সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩১

“তোমরা দৃঢ় থাকো, সুস্থির থাকো”

“তোমরা দৃঢ় থাকো, সুস্থির থাকো”

“হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা, তোমরা দৃঢ় থাকো, সুস্থির থাকো।”—১ করি. ১৫:৫৮.

গান ১৪৪ থাকলে স্থির পাবে পুরস্কার!

সারাংশ a

১-২. কীভাবে খ্রিস্টানেরা উঁচু বিল্ডিংয়ের মতো? (১ করিন্থীয় ১৫:৫৮)

 উনিশ-শো আটাত্তর সালে জাপানের টোকিও শহরে একটা ৬০-তলা বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছিল। সেখানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। তাই, লোকেরা ভাবছিল, এই বিল্ডিংটা কীভাবে টিকে থাকবে। কিন্তু, সেটা টিকে ছিল। আসলে, এই উঁচু বিল্ডিংটাকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল যেন সেটা মজবুত থাকে এবং সামান্য দুলতেও পারে, যাতে ভূমিকম্প হলে সেটা ভেঙে না পড়ে। বলতে গেলে, খ্রিস্টানেরাও সেই উঁচু বিল্ডিংয়ের মতো। কীভাবে?

একজন খ্রিস্টানেরও দৃঢ় এবং মজবুত থাকা উচিত, কিন্তু এর পাশাপাশি মেনে নিতে ইচ্ছুক বা রদবদল করার জন্যও প্রস্তুত থাকা উচিত। যিহোবার আইন মেনে চলার এবং তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার বিষয়টা যখন আসে, তখন তার এই বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত, যেকোনো পরিস্থিতিতে তিনি সেটা করবেন। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.) তাকে যিহোবার “বাধ্য হতে প্রস্তুত” থাকা উচিত এবং কখনোই তাঁর মানের বিরুদ্ধে আপোশ করা উচিত নয়। এর পাশাপাশি, তার একজন “যুক্তিবাদী” ব্যক্তি হওয়া উচিত এবং যখন প্রয়োজন বা সম্ভব, তখন রদবদল করার জন্যও প্রস্তুত থাকা উচিত। (যাকোব ৩:১৭) এইরকম একজন খ্রিস্টান একগুঁয়ে মনোভাব দেখান না, আবার এমনটাও চিন্তা করেন না, ‘আজকাল সব কিছুই চলে।’ এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কীভাবে আমরা দৃঢ় থাকতে পারি। এরপর আমরা এমন পাঁচটা উপায়ের উপর মনোযোগ দেব, যেগুলো ব্যবহার করে শয়তান আমাদের দৃঢ় থাকার সংকল্পকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করে আর দেখব যে, কীভাবে আমরা তার ছলচাতুরী থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।

দৃঢ় থাকার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

৩. প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯ পদে যিহোবা কোন আইনগুলোর বিষয়ে বলেছিলেন?

আইন তৈরি করার সবচেয়ে বেশি অধিকার একমাত্র যিহোবার রয়েছে। আর তিনি তাঁর লোকদের একেবারে স্পষ্ট আইন দিয়েছেন। (যিশা. ৩৩:২২) উদাহরণ স্বরূপ, প্রথম শতাব্দীর পরিচালকগোষ্ঠী এমন তিনটে বিষয় উল্লেখ করেছিল, যেগুলোতে খ্রিস্টানদের দৃঢ় থাকা উচিত: (১) তাদের প্রতিমাপূজা থেকে দূরে থাকা উচিত এবং একমাত্র যিহোবার প্রতি ভক্তি দেখানো উচিত, (২) রক্তকে পবিত্র হিসেবে দেখা উচিত আর (৩) বাইবেলে বলা উচ্চ নৈতিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করা উচিত। (পড়ুন, প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯.) আজ খ্রিস্টানেরা এই তিনটে বিষয়ে কীভাবে দৃঢ় থাকতে পারে?

৪. কীভাবে আমরা দেখিয়ে থাকি যে, আমরা একমাত্র যিহোবার প্রতিই ভক্তি দেখাই? (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১)

আমরা প্রতিমাপূজা থেকে দূরে থাকি এবং একমাত্র যিহোবার প্রতিই ভক্তি দেখাই। যিহোবা ইজরায়েলীয়দের আজ্ঞা দিয়েছিলেন, তারা যেন একমাত্র তাঁর প্রতিই ভক্তি দেখায়। (দ্বিতীয়. ৫:৬-১০) আর যখন শয়তান যিশুকে প্রলোভন দেখিয়ে পরীক্ষা করার চেষ্টা করেছিল, তখন যিশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, আমাদের একমাত্র যিহোবারই উপাসনা করা উচিত। (মথি ৪:৮-১০) তাই, আমরা প্রতিমাপূজা করি না। আমরা মানুষকেও ঈশ্বর বলে মনে করি না, তা সে কোনো ধর্মীয় গুরু, বড়ো রাজনৈতিক নেতা, খেলোয়াড় কিংবা সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রী যে-ই হোক না কেন। আমাদের ঈশ্বর হলেন যিহোবা আর আমরা একমাত্র তাঁর প্রতিই ভক্তি দেখাই কারণ তিনি “সমস্ত কিছু সৃষ্টি” করেছেন।—পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.

৫. আমরা জীবন ও রক্তকে কেন পবিত্র হিসেবে দেখি?

আমরা যিহোবার আইন অনুযায়ী জীবন ও রক্তকে পবিত্র হিসেবে দেখি। কেন? কারণ জীবন হল যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এক মূল্যবান উপহার এবং রক্ত হল জীবনের প্রতীক। (লেবীয়. ১৭:১৪) যিহোবা যখন প্রথম বার মানুষকে পশুপাখির মাংস খাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন, তখন তিনি তাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন যেন তারা রক্ত না খায়। (আদি. ৯:৪) পরে, তিনি যখন মোশির মাধ্যমে ইজরায়েলীয়দের ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, তখনও তিনি এই আজ্ঞা পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। (লেবীয়. ১৭:১০) প্রথম শতাব্দীর পরিচালকগোষ্ঠীর মাধ্যমেও তিনি এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন, ‘রক্ত থেকে’ সবসময় ‘পৃথক থেকো।’ (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) তাই, আজ যখন আমাদের চিকিৎসার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন আমরা এই আজ্ঞা যেকোনো পরিস্থিতিতে মেনে চলি। b

৬. যিহোবার উচ্চ নৈতিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য আমরা কোন কোন পদক্ষেপ নিই?

আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে যিহোবার উচ্চ নৈতিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি। (ইব্রীয় ১৩:৪) প্রেরিত পৌল আমাদের বলেছিলেন, আমাদের অঙ্গ-প্রতঙ্গে যে-সমস্ত প্রবণতা রয়েছে, সেগুলো যেন “পুরোপুরি দূর” করে ফেলি। এর মানে হল, আমাদের কিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে আমাদের মনে কোনো মন্দ আকাঙ্ক্ষা চলে এলে আমরা সঙ্গেসঙ্গে তা দূর করে ফেলতে পারি। যেমন, আমরা এমন কিছু দেখি না বা এমন কিছু করি না, যেটার কারণে আমরা পরে গিয়ে অনৈতিক কাজ করে ফেলতে পারি। (কল. ৩:৫; ইয়োব ৩১:১) আমাদের মনে যদি মন্দ চিন্তা আসে, তা হলে আমরা সঙ্গেসঙ্গে সেটা আমাদের মন থেকে বের করে দিই অথবা আমাদের যদি খারাপ কাজ করতে প্রলোভিত করা হয়, তা হলে আমরা দ্রুত সেটা প্রত্যাখ্যান করি। আমরা চাই না, কোনো কারণে যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাক।

৭. আমাদের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত আর কেন?

যিহোবা চান যেন আমরা ‘সমস্ত হৃদয় দিয়ে বাধ্য হই।’ (রোমীয় ৬:১৭) তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করলে সবসময় আমাদেরই মঙ্গল হয়। তবে, আমরা এমনটা মনে করতে পারি না যে, তাঁর কিছু আজ্ঞা পালন করব আর কিছু করব না। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮; ১ করি. ৬:৯, ১০) তিনি আমাদের যেমনটা বলেছেন, আমরা ঠিক তেমনটাই করার চেষ্টা করি আর এভাবে আমরা তাঁকে খুশি করি। ১১৯ গীতের লেখকের মতো আমরাও যেন ‘সব সময়, এমন কি, শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের নিয়ম পালন করার জন্য আমাদের অন্তরকে স্থির করি।’ (গীত. ১১৯:১১২, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।) কিন্তু, শয়তান আমাদের এই সংকল্পকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করে। সে এমনটা করার জন্য কোন ছলচাতুরীগুলো ব্যবহার করে?

শয়তান আমাদের সংকল্পকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করে

৮. শয়তান কীভাবে আমাদের সংকল্পকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করে?

তাড়না। শয়তান আমাদের সংকল্পকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য আলাদা আলাদা উপায়ে আমাদের উপর তাড়না নিয়ে আসে। অনেকসময় আমাদের মারধর করা হয়, আবার কখনো কখনো আমাদের উপর এতটাই চাপ দেওয়া হয় যেন আমরা ঈশ্বরের মানগুলোর বিরুদ্ধে আপোশ করে ফেলি। শয়তান সবসময় এই সুযোগ খুঁজে বেড়ায় যে, কখন আমাদের “গ্রাস” করবে অর্থাৎ যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করে দেবে। (১ পিতর ৫:৮) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তাদের মারধর করা হয়েছিল আর এমনকী অনেক জনকে মেরেও ফেলা হয়েছিল। তাদের অপরাধ কী ছিল? তারা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিল, তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে যিহোবার আজ্ঞা পালন করবে। (প্রেরিত ৫:২৭, ২৮, ৪০; ৭:৫৪-৬০) শয়তান আজও ঈশ্বরের লোকদের উপর তাড়না নিয়ে আসে। এটা আমরা রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশে স্পষ্টভাবে দেখতে পাই, যেখানে ভাই-বোনদের খুবই নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে এবং তাদের বিরোধিতা করা হচ্ছে।

৯. একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন, কেন আমাদের লুকিয়ে করা আক্রমণ থেকে সতর্ক থাকা উচিত?

লুকিয়ে করা আক্রমণ। শয়তান সামনাসামনি আক্রমণ করার পাশাপাশি ‘ছলচাতুরীও’ ব্যবহার করে। (ইফি. ৬:১১) বব নামে একজন ভাইয়ের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তার এক বড়ো অপারেশন হওয়ার কথা ছিল, তাই তাকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। তিনি ডাক্তারদের বলেছিলেন, তিনি কোনোভাবেই রক্ত গ্রহণ করবেন না। যে-ডাক্তার তার অপারেশন করতেন, তিনি ভাইয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে, অপারেশন হওয়ার ঠিক আগের রাতে ভাইয়ের পরিবারের সদস্যেরা যখন ঘরে চলে গিয়েছিল, তখন অন্য একজন ডাক্তার (অজ্ঞান করার ডাক্তার) তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। সেই ডাক্তার ভাই ববকে বলেছিলেন, ‘মনে হয় না রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হবে। কিন্তু আমাদের হাতের কাছে রক্ত রাখব, যাতে প্রয়োজন পড়লে সঙ্গেসঙ্গে তা দিতে পারি।’ সেই ডাক্তার হয়তো ভেবেছিলেন, যখন ববের পরিবারের সদস্যেরা থাকবে না, তখন বব হয়তো তার মন পরিবর্তন করবেন। কিন্তু, ভাই বব তার সিদ্ধান্তে দৃঢ় ছিলেন। তিনি ডাক্তারকে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, তাকে যেন কোনো পরিস্থিতিতেই রক্ত দেওয়া না হয়।

১০. জগতের লোকদের চিন্তাধারা কেন আমাদের জন্য একটা ফাঁদ হতে পারে? (১ করিন্থীয় ৩:১৯, ২০)

১০ জগতের লোকদের চিন্তাধারা। আমরা যদি জগতের লোকদের মতো চিন্তা করি, তা হলে আমরা যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারি এবং তাঁর মানগুলো উপেক্ষা করতে পারি। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৩:১৯, ২০.) “জগতের প্রজ্ঞা” অর্থাৎ জগতের লোকদের চিন্তাধারা হল: ‘ঈশ্বরের কথা শোনার কোনো প্রয়োজন নেই বরং তোমার যা মন চায়, শুধু তা-ই করো!’ অতীতে পর্গাম ও থুয়াতীরার লোকদেরও এইরকম চিন্তাধারা ছিল। সেখানে প্রতিমাপূজা এবং অনৈতিক কাজ করা খুবই সাধারণ বিষয় ছিল। কিছু খ্রিস্টানের উপর সেই লোকদের প্রভাব পড়েছিল আর এর ফলে তারা তাদের মতো করে চিন্তা করতে শুরু করেছিল এবং অনৈতিক কাজগুলোকে প্রশ্রয় দিচ্ছিল। তাই, সেই দুটো মণ্ডলীকে যিশু কড়াভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (প্রকা. ২:১৪, ২০) আজ আমাদের উপরও জগতের লোকদের মতো চিন্তা করার চাপ আসে। আমাদের পরিবারের সদস্যেরা অথবা পরিচিত ব্যক্তিরা বলতে পারে, আমরা খুব বেশিই আইনকানুন মেনে চলি, একটু এদিক-ওদিক হলে কোনো সমস্যা নেই। যেমন, তারা হয়তো বলে, ‘নিজের ইচ্ছা বা শখ পূরণ করার মধ্যে ভুল কী? আজ জগৎ সমস্ত দিক দিয়ে কত উন্নত হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তুমি এখনও বাইবেলের নিয়ম ধরেই বসে আছ!’

১১. আমাদের কোন বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত?

১১ কখনো কখনো আমাদের মনে হতে পারে, যিহোবা আমাদের যে-নির্দেশনাগুলো দিচ্ছেন, সেগুলো থেকে বোঝা যায় না, কী করতে হবে এবং কী করতে হবে না। এইরকম সময়ে আমরা হয়তো “যা লেখা রয়েছে, সেটার বাইরে” যাওয়ার কিংবা আরও কিছু নিয়ম তৈরি করার কথা চিন্তা করতে পারি। (১ করি. ৪:৬) যিশুর দিনের ধর্মীয় গুরুরাও এই ভুলটা করেছিল। মোশির মাধ্যমে দেওয়া ব্যবস্থার পাশাপাশি তারা আরও কিছু আইন তৈরি করেছিল। আর এভাবে তারা যেন সাধারণ লোকদের উপর ভারী বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল। (মথি ২৩:৪) যিহোবা তাঁর বাক্য এবং তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেন। তাই, আমাদের নিজেদের মতো করে অন্য কোনো নিয়ম তৈরি করা উচিত নয়। (হিতো. ৩:৫-৭) সেইজন্য, বাইবেলে যা লেখা রয়েছে, আমরা “সেটার বাইরে” যাই না অথবা যে-বিষয়গুলোতে প্রত্যেককে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেই বিষয়ে আমরা ভাই-বোনদের জন্য কোনো নিয়ম তৈরি করি না।

১২. কীভাবে শয়তান ‘মিথ্যা যুক্তিতর্ক’ ছড়িয়ে থাকে?

১২ মিথ্যা যুক্তিতর্ক। শয়তান ‘মিথ্যা যুক্তিতর্ক’ এবং “এই জগতের মৌলিক ধারণা” ব্যবহার করে লোকদের ভ্রান্ত ও বিভক্ত করার চেষ্টা করে। (কল. ২:৮) প্রথম শতাব্দীতেও সে এই ছলচাতুরীগুলো ব্যবহার করেছিল। সেই সময়ে শয়তান চেয়েছিল যেন লোকেরা এমন দর্শনবিদ্যা বা মনগড়া কথাবার্তা কিংবা এমন যিহুদি শিক্ষাগুলো মানতে শুরু করে, যেগুলো শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে ছিল না। আর কিছু লোক এই শিক্ষা ছড়াচ্ছিল যে, খ্রিস্টানদের মোশির ব্যবস্থা পালন করা উচিত। এগুলো ভ্রান্ত করার মতো কথা ছিল কারণ এগুলোর কারণে লোকেরা প্রকৃত প্রজ্ঞার জন্য যিহোবার উপর মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে মানুষের উপর মনোযোগ দিতে শুরু করেছিল। আজ শয়তান সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে অপপ্রচার এবং মিথ্যা খবরগুলো ছড়িয়ে দিয়ে লোকদের ভ্রান্ত করে আর অনেকসময় এগুলোতে নেতাদেরও হাত থাকে। এইরকমটা আমরা কোভিড-১৯ চলাকালীন নিজেদের চোখে ঘটতে দেখেছি। যে-লোকেরা এই ভ্রান্ত করার মতো কথাগুলোর উপর মনোযোগ দিয়েছিল, তারা অযথা দুশ্চিন্তা করেছিল। কিন্তু, যিহোবার সাক্ষিরা তাদের সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনার উপর মনোযোগ দিয়েছিল, তাই তারা অযথা দুশ্চিন্তা করেনি।—মথি ২৪:৪৫.

১৩. কেন আমাদের সতর্ক থাকা উচিত যেন আমাদের মনোযোগ বিক্ষিপ্ত না হয়?

১৩ মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করার মতো বিষয়। আমাদের ‘বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর’ উপর থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া উচিত নয়। (ফিলি. ১:৯, ১০) আমরা যদি অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর উপর অতিরিক্ত মনোযোগ দিতে থাকি, তা হলে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর জন্য আমাদের হাতে সময়ই থাকবে না। এমনকী আমরা যদি খাওয়া-দাওয়া, আমোদপ্রমোদ, চাকরি-বাকরির মতো বিষয়গুলোর পিছনে অতিরিক্ত সময় দিই, তা হলে এগুলোর কারণেও আমাদের মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হতে পারে। (লূক ২১:৩৪, ৩৫) এ ছাড়া, প্রত্যেক দিন আমরা সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে অনেক খবর শুনতে পাই। এগুলোর ব্যাপারে সবার আলাদা আলাদা মতামত রয়েছে এবং তারা সেগুলো নিয়ে তর্কবিতর্ক করে। আমাদের সতর্ক থাকা উচিত যেন এই বিষয়গুলো আমাদের মনোযোগকে বিক্ষিপ্ত না করে, তা নাহলে আমরা মনে মনে কারো পক্ষ নিয়ে ফেলতে পারি। মনে রাখবেন, এখন আমরা যে-পাঁচটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি, সেগুলো সবই হল শয়তানের ছলচাতুরী, যেগুলো ব্যবহার করে সে আমাদের সঠিক কাজ করার সংকল্পকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এখন আসুন দেখি, কীভাবে আমরা শয়তানের ছলচাতুরী থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি এবং সুস্থির থাকতে পারি।

কীভাবে আমরা সুস্থির থাকতে পারি?

সুস্থির থাকার জন্য আপনার উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্মের বিষয়ে চিন্তা করুন, ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করুন এবং তা নিয়ে ধ্যান করুন, আপনার হৃদয়কে দৃঢ় করুন আর যিহোবার উপর আস্থা রাখুন (১৪-১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. যিহোবার পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য কোন বিষয়টা আমাদের সাহায্য করতে পারে?

১৪ আপনার উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্মের বিষয়ে চিন্তা করুন। কেন আপনি এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? কারণ আপনি যিহোবার পক্ষ নিতে চেয়েছিলেন। চিন্তা করুন, সেইসময়ে কোন বিষয়টা থেকে আপনি নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, আপনি যা শিখছেন, সেটাই সত্য। আপনি যিহোবার বিষয়ে সঠিক জ্ঞান নিয়েছিলেন, তাঁকে আরও ভালোভাবে জেনেছিলেন এবং তাঁকে সমাদর করতে শুরু করেছিলেন। আপনি তাঁকে আপনার পিতার মতো ভালোবাসতেও শুরু করেছিলেন। তাঁর উপর আপনার বিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছিল, আপনি আপনার ভুল কাজগুলোর জন্য অনুতপ্ত হয়েছিলেন। আপনি সেই কাজগুলো করা ছেড়ে দিয়েছিলেন, যেগুলো যিহোবা ঘৃণা করেন আর সেই কাজগুলো করতে শুরু করেছিলেন, যেগুলো দেখে তিনি খুশি হন। এরপর আপনি যখন বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবা আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তখন আপনি অনেক স্বস্তি পেয়েছিলেন। (গীত. ৩২:১, ২) আপনি সভাগুলোতে যেতে শুরু করেছিলেন, আপনি বাইবেল থেকে যে-ভালো বিষয়গুলো শিখছিলেন, সেগুলো অন্যদেরও বলতে শুরু করেছিলেন। তারপর, আপনি আপনার জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছিলেন এবং বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। এখন আপনি সেই পথে চলছেন, যেটা জীবনের দিকে নিয়ে যায় আর আপনি সবসময় এই পথে চলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন।—মথি ৭:১৩, ১৪.

১৫. অধ্যয়ন এবং ধ্যান করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১৫ ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করুন এবং তা নিয়ে ধ্যান করুন। একটা গাছের মূল যদি দৃঢ় হয়, তা হলে সেই গাছটা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। একইভাবে, ঈশ্বরের উপর আমাদের বিশ্বাস যদি মজবুত হয়, তা হলে আমরা সুস্থির থাকতে পারি। ধীরে ধীরে গাছ যত বড়ো হয়, সেটার মূল আরও গভীরে যায় এবং ছড়িয়ে পড়ে। একইভাবে, আমরা যখন ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে অধ্যয়ন করব এবং ধ্যান করব, তখন আমাদের বিশ্বাস আরও বৃদ্ধি পাবে। আমাদের এই নিশ্চয়তাও বৃদ্ধি পাবে, ঈশ্বরের বলা পথে চলাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। (কল. ২:৬, ৭) চিন্তা করুন, কীভাবে যিহোবা অতীতে তাঁর লোকদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং তাদের সুরক্ষা জুগিয়েছিলেন আর কীভাবে তারা সেগুলো থেকে উপকার লাভ করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, যিহিষ্কেল একটা দর্শনে দেখেছিলেন যে, একজন স্বর্গদূত একটা মন্দিরের পরিমাপ করছেন। যিহিষ্কেল সেই দর্শনটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখেছিলেন আর সেটা থেকে তার বিশ্বাস মজবুত হয়েছিল। এখান থেকে আমরা শিখি, বিশুদ্ধ উপাসনার ব্যাপারে কীভাবে আমাদের যিহোবার মান অনুযায়ী চলা উচিত। c (যিহি. ৪০:১-৪; ৪৩:১০-১২) আমরা যদি ঈশ্বরের বাক্যে লেখা গভীর বিষয়গুলো অধ্যয়ন করি এবং তা নিয়ে ধ্যান করি, তা হলে অতীতের উপাসকদের মতো আমরাও উপকার লাভ করব।

১৬. ভাই ববের হৃদয় “দৃঢ়” থাকার কারণে কীভাবে তিনি শয়তানের ছলচাতুরী থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন? (গীতসংহিতা ১১২:৭)

১৬ আপনার হৃদয় “দৃঢ়” করুন। যখন রাজা দায়ূদ একটা গীতে এই কথাগুলো বলেছিলেন, “হে ঈশ্বর, আমার হৃদয় দৃঢ়,” তখন তিনি হয়তো বলতে চেয়েছিলেন, যা-ই ঘটুক না কেন যিহোবার জন্য তার ভালোবাসা কখনো কমে যাবে না। (গীত. ৫৭:৭, NW) আমাদের হৃদয়ও দৃঢ় হতে পারে এবং আমরা যিহোবার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১২:৭.) আরেক বার ভাই ববের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। ডাক্তার যখন তাকে বলেছিলেন, অপারেশন চলাকালীন তিনি রক্ত কাছে রাখবেন, তখন লক্ষ করুন, বব সেই ডাক্তারকে কী বলেছিলেন। বব বলেছিলেন, তিনি যদি রক্ত দেওয়ার কথা চিন্তা করছেন, তা হলে ভাই এক মুহূর্তও সেখানে থাকবেন না। পরবর্তী সময়ে ভাই বব বলেন: “আমি নিজের সিদ্ধান্তের উপর একটুও সন্দেহ করিনি। আর আমি এটা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করিনি যে, আমার প্রতি কী ঘটতে পারে।”

আমরা যদি আগে থেকেই যিহোবার উপর আমাদের বিশ্বাস বৃদ্ধি করি, তা হলে বড়ো বড়ো সমস্যা এলেও আমরা সুস্থির থাকতে পারব (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭. ভাই ববের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (ছবিও দেখুন।)

১৭ ভাই ববের হৃদয় দৃঢ় ছিল কারণ তিনি হাসপাতালে যাওয়ার অনেক আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন, তিনি তার সিদ্ধান্তে স্থির থাকবেন। কীভাবে তিনি তা করতে পেরেছিলেন? প্রথমত, তিনি যিহোবাকে খুশি করতে চেয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, তিনি বাইবেলের সেই পদগুলো এবং আমাদের সেই প্রকাশনাগুলো নিয়ে ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন, যেগুলোতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, জীবন ও রক্ত কতটা পবিত্র। তৃতীয়ত, তিনি এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবার দেওয়া নির্দেশনা পালন করলে তিনি শুধু বর্তমানেই নয় কিন্তু ভবিষ্যতেও আশীর্বাদ লাভ করবেন। আজ আমাদের সামনেও যেকোনো ধরনের সমস্যা আসুক না কেন, আমাদের হৃদয়ও দৃঢ় থাকতে পারে।

বারক এবং তার সৈন্যেরা সাহসের সঙ্গে সীষরার সৈন্যদের পিছু ধাওয়া করছে (১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৮. বারকের উদাহরণ থেকে আমরা যিহোবার উপর আস্থা রাখার বিষয়ে কী শিখতে পারি? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৮ যিহোবার উপর আস্থা রাখুন। লক্ষ করুন, যখন বারক যিহোবার উপর আস্থা রেখেছিলেন এবং তাঁর দেওয়া নির্দেশনা মেনেছিলেন, তখন কীভাবে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। ইজরায়েলীয়েরা যুদ্ধের জন্য একটুও প্রস্তুত ছিল না। পুরো দেশে না কারো কাছে ঢাল ছিল, না বর্শা। তারপরও, যিহোবা বারককে নির্দেশনা দিয়েছিলেন যেন তিনি কনানের সেনাপতি সীষরার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। সীষরার সৈন্যের কাছে প্রচুর হাতিয়ার ছিল এবং ৯০০টা যুদ্ধরথ ছিল। (বিচার. ৫:৮) ভাববাদিনী দবোরা বারককে বলেছিলেন, তিনি যেন পার্বত্য এলাকা থেকে নীচে নেমে উপত্যকায় সীষরার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। বারক জানতেন, শত্রুদের কাছে যুদ্ধরথ রয়েছে আর সমভূমিতে তারা দ্রুত এসে তাদের আক্রমণ করতে পারে। তাই, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আরও কঠিন হবে। তারপরও, বারক যিহোবার দেওয়া নির্দেশনা মেনেছিলেন। বারক এবং তার সৈন্যেরা যখন তাবোর পর্বত থেকে নীচে নামছিল, তখন যিহোবা মুষলধারে বৃষ্টি নিয়ে এসেছিলেন। সীষরার যুদ্ধরথগুলো কাদায় আটকে গিয়েছিল আর যিহোবা বারককে জয়ী করেছিলেন। (বিচার. ৪:১-৭, ১০, ১৩-১৬) আজ আমরা যদি যিহোবার উপর আস্থা রাখি এবং সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলি, তা হলে যিহোবা এক অর্থে আমাদেরও জয়ী করবেন।—দ্বিতীয়. ৩১:৬.

সবসময় দৃঢ় থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন

১৯. কেন আপনি দৃঢ় থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন?

১৯ আমরা যতদিন এই জগতে বেঁচে রয়েছি, ততদিন আমাদের দৃঢ় থাকার জন্য ক্রমাগত লড়াই করতে হবে। (১ তীম. ৬:১১, ১২; ২ পিতর ৩:১৭) তাই আসুন, আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই যে, আমাদের উপর তাড়না করা হোক, লুকিয়ে আক্রমণ করা হোক, আমাদের আশেপাশে লোকেরা যা-ই চিন্তা করুক না কেন, মিথ্যা যুক্তিতর্ক দেখাক না কেন অথবা বিক্ষিপ্ত করার মতো বিষয়গুলো বলুক না কেন, আমরা কখনো টলে যাব না। (ইফি. ৪:১৪) এর পরিবর্তে, আমাদের দৃঢ় থাকতে হবে, সুস্থির থাকতে হবে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে যিহোবার আজ্ঞা পালন করে তাঁর উপাসনা করতে হবে। আর প্রয়োজন পড়লে আমাদের মেনে নিতে ইচ্ছুক কিংবা রদবদল করার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। পরের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, এই ক্ষেত্রে যিহোবা ও যিশু কীভাবে সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ রেখেছেন।

গান ১২৯ শেষ পর্যন্ত থাকব স্থির

a আদম ও হবার সময় থেকে শয়তান মানুষের মনে এই বিষয়টা ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে যে, তাদের নিজেদের স্থির করা উচিত, তাদের জন্য কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল। আজও শয়তান এটাই চায় যেন আমরা যিহোবার আইনগুলো এবং সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চলার পরিবর্তে নিজেদের ইচ্ছেমতো জীবনযাপন করি। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, এমনটা করা থেকে কীভাবে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি আর সুস্থির থেকে যিহোবার আজ্ঞা পালন করার ব্যাপারে আমাদের সংকল্পকে কীভাবে আরও দৃঢ় করতে পারি।

b রক্তের বিষয়ে ঈশ্বর যে-আজ্ঞা দিয়েছেন, একজন খ্রিস্টান কীভাবে তা পালন করতে পারেন, সেই বিষয়ে আরও জানার জন্য চিরকাল জীবন উপভোগ করুন! বইয়ের পাঠ ৩৯ দেখুন।