সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জীবনকাহিনি

আমার যা করা উচিত, কেবল তা-ই করেছি

আমার যা করা উচিত, কেবল তা-ই করেছি

ভাই ডানাল্ড রিড্‌লি একজন উকিল ছিলেন এবং প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যিহোবার সাক্ষিদের হয়ে বিভিন্ন মামলা লড়েছেন। একজন রোগী রক্ত গ্রহণ করবেন কি না, সেই বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে তার যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে, তা লোকেদের বুঝতে সাহায্য করার জন্য ভাই ডান এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতে যিহোবার সাক্ষিদের অনেক মামলায় জয়ী হতে সাহায্য করেছেন। তার বন্ধুদের কাছে তিনি একজন পরিশ্রমী, নম্র ও আত্মত্যাগী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং তারা তাকে ডান বলে ডাকত।

২০১৯ সালে ভাই ডানের এমন এক স্নায়ুর রোগ ধরা পড়ে, যেটার কোনো চিকিৎসা নেই। সেই রোগ দ্রুত তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট তিনি মৃত্যুর কোলো ঘুমিয়ে পড়েন। আসুন, আমরা তার জীবনকাহিনি লক্ষ করি।

উনিশ-শো চুয়ান্ন সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার সেন্ট পলে এক মধ্যবিত্ত রোমান ক্যাথলিক পরিবারে আমার জন্ম হয়। আমার বাবা-মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যে আমি ছিলাম দ্বিতীয় সন্তান। ছোটোবেলায় আমি ক্যাথলিক স্কুলে যেতাম এবং গির্জায় উপাসনার সময়ে পাদরিকে সাহায্য করতাম। তারপরও, বাইবেল সম্বন্ধে আমার খুব সামান্যই জ্ঞান ছিল। আমি যদিও এটা বিশ্বাস করতাম যে, সমস্ত কিছু ঈশ্বরই সৃষ্টি করেছেন কিন্তু গির্জার উপর আমরা একটুও বিশ্বাস ছিল না।

আমি সত্য শিখি

আমি উইলিয়াম মিচেল কলেজ অফ ল থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করি। কলেজের প্রথম বছরে দুই জন যিহোবার সাক্ষি আমাদের বাড়িতে আসেন। আমি সেইসময়ে জামাকাপড় ধুচ্ছিলাম আর তাই সেই দম্পতি আমাকে জানান, তারা কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসবেন। তারা যখন ফিরে আসেন, তখন আমি তাদের দুটো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি: “কেন ভালো ব্যক্তিরা জগতে সাফল্য পায় না?” আর “কীভাবে লোকেরা প্রকৃতই সুখী হতে পারে?” আমি তাদের কাছ থেকে যে সত্য অনন্ত জীবনে লইয়া যায় শিরোনামের বইটা এবং সবুজ রঙের একটা সুন্দর পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেল নিই। আর আমি বাইবেল অধ্যয়ন করতেও রাজি হই। এটা সত্যি সত্যিই আমার চোখ খুলে দেয়। আমি এটা জেনে আনন্দিত হই যে, ঈশ্বরের রাজ্য হল এমন এক সরকার, যেটা পৃথিবীর উপর শাসন করবে। আমি এটা বুঝতে পারছিলাম যে, মানবশাসন পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছে আর এটা পুরো পৃথিবীর উপর যন্ত্রণা, কষ্ট, অবিচার ও বিপর্যয় নিয়ে এসেছে।

১৯৮২ সালের শুরুর দিকে আমি যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করি এবং সেই বছরেই সেন্ট. পল সিভিক সেন্টারে অনুষ্ঠিত “রাজ্যের সত্য” নামক সম্মেলনে বাপ্তিস্ম নিই। আমি মিনেসোটায় বার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পরের সপ্তাহে আবারও সিভিক সেন্টারে যাই। অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে আমি জানতে পারি যে, আমি সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি আর এর অর্থ হল আমি ওকালতি করতে পারব।

“রাজ্যের সত্য” নামক সম্মেলনেই ভাই মাইক রিচার্ডসানের সঙ্গে আমার দেখা হয়, যিনি ব্রুকলিনের একজন বেথেলকর্মী ছিলেন। তিনি আমাকে বলেন, আমাদের বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ে লিগাল অফিস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রেরিত ৮:৩৬ পদে লিপিবদ্ধ ইথিওপীয় নপুংসকের কথাগুলো আমার মনে পড়ে আর আমি নিজেকে বলি, ‘লিগাল অফিসে আমার কাজ করায় বাধা কী?’ তাই, আমি বেথেল সেবায় যোগ দেওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা দিই।

আমি একজন যিহোবার সাক্ষি হওয়ায় বাবা-মা খুশি হননি। বাবা আমাকে বলেন, ‘নিজের কেরিয়ারের বিষয়ে চিন্তা করো। বেথেলে কাজ করে তুমি কত টাকা রোজগার করবে?’ আমি তাকে বলি, আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করব আর আমার খরচ মেটানোর জন্য সেখানে আমাকে সামান্য কিছু অর্থ দেওয়া হবে, যা বেথেলকর্মীরা পেয়ে থাকে।

আমি যেহেতু ইতিমধ্যেই আদালতে কাজ করার বিষয়ে কথা দিয়ে ফেলেছিলাম, তাই আমি সঙ্গেসঙ্গে বেথেলে যোগ দিতে পারিনি। আমি ১৯৮৪ সালে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বেথেলে যোগ দিই। আমাকে লিগাল অফিসে কার্যভার দেওয়া হয়। সেইসময়ে আমি জানতাম না যে, আমি বেথেলে যোগ দেওয়ার আগে আদালতে কাজ করে যে-অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলাম, সেটা পরবর্তী সময়ে কতটা কাজে লাগবে।

স্ট্যান্‌লি থিয়েটার পুনর্সংস্করণ করা

স্ট্যান্‌লি থিয়েটার যখন কেনা হয়েছিল, এটা সেই সময়ের ছবি

নিউ জার্সির জার্সি শহরের স্ট্যান্‌লি থিয়েটার ১৯৮৩ সালের নভেম্বর মাসে কেনা হয়। ভাইয়েরা বিল্ডিংয়ের ইলেকট্রিক ও প্লাম্বিং সিস্টেম পুনর্সংস্কার করার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন জানায়। তারা স্থানীয় আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে তাদের জানায় যে, এই হলকে তারা যিহোবার সাক্ষিদের সম্মেলন হল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু, একটা সমস্যা দেখা দেয়। বিল্ডিং কীভাবে ব্যবহার করা যায়, সেই বিষয়ে জার্সি শহরের আইন অনুযায়ী উপাসনার জন্য বিল্ডিংগুলো কেবল আবাসিক এলাকাতেই নির্মাণ করা যেতে পারে এবং স্ট্যান্‌লি থিয়েটার ব্যাবসায়িক এলাকায় ছিল। আর তাই আধিকারিকরা আমাদের আবেদন খারিজ করে দেয়। ভাইয়েরা আধিকারিকদের কাছে আপিল করে কিন্তু তারা তা খারিজ করে দেয়।

আমি যে-সপ্তাহে বেথেল যোগ দিই, সেই সপ্তাহেই সংগঠন এই বিষয়টা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়। যেহেতু আমি দু-বছর আদালতে কাজ করার ঠিক পরেই বেথেল এসেছিলাম, তাই আমি এই ধরনের মামলার সঙ্গে খুব ভালোভাবে পরিচিত ছিলাম। আমাদের একজন উকিল সাওয়াল করেন, স্ট্যান্‌লি থিয়েটার এত দিন পর্যন্ত সিনেমা থেকে শুরু করে মিউজিকের প্রোগ্রামের মতো জনসাধারণের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করে আসা হয়েছে। তা হলে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা কেন অবৈধ হবে? আদালত এই বিষয়টা বিবেচনা করে দেখে এবং আমাদের পক্ষে রায় দিয়ে বলে, জার্সি শহর আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করেছে। আদালত জার্সি শহরকে আমাদের আবেদন মঞ্জুর করার আদেশ দেয় আর আমি ধীরে ধীরে এটা দেখতে পাই যে, যিহোবা তাঁর কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কীভাবে আইনি বিষয়গুলো ব্যবহার করে তাঁর সংগঠনকে আশীর্বাদ করছেন। আমি এই কাজে অংশ নিতে পেরে খুবই আনন্দিত ছিলাম।

ভাইয়েরা এক বৃহৎ পুনর্সংস্করণের কাজ শুরু করে এবং এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৮৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জার্সি শহরের এই সম্মেলন হলে গিলিয়েড ক্লাসের ৭৯তম গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। যিহোবার জন্য এই কাজে অংশ নিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত ছিলাম। আমি বেথেলে আসার আগে একজন উকিল হিসেবে যে-কাজ করেছিলাম, সেটার চেয়ে এখানে কাজ করতে পেরে আমি অনেক বেশি আনন্দিত হয়েছিলাম। সেই সময়ে আমি জানতাম না যে, যিহোবা আমাকে আরও অনেক মামলায় ব্যবহৃত হওয়ার বিশেষ সুযোগ দেবেন।

রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করার অধিকারের পক্ষসমর্থন করা

১৯৮০-র দশকে ডাক্তাররা ও হাসপাতালগুলো সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষিদের রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করার ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাত না। বিচারকরা প্রায়ই ভাবত যে, গর্ভবতী মহিলাদের যদি রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়, তা হলে তাদের তা গ্রহণ করতে হবে, প্রত্যাখ্যান করার অধিকার তাদের নেই। বিচারকরা বলত যে, একজন মা রক্ত না নিলে মারা যেতে পারেন আর এর ফলে তার শিশু মায়ের যত্ন থেকে বঞ্চিত হবে।

১৯৮৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বোন ডানিস নিকালো একটি পুত্র প্রসব করেন আর তারপর তার অনেক রক্তক্ষরণ হয়। তার হিমোগ্লোবিন ৫.০-রও নীচে নেমে যায় এবং চিকিৎসকরা তাকে রক্ত নেওয়ার পরামর্শ দেয়। বোন নিকালো তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরের দিন সকালে হাসপাতালের লোকেরা রক্ত সঞ্চালন করার অনুমতি চেয়ে একজন বিচারকের কাছে অনুরোধ জানায়। সেই বিচারক মামলার কোনোরকম শুনানি ছাড়াই অথবা বোন নিকালো কিংবা তার স্বামীকে না জানিয়েই হাসপাতালের লোকেদের রক্ত সঞ্চালন করার অনুমতি দিয়ে দেন।

৩০ ডিসেম্বর, শুক্রবারে হাসপাতালের লোকেরা বোন নিকালোর স্বামী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের বাধা সত্ত্বেও তাদের সামনেই বোনকে রক্ত দেয়। সেই দিন সন্ধ্যায় বোনের পরিবারের কয়েক জন সদস্য এবং কয়েক জন প্রাচীনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারণ তারা রক্ত সঞ্চালন আটকানোর জন্য বোন নিকালোর বেডের চারিদিকে দাঁড়িয়েছিল। পরের দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর সকাল থেকে নিউ ইয়র্ক সিটি এবং তার আশেপাশের এলাকায় খবরের কাগজ, টিভি ও রেডিওতে এই বিষয়টা দেখাতে শুরু করে।

যুবক বয়সে ভাই ফিলিপ ব্রাম্লির সঙ্গে

সোমবার সকালে আমি মিলটন মালান নামে একজন বিচারকের সঙ্গে কথা বলি, যিনি হাইকোর্টের একজন বিচারক ছিলেন। আমি তাকে সমস্ত কিছু জানাই এবং এই বিষয়টার উপর জোর দিই যে, আগের বিচারক মামলার কোনোরকম শুনানি ছাড়াই রক্ত সঞ্চালন করার অনুমতি দিয়েছেন। বিচারক মালান আমাকে সেই দিন বিকেলে তার অফিসে আসতে বলেন, যাতে আমরা এই মামলার সমস্ত তথ্য এবং এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আইনগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারি। আমার অধ্যক্ষ ভাই ফিলিপ ব্রাম্লি সন্ধ্যা বেলায় আমার সঙ্গে বিচারক মালানের চেম্বারে যান। বিচারক মালান সেই আলোচনায় যোগ দেওয়ার জন্য হাসপাতালের উকিলকেও সেখানে ডাকেন। আলোচনা চলাকালীন পরিবেশ ধীরে ধীরে গরম হতে থাকে। এক পর্যায়ে এসে ভাই ব্রাম্লি তার নোটপ্যাডে এই কথাগুলো লিখে আমাকে দেন “উত্তেজিত হয়েও না।” পরবর্তী সময়ে আমি এটা বুঝতে পারি, সেটা ভালো পরামর্শ ছিল কারণ আমি হাসপাতালের উকিলকে ভুল প্রমাণিত করার জন্য উঠে-পড়ে লেগে ছিলাম।

যে-দিন আমেরিকার সর্বোচ্চ আদালতে ওয়াটচাওয়ার বনাম ভিলেজ অফ স্ট্রেটন-এর মামলার মৌখিক যুক্তি হয়েছিল, সেই দিনে সংগঠনের উকিল হিসেবে এই ভাইয়েরা সেখানে ছিলেন: (বাম দিক থেকে ডান দিকে) ভাই রিচার্ড মোক, গ্রেগারি ওল্ডজ্‌, পল পোলিডারো, ফিলিপ ব্রাম্লি, আমি ও মারিও মোরেনো।—২০০৩ সালের ৮ জানুয়ারি সজাগ হোন! (ইংরেজি) পত্রিকা দেখুন

প্রায় এক ঘণ্টা পর বিচারক মালান বলেন, পরের দিন সকালে সবার আগে এই মামলার শুনানি হবে। চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার সময়ে বিচারক মালান বলেন, কাল হাসপাতালের উকিলের “কপালে দুঃখ আছে।” এর অর্থ হল হাসপাতালের লোকেরা যে বোন নিকালোকে জোর করে রক্ত দিয়ে ঠিক করেছে, সেটা প্রমাণ করা হাসপাতালের উকিলের জন্য অনেক কঠিন হবে। আমার মনে হয়েছিল যেন যিহোবা আমাদের আশ্বস্ত করছেন যে, আমরা জয়ী হব। যিহোবা তাঁর ইচ্ছা সম্পাদন করার জন্য যে আমাদের ব্যবহার করছেন, সেটা দেখে আমি অভিভূত হয়ে যাই।

পরের দিনের মামলার শুনানির জন্য আমরা গভীর রাত পর্যন্ত প্রস্তুতি নিই। ব্রুকলিন বেথেলের কাছেই সেই আদালত থাকায় আমাদের ছোটো লিগাল অফিসের বেশিরভাগ লোকই পায়ে হেঁটে সেখানে চলে যায়। চার জন বিচারকের সামনে এই মামলার শুনানি হয় আর তারপর সেই বিচারকরা রক্ত সঞ্চালন করার অনুমতিকে খারিজ করে দেন। হাইকোর্ট বোন নিকালোর পক্ষে রায় দেয় এবং জানায় যে, একজন রোগীর অনুমতি ছাড়া তাকে রক্ত দেওয়া অথবা কোনোরকম নোটিস ছাড়া শুনানি হওয়া সঠিক নয় আর এটা সেই রোগীর মৌলিক সাংবিধানিক অধিকারকে লঙ্ঘন করে।

নিউ ইয়র্ক হাইকোর্ট পরিশেষে দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করে যে, রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করানোর অধিকার বোন নিকালোর রয়েছে। আমি জীবনে এটা ছাড়া এই ধরনের আরও তিনটে মামলায় অংশ নেওয়ার বিশেষ সুযোগ পেয়েছি। (“ সর্বোচ্চ আদালতে বিজয়” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) আমি বেথেলের অন্যান্য উকিলের সঙ্গে যোগ দিয়ে আরও অন্যান্য মামলায় অংশ নিয়েছি যেমন, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তান মানুষ করার অধিকার ও জমিজায়গা।

আমার বিয়ে এবং পারিবারিক জীবন

আমার স্ত্রী ড্যানিসের সঙ্গে

এরপর ড্যানিস নামে একজন বোনের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি একজন একক মা ছিলেন আর তার তিন সন্তান ছিল। তিনি সংসার চালানোর জন্য অর্থ উপার্জন করতেন আর একইসঙ্গে অগ্রগামী হিসেবেও সেবা করতেন। তিনি জীবনে অনেক কষ্ট ভোগ করেছিলেন। যিহোবার সেবা করার বিষয়ে তার দৃঢ়সংকল্প দেখে আমি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। ১৯৯২ সালে আমরা নিউ ইয়র্ক সিটিতে অনুষ্ঠিত “জ্যোতিবাহক” নামক জেলা সম্মেলনে যোগ দিই। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, আমরা কি একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানতে পারি। এর এক বছর পর আমরা বিয়ে করি। ও নিজের জীবনে সবসময় যিহোবাকে প্রথমে রাখে এবং রসিকতা করতেও ভালোবাসে। এইরকম একজন স্ত্রী পাওয়া সত্যিই যিহোবার কাছ থেকে এক আশীর্বাদ। ড্যানিস আর আমি একসঙ্গে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি।—হিতো. ৩১:১২.

আমরা যখন বিয়ে করি, তখন সন্তানদের বয়স ছিল যথাক্রমে ১১, ১৩ ও ১৬ বছর। আমি একজন ভালো বাবা হতে চেয়েছিলাম আর তাই আমি সৎবাবার বিষয়ে আমাদের প্রকাশনায় পাওয়া প্রবন্ধগুলো পড়েছিলাম এবং সেখানে পাওয়া পরামর্শগুলো কাজে লাগিয়েছিলাম। প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো ছিল কিন্তু আমি আনন্দিত ছিলাম কারণ বাচ্চারা আমাকে একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু ও প্রেমময় বাবা হিসেবে মেনে নিয়েছিল। আমার বাচ্চাদের বন্ধুরা যেকোনো সময়ে আমাদের বাড়িতে আসতে পারত আর আমি তাদের চারপাশে পেয়ে অনেক আনন্দিত ছিলাম।

২০১৩ সালে আমি আর ড্যানিস আমার বাবার ও শ্বশুর-শাশুড়ির যত্ন নেওয়ার জন্য উইসকনসিনে চলে যাই। আশ্চর্যের বিষয়টা হল আমার বেথেল সেবা শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের সংগঠনের লিগাল অফিসে আমাকে একজন অস্থায়ী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে চলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এক আকস্মিক পরিবর্তন

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি লক্ষ করি যে, কথা বলতে গেলেই আমার কাশি হচ্ছে। আমি স্থানীয় ডাক্তারের কাছে যাই কিন্তু তিনি এই রোগের কারণ খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তী সময়ে আরেক জন ডাক্তার আমাকে একজন স্নায়ুর ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করানোর প্রস্তাব দেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে স্নায়ুর ডাক্তার আমাকে বলেন যে, আমার এক বিরল স্নায়ুর রোগ হয়েছে, যেটা আমার পুরো শরীরকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করবে।

তিন দিন পর আইস স্কেটিং করার সময়ে আমি পড়ে যাই আর আমার ডান হাতের কবজি ভেঙে যায়। আমি সারাজীবন ধরে আইস স্কেটিং করেছি আর এতে আমি খুবই পারদর্শী ছিলাম। তাই, আমি বুঝতে পারি যে, আমি শারীরিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছি। এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আর সময়ের সঙ্গেসঙ্গে আমার জন্য কথা বলা, হেঁটে চলে বেড়ানো আর এমনকী ঢোঁক গেলাও কঠিন হতে থাকে।

আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে, একজন উকিল হিসেবে আমি নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যিহোবার সংগঠনকে সাহায্য করতে পেরেছি। আর আমি খুবই আনন্দিত যে, আমি আমাদের পত্রিকায় এমন অনেক প্রবন্ধ লিখতে পেরেছি, যেগুলো ডাক্তার, উকিল ও বিচারকরা পড়েছে। এ ছাড়া, আমি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দিয়েছি এবং রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করার বিষয়ে যিহোবার লোকেদের অধিকারের পক্ষসমর্থন করেছি। তবে আমি এটাই বলব, যা লূক বলেছিলেন: ‘আমি অপদার্থ দাস; যা করা উচিত আমি কেবল তা-ই করেছি।’—লূক ১৭:১০, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।