অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫২
যেভাবে আপনি নিরুৎসাহিতার সঙ্গে লড়াই করতে পারেন
“তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর; তিনিই তোমাকে ধরিয়া রাখিবেন।”—গীত. ৫৫:২২.
গান সংখ্যা ৩৮ যিহোবার ওপর তোমার ভার অর্পণ করো
সারাংশ *
১. আমরা যখন নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি, তখন আমাদের প্রতি কী ঘটতে পারে?
প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হই এবং সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য করি। কিন্তু, আপনি কি এই বিষয়ে একমত হবেন না যে, আমরা যখন নিরুৎসাহিত থাকি না, তখন আমরা আমাদের সমস্যাগুলোর সঙ্গে আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করি? তাই, নিরুৎসাহিতাকে আমাদের এমন এক অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি হিসেবে দেখতে হবে, যা আমাদের আস্থা, সাহস ও আনন্দকে কেড়ে নিতে পারে। হিতোপদেশ ২৪:১০ পদ বলে: “সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত।” হ্যাঁ, অবসন্নতা বা নিরুৎসাহিতা আমাদের সেই শক্তিকে কমিয়ে দিতে পারে, যা জীবনের সমস্যাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রয়োজন।
২. কোন কোন কারণে আমরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারি এবং এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে বিবেচনা করব?
২ আমরা বিভিন্ন কারণে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারি। এগুলোর মধ্যে কিছু আভ্যন্তরীণ, কিছু বাহ্যিক। সেই কারণগুলোর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, অসিদ্ধতা, দুর্বলতা ও অসুস্থতা। এ ছাড়া, এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যিহোবার সেবায় কোনো কাঙ্ক্ষিত কার্যভার লাভ না করা অথবা আমাদের সুসমাচারের প্রতি লোকদের সাড়া না দেওয়া। এই প্রবন্ধে আমরা এমন কিছু বিষয় নিয়ে বিবেচনা করব, যেগুলো আমরা নিরুৎসাহিতার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য করতে পারি।
যখন অসিদ্ধতা ও দুর্বলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়
৩. নিজেদের অসিদ্ধতা সম্বন্ধে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্য কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
৩ আমরা খুব সহজেই নিজেদের অসিদ্ধতা ও দুর্বলতা সম্বন্ধে এক ভারসাম্যহীন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে পারি। এর ফলে আমরা হয়তো এমনটা মনে করতে পারি, আমাদের ভুলত্রুটির কারণে যিহোবা কখনো আমাদের নতুন জগতে প্রবেশ করতে দেবেন না। এই ধরনের মনোভাব ক্ষতিকর হতে পারে। নিজেদের অসিদ্ধতাগুলোকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত? বাইবেল জানায় যে, যিশু খ্রিস্ট ছাড়া সমস্ত মানুষ “পাপ করেছে।” (রোমীয় ৩:২৩) কিন্তু, যিহোবা আমাদের ভুলত্রুটির উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেন না অথবা আমাদের কাছ থেকে সিদ্ধতা আশা করেন না। এর পরিবর্তে, তিনি হলেন একজন প্রেমময় পিতা, যিনি আমাদের সাহায্য করতে চান। এ ছাড়া, তিনি ধৈর্যশীল। নিজেদের দুর্বলতার সঙ্গে লড়াই করার এবং নিজেদের সম্বন্ধে এক ভারসাম্যহীন দৃষ্টিভঙ্গি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের যে-কঠোর প্রচেষ্টা করতে হয়, তা তিনি দেখেন আর আমাদের সাহায্য করার জন্য তিনি প্রস্তুত।—রোমীয় ৭:১৮, ১৯.
৪-৫. প্রথম যোহন ৩:১৯, ২০ পদের সঙ্গে মিল রেখে কেন সেই দুই জন বোন নিরুৎসাহিতার কাছে নতিস্বীকার করেননি?
৪ বোন ডেবোরা এবং বোন মারিয়ার উদাহরণ বিবেচনা করুন। * ছোটোবেলায় বোন ডেবোরার সঙ্গে প্রায়ই এমনভাবে আচরণ করা হতো, যার ফলে তিনি নিজেকে খুব ছোটো বলে মনে করতেন। তাকে খুব কমই প্রশংসা করা হতো। এর ফলে, তিনি নিজের বিষয়ে এক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছিলেন। তিনি যখন ছোটোখাটো ভুল করতেন, তখন তিনি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ বলে মনে করতেন। বোন মারিয়ারও একই সমস্যা ছিল। তার আত্মীয়স্বজন তার সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করত, যার কারণে তিনি নিজেকে খুব ছোটো বলে মনে করতেন। এর ফলে, নিজেকে তার অযোগ্য বলে মনে হতো। এমনকী বাপ্তিস্ম নেওয়ার পরও তিনি মনে করতেন, তিনি একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে পরিচয় দেওয়ার যোগ্য নন!
৫ তা সত্ত্বেও, এই দুই বোন যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেননি। কেন? এর একটা কারণ হল তারা আন্তরিক প্রার্থনা করার মাধ্যমে যিহোবার উপর নিজেদের ভার অর্পণ করেছিলেন। (গীত. ৫৫:২২) তারা এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, অতীতের অভিজ্ঞতাগুলো এবং নেতিবাচক অনুভূতি আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করে, তা আমাদের প্রেমময় পিতা জানেন। কিন্তু, তিনি আমাদের হৃদয়ে যে-উত্তম বিষয়গুলো রয়েছে—যে-গুণগুলো হয়তো আমরা নিজেদের মধ্যে দেখতে পাই না—সেগুলোও লক্ষ করেন।—পড়ুন, ১ যোহন ৩:১৯, ২০.
৬. একজন ব্যক্তি যদি কোনো ভুল করার পর আবারও সেই একই ভুল করেন, তা হলে তিনি কী করতে পারেন?
৬ একজন ব্যক্তি হয়তো কোনো মন্দ অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করছেন। কিন্তু, তিনি হয়তো সেই একই ভুল আবারও করে ফেলেন এবং নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। অবশ্য, আমরা যখন কোনো পাপ করি, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমরা দোষী বোধ করি। (২ করি. ৭:১০) তবে, আমাদের চরমে যাওয়া এবং নিজেদের দোষী বলে মনে করা উচিত নয়, এইরকম চিন্তা করা উচিত নয়: ‘আমি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছি। যিহোবা কখনো আমাকে ক্ষমা করবেন না।’ এটা সত্য নয় এবং এটা আমাদের যিহোবার সেবা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পরিচালিত করতে পারে। হিতোপদেশ ২৪:১০ পদে আমরা যা পড়েছি, তা মনে করে দেখুন—আমরা যখন অবসন্ন বা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি, তখন আমাদের শক্তি কমে যায়। এর পরিবর্তে, যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন এবং করুণা লাভ করার চেষ্টা করুন। (যিশা. ১:১৮) আপনি যদি আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হন, তা হলে যিহোবা আপনাকে ক্ষমা করবেন। আর প্রাচীনদের কাছে যান। তারা ধৈর্য ধরে আপনাকে সাহায্য করবেন, যাতে আপনি পুনরায় আধ্যাত্মিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।—যাকোব ৫:১৪, ১৫.
৭. আমরা যদি সঠিক কাজ করার জন্য লড়াই করে থাকি, তা হলে কেন আমাদের নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়?
রোমীয় ৭:২১-২৫) তাই, আপনি যদি কোনো দুর্বলতার সঙ্গে লড়াই করে থাকেন, তা হলে নিজেকে দোষী বলে মনে করবেন না। মনে রাখবেন, আমরা কেউই ঈশ্বরের সামনে এক ধার্মিক অবস্থান অর্জন করতে পারি না। আমাদের সবারই ঈশ্বরের মহাদয়ার প্রয়োজন রয়েছে, যা তিনি মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে দেখিয়ে থাকেন।—ইফি. ১:৭; ১ যোহন ৪:১০.
৭ ঝাঁ-লুক নামে ফ্রান্সের একজন প্রাচীন ভাই, দুর্বলতার সঙ্গে লড়াই করছে এমন ব্যক্তিদের উদ্দেশে এই কথাগুলো বলেন: “যিহোবা যাকে ধার্মিক হিসেবে দেখেন, তিনি এমন ব্যক্তি নন, যিনি কখনো ভুল করেন না বরং তিনি এমন ব্যক্তি, যিনি নিজের ভুলগুলোর জন্য দুঃখিত হন এবং সবসময় অনুতপ্ত হন।” (৮. আমরা যখন নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি, তখন আমরা সাহায্য লাভ করার জন্য কাদের উপর নির্ভর করতে পারি?
৮ উৎসাহ লাভ করার জন্য আমরা আমাদের মণ্ডলীর ভাই-বোনদের উপর নির্ভর করতে পারি! আমরা যখন কথা বলতে চাই, তখন তারা আমাদের কথা মন দিয়ে শুনতে এবং আমাদের হর্ষযুক্ত বা উৎসাহিত করতে পারে। (হিতো. ১২:২৫; ১ থিষল. ৫:১৪) জোয়ি নামে নাইজেরিয়ার একজন বোন, যিনি নিরুৎসাহিতার সঙ্গে লড়াই করেছেন, বলেন: “ভাই-বোনেরা পাশে না থাকলে, আমার যে কী হতো! ভাই-বোনদের উৎসাহ প্রমাণ দেয়, যিহোবা আমার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন। আমি এমনকী তাদের কাছ থেকে শিখতে পেরেছি যে, কীভাবে নিরুৎসাহিত ব্যক্তিদের উৎসাহিত করা যায়।” তবে, আমাদের এটা মনে রাখতে হবে, আমাদের ভাই-বোনেরা হয়তো সবসময় এটা জানে না, কখন আমাদের উৎসাহের প্রয়োজন রয়েছে। তাই, আমাদের হয়তো কোনো পরিপক্ব সহবিশ্বাসীর কাছে নিজে থেকে এগিয়ে যেতে হবে এবং আমাদের যে সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে, তা বলতে হবে।
যখন অসুস্থতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়
৯. গীতসংহিতা ৪১:৩ এবং ৯৪:১৯ পদ কীভাবে আমাদের উৎসাহিত করে?
৯ সাহায্য লাভ করার জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করুন। আমরা যখন অসুস্থ হই এবং বিশেষভাবে দীর্ঘসময় ধরে কোনো অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে থাকি, তখন আমাদের পক্ষে হয়তো ইতিবাচকভাবে চিন্তা করা কঠিন হয়ে পড়ে। যিহোবা যদিও এখন অলৌকিকভাবে আমাদের সুস্থ করেন না কিন্তু তিনি আমাদের সান্ত্বনা দেন এবং তিনি আমাদের ধৈর্য ধরার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করতে পারেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৪১:৩; ৯৪:১৯.) উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের যখন ঘরের ছোটোখাটো কাজ অথবা কেনাকাটা করার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তখন তিনি হয়তো সহখ্রিস্টানদের আমাদের সাহায্য করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেন। তিনি হয়তো আমাদের ভাই-বোনদের আমাদের সঙ্গে প্রার্থনা করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেন। কিংবা তিনি হয়তো আমাদের তাঁর বাক্য থেকে সেই সান্ত্বনামূলক অভিব্যক্তিগুলো, যেমন আসন্ন নতুন জগতে অসুস্থতা ও ব্যথাহীন সিদ্ধ জীবনের অপূর্ব আশা সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন।—রোমীয় ১৫:৪.
১০. কীভাবে ভাই ইসাং তার দুর্ঘটনার পর নিরুৎসাহিতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন?
১০ ইসাং নামে একজন ভাই, যিনি নাইজেরিয়ায় বাস করেন, একটা দুর্ঘটনার কারণে প্যারালিসিস রোগে আক্রান্ত হন। ডাক্তার তাকে বলেন, তিনি আর কোনোদিন হাঁটতে পারবেন না। এই কথা শুনে ভাই ইসাং বলেন, “আমার মন ভেঙে গিয়েছিল আর আমি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলাম।” কিন্তু, তিনি কি তার নিরুৎসাহিতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন? হ্যাঁ! কী তাকে সাহায্য করেছিল? তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার স্ত্রী কখনো যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা এবং তাঁর বাক্য অধ্যয়ন করা বন্ধ করিনি। এ ছাড়া, আমরা ঠিক করেছিলাম, আমাদের কাছে যে-উত্তম বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলোর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ হব আর এর মধ্যে রয়েছে ঈশ্বরের নতুন জগতে বেঁচে থাকার প্রত্যাশা।’
১১. খুব অসুস্থ থাকার সময়ে বোন সিন্ডি কীভাবে আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন?
১১ সিন্ডি নামে একজন বোন, যিনি মেক্সিকোতে বাস করেন, তার এক মারাত্মক রোগ ধরা পড়ে। কীভাবে তিনি সেই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন? তিনি যখন চিকিৎসা লাভ করছিলেন, তখন তিনি প্রতিদিন সাক্ষ্য দান করাকে তার লক্ষ্য করে তুলেছিলেন। তিনি লেখেন: “তা করার মাধ্যমে আমি চিকিৎসা, যন্ত্রণা অথবা অসুস্থতার উপর মনোযোগ না দিয়ে অন্যদের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পেরেছিলাম। আমি এইরকমটা করতাম: ডাক্তার অথবা নার্সদের সঙ্গে কথা হিতো. ১৫:১৫.
বলার সময়ে আমি তাদের পরিবারের বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম। তারপর আমি তাদের জিজ্ঞেস করতাম, কেন তারা এই কঠিন পেশা বেছে নিয়েছেন। এর ফলে, কোন বিষয়টা তাদের জন্য আগ্রহজনক হতে পারে, তা সহজেই বুঝতে পারতাম। তাদের মধ্যে অনেকে বলতেন, রোগীরা সচরাচর তাদের জিজ্ঞেস করে না যে, ‘সব কিছু কেমন চলছে?’ আর আমি তাদের প্রতি আগ্রহ দেখাতাম বলে অনেকে আমাকে ধন্যবাদ জানাত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনকী তাদের ঠিকানা এবং ফোন নম্বর আমাকে দিত। তাই, আমার জীবনের এই কঠিন সময়ে যিহোবা আমাকে এতটাই মনের আনন্দ দিয়েছেন যে, এমনকী আমি নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছি!”—১২-১৩. কীভাবে কোনো কোনো অসুস্থ অথবা অক্ষম ব্যক্তি পরিচর্যায় অংশ নিতে সমর্থ হয়েছে আর এর ফল কী হয়েছে?
১২ অসুস্থ অথবা অক্ষম ব্যক্তিরা পরিচর্যায় যতটুকু করতে চায়, ততটুকু করতে পারে না বলে হয়তো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। তবে, অনেকে প্রচার করার বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করতে সমর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে, লরেল নামে একজন বোন ৩৭ বছর ধরে কৃত্রিম ফুসফুসের মাধ্যমে বেঁচে ছিলেন। তার ক্যান্সার ছিল এবং বড়ো বড়ো অপারেশন হয়েছিল আর তিনি দীর্ঘদিন ধরে চর্মরোগে ভুগেছিলেন। কিন্তু, এমনকী এই চরম গুরুতর সমস্যাগুলোও তাকে প্রচার করা থেকে বিরত করতে পারেনি। তিনি সেই নার্স ও পরিচারকদের কাছে সাক্ষ্য দিতেন, যারা তার বাড়িতে আসত। এর ফল কী হয়েছিল? তিনি অন্ততপক্ষে ১৭ জন ব্যক্তিকে বাইবেলের সঠিক জ্ঞান লাভ করতে সাহায্য করেছিলেন! *
১৩ রিশার নামে ফ্রান্সের একজন প্রাচীন ভাই সেই ব্যক্তিদের উদ্দেশে ব্যাবহারিক পরামর্শ দেন, যারা নিজেদের ঘর থেকে বের হতে পারে না অথবা যারা নার্সিং হোমে থাকে। “আমি তাদের বলতে চাই, তারা যেন এমন জায়গায় কিছু সাহিত্য সাজিয়ে রাখে, যা সহজেই দেখা যায়। সাজিয়ে রাখা সেই সাহিত্যগুলো লোকদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলবে এবং আলোচনা শুরু করতে পরিচালিত করবে। এটা আমাদের সেই প্রিয় ভাই ও বোনদের উৎসাহিত করতে পারে, যারা আর ঘরে ঘরে প্রচারে যেতে পারে না।“ যারা ঘর থেকে বের হতে পারে না, তারাও চিঠি ও টেলিফোনে সাক্ষ্য দান করার মাধ্যমে পরিচর্যায় অংশ নিতে পারে।
যখন আমরা কোনো কাঙ্ক্ষিত কার্যভার লাভ করি না
১৪. রাজা দায়ূদ আমাদের জন্য কোন চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
১৪ আমরা হয়তো আমাদের বয়স, স্বাস্থ্য অথবা অন্যান্য বিষয়ের সীমাবদ্ধতার কারণে মণ্ডলীতে কিংবা সীমার মধ্যে কোনো কার্যভার অথবা সুযোগ লাভ না-ও করতে পারি। আমাদের পরিস্থিতি যদি এইরকম হয়, তা হলে আমরা রাজা দায়ূদের উদাহরণ থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি। তাকে যখন বলা হয়েছিল যে, ঈশ্বরের মন্দির নির্মাণ করার জন্য তাকে মনোনীত করা হয়নি, যে-কাজ করার জন্য তিনি আকুল আকাঙ্ক্ষী ছিলেন, তখন তিনি সেই ব্যক্তিকে পূর্ণসমর্থন জুগিয়েছিলেন, যাকে ঈশ্বর সেই কার্যভার পালন করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। দায়ূদ এমনকী সেই প্রকল্পের জন্য উদারভাবে দান দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের জন্য কতই-না ২ শমূ. ৭:১২, ১৩; ১ বংশা. ২৯:১, ৩-৫.
চমৎকার এক উদাহরণ স্থাপন করেছেন!—১৫. কীভাবে ভাই ইউগ নিরুৎসাহিতা কাটিয়ে উঠেছিলেন?
১৫ ইউগ নামে ফ্রান্সের একজন ভাই স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে প্রাচীন হিসেবে সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন আর তিনি এমনকী ঘরের সাধারণ কাজও করতে পারতেন না। তিনি লেখেন: “প্রথম প্রথম আমি নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করতাম আর আমি একেবারে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু, পরে আমি আমার সীমাবদ্ধতাগুলো মেনে নেওয়ার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলাম এবং সেই সীমাবদ্ধতাগুলোর মধ্যেও যিহোবার সেবায় আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলাম। আমি হাল ছেড়ে না দেওয়ার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। গিদিয়োন এবং তার সেই তিন-শো জন ব্যক্তি, যারা শ্রান্ত বা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, তাদের মতো আমি লড়াই চালিয়ে যাব!”—বিচার. ৮:৪.
১৬. স্বর্গদূতদের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখি?
১৬ বিশ্বস্ত স্বর্গদূতেরাও আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ। আহাবের শাসনকালে যিহোবা সেই দুষ্ট রাজাকে মুগ্ধ করার বা ভোলানোর বিষয়ে স্বর্গদূতদের পরামর্শ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কয়েক জন স্বর্গদূত নিজেদের মন্তব্য জানিয়েছিলেন। কিন্তু, ঈশ্বর এক জন স্বর্গদূতকে বেছে নিয়েছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন যে, তার পরামর্শ কার্যকরী হবে। (১ রাজা. ২২:১৯-২২) এতে কি অন্য বিশ্বস্ত স্বর্গদূতেরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিল, এইরকমটা ভেবেছিল, ‘অযথা আমি সময় নষ্ট করে পরামর্শ দিলাম?’ অবশ্যই না। স্বর্গদূতেরা প্রকৃতই নম্র এবং তারা চায় যেন সমস্ত গৌরব যিহোবার হয়।—বিচার. ১৩:১৬-১৮; প্রকা. ১৯:১০.
১৭. কোনো নির্দিষ্ট কার্যভার না থাকার কারণে আমরা যদি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি, তা হলে আমাদের কী করা উচিত?
১৭ যিহোবার একজন সাক্ষি হওয়ার এবং তাঁর রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করার যে-সুযোগ রয়েছে, সেটার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন। আমরা হয়তো কোনো কার্যভার লাভ করতে পারি অথবা কোনো কার্যভার হারাতে পারি। তবে, এই কার্যভারগুলো ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমাদের মূল্যবান করে তোলে না। আমরা যখন বিনয়ী ও নম্র হই, তখন আমরা যিহোবা এবং আমাদের ভাই-বোনদের কাছে সত্যিই মূল্যবান হয়ে উঠি। তাই, যিহোবার কাছে বিনতি করুন, যাতে তিনি আপনাকে বিনয়ভাব ও নম্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করেন। বিনয়ভাব ও নম্রতা সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্যে লিপিবদ্ধ বিভিন্ন চমৎকার উদাহরণ নিয়ে ধ্যান করুন। আপনি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী ইচ্ছুক মনে আপনার ভাই-বোনদের সেবা করুন।—গীত. ১৩৮:৬; ১ পিতর ৫:৫.
যখন লোকেরা সুসমাচারের প্রতি আগ্রহ দেখায় না
১৮-১৯. কীভাবে আমরা এমনকী সেইসময়েও পরিচর্যায় আনন্দ বজায় রাখতে পারি, যখন লোকেরা সুসমাচারের প্রতি আগ্রহ দেখায় না?
১৮ লোকেরা যখন সুসমাচারের প্রতি আগ্রহ দেখায় না অথবা বাড়িতে লোকদের বেশি পাওয়া যায় না, তখন আপনি কি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন? এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের যেভাবে পরিচর্যায় আরও বেশি আনন্দ লাভ করা যায়” শিরোনামের বাক্সে কিছু ব্যাবহারিক পরামর্শ রয়েছে। এ ছাড়া, পরিচর্যা সম্বন্ধে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এর অর্থ কী?
আনন্দ বজায় রাখার অথবা বৃদ্ধি করার জন্য আমরা কী করতে পারি? “১৯ ঈশ্বরের নাম ও রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখুন। যিশু স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন যে, অল্প লোকই জীবনের রাস্তা খুঁজে পাবে। (মথি ৭:১৩, ১৪) আমরা যখন পরিচর্যায় থাকি, তখন যিহোবা, যিশু ও স্বর্গদূতদের সঙ্গে কাজ করার সম্মান লাভ করি। (মথি ২৮:১৯, ২০; ১ করি. ৩:৯; প্রকা. ১৪:৬, ৭) যিহোবা সেই ব্যক্তিদের আকর্ষণ করেন, যারা যোগ্য। (যোহন ৬:৪৪) তাই, একজন ব্যক্তি যদি এখন আমাদের বার্তা শুনতে না চান, তা হলে হতে পারে পরের বার তিনি আমাদের বার্তা শুনবেন।
২০. যিরমিয় ২০:৮, ৯ পদ নিরুৎসাহিতার সঙ্গে লড়াই করার বিষয়ে আমাদের কী শেখায়?
২০ আমরা ভাববাদী যিরমিয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। তাকে এমন এক এলাকায় কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, যেখানে লোকেরা তার কথা শুনতে চায়নি। লোকেরা তাকে “সমস্ত দিন” টিটকারি দিত এবং বিদ্রূপ করত। (পড়ুন, যিরমিয় ২০:৮, ৯.) একটা পর্যায়ে তিনি এতটাই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন যে, হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি তা করেননি। কেন? “সদাপ্রভুর বাক্য” যেন যিরমিয়ের হৃদয়ে আগুন হিসেবে জ্বলছিল আর তাই তিনি সেটা সহ্য করতে পারছিলেন না! আমরা যখন আমাদের মন ও হৃদয়কে ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা পূর্ণ করি, তখন সেটা আমাদের ক্ষেত্রেও সত্য। এটাও একটা কারণ, যেজন্য আমাদের প্রতিদিন বাইবেল পড়তে এবং সেটি নিয়ে ধ্যান করতে হবে। এর ফলে, আমাদের আনন্দ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে এবং আরও বেশি লোক আমাদের কথা শুনতে চাইবে।—যির. ১৫:১৬.
২১. কীভাবে আমরা নিরুৎসাহিতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে পারি?
২১ আগে উল্লেখিত বোন ডেবোরা বলেন, “নিরুৎসাহিতাকে শয়তানের দ্বারা ব্যবহৃত এক শক্তিশালী অস্ত্রের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।” তবে, শয়তান এবং তার অস্ত্রশস্ত্রের চেয়ে যিহোবা আরও বেশি শক্তিশালী। তাই, আপনি যখন কোনো কারণে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন, তখন যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করুন। তিনি আপনাকে আপনার অসিদ্ধতা ও দুর্বলতাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবেন। তিনি আপনার অসুস্থতার সময়ে সমর্থন জোগাবেন। তিনি আপনাকে কার্যভার সম্বন্ধে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করবেন। আর তিনি আপনাকে আপনার পরিচর্যা সম্বন্ধে এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করবেন। এ ছাড়া, আপনার উদ্বিগ্নতার কথা হৃদয় উজাড় করে আপনার স্বর্গস্থ পিতাকে জানান। তাঁর সাহায্যে আপনি নিরুৎসাহিতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে পারেন।
গান সংখ্যা ৬ ঈশ্বরের দাসের প্রার্থনা
^ অনু. 5 আমরা সবাই কখনো কখনো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি। এই প্রবন্ধে আমরা কিছু নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো আমরা সেইসময় করতে পারি, যখন আমরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি। আমরা দেখব যে, যিহোবার সাহায্যে আমরা নিরুৎসাহিতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে পারি।
^ অনু. 4 কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
^ অনু. 12 ১৯৯৩ সালের ২২ জানুয়ারি সজাগ হোন! (ইংরেজি) পত্রিকায় বোন লরেল নিসবেটের জীবনকাহিনি পড়ুন।
^ অনু. 69 ছবি সম্বন্ধে: একজন বোন কিছু সময়ের জন্য নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন কিন্তু তিনি তার অতীতের সেবা নিয়ে চিন্তা করেন এবং যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন। তিনি নিশ্চিত যে, যিহোবা তার করা কাজগুলো এবং তিনি যা-কিছু করছেন, সেগুলো স্মরণে রাখেন।