সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫২

বাবা-মায়েরা—আপনাদের সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসার জন্য প্রশিক্ষণ দিন

বাবা-মায়েরা—আপনাদের সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসার জন্য প্রশিক্ষণ দিন

“সন্তানেরা সদাপ্রভুদত্ত অধিকার।”—গীত. ১২৭:৩.

গান সংখ্যা ৪১ যৌবনকালে যিহোবার উপাসনা করো

সারাংশ *

১. যিহোবা বাবা-মায়েদের কোন দায়িত্ব দিয়েছেন?

যিহোবা প্রথম দম্পতিকে সন্তান জন্ম দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন। বাইবেল উপযুক্তভাবেই বলে: “সন্তানেরা সদাপ্রভুদত্ত অধিকার।” (গীত. ১২৭:৩) এর অর্থ কী? কল্পনা করুন, একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু তার হয়ে আপনাকে প্রচুর পরিমাণ সম্পত্তির যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। আপনি কেমন অনুভব করবেন? তিনি আপনার উপর আস্থা রেখেছেন বলে আপনি হয়তো সম্মানিত বোধ করবেন। কিন্তু, আপনি হয়তো এই ভেবে উদ্‌বিগ্ন হতে পারেন, আপনি কীভাবে সেই সম্পত্তিকে সুরক্ষিত রাখবেন। আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু যিহোবা বাবা-মায়েদের এমন কিছুর যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন, যেটা সম্পত্তির চেয়ে অনেক অনেক বেশি মূল্যবান। তিনি তাদের এই বিষয়ে খেয়াল রাখার দায়িত্ব দিয়েছেন, তাদের সন্তানদের যেন ভালোভাবে যত্ন নেওয়া হয় এবং সন্তানরা যেন সুখী হয়।

২. আমরা কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব?

কোনো বিবাহিত দম্পতি সন্তান নেবেন কি না আর নিলেও কখন তা নেবেন, সেই বিষয়ে কাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত? আর তাদের সন্তানরা যাতে এক সুখী জীবন লাভ করতে পারে, সেই বিষয়ে সাহায্য করার জন্য বাবা-মায়েরা কী করতে পারেন? ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া নীতিগুলোর মধ্যে কয়েকটা নিয়ে বিবেচনা করুন, যেগুলো খ্রিস্টান দম্পতিদের বিভিন্ন বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে।

দম্পতিদের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখান

৩. (ক) কোনো দম্পতি সন্তান নেবেন কি না, এই বিষয়ে কাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত? (খ) কোনো দম্পতির বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের বাইবেলের কোন নীতি মনে রাখা উচিত?

কোনো কোনো সংস্কৃতিতে নববিবাহিত দম্পতিদের কাছ থেকে আশা করা হয় যেন তারা বিয়ের পর পরই সন্তান নেয়। আর এক্ষেত্রে তাদের পরিবারের সদস্যরা এবং অন্যেরা হয়তো তাদের চাপ দেওয়ার চেষ্টা করে। জেথ্রো নামে এশিয়ার একজন ভাই বলেন, “মণ্ডলীর কোনো কোনো ব্যক্তি, যাদের সন্তান আছে, তারা সেই দম্পতিদের সন্তান নেওয়ার জন্য চাপ দেয়, যাদের সন্তান নেই।” জেফ্রি নামে এশিয়ার আরেকজন ভাই লক্ষ করেছেন, “যে-দম্পতিদের সন্তান নেই, তাদেরকে কেউ কেউ বলে থাকে, ‘বৃদ্ধ বয়সে কে তোমাদের যত্ন নেবে।’” তবে, প্রত্যেক দম্পতির এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যে, তারা সন্তান নেবেন কি না। এই সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে; এটা তাদের দায়িত্ব। (গালা. ৬:৫) এটা ঠিক যে, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা চায় যেন নববিবাহিত দম্পতি সুখী হয়। কিন্তু বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের এটা স্মরণে রাখতে হবে যে, সন্তান নেবেন কি না, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সেই দম্পতির রয়েছে।—১ তীম. ৫:১৩.

৪-৫. দম্পতিদের কোন দুটো প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করতে হবে এবং কখন এই ধরনের আলোচনা করা সর্বোত্তম হবে? ব্যাখ্যা করুন।

কোনো দম্পতি যদি সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে তাদের জন্য দুটো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা ভালো হবে: প্রথমত, তাদের কখন সন্তান নেওয়া উচিত? দ্বিতীয়ত, তারা ক-টি সন্তান নিতে চান? কোনো দম্পতির জন্য কখন এই ধরনের আলোচনা করা সর্বোত্তম হবে? আর কেন এই দুটো প্রশ্ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ?

সন্তান নেওয়ার বিষয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিয়ের আগেই কোনো দম্পতির আলোচনা করা উচিত। এই আলোচনা কেন বিয়ের আগে করা উচিত? কারণ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন তারা দু-জনেই এই বিষয়ে একইরকম চিন্তা করেন। এ ছাড়া, তাদের এই বিষয়টা বিবেচনা করতে হবে যে, তারা সেই দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত আছেন কি না। কোনো কোনো দম্পতি বিয়ের পর সন্তান নেওয়ার জন্য অন্ততপক্ষে এক বা দুই বছর অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারণ একবার বাবা-মা হয়ে যাওয়ার পর সন্তানদের যত্ন নেওয়ার জন্য তাদের অনেক সময় ও শক্তি ব্যয় করতে হবে। তারা এভাবে যুক্তি করেন যে, কিছু সময়ের জন্য অপেক্ষা করার মাধ্যমে তারা বিবাহিত দম্পতি হিসেবে একে অপরকে বোঝার এবং একসঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে একে অপরের ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য সময় পেতে পারবেন।—ইফি. ৫:৩৩.

৬. বিষম সময়ে বাস করার কারণে কোনো কোনো দম্পতি কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?

অন্যান্য খ্রিস্টানরা নোহের তিন ছেলে এবং তাদের স্ত্রীদের দ্বারা স্থাপিত উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করা বেছে নিয়েছে। সেই তিন দম্পতি বিয়ের পর পরই সন্তান নেননি। (আদি. ৬:১৮; ৯:১৮, ১৯; ১০:১; ২ পিতর ২:৫) যিশু ‘নোহের সময়ের’ সঙ্গে আমাদের সময়ের তুলনা করেছেন আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আমরা ‘বিষম সময়ে’ বাস করছি। (মথি ২৪:৩৭; ২ তীম. ৩:১) এই কারণে কোনো কোনো দম্পতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তারা একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে সন্তান নেবেন, যাতে তারা খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় আরও বেশি সময় ব্যয় করতে পারেন।

সন্তান নেবেন কি না আর নিলেও ক-টি সন্তান নেবেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে বিজ্ঞ দম্পতিরা “ব্যয় হিসাব করিয়া” থাকেন (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৭. লূক ১৪:২৮, ২৯ পদ এবং হিতোপদেশ ২০:১৮ পদে পাওয়া নীতিগুলো কীভাবে কোনো দম্পতিকে সাহায্য করতে পারে?

সন্তান নেবেন কি না আর নিলেও ক-টি সন্তান নেবেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে বিজ্ঞ দম্পতিরা “ব্যয় হিসাব করিয়া” থাকেন। (পড়ুন, লূক ১৪:২৮, ২৯.) যে-দম্পতিরা সন্তান মানুষ করেছেন, তারা জানেন যে, সন্তান মানুষ করার জন্য কেবলমাত্র অর্থের প্রয়োজনই হয় না কিন্তু সেইসঙ্গে সময় ও শক্তিরও প্রয়োজন হয়। তাই, এক দম্পতির জন্য এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ: ‘পরিবারের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য আমাদের দু-জনকেই কি কাজ করতে হবে? আমাদের পরিবারে জন্য কোন বিষয়গুলো সত্যিই প্রয়োজন, সেই বিষয়ে কি আমরা একমত? আমাদের দু-জনকেই যদি কাজ করতে হয়, তা হলে কে আমাদের সন্তানদের যত্ন নেবে? তাদের চিন্তাভাবনা ও কাজ কাদের দ্বারা প্রভাবিত হবে?’ দম্পতিরা যখন ধীরে-সুস্থে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করেন, তখন তারা হিতোপদেশ ২০:১৮ পদের কথাগুলো প্রয়োগ করেন। (পড়ুন।)

একজন প্রেমময় স্বামী তার স্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য করবেন (৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৮. খ্রিস্টান দম্পতিদের জীবনে কোন সমস্যাগুলো আসবে বলে আশা করা উচিত এবং একজন প্রেমময় স্বামী কী করবেন?

একটি সন্তানের বিকাশের জন্য তার বাবা ও মা উভয়ের কাছ থেকেই সময় ও শক্তির প্রয়োজন রয়েছে আর এগুলো তার প্রাপ্য। তাই, যদি কোনো দম্পতি অল্প সময়ের মধ্যেই একাধিক সন্তান নেন, তা হলে তারা হয়তো প্রত্যেক সন্তানের প্রতি প্রয়োজনীয় মনোযোগ দেওয়াকে কঠিন বলে মনে করতে পারেন। একাধিক সন্তান রয়েছে, এমন কোনো কোনো দম্পতি এটা স্বীকার করেছেন যে, তারা চাপগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। একজন মা হয়তো সবসময় অনেক ক্লান্তি বোধ করতে পারেন। তিনি হয়তো এতটাই ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন যে, তিনি অধ্যয়ন করার, প্রার্থনা করার এবং নিয়মিতভাবে প্রচারে যাওয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলতে পারেন। এ ছাড়া, খ্রিস্টীয় সভা চলাকালীন তাতে মনোযোগ দেওয়া এবং সেখান থেকে উপকার লাভ করাও তার জন্য কঠিন হয়ে যেতে পারে। অবশ্য, সন্তানদের যখন যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন একজন প্রেমময় স্বামী তার স্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য করবেন, হোক তা সভায় অথবা বাড়িতে। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি ঘরের টুকিটাকি কাজে তার স্ত্রীকে সাহায্য করতে পারেন। তিনি এই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করবেন যেন সবাই নিয়মিতভাবে পারিবারিক উপাসনা থেকে উপকার লাভ করে। আর তিনি তার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিতভাবে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নেবেন।

সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখান

৯-১০. সন্তানদের সাহায্য করার জন্য বাবা-মায়েদের অবশ্যই কী করতে হবে?

কিছু বিষয় কী, যেগুলো বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখানোর উদ্দেশে সাহায্য করার জন্য করতে পারেন? কীভাবে তারা তাদের সন্তানদের এই মন্দ জগতের বিপদগুলো থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন? কয়েকটা পদক্ষেপ নিয়ে বিবেচনা করুন, যেগুলো বাবা-মায়েরা নিতে পারেন।

১০ যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করুন। মানোহ ও তার স্ত্রী যে-উদাহরণ স্থাপন করেছেন, তা লক্ষ করুন, যারা শিম্‌শোনের বাবা-মা ছিলেন। মানোহ যখন বুঝতে পেরেছিলেন যে, তারা সন্তান লাভ করতে চলেছেন, তখন তিনি সন্তান মানুষ করে তোলার জন্য নির্দেশনা চেয়ে যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলেন।

১১. বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৩:৮ পদে যেমন বর্ণনা করা হয়েছে, কীভাবে বাবা-মায়েরা মানোহের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারেন?

১১ ভাই নিহাদ ও বোন আল্‌মা, যারা বসনিয়া ও হারজিগোভিনায় বাস করেন, মানোহের উদাহরণ থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন। তারা ব্যাখ্যা করেন: “কীভাবে ভালো বাবা-মা হওয়া যায়, সেই বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে মানোহের মতো আমরাও যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলাম। আর যিহোবা বিভিন্ন উপায়ে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন যেমন, বাইবেল, বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি, মণ্ডলীর সভা এবং সম্মেলনের মাধ্যমে।”—পড়ুন, বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৩:৮.

১২. যোষেফ ও মরিয়ম তাদের সন্তানদের জন্য কোন উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

১২ উদাহরণের মাধ্যমে শেখান। আপনি যা বলেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ; তবে, আপনি যা করেন, সেটা আপনার সন্তানের উপর সম্ভবত আরও গভীর ছাপ ফেলবে। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যোষেফ ও মরিয়ম তাদের সন্তানদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন, আর সেই সন্তানদের মধ্যে যিশুও ছিলেন। যোষেফ তার পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেন। এর পাশাপাশি, যোষেফ তার পরিবারের লোকেদের উৎসাহিত করেছিলেন যেন তারা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখায়। (দ্বিতীয়. ৪:৯, ১০) ব্যবস্থা অনুযায়ী যদিও যোষেফ নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করার জন্য তার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে যিরূশালেমে যেতে বাধ্য ছিলেন না, তারপরও তিনি “প্রতিবৎসর” তাদের নিয়ে যিরূশালেমে গিয়েছিলেন। (লূক ২:৪১, ৪২) হতে পারে, অন্যান্য বাবারা ভেবেছিল যে, পুরো পরিবারকে নিয়ে যাত্রা করা কঠিন হবে, অনেক সময় লাগবে এবং ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু, যোষেফ নিশ্চিতভাবেই আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন এবং তার সন্তানদেরও তা দেখাতে শিখিয়েছিলেন। এ ছাড়া, শাস্ত্র সম্বন্ধে মরিয়মের ভালো জ্ঞান ছিল। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, মরিয়ম তার কথা ও কাজের মাধ্যমে তার সন্তানদের ঈশ্বরের বাক্যকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন।

১৩. কীভাবে এক দম্পতি যোষেফ ও মরিয়মের উদাহরণ অনুসরণ করেছিলেন?

১৩ পূর্বে উল্লেখিত ভাই নিহাদ ও বোন আল্‌মা যোষেফ ও মরিয়মের উদাহরণ অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন। কীভাবে এটা তাদের ছেলেকে এমনভাবে মানুষ করে তুলতে সাহায্য করেছিল, যাতে সে ঈশ্বরকে ভালোবাসে এবং তাঁর সেবা করে? তারা বলেন, “আমাদের জীবনধারার মাধ্যমে আমরা আমাদের ছেলেকে এটা দেখানোর চেষ্টা করেছিলাম, যিহোবার নীতি অনুযায়ী জীবনযাপন করা কতটা উত্তম।” ভাই নিহাদ আরও বলেন, “আপনি সেইরকম ব্যক্তি হোন, যেরকম আপনার সন্তান হয়ে উঠুক বলে আপনি চান।”

১৪. কেন বাবা-মায়েদের এটা জানতে হবে যে, কাদের সঙ্গে তাদের সন্তানরা মেলামেশা করছে?

১৪ আপনার সন্তানদের উত্তম বন্ধুবান্ধব বাছাই করতে সাহায্য করুন। বাবা ও মা উভয়েরই এটা জানার প্রয়োজন রয়েছে, তাদের সন্তানরা কাদের সঙ্গে মেলামেশা করছে এবং তারা কী করছে। এর অর্থ হল বাবা-মায়েদের জানতে হবে যে, তাদের সন্তানরা সোশ্যাল মিডিয়া এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কাদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে। এই ধরনের মেলামেশা আপনার সন্তানদের চিন্তাভাবনা ও কাজের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।—১ করি. ১৫:৩৩.

১৫. ভাই জেসির উদাহরণ থেকে বাবা-মায়েরা কী শিখতে পারেন?

১৫ বাবা-মায়েদের যদি কম্পিউটার অথবা মোবাইল ডিভাইসের বিষয়ে খুব বেশি জ্ঞান না থাকে, তা হলে তারা কী করতে পারেন? ফিলিপিনসে বসবাসরত জেসি নামে একজন বাবা বলেন: “প্রযুক্তি সম্বন্ধে আমরা খুব কমই জানি। কিন্তু, এই কারণে যে আমরা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহারের সম্ভাব্য বিপদ সম্বন্ধে আমাদের সন্তানদের সতর্ক করতে পারিনি, এমন নয়।” ভাই জেসি নিজে তা ভালোভাবে ব্যবহার করতে জানতেন না বলে তার সন্তানদের তা ব্যবহার করা থেকে বিরত করেননি। তিনি ব্যাখ্যা করেন: “আমি আমার সন্তানদের একটা নতুন ভাষা শেখার, সভার জন্য অধ্যয়ন করার এবং প্রতিদিন বাইবেল পড়ার জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছিলাম।” আপনি যদি বাবা অথবা মা হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি কি আপনার সন্তানদের সঙ্গে টেক্সটিং এবং ইন্টারনেটে ছবি পোস্ট করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন, যে-তথ্য আপনি jw.org® ইংরেজি ওয়েবসাইটের “Teenagers” বিভাগে পেতে পারেন? আপনি কি তাদের সঙ্গে কার হাতে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে—তোমার না কি তোমার ডিভাইসের?সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিচক্ষণ হও শিরোনামের ভিডিওগুলো দেখেছেন এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন? * আপনি যখন আপনার সন্তানদের বিজ্ঞতার সঙ্গে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করার বিষয়ে শিক্ষা দেন, তখন এই বিষয়গুলো অনেক সাহায্যকারী হতে পারে।—হিতো. ১৩:২০.

১৬. অনেক বাবা-মা কী করেছেন এবং এর ফল কী হয়েছে?

১৬ অনেক বাবা-মা নিশ্চিতভাবেই ব্যবস্থা করেন যেন তাদের সন্তানরা এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে, যারা ঈশ্বরের সেবায় উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, নডেনি ও বোমিন নামে কোট ডিভোরে বসবাসরত এক দম্পতি প্রায়ই সীমা অধ্যক্ষকে তাদের বাড়িতে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানাতেন। ভাই নডেনি বলেন: “এটা আমাদের ছেলের উপর খুব ভালো প্রভাব ফেলে। সে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করে এবং বর্তমানে একজন বিকল্প সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করছে।” আপনি কি আপনার সন্তানদের জন্য একই ধরনের মেলামেশা করার ব্যবস্থা করতে পারেন?

১৭-১৮. বাবা-মায়েদের কখন থেকে সন্তানদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করা উচিত?

১৭ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সন্তানদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করুন। বাবা-মায়েরা যত তাড়াতাড়ি তাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন, সেটা সন্তানদের উপর তত ভালো প্রভাব ফেলে। (হিতো. ২২:৬) তীমথিয়ের কথা বিবেচনা করুন, যিনি বড়ো হয়ে প্রেরিত পৌলের সঙ্গে ভ্রমণ করেছিলেন। তীমথিয়ের মা উনীকী এবং তার দিদিমা লোয়ী তাকে “শিশুকাল অবধি” বা শিশুকাল থেকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।—২ তীম. ১:৫; ৩:১৫.

১৮ ঝানক্লোড ও পিস নামে কোট ডিভোরে বসবাসরত এক দম্পতি তাদের ছয় সন্তানকেই এমনভাবে মানুষ করে তুলেছেন যে, সেই সন্তানরা যিহোবাকে ভালোবাসতে এবং তাঁর সেবা করতে শিখেছে। কী এই দম্পতিকে সফল হতে সাহায্য করেছে? তারা উনীকী ও লোয়ীর উদাহরণ অনুসরণ করেছিলেন। তারা বলেন, “আমরা আমাদের সন্তানদের শিশু অবস্থা থেকেই অর্থাৎ জন্মগ্রহণ করার অল্প সময় পর থেকেই ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে যত্নপূর্বক শিক্ষা দিয়েছিলাম।”—দ্বিতীয়. ৬:৬, ৭.

১৯. আপনার সন্তানদের ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে যত্নপূর্বক শিক্ষা দেওয়ার অর্থ কী?

১৯ আপনার সন্তানদের যিহোবার বাক্য সম্বন্ধে “যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা” দেওয়ার অর্থ কী? “যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা” দেওয়ার অর্থ হল “বার বার উল্লেখ করার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া এবং স্মরণ করিয়ে দেওয়া।” এভাবে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাবা-মায়েদের নিয়মিতভাবে তাদের সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। কখনো কখনো বাবা-মায়েরা নিরুৎসাহিত হয়ে যেতে পারেন কারণ সন্তানদের একই নির্দেশনা বার বার দিতে হয়। কিন্তু, বাবা-মায়েরা এটাকে তাদের সন্তানদের ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে বুঝতে এবং সেটি প্রয়োগ করতে সাহায্য করার সুযোগ হিসেবে দেখার চেষ্টা করতে পারেন।

বাবা-মায়েদের এই বিষয়টা ঠিক করতে হবে যে, কীভাবে তারা তাদের প্রত্যেক সন্তানকে প্রশিক্ষণ দেবেন (২০ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

২০. গীতসংহিতা ১২৭:৪ পদ কীভাবে সন্তান মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে, ব্যাখ্যা করুন।

২০ আপনার সন্তানদের ভালোভাবে জানুন। গীতসংহিতা ১২৭ গীতে সন্তানদের তিরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১২৭:৪.) ঠিক যেমন আলাদা আলাদা বস্তু দিয়ে তির তৈরি করা যেতে পারে এবং তা আকারেও ভিন্ন হতে পারে, একইভাবে প্রতিটা সন্তানই আলাদা। তাই, বাবা-মায়েদের এই বিষয়টা ঠিক করতে হবে যে, কীভাবে তারা তাদের প্রত্যেক সন্তানকে প্রশিক্ষণ দেবে। ইজরায়েলে বসবাসরত এক দম্পতি তাদের দুই সন্তানকে এমনভাবে মানুষ করে তুলতে পেরেছেন, যাতে তারা যিহোবার সেবা করে। সেই দম্পতি যে-বিষয়টাকে সাহায্যকারী হিসেবে দেখেছেন, সেটা হল “আমরা আলাদা আলাদাভাবে আমাদের প্রত্যেক সন্তানের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতাম।” অবশ্য, প্রত্যেক পরিবারের মস্তক এটা ঠিক করবেন যে, এভাবে অধ্যয়ন করা জরুরি অথবা সম্ভব কি না।

যিহোবা আপনাকে সাহায্য করবেন

২১. বাবা-মায়েরা যিহোবার কাছ থেকে কোন সাহায্য আশা করতে পারেন?

২১ বাবা-মায়েরা কখনো কখনো তাদের সন্তানদের শিক্ষা দেওয়াকে অনেক কঠিন বলে মনে করতে পারেন কিন্তু সন্তানরা হল যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এক উপহার। যিহোবা বাবা-মায়েদের সাহায্য করার জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি বাবা-মায়েদের করা প্রার্থনাগুলো মন দিয়ে শোনেন। আর তিনি সেই প্রার্থনাগুলোর উত্তর বাইবেল, আমাদের প্রকাশনাদি এবং মণ্ডলীর অভিজ্ঞ বাবা-মায়েদের উদাহরণ ও পরামর্শের মাধ্যমে দেন।

২২. বাবা-মায়েরা সবচেয়ে ভালো যে-বিষয়গুলো তাদের সন্তানদের দিতে পারেন, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা কী?

২২ কেউ কেউ বলে থাকে যে, একটি সন্তান মানুষ করে তোলা হল ২০ বছরের প্রজেক্ট তবে বাবা-মায়েরা কখনোই সন্তানদের শেখানো বন্ধ করেন না। বাবা-মায়েরা সবচেয়ে ভালো যে-বিষয়গুলো তাদের সন্তানদের দিতে পারেন, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা হল ভালোবাসা, সময় এবং বাইবেলভিত্তিক প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময়ে প্রত্যেক সন্তানই আলাদা আলাদা প্রতিক্রিয়া দেখাবে। তবে, তাদের মধ্যে অনেকে এমন বাবা-মায়ের কাছে মানুষ হয়েছে, যারা যিহোবাকে ভালোবাসেন। সেই সন্তানরা এশিয়ায় বসবাসরত বোন জোয়ানা মের মতো অনুভব করে: “আমি বাবা-মায়ের কাছ থেকে যে-প্রশিক্ষণ লাভ করেছি, সেই বিষয়ে যখন চিন্তা করি, তখন আমি এই ভেবে অনেক কৃতজ্ঞ হই যে, তারা আমাকে শাসন করেছিলেন এবং যিহোবাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। তারা কেবল আমাকে জন্ম দেননি কিন্তু সেইসঙ্গে তারা আমাকে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেছেন।” (হিতো. ২৩:২৪, ২৫) আমাদের লক্ষ লক্ষ ভাই-বোন একইরকম অনুভব করে।

গান সংখ্যা ৯ আমাদের ঈশ্বর যিহোবার প্রশংসা করো!

^ অনু. 5 বিবাহিত দম্পতিদের কি সন্তান নেওয়া উচিত? তারা যদি সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে তাদের ক-টি সন্তান নেওয়া উচিত? আর কীভাবে তারা তাদের সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসার এবং তাঁর সেবা করার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে পারে? এই প্রবন্ধে আধুনিক দিনের কিছু উদাহরণ এবং বাইবেলের সেই নীতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো আমাদের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে।

^ অনু. 15 এ ছাড়া, ২০১৮ সালের জুন মাসেরআমাদের খ্রিস্টীয় জীবন ও পরিচর্যা—সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-য় দেওয়া “সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম—ফাঁদগুলো এড়িয়ে চলুন” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

^ অনু. 60 ছবি সম্বন্ধে: এক খ্রিস্টান দম্পতি সন্তান নেবেন কি না, সেই বিষয়ে আলোচনা করছেন এবং এর ফলে যে-আনন্দ ও দায়িত্ব আসবে, সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করছেন।

^ অনু. 64 ছবি সম্বন্ধে: দুটি সন্তানের বয়স ও বোধগম্যতা যেহেতু আলাদা, তাই তাদের বাবা-মা আলাদা আলাদাভাবে তাদের অধ্যয়ন করাচ্ছেন।