সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৫

প্রাচীনেরা—গিদিয়োনের কাছ থেকে শিখুন

প্রাচীনেরা—গিদিয়োনের কাছ থেকে শিখুন

“আমি যদি গিদিয়োন, . . . এবং অন্যান্য ভাববাদীর কথা বলতে থাকি, তা হলে সময়ে কুলোবে না।”—ইব্রীয় ১১:৩২.

গান ৩৪ বিশ্বস্ততার পথে চলি

সারাংশ a

১. প্রথম পিতর ৫:২ পদ অনুযায়ী প্রাচীনদের কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে?

 যিহোবা প্রাচীনদের তাঁর মূল্যবান মেষদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রাচীনেরা এই বিষয়টা খুবই উপলব্ধি করেন, যিহোবা তাদের উপর কতটা ভরসা করেন। তারা তাদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। তারা মেষপালকের মতো ঈশ্বরের মেষদের ‘চরানোর’ বা দেখাশোনা করার জন্য অনেক প্রচেষ্টা করেন। (যির. ২৩:৪; পড়ুন, ১ পিতর ৫:২.) আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ যে, যিহোবা মণ্ডলীতে এমন ভাইদের নিযুক্ত করেছেন!

২. কিছু প্রাচীনকে কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়?

প্রাচীনদের নিজেদের দায়িত্ব পালন করার সময়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যেমন, তাদের মণ্ডলীতে অনেক কাজ করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা টোনি নামে একজন প্রাচীন শিখেছিলেন, যখন কোনো কাজ নেওয়ার বিষয়টা আসে, তখন তাকে মনে রাখতে হবে, তিনি কতটা কাজ করতে পারবেন। তিনি বলেন: “যখন কোভিড-১৯ অতিমারি শুরু হয়েছিল, তখন সভা পরিচালনা করা এবং প্রচার কাজের ব্যবস্থা করার জন্য আমি আরও বেশি কাজ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমি যতই করতাম, তারপরও কিছু-না-কিছু কাজ চলেই আসত। এর ফলে, বাইবেল পড়ার, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার এবং প্রার্থনা করার জন্য আমার হাতে সময়ই থাকত না।” কোসোভোতে থাকা ইলির নামে একজন প্রাচীনকে এক অন্য ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি যখন এমন একটা এলাকায় ছিলেন, যেখানে যুদ্ধ চলছিল, তখন সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলা তার কাছে কঠিন বলে মনে হয়েছিল। তিনি বলেন: “শাখা অফিস আমাকে এমন এক এলাকায় থাকা ভাই-বোনদের সাহায্য করার জন্য বলেছিল, যেখানে অনেক বিপদ ছিল। আমি জানতাম, আমাকে সাহসের সঙ্গে কাজ করতে হবে, কিন্তু আমার খুব ভয় লাগছিল। আর সংগঠন আমাকে যে-সমস্ত নির্দেশনা দিয়েছিল, সেগুলো আমার সঠিক বলেও মনে হচ্ছিল না।” এশিয়াতে থাকা টিম নামে একজন মিশনারিকে প্রতিদিন অনেক কাজ করতে হত আর এই সমস্ত কিছু সামলানো তার খুবই কঠিন বলে মনে হচ্ছিল। তিনি বলেন: “কখনো কখনো আমি খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। মনে হত যেন এখন আর আমি ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারব না।” আজ যে-প্রাচীনেরা এইরকম সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, তারা কীভাবে সাহায্য পেতে পারেন?

৩. আমরা সবাই গিদিয়োনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিলে কী শিখতে পারব?

বর্তমানে প্রাচীনেরা গিদিয়োনের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন, যাকে অতীতে ঈশ্বর একজন বিচারক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। (ইব্রীয় ৬:১২; ১১:৩২) তিনি এক কঠিন সময়ে ঈশ্বরের লোকদের সুরক্ষা জোগানোর এবং একজন মেষপালকের মতো তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। (বিচার. ২:১৬; ১ বংশা. ১৭:৬) একইভাবে, বর্তমানে প্রাচীনদের এই কঠিন সময়ে ঈশ্বরের লোকদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। (প্রেরিত ২০:২৮; ২ তীম. ৩:১) গিদিয়োনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিলে প্রাচীনেরা শিখতে পারবেন, কীভাবে তারা বিনয়ী ও নম্র হতে পারেন এবং সবসময় ঈশ্বরের আজ্ঞা মেনে চলতে পারেন। আর যখন কোনো দায়িত্ব পালন করা তাদের জন্য কঠিন বলে মনে হয়, তখনও তারা কী করতে পারেন, যাতে তারা হাল ছেড়ে না দেন। যারা প্রাচীন নয়, তারাও যদি গিদিয়োনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দেয়, তা হলে তারা প্রাচীনদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য তাদের প্রতি আরও উপলব্ধি দেখাতে পারবে এবং তাদের পুরোপুরি সমর্থন করতে পারবে।—ইব্রীয় ১৩:১৭.

যখন বিনয়ী ও নম্র হওয়া কঠিন বলে মনে হয়

৪. কীভাবে জানা যায়, গিদিয়োন বিনয়ী ও নম্র ছিলেন?

গিদিয়োন বিনয়ী ও নম্র ছিলেন। b একবার যিহোবার একজন স্বর্গদূত গিদিয়োনকে বলেছিলেন, মিদিয়নীয়দের হাত থেকে ইজরায়েলীয়দের উদ্ধার করার জন্য যিহোবা তাকে বাছাই করেছেন। সেইসময় গিদিয়োন বলেছিলেন: “মনঃশি বংশের মধ্যে আমার পরিবার খুবই নগণ্য আর আমার বাবার পুরো পরিবারের মধ্যে আমি খুবই সাধারণ এক ব্যক্তি।” (বিচার. ৬:১৫, NW) গিদিয়োনের মনে হয়েছিল, তিনি এত বড়ো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। কিন্তু যিহোবা জানতেন, গিদিয়োন তা করতে পারবেন। আর যিহোবার সাহায্যে গিদিয়োন সেই দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পেরেছিলেন।

৫. একজন প্রাচীনের জন্য বিনয়ী ও নম্র হওয়া কখন কঠিন হতে পারে?

প্রাচীনেরা বিনয়ী ও নম্র হওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে থাকেন। (মীখা ৬:৮; প্রেরিত ২০:১৮, ১৯) তারা তাদের দক্ষতা কিংবা কাজ নিয়ে গর্ব করেন না। আর যদি তারা কোনো ভুল করে ফেলেন, তা হলে তারা এমনটা চিন্তা করেন না যে, তারা অযোগ্য বা কোনো কাজের নন। কিন্তু, প্রাচীনদের জন্য নম্র হওয়া এবং বিনয়ী মনোভাব দেখানো সবসময় সহজ হয় না। যেমন, একজন ভাই হয়তো অনেক দায়িত্ব নিতে রাজি হয়ে যান, কিন্তু পরে সেগুলো পালন করা তার কঠিন বলে মনে হয়। কিংবা তিনি হয়তো কোনো দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারেন না, তাই অন্যেরা তার ভুল ধরে। অথবা তিনি কোনো দায়িত্ব খুব ভালোভাবে পালন করতে পারেন এবং সেটার জন্য অন্যেরা তার প্রশংসা করে। এই ক্ষেত্রে, প্রাচীনেরা গিদিয়োনের কাছ থেকে কী শিখতে পারেন?

গিদিয়োনের মতো প্রাচীনেরা অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যান না, যেমন ট্রলি ব্যবহার করে সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৬. বিনয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রাচীনেরা গিদিয়োনের কাছ থেকে কী শিখতে পারেন? (ছবিও দেখুন।)

অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য নিন। যে-ব্যক্তি বিনয়ী হন, তিনি জানেন, তিনি কী করতে পারবেন এবং কী করতে পারবেন না। গিদিয়োনও জানতেন, তিনি একা সমস্ত কিছু করতে পারবেন না। তাই, তিনি অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাননি। (বিচার. ৬:২৭, ৩৫; ৭:২৪) প্রাচীনেরাও এই বিষয়টা বোঝেন যে, তারা একা সব কিছু সামলাতে পারবেন না। তাই, প্রয়োজন পড়লে তারা ইতস্তত না করে অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য নেন। ভাই টোনি, যার বিষয়ে আগে উল্লেখ করা হয়েছিল, তিনি বলেন: “আমি যেভাবে বড়ো হয়ে উঠেছিলাম, সেই কারণে প্রায়ই আমি যতটা করতে পারি, সেটার চেয়ে বেশি কাজ নিয়ে নিতাম। তাই, আমরা পারিবারিক উপাসনায় বিনয়ী মনোভাব দেখানোর বিষয়ে অধ্যয়ন করি। আমি আমার স্ত্রীকেও জিজ্ঞেস করি, আমার কোথায় উন্নতি করার প্রয়োজন রয়েছে। আমি jw.org ওয়েবসাইটে গিয়ে যিশুর মতো অন্যদের প্রশিক্ষণ দিন, দায়িত্ব দিন এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান করুন শিরোনামের ভিডিওটা দেখি।” এরপর, ভাই টোনি অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে শুরু করেন। এর ফলাফল কী হয়? ভাই বলেন: “এখন মণ্ডলীর সমস্ত কাজ আরও ভালোভাবে হয়ে যায় এবং যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক মজবুত করার জন্য আমার কাছে যথেষ্ট সময়ও থাকে।”

৭. কেউ যদি প্রাচীনদের তাদের দুর্বলতার বিষয়ে বলে, তা হলে কীভাবে তারা গিদিয়োনের মতো হতে পারেন? (যাকোব ৩:১৩)

যখন আপনার দুর্বলতার বিষয়ে বলা হয়, তখন সদয়ভাবে উত্তর দিন। কেউ যখন প্রাচীনদের তাদের দুর্বলতার বিষয়ে বলে, তখনও তাদের পক্ষে নম্র থাকা কঠিন হতে পারে। এই ক্ষেত্রেও প্রাচীনেরা গিদিয়োনের উদাহরণ মনে রাখতে পারেন। গিদিয়োন জানতেন, তার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। তাই, ইফ্রয়িমের পুরুষেরা যখন তার সঙ্গে ঝগড়া করতে এবং তার ভুলগুলো ধরতে শুরু করেছিল, তখন তিনি তাদের উপর রেগে যাননি বরং শান্ত ছিলেন। (বিচার. ৮:১-৩) তিনি মন দিয়ে তাদের কথা শুনেছিলেন এবং সদয়ভাবে উত্তর দিয়েছিলেন। এর ফলে, তাদের রাগ ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। গিদিয়োনের আচরণ থেকে বোঝা যায়, তিনি কতটা নম্র ছিলেন। প্রাচীনেরাও গিদিয়োনের মতো হতে পারেন। কেউ যখন তাদের দুর্বলতার বিষয়ে বলে, তখন তারা মন দিয়ে তা শুনতে পারেন এবং সদয়ভাবে উত্তর দিতে পারেন। (পড়ুন, যাকোব ৩:১৩.) এর ফলে, মণ্ডলীতে শান্তি বজায় থাকবে।

৮. প্রাচীনদের যখন প্রশংসা করা হয়, তখন তাদের কী করা উচিত? একটা উদাহরণ দিন।

যখন আপনার প্রশংসা করা হয়, তখন সমস্ত গৌরব যিহোবাকে দিন। গিদিয়োন যখন মিদিয়নীয়দের পরাজিত করেছিলেন, তখন ইজরায়েলীয়েরা তার প্রশংসা করেছিল। কিন্তু, তিনি সমস্ত কৃতিত্ব যিহোবাকে দিয়েছিলেন। (বিচার. ৮:২২, ২৩) আজ প্রাচীনেরা কীভাবে গিদিয়োনের মতো হতে পারেন? তারা যা-কিছু করেন, সেগুলোর সমস্ত কৃতিত্ব যিহোবাকে দিতে পারেন। (১ করি. ৪:৬, ৭) যেমন, একজন প্রাচীন যদি খুব ভালোভাবে শিক্ষা দেন এবং তাকে সেটার জন্য প্রশংসা করা হয়, তা হলে তিনি বলতে পারেন, তিনি যা-কিছু শিখিয়েছেন, সেগুলো ঈশ্বরের বাক্য থেকে ছিল কিংবা আমরা সবাই যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকেই শিখি। সময়ে সময়ে প্রাচীনদের চিন্তা করা উচিত, তারা যেভাবে শেখান, তাতে লোকদের সম্পূর্ণ মনোযোগ তাদের উপর চলে যায় না তো? তিমোথি নামে একজন ভাইয়ের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি যখন নতুন প্রাচীন হয়েছিলেন, তখন তার পাবলিক টক দিতে খুব ভালো লাগত। তিনি বলেন: “আমার টকের ভূমিকা বেশ বড়োসড়ো হত এবং আমি বড়ো বড়ো উদাহরণ দিতাম। এই কারণে লোকেরা প্রায়ই আমার প্রশংসা করত। কিন্তু দুঃখের বিষয় ছিল, তাদের মনোযোগ যিহোবা কিংবা বাইবেলের উপর খুব-একটা যেত না।” কিছুসময় পর ভাই তিমোথি বুঝতে পেরেছিলেন, তাকে তার শেখানোর পদ্ধতিতে কিছু রদবদল করতে হবে, যাতে লোকেরা তার উপর বেশি মনোযোগ না দেয়। (হিতো. ২৭:২১) এর ফলাফল কী হয়েছিল? তিনি বলেন: “এখন ভাই-বোনেরা এসে আমাকে বলে, ‘আপনার টক থেকে আমি শিখেছি, কীভাবে আমি কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি, কীভাবে সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি’ অথবা ‘কীভাবে আমি যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে পারি।’ কয়েক বছর আগে ভাই-বোনেরা আমাকে যেভাবে প্রশংসা করত, সেটার চেয়ে এখন তাদের কথা শুনে আমি আরও বেশি খুশি হই।”

আপনার যখন আজ্ঞা মেনে চলা এবং সাহসের সঙ্গে কাজ করা কঠিন বলে মনে হয়

গিদিয়োন যিহোবার আজ্ঞার বাধ্য হয়ে সৈন্যদের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছিলেন এবং তার সঙ্গে কেবল ৩০০ জন সৈন্যকে রেখেছিলেন, যারা সতর্ক ছিল (৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৯. কেন গিদিয়োনের জন্য যিহোবার আজ্ঞা মেনে চলা এবং সাহসের সঙ্গে কাজ করা কঠিন ছিল? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

গিদিয়োনকে যখন বিচারক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল, তখন তাকে যিহোবার আজ্ঞাগুলো মানতে হত এবং সাহসের সঙ্গে কাজ করতে হত। কিন্তু, তার জন্য এমনটা করা সহজ ছিল না। কেন? কারণ যিহোবা গিদিয়োনকে বলেছিলেন, তিনি যেন বালের সেই বেদি ভেঙে ফেলেন, যেটা তার বাবা তৈরি করেছিলেন। এটা অনেক বিপদজনক কাজ ছিল। (বিচার. ৬:২৫, ২৬) পরে, গিদিয়োন যখন সৈন্যদের একত্রিত করেছিলেন, তখন ঈশ্বর তাকে দু-বার বলেছিলেন, তিনি যেন সৈন্যদের সংখ্যা কমিয়ে দেন। (বিচার. ৭:২-৭) এরপর, যিহোবা গিদিয়োনকে বলেছিলেন যেন তিনি মাঝরাতে শত্রুদের শিবিরে গিয়ে আক্রমণ করেন।—বিচার. ৭:৯-১১.

১০. কখন প্রাচীনদের জন্য আজ্ঞা মেনে চলা কঠিন হতে পারে?

১০ প্রাচীনদের “বাধ্য হতে প্রস্তুত” থাকা উচিত। (যাকোব ৩:১৭) যে-প্রাচীনেরা বাধ্য হওয়ার বা আজ্ঞা মেনে চলার জন্য প্রস্তুত থাকেন, তারা বাইবেলে দেওয়া নীতি এবং সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলার ক্ষেত্রে দেরি করেন না। এভাবে, তারা অন্যদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন। তারপরও, অনেকসময় তাদের জন্য আজ্ঞা মেনে চলা কঠিন হতে পারে। যেমন হতে পারে, প্রাচীনদের অনেক নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং একের-পর-এক সেগুলোতে রদবদল হয়। এই ক্ষেত্রে, সেই সমস্ত নির্দেশনা মেনে চলা তাদের জন্য কঠিন হতে পারে। অথবা একজন প্রাচীনের হয়তো মনে হতে পারে, তাকে সংগঠনের কাছ থেকে যে-সমস্ত নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো মেনে চলা সত্যিই বুদ্ধিমানের কাজ হবে কি না। কিংবা একজন প্রাচীনকে হয়তো এমন কিছু করতে বলা হয়েছে, যেটার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করাও হতে পারে। এই পরিস্থিতিগুলোতে প্রাচীনেরা কীভাবে গিদিয়োনের মতো আজ্ঞা মেনে চলতে পারেন?

১১. যিহোবার আজ্ঞা পালন করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা প্রাচীনদের সাহায্য করতে পারে?

১১ নির্দেশনাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং তা পালন করুন। যিহোবা গিদিয়োনকে বলেছিলেন, কীভাবে তিনি তার বাবার তৈরি করা বেদি ভাঙবেন, কোথায় যিহোবার জন্য নতুন বেদি তৈরি করবেন এবং সেটার উপর কোন পশুর বলি উৎসর্গ করবেন। গিদিয়োনকে যে-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে তিনি কোনো প্রশ্ন করেননি। তাকে যা বলা হয়েছিল, তিনি ঠিক সেটাই করেছিলেন। আজ প্রাচীনদেরও যিহোবার সংগঠন থেকে আলাদা আলাদা উপায়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন চিঠির মাধ্যমে, ঘোষণার মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে। সেগুলোতে তাদের বলা হয়ে থাকে, তারা কীভাবে ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারেন, যাতে তারা সুরক্ষিত থাকে এবং যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। প্রাচীনেরা এই নির্দেশনাগুলো খুব ভালোভাবে পালন করেন। তাই, আমরা তাদের অনেক ভালোবাসি। তারা যে-কাজগুলো করে থাকেন, তা থেকে পুরো মণ্ডলী অনেক উপকৃত হয়।—গীত. ১১৯:১১২.

১২. সংগঠন যদি প্রাচীনদের অন্য কোনো উপায়ে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেয়, তা হলে কীভাবে তারা ইব্রীয় ১৩:১৭ পদের কথাগুলো মেনে চলতে পারেন?

১২ রদবদল করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। লক্ষ করুন, যিহোবা যখন গিদিয়োনকে তার বেশিরভাগ লোককে ঘরে পাঠিয়ে দিতে বলেছিলেন, তখন কী হয়েছিল। (বিচার. ৭:৮) তিনি হয়তো চিন্তা করেছিলেন, ‘এমনটা করার কি দরকার আছে? আমি যদি এত লোককে ঘরে পাঠিয়ে দিই, তা হলে কীভাবে আমরা যুদ্ধে জয়ী হব?’ তারপরও, গিদিয়োন যিহোবার কথা শুনেছিলেন। একইভাবে, আজ যদি সংগঠন প্রাচীনদের নির্দেশনা দেয় যে, এখন থেকে তারা কোনো কাজ অন্য উপায়ে করবেন, তখন তারা গিদিয়োনের মতো তা মেনে নেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:১৭.) উদাহরণ স্বরূপ, ২০১৪ সালে পরিচালকগোষ্ঠী সম্মেলন হল এবং কিংডম হল নির্মাণের বিষয়ে কিছু পরিবর্তন করেছিল। (২ করি. ৮:১২-১৪) আগে যখন কোনো কিংডম হল অথবা সম্মেলন হল নির্মাণ করা হত, তখন সংগঠন এরজন্য টাকা দিত আর পরে মণ্ডলীকে সেটা ফিরিয়ে দিতে হত। কিন্তু, এখন মণ্ডলীকে সেই টাকা আর ফিরিয়ে দিতে হয় না। এখন সংগঠন এইরকম বিল্ডিংগুলো নির্মাণ করার জন্য পৃথিবীব্যাপী মণ্ডলীগুলো থেকে পাওয়া দান ব্যবহার করে। এভাবে, কোনো মণ্ডলী বেশি দান দিতে না পারলেও সেই মণ্ডলীর জন্য কিংডম হল নির্মাণ করা সম্ভব। ভাই হোজে যখন এই পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন, তখন তার মনে হয়েছিল, এই উপায়টা হয়তো সফল হবে না। তিনি চিন্তা করেছিলেন, ‘এভাবে তো একটাও কিংডম হল নির্মাণ হবে না। আমাদের এখানে এই পদ্ধতি কাজে আসবে না।’ কিন্তু, তিনি নিজের চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেছিলেন। কীভাবে তিনি তা করেছিলেন? ভাই হোজে বলেন: “হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদে লেখা কথাগুলো আমার মনে পড়ে যায় এবং আমি বুঝতে পারি, যিহোবার উপর আমার নির্ভর করা উচিত। এই উপায়ে কাজ করার পর অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। এখন আমরা আগের চেয়ে আরও বেশি কিংডম হল নির্মাণ করতে পারছি আর এখন যেভাবে দান ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই কারণে কারো অতিরিক্ত বিষয়ের দ্বারা কারো অভাব পূরণ করা হচ্ছে।”

যেখানে আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেখানেও আমরা সাহসের সঙ্গে লোকদের কাছে ভালোভাবে সাক্ষ্য দিতে পারি (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. (ক) গিদিয়োন কোন বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন? (খ) আজ প্রাচীনেরা কীভাবে তার মতো হতে পারেন? (ছবিও দেখুন।)

১৩ যিহোবার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য সাহসের সঙ্গে কাজ করুন। গিদিয়োন যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা পালন করতে ভয় পাচ্ছিলেন আর এতে তার জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়ত। (বিচার. ৯:১৭) তারপরও, তিনি সেই নির্দেশনা মেনেছিলেন। যিহোবার কাছ থেকে উৎসাহ লাভ করার পর গিদিয়োন পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, যিহোবা তাঁর লোকদের সুরক্ষা জোগানোর জন্য অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন। আজ যে-প্রাচীনেরা এমন এলাকায় থাকেন, যেখানে আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তারাও গিদিয়োনের মতো সাহসের সঙ্গে কাজ করেন। তারা মণ্ডলীর সভাগুলো পরিচালনা করেন এবং প্রচার কাজে নেতৃত্ব নেন। যদিও এমনটা করার জন্য তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে, তাদের চাকরি চলে যেতে পারে আর এমনকী তাদের মারধরও করা হতে পারে। c এ ছাড়া, মহাক্লেশের সময়ে যে-নির্দেশনাগুলো দেওয়া হবে, সেগুলো পালন করার জন্যও প্রাচীনদের সাহসের সঙ্গে কাজ করতে হবে। কেন? কারণ কিছু নির্দেশনা এমন হতে পারে, যেগুলো পালন করলে তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। যেমন, তাদের হয়তো এই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে, কীভাবে বিচারের কড়া বার্তা ঘোষণা করা হবে, যেগুলো বড়ো বড়ো শিলার মতো আর সেইসঙ্গে মাগোগ দেশীয় গোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাইকে কী করতে হবে।—যিহি. ৩৮:১৮; প্রকা. ১৬:২১.

যখন দায়িত্ব পালন করা আপনার জন্য কঠিন বলে মনে হয়

১৪. গিদিয়োনের জন্য তার দায়িত্ব পালন করা আর কোন কারণে কঠিন ছিল?

১৪ গিদিয়োনকে বিচারক হিসেবে যে-দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেটা পালন করার জন্য তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হত। মিদিয়নীয়েরা যখন রাতের বেলায় যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করেছিল, তখন গিদিয়োন তাদের পিছু ধাওয়া করেছিলেন। তিনি যিষ্রিয়েল উপত্যকা থেকে শুরু করে জর্ডন নদী পর্যন্ত তাদের পিছু ধাওয়া করেছিলেন, যে-এলাকা হয়তো ঘন ঝোপঝাড়ে ঘেরা ছিল। (বিচার. ৭:২২) গিদিয়োন কি জর্ডন নদীর কাছে গিয়ে থেমে গিয়েছিলেন? না। গিদিয়োন এবং তার ৩০০ জন লোক খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, কিন্তু তারা হাল ছেড়ে দেয়নি। তারা জর্ডন নদী পার করেছিল এবং শত্রুদের পিছু ধাওয়া করে চলেছিল। অবশেষে, তারা মিদিয়নীয়দের ধরে ফেলেছিল এবং তাদের পরাজিত করেছিল।—বিচার. ৮:৪-১২.

১৫. কেন অনেকসময় প্রাচীনদের জন্য তাদের দায়িত্ব পালন করা কঠিন বলে মনে হয়?

১৫ কিছু প্রাচীনকে মণ্ডলীর অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয় আর সেইসঙ্গে তাদের পরিবারেরও যত্ন নিতে হয়। এই কারণে তারা হয়তো অনেকসময় খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং তাদের মনে হয়, তারা আর তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এইরকম সময়ে তারা গিদিয়োনের কাছ থেকে কী শিখতে পারেন?

যিহোবার সাহায্যে প্রাচীনেরা প্রয়োজনের সময়ে ভাই-বোনদের উৎসাহিত করতে পারেন (১৬-১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬-১৭. (ক) গিদিয়োন কোন কারণে তার দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলেন? (খ) প্রাচীনেরা কোন বিষয়ে আস্থা রাখতে পারেন? (যিশাইয় ৪০:২৮-৩১) (ছবিও দেখুন।)

১৬ আস্থা রাখুন, যিহোবা আপনাকে শক্তি দেবেন। গিদিয়োনের আস্থা ছিল, যিহোবা তাকে শক্তি দেবেন আর যিহোবা তার এই আস্থা ভাঙেননি। (বিচার. ৬:১৪, ৩৪) একবার, গিদিয়োন এবং তার লোকেরা মিদিয়নীয় রাজাদের পিছু ধাওয়া করছিল। তারা দৌড়াচ্ছিল এবং সেই রাজারা হয়তো উটে করে যাচ্ছিল। (বিচার. ৮:১২, ২১) তারপরও, ঈশ্বরের সাহায্যে তারা সেই রাজাদের পরাজিত করেছিল। একইভাবে, প্রাচীনেরাও যিহোবার উপর আস্থা রাখতে পারেন কারণ যিহোবা কখনো “ক্লান্ত হন না।” যখনই প্রাচীনেরা মনে করবেন, তারা তাদের দায়িত্ব আর পালন করতে পারছেন না, তখনই যিহোবা তাদের শক্তি দেবেন।—পড়ুন, যিশাইয় ৪০:২৮-৩১.

১৭ ভাই ম্যাথিউর উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যিনি হসপিটাল লিয়েইজন কমিটি-র (HLC) একজন সদস্য। কখনো কখনো তার পক্ষে তার দায়িত্ব পালন করা কঠিন বলে মনে হত। এই ক্ষেত্রে কী তাকে হাল ছেড়ে না দিতে সাহায্য করেছিল? তিনি বলেন: “আমি নিজে অনুভব করেছি, ফিলিপীয় ৪:১৩ পদের কথাগুলো কতটা সত্য। অনেকসময় আমি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি এবং মনে করি, আমি আর পারব না। তখন আমি হৃদয় উজাড় করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাকে শক্তি দেন এবং সাহস জোগান, যাতে আমি ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারি। সেইসময় আমি অনুভব করি, যিহোবা আমাকে তাঁর পবিত্র শক্তি দিচ্ছেন এবং হাল ছেড়ে না দিতে সাহায্য করছেন।” গিদিয়োনের মতো আজ প্রাচীনেরা ঈশ্বরের পালকে দেখাশোনা করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন। তাদের অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং মাঝে মাঝে বিভিন্ন সমস্যারও মুখোমুখি হতে হয়। এই ক্ষেত্রে তাদের মনে রাখতে হবে, তারা সমস্ত কিছু করতে পারবেন না। তবে, তারা এই বিষয়ে আস্থা রাখতে পারেন, যিহোবা তাদের বিনতি শুনবেন এবং শক্তি দেবেন, যাতে তারা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে হাল ছেড়ে না দেন।—গীত. ১১৬:১; ফিলি. ২:১৩.

১৮. আমরা যেমনটা এই প্রবন্ধে শিখলাম, কীভাবে প্রাচীনেরা গিদিয়োনের মতো হতে পারেন?

১৮ আজ প্রাচীনেরা গিদিয়োনের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন। যখন দায়িত্ব বা কাজ নেওয়ার বিষয়টা আসে কিংবা যখন প্রাচীনদের দুর্বলতার বিষয়ে বলা হয় অথবা যখন তাদের প্রশংসা করা হয়, তখন তাদের বিনয়ী মনোভাব দেখানো উচিত এবং নম্র হওয়া উচিত। তাদের সবসময় যিহোবার আজ্ঞা পালন করা উচিত এবং সাহসের সঙ্গে কাজ করা উচিত, বিশেষ করে এই শেষকালে, যখন বিধিব্যবস্থার শেষ খুবই কাছে। এ ছাড়া, তাদের যিহোবার উপর এই আস্থা রাখা উচিত, তাদের সামনে যেকোনো সমস্যাই আসুক না কেন, তিনি তাদের শক্তি দেবেন। প্রাচীনেরা আমাদের জন্য যে-কঠোর পরিশ্রম করেন, সেটার কারণে আমরা তাদের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। সত্যিই, এই ভাইয়েরা আমাদের “সমাদর” পাওয়ার যোগ্য।—ফিলি. ২:২৯.

গান ১৩ খ্রিস্ট, আমাদের আদর্শ

a গিদিয়োনকে যিহোবা নিযুক্ত করেছিলেন, যাতে তিনি তাঁর লোকদের দেখাশোনা করেন এবং তাদের সুরক্ষা জোগান। সেইসময় ইজরায়েল জাতি খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। গিদিয়োনের পক্ষে তার দায়িত্ব পালন করা সহজ ছিল না। তাকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে তার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করেছিলেন। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, আজ প্রাচীনেরা যখন সমস্যার মুখোমুখি হন, তখন তারা গিদিয়োনের কাছ থেকে কী শিখতে পারেন।

b বিনয়ী ও নম্র হওয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যে-লোকেরা বিনয়ী হয়, তারা নিজেদের খুব বড়ো বলে মনে করে না। আর তারা জানে, তারা কী করতে পারবে এবং কী করতে পারবে না। যে-লোকেরা নম্র হয়, তারা অন্যদের সমাদর করে এবং তাদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে। (ফিলি. ২:৩) সাধারণত যারা বিনয়ী হয়ে থাকে, তারা নম্রও হয়ে থাকে।

c ২০১৯ সালের জুলাই মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১০-১১ পৃষ্ঠা, ১০-১৩ অনুচ্ছেদে দেওয়া “নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যিহোবার উপাসনা করে চলুন” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।