সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫০

যিহোবা আপনার জন্য মুক্তির ব্যবস্থা করেন

যিহোবা আপনার জন্য মুক্তির ব্যবস্থা করেন

“তোমরা . . . সমস্ত দেশে তথাকার সমস্ত নিবাসীর কাছে মুক্তি ঘোষণা করিবে।”—লেবীয়. ২৫:১০.

গান সংখ্যা ১৬ ঈশ্বরের রাজ্যের দিকে গমন!

সারাংশ *

১-২. (ক) কোনো কোনো ব্যক্তি কোন বার্ষিকী উদ্‌যাপন করে? (“ যোবেল বছর কী?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) (খ) লূক ৪:১৬-১৮ পদে যিশু কীসের বিষয়ে বলেছিলেন?

কোনো কোনো দেশে রাজা অথবা রানির রাজত্বের ৫০তম বছরকে বিশেষভাবে উদ্‌যাপন করা হয়। লোকেরা হয়তো এক দিন, এক সপ্তাহ অথবা এমনকী আরও বেশি সময় ধরে এই বার্ষিকী উদ্‌যাপন করে থাকে কিন্তু এই উদ্‌যাপনগুলো পরিশেষে সমাপ্ত হয়ে যায় এবং লোকেরা দ্রুত তা ভুলে যায়।

প্রাচীন ইস্রায়েলীয়রা প্রতি ৫০তম যোবেল বছরজুড়ে যে-উৎসব উদ্‌যাপন করত, আমরা এমনকী সেটার চেয়েও ভালো এক যোবেল বছর নিয়ে পরীক্ষা করব। প্রাচীন যোবেল বছর সেই ব্যক্তিদের মুক্তি প্রদান করত, যারা এটা পালন করত। কেন আমাদের এই বিষয়ে জানা উচিত? কারণ এটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যিহোবা আমাদের জন্য এক চমৎকার ব্যবস্থা করেছেন। এটা আমাদের এমন স্বাধীনতা প্রদান করবে, যেটা চিরস্থায়ী হবে এবং আমরা এখনই এটার দ্বারা উপকৃত হতে পারি। যিশু এই চমৎকার স্বাধীনতার বিষয়ে বলেছিলেন।—পড়ুন, লূক ৪:১৬-১৮.

ইস্রায়েলের লোকেরা যোবেল বছরে আনন্দ করত কারণ এই সময়ে দাসত্বে থাকা ইস্রায়েলীয়রা নিজেদের বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারত (৩ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৩. লেবীয় পুস্তক ২৫:৮-১২ পদের বিবরণ অনুযায়ী কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা যোবেল বছর থেকে উপকৃত হয়েছিল?

ঈশ্বর তাঁর লোকেদের জন্য শত শত বছর আগে যে-যোবেল বছরের ব্যবস্থা করেছিলেন, আমরা যদি সেটা নিয়ে প্রথমে আলোচনা করি, তা হলে আমাদের পক্ষে এটা বোঝা সহজ হয়ে যাবে যে, যিশু যখন স্বাধীনতার বিষয়ে বলেছিলেন, তখন তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “তোমরা পঞ্চাশত্তম বৎসরকে পবিত্র করিবে, এবং সমস্ত দেশে তথাকার সমস্ত নিবাসীর কাছে মুক্তি ঘোষণা করিবে; উহা তোমাদের জন্য যোবেল [তূরীধ্বনির মহোৎসব] হইবে; এবং তোমরা প্রতিজন আপন আপন অধিকারে ফিরিয়া যাইবে, ও প্রতিজন আপন আপন গোষ্ঠীর নিকটে ফিরিয়া যাইবে।” (পড়ুন, লেবীয় পুস্তক ২৫:৮-১২.) আগের প্রবন্ধে আমরা বিবেচনা করেছি যে, কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা সাপ্তাহিক বিশ্রামবার থেকে উপকৃত হয়েছিল। তবে, কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা যোবেল বছর থেকে উপকৃত হয়েছিল? উদাহরণ স্বরূপ, কল্পনা করুন, একজন ইস্রায়েলীয় ঋণের বোঝায় ডুবে গিয়েছেন আর এর ফলে ঋণ শোধ করার জন্য তাকে বাধ্য হয়ে নিজের জমি বিক্রি করতে হয়েছে। যোবেল বছর চলাকালীন তিনি তার জমি ফিরে পেতেন। তাই, সেই ব্যক্তি “আপন অধিকারে ফিরিয়া” যেতে পারতেন এবং পরে তার সন্তানরা উত্তরাধিকার সূত্রে সেই জমি লাভ করত। আরেকটা ক্ষেত্রে, কঠিন পরিস্থিতিতে থাকা একজন ব্যক্তিকে হয়তো বাধ্য হয়ে তার কোনো সন্তানকে অথবা এমনকী নিজেকে দাসত্বে বিক্রি করে দিতে হতো, যাতে তিনি ঋণ শোধ করতে পারেন। যোবেল বছর চলাকালীন সেই দাস “আপন গোষ্ঠীর নিকটে ফিরিয়া” যেতে পারতেন। তাই, কোনো ব্যক্তিকেই কোনোরকম আশা ছাড়াই সারা জীবন ধরে দাসত্বে থাকতে হতো না! এই ব্যবস্থা দেখায় যে, যিহোবা সত্যিই তাঁর লোকেদের জন্য চিন্তা করেন!

৪-৫. কেন ইস্রায়েলীয়দের যোবেল বছর সম্বন্ধে জানা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

যোবেল বছরের আরেকটা উপকারিতা কী? যিহোবা ব্যাখ্যা করেছিলেন: “তোমার মধ্যে কাহারও দরিদ্র হওয়া অনুপযুক্ত; কারণ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার অধিকারার্থে যে দেশ দিতেছেন, সেই দেশে সদাপ্রভু তোমাকে নিশ্চয়ই আশীর্ব্বাদ করিবেন।” (দ্বিতীয়. ১৫:৪) বর্তমানে যা ঘটছে, সেটার চেয়ে এটা কতই-না আলাদা! আমরা বর্তমানে সাধারণত ধনী ব্যক্তিদের আরও ধনী হতে এবং গরিব ব্যক্তিদের আরও গরিব হতে দেখি!

খ্রিস্টান হিসেবে আমরা মোশির ব্যবস্থার অধীনে নেই। এর অর্থ হল আমরা যোবেল বছরের আইন অনুসরণ করি না, যে-আইন অনুযায়ী দাসদের মুক্তি দেওয়া হতো, ঋণ মকুব করা হতো এবং লোকেদের পৈতৃক জমি ফিরিয়ে দেওয়া হতো। (রোমীয় ৭:৪; ১০:৪; ইফি. ২:১৫) কিন্তু, যোবেল বছর সম্বন্ধে জানা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেন? কারণ এটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যিহোবা আমাদের পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত বা স্বাধীন করার জন্য কী করেছেন।

যিশু মুক্তি সম্বন্ধে ঘোষণা করেছিলেন

৬. আমাদের সবারই কী থেকে মুক্তি লাভ করার প্রয়োজন রয়েছে?

আমাদের সবারই মুক্তি লাভ করার প্রয়োজন রয়েছে কারণ আমরা সবাই পাপের দাস, যেটা হল খুবই নিষ্ঠুর প্রকৃতির এক দাসত্ব। যেহেতু আমরা অসিদ্ধ, তাই আমরা বৃদ্ধ হই, অসুস্থ হই এবং মারা যাই। অনেকে যখন আয়নায় নিজেদের মুখ দেখে অথবা চিকিৎসা করানোর জন্য ডাক্তারের কাছে যায়, তখন এর সত্যতার প্রমাণ পায়। এ ছাড়া, আমরা যখন পাপ করি, তখন আমরা নিরুৎসাহিত হয়ে যাই। প্রেরিত পৌল স্বীকার করেছিলেন, “পাপের যে ব্যবস্থা আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আছে, আমাকে তাহার বন্দি দাস করে।” তিনি আরও বলেছিলেন: “দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি! এই মৃত্যুর দেহ হইতে কে আমাকে নিস্তার করিবে?”—রোমীয় ৭:২৩, ২৪.

৭. যিশাইয় স্বাধীনতার বিষয়ে কোন ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন?

আনন্দের বিষয় হল ঈশ্বর আমাদের জন্য পরিত্রাণ লাভ করার বা পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। যিশু হলেন সেই মুক্তি লাভ করার চাবিকাঠি। যিশু পৃথিবীতে আসার ৭০০ বছরেরও বেশি সময় আগে ভাববাদী যিশাইয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, ইস্রায়েলীয়রা যোবেল বছরে যে-স্বাধীনতা লাভ করতে পারত, পরবর্তী সময়ে লোকেরা সেটার চেয়েও অনেক বেশি স্বাধীনতা লাভ করবে। তিনি লিখেছিলেন: “প্রভু সদাপ্রভুর আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন, কেননা নম্রগণের কাছে সুসমাচার প্রচার করিতে সদাপ্রভু আমাকে অভিষেক করিয়াছেন; তিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমি ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের ক্ষত বাঁধিয়া দিই; যেন বন্দি লোকদের কাছে মুক্তি . . . প্রচার করি।” (যিশা. ৬১:১) এই ভবিষ্যদ্‌বাণী কার প্রতি প্রযোজ্য?

৮. স্বাধীনতা সম্বন্ধে যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী কার প্রতি প্রযোজ্য?

স্বাধীনতার বিষয়ে সেই গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্‌বাণী যিশু পরিচর্যা শুরু করার পর পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছিল। যিশু যখন তাঁর নিজের নগর নাসরতের সমাজগৃহে গিয়েছিলেন, তখন তিনি সেখানে উপস্থিত যিহুদিদের সামনে যিশাইয়ের সেই কথাগুলো পড়েছিলেন: “প্রভুর আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন, কারণ তিনি আমাকে অভিষিক্ত করিয়াছেন, দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচার করিবার জন্য; তিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, বন্দিগণের কাছে মুক্তি প্রচার করিবার জন্য, অন্ধদের কাছে চক্ষুর্দ্দান প্রচার করিবার জন্য, উপদ্রুতদিগকে নিস্তার করিয়া বিদায় করিবার জন্য, প্রভুর প্রসন্নতার বৎসর ঘোষণা করিবার জন্য।” তারপর যিশু বলেছিলেন যে, সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী তাঁর প্রতি প্রযোজ্য। (লূক ৪:১৬-১৯, ২১) কীভাবে যিশু সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ করেছিলেন?

প্রথমে যে-ব্যক্তিরা মুক্তি লাভ করেছিল

যিশু নাসরতের সমাজগৃহে মুক্তির বিষয়ে ঘোষণা করছেন (৮-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৯. যিশুর দিনে অনেকে কোন ধরনের স্বাধীনতার বিষয়ে আশা করেছিল?

যিশাইয় যে-মুক্তি বা স্বাধীনতার বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন এবং যিশু যে-মুক্তি বা স্বাধীনতার বিষয়ে পাঠ করেছিলেন, সেটা প্রথম শতাব্দীর লোকেরা লাভ করতে শুরু করেছিল। যিশু সেইসময়ে এটা নিশ্চিত করেছিলেন, যখন তিনি এই ঘোষণা করেছিলেন “অদ্যই এই শাস্ত্রীয় বচন তোমাদের কর্ণগোচরে পূর্ণ হইল।” (লূক ৪:২১) যারা যিশুর পাঠ শুনেছিল, তাদের মধ্যে অনেকে সম্ভবত রোমীয় সরকারের অধীনতা থেকে মুক্তি লাভ করার আশা করেছিল। তারা হয়তো সেই দুই জন ব্যক্তির মতো অনুভব করেছিল, যারা বলেছিলেন: “আমরা আশা করিতেছিলাম যে, তিনিই সেই ব্যক্তি, যিনি ইস্রায়েলকে মুক্ত করিবেন।” (লূক ২৪:১৩, ২১) কিন্তু আপনি জানেন যে, যিশু তাঁর অনুসারীদের রোমীয়দের রূঢ় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পরামর্শ দেননি। এর পরিবর্তে, তিনি তাদের ‘কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে দেওয়ার’ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। (মথি ২২:২১) তা হলে, কীভাবে যিশু সেই সময়ে স্বাধীনতা নিয়ে এসেছিলেন?

১০. যিশু কোন বিষয়টা থেকে লোকেদের মুক্ত করেছিলেন?

১০ ঈশ্বরের পুত্র লোকেদের দুটো উপায়ে মুক্তি বা স্বাধীনতা লাভ করতে সাহায্য করার জন্য এসেছিলেন। প্রথমত, যিশু ধর্মীয় নেতাদের বিভিন্ন মিথ্যা শিক্ষা থেকে লোকেদের মুক্ত হতে সাহায্য করেছিলেন। সেই সময়ে অনেক যিহুদিকে পরম্পরাগত রীতিনীতি এবং মিথ্যা বিশ্বাসগুলো অনুসরণ করার জন্য জোর করা হতো। (মথি ৫:৩১-৩৭; ১৫:১-১১) যে-লোকেরা বলত যে, তারা অন্যদের ঈশ্বরের সেবা করতে সাহায্য করছে, তারা নিজেরাই সঠিকভাবে ঈশ্বরের সেবা করত না আর তাই এটা এমন ছিল যেন অন্ধ অন্ধকে পথ দেখাচ্ছে। যেহেতু তারা মশীহকে এবং তাঁর শেখানো সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাই তারা ঈশ্বরকে জানতে পারেনি অর্থাৎ তারা অন্ধই থেকে গিয়েছিল এবং তাদের পাপ ক্ষমা করা হয়নি। (যোহন ৯:১, ১৪-১৬, ৩৫-৪১) যিশু তাঁর সঠিক শিক্ষা এবং উত্তম উদাহরণের মাধ্যমে মৃদুশীল ব্যক্তিদের দেখিয়েছিলেন যে, কীভাবে তারা বিভিন্ন মিথ্যা শিক্ষা থেকে মুক্ত হতে পারে।—মার্ক ১:২২; ২:২৩–৩:৫.

১১. দ্বিতীয় কোন উপায়ে যিশু মুক্তি প্রদান করেছিলেন?

১১ দ্বিতীয়ত, যিশু মানবজাতির জন্য উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার বিষয়টা সম্ভবপর করে তুলেছিলেন। যিশুর বলিদানের ভিত্তিতে ঈশ্বর সেই ব্যক্তিদের পাপ ক্ষমা করতে পারেন, যারা মুক্তির মূল্যের উপর বিশ্বাস রাখে এবং নিজেদের কাজের মাধ্যমে সেই বিশ্বাস প্রকাশ করে। (ইব্রীয় ১০:১২-১৮) যিশু বলেছিলেন: “পুত্ত্র যদি তোমাদিগকে স্বাধীন করেন, তবে তোমরা প্রকৃতরূপে স্বাধীন হইবে।” (যোহন ৮:৩৬) এই স্বাধীনতা নিশ্চিতভাবেই সেই স্বাধীনতার চেয়ে অনেক বেশি, যেটা ইস্রায়েলীয়রা যোবেল বছরে লাভ করতে পারত! উদাহরণ স্বরূপ, যোবেল বছরে স্বাধীন হওয়ার পর একজন ব্যক্তি আবারও দাসে পরিণত হতে পারতেন এবং অবশেষে মারা যেতেন।

১২. যিশু যে-মুক্তির বিষয়ে ঘোষণা করেছিলেন, কারা সেখান থেকে প্রথমে উপকৃত হয়েছিল?

১২ তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যিহোবা প্রেরিতদের এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীকে পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত করেছিলেন। তিনি তাদের দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, যাতে ভবিষ্যতে যিশুর সঙ্গে শাসন করার জন্য স্বর্গে তাদের পুনরুত্থিত করা যায়। (রোমীয় ৮:২, ১৫-১৭) তারাই সেই মুক্তির দ্বারা প্রথমে উপকৃত হয়েছিল, যেটার বিষয়ে যিশু নাসরতের সমাজগৃহে ঘোষণা করেছিলেন। সেই পুরুষ ও নারীরা আর যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের বিভিন্ন মিথ্যা শিক্ষা এবং অশাস্ত্রীয় অভ্যাসের দাসত্বের অধীনে ছিল না। এ ছাড়া, ঈশ্বর তাদের পাপের মারাত্মক প্রভাব থেকে মুক্ত হিসেবে দেখেছিলেন। স্বাধীনতা পুনর্স্থাপন করার বিষয়ে যিহোবার ব্যবস্থা সেইসময়ে শুরু হয়েছিল, যখন তিনি খ্রিস্টের অনুসারীদের অভিষিক্ত করেছিলেন এবং এটা খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের শেষে সমাপ্ত হবে। খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন উত্তম বিষয়গুলো ঘটবে?

আরও লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির জন্য মুক্তি

১৩-১৪. যিশু যে-মুক্তির বিষয়ে ঘোষণা করেছিলেন, সেখান থেকে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের পাশাপাশি আর কারা উপকার লাভ করতে পারে?

১৩ বর্তমানে, সমস্ত জাতি থেকে আসা লক্ষ লক্ষ আন্তরিক ব্যক্তি ‘আরও মেষের’ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। (যোহন ১০:১৬) ঈশ্বর তাদের যিশুর সঙ্গে স্বর্গে শাসন করার জন্য বাছাই করেননি। এর পরিবর্তে, তাদের পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার বিষয়ে বাইবেলভিত্তিক আশা রয়েছে। আপনারও কি পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রয়েছে?

১৪ আপনি এমনকী এখনই কিছু উপকার উপভোগ করছেন, যেগুলো অভিষিক্ত ব্যক্তিরা উপভোগ করে থাকে। যিশুর পাতিত রক্তের উপর আপনার বিশ্বাসের ভিত্তিতে আপনি আপনার পাপের ক্ষমা চাইতে পারেন। এর ফলে, আপনি ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করতে পারবেন এবং এক শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখতে পারবেন। (ইফি. ১:৭; প্রকা. ৭:১৪, ১৫) এ ছাড়া, আপনি বিভিন্ন মিথ্যা শিক্ষা থেকে স্বাধীন হওয়ার ফলে যে-আশীর্বাদগুলো উপভোগ করছেন, সেগুলো নিয়ে একটু চিন্তা করুন। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা সেই সত্য জানিবে, এবং সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে।” (যোহন ৮:৩২) এই ধরনের স্বাধীনতা লাভ করতে পেরে আমরা কতই-না আনন্দিত!

১৫. আমরা ভবিষ্যতে কোন স্বাধীনতা এবং আশীর্বাদগুলোর বিষয়ে আশা করতে পারি?

১৫ আপনি ভবিষ্যতে আরও বেশি স্বাধীনতা আশা করতে পারেন। শীঘ্রই যিশু মিথ্যা ধর্ম এবং কলুষিত সরকারগুলোকে নির্মূল করে দেবেন। ঈশ্বর ‘বিস্তর লোককে’ রক্ষা করবেন, যারা তাঁর সেবা করে আর তারপর তিনি পার্থিব পরমদেশে তাদের বিভিন্ন আশীর্বাদ উপভোগ করার সুযোগ দেবেন। (প্রকা. ৭:৯, ১৪) অগণিত ব্যক্তিকে পুনরুত্থিত করা হবে এবং তাদের কাছে আদমের পাপের সমস্ত প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে।—প্রেরিত ২৪:১৫.

১৬. ভবিষ্যতে মানবজাতি কোন চমৎকার স্বাধীনতা লাভ করবে?

১৬ হাজার বছরের রাজত্ব চলাকালীন যিশু ও তাঁর সহ-শাসকেরা মানবজাতিকে সিদ্ধ দেহ এবং ঈশ্বরের সঙ্গে এক নিখুঁত সম্পর্ক লাভ করতে সাহায্য করবেন। ইস্রায়েলীয়রা যোবেল বছরে যে-স্বাধীনতা উপভোগ করেছিল, হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে মানবজাতি সেটার চেয়েও বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করবে। এর অর্থ হল অনুগতভাবে যিহোবার সেবা করে, এমন সমস্ত মানুষই পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণরূপে সিদ্ধ হবে।

নতুন জগতে আমরা ব্যাবহারিক ও পরিতৃপ্তিদায়ক কাজ করাকে উপভোগ করব (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭. যিশাইয় ৬৫:২১-২৩ পদ ঈশ্বরের লোকেদের বিষয়ে কোন ভবিষ্যদ্‌বাণী করে? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৭ ভবিষ্যতে পৃথিবীতে জীবন কেমন হবে, সেই বিষয়ে আমরা যিশাইয় ৬৫:২১-২৩ পদে ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক বর্ণনা খুঁজে পাই। (পড়ুন।) সেই সময়ে আমরা অলসের মতো চুপচাপ বসে থাকব না। এর পরিবর্তে বাইবেল ইঙ্গিত দেয়, ঈশ্বরের লোকেরা সেই সময়ে উপকারজনক ও পরিতৃপ্তিদায়ক কাজ করবে। হাজার বছরের রাজত্বের শেষে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, “সৃষ্টি নিজেও ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে।”—রোমীয় ৮:২১.

১৮. কেন আমরা এটা বিশ্বাস করি যে, আমরা এক উত্তম ভবিষ্যৎ লাভ করব?

১৮ যিহোবা যেমন ইস্রায়েলীয়দের কাজ করার এবং বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন, একইভাবে তিনি আসন্ন খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময়েও তাঁর লোকেদের জন্য ব্যবস্থা করবেন। নিশ্চিতভাবেই, সেখানে ঈশ্বরের উপাসনা করার সময় থাকবে। এখনকার মতোই নতুন জগতেও সুখী হওয়ার জন্য ঈশ্বরের উপাসনা করা অপরিহার্য এক বিষয় হবে। হ্যাঁ, খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্ব চলাকালীন সমস্ত বিশ্বস্ত মানুষই আনন্দে থাকবে কারণ আমাদের সবার কাছে পরিতৃপ্তিদায়ক কাজ থাকবে এবং আমরা সবাই ঈশ্বরের সেবা করব।

গান সংখ্যা ৫৪ আমাদের বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন

^ অনু. 5 যিহোবা প্রাচীন ইস্রায়েলে মুক্তি বা স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য এক বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলেন। আর সেটা ছিল যোবেল বছর। খ্রিস্টানরা যদিও মোশির ব্যবস্থার অধীনে নেই কিন্তু যোবেল বছর আমাদের জন্য অর্থ রাখে। এই প্রবন্ধে আমরা দেখব, কীভাবে প্রাচীন যোবেল বছর আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যিহোবা আমাদের জন্য কিছু করেছেন এবং কীভাবে আমরা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারি।

^ অনু. 61 ছবি সম্বন্ধে: যোবেল বছরে দাসত্বে থাকা পুরুষদের মুক্তি দেওয়া হতো এবং তারা নিজেদের বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারত।