অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৭
তাড়নার মুখোমুখি হওয়ার জন্য এখনই প্রস্তুত হোন
“যত লোক ভক্তিভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে জীবন ধারণ করিতে ইচ্ছা করে, সেই সকলের প্রতি তাড়না ঘটিবে।”—২ তীম. ৩:১২.
গান সংখ্যা ৫১ আমরা যিহোবাতে আসক্ত
সারাংশ *
১. কেন আমাদের তাড়না ভোগ করার জন্য প্রস্তুত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে?
মারা যাওয়ার আগের রাতে আমাদের প্রভু যিশু বলেছিলেন, যারা তাঁর শিষ্য হওয়া বেছে নেবে, তারা সবাই ঘৃণিত হবে। (যোহন ১৭:১৪) সেই সময় থেকে শুরু করে এমনকী আজও বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা সত্য উপাসনার বিরোধীদের দ্বারা তাড়িত হচ্ছে। (২ তীম. ৩:১২) এই বিধিব্যবস্থার শেষ যতবেশি এগিয়ে আসছে, আমরা আশা করতে পারি, আমাদের শত্রুরা ততবেশি আমাদের বিরোধিতা করবে।—মথি ২৪:৯.
২-৩. (ক) ভয় সম্বন্ধে আমাদের কী জানা উচিত? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে বিবেচনা করব?
২ কীভাবে আমরা তাড়না ভোগ করার জন্য এখনই প্রস্তুত হতে পারি? আমাদের প্রতি কী কী ঘটতে পারে, সেইসমস্ত বিষয় নিয়ে আমাদের কল্পনা করার প্রয়োজন নেই। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা ভয় ও উদ্বিগ্নতার দ্বারা কবলিত হয়ে যেতে পারি। আমরা প্রকৃত পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার আগেই যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিতে পারি। (হিতো. ১২:২৫; ১৭:২২) ভয় হল একটা শক্তিশালী হাতিয়ার, যেটা আমাদের “বিপক্ষ দিয়াবল” আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা করে। (১ পিতর ৫:৮, ৯) শক্তিশালী হওয়ার জন্য আমরা এখনই কী করতে পারি?
৩ এই প্রবন্ধে আমরা বিবেচনা করব, কীভাবে আমরা যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধনকে দৃঢ় করতে পারি এবং কেন এখনই তা করা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, আমরা আলোচনা করব যে, আমাদের সাহসকে বৃদ্ধি করার জন্য আমরা কী করতে পারি। আর শেষে, আমরা পরীক্ষা করে দেখব যে, কীভাবে আমরা বিরোধীদের কাছ থেকে আসা ঘৃণা সহ্য করতে পারি।
যেভাবে যিহোবার সঙ্গে আপনার বন্ধনকে দৃঢ় করা যায়
৪. ইব্রীয় ১৩:৫, ৬ পদ অনুযায়ী আমাদের কোন বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে হবে এবং কেন?
৪ যিহোবা যে আপনাকে ভালোবাসেন আর তাই তিনি যে কক্ষনো আপনাকে ত্যাগ করবেন না, সেই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হোন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৫, ৬.) অনেক বছর আগে প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় বলা হয়েছিল: “যে-ব্যক্তি ঈশ্বরকে ভালোভাবে জানেন, তিনি তাড়নার সময়ে যিহোবার প্রতি তার দৃঢ় আস্থা দেখাবেন।” এই কথাগুলো কতই-না সত্য! তাড়না সহ্য করার জন্য আমাদের অবশ্যই যিহোবাকে ভালোবাসতে হবে এবং তাঁর উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে আর সেইসঙ্গে আমাদের প্রতি যে যিহোবার স্নেহ রয়েছে, সেই বিষয়ে আমরা যেন কখনো সন্দেহ না করি।—মথি ২২:৩৬-৩৮; যাকোব ৫:১১.
৫. কী আপনাকে যিহোবার ভালোবাসা অনুভব করতে সাহায্য করবে?
৫ যিহোবার আরও নিকটবর্তী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিদিন বাইবেল পড়ুন। (যাকোব ৪:৮) পড়ার সময়ে যিহোবার কোমল গুণাবলির প্রতি মনোযোগ দিন। তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে দেখানো ‘দয়া [“ভালবাসা,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]’ ও স্নেহকে অনুভব করুন। (যাত্রা. ৩৪:৬) কোনো কোনো ব্যক্তির জন্য এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে, ঈশ্বর তাদের ভালোবাসেন কারণ তাদের প্রতি কেউ কখনো ভালোবাসা দেখায়নি। আপনি যদি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হন, তা হলে যিহোবা প্রতিদিন আপনার প্রতি যেভাবে স্নেহ বা করুণা ও দয়া দেখান, রোজ সেটার একটা তালিকা তৈরি করার চেষ্টা করুন। (গীত. ৭৮:৩৮, ৩৯; রোমীয় ৮:৩২) আপনি যখন নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিবেচনা করবেন এবং ঈশ্বরের বাক্য পড়ার পর সেটি নিয়ে ধ্যান করবেন, তখন আপনি তালিকায় এমন অনেক বিষয় লিখতে পারবেন, যেগুলো যিহোবা আপনার জন্য করেছেন। যিহোবা আপনার জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর প্রতি আপনার উপলব্ধিবোধ যতবেশি বৃদ্ধি পাবে, তাঁর সঙ্গে আপনার বন্ধন ততবেশি দৃঢ় হবে।—গীত. ১১৬:১, ২.
৬. গীতসংহিতা ৯৪:১৭-১৯ পদ অনুযায়ী হৃদয় উজাড় করে করা প্রার্থনা কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারে?
৬ নিয়মিত প্রার্থনা করুন। কল্পনা করুন, একজন প্রেমময় বাবা তার ছোটো ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছেন। সেই ছেলেটি এতটাই সুরক্ষিত বোধ করে যে, সে তার বাবার কাছে সেই দিনে তার প্রতি ঘটা ভালো ও মন্দ বিষয়গুলো নিয়ে খোলাখুলিভাবে কথা বলে। আপনি যদি প্রতিদিন হৃদয় উজাড় করে প্রার্থনা করার মাধ্যমে যিহোবার নিকটবর্তী হন, তা হলে আপনিও একই ধরনের বন্ধন উপভোগ করতে পারবেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৯৪:১৭-১৯.) প্রভু যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার সময়ে “আপন হৃদয় জলের ন্যায় ঢালিয়া” দিন আর আপনার প্রেমময় পিতাকে আপনার সমস্ত ভয় ও উদ্বিগ্নতা সম্বন্ধে বলুন। (বিলাপ ২:১৯) এর ফলে কী হবে? আপনি বাইবেলের কথা অনুযায়ী “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি,” তা অনুভব করবেন। (ফিলি. ৪:৬, ৭) আপনি এভাবে যতবেশি প্রার্থনা করবেন, ততবেশি যিহোবার নিকটবর্তী বোধ করবেন।—রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯.
৭. ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে করা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো যে পরিপূর্ণ হবে, সেই বিষয়ে কেন আপনাকে অবশ্যই দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে হবে?
৭ ঈশ্বরের রাজ্যের আশীর্বাদগুলো যে বাস্তবে পরিপূর্ণ হবে, সেই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হোন। (গণনা. ২৩:১৯) ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি আপনার বিশ্বাস যদি দুর্বল হয়, তা হলে শয়তান ও তার প্রতিনিধিরা সহজেই আপনাকে আতঙ্কিত করে ফেলবে। (হিতো. ২৪:১০; ইব্রীয় ২:১৫) কীভাবে আপনি এখনই ঈশ্বরের রাজ্যের উপর আপনার আস্থাকে বৃদ্ধি করতে পারেন? ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো নিয়ে আর সেইসঙ্গে সেই প্রতিজ্ঞাগুলো যে বাস্তবে পরিপূর্ণ হবে, কেন আপনি সেই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন, তা নিয়ে গবেষণা করার জন্য সময় করে নিন। কীভাবে এটা আপনাকে সাহায্য করবে? ভাই স্ট্যান্লি জোন্সের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যিনি তার বিশ্বাসের কারণে সাত বছর জেলে ছিলেন। * কী তাকে ধৈর্য ধরে বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছিল? তিনি বলেন: “আমার বিশ্বাস খুব দৃঢ় ছিল কারণ আমি ঈশ্বরের রাজ্য এবং এটা যা সম্পাদন করবে, সেই সম্বন্ধে জানতাম। আর আমি এই বিষয়ে কখনো সন্দেহ করিনি। তাই, কোনো ব্যক্তি আমাকে যিহোবার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যেতে পারত না।” ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি আপনার যদি দৃঢ়বিশ্বাস থাকে, তা হলে আপনি যিহোবার নিকটবর্তী হবেন এবং ভয়ের কাছে নতিস্বীকার করবেন না।—হিতো. ৩:২৫, ২৬.
৮. সভায় উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের মনোভাব কোন বিষয়ে এক উত্তম নির্দেশক হিসেবে কাজ করে? ব্যাখ্যা করুন।
৮ নিয়মিতভাবে খ্রিস্টীয় সভায় যোগ দিন। সভাগুলো আমাদের যিহোবার নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে। সভায় উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের মনোভাব এই বিষয়ে এক উত্তম নির্দেশক হিসেবে কাজ করে যে, ভবিষ্যতে তাড়নার মুখোমুখি হলে আমরা কতটা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারব। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) কেন আমরা তা বলতে পারি? আমরা যদি এখন ছোটোখাটো বাধার কারণে সভাগুলোতে যোগ না দিই, তা হলে ভবিষ্যতে যখন আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে মিলিত হতে হবে, তখন কী হবে? অন্যদিকে আমরা যদি সভায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে এখনই দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই, তা হলে বিরোধীরা যখন আমাদের একত্রিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেবে, তখন আমরা সেই বাধার কাছে নতিস্বীকার করব না। হ্যাঁ, এখনই আমাদের সভার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে হবে। আমরা যখন সভায় যেতে ভালোবাসব, তখন কোনো বিরোধিতা অথবা এমনকী কোনো সরকারি নিষেধাজ্ঞাও মানুষের চেয়ে বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করার ক্ষেত্রে আমাদের থামাতে পারবে না।—প্রেরিত ৫:২৯.
৯. কেন শাস্ত্রপদগুলো মুখস্থ করা হল তাড়নার জন্য প্রস্তুত হওয়ার একটা উত্তম উপায়?
৯ আপনার প্রিয় শাস্ত্রপদগুলো মুখস্থ করুন। (মথি ১৩:৫২) আপনার হয়তো এক নিখুঁত স্মৃতিশক্তি না-ও থাকতে পারে, কিন্তু যিহোবা তাঁর শক্তিশালী পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে আপনাকে সেই শাস্ত্রপদগুলো স্মরণ করার জন্য সাহায্য করতে পারেন। (যোহন ১৪:২৬) একজন ভাই, যিনি পূর্ব জার্মানিতে কারাগারে ছিলেন এবং নিঃসঙ্গ কারাবাসের শাস্তি ভোগ করেছিলেন, কী বলেছিলেন, তা লক্ষ করুন: “আমি খুবই আনন্দিত ছিলাম কারণ আমার শত শত শাস্ত্রপদ মুখস্থ ছিল! যদিও আমি একা ছিলাম কিন্তু আমি বাইবেলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে নিজের মনকে ব্যস্ত রেখেছিলাম।” সেই শাস্ত্রপদগুলো আমাদের ভাই-বোনদের যিহোবার নিকটবর্তী থাকতে এবং ধৈর্য ধরে বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছিল।
১০. কেন আমাদের গানগুলো মুখস্থ করা উচিত?
১০ যিহোবার প্রশংসার্থে করা গানগুলো মুখস্থ করুন এবং সেগুলো গান। পৌল ও সীল ফিলিপীতে কারাগারে যখন বন্দি ছিলেন, তখন তারা যিহোবার প্রশংসার্থে বিভিন্ন গান গেয়েছিলেন, যেগুলো তাদের স্মৃতিতে ছিল। (প্রেরিত ১৬:২৫) একইভাবে, প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নে আমাদের ভাই-বোনদের যখন সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল, তখন তারা কীভাবে নিজেদের শক্তিশালী করেছিল? বোন মারিয়া ফেডুন স্মরণ করে বলেন: “আমাদের গান বইয়ের যে-গানগুলো আমাদের মনে ছিল, সেগুলো সবই আমরা গাইতাম।” তিনি বলেন, সেই গানগুলো তাদের সবাইকে উৎসাহিত করেছিল এবং যিহোবার আরও নিকটবর্তী অনুভব করতে সাহায্য করেছিল। আপনি যখন যিহোবার প্রশংসার্থে আপনার প্রিয় গানগুলো করেন, তখন আপনি কি নিজেকে আরও বেশি শক্তিশালী বলে মনে করেন? যদি করেন, তা হলে এখনই সেই গানগুলো মুখস্থ করুন না কেন!—“ সাহস জোগাও আমায়” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
যেভাবে সাহস বৃদ্ধি করা যায়
১১-১২. (ক) প্রথম শমূয়েল ১৭:৩৭, ৪৫-৪৭ পদ অনুযায়ী কেন দায়ূদ সাহসী ছিলেন? (খ) দায়ূদের উদাহরণ থেকে আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করি?
১১ তাড়নার মুখোমুখি হওয়ার জন্য আপনার সাহসের প্রয়োজন রয়েছে। আপনি যদি মনে করেন যে, আপনার মধ্যে এই গুণটার অভাব রয়েছে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? মনে রাখবেন, প্রকৃত সাহস আপনার আকার, ক্ষমতা অথবা যোগ্যতার উপর নির্ভর করে না। অল্পবয়সি দায়ূদের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যিনি গলিয়াতের মুখোমুখি হয়েছিলেন। গলিয়াতের তুলনায় দায়ূদ আকারে ছোটো এবং দুর্বল ছিলেন আর তার কাছে উপযুক্ত অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। এমনকী তার কাছে একটা তলোয়ারও ছিল না। তারপরও, তিনি খুবই সাহসী ছিলেন। তিনি সেই উদ্ধত দৈত্যাকৃতি ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সাহসের সঙ্গে দৌড়ে গিয়েছিলেন।
১২ কেন দায়ূদ এতটা সাহসী ছিলেন? তার দৃঢ়বিশ্বাস ছিল যে, যিহোবা তার সঙ্গে সঙ্গে আছেন। (পড়ুন, ১ শমূয়েল ১৭:৩৭, ৪৫-৪৭.) তার তুলনায় গলিয়াৎ কতটা বড়ো, সেটার উপর দায়ূদ মনোযোগ দেননি। এর পরিবর্তে, যিহোবার তুলনায় গলিয়াৎ কতটা ক্ষুদ্র, সেটার উপর দায়ূদ মনোযোগ দিয়েছিলেন। এই বিবরণ থেকে আমরা কী শিখি? যিহোবা যে আমাদের সঙ্গে রয়েছেন, সেই বিষয়ে আমরা যদি আস্থা রাখি এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের তুলনায় আমাদের বিরোধীরা কতটা ক্ষুদ্র, সেই বিষয়ে যদি নিশ্চিত হই, তা হলে আমরাও সাহসী হতে পারব। (২ বংশা. ২০:১৫; গীত. ১৬:৮) তাড়না আসার আগে কীভাবে আমরা এখনই আমাদের সাহসকে বৃদ্ধি করতে পারি?
১৩. কীভাবে আমরা সাহস বৃদ্ধি করতে পারি? ব্যাখ্যা করুন।
১৩ আমরা জনসাধারণ্যে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে এখনই সাহস বৃদ্ধি করতে পারি। কেন? কারণ প্রচার কাজ আমাদের যিহোবার উপর আস্থা রাখতে এবং লোকভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। (হিতো. ২৯:২৫) ঠিক যেমন ব্যায়াম করলে আমাদের পেশিগুলো আরও বেশি শক্তিশালী হয়, একইভাবে ঘরে ঘরে, জনসাধারণ্যে, রীতিবহির্ভূতভাবে এবং ব্যাবসায়িক এলাকায় প্রচার করলে আমাদের সাহস আরও বেশি বৃদ্ধি পায়। আমরা যদি এখনই প্রচার করার জন্য সাহস বৃদ্ধি করি, তা হলে আমরা এমনকী নিষেধাজ্ঞার সময়েও প্রচার করার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত থাকব।—১ থিষল. ২:১, ২.
১৪-১৫. বোন ন্যান্সি ইউয়ান ও বোন ভ্যালেন্টিনা গারনফ্স্কায়ার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৪ আমরা দু-জন বিশ্বস্ত বোনের উদাহরণ থেকে অনেক * ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজ বন্ধ করার আদেশ সত্ত্বেও তিনি প্রচার করা বন্ধ করেননি। এর ফলে, তাকে চিনে প্রায় ২০ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছিল। যে-আধিকারিকরা তাকে জেরা করেছিলেন, তারা তার সম্বন্ধে বলেছিলেন, এ আমাদের দেশের “সবচেয়ে একগুঁয়ে ব্যক্তি।”
কিছু শিখতে পারি, যারা খুবই সাহসী ছিলেন। ন্যান্সি ইউয়ান নামে একজন বোনের উচ্চতা মাত্র পাঁচ ফুটের (১.৫ মিটার) মতো ছিল কিন্তু তিনি খুবই সাহসী ছিলেন।১৫ একইভাবে, বোন ভ্যালেন্টিনা গারনফ্স্কায়া প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নে তিন বার কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন এবং সবমিলিয়ে প্রায় ২১ বছর কারাগারে ছিলেন। * কেন? তিনি প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এতটাই দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন যে, আধিকারিকরা তাকে “একজন কুখ্যাত অপরাধী” বলে অভিহিত করেছিলেন। কী এই দু-জন বিশ্বস্ত নারীকে এতটা সাহসী করে তুলেছিল? তারা নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা তাদের সঙ্গে রয়েছেন।
১৬. প্রকৃত সাহসের চাবিকাঠি কী?
১৬ আমরা যেমন আলোচনা করলাম, সাহস বৃদ্ধি করার জন্য আমরা যেন নিজেদের ক্ষমতা ও যোগ্যতার উপর মনোযোগ না দিই। এর পরিবর্তে, আমরা যেন বিশ্বাস করি যে, যিহোবা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন এবং তিনি আমাদের হয়ে লড়াই করছেন। (দ্বিতীয়. ১:২৯, ৩০; সখ. ৪:৬) এটাই হল প্রকৃত সাহসের চাবিকাঠি।
যেভাবে লোকেদের কাছ থেকে আসা ঘৃণা সহ্য করা যায়
১৭-১৮. যোহন ১৫:১৮-২১ পদ অনুযায়ী যিশু আমাদের কোন সতর্কবাণী দিয়েছিলেন? ব্যাখ্যা করুন।
১৭ লোকেরা যখন আমাদের সম্মান করে, তখন আমাদের ভালো লাগে কিন্তু লোকেরা যদি আমাদের পছন্দ না করে, তা হলে আমরা যেন নিজেদের মূল্যহীন বলে মনে না করি। যিশু বলেছিলেন: “ধন্য,” বা সুখী “তোমরা, যখন লোকে মনুষ্যপুত্ত্রের নিমিত্ত তোমাদিগকে দ্বেষ” বা ঘৃণা “করে, আর যখন তোমাদিগকে পৃথক্ করিয়া দেয়, ও নিন্দা করে, এবং তোমাদের নাম মন্দ বলিয়া দূর করিয়া দেয়।” (লূক ৬:২২) যিশু কী বোঝাতে চেয়েছিলেন?
১৮ যিশু এটা বলছিলেন না যে, খ্রিস্টানরা ঘৃণার শিকার হওয়াকে উপভোগ করবে। এর পরিবর্তে, আমাদের প্রতি কী ঘটতে চলেছে, সেই বিষয়ে তিনি আমাদের সতর্ক করছিলেন। আমরা এই জগতের অংশ নই। আমরা যিশুর শিক্ষা অনুযায়ী জীবনযাপন করি এবং তিনি যে-বার্তা প্রচার করেছিলেন, আমরাও সেই বার্তা প্রচার করি। ফল স্বরূপ, যোহন ১৫:১৮-২১.) আমরা যিহোবাকে খুশি করতে চাই। আমরা আমাদের পিতাকে ভালোবাসি বলে লোকেরা যদি আমাদের ঘৃণা করে, তা হলে এটা তাদের সমস্যা।
জগৎ আমাদের দ্বেষ বা ঘৃণা করে। (পড়ুন,১৯. কীভাবে আমরা প্রেরিতদের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি?
১৯ আমরা যেন কখনো অন্যদের কথা অথবা কাজের কারণে একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে লজ্জিত বোধ না করি। (মীখা ৪:৫) বিরোধীরা যিশুকে হত্যা করার অল্পসময় পর যিরূশালেমে প্রেরিতরা যে-উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন, সেটা বিবেচনা করার মাধ্যমে আমরা লোকভয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করা শিখতে পারি। তারা জানতেন যে, যিহুদি ধর্মীয় নেতারা তাদের কতটা ঘৃণা করে। (প্রেরিত ৫:১৭, ১৮, ২৭, ২৮) তা সত্ত্বেও, তারা প্রতিদিন ধর্মধামে যেতেন এবং জনসাধারণ্যে যিশুর শিষ্য বলে নিজেদের পরিচয় দিতেন। (প্রেরিত ৫:৪২) তারা ভয়ের কাছে নতিস্বীকার করেননি। একইভাবে, আমরাও আমাদের কাজের জায়গায়, স্কুলে অথবা প্রতিবেশীদের কাছে নিয়মিতভাবে ও জনসাধারণ্যে যিহোবার সাক্ষি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে থাকা লোকভয় কাটিয়ে উঠতে পারি।—প্রেরিত ৪:২৯; রোমীয় ১:১৬.
২০. কেন প্রেরিতরা ঘৃণিত হওয়া সত্ত্বেও আনন্দিত ছিলেন?
২০ কেন প্রেরিতরা আনন্দিত ছিলেন? তারা জানতেন, কেন তাদের ঘৃণার শিকার হতে হয়েছিল এবং তারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়াকে সম্মানের এক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। (লূক ৬:২৩; প্রেরিত ৫:৪১) পরবর্তী সময়ে প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “যদিও ধার্ম্মিকতার নিমিত্ত দুঃখভোগ কর, তবু তোমরা ধন্য” বা সুখী। (১ পিতর ২:১৯-২১; ৩:১৪) আমরা যখন বুঝি যে, সঠিক কাজ করার কারণে আমরা ঘৃণিত হচ্ছি, তখন আমরা কখনো লোকেদের ঘৃণার কারণে যিহোবার সেবা করা বন্ধ করব না।
আপনি প্রস্তুতি নেওয়ার মাধ্যমে উপকৃত হবেন
২১-২২. (ক) তাড়না ভোগ করার উদ্দেশে প্রস্তুত হওয়ার জন্য আপনি কী করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ? (খ) পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
২১ আমরা জানি না, কখন আমাদের উপর তাড়নার ঢেউ আসবে অথবা কখন সরকারি কর্তৃপক্ষরা হয়তো আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবে। তবে, আমরা এটা জানি, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করার, নিজেদের সাহসকে বৃদ্ধি করার এবং লোকেদের কাছ থেকে আসা ঘৃণা সহ্য করতে শেখার মাধ্যমে আমরা এখনই প্রস্তুত হতে পারি।
২২ কিন্তু কী হবে, যদি আমাদের উপাসনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়? পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কিছু নীতি নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো আমাদের যিহোবার সেবা চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে আর তা এমনকী নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও।
গান সংখ্যা ৫৪ আমাদের বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন
^ অনু. 5 আমরা ঘৃণিত হতে চাই না। কিন্তু, আজ নয়তো কাল আমাদের সবাইকে তাড়না ভোগ করতে হবে। এই প্রবন্ধ আমাদের সাহসের সঙ্গে তাড়নার মুখোমুখি হতে সাহায্য করবে।
^ অনু. 7 ১৯৬৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ৭৫৬-৭৬৭ পৃষ্ঠা দেখুন।
^ অনু. 14 ১৯৭৯ সালের ১৫ জুলাই প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ৪-৭ পৃষ্ঠা দেখুন।