অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫১
সমস্যার সময়েও আপনি শান্তি পেতে পারেন!
“তোমরা উদ্বিগ্ন হোয়ো না কিংবা ভয়ে সংকুচিত হোয়ো না।”—যোহন ১৪:২৭.
গান ৩৯ আমাদের শান্তির অধিকার
সারাংশ a
১. ‘ঈশ্বরের শান্তি’ কী আর এটা থাকার ফলে আমরা কোন কোন উপকার লাভ করি? (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭)
বাইবেলে এমন এক শান্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, যেটা জগতের লোকেরা জানে না। এটাকে ‘ঈশ্বরের শান্তি’ বলা হয়। এটা হল এমন এক ধরনের স্বস্তি, যেটা আমরা সেইসময় পাই, যখন আমাদের পিতা যিহোবার সঙ্গে আমাদের এক ভালো সম্পর্ক থাকে। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.) ‘ঈশ্বরের শান্তি’ থাকার ফলে আমরা সুরক্ষিত বোধ করি। আর ভাই-বোনদের সঙ্গে আমাদের ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে কারণ তারাও যিহোবাকে ভালোবাসে। শুধু তা-ই নয়, আমরা “শান্তির ঈশ্বর” যিহোবার আরও নিকটবর্তী হই। (১ থিষল. ৫:২৩) আমরা যখন ঈশ্বরকে ভালো করে জানতে শুরু করি, তাঁর উপর আস্থা রাখি এবং তাঁর আজ্ঞাগুলো মেনে চলি, তখন সমস্যা এলেও আমরা অতিরিক্ত চিন্তায় ডুবে যাই না। কারণ আমাদের কাছে ‘ঈশ্বরের শান্তি’ রয়েছে।
২. কেন আমরা বলতে পারি, বিভিন্ন সমস্যা এলেও ‘ঈশ্বরের শান্তি’ পাওয়া সম্ভব?
২ কিন্তু, যখন কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে, বিপর্যয় আসে, দাঙ্গা বাধে কিংবা তাড়না করা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের খুব ভয় লাগে। সেইসময়ও কি আমরা ‘ঈশ্বরের শান্তি’ পেতে পারি? লক্ষ করুন, যিশু তাঁর শিষ্যদের কী বলেছিলেন: “তোমরা উদ্বিগ্ন হোয়ো না কিংবা ভয়ে সংকুচিত হোয়ো না।” (যোহন ১৪:২৭) অনেক ভাই-বোন যিশুর এই কথাগুলো মনে রেখেছে আর বিভিন্ন সমস্যা এলেও তারা যিহোবার সাহায্যে শান্ত থাকতে পেরেছে।
যখন কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে
৩. মহামারি দেখা দিলে কীভাবে আমাদের শান্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে?
৩ যখন কোনো মহামারি দেখা দেয়, তখন আমাদের জীবন ওলটপালট হয়ে যায়। চিন্তা করুন, যখন কোভিড-১৯ অতিমারি ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন কী হয়েছিল। রাতারাতি লোকদের জীবন পালটে গিয়েছিল। অনেক লোককে নিয়ে একটা সার্ভে করা হয়েছিল আর তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি লোক জানিয়েছে যে, তারা রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারত না। অতিমারি শুরু হওয়ার পর লোকেরা দুশ্চিন্তা করতে শুরু করেছিল। যেমন, তারা ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল, অতিরিক্ত মদ খেতে শুরু করেছিল আর সেইসঙ্গে কিছু লোক ড্রাগ নিতেও শুরু করেছিল। রিপোর্ট দেখায়, ঘরে ঘরে ঝগড়া, অশান্তি ও মারপিট শুরু হয়েছিল এবং অনেক লোক তো আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করেছিল। আপনার এলাকায় যদি কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন, যাতে আপনি ‘ঈশ্বরের শান্তি’ পেতে পারেন আর অতিরিক্ত চিন্তায় ডুবে না যান?
৪. যিশু শেষকালের বিষয়ে যা বলেছিলেন, সেটা মনে রাখলে কীভাবে আমরা শান্ত থাকতে পারি?
৪ যিশু আগে থেকেই বলেছিলেন, শেষকালে “একের-পর-এক স্থানে” মহামারি দেখা দেবে। (লূক ২১:১১) এই কথাগুলো মনে রাখলে কীভাবে আমরা শান্ত থাকতে পারি? যখন কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে, তখন আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি না কিংবা অবাকও হই না, কারণ আমরা জানি এমনটা ঘটবেই। তাই, আমরা যখন এইরকম খবর শুনি, তখন আসুন যিশুর এই পরামর্শ আমরা মনে রাখি: “তোমরা আতঙ্কিত হোয়ো না।”—মথি ২৪:৬.
৫. (ক) যখন কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে, তখন ফিলিপীয় ৪:৮, ৯ পদ অনুযায়ী আমরা কোন বিষয়ে প্রার্থনা করতে পারি? (খ) আপনি যদি বাইবেলের অডিও রেকর্ডিং শোনেন, তা হলে আপনি কীভাবে উপকৃত হবেন?
৫ যখন কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারি আর অতিরিক্ত চিন্তা করতে পারি যে, এরপর আমাদের কী হবে। বোন ডেজির প্রতি এমনই কিছু ঘটেছিল। b তার কাকা, জ্যাঠার ছেলে এবং ডাক্তার কোভিড-১৯-এর কারণে মারা গিয়েছিল। বোন চিন্তা করতে শুরু করেন, যদি তারও কোভিড হয়ে যায়, তা হলে তার বয়স্ক মায়ের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। বোনের এও চিন্তা ছিল, যদি তার চাকরি চলে যায়, তা হলে সংসার কীভাবে চলবে। দিনরাত বোন এই বিষয় নিয়েই চিন্তা করতেন, এই কারণে তিনি রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতেও পারতেন না। তবে, বোন এমন কী করেছিলেন, যাতে তিনি শান্ত থাকতে পারেন? তিনি যিহোবার কাছে বিশেষ করে এই বিষয়ে প্রার্থনা করেছিলেন, যেন যিহোবা তাকে মনের শান্তি দেন এবং তিনি ভালো বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৮, ৯.) এরপর বোন বাইবেলের অডিও রেকর্ডিং শোনেন। আর এভাবে বলতে গেলে যিহোবাকে তার সঙ্গে কথা বলতে দেন। বোন বলেন, “বাইবেলের পদগুলো এমনভাবে পড়া হয়েছে, যেগুলো শুনে আমি অনেক স্বস্তি পাই। আর অনুভব করতে পারি, যিহোবা আমাদের জন্য কত চিন্তা করেন।”—গীত. ৯৪:১৯.
৬. ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার এবং সভাগুলোতে যাওয়ার মাধ্যমে আপনি কীভাবে উপকৃত হবেন?
৬ কোনো এলাকায় যখন রোগ ছড়িয়ে পড়ে, তখন জীবন আগের মতো আর থাকে না, অনেক কিছু পালটে যায়। কিন্তু, যা-ই ঘটুক না কেন, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করা এবং সভাগুলোতে যাওয়া বন্ধ করবেন না। আমাদের অনেক ভিডিও এবং প্রকাশনা নিয়ে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আপনি এমন ভাই-বোনদের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে জানতে পারবেন, যারা আপনার মতো সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করছে। কিন্তু, তারপরও তারা যিহোবার সেবা করা বন্ধ করেনি। এই অভিজ্ঞতাগুলো থেকে আপনি অনেক উৎসাহ ও সাহস লাভ করবেন। (১ পিতর ৫:৯) এ ছাড়া, সভাগুলোতে যাওয়ার মাধ্যমে আপনি বাইবেলে লেখা কথাগুলোর উপর মনোযোগ দিতে পারবেন এবং ভালো বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারবেন। এর ফলে আপনি নিজে যেমন উৎসাহিত হবেন, তেমনই অন্যদেরও উৎসাহিত করতে পারবেন। (রোমীয় ১:১১, ১২) আপনি যখন এই বিষয়ে চিন্তা করবেন যে, কীভাবে যিহোবা সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করেছেন, যারা অসুস্থ ছিল, আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল কিংবা নিজেদের একা বলে মনে করেছিল, তখন আপনার বিশ্বাস বেড়ে যাবে এবং আপনি নিশ্চিত হবেন, যিহোবা আপনাকেও সাহায্য করবেন।
৭. আপনি প্রেরিত যোহনের কাছ থেকে কী শিখতে পারেন?
৭ আরেকটা বিষয়, ভাই-বোনদের সঙ্গে ক্রমাগত কথা বলুন। রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণে হতে পারে আমাদের একে অন্যের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। আর তখন আমরা হয়তো প্রেরিত যোহনের মতো অনুভব করি। তিনি তার বন্ধু গায়ের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কিছু পরিস্থিতির কারণে তিনি তা করতে পারছিলেন না। (৩ যোহন ১৩, ১৪) তাই, তিনি যা করতে পারতেন, তা-ই করেছিলেন। তিনি গায়কে একটা চিঠি লিখেছিলেন। আপনিও যদি ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করতে না পারেন, তা হলে তাদের ফোন করুন, ভিডিও কল করুন কিংবা তাদের ম্যাসেজ পাঠান। আপনি যখন তাদের সঙ্গে ক্রমাগত কথা বলবেন, তখন আপনার নিজেকে একা বলে মনে হবে না এবং আপনি শান্ত থাকতে পারবেন। আর আপনার যদি অতিরিক্ত চিন্তা হতেই থাকে, তা হলে আপনি প্রাচীনদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। তারা নিশ্চয়ই আপনাকে উৎসাহিত করবেন।—যিশা. ৩২:১, ২.
যখন কোনো বিপর্যয় আসে
৮. কোনো বিপর্যয় এলে কীভাবে আপনার শান্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে?
৮ আপনার এলাকায় কখনো কি কোনো বন্যা ও ভূমিকম্প হয়েছে কিংবা আগুন লেগেছে? হতে পারে, সেই বিষয়ে চিন্তা করে আপনি এখনও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। আর যদি সেইসময় আপনার কোনো বন্ধু কিংবা আত্মীয় মারা যায় অথবা আপনার কোনো প্রিয় জিনিস নষ্ট হয়ে যায়, তা হলে আপনি হয়তো অনেক দুঃখ পেয়েছেন, হয়তো আপনি রেগেও গিয়েছেন। কিন্তু, এর মানে এই নয়, আপনার বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়েছে কিংবা জিনিসপত্রের প্রতি আপনার অনেক মায়া রয়েছে। এইরকম পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে আর এইরকম সময়ে মনে উলটোপালটা চিন্তা আসতে পারে। লোকদেরও মনে হতে পারে, আপনার উদ্বিগ্ন হওয়া বা দুঃখ পাওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়। (ইয়োব ১:১১) কিন্তু, আপনি সেইসময়েও শান্ত থাকতে পারেন। কীভাবে?
৯. যিশু কী বলেছিলেন, যেটা বিপর্যয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে আমাদের সাহায্য করতে পারে?
৯ জগতের অনেক লোক মনে করে, তাদের এলাকায় কোনো বিপর্যয় আসবেই না। কিন্তু, আমরা এমনটা মনে করি না। আমরা মনে রাখি, যিশু আমাদের সময়ের বিষয়ে কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শেষ আসার আগে “বড়ো বড়ো ভূমিকম্প হবে” এবং এইরকম অন্যান্য বিপর্যয়ও আসবে। (লূক ২১:১১) তিনি এও বলেছিলেন, “মন্দতা বৃদ্ধি পাবে।” আর আজ আমরা এমনটাই চারিদিকে দেখতে পাচ্ছি। আমরা প্রায় দিনই অপরাধ, দৌরাত্ম্য, জঙ্গি হামলার খবর শুনতে পাই। (মথি ২৪:১২) যিশু কখনো এমনটা বলেননি, এই ধরনের বিপর্যয় শুধু সেই লোকদের উপর আসবে, যাদের উপর যিহোবার আশীর্বাদ নেই। যিহোবার অনেক বিশ্বস্ত উপাসককেও এইরকম সমস্যাগুলো ভোগ করতে হয়েছিল। তাই আমরা জানি যে, আমাদের উপরে যেকোনো সময় বিপর্যয় আসতে পারে। (যিশা. ৫৭:১; ২ করি. ১১:২৫) আর যদি বিপর্যয় আসে, তা হলে যিহোবা কোনো অলৌকিক কাজ করে আমাদের না-ও বাঁচাতে পারেন। তবে, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি আমাদের শান্ত থাকতে সাহায্য করবেন।
১০. বিপর্যয়ের জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার মাধ্যমে কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, যিহোবার উপর আমাদের আস্থা রয়েছে? (হিতোপদেশ ২২:৩)
১০ আমরা যদি আগে থেকে প্রস্তুতি নিই, কোনো বিপর্যয় এলে বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা কী করব, তা হলে যখন এইরকম কিছু ঘটবে, তখন আমরা শান্ত থাকতে পারব। আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার মানে কি এই, যিহোবার উপর আমাদের আস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে? না। এর পরিবর্তে, আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার মাধ্যমে আমরা দেখাই, তাঁর উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এর কারণ হল, যিহোবা নিজে চান যেন আমরা বিপর্যয় আসার আগে প্রস্তুতি নিই। তিনি তাঁর বাক্যে এই বিষয়টা লিখিয়েছেন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২২:৩.) অনেকসময় আমাদের বিভিন্ন পত্রিকায় এবং সভাতে এই বিষয়ে জানানো হয়, আমরা যেন বিপর্যয়ের জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিই। c আর নিয়মিতভাবে এই বিষয়ে ঘোষণাও করা হয়। আমরা যদি এখন থেকেই নির্দেশনাগুলো মেনে চলি, তা হলে এটা দেখাবে যে, যিহোবার উপর আমাদের আস্থা রয়েছে।
১১. বোন মার্গারেটের কাছ থেকে আপনি কী শিখেছেন?
১১ লক্ষ করুন, বোন মার্গারেটের প্রতি কী ঘটেছিল। একবার তার ঘরের পাশের একটা জঙ্গলে আগুন লেগে যায়। সেইসময় কর্তৃপক্ষেরা আদেশ দিয়েছিল, সেখানে বসবাসরত সমস্ত লোক যেন সেই এলাকা দ্রুত খালি করে দেয়। অনেক লোক একসঙ্গে সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিল, তাই রাস্তায় জ্যাম হয়ে যায়। চারিদিকে কালো ধোঁয়া ছেয়ে গিয়েছিল। আর বোন মার্গারেট তার গাড়ি থেকেও বের হতে পারছিলেন না। কিন্তু, তিনি তার ব্যাগে একটা ম্যাপ রেখেছিলেন, যেটাতে সেই এলাকা থেকে বের হওয়ার অন্য রাস্তা ছিল। বোন আগে থেকে সেই রাস্তাটা দেখেও রেখেছিলেন, যাতে প্রয়োজন পড়লে তার কোনো সমস্যা না হয়। এভাবে, আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার কারণে বোন তার জীবন রক্ষা করতে পেরেছিলেন।
১২. কেন আমাদের কর্তৃপক্ষদের এবং সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চলা উচিত?
১২ সবার সুরক্ষার বিষয়টা খেয়াল রেখে কর্তৃপক্ষেরা হয়তো কারফিউ জারি করতে পারে। আমাদের নিজেদের এলাকা ছাড়তে বলতে পারে কিংবা অন্য কোনো নির্দেশনা দিতে পারে। এইরকম সময়ে কিছু লোক হয়তো তাদের কথা মানতে দেরি করে কিংবা তারা দোনোমনো করে। কারণ তারা তাদের জিনিসপত্র ছেড়ে যেতে চায় না। কিন্তু, এইরকম সময়ে খ্রিস্টানদের কী করা উচিত? বাইবেলে লেখা আছে, ‘প্রভুর জন্য তোমরা মানুষের দ্বারা নিযুক্ত সমস্ত কর্তৃপক্ষের বশীভূত হও। রাজার বশীভূত হও, কারণ তিনি তোমাদের চেয়ে উচ্চপদে রয়েছেন; রাজ্যপালদের বশীভূত হও, কারণ রাজা তাদের নিযুক্ত করেছেন।’ (১ পিতর ২:১৩, ১৪) অনেক বার আমরা যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকেও নির্দেশনা পাই। যেমন, আমাদের প্রায় বলা হয়ে থাকে, আমরা যেন প্রাচীনদের কাছে আমাদের ফোন নম্বর এবং ঠিকানা দিই, যাতে প্রয়োজন পড়লে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনি কি তা দিয়েছেন? আমাদের এই নির্দেশনাও দেওয়া হতে পারে, আমাদের নিজেদের ঘরের মধ্যেই থাকতে হবে কিংবা আমাদের ঘর ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে হবে। অথবা আমাদের বলা হতে পারে, আমরা খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কোথায় পেতে পারি কিংবা কীভাবে আমরা অন্যদের সাহায্য করতে পারি। আমরা যদি নির্দেশনা মেনে না চলি, তা হলে আমাদের জীবন তো ঝুঁকির মুখে পড়বেই আর সেইসঙ্গে আমরা প্রাচীনদের জীবনও ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি। মনে রাখবেন, এই বিশ্বস্ত ভাইয়েরা আমাদের নেতৃত্ব নিচ্ছেন, তাই আমাদের কখনো তাদের কোনো সমস্যায় ফেলা উচিত নয়। (ইব্রীয় ১৩:১৭) লক্ষ করুন, এই বিষয়ে বোন মার্গারেট কী বলেছিলেন: “আমি প্রাচীনদের কথা শুনেছিলাম, সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনেছিলাম, ফলে আমি আমার জীবন রক্ষা করতে পেরেছিলাম।”
১৩. যে-ভাই-বোনদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, তারা কোন বিষয় থেকে শান্তি ও আনন্দ লাভ করেছে?
১৩ আজ অনেক ভাই-বোনকে বিপর্যয়, যুদ্ধ কিংবা দাঙ্গার কারণে তাদের নিজেদের এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যেতে হয়েছে। প্রথম শতাব্দীতেও এইরকমই কিছু ঘটেছিল। খ্রিস্টানদের বিরোধিতা করা হয়েছিল আর এই কারণে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিল। তবে, তারা “বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ঈশ্বরের বাক্যের সুসমাচার ঘোষণা করতে লাগল।” (প্রেরিত ৮:৪) একইভাবে, আজ যে-ভাই-বোনদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে হয়েছে, তাদেরও পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের পরিবর্তন করতে হয়েছে কিংবা মানিয়ে নিতে হয়েছে। তারা দ্রুত নতুন এলাকায় প্রচার করতে শুরু করেছে এবং প্রতিটা সভায় যাওয়ার চেষ্টা করেছে। প্রচার করার কারণে তারা তাদের মনোযোগ সমস্যাগুলোর উপর নয় বরং ঈশ্বরের রাজ্যের উপর বজায় রাখতে পেরেছে। এর ফলে, তারা শান্তি এবং আনন্দ লাভ করেছে।
যখন তাড়না করা হয়
১৪. তাড়নার কারণে কীভাবে আমাদের শান্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে?
১৪ আমরা যখন ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করি, তাদের সঙ্গে প্রচার করি এবং যিহোবার উপাসনা করি, তখন আমরা অনেক স্বস্তি পাই এবং আনন্দিত হই। কিন্তু, অনেক দেশে আমাদের ভাই-বোনেরা খোলাখুলিভাবে এই সমস্ত কিছু করতে পারে না। তারা যদি এই কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়, তা হলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় কিংবা তাদের উপর তাড়না করা হয়। যখন সরকার এইরকম বিধি-নিষেধ জারি করে, তখন আমাদের শান্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমরা অতিরিক্ত চিন্তা করতে পারি কিংবা এই ভেবে ঘাবড়ে যেতে পারি যে, পরে কী হবে। যখন এইরকম কিছু ঘটে, তখন একটু ভয় লাগে ঠিকই, কিন্তু আমরা যেন অতিরিক্ত চিন্তা না করি এবং ঘাবড়ে না যাই। যিশুও বলেছিলেন, তাড়নার কারণে আমাদের বিশ্বাস হারিয়ে যেতে পারে। (যোহন ১৬:১, ২) তাহলে, তাড়না সত্ত্বেও শান্ত থাকার জন্য আমরা কী করতে পারি?
১৫. কেন আমাদের তাড়নার বিষয়ে চিন্তা করে ভয় পাওয়া উচিত নয়? (যোহন ১৫:২০; ১৬:৩৩)
১৫ বাইবেলে লেখা আছে, “যত লোক খ্রিস্ট যিশুর শিষ্য হিসেবে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি সহকারে জীবনযাপন করতে চায়, তাদের সকলের প্রতিও তাড়না ঘটবে।” (২ তীম. ৩:১২) কিন্তু, অনেকসময় আমাদের পক্ষে এই কথাগুলো মেনে নেওয়া কঠিন হতে পারে। আমরা মনে করতে পারি, আমাদের উপর কখনো তাড়না আসবেই না। আন্দ্রে নামে একজন ভাইও এমনটা চিন্তা করছিলেন। তিনি যে-দেশে থাকেন, সেখানে আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তখন তিনি চিন্তা করেন, ‘এখানে তো অনেক সাক্ষি রয়েছে, এত লোককে তারা কীভাবে গ্রেপ্তার করবে?’ কিন্তু, এর ফলে তার দুশ্চিন্তা কমে যায়নি, উলটে আরও বেড়ে গিয়েছিল। এরপর, তিনি অন্য ভাইদের লক্ষ করেন। সেই ভাইয়েরা এইরকমটা চিন্তা করছিল না যে, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে না। এর পরিবর্তে, তারা সমস্ত কিছু যিহোবার হাতে ছেড়ে দিয়েছিল। এই কারণে তারা অতিরিক্ত চিন্তায় ডুবে যায়নি। তাদের দেখে আন্দ্রেও চিন্তা করেছিলেন, তিনিও তাদের মতো করবেন এবং যিহোবার উপর আস্থা রাখবেন। এমনটা করার ফলে আন্দ্রে ‘ঈশ্বরের শান্তি’ পেয়েছিলেন। যদিও তাকে এখনও বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তারপরও তিনি আনন্দে রয়েছেন। আমরাও সমস্যা সত্ত্বেও শান্ত থাকতে পারি। এ ছাড়া যিশু বলেছিলেন, আমাদের উপর তাড়না তো আসবেই, কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা অনুগত থাকতে পারব।—পড়ুন, যোহন ১৫:২০; ১৬:৩৩.
১৬. আমরা যে-এলাকায় থাকি, সেখানে আমাদের কাজের উপর যদি বিধি-নিষেধ কিংবা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তা হলে আমাদের কোন বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত?
১৬ আপনি যে-এলাকায় থাকেন, সেখানে যদি আমাদের কাজের উপর বিধি-নিষেধ কিংবা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তা হলে আপনি শাখা অফিস কিংবা প্রাচীনদের কাছ থেকে ক্রমাগত নির্দেশনা পাবেন। কেন এই নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়? কারণ আমরা যাতে সুরক্ষিত থাকতে পারি, সময়মতো প্রকাশনা পেতে পারি আর আমরা সতর্কতা অবলম্বন করে প্রচার কাজ করে যেতে পারি। এই নির্দেশনাগুলো মেনে চলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করুন। এই নির্দেশনাগুলো কেন দেওয়া হচ্ছে, যদি তা বুঝতে না পারেন, তারপরও সেগুলো মেনে চলুন। (যাকোব ৩:১৭) এমন কোনো ব্যক্তিকে আমাদের ভাই-বোন কিংবা মণ্ডলীর বিষয়ে তথ্য দেবেন না, যার সেই বিষয়ে জানার অধিকার নেই।—উপ. ৩:৭.
১৭. প্রেরিতদের মতো আমরা কী করে চলব?
১৭ শয়তান বিশেষ করে এই কারণে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে যে, আমাদের “যিশুর বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ দেওয়া হয়েছে।” (প্রকা. ১২:১৭) তবে, শয়তান এবং তার দুষ্ট জগৎকে ভয় পাবেন না। বিরোধিতা সত্ত্বেও লোকদের কাছে প্রচার করে চলুন এবং তাদের শিখিয়ে চলুন। এর ফলে, আপনি আনন্দ ও শান্তি লাভ করবেন। প্রথম শতাব্দীতেও যিহুদি মহাসভা যখন প্রেরিতদের বলেছিল, তারা যেন প্রচার কাজ বন্ধ করে দেয়, তখন তারা সেই লোকদের কথা শোনেনি। এর পরিবর্তে, তারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করেছিল আর প্রচার কাজ করে চলেছিল। এর ফলে, তারা অনেক আনন্দিত হয়েছিল। (প্রেরিত ৫:২৭-২৯, ৪১, ৪২) আমাদের কাজের উপর যখন বিধি-নিষেধ জারি করা হয়, তখন প্রচার করার সময় আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। (মথি ১০:১৬) কিন্তু, আমরা যখন আমাদের পক্ষে যতটা করা সম্ভব, ততটা প্রচার করার জন্য প্রচেষ্টা করব, তখন আমরা শান্তি লাভ করব। কারণ আমরা এমন এক কাজ করছি, যেটা লোকদের জীবন রক্ষা করতে পারে আর এটা দেখে যিহোবা খুশি হবেন।
‘শান্তির ঈশ্বর আপনার সঙ্গে থাকবেন’
১৮. কে আমাদের প্রকৃত শান্তি দিতে পারেন?
১৮ বিশ্বাস করুন, পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন, আমরা শান্ত থাকতে পারি। এইরকম সময়ে আমাদের ‘ঈশ্বরের শান্তির’ প্রয়োজন হয়, যেটা শুধু যিহোবাই দিতে পারেন। তাই, যখন কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে, বিপর্যয় আসে কিংবা আপনার উপর তাড়না করা হয়, তখন যিহোবার উপর আস্থা রাখুন। সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন এবং ভাই-বোনদের নিকটে থাকুন। যিহোবা আপনাকে যে-উত্তম জীবন দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেটার বিষয়ে চিন্তা করুন। আপনি যদি তা করেন, তা হলে ‘শান্তির ঈশ্বর আপনার সঙ্গে থাকবেন।’ (ফিলি. ৪:৯) অন্য ভাই-বোনেরাও আপনার মতো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করছে। আপনি তাদেরও সাহায্য করতে পারেন, যাতে তারা ‘ঈশ্বরের শান্তি’ পেতে পারে। এই বিষয়ে আমরা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করব।
গান ৬০ তিনি তোমায় সবল করবেন
a যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, যারা তাঁকে ভালোবাসে, তিনি তাদের শান্তি দেবেন। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, ‘ঈশ্বরের শান্তি’ কী আর আমরা কীভাবে তা পেতে পারি। আমরা এও জানতে পারব, যখন কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে, বিপর্যয় আসে কিংবা তাড়না করা হয়, তখন ‘ঈশ্বরের শান্তি’ থাকলে আমরা এইরকম পরিস্থিতির সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করতে পারি।
b কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
c ২০১৭ সালের সজাগ হোন! নং ৫ (ইংরেজি) পত্রিকায় দেওয়া “যখন বিপর্যয় আসে—কিছু পদক্ষেপ নিন এবং জীবন বাঁচান” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।