সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৯

আমরা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারি!

আমরা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারি!

‘ঈশ্বরের দান অনন্তজীবন।’—রোমীয় ৬:২৩.

গান ১২ অনন্তজীবনের প্রতিজ্ঞা

সারাংশ a

১. আমরা যখন অনন্তজীবনের বিষয়ে করা প্রতিজ্ঞা নিয়ে চিন্তা করব, তখন কী হবে?

 যিহোবা আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, আমরা যদি তাঁর আজ্ঞা পালন করি, তা হলে তিনি আমাদের “অনন্তজীবন” দেবেন। (রোমীয় ৬:২৩) একটু চিন্তা করুন, যিহোবা আমাদের কত ভালোবাসেন। তিনি চান যেন আমরা কখনোই তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে না যাই। আমরা যখন যিহোবার এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে চিন্তা করি, তখন নিশ্চিতভাবেই তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়।

২. আমরা যদি মনে রাখি, যিহোবা আমাদের অনন্তজীবন দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা হলে আমরা কী করতে পারব?

আমরা যখন মনে রাখি, যিহোবা আমাদের অনন্তজীবন দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন, তখন আমরা সাহসের সঙ্গে যেকোনো সমস্যার মোকাবিলা করতে পারি এবং তাড়না সহ্য করতে পারি। আর এমনকী লোকেরা যখন আমাদের মৃত্যুর হুমকি দেয়, তখনও আমরা যিহোবার সেবা করা বন্ধ করি না। এর কারণ হল আমাদের আস্থা রয়েছে, যিহোবার বিশ্বস্ত লোকেরা যদি মারাও যায়, তা হলে তিনি তাদের পুনরুত্থিত করবেন। আর এরপর, তারা পৃথিবীতে চিরকাল ধরে বেঁচে থাকতে পারবে। (যোহন ৫:২৮, ২৯; ১ করি. ১৫:৫৫-৫৮; ইব্রীয় ২:১৫) কিন্তু, কেন আমরা দৃঢ়নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমরা কখনো মারা যাব না এবং চিরকাল ধরে বেঁচে থাকতে পারব? আসুন, এর কিছু কারণ লক্ষ করি।

যিহোবা চিরকাল ধরে আছেন এবং চিরকাল ধরে থাকবেন

৩. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের অনন্তজীবন দিতে পারেন? (গীতসংহিতা ১০২:১২, ২৪, ২৭)

বাইবেল জানায়, যিহোবা চিরকাল ধরে আছেন এবং চিরকাল ধরে থাকবেন। আর তিনিই আমাদের জীবন দিয়েছেন। তাই, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি আমাদের অনন্তজীবন দিতে পারেন। (গীত. ৩৬:৯) যেমন, গীতসংহিতা ৯০:২ পদ যিহোবা সম্বন্ধে বলে: “অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল তুমিই ঈশ্বর।” ১০২ গীতেও এমনই কিছু কথা বলা হয়েছে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০২:১২, ২৪, ২৭.) আর ভাববাদী হবক্‌কূকও ঈশ্বর সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার পবিত্রতম, তুমি কি অনাদিকাল হইতে নহ? তুমি মরিবে না।” (হবক্‌. ১:১২, পাদটীকা।)

৪. আমাদের যদি এটা বুঝতে কঠিন লাগে যে, যিহোবা চিরকাল ধরে আছেন এবং চিরকাল ধরে থাকবেন, তা হলে এর মানে কি এই, তাঁর কোনো অস্তিত্ব নেই? ব্যাখ্যা করুন।

আপনার কি এটা বুঝতে একটু কঠিন লাগে যে, যিহোবা হলেন “অনাদি অনন্ত ঈশ্বর” অর্থাৎ তিনি চিরকাল ধরে আছেন এবং চিরকাল ধরে থাকবেন? (যিশা. ৪০:২৮) অতীতেও কিছু ব্যক্তির পক্ষে এটা বুঝতে কঠিন লেগেছিল। যেমন, একবার ইলীহূ ঈশ্বর সম্বন্ধে বলেছিলেন: “ঈশ্বর যে কত মহান তা আমরা বুঝতেও পারি না। তাঁর বয়স কত তা জানতে পারা সম্ভব নয়।” (ইয়োব ৩৬:২৬, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) কিন্তু মনে রাখুন, আমরা যদি কোনো বিষয় বুঝতে না পারি, তা হলে এর মানে এই নয়, সেই বিষয়টা মিথ্যা। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা হয়তো পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারি না, সূর্যের আলো কিংবা জল থেকে কীভাবে বিদ্যুৎ তৈরি হয়। কিন্তু এর মানে এই নয়, সেটা অস্তিত্বে নেই। একইভাবে, আমরা হয়তো এটা কখনো পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারব না, যিহোবার কোনো শুরু নেই এবং কোনো শেষ নেই। তিনি সেইসময় থেকে অস্তিত্বে রয়েছেন, যখন পৃথিবী, আকাশ, সূর্য, চাঁদ, তারা কিছুই ছিল না। কিন্তু, এর মানে এই নয়, তাঁর কোনো অস্তিত্ব নেই। (রোমীয় ১১:৩৩-৩৬) “তিনি নিজ শক্তিতে পৃথিবী গঠন করিয়াছেন। ... নিজ বুদ্ধিতে আকাশমণ্ডল বিস্তার করিয়াছেন।” (যির. ৫১:১৫; প্রেরিত ১৭:২৪) আমরা আর কোন কারণে নিশ্চিত থাকতে পারি, আমরা চিরকাল ধরে বেঁচে থাকতে পারব? আসুন, তা লক্ষ করি।

মানুষকে চিরকাল ধরে বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে

৫. যিহোবা আদম ও হবাকে কীভাবে সৃষ্টি করেছিলেন?

যিহোবা গাছপালা এবং জীবজন্তুকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, এগুলো অল্প সময়ের জন্য বেঁচে থাকতে পারে। তবে, তিনি মানুষকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যেন তারা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে। আর যিহোবা এটাই চেয়েছিলেন, তারা যেন কখনো মারা না যায়। কিন্তু, তিনি আদমকে এও বলেছিলেন: “সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।” (আদি. ২:১৭) আদম ও হবা যদি যিহোবার আজ্ঞার বাধ্য হতেন এবং সেই গাছের ফল না খেতেন, তা হলে তারা কখনো মারা যেতেন না। এরপর, যিহোবা নিশ্চয়ই সঠিক সময়ে তাদের ‘জীবনবৃক্ষের ফল’ খেতে দিতেন এবং তারা চিরকাল ধরে বেঁচে থাকতে পারতেন। bআদি. ৩:২২.

৬-৭. (ক) কেন আমরা বলতে পারি, মানুষকে এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যেন তারা চিরকাল ধরে বেঁচে থাকতে পারে? (খ) এমন কোন বিষয়গুলো রয়েছে, যেগুলো আপনি নতুন জগতে করতে চান? (ছবি দেখুন।)

কিছু বিজ্ঞানী অনুমান করে, সাধারণত একজন ব্যক্তি তার সারাজীবনে যত তথ্য নেয়, সেটার চেয়ে আরও বেশি তথ্য আমাদের মস্তিষ্ক ধরে রাখতে পারে। ২০১০ সালের বিজ্ঞানের একটা পত্রিকায় (সাইন্টিফিক অ্যামেরিকান মাইন্ড) বলা হয়েছিল, বিজ্ঞানীরা অনুমান করে যে, আমাদের মস্তিষ্ক প্রায় ২৫ লক্ষ জিবির মতো ডেটা ধরে রাখতে পারে। অন্য কথায় বললে, ৩০ লক্ষ ঘণ্টা (প্রায় ৩০০ বছর) ধরে যদি টিভি চলতে থাকে, তা হলে ততটা তথ্য আমাদের মস্তিষ্ক ধরে রাখতে পারে। আর এটা তো বিজ্ঞানীরা শুধু অনুমান করেছে। হতে পারে, আমাদের মস্তিষ্ক এর চেয়েও বেশি তথ্য ধরে রাখে। এটা থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যিহোবা আমাদের মস্তিষ্ককে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে এটা অনেক বেশি তথ্য ধরে রাখতে পারে। আমরা আমাদের ৭০-৮০ বছর জীবনে যতটা তথ্য নিই, সেটার চেয়ে অনেক বেশি।—গীত. ৯০:১০.

বাইবেলে লেখা আছে, ঈশ্বর মানুষের “হৃদয়মধ্যে চিরকাল” বেঁচে থাকার ইচ্ছাও দিয়েছেন। (উপ. ৩:১১) এই কারণেই আমরা কেউ মারা যেতে চাই না। বাইবেলেও লেখা আছে, মৃত্যু হল আমাদের শত্রু। (১ করি. ১৫:২৬) চিন্তা করুন, আমরা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখন আমরা কী করি। আমরা কি চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকি? না। আমরা ডাক্তারের কাছে যাই এবং ওষুধ খাই, যাতে আমরা সুস্থ হতে পারি। আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, আমরা তা করি, যাতে আমরা বেঁচে থাকতে পারি। আর আমাদের কোনো বন্ধু অথবা আত্মীয় যখন মারা যায়, তা তাদের বয়স যা-ই হোক না কেন, তখন আমরা অনেক দুঃখ পাই। (যোহন ১১:৩২, ৩৩) তাই আমরা দেখলাম, যিহোবা আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকার ইচ্ছা দিয়েছেন এবং আমাদের এমনভাবে সৃষ্টিও করেছেন, যাতে আমরা চিরকাল ধরে বেঁচে থাকতে পারি। এখান থেকে বোঝা যায়, যিহোবা চান যেন আমরা চিরকাল ধরে বেঁচে থাকি। তবে, এটা বিশ্বাস করার জন্য আমাদের কাছে আরও জোরালো কারণ রয়েছে। আসুন দেখি, যিহোবা অতীতে এমন কী করেছেন এবং বর্তমানে কী করছেন, যেগুলো থেকে বোঝা যায় যে, তিনি এখনও চান যেন আমরা চিরকাল বেঁচে থাকি।

আমাদের এটা ভেবে খুব ভালো লাগে যে, আমরা যখন চিরকাল ধরে বেঁচে থাকব, তখন কত কিছু করতে পারব (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন) c

যিহোবার উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয়নি

৮. যিশাইয় ৫৫:১১ পদ থেকে যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমরা কী জানতে পারি?

আদম ও হবা পাপ করেছিলেন, তাই তারা মারা গিয়েছিলেন। আর সেইসময় থেকে এখনও পর্যন্ত মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু, এর মানে এই নয়, যিহোবার উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৫:১১.) তিনি আজও এটাই চান যেন আমরা চিরকাল বেঁচে থাকি। আসুন দেখি, অতীতে যিহোবা তাঁর লোকদের কী বলেছিলেন আর এমন কী করেছিলেন, যেগুলো থেকে বোঝা যায় যে, তিনি তাঁর উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই পূরণ করবেন।

৯. যিহোবা কোন প্রতিজ্ঞা করেছেন? (দানিয়েল ১২:২, ১৩)

যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, যারা মারা গিয়েছে, তাদের তিনি পুনরুত্থিত করবেন এবং তখন তারা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারবে। (প্রেরিত ২৪:১৫; তীত ১:১, ২) ইয়োবও এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন, যারা মারা গিয়েছে, তাদের পুনরুত্থিত করার জন্য যিহোবা উৎসুক হয়ে রয়েছেন। (ইয়োব ১৪:১৪, ১৫) ভাববাদী দানিয়েলও জানতেন, যারা মৃত্যুতে ঘুমিয়ে রয়েছে, তাদের ঈশ্বর পুনরুত্থিত করবেন এবং তখন তারা চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে। (গীত. ৩৭:২৯; পড়ুন, দানিয়েল ১২:২, ১৩.) যিশুর দিনে যিহুদিরাও জানত, তারা যদি যিহোবার প্রতি অনুগত থাকে, তা হলে তিনি তাদের “অনন্তজীবন” দেবেন। (লূক ১০:২৫; ১৮:১৮) এ ছাড়া, যিশু অনেক বার লোকদের বলেছিলেন, যিহোবা লোকদের পুনরুত্থিত করবেন এবং তাদের অনন্তজীবন দেবেন। আর যিশু যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন যিহোবা তাঁকেও পুনরুত্থিত করেছিলেন।—মথি ১৯:২৯; ২২:৩১, ৩২; লূক ১৮:৩০; যোহন ১১:২৫.

এলিয় একটি ছেলেকে পুনরুত্থিত করেছিলেন। এটা থেকে আপনি কোন বিষয়ে নিশ্চিত হন? (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০. অতীতে অনেক লোককে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল, এখান থেকে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে কী শিখি? (ছবি দেখুন।)

১০ যিহোবাই আমাদের জীবন দিয়েছেন। তাই, একজন ব্যক্তি যদি মারাও যায়, তা হলে যিহোবা তাকে আবারও জীবন দিতে পারেন। সারিফতে বসবাসরত বিধবার ছেলে যখন মারা গিয়েছিল, তখন যিহোবা ভাববাদী এলিয়কে শক্তি দিয়েছিলেন যেন তিনি সেই ছেলেকে পুনরুত্থিত করতে পারেন। (১ রাজা. ১৭:২১-২৩) যিহোবা ভাববাদী ইলীশায়কেও শূনেমে থাকা একজন মহিলার ছেলেকে পুনরুত্থিত করার শক্তি দিয়েছিলেন। (২ রাজা. ৪:১৮-২০, ৩৪-৩৭) বাইবেলে এমন আরও ঘটনা রয়েছে, যেখানে যিহোবার সাহায্যে লোকদের পুনরুত্থিত করা হয়েছিল। এখান থেকে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে শিখি যে, যারা মৃত্যুতে ঘুমিয়ে রয়েছে, তাদের পুনরুত্থিত করার শক্তি তাঁর রয়েছে। যিহোবা এই শক্তি যিশুকেও দিয়েছিলেন। তাই, যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনিও লোকদের পুনরুত্থিত করতে পেরেছিলেন। (যোহন ১১:২৩-২৫, ৪৩, ৪৪) যিশু এও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, “যারা স্মরণিক কবরে রয়েছে, তারা সকলে তাঁর রব শুনবে এবং বের হয়ে আসবে।” এখন যিশু স্বর্গে রয়েছেন এবং তাঁকে ‘স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে।’ সেইজন্য, তিনি তাঁর এই প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে পারেন এবং লোকদের পুনরুত্থিত করার মাধ্যমে তাদের চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ দিতে পারেন।—মথি ২৮:১৮; যোহন ৫:২৫-২৯.

১১. মুক্তির মূল্যের কারণে কীভাবে আমরা অনন্তজীবন পেতে পারি?

১১ যিশুকে যাতনাদণ্ডে বিদ্ধ করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল। কেন যিহোবা যিশুকে এভাবে মারা যেতে দিয়েছিলেন? এর উত্তর আমরা যিশুর বলা এই কথাগুলো থেকে জানতে পারি: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করলেন যে, নিজের একজাত পুত্রকে দান করলেন, যাতে যে-কেউ তাঁর উপর বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, বরং অনন্তজীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) যিহোবা তাঁর পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছেন, যাতে পৃথিবীর জন্য তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ হয়। আর যিশুর এই মুক্তির মূল্যের জন্য আমরা পাপের ক্ষমা পেতে পারি এবং ভবিষ্যতে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারি। (মথি ২০:২৮) এই ব্যবস্থার বিষয়ে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “যেহেতু একজন মানুষের মধ্য দিয়ে মৃত্যু এসেছে, তাই মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থানও একজন মানুষের মধ্য দিয়ে হবে। কারণ ঠিক যেমন আদমের মাধ্যমে সকলে মারা যায়, তেমনই খ্রিস্টের মাধ্যমে সকলকে জীবিত করা হবে।”—১ করি. ১৫:২১, ২২.

১২. কীভাবে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করবেন?

১২ যিশু তাঁর শিষ্যদের ঈশ্বরের রাজ্য আসার এবং পৃথিবীতে তাঁর ইচ্ছা পূরণ করার বিষয়ে প্রার্থনা করতে বলেছিলেন। (মথি ৬:৯, ১০) আর পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল, মানুষ যেন এই পৃথিবীতে চিরকাল ধরে বেঁচে থাকে। যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য যিশুকে তাঁর রাজ্যের রাজা হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। যিহোবা প্রথম শতাব্দী থেকে ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তিকেও একত্রিত করে আসছেন, যাতে তারা যিশুর সঙ্গে মিলে তাঁর ইচ্ছা পূরণ করে।—প্রকা. ৫:৯, ১০.

১৩. আজ যিহোবা কী করছেন আর আমাদের প্রত্যেকের কী করা উচিত?

১৩ আজ যিহোবা লোকদের ‘এক বিরাট জনতাকে’ একত্রিত করছেন এবং তাদের শেখাচ্ছেন, যাতে তারা চিরকালের জন্য তাঁর রাজ্যে বেঁচে থাকতে পারে। (প্রকা. ৭:৯, ১০; যাকোব ২:৮) আজ জগতের লোকদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। তারা একে অন্যকে ঘৃণা করে এবং বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু, ‘বিরাট জনতার’ লোকেরা সবাইকে ভালোবাসে এবং কোনো বংশ কিংবা জাতির লোকদের ঘৃণা করে না। বলতে গেলে তারা যেন ‘আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল’ গড়ে তুলেছে। (মীখা ৪:৩) আজ জগতের লোকেরা যুদ্ধগুলোতে অংশ নিয়ে লোকদের মেরে ফেলছে। কিন্তু ‘বিরাট জনতার’ লোকেরা অন্যদের সত্য ঈশ্বর এবং তাঁর উদ্দেশ্যের বিষয়ে শেখাচ্ছে, যাতে তারা “প্রকৃত জীবন” পেতে পারে আর এই পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে। (১ তীম. ৬:১৯) এই লোকেরা ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করে, তাই কখনো কখনো তাদের পরিবারের সদস্যেরা তাদের বিরোধিতা করে। আর অনেকসময় তাদের আর্থিক সমস্যারও মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু, যিহোবা সবসময় এই বিষয়টা খেয়াল রাখেন, যেন তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ হয়। (মথি ৬:২৫, ৩০-৩৩; লূক ১৮:২৯, ৩০) এই সমস্ত কিছু থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, ঈশ্বরের রাজ্য এক বাস্তব সরকার আর এটার মাধ্যমে যিহোবা পরবর্তী সময়েও তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করবেন।

এক অপূর্ব ভবিষ্যৎ

১৪-১৫. কীভাবে যিহোবা মৃত্যুকে চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেবেন?

১৪ যিশু এখন স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা এবং খুব শীঘ্র তিনি সেই সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন, যেগুলো ঈশ্বর আমাদের কাছে করেছেন। (২ করি. ১:২০) ১৯১৪ সাল থেকে যিশু তাঁর শত্রুদের মাঝে কর্তৃত্ব করছেন। (গীত. ১১০:১, ২) খুব তাড়াতাড়ি যিশু এবং তাঁর সহ-শাসকেরা সমস্ত দুষ্ট ব্যক্তিকে শেষ করে দেবেন এবং তাঁর “জয় সম্পন্ন” করবেন।

১৫ যারা মারা গিয়েছে, যিশু তাঁর হাজার বছরের রাজত্বের সময় তাদের জীবন ফিরিয়ে দেবেন। আর সেই সময়, যারা যিহোবার আজ্ঞা পালন করবে, তারা ধীরে ধীরে সিদ্ধতার দিকে পৌঁছাবে। এরপর চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে। তখন যারা যিহোবার প্রতি অনুগত থাকবে, তারা “দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে” এবং চিরকাল ধরে সেখানে থাকবে। (গীত. ৩৭:১০, ১১, ২৯) সেইসময় পৃথিবীতে আনন্দপূর্ণ এবং শান্তির পরিবেশ থাকবে, যখন আমাদের ‘শেষ শত্রু মৃত্যুকে’ চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেওয়া হবে।—১ করি. ১৫:২৬.

১৬. যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার সবচেয়ে বড়ো কারণ কী হওয়া উচিত?

১৬ এই প্রবন্ধে আমরা বাইবেল থেকে তিনটে বিষয় জানতে পেরেছি, যেগুলো থেকে আমরা নিশ্চিত হই যে, আমরা চিরকাল ধরে বেঁচে থাকতে পারি। আমরা সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি, যখন আমাদের এই আশা পূরণ হবে। নিজেদের আশার বিষয়ে চিন্তা করলে আমরা সমস্যার মুখোমুখি হলেও যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে পারি। তবে, আমরা শুধু অনন্তজীবন পাব বলে যিহোবার প্রতি অনুগত থাকি না। যিহোবা ও যিশুর প্রতি অনুগত থাকার সবচেয়ে বড়ো কারণ হল, আমরা তাঁদের খুব ভালোবাসি। (২ করি. ৫:১৪, ১৫) তাই, আমরা তাঁদের মতো হওয়ার চেষ্টা করি এবং উদ্যোগের সঙ্গে লোকদের কাছে আমাদের আশার বিষয়ে জানাই। (রোমীয় ১০:১৩-১৫) আমরা যখন শুধু নিজেদের বিষয়ে চিন্তা করব না আর অন্যদের যিহোবা এবং তাঁর উদ্দেশ্যের বিষয়ে জানাব, তখন যিহোবা আমাদের দেখে সন্তুষ্ট হবেন এবং চাইবেন যেন আমরা চিরকাল ধরে তাঁর বন্ধু হয়ে থাকি।—ইব্রীয় ১৩:১৬.

১৭. আমাদের প্রত্যেককে কী করতে হবে? (মথি ৭:১৩, ১৪)

১৭ যিহোবা আজ প্রত্যেক মানুষকে সুযোগ দিচ্ছেন, যেন তারা অনন্তজীবন পেতে পারে। কিন্তু, আমরা যদি সেটা পেতে চাই, তা হলে আমাদের প্রত্যেককে জীবনের দিকে নিয়ে যায় এমন রাস্তায় ক্রমাগত চলতে হবে। (পড়ুন, মথি ৭:১৩, ১৪.) নতুন জগতে আমরা যখন চিরকাল ধরে বেঁচে থাকব, তখন আমাদের জীবন কেমন হবে? পরের প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে পারব।

গান ১ যিহোবার গুণাবলি

a যিহোবা আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, ভবিষ্যতে আমরা এই পৃথিবীতে চিরকাল ধরে বেঁচে থাকতে পারব। সেই সময় আমাদের আর মৃত্যুর ভয় থাকবে না। আপনিও কি চিরকাল ধরে বেঁচে থাকতে চান? এই প্রবন্ধে আমরা কিছু কারণের উপর মনোযোগ দেব যে, কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন এবং আমরা এই পৃথিবীতে চিরকাল ধরে বেঁচে থাকতে পারব।

b চিরকাল” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

c ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন বয়স্ক ভাই চিন্তা করছেন, তিনি যখন চিরকাল বেঁচে থাকবেন, তখন কী কী করবেন।