সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি “পৃথিবীর উত্তরাধিকারী” হওয়ার জন্য প্রস্তুত?

আপনি কি “পৃথিবীর উত্তরাধিকারী” হওয়ার জন্য প্রস্তুত?

যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন: “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা মৃদুশীল, কারণ তারাই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে।” (মথি ৫:৫, পাদটীকা) আমরা সবাই সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি, যখন যিশুর এই প্রতিজ্ঞা পূরণ হবে। অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা সেইসময় পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে, যখন তারা যিশুর সঙ্গে স্বর্গে শাসন করবে। (প্রকা. ৫:১০; ২০:৬) কিন্তু, বেশিরভাগ খ্রিস্টান সেইসময় পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে, যখন তারা চিরকাল ধরে পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে। তখন তারা সিদ্ধ হয়ে যাবে, চারিদিকে শান্তি থাকবে এবং সবাই খুব আনন্দে থাকবে। তবে, এর আগে তাদের অনেক কিছু করতে হবে। আসুন, সেগুলোর মধ্যে তিনটে বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই: তাদের এই পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করতে হবে, নতুন জগতে পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে হবে এবং তাদের শেখাতে হবে। আসুন এও দেখি যে, আমরা এখন থেকে কী করতে পারি, যাতে সেই সময়ে যে-কাজগুলো হবে, তাতে আমরা সাহায্য করতে পারি।

আপনি কি পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করার জন্য প্রস্তুত?

মানুষকে সৃষ্টি করার পর ঈশ্বর তাদের বলেছিলেন: “পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর।” (আদি. ১:২৮) এর মানে হল, যিহোবা চেয়েছিলেন একদিন পুরো পৃথিবী পরমদেশে পরিণত হবে। পরবর্তী সময় যে-লোকেরা পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে, তারা ঈশ্বরের এই ইচ্ছাকে পূর্ণ করবে এবং পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করবে। আদম ও হবার কাছে এদন উদ্যান ছিল, তাদের শুধু ধীরে ধীরে সেটার সীমা বাড়াতে হত। তবে, আরমাগিদোনের পর লোকদের সমস্ত কিছু নতুনভাবে শুরু করতে হবে। তাদের অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ করতে হবে এবং পৃথিবীকে সুন্দর করে তুলতে হবে। সত্যিই, সেইসময় করার মতো অনেক কাজ থাকবে!

ইজরায়েলীয়েরা যখন ব্যাবিলন থেকে নিজেদের দেশে ফিরে এসেছিল, তখন তাদেরও কিছু এইরকমই করতে হত। তাদের দেশ ৭০ বছর ধরে ধ্বংসাবস্থায় পড়ে ছিল। কিন্তু, যিশাইয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, যিহোবার সাহায্যে তারা আবারও সেটাকে সুন্দর করে তুলবে। যিশাইয় লিখেছিলেন: ‘তিনি তাহার প্রান্তরকে এদনের ন্যায়, ও তাহার শুষ্ক ভূমিকে সদাপ্রভুর উদ্যানের ন্যায় করিবেন।’ (যিশা. ৫১:৩) আর ঠিক এমনটাই হয়। একইভাবে, পরবর্তী সময়ে যে-লোকেরা পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে, তারাও যিহোবার আশীর্বাদে পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করবে। কিন্তু, আপনি এখনই অনেক কিছু করতে পারেন, যাতে নতুন জগতে সেই কাজে সাহায্য করতে পারেন।

আপনি আপনার ঘরবাড়ি এবং সেটার আশেপাশের জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারেন। আপনার প্রতিবেশী তা করুক বা না-ই করুক, আপনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের বিষয়টা খেয়াল রাখতে পারেন। আপনি কিংডম হল ও সম্মেলন হল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার কাজেও সাহায্য করতে পারেন। আপনি চাইলে ত্রাণ কাজে অংশ নেওয়ার জন্য ফর্মও পূরণ করতে পারেন। এভাবে ভাইয়েরা জানতে পারবে যে, যখনই প্রয়োজন দেখা দেবে, আপনি সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছেন। তাই, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি আজ কোন দক্ষতা বাড়াতে পারি, যেটা নতুন জগতেও কাজে আসবে?’

আপনি কি পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত?

লক্ষ করুন, যিশু যখন যায়ীরের মেয়েকে পুনরুত্থিত করেছিলেন, তখন কী ঘটেছিল। তাকে পুনরুত্থিত করার ঠিক পরেই যিশু বলেছিলেন, সেই মেয়েকে যেন কিছু খাবার দেওয়া হয়। (মার্ক ৫:৪২, ৪৩) বারো বছরের একটি মেয়েকে খাবার দেওয়া কোনো বড়ো বিষয় ছিল না কারণ তার জন্য অল্প খাবারই যথেষ্ট। কিন্তু, একটু চিন্তা করুন, ‘যারা স্মরণিক কবরে রয়েছে, তারা সকলে যখন যিশুর রব শুনবে এবং বের হয়ে আসবে,’ তখন আমাদের সেই লোকদের জন্য কত কিছু করতে হবে। (যোহন ৫:২৮, ২৯) বাইবেলে এই বিষয়ে বেশি কিছু লেখা নেই, কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই তাদের খাবার, থাকার জায়গা এবং কাপড়ের প্রয়োজন হবে। আপনি আজ কী করতে পারেন, যাতে নতুন জগতেও লোকদের সাহায্য করতে পারেন? আসুন, কিছু বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই।

আপনি এখন থেকেই কী করতে পারেন, যেটা দেখাবে যে, আপনি পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য প্রস্তুত?

আপনার মণ্ডলীতে যদি ঘোষণা করা হয়, সীমা অধ্যক্ষের পরিদর্শন শুরু হবে, তা হলে আপনি কি তাকে আপনার বাড়িতে খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন? আর যদি আপনার মণ্ডলীতে এমন কোনো ভাই কিংবা বোন আসেন, যিনি আগে বেথেলে সেবা করতেন অথবা যিনি আগে সীমা অধ্যক্ষ ছিলেন, তা হলে আপনি কি ঘর খুঁজে পেতে তাকে সাহায্য করতে পারেন? যখন আঞ্চলিক কিংবা বিশেষ সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই অনেক কাজ থাকে। আপনার এলাকায় যদি কোনো সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে আপনি কি সেটার আগে কিংবা পরে কোনো কাজে সাহায্য করতে পারেন? অথবা আপনি কি সম্মেলনে আসা ভাই-বোনদের স্বাগত জানাতে পারেন?

আপনি কি পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের শেখানোর জন্য প্রস্তুত?

প্রেরিত ২৪:১৫ পদে যা লেখা আছে, তা থেকে বোঝা যায় যে, নতুন জগতে হয়তো কোটি কোটি লোক পুনরুত্থিত হবে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোক যিহোবাকে ভালোভাবে জানার সুযোগ পায়নি। তবে, তাদের যখন পুনরুত্থিত করা হবে, তখন তারা যিহোবাকে জানতে পারবে। a সেই লোকদের কারা শেখাবে? সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা, যারা দীর্ঘসময় ধরে যিহোবার সেবা করছে। (যিশা. ১১:৯) লক্ষ করুন, বোন শার্লট এই বিষয়ে কী বলছেন। তিনি সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন, যখন তিনি নতুন জগতে লোকদের শেখানোর সুযোগ পাবেন। বোন ইউরোপে, দক্ষিণ আমেরিকায় ও আফ্রিকায় অনেক প্রচার করেছেন। তিনি বলেন, “আমি সেই লোকদের শেখানোর জন্য উৎসুক হয়ে আছি, যাদের নতুন জগতে পুনরুত্থিত করা হবে। আমি যখন অতীতের কোনো ব্যক্তির বিষয়ে পড়ি, তখন প্রায়ই চিন্তা করি, ‘তিনি যদি যিহোবা সম্বন্ধে জানতেন, তা হলে তার জীবন কতই-না আলাদা হত!’ আমার খুব ইচ্ছা, আমি সেই লোকদের যিহোবার বিষয়ে শেখাব। আমি তাদের বলতে চাই, তারা যদি যিহোবার সেবা করে, তা হলে তাদের জীবন কত ভালো হবে।”

যিহোবার অনেক বিশ্বস্ত উপাসককেও পুনরুত্থিত করা হবে, যারা যিশুর আগে বেঁচে ছিল। আমাদের তাদেরও অনেক কিছু শেখাতে হবে। দানিয়েল সম্বন্ধে একটু চিন্তা করুন। তিনি এমন অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী লিখেছিলেন, যেগুলোর অর্থ তিনি নিজেই জানতেন না। নতুন জগতে আমরা তাকে সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীর অর্থ বলব আর সেইসঙ্গে এও বলব, সেগুলো কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে। একটু চিন্তা করুন, এটা আমাদের জন্য কত বড়ো এক সুযোগ হবে এবং তাকে শেখাতে পেরে আমরা কত আনন্দিত হব, তাই না! (দানি. ১২:৮) অথবা চিন্তা করুন, আমরা যখন রূৎ ও নয়মীকে বলব, পরবর্তী সময়ে তাদের বংশে মশীহের জন্ম হয়েছিল, তখন আমাদের কেমন লাগবে। নতুন জগতে পুরো পৃথিবীর লোকদের শেখানোর কাজ চলবে। সেই সময় আজকের মতো না কোনো চিন্তা থাকবে আর না কোনো বিক্ষিপ্ত করার মতো বিষয় থাকবে। তাই, চিন্তা করুন, সেই সময় লোকদের শেখাতে আমাদের কতই-না ভালো লাগবে!

আজ আপনি কী করতে পারেন, যাতে নতুন জগতে আপনি পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের শেখাতে পারেন? লোকদের আরও ভালো করে শেখানোর প্রচেষ্টা করুন এবং ক্রমাগত প্রচার কাজে অংশ নিন। (মথি ২৪:১৪) আপনি যদি বয়স্ক হন কিংবা আপনার পরিস্থিতি যদি ঠিক না হয় এবং এই কারণে আপনি যতটা করতে চান, ততটা প্রচার করতে না পারেন, তা হলেও হাল ছেড়ে দেবেন না। আপনি যা করতে পারেন, তা করুন। এভাবে আপনি নতুন জগতে লোকদের শেখানোর জন্য এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে পারবেন।

তাই, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে আছি? আমি কি সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি, যখন আমি এই পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করব, পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের সাহায্য করব এবং তাদের শেখাব?’ তাই এখন থেকেই আপনি এমন কাজগুলোতে অংশ নিন, যেগুলো আপনাকে নতুন জগতেও করতে হবে। তখন আপনি পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারবেন।

a ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “অনেক লোককে ধার্মিকতার প্রতি ফিরিয়ে আনা হবে!” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।