিহোবার আশীর্বাদে সেই পরিকল্পনা সফল হয়েছিল। যিহোয়াশ রাজা হয়েছিলেন এবং অথলিয়াকে মেরে ফেলা হয়েছিল। (২ বংশা. ২৩:১-৫, ১১, ১২, ১৫; ২৪:১) ‘তারপর, যিহোবা এবং রাজা ও লোকদের মধ্যে যিহোয়াদা এই চুক্তি করেছিলেন যে, তারা যিহোবার লোক হয়ে থাকবে।’ (২ রাজা. ১১:১৭, NW) ‘এ ছাড়া, যিহোয়াদা যিহোবার গৃহের দরজায় দারোয়ানদের দাঁড় করিয়েছিলেন, যাতে কোনো ধরনের অশুচি লোক ভিতরে ঢুকতে না পারে।’—২ বংশা. ২৩:১৯, NW.

১৪. যিহোয়াদা যিহোবাকে সমাদর করতেন, তাই যিহোবাও কোন কোন উপায়ে তাকে সমাদর করেছিলেন?

১৪ যিহোয়াদা যিহোবার জন্য যা-কিছু করেছিলেন, সেগুলো যিহোবা ভুলে যাননি। আগে যিহোবা একবার বলেছিলেন: “যারা আমাকে সমাদর করে, আমি তাদের সমাদর করব।” আর তিনি যিহোয়াদার প্রতি এমনটাই করেছিলেন। (১ শমূ. ২:৩০, NW) যিহোবা মহাযাজক যিহোয়াদার ভালো কাজগুলো শাস্ত্রে লিখিয়েছিলেন, যাতে আমরা সবাই তা থেকে শিখতে পারি। (রোমীয় ১৫:৪) আর যখন যিহোয়াদা মারা গিয়েছিলেন, তখন ‘তাকে দায়ূদ-নগরে রাজাদের কবরে কবর দেওয়া হয়েছিল কারণ তিনি ইজরায়েলের লোকদের জন্য, সত্য ঈশ্বরের জন্য এবং ঈশ্বরের গৃহের জন্য অনেক ভালো কাজ করেছিলেন।’ এটা কতই-না বড়ো এক সম্মানের বিষয় ছিল!—২ বংশা. ২৪:১৫, ১৬, NW.

মহাযাজক যিহোয়াদার মতো আমরাও যদি ঈশ্বরকে ভয় করি, তা হলে আমরা অনুগত থাকতে পারব এবং ভাই-বোনদের সমর্থন করতে পারব (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) f

১৫. যিহোয়াদার বিবরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (ছবিও দেখুন।)

১৫ যিহোয়াদার বিবরণ থেকে আমরা সবাই ঈশ্বরকে ভয় করা শিখতে পারি। যিহোয়াদার মতো প্রাচীনেরা সবসময় সতর্ক থাকতে পারেন আর ঈশ্বরের পালের দেখাশোনা করতে পারেন। এভাবে তারা দেখাতে পারবেন, তারা যিহোবার প্রতি অনুগত। (প্রেরিত ২০:২৮) বয়স্ক ভাই-বোনেরাও যিহোয়াদার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। তারা যখন যিহোবাকে ভয় করে এবং তাঁর প্রতি অনুগত তাকে, তখন যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য তাদের দিয়েও অনেক কিছু করাতে পারেন। তিনি বয়স্ক ব্যক্তিদের কখনো অবহেলা করেন না। অল্পবয়সিরা এই বিষয়ের উপর মনোযোগ দিতে পারে যে, যিহোবা কীভাবে যিহোয়াদাকে সমাদর করেছিলেন। একইভাবে, তারাও বয়স্ক ভাই-বোনদের সমাদর করতে এবং তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে পারে, বিশেষভাবে তাদের প্রতি, যারা দীর্ঘসময় ধরে যিহোবার সেবা করছে। (হিতো. ১৬:৩১) আর আমরা সবাই সেই অধ্যক্ষদের এবং লেবীয়দের কাছ থেকে শিখতে পারি, যারা যিহোয়াদাকে সমর্থন করেছিল। আসুন, আমরা সবাই সেই ভাইদের বাধ্য থাকি, যারা “নেতৃত্ব” নিচ্ছেন আর এভাবে তাদের সমর্থন করি।—ইব্রীয় ১৩:১৭.

রাজা যিহোয়াশের মতো হবেন না

১৬. কোন বিষয়টা থেকে বোঝা যায়, রাজা যিহোয়াশের বিশ্বাস দুর্বল ছিল?

১৬ যিহোয়াদা রাজা যিহোয়াশকে যা-কিছু শিখিয়েছিলেন, সেটার কারণে তিনি একজন ভালো মানুষ হতে পেরেছিলেন। (২ রাজা. ১২:২) তিনি যখন ছোটো ছিলেন, তখন তিনি সবসময় এমন কাজ করতে চাইতেন, যেটা দেখে যিহোবা খুশি হন। কিন্তু, যিহোয়াদার মৃত্যুর পর যিহোয়াশ সেই অধ্যক্ষদের কথা শুনতে শুরু করেছিলেন, যারা মিথ্যা দেব-দেবীদের উপাসনা করতে শুরু করেছিল। সেই কারণে তিনি এবং তার প্রজারা “খুঁটি ও মূর্তিগুলোর সেবা করতে” শুরু করেছিল। (২ বংশা. ২৪:৪, ১৭, ১৮, NW) এই সমস্ত কিছু দেখে যিহোবা খুব দুঃখ পেয়েছিলেন এবং তিনি ক্রমাগত ‘তাদের কাছে ভাববাদীদের পাঠিয়েছিলেন, যাতে তারা তাদের তাঁর কাছে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু তারা তাদের কোনো কথাতেই কান দেয়নি।’ তারা যিহোয়াদার ছেলে সখরিয়ের কথাতেও কান দেয়নি, যিনি কেবল যিহোবার ভাববাদী ও যাজকই ছিলেন না, কিন্তু সেইসঙ্গে যিহোয়াশের ভাইও ছিলেন (পিসির ছেলে)। যে-পরিবার তার জন্য এত কিছু করেছিল, তার জীবন রক্ষা করেছিল, সেই পরিবারের প্রতি যিহোয়াশ কোনো কৃতজ্ঞতা দেখাননি বরং তার ছেলে সখরিয়কে হত্যা করিয়েছিলেন।—২ বংশা. ২২:১১; ২৪:১৯-২২, NW.

১৭. যিহোয়াশের পরিণতি কী হয়েছিল?

১৭ যিহোয়াশ যিহোবাকে ভয় করেননি, তাই এর পরিণতি অনেক খারাপ হয়েছিল। যিহোবা বলেছিলেন: “যারা আমার অনাদর করে, আমি তাদের অবজ্ঞা করব।” (১ শমূ. ২:৩০, NW) আর যিহোয়াশের প্রতি ঠিক এমনটাই হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সিরিয়ার ছোটো সেনাবাহিনী যিহোয়াশের “বিশাল সেনাবাহিনীকে” পরাজিত করেছিল আর তাকে “মারাত্মকভাবে” আঘাত করেছিল। যখন সিরিয়ার সেনাবাহিনী ফিরে গিয়েছিল, তখন যিহোয়াশের নিজের সেবকেরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল এবং তাকে মেরে ফেলেছিল কারণ তিনি যিহোয়াদার ছেলে সখরিয়কে d হত্যা করিয়েছিলেন। সেই দুষ্ট রাজাকে এতটাই অযোগ্য বলে মনে করা হয়েছিল যে, তাকে “রাজাদের কবরে” কবর দেওয়া হয়নি।—২ বংশা. ২৪:২৩-২৫, NW.

১৮. আমরা যদি যিহোয়াশের মতো হতে না চাই, তা হলে যিরমিয় ১৭:৭, ৮ পদ অনুযায়ী আমাদের কী করতে হবে?

১৮ আমরা যিহোয়াশের উদাহরণ থেকে কী শিখতে পারি? যিহোয়াশ এমন একটা গাছের মতো ছিলেন, যেটার মূল দুর্বল ছিল এবং যেটার সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। যিহোয়াদা রাজা যিহোয়াশের কাছে এক অর্থে সাহায্যের মতো ছিলেন। যিহোয়াশের যখন সাহায্য ছিল না অর্থাৎ যিহোয়াদা মারা গিয়েছিলেন আর যখন ঝোড়ো বাতাস এসেছিল অর্থাৎ অধ্যক্ষেরা তাকে প্রলোভন দেখানোর চেষ্টা করেছিল, তখন যিহোয়াশ যেন পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি মিথ্যা উপাসনা করতে শুরু করেছিলেন এবং যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন না। এখান থেকে আমরা একটা শিক্ষা লাভ করি। আমাদের শুধু এই কারণে ঈশ্বরকে ভয় করা উচিত নয় যে, আমাদের পরিবারের সদস্যেরা কিংবা মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা এমনটা করছে। এর পরিবর্তে, আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে এক দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত আর তাঁকে ভয় করা উচিত। এমনটা আমরা তখনই করতে পারব, যখন আমরা ক্রমাগত ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করব, সেটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করব এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা করব।—পড়ুন, যিরমিয় ১৭:৭, ৮; কল. ২:৬, ৭.

১৯. যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান?

১৯ যিহোবা আমাদের কাছ থেকে বেশি কিছু চান না। তিনি আমাদের কাছ থেকে যা চান, সেটার সারাংশ উপদেশক ১২:১৩ পদে দেওয়া রয়েছে। সেখানে লেখা আছে, “ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর, কেননা ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য।” আমরা যদি ঈশ্বরকে ভয় করি, তা হলে ভবিষ্যতে আমরা যেকোনো সমস্যার মুখোমুখি হই না কেন, ওবদিয় ও যিহোয়াদার মতো আমরা যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে পারব আর কোনো কিছুকেই যিহোবা এবং আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে আসতে দেব না।

গান ৩ দৃঢ় দুর্গ তুমি ও বিশ্বাসভূমি

a বাইবেলে “ভয়” শব্দকে অনেক বার ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক জায়গায় এর মানে হল, কাউকে দেখে আতঙ্কিত হওয়া, আবার অনেক জায়গায় কারো প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় থাকা কিংবা কাউকে সমাদর করা। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কীভাবে আমরা ঈশ্বরকে ভয় করতে পারি, যাতে তাঁর সেবা করার সময়ে আমরা সাহসের সঙ্গে কাজ করতে পারি এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকতে পারি।

b গীতসংহিতা ২৫:১৪, NW: “যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব কেবল তারা করতে পারে, যারা তাঁকে ভয় করে, তিনি তাঁর চুক্তি সম্বন্ধে তাদের জানিয়ে থাকেন।”

c এখানে উল্লেখিত ওবদিয় ভাববাদী ওবদিয় নন, যিনি বাইবেলের ওবদিয় বই লিখেছিলেন। ভাববাদী ওবদিয় অনেক বছর পরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

d মথি ২৩:৩৫ পদ বলে যে, সখরিয় ছিলেন বরখিয়ের ছেলে। এমনটা মনে করা হয়, যিহোয়াদার হয়তো দুটো নাম ছিল, যেমন বাইবেলে বলা অন্য লোকদেরও ছিল। (তুলনা করুন, মথি ৯:৯ এবং মার্ক ২:১৪.) অথবা হতে পারে, বরখিয় সখরিয়ের দাদু কিংবা পূর্বপুরুষ ছিলেন।

e ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাই এমন একটা এলাকায় ভাই-বোনদের প্রকাশনা পৌঁছে দিচ্ছেন, যেখানে আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

f ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: এক অল্পবয়সি বোন একজন বয়স্ক বোনের কাছ থেকে শিখছেন, কীভাবে ফোনের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিতে হয়; একজন বয়স্ক ভাই সাহসের সঙ্গে জনসাধারণ্যে প্রচার করছেন; একজন ভাই, যার কিংডম হল রক্ষণাবেক্ষণ করার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে, তিনি অন্যদের এই কাজ শেখাচ্ছেন।