সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৮

আপনার কাছে যে সত্য রয়েছে, এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হোন

আপনার কাছে যে সত্য রয়েছে, এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হোন

“তুমি যাহা যাহা শিখিয়াছ ও যাহার যাহার প্রমাণ জ্ঞাত হইয়াছ, তাহাতেই স্থির থাক।”—২ তীম. ৩:১৪.

গান সংখ্যা ৩৪ নামের যোগ্যরূপে চলা

সারাংশ *

১. “সত্য” এই অভিব্যক্তির অর্থ কী?

আপনি কীভাবে সত্য খুঁজে পেয়েছেন? আপনি কি সত্যে বড়ো হয়ে উঠেছেন? আপনি কত দিন ধরে সত্যে রয়েছেন? এই প্রশ্নগুলো হয়তো আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল অথবা আপনি অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করেছিলেন? “সত্য” এই অভিব্যক্তির অর্থ কী? সাধারণত, আমরা এই অভিব্যক্তিকে আমাদের বিশ্বাস, আমাদের উপাসনা করার পদ্ধতি এবং আমাদের জীবনধারা সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহার করি। যে-ব্যক্তিরা “সত্যে রয়েছে,” তারা বাইবেলের শিক্ষা সম্বন্ধে জানে এবং এটির নীতির দ্বারা জীবনযাপন করে। এর ফলে, তারা মিথ্যা ধর্মের শিক্ষায় আর বিশ্বাস করে না এবং শয়তানের জগতে থাকা সত্ত্বেও যতটা সম্ভব জীবন উপভোগ করে।—যোহন ৮:৩২.

২. যোহন ১৩:৩৪, ৩৫ পদ অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে কী হয়তো একজন ব্যক্তিকে সত্যের দিকে আকৃষ্ট করে?

প্রাথমিকভাবে কী আপনাকে সত্যের দিকে আকৃষ্ট করে ছিল? আপনি হয়তো লোকেদের উত্তম আচরণের দ্বারা আকৃষ্ট হয়েছিলেন। (১ পিতর ২:১২) অথবা তারা যে-ভালোবাসা দেখিয়েছিল, সেটার দ্বারা আপনি হয়তো আকৃষ্ট হয়েছেন। প্রথম বার সভায় আসা ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে এই ভালোবাসা লক্ষ করেছে এবং সেই সভায় বলা কথাগুলোর চেয়ে এই ভালোবাসাকেই স্মরণে রেখেছে। আর এতে আমরা অবাক হই না কারণ যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, তাঁর শিষ্যরা পরস্পরের প্রতি যে-প্রেম দেখাবে, সেটাই প্রমাণ করবে, তারা তাঁর শিষ্য। (পড়ুন, যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.) কিন্তু, এক দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রাখার জন্য আমাদের আরও কিছু করতে হবে।

৩. আমরা যদি শুধুমাত্র আমাদের ভাই-বোনদের দ্বারা দেখানো প্রেমের উপর ভিত্তি করে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলি, তা হলে কী হতে পারে?

আমরা যেন শুধুমাত্র আমাদের ভাই-বোনদের দ্বারা দেখানো প্রমের উপর ভিত্তি করে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস গড়ে না তুলি। কেন? ধরুন, একজন সহবিশ্বাসী কোনো গুরুতর পাপ করেছেন আর তিনি এমনকী একজন প্রাচীন অথবা অগ্রগামী হতে পারেন। অথবা আপনি যদি কোনো ভাই কিংবা বোনের কাছ থেকে দুঃখ পেয়ে থাকেন, তা হলে? অথবা হতে পারে কোনো ব্যক্তি ধর্মভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছেন কারণ তিনি দাবি করেন যে, আমাদের কাছে সত্য নেই। যদি এমনটা ঘটে, তা হলে আপনি কি বিঘ্ন পাবেন এবং যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেবেন? শিক্ষণীয় বিষয়টা হল: ঈশ্বরের সঙ্গে এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে না তুলে বরং অন্য ব্যক্তিরা ঈশ্বরের সেবায় যা-কিছু করে, কেবল সেগুলো দেখে যদি আপনি ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করেন, তা হলে আপনার এক দৃঢ়বিশ্বাস গড়ে উঠবে না। যিহোবা এবং তাঁর লোকেদের বিষয়ে আপনি যেমন অনুভব করেন, সেটা আপনাকে কিছুটা মাত্রায় বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করতে পারে। তবে, গুরুত্বের সঙ্গে বাইবেল অধ্যায়ন করা এবং যা শিখছেন, তা বোঝা আর সেইসঙ্গে যিহোবা সম্বন্ধে শেখা সত্যগুলোর বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়ার জন্য গবেষণা করা খুবই জরুরি। আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে এটা পরীক্ষা করে জানতে হবে, বাইবেলে যিহোবা সম্বন্ধে সত্য রয়েছে।—রোমীয় ১২:২.

৪. মথি ১৩:৩-৬, ২০, ২১ পদ অনুযায়ী কীভাবে কোনো কোনো ব্যক্তি বিশ্বাসের পরীক্ষার সময়ে প্রভাবিত হয়েছে?

যিশু বলেছিলেন, কোনো কোনো ব্যক্তি “আনন্দপূর্ব্বক” সত্য গ্রহণ করবে কিন্তু পরীক্ষার সময়ে তাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যাবে। (পড়ুন, মথি ১৩:৩-৬, ২০, ২১.) হতে পারে, তারা এটা উপলব্ধি করেনি যে, যারা যিশুকে অনুকরণ করবে, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। (মথি ১৬:২৪) অথবা তারা হয়তো ভেবেছিল যে, খ্রিস্টান হওয়ার মাধ্যমে তাদের জীবনের সমস্ত সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কিন্তু, শয়তানের এই জগতে সবসময়ই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে পারে আর এই কারণে কিছু সময়ে জন্য আমাদের আনন্দ কমে যেতে পারে।—গীত. ৬:৬; উপ. ৯:১১.

৫. কী দেখায় যে, আমাদের বেশিরভাগ ভাই-বোন এই বিষয়ে নিশ্চিত, তাদের কাছে সত্য রয়েছে?

আমাদের বেশিরভাগ ভাই-বোন এই বিষয়ে নিশ্চিত যে, তাদের কাছে সত্য রয়েছে এবং তারা তাদের কাজের মাধ্যমে এর প্রমাণ দিয়েছে। কীভাবে? কোনো সহবিশ্বাসী এমনকী যদি তাদের দুঃখ দেয় অথবা কোনো অখ্রিস্টীয় কাজে লিপ্ত হয়, তারপরও তাদের দৃঢ়বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যায় না। (গীত. ১১৯:১৬৫) প্রতিটা পরীক্ষা তাদের বিশ্বাসকে দুর্বল নয় বরং আরও দৃঢ় করে তোলে। (যাকোব ১:২-৪) কীভাবে আপনি এইরকম এক দৃঢ়বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারেন?

“ঈশ্বরের তত্ত্বজ্ঞান অর্জন করুন”

৬. প্রথম শতাব্দীর শিষ্যরা কীসের উপর ভিত্তি করে তাদের বিশ্বাস গড়ে তুলেছিল?

প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা শাস্ত্রীয় জ্ঞান এবং যিশু খ্রিস্টের শিক্ষা অর্থাৎ ‘সুসমাচারের সত্যের’ উপর ভিত্তি করে তাদের বিশ্বাস গড়ে তুলেছিল। (গালা. ২:৫) এই সত্যের অন্তর্ভুক্ত হল সেইসমস্ত বিষয়, যেগুলো আমরা খ্রিস্টান হিসেবে বিশ্বাস করি, যার মধ্যে রয়েছে যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান এবং তাঁর পুনরুত্থান সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য। প্রেরিত পৌল এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে, এই শিক্ষাগুলো সত্য। কেন? কারণ তিনি এই বিষয়টা প্রমাণ করার জন্য শাস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন যে, “খ্রীষ্টের মৃত্যুভোগ ও মৃতগণের মধ্য হইতে পুনরুত্থান করা আবশ্যক ছিল।” (প্রেরিত ১৭:২, ৩) প্রথম শতাব্দীর শিষ্যরা এই শিক্ষাগুলো গ্রহণ করেছিল এবং ঈশ্বরের বাক্য বোঝার জন্য পবিত্র আত্মার সাহায্যের উপর নির্ভর করেছিল। এই শিক্ষাগুলো যে শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, তা নিশ্চিত করার জন্য তারা ব্যক্তিগতভাবে সেগুলো পরীক্ষা করে দেখেছিল। (প্রেরিত ১৭:১১, ১২; ইব্রীয় ৫:১৪) তারা শুধুমাত্র তাদের আবেগঅনুভূতির উপর ভিত্তি করেই বিশ্বাস গড়ে তোলেনি এবং তারা শুধুমাত্র সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করতে ভালোবাসে বলেই যিহোবার সেবা করেনি। এর পরিবর্তে, তাদের বিশ্বাস “ঈশ্বরের তত্ত্বজ্ঞানের” বা সঠিক জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল।—কল. ১:৯, ১০.

৭. বাইবেলের সত্যগুলোর প্রতি আমাদের বিশ্বাস আমাদের কি করতে সাহায্য করবে?

ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া সত্যগুলো কখনো পরিবর্তিত হয় না। (গীত. ১১৯:১৬০) উদাহরণ স্বরূপ, কোনো সহবিশ্বাসী যদি আমাদের দুঃখ দেয় অথবা কোনো গুরুতর পাপ করে, তারপরও এই সত্যগুলো পরিবর্তিত হয় না। আর আমরা যখন সমস্যার মুখোমুখি হই, তখনও এই সত্যগুলো পরিবর্তিত হয় না। তাই, আমাদের বাইবেলের শিক্ষাগুলোর সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিচিত হতে হবে এবং এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে যে, সেগুলো সত্য। বাইবেলের সত্যগুলোর উপর আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস আমাদের পরীক্ষার সময় স্থির থাকতে সাহায্য করবে, ঠিক যেমন প্রচণ্ড ঝড়ের সময় একটা নোঙর একটা জাহাজকে স্থির থাকতে সাহায্য করে। আপনার কাছে যে সত্য রয়েছে, সেই বিষয়ে কীভাবে আপনি আরও বেশি দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে উঠতে পারেন?

প্রমাণ জ্ঞাত হোন

৮. দ্বিতীয় তীমথিয় ৩:১৪, ১৫ পদে যেমন দেখানো হয়েছে, তীমথিয় কীভাবে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, তার কাছে সত্য রয়েছে?

তীমথিয় এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে, তার কাছে সত্য রয়েছে। কীভাবে তিনি এই উপসংহারে পৌঁছেছিলেন? (পড়ুন, ২ তীমথিয় ৩:১৪, ১৫.) প্রথমে, তার মা ও দিদিমা তাকে “পবিত্র শাস্ত্রকলাপ” সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তবে কোনো সন্দেহ নেই, তিনি নিজেও পবিত্র শাস্ত্র সম্বন্ধে অধ্যয়ন করার জন্য সময় ও শক্তি ব্যয় করেছিলেন। ফল স্বরূপ, পবিত্র শাস্ত্রের সেই শিক্ষাগুলো যে সত্য, সেই বিষয়ে তিনি “প্রমাণ জ্ঞাত” হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তীমথিয়, তার মা ও দিদিমা খ্রিস্টের শিক্ষা সম্বন্ধে শিখেছিলেন। কোনো সন্দেহ নেই, তীমথিয় যিশুর অনুসারীদের দেখানো প্রেমের দ্বারা অভিভূত হয়েছিলেন এবং মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে মেলামেশা করা এবং তাদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে আকুল আকাঙ্ক্ষী ছিলেন। (ফিলি. ২:১৯, ২০) তবে, তিনি লোকেদের প্রতি ভালোবাসার উপর ভিত্তি করে নয় বরং বাইবেলের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে তার বিশ্বাস গড়ে তুলেছিলেন। এই শিক্ষাগুলো যে সত্য, সেই বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন এবং এই শিক্ষাগুলো তাকে যিহোবার বন্ধু হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। বাইবেল পড়ার মাধ্যমে আপনি যিহোবা সম্বন্ধে যা শিখেছেন, তা নিয়ে আপনাকেও সঠিকভাবে যুক্তি করতে হবে।

৯. কোন তিনটে মৌলিক সত্য আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে?

শুরুতে আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে বাইবেলের তিনটে মৌলিক সত্য নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। প্রথমত, আপনাকে এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে যে, যিহোবা ঈশ্বরই হলেন সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা। (যাত্রা. ৩:১৪, ১৫; ইব্রীয় ৩:৪; প্রকা. ৪:১১) দ্বিতীয়ত, বাইবেলে যে মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বার্তা রয়েছে, আপনাকে অবশ্যই তা ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। (২ তীম. ৩:১৬, ১৭) আর তৃতীয়ত, আপনাকে এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে যে, যিহোবার এক সুসংগঠিত দল রয়েছে, যে-দলের লোকেরা খ্রিস্টের অধীনে যিহোবার উপাসনা করে এবং তারা যিহোবার সাক্ষি নামে পরিচিত। (যিশা. ৪৩:১০-১২; যোহন ১৪:৬; প্রেরিত ১৫:১৪) এই মৌলিক সত্যগুলো ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষা করে দেখার জন্য আপনাকে যে বাইবেলের সমস্ত সত্য সম্বন্ধে জানতে হবে, এমন নয়। আপনার কাছে যে সত্য রয়েছে, সেই বিষয়ে আরও বেশি দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়ার জন্য আপনার “চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা [“যুক্তি করার ক্ষমতা,” NW]” ব্যবহার করা আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত।—রোমীয় ১২:১.

অন্যদের দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকুন

১০. সত্য জানার পাশাপাশি আমাদের আর কী করতে হবে?

১০ ঈশ্বর, বাইবেল ও ঈশ্বরের লোকেদের সম্বন্ধে মৌলিক সত্যগুলোর বিষয়ে এক বার নিশ্চিত হয়ে যাওয়া পর, অন্যদের কাছে সেগুলো প্রমাণ করার জন্য আপনাকে শাস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। কেন? কারণ আমরা যে-সত্যগুলো শিখেছি, খ্রিস্টের শিষ্য হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হল যেন আমরা আগ্রহী ব্যক্তিদের সেগুলো শেখাই। * (১ তীম. ৪:১৬) আর আমরা যখন অন্যদের বাইবেলের সত্যগুলো সম্বন্ধে প্রত্যয়ী হওয়ার জন্য সাহায্য করি, তখন আমরা নিজেরা সত্যের প্রতি আরও বেশি দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে উঠি।

১১. একজন শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত পৌল কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

১১ প্রেরিত পৌল লোকেদের শিক্ষা দেওয়ার সময়ে, ‘মোশির ব্যবস্থা ও ভাববাদিগণের গ্রন্থ লইয়া যীশুর বিষয়ে তাঁহাদিগকে বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছিলেন।’ (প্রেরিত ২৮:২৩) অন্যদের সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার সময়ে কীভাবে আমরা পৌলকে অনুকরণ করতে পারি? বাইবেল কী শিক্ষা দেয়, তা বলার চেয়ে আমরা যেন আরও বেশি কিছু করি। আমরা যেন আমাদের বাইবেল ছাত্রদের শাস্ত্র নিয়ে যুক্তি করতে সাহায্য করি, যাতে তারা যিহোবার নিকটবর্তী হতে পারে। আমরা চাই যেন তারা সত্য গ্রহণ করে। তবে, আমরা এটা চাই না যেন তারা আমাদের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য সত্য গ্রহণ করে। এর পরিবর্তে, আমরা চাই যেন তারা ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষা করে আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর সম্বন্ধে যা শিখেছে, সেটার উপর ভিত্তি করে সত্য গ্রহণ করে।

বাবা-মায়েরা, আপনাদের সন্তানদের ‘ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল’ সম্বন্ধে শেখানোর দ্বারা তাদের বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করুন (১২-১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১২-১৩. কীভাবে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সত্যে টিকে থাকার জন্য সাহায্য করতে পারেন?

১২ বাবা-মায়েরা, কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনারা চান যেন আপনাদের সন্তানরা সত্যে টিকে থাকে। আপনারা হয়তো মনে করতে পারেন যে, মণ্ডলীতে যদি আপনাদের সন্তানদের ভালো বন্ধু থাকে, তা হলে তারা আধ্যাত্মিকভাবে আরও উন্নতি করবে। তবে, আপনারা যদি চান, আপনাদের সন্তানরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হোক যে, তাদের কাছে সত্য রয়েছে, তা হলে আপনাদের সন্তানদের উত্তম বন্ধুর চেয়ে আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন হবে। ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে এবং বাইবেলের শিক্ষাগুলো যে সত্য, সেই বিষয়ে তাদের দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে হবে।

১৩ বাবা-মায়েরা যদি তাদের সন্তানদের ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য শেখাতে চান, তা হলে বাবা-মায়েদের অবশ্যই বাইবেলের উত্তম ছাত্র হতে হবে। তারা যা শেখেন, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করার জন্য তাদের অবশ্যই সময় করে নিতে হবে। এভাবে তারা তাদের সন্তানদেরও একই বিষয় করার জন্য শেখাতে পারবেন। বাইবেল ছাত্রদের মতোই তাদের সন্তানদেরও এটা শেখাতে হবে যে, কীভাবে বাইবেল অধ্যয়নের হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করা যায়। এমনটা করার মাধ্যমে তারা তাদের সন্তানদের যিহোবার প্রতি এবং তিনি আধ্যাত্মিক খাদ্য বিতরণ করার জন্য যে-মাধ্যম ব্যবহার করছেন অর্থাৎ ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ প্রতি উপলব্ধি গড়ে তুলতে সাহায্য করবেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) বাবা-মায়েরা, আপনাদের সন্তানদের বাইবেলের কেবল মৌলিক শিক্ষাগুলো শেখানোর চেয়ে আরও বেশি কিছু করুন। তাদের বয়স ও ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে, ‘ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল’ সম্বন্ধে শেখানোর দ্বারা তাদের বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করুন।—১ করি. ২:১০.

বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করুন

১৪. কেন আমাদের বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করা উচিত? (এ ছাড়া, “ আপনি কি এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো ব্যাখ্যা করতে পারেন?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)

১৪ বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো হল ঈশ্বরের বাক্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ আর এটা আমাদের যিহোবার প্রতি এক দৃঢ়বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। কোন ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো আপনার বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে? আপনি হয়তো ‘শেষ কাল’ সম্বন্ধে করা ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করতে পারেন। (২ তীম. ৩:১-৫; মথি ২৪:৩, ৭) কিন্তু, এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো ছাড়া অন্যান্য কোন ভবিষ্যদ্‌বাণী আপনাকে আরও দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারে, যেগুলো ইতিমধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে? উদাহরণ স্বরূপ, দানিয়েল ২ অধ্যায় অথবা দানিয়েল ১১ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো কীভাবে অতীতে পরিপূর্ণ হয়েছে এবং বর্তমানে পরিপূর্ণ হচ্ছে, তা কি আপনি ব্যাখ্যা করতে পারেন? * বাইবেলের উপর ভিত্তি করে যখন আপনার বিশ্বাস গড়ে ওঠে, তখন আপনি বিশ্বাসে অটল হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানিতে বসবাসরত আমাদের ভাইয়েরা যে-চরম তাড়নার শিকার হয়েছিল, সেই বিষয়টা নিয়ে বিবেচনা করুন। যদিও শেষকাল সম্বন্ধে বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোর অর্থ তারা সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারেনি, তারপরও ঈশ্বরের বাক্যের উপর তাদের এক দৃঢ়বিশ্বাস ছিল।

বাইবেল ও এটির ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করা আমাদের পরীক্ষার সময়ে আস্থা বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে (১৫-১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৫-১৭. বাইবেল অধ্যয়ন করার ফলে কীভাবে আমাদের ভাই-বোনেরা নাতসিদের তাড়না সত্ত্বেও বিশ্বাসে দৃঢ় থাকতে পেরেছিল?

১৫ নাতসি জার্মানির শাসনের সময়ে হাজার হাজার ভাই-বোনকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল। হিটলার ও হাইন্‌রিক হিমলার নামে একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক যিহোবার সাক্ষিদের ঘৃণা করতেন। একজন বোনের কথা অনুযায়ী হিমলার একটা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে আমাদের একদল বোনকে বলেছিলেন: “তোদের যিহোবা স্বর্গে শাসন করে কিন্তু এই পৃথিবীতে আমরা শাসন করি! দেখি, কারা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে, তোরা না আমরা!” কী যিহোবার লোকেদের বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছিল?

১৬ সেই বাইবেল ছাত্ররা জানত, ঈশ্বরের রাজ্য ১৯১৪ সাল থেকে শাসন করতে শুরু করেছে। চরম বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়ার কারণে তারা অবাক হয়ে যায়নি। তবে, যিহোবার লোকেরা এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিল, কোনো মানবসরকারই ঈশ্বরকে তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করা থেকে বিরত করতে পারবে না। হিটলার সত্য উপাসনাকে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলতে পারেননি অথবা ঈশ্বরের রাজ্যের চেয়ে শক্তিশালী সরকার স্থাপন করতে পারেননি। আমাদের ভাইয়েরা এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিল, কোনো-না-কোনোভাবে হিটলারের শাসন শেষ হয়ে যাবে।

১৭ সেই ভাই-বোনেরা যেটা বিশ্বাস করেছিল, সেটাই বাস্তবে পরিপূর্ণ হয়েছিল। এর অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই নাতসি সরকারের পতন হয়। হাইন্‌রিক হিমলারকে পালিয়ে যেতে হয়েছিল, যদিও তিনি এক সময়ে বলেছিলেন, “এই পৃথিবীতে আমরা শাসন করি।” তিনি যখন পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ভাই লিউপকার সঙ্গে তার দেখা হয়। তিনি জানতেন, ভাই লিউপকা একজন যিহোবার সাক্ষি এবং বিশ্বাসের কারণে কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। অত্যন্ত হতাশ হয়ে হিমলার ভাই লিউপকাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তা হলে, বাইবেল ছাত্র, এখন কী হবে?” ভাই লিউপকা উত্তরে তাকে বলেছিলেন, যিহোবার সাক্ষিরা শুরু থেকেই জানত, নাতসি শাসনের পতন হবে এবং সাক্ষিরা মুক্তি লাভ করবে। হিমলার এক সময়ে যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে অনেক ছোটো-বড়ো কথা বলেছিলেন। কিন্তু, এখন তার কাছে বলার মতো আর কিছুই ছিল না। এর অল্প সময় পরেই তিনি আত্মহত্যা করেন। শিক্ষণীয় বিষয়টা কী? বাইবেল ও এটির ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করা আমাদের ঈশ্বরের উপর এক অটল বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করতে পারে এবং এটা আমাদের পরীক্ষার সময়ে আস্থা বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে।—২ পিতর ১:১৯-২১.

১৮. যোহন ৬:৬৭, ৬৮ পদ অনুযায়ী কেন আমাদের ‘তত্ত্বজ্ঞান ও সর্ব্বপ্রকার সূক্ষ্মচৈতন্যের’ প্রয়োজন রয়েছে, যেটার বিষয়ে পৌল ফিলিপীয় ১:৯ পদে লিখেছিলেন?

১৮ আমরা যে সত্য খ্রিস্টান, তা প্রমাণ করার জন্য আমাদের একে অপরের প্রতি প্রেম দেখানোর প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া, আমাদের ‘তত্ত্বজ্ঞান’ বা সঠিক জ্ঞান এবং ‘সর্ব্বপ্রকার সূক্ষ্মচৈতন্য’ বা বিচক্ষণতার প্রয়োজন রয়েছে। (ফিলি. ১:৯) তা না হলে আমরা হয়তো ‘মনুষ্যদের ঠকামি এবং যে সে শিক্ষাবায়ুর’ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারি। (ইফি. ৪:১৪) প্রথম শতাব্দীতে যখন অনেক শিষ্য যিশুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দিচ্ছিল, তখন প্রেরিত পিতর এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে তার দৃঢ়প্রত্যয় প্রকাশ করেছিলেন, যিশুর কাছে “অনন্ত জীবনের কথা আছে।” (পড়ুন, যোহন ৬:৬৭, ৬৮.) সেই সময়ে যদিও পিতর এই কথাগুলোর অর্থ সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারেননি, তারপরও তিনি তার আনুগত্য বজায় রেখেছিলেন কারণ তিনি খ্রিস্ট সম্বন্ধে সত্য বুঝতে পেরেছিলেন। বাইবেলের শিক্ষা সম্বন্ধে আপনিও আপনার বিশ্বাসকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে পারেন। আপনি যদি এমনটা করেন, তা হলে আপনি পরীক্ষার সময়ে বিশ্বাসে স্থির থাকতে পারবেন এবং অন্যদের এক দৃঢ়বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করতে পারবেন।—২ যোহন ১, ২.

গান সংখ্যা ১০ “এই আমি, আমাকে পাঠাও”

^ অনু. 5 এই প্রবন্ধ আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের সত্য শিক্ষাগুলোর প্রতি উপলব্ধিবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া, এই প্রবন্ধে সেই উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলো আমাদের এই বিষয়ে আরও দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে সাহায্য করবে যে, আমরা যা বিশ্বাস করি, সেটাই সত্য।

^ অনু. 10 বাইবেলের মৌলিক শিক্ষা সম্বন্ধে অন্যদের সঙ্গে যুক্তি করার জন্য “একজন প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনা—কখন ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করতে শুরু করে” শিরোনামের এক ধারাবাহিক প্রবন্ধ দেখুন, যেটা ২০১৫ সালের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় এসেছে।

^ অনু. 14 এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য ২০১২ সালের ১৫ জুন এবং ২০২০ সালের মে সংখ্যার প্রহরীদুর্গ পত্রিকা দেখুন।

^ অনু. 60 ছবি সম্বন্ধে: পারিবারিক উপাসনার সময়ে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে মহাক্লেশ সম্বন্ধে বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করছেন।

^ অনু. 62 ছবি সম্বন্ধে: সেই একই পরিবার মহাক্লেশের সময়ে যা ঘটছে, সেটা দেখে অবাক হচ্ছে না।