সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৭

আপনি নিজের সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেন?

আপনি নিজের সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেন?

“আমি তোমাদের মধ্যবর্ত্তী প্রত্যেক জনকে বলিতেছি, আপনার বিষয়ে যেমন বোধ করা উপযুক্ত, কেহ তদপেক্ষা বড় বোধ না করুক; কিন্তু . . . সে সুবোধ হইবারই চেষ্টায় আপনার বিষয়ে বোধ করুক।”—রোমীয় ১২:৩.

গান সংখ্যা ৩৫ ঈশ্বরের ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা

সারাংশ *

১. ফিলিপীয় ২:৩ পদ অনুযায়ী কীভাবে নম্রতা আমাদের অন্যদের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে?

আমরা নম্রতার সঙ্গে যিহোবার বাধ্য হই কারণ আমরা এটা উপলব্ধি করি যে, আমাদের জন্য সর্বোত্তমটা কী, তা যিহোবা জানেন। (ইফি. ৪:২২-২৪) নম্রতা আমাদের নিজেদের নয় বরং যিহোবার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে এবং অন্যদের শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেখতে অনুপ্রাণিত করে। এর ফলে, আমরা যিহোবা ও সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক উপভোগ করি।—পড়ুন, ফিলিপীয় ২:৩.

২. প্রেরিত পৌল কী স্বীকার করেছিলেন এবং এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে বিবেচনা করব?

অন্যদিকে আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে আমরা জগতের গর্বিত ও স্বার্থপর লোকেদের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারি। * এমনটা মনে হয় প্রথম শতাব্দীর কোনো কোনো খ্রিস্টান এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল আর তাই প্রেরিত পৌল রোমীয়দের উদ্দেশে লিখেছিলেন: “আমি তোমাদের মধ্যবর্ত্তী প্রত্যেক জনকে বলিতেছি, আপনার বিষয়ে যেমন বোধ করা উপযুক্ত, কেহ তদপেক্ষা বড় বোধ না করুক; কিন্তু . . . সে সুবোধ হইবারই চেষ্টায় আপনার বিষয়ে বোধ করুক।” (রোমীয় ১২:৩) পৌল এটা স্বীকার করেছিলেন, নিজেদের সম্বন্ধে কিছুটা চিন্তা করা ভুল নয়। তবে, নম্রতা আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করবে। এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে ক্ষেত্র নিয়ে বিবেচনা করব, যে-ক্ষেত্রগুলোতে নম্রতা আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে অতিরিক্ত চিন্তা করা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে। এই ক্ষেত্রগুলো হল (১) বিবাহ, (২) যিহোবার সংগঠনে পাওয়া দায়িত্ব এবং (৩) সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার।

আপনার বিবাহসাথির সঙ্গে আচরণ করার সময়ে নম্রতা দেখান

৩. কেন বিবাহে মতের অমিল দেখা দিতে পারে এবং মতের অমিল দেখা দিলে কোনো কোনো ব্যক্তি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়?

যিহোবা চান যেন স্বামী ও স্ত্রীরা তাদের বিবাহিত জীবনে সুখী হয়। তবে, তারা যেহেতু অসিদ্ধ, তাই মতের অমিল দেখা দিতে পারে। সত্যি বলতে কী পৌল লিখেছিলেন, যারা বিয়ে করে, তারা কিছুটা পরিমাণ ক্লেশ ভোগ করবে। (১ করি. ৭:২৮) কোনো কোনো দম্পতি এটা লক্ষ করেছে যে, তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই রয়েছে। তারা হয়তো এই উপসংহারে এসেছে, তারা ভুল সাথি বাছাই করেছে। তারা যদি জগতের দ্বারা প্রভাবিত হয়, তা হলে তারা দ্রুত এটা চিন্তা করবে যে, বিবাহবিচ্ছেদই একমাত্র সমাধান। তারা কেবলমাত্র নিজেদের বিষয়েই চিন্তা করবে এবং মনে করবে যে, একমাত্র বিবাহবিচ্ছেদ করলেই তারা সুখী হতে পারবে।

৪. আমাদের অবশ্যই কী এড়িয়ে চলতে হবে?

আমাদের অবশ্যই বিবাহে অসন্তুষ্টির মনোভাব এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা এটা উপলব্ধি করি যে, বিবাহবিচ্ছেদের একমাত্র শাস্ত্রীয় ভিত্তি হল ব্যভিচার। (মথি ৫:৩২) তাই, পৌলের লেখা ক্লেশের মুখোমুখি হলে আমাদের গর্বিত হয়ে এইরকম চিন্তা করা উচিত নয়: ‘আমার বিবাহসাথি আমার জন্য চিন্তা করে না। আমি আমার প্রাপ্য ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমি হয়তো অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে থাকলে আরও বেশি সুখী হব।’ আমরা যদি এভাবে চিন্তা করি, তা হলে আমরা আমাদের সাথির বিষয় নয় বরং কেবল নিজের বিষয়েই চিন্তা করছি। জগতের লোকেরা এভাবেই চিন্তা করে। তারা বলে, আপনার হৃদয়ের কথা শুনুন এবং আপনি যেটাকে সঠিক বলে মনে করেন, সেটাই করুন আর যদি বিবাহবিচ্ছেদ করলেই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয়, তা হলে তা-ই করুন। এর বিপরীতে, বাইবেল বলে, “প্রত্যেক জন আপনার বিষয়ে নয়, কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য রাখ।” (ফিলি. ২:৪) যিহোবা চান যেন আপনার বিয়ে ভেঙে না যায় বরং টিকে থাকে। (মথি ১৯:৬) তিনি চান যেন আপনি প্রথমে নিজের বিষয়ে নয় বরং তাঁর বিষয়ে চিন্তা করেন।

৫. ইফিষীয় ৫:৩৩ পদ অনুযায়ী কীভাবে একজন স্বামী ও স্ত্রীর একে অন্যের সঙ্গে আচরণ করা উচিত?

একজন স্বামী ও স্ত্রীর একে অপরের সঙ্গে প্রেম ও সম্মান দেখিয়ে আচরণ করা উচিত। (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:৩৩.) * বাইবেল আমাদের গ্রহণ করার চেয়ে বরং দান করার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে শেখায়। (প্রেরিত ২০:৩৫) কোন গুণটা এক বিবাহিত দম্পতিকে প্রেম ও সম্মান দেখাতে সাহায্য করবে? নম্রতা। নম্র স্বামী ও স্ত্রীরা স্বার্থ চেষ্টা করার পরিবর্তে, “পরের মঙ্গল চেষ্টা” করে।—১ করি. ১০:২৪.

এক নম্র দম্পতি নিজেদের মধ্যে লড়াই করার পরিবর্তে একটা দল হিসেবে একত্রে কাজ করেন (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৬. ভাই স্টিভান ও বোন স্টেফানির মন্তব্য থেকে আমরা কী শিখি?

নম্রতা অনেক খ্রিস্টান দম্পতিকে তাদের বিবাহিত জীবনে আরও বেশি সুখী হতে সাহায্য করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, স্টিভান নামে একজন স্বামী বলেন: “আপনাকে ও আপনার বিবাহসাথিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, বিশেষভাবে যখন সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। আমার  জন্য সর্বোত্তমটা কী?’ এটা নিয়ে চিন্তা করার পরিবর্তে, আমাদের  জন্য সর্বোত্তমটা কী?’ এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।” তার স্ত্রী স্টেফানি একইরকম চিন্তা করেন। তিনি বলেন: ‘কেউই এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে থাকতে চাইবেন না, যিনি সবসময় ঝগড়াঝাঁটি করেন। মতের অমিল দেখা দিলে আমরা সমস্যাটার শনাক্ত করার চেষ্টা করি। তারপর, আমরা প্রার্থনা করি, গবেষণা করি এবং কীভাবে সমস্যাটার সমাধান করা যায়, সেই বিষয়ে কথা বলি। আমরা একে অপরকে দোষারোপ করার পরিবর্তে, সমস্যাটার সমাধান করার চেষ্টা করি।’ স্বামী ও স্ত্রীরা যখন নিজেদের সাথির চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে না, তখন তারা সত্যিই উপকৃত হয়।

‘সম্পূর্ণ নম্রতার’ সঙ্গে যিহোবার সেবা করুন

৭. একজন ভাই যখন যিহোবার সেবায় বিশেষ সুযোগ লাভ করেন, তখন তার কেমন মনোভাব হওয়া উচিত?

আমরা যিহোবার সেবা করাকে এক বিশেষ সুযোগ হিসেবে দেখি আর তা যে-উপায়েই করি না কেন। (গীত. ২৭:৪; ৮৪:১০) একজন ভাই যদি যিহোবার সেবায় বিশেষ সুযোগগুলো গ্রহণ করার জন্য নিজে থেকে এগিয়ে আসেন, তা হলে সেটা প্রশংসনীয়। সত্যি বলতে কী, বাইবেল বলে: “যদি কেহ অধ্যক্ষপদের আকাঙ্ক্ষী হন, তবে তিনি উত্তম কার্য্য বাঞ্ছা করেন।” (১ তীম. ৩:১) তবে, তিনি যখন যিহোবার সেবায় কার্যভার লাভ করেন, তখন তার নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা উচিত নয়। (লূক ১৭:৭-১০) নম্রতার সঙ্গে অন্যদের সেবা করাই তার লক্ষ্য হওয়া উচিত।—২ করি. ১২:১৫.

৮. দিয়ত্রিফি, উষিয় ও অবশালোমের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখি?

বাইবেলে এমন অনেক ব্যক্তির সতর্কবাণীমূলক উদাহরণ রয়েছে, যারা নিজেদের সম্বন্ধে অতিরিক্ত চিন্তা করেছিল। দিয়ত্রিফি বিনয়ী ছিলেন না। তিনি মণ্ডলীতে ‘প্রাধান্য’ পেতে চেয়েছিলেন। (৩ যোহন ৯) উষিয় এমন একটা কার্যভার সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছিলেন, যেটা যিহোবা তাকে দেননি। (২ বংশা. ২৬:১৬-২১) অবশালোম যেহেতু রাজা হতে চেয়েছিলেন, তাই তিনি লোকেদের সমর্থন লাভ করার জন্য তাদের  প্রতি ভালোবাসা দেখানোর ভান করেছিলেন। (২ শমূ. ১৫:২-৬) বাইবেলের এই বিবরণগুলো স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যে-ব্যক্তিরা ব্যক্তিগতভাবে ‘ভারী ভারী বিষয় অনুসন্ধান করে [‘গৌরব পাবার জন্য চেষ্টা করে,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন],’ যিহোবা তাদের কাজে সন্তুষ্ট হন না। (হিতো. ২৫:২৭) পরিশেষে অহংকার, গর্ব ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিপর্যয় ডেকে আনে।—হিতো. ১৬:১৮.

৯. যিশু কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

এই সতর্কবাণীমূলক উদাহরণগুলোর বিপরীতে, যিশুর বিষয়ে বিবেচনা করুন, যিনি “ঈশ্বরের স্বরূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না।” (ফিলি. ২:৬) যিশু বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেননি। তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র, সেই মহান্‌।” (লূক ৯:৪৮) অগ্রগামী, পরিচালক দাস, প্রাচীন ও সীমা অধ্যক্ষদের সঙ্গে সেবা করতে পারাটা কতই-না বিশেষ এক সুযোগ, যারা নম্রতা দেখানোর বিষয়ে যিশুকে অনুকরণ করে! আমরা যদি নম্র হই, তা হলে আমরা অন্যদের প্রতি আরও বেশি প্রেম দেখাব। আর যিশু বলেছিলেন, ঈশ্বরের প্রকৃত দাসেরা একে অপরের প্রতি প্রেম দেখাবে।—যোহন ১৩:৩৫.

১০. আপনি যদি মনে করেন যে, মণ্ডলীর কিছু সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সঠিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, তা হলে আপনার কী করা উচিত?

১০ আপনি যদি লক্ষ করেন যে, মণ্ডলীতে কিছু সমস্যা রয়েছে এবং আপনি হয়তো ভাবছেন, সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রাচীনরা সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না, তা হলে আপনার কী করা উচিত? যারা নেতৃত্ব নিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরিবর্তে, তাদের সমর্থন করার মাধ্যমে আপনি নম্রতা দেখাতে পারেন। (ইব্রীয় ১৩:১৭) নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি যে-সমস্যাগুলো দেখছি, সেগুলো কি এতটাই গুরুতর যে, প্রাচীনদের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? এটাই কি পদক্ষেপ নেওয়ার সঠিক সময়? আমাকে কি এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে? আমি কি মণ্ডলীকে আরও বেশি একতাবদ্ধ করার জন্য সত্যিই চেষ্টা করছি? অথবা আমি কি নিজেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছি?’

দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের শুধুমাত্র তাদের যোগ্যতার জন্য নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের নম্রতার জন্যও পরিচিত হওয়া উচিত (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১১. ইফিষীয় ৪:২, ৩ পদ অনুযায়ী আমরা যখন নম্রতার সঙ্গে যিহোবার সেবা করি, তখন তার ফল কী হয়?

১১ যিহোবা আমাদের যোগ্যতার চেয়ে নম্রতাকে এবং দক্ষতার চেয়ে একতাকে বেশি মূল্যবান হিসেবে দেখেন। তাই, যিহোবার সেবায় নম্রতার সঙ্গে আপনার সর্বোত্তমটা করুন। আপনি যখন এমনটা করবেন, তখন আপনি মণ্ডলীতে একতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবেন। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:২, ৩.) পরিচর্যায় যথাসাধ্য করুন। অন্যদের প্রতি সদয় কাজগুলো করার মাধ্যমে তাদের সেবা করার জন্য উপায়গুলো খুঁজুন। সবার প্রতি আতিথেয়তা দেখান আর এর অন্তর্ভুক্ত হল সেই ব্যক্তিরাও, যিহোবার সেবায় যাদের বিশেষ দায়িত্ব নেই। (মথি ৬:১-৪; লূক ১৪:১২-১৪) আপনি যখন নম্রতার সঙ্গে মণ্ডলীতে কাজ করেন, তখন অন্যেরা শুধু আপনার যোগ্যতাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আপনার নম্রতাও লক্ষ করবে।

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার সময় নম্রতা দেখান

১২. বাইবেল কি আমাদের অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে উৎসাহিত করে? ব্যাখ্যা করুন।

১২ যিহোবা আমাদের এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে আমরা আমাদের বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মেলামেশা করাকে উপভোগ করি। (গীত. ১৩৩:১) যিশুর কয়েক জন ভালো বন্ধু ছিল। (যোহন ১৫:১৫) বাইবেল প্রকৃত বন্ধু থাকার উপকারিতা সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে। (হিতো. ১৭:১৭; ১৮:২৪) আর এটি আমাদের বলে যেন আমরা নিজেদের পৃথক করে রাখার চেষ্টা না করি। (হিতো. ১৮:১) অনেকে মনে করে যে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বহু লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যায় এবং একাকিত্বের অনুভূতি এড়িয়ে চলা যায়। তবে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার সময়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

১৩. যারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে কেন কোনো কোনো ব্যক্তির একাকিত্ব ও অবসাদে ভোগার সম্ভাবনা থাকে?

১৩ সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের পোস্ট করা মন্তব্য ও ছবি দেখার জন্য অনেক বেশি সময় ব্যয় করে, পরিশেষে তারা হয়তো আসলে একাকিত্ব ও অবসাদে ভোগে। কেন? এর একটা সম্ভাব্য কারণ হল লোকেরা প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ভালো ছবিগুলো পোস্ট করে। সেই ছবিগুলোতে কেবল এটাই ফুটে ওঠে যে, তারা কতটা আনন্দ করেছে, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কতটা ভালো সময় কাটিয়েছে আর কোন কোন জায়গায় ঘুরতে গিয়েছে। যে-ব্যক্তি সেই ছবিগুলো দেখেন, তিনি হয়তো সেগুলোর সঙ্গে নিজের তুলনা করার মাধ্যমে এই উপসংহারে আসেন যে, তিনি এক সাদামাটা ও একঘেয়ে জীবনযাপন করছেন। ১৯ বছর বয়সি একজন খ্রিস্টান বোন এটা স্বীকার করেন, “আমি যখন সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে চুপচাপ ঘরে বসে থাকি এবং অন্যদের মজা করতে দেখি, তখন আমার আনন্দ ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে শুরু করে।”

১৪. প্রথম পিতর ৩:৮ পদে পাওয়া বাইবেলের পরামর্শ কীভাবে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১৪ অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়া ভালো উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য এটা ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, কোনো কোনো ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই মন্তব্য, ছবি ও ভিডিওগুলো পোস্ট করে, যেগুলো দেখে অন্যের অভিভূত হবে বলে তারা আশা করে? তারা অন্যদের যে-বার্তা দিতে চায়, সেটা হল “আমাকে দেখো।” কেউ কেউ এমনকী নিজেদের অথবা অন্যদের পোস্ট করা ছবিগুলোর উপর রূঢ় ও অশ্লীল মন্তব্য করে থাকে। খ্রিস্টানদের নম্রমনা ও পরদুঃখে দুঃখিত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয় আর তাই তারা সোশ্যাল মিডিয়াকে এভাবে ব্যবহার করে না।—পড়ুন, ১ পিতর ৩:৮.

আপনি যদি অনলাইনে কিছু পোস্ট করেন, তা হলে সেটা দেখে অন্যেরা কি এইরকম চিন্তা করতে পরিচালিত হবে, আপনি বড়াই করছেন, না কি তারা ভাববে, আপনি একজন নম্র ব্যক্তি? (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. কীভাবে বাইবেল আমাদের নিজেদের জাহির করা এড়িয়ে চলার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৫ আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন, তা হলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমার পোস্ট করা মন্তব্য, ছবি অথবা ভিডিওগুলো দেখে অন্যেরা কি এইরকম চিন্তা করতে পরিচালিত হয় যে, আমি বড়াই করছি? আমি কি অন্যদের ঈর্ষান্বিত হতে পরিচালিত করি?’ বাইবেল বলে: “জগতে যে কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এ সকল পিতা হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে।” (১ যোহন ২:১৬) বাইবেলের একটা সংস্করণ “জীবিকার দর্প” অভিব্যক্তিটাকে “নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে দেখানো” বলে অনুবাদ করেছে। খ্রিস্টানরা অন্যদের কাছে নিজেদের জাহির করার চেষ্টা করে না। তারা বাইবেলের এই পরামর্শ অনুসরণ করে: “আমরা . . . অনর্থক দর্প না করি পরস্পরকে জ্বালাতন না করি, পরস্পর হিংসাহিংসি না করি।” (গালা. ৫:২৫, ২৬) আমরা যদি নম্র হই, তা হলে আমরা জগতের সেই লোকেদের মতো হব না, যারা গর্বিত এবং চায় যেন অন্যেরা তাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে দেখে।

“সুবোধ হইবারই চেষ্টায় আপনার বিষয়ে বোধ করুক”

১৬. কেন আমাদের গর্বিত হওয়া এড়িয়ে চলা উচিত?

১৬ আমরা নম্রতা গড়ে তুলতে চাই কারণ গর্বিত ব্যক্তিরা ‘সুবোধ হইতে’ পারে না। (রোমীয় ১২:৩) গর্বিত ব্যক্তিরা ঝগড়াটে ও স্বার্থপর হয়। তাদের চিন্তাভাবনা ও কাজের কারণে প্রায়ই তারা নিজেরা ও অন্যেরা দুঃখ পায়। তারা যদি সতর্ক না হয়, তা হলে তারা এই ধরনের গর্বিত চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে এবং শয়তানের দ্বারা কলুষিত হয়ে যেতে পারে। (২ করি. ৪:৪; ১১:৩) অন্যদিকে, একজন নম্র ব্যক্তি সুবোধ বা সুবুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে থাকেন। তিনি নিজের সম্বন্ধে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখেন এবং এটা উপলব্ধি করেন যে, অন্যেরা বিভিন্ন দিক দিয়ে তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। (ফিলি. ২:৩) আর তিনি জানেন যে, “ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।” (১ পিতর ৫:৫) যাদের সুবুদ্ধি রয়েছে, তারা যিহোবাকে শত্রু করে তুলতে চায় না।

১৭. নম্রতা বজায় রাখার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?

১৭ নম্রতা বজায় রাখার জন্য আমাদের অবশ্যই বাইবেলের এই পরামর্শ কাজে লাগাতে হবে: “তোমরা পুরাতন মনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ করিয়াছ, এবং সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করিয়াছ।” এরজন্য কঠোর প্রচেষ্টার প্রয়োজন। আমাদের যিশুর উদাহরণ নিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে এবং তাঁকে অনুকরণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। (কল. ৩:৯, ১০; ১ পিতর ২:২১) কিন্তু আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা প্রচুররূপে উপকৃত হব। আমরা যখন নম্রতা গড়ে তুলব, তখন আমাদের পারিবারিক জীবনে উন্নতি হবে, মণ্ডলীতে একতা বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার সময়ে নিজেদের বড়াই করব না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল আমরা যিহোবার আশীর্বাদ ও অনুগ্রহ লাভ করব।

গান সংখ্যা ১৯ পরমদেশ সম্বন্ধে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা

^ অনু. 5 বর্তমানে আমরা এমন এক জগতে বাস করি, যেটা গর্বিত ও স্বার্থপর লোকেদের দ্বারা ভরে গিয়েছে। আর আমরা যাতে তাদের মতো হয়ে না যাই, সেইজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে ক্ষেত্র নিয়ে বিবেচনা করব, যে-ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা উচিত নয়।

^ অনু. 2 এই অভিব্যক্তির অর্থ: একজন গর্বিত ব্যক্তি নিজের বিষয়ে খুব বেশি চিন্তা করেন এবং অন্যদের বিষয়ে খুব-একটা চিন্তা করেন না। তাই, একজন গর্বিত ব্যক্তি হলেন স্বার্থপর। অন্যদিকে, নম্রতা একজন ব্যক্তিকে নিঃস্বার্থপরতার মনোভাব দেখাতে সাহায্য করে। আপনার মধ্যে যদি নম্রতা থাকে, তা হলে আপনি গর্বিত হবেন না এবং নিজেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে মনে করবেন না।

^ অনু. 5 ইফিষীয় ৫:৩৩ (বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন): “কিন্তু যাক সেই সব কথা। তোমরা প্রত্যেকে নিজের স্ত্রীকে নিজের মত ভালবেসো, আর স্ত্রীরও উচিত যেন সে নিজের স্বামীকে সম্মান করে।”

^ অনু. 57 ছবি সম্বন্ধে: একজন প্রাচীন ভাই, যিনি সম্মেলনে বক্তৃতা দেন এবং অন্য ভাইদের নির্দেশনা দেন, তিনি পরিচর্যায় নেতৃত্ব নেওয়ার এবং কিংডম হল পরিষ্কার করার বিশেষ সুযোগের প্রতিও উপলব্ধি দেখান।