সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫২

সমস্যার সময়ে অন্যদের সাহায্য করুন

সমস্যার সময়ে অন্যদের সাহায্য করুন

“যাহাদের মঙ্গল করা উচিত, তাহাদের মঙ্গল করিতে অস্বীকার করিও না, যখন তাহা করিবার ক্ষমতা তোমার হাতে থাকে।”—হিতো. ৩:২৭.

গান ৪২ ‘দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর’

সারাংশ a

১. যখন যিহোবার কোনো উপাসক তাঁকে ডাকে, তখন প্রায়ই তিনি কীভাবে তাকে সাহায্য করেন?

 আপনি কি জানেন, যিহোবার কোনো উপাসক যখন সাহায্যের জন্য তাঁকে ডাকে, তখন তিনি আপনার মাধ্যমে তাকে সাহায্য করতে পারেন? আপনি প্রাচীন কিংবা পরিচারক দাস, অগ্রগামী কিংবা প্রকাশক, বয়স্ক কিংবা অল্পবয়সি, ভাই কিংবা বোন যে-ই হোন না কেন, যিহোবা আপনাকে ব্যবহার করতে পারেন। প্রায়ই যিহোবা প্রাচীন এবং তাঁর অন্য বিশ্বস্ত উপাসকদের মাধ্যমে সেই লোকদের “সান্ত্বনা” দেন, যারা তাঁকে ডাকে। (কল. ৪:১১) চিন্তা করুন, এটা কত বড়ো এক সুযোগ যে, যিহোবা আমাদের এভাবে ব্যবহার করেন! আমরা বিশেষ করে সেইসময় ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারি, যখন কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে, কোনো বিপর্যয় আসে অথবা তাড়না করা হয়।

যখন কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে

২. যখন কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে, তখন ভাই-বোনদের সাহায্য করা কেন কঠিন হতে পারে?

যখন কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে কিংবা মহামারি দেখা দেয়, তখন ভাই-বোনদের সাহায্য করা কঠিন হয়ে যায়। যেমন, আমরা হয়তো ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করতে চাই কিংবা এমন কোনো পরিবারকে আমাদের বাড়িতে খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে চাই, যারা আর্থিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে, কিন্তু মহামারির কারণে আমরা তা করতে পারি না। আবার এমনটাও হতে পারে, আমরা অন্যদের সাহায্য করতে চাই ঠিকই, কিন্তু আমরা নিজেরাই আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি অথবা আমাদের পরিবারের সদস্যেরা অসুস্থ রয়েছে। তারপরও, আমরা যদি আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, তা করার জন্য প্রচেষ্টা করি, তা হলে যিহোবা আমাদের দেখে খুশি হবেন। (হিতো. ৩:২৭; ১৯:১৭) তাহলে, কীভাবে আমরা ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারি?

৩. আমরা বোন ডেজির মণ্ডলীর প্রাচীনদের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? (যিরমিয় ২৩:৪)

প্রাচীনেরা কী করতে পারেন? আপনি যদি একজন প্রাচীন হয়ে থাকেন, তা হলে মেষদের ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন। (পড়ুন, যিরমিয় ২৩:৪.) লক্ষ করুন, এই বিষয়ে বোন ডেজি কী বলেন, যার সম্বন্ধে আগের প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমার পরিচর্যা দলের প্রাচীনেরা আমার সঙ্গে এবং অন্য ভাই-বোনদের সঙ্গে প্রচার করতেন আর আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক মজাও করতেন।” b তার মণ্ডলীর প্রাচীনেরা ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলতেন এবং সময় কাটাতেন। তাই, যখন কোভিড-১৯ অতিমারি ছড়িয়ে পড়েছিল এবং বোন ডেজির পরিবারের কয়েক জন সদস্য মারা গিয়েছিল, তখন প্রাচীনেরা আরও ভালোভাবে বোনকে সাহায্য করতে পেরেছিলেন।

৪. কেন বোন ডেজির মণ্ডলীর প্রাচীনেরা বোনকে সাহায্য করতে পেরেছিলেন আর এখান থেকে প্রাচীনেরা কী শিখতে পারেন?

বোন ডেজি বলেন: “আমার মণ্ডলীর প্রাচীনেরা আমার বন্ধু। তাই, আমি মন খুলে বলতে পেরেছিলাম যে, আমি কেমন অনুভব করছি এবং কোন বিষয়গুলো নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি।” এখান থেকে প্রাচীনেরা কী শিখতে পারেন? কোনো সমস্যা আসার অপেক্ষা করবেন না। আগে থেকেই মেষদের জানার চেষ্টা করুন এবং তাদের বন্ধু হোন। কোনো রোগ কিংবা মহামারির কারণে আপনি যদি ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করতে না পারেন, তা হলে অন্যান্য উপায়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করুন। বোন ডেজি বলেন: “কখনো কখনো তো একই দিনের মধ্যে অনেক বার প্রাচীনেরা আমাকে ফোন করেছিলেন এবং ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন। তারা আমাকে আলাদা আলাদা শাস্ত্রপদ দেখিয়েছিলেন। আমি সেই পদগুলো আগেও অনেক বার পড়েছিলাম, কিন্তু সেগুলো আবারও পড়ে আমি অনেক সান্ত্বনা পেয়েছিলাম।”

৫. প্রাচীনেরা কীভাবে জানতে পারেন যে, ভাই-বোনদের কী কী প্রয়োজন রয়েছে আর তারা কীভাবে তাদের সাহায্য করতে পারেন?

ভাই-বোনদের কী কী প্রয়োজন রয়েছে, তা জানার জন্য আপনি তাদের কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন। তবে, তাদের খারাপ লাগতে পারে এমন কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন না। (হিতো. ২০:৫) আপনি তাদের জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘আপনার কাছে কি খাবার, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আছে? আপনার কাজের জায়গায় কি সব কিছু ঠিকঠাক চলছে? আপনার কাছে কি ঘরভাড়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট টাকাপয়সা আছে?’ এ ছাড়া, সরকার যদি লোকদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগানোর কোনো ব্যবস্থা করে থাকে, তা হলে আপনি ভাই-বোনদের জিজ্ঞেস করতে পারেন, সেটা থেকে উপকার পাওয়ার জন্য তাদের কোনো সাহায্য লাগবে কি না। ভাই-বোনেরা বোন ডেজির প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাতে সাহায্য করেছিল। তবে, প্রাচীনেরা বোনের প্রতি যে-প্রেম দেখিয়েছিলেন এবং তাকে যে-শাস্ত্রপদগুলো দেখিয়েছিলেন, সেগুলো থেকে তিনি বিশেষভাবে সান্ত্বনা পেয়েছিলেন এবং সমস্যাগুলো সহ্য করতে পেরেছিলেন। বোন বলেন, “প্রাচীনেরা অনেক বার আমার সঙ্গে প্রার্থনা করেছিলেন। আমার এটা মনে নেই, তারা প্রার্থনায় কী বলেছিলেন, কিন্তু আমার এটা মনে আছে, সেইসময় আমি কেমন অনুভব করেছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন যিহোবা আমাকে বলছেন, ‘ডেজি, তুমি একা নও, আমি তোমার সঙ্গে আছি।’”—যিশা. ৪১:১০, ১৩.

একজন ভাই কিংডম হলে আসা ভাই-বোনদের এবং ভিডিও কনফারেন্সে থাকা একজন অসুস্থ ভাইকে উত্তর দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন। তিনি তাদের সবার উত্তর শুনে খুশি হচ্ছেন (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৬. অন্যদের সাহায্য করার জন্য মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা কী করতে পারে? (ছবি দেখুন।)

অন্য ভাই-বোনেরা কী করতে পারে? আমরা প্রাচীনদের কাছ থেকে আশা করি যে, তারা মণ্ডলীর ভাই-বোনদের যত্ন নেবেন। কিন্তু, যিহোবা চান যেন আমরা সবাই একে অন্যকে উৎসাহিত করি এবং সাহায্য করি। (গালা. ৬:১০) যদি কোনো ভাই কিংবা বোন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তা হলে আমরা কী করতে পারি? ছোটো ছেলে-মেয়েরা তাদের জন্য একটা কার্ড বানাতে পারে কিংবা ছবি আঁকতে পারে। যুবক-যুবতীরা তাদের জন্য কেনাকাটা করতে পারে কিংবা কোনো কাজে তাদের সাহায্য করতে পারে। অথবা আমরা কিছু রান্না করে তাদের পাঠাতে পারি। এগুলো আমাদের কাছে ছোটোখাটো কাজ বলে মনে হলেও, সেগুলো থেকে তারা অনেক উৎসাহিত হতে পারে। আর মহামারির সময়ে আমরা অসুস্থ হই বা না হই, আমাদের প্রত্যেকের উৎসাহের প্রয়োজন হয়। তাই, সভার পর একটু থেকে ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলুন, তা আপনি কিংডম হলে গিয়ে অথবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যোগ দিয়ে থাকুন না কেন। প্রাচীনদেরও উৎসাহের প্রয়োজন হয়। আর যখন কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। তাই, কিছু ভাই তাদের ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য ম্যাসেজ কিংবা কার্ড পাঠায়। তাই আসুন, আমরা প্রত্যেকে যেন “একে অন্যকে উৎসাহিত ও শক্তিশালী” করে চলি।—১ থিষল. ৫:১১.

যখন কোনো বিপর্যয় আসে

৭. যখন কোনো বিপর্যয় আসে, তখন কী কী হতে পারে?

যখন কোনো বিপর্যয় আসে, তখন চোখের পলকে সব কিছু পালটে যায়। আমরা আমাদের জিনিসপত্র হারাতে পারি, আমাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিংবা আমাদের কোনো প্রিয়জন মারা যেতে পারে। এমন নয় যে, শুধু জগতের লোকদের প্রতি এগুলো ঘটে, কিন্তু যিহোবার লোকদেরও এগুলোর মুখোমুখি হতে হয়। যদি এইরকম কিছু ঘটে, তা হলে কীভাবে আমরা অন্যদের সাহায্য করতে পারি?

৮. বিপর্যয় আসার আগে প্রাচীনেরা এবং পরিবারের মস্তকেরা কী করতে পারেন?

প্রাচীনেরা কী করতে পারেন? প্রাচীনেরা, বিপর্যয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য ভাই-বোনদের আগে থেকে প্রস্তুত করুন। এই বিষয়টা খেয়াল রাখুন যেন প্রত্যেকে এটা জানে, বিপর্যয় এলে তারা কী করবে। আর তাদের বলুন, এমন কিছু হলে তারা যেন আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে। বোন মার্গারেট, যার বিষয়ে আগের প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছিল, তিনি বলেন: “মণ্ডলীর স্থানীয় প্রয়োজন অংশে প্রাচীনেরা বলেছিলেন, জঙ্গলে আগুন লাগার বিপদ এখনও কাটেনি। তারা বলেছিলেন, কর্তৃপক্ষেরা যদি সেই এলাকা খালি করতে বলে অথবা আমাদের যদি মনে হয়, বিপদ বেড়ে গিয়েছে, তা হলে আমাদের দ্রুত সেই এলাকা খালি করতে হবে।” প্রাচীনেরা একেবারে সঠিক সময়ে ভাই-বোনদের এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন কারণ এর পাঁচ সপ্তাহ পরেই পাশের জঙ্গলে আগুন লেগে যায় আর লোকদের সেই এলাকা খালি করতে হয়। আপনি যদি পরিবারের মস্তক হয়ে থাকেন, তা হলে পারিবারিক উপাসনায় এই বিষয়ে আলোচনা করুন, কোনো বিপর্যয় এলে পরিবারের প্রত্যেকে কী করবে। এভাবে আপনি এবং আপনার সন্তানেরা কোনো বিপর্যয় এলে ঘাবড়ে যাবেন না বরং শান্ত থাকতে পারবেন।

৯. বিপর্যয় আসার আগে এবং পরে প্রাচীনেরা কী করতে পারেন?

আপনি যদি একজন পরিচর্যা দলের অধ্যক্ষ হয়ে থাকেন, তা হলে কোনো বিপর্যয় আসার আগেই আপনার দলের ভাই-বোনদের ফোন নম্বর এবং ঠিকানা লিখে রাখুন। আপনি চাইলে এর একটা তালিকা তৈরি করতে পারেন এবং সময়ে সময়ে চেক করতে পারেন, তাতে কোনো পরিবর্তন করার দরকার আছে কি না। পরে যখন কোনো বিপর্যয় আসবে, তখন আপনি ভাই-বোনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং জানতে পারবেন, তাদের কী প্রয়োজন রয়েছে। যখন আপনি সেই তথ্যগুলো জানতে পারবেন, তখন সঙ্গেসঙ্গে প্রাচীনগোষ্ঠীর কোঅর্ডিনেটরকে তা জানান। এরপর, তিনি সেই বিষয়টা সীমা অধ্যক্ষকে জানাবেন। এভাবে, একসঙ্গে মিলে কাজ করার ফলে এই ভাইয়েরা সবাইকে ভালোভাবে সাহায্য করতে পারবেন। লক্ষ করুন, যখন বোন মার্গারেটের এলাকায় আগুন লেগেছিল, তখন কীভাবে প্রাচীনেরা ভাই-বোনদের সাহায্য করেছিলেন। তারা সঙ্গেসঙ্গে সবাইকে ফোন করেছিলেন এবং সীমা অধ্যক্ষকে সমস্ত তথ্য দিয়েছিলেন। প্রায় ৪৫০ জন ভাই-বোনকে নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। প্রত্যেকের থাকার ব্যবস্থা করার জন্য সীমা অধ্যক্ষ প্রাচীনদের সঙ্গে ক্রমাগত কথা বলেছিলেন আর এই কারণে তিনি ৩৬ ঘণ্টা ঘুমাননি। (২ করি. ১১:২৭) অবশেষে, প্রত্যেক ভাই-বোনের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

১০. কেন প্রাচীনেরা পালকীয় সাক্ষাৎ করে থাকেন? (যোহন ২১:১৫)

১০ যখন কোনো বিপর্যয় আসে, তখন প্রাচীনেরা সবচেয়ে প্রথমে এই বিষয়টা খেয়াল রাখেন যেন ভাই-বোনদের কাছে খাবারদাবার, জামাকাপড় এবং থাকার জায়গার কোনো অসুবিধা না হয়। কিন্তু, তাদের এই দায়িত্বও রয়েছে যে, তারা যেন ভাই-বোনদের বাইবেল থেকে সান্ত্বনা দেন এবং যারা দুঃখ কিংবা দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে, তাদের উৎসাহিত করেন। (১ পিতর ৫:২) বিপর্যয় আসার কয়েক মাস পরও অনেক ভাই-বোনের এইরকম উৎসাহের প্রয়োজন হয়। (পড়ুন, যোহন ২১:১৫.) লক্ষ করুন, এই বিষয়ে ভাই হ্যারল্ড কী বলেন, যিনি শাখা কমিটি-র একজন সদস্য। তিনি এমন অনেক ভাই-বোনের সঙ্গে দেখা করেছেন, যারা বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। ভাই হ্যারল্ড বলেন: ‘ভাই-বোনদের শোক কাটিয়ে উঠতে সময় লাগে। তারা হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে, কিন্তু তারপরও সময়ে সময়ে তাদের খারাপ স্মৃতিগুলো মনে পড়ে এবং তারা খুব কষ্ট পায়। বিপর্যয়ের কারণে তাদের কোনো প্রিয়জন হয়তো মারা গিয়েছে, তারা হয়তো কোনো পারিবারিক সম্পত্তি হারিয়েছে অথবা তারা নিজেরা একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছে। এই বিষয়গুলো চিন্তা করে তারা উদ্‌বিগ্ন হতে পারে, কিন্তু এর মানে এই নয়, তাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়েছে। আসলে তারাও তো মানুষ, তাই না!’

১১. কীভাবে প্রাচীনেরা পরিবারগুলোকে সাহায্য করতে পারেন?

১১ প্রাচীনদের বাইবেলে লেখা এই পরামর্শ মেনে চলা উচিত: “যারা কাঁদে, তাদের সঙ্গে কাঁদো।” (রোমীয় ১২:১৫) যে-ভাই-বোনেরা বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে, প্রাচীনদের তাদের এই আশ্বাস দেওয়া উচিত যে, যিহোবা এখনও তাদের ভালোবাসেন এবং ভাই-বোনেরাও তাদের ভালোবাসে। এ ছাড়া, তাদের প্রত্যেক পরিবারকে এই বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া উচিত, তারা যেন উপাসনার সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলো করে চলে। যেমন প্রার্থনা করা, অধ্যয়ন করা, সভায় যাওয়া এবং প্রচার করা। প্রাচীনদের বাবা-মায়েদের বলা উচিত যেন তারা সন্তানদের এটা মনে করিয়ে দেয় যে, বিপর্যয়ে তারা সব কিছু হারায়নি। তাদের কাছে এখনও এমন কিছু রয়েছে, যেটা কোনো বিপর্যয়ই কেড়ে নিতে পারবে না। যেমন, বাবা-মায়েরা তাদের বলতে পারে, যিহোবা এখনও তাদের বন্ধু এবং তিনি সবসময় তাদের পাশে থাকবেন। বাবা-মায়েরা তাদের এটাও বলতে পারে, সারা পৃথিবীতে এমন অনেক ভাই-বোন আছে, যারা তাদের খুব ভালোবাসে এবং তাদের সাহায্য করার জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।—১ পিতর ২:১৭.

কোনো বিপর্যয়ের পর আপনি কি সেখানকার ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারেন? (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন) e

১২. বিপর্যয় এলে অন্য ভাই-বোনেরা কী করতে পারে? (ছবি দেখুন।)

১২ অন্য ভাই-বোনেরা কী করতে পারে? আপনার পাশের এলাকায় যদি কোনো বিপর্যয় আসে, তা হলে প্রাচীনদের জিজ্ঞেস করুন, আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন। আপনি হয়তো সেই ভাই-বোনদের আপনার বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন, যাদের বিপর্যয়ের কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছিল কিংবা যারা নির্মাণ কাজে সাহায্য করতে এসেছে। অথবা আপনি তাদের কাছে খাবার এবং প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পৌঁছানোর জন্য সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু, বিপর্যয় যদি দূরের কোনো এলাকায় আসে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? আপনি সেখানকার ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করতে পারেন। (২ করি. ১:৮-১১) আপনি যদি ত্রাণ কাজে সাহায্য করতে চান, তা হলে আপনি বিশ্বব্যাপী কাজের জন্য দানও দিতে পারেন। (২ করি. ৮:২-৫) আপনি যদি সেখানে গিয়ে সাহায্য করতে চান, তা হলে প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলুন। আর আপনাকে যদি সেখানে ডাকা হয়, তা হলে ভাইয়েরা আপনাকে ট্রেনিং দেবেন, যাতে আপনি আরও ভালোভাবে সাহায্য করতে পারেন।

যখন তাড়না করা হয়

১৩. যে-দেশগুলোতে আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেখানকার ভাই-বোনদের সামনে কোন কোন সমস্যা আসে?

১৩ যে-দেশগুলোতে প্রচার কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেখানকার ভাই-বোনদের সামনেও অনেক সমস্যা আসে। সারা পৃথিবীতে থাকা অন্য ভাই-বোনদের মতো তাদেরও টাকাপয়সার সমস্যা দেখা দেয়, তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তাদেরও প্রিয়জনেরা মারা যায়। কিন্তু, নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রাচীনেরা তাদের সঙ্গে সহজে দেখা করতে পারেন না এবং কথাও বলতে পারেন না। ভাই আন্দ্রে, যার বিষয়ে আগের প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছিল, তার সামনেও এইরকম সমস্যা এসেছিল। তার পরিচর্যা দলে এমন এক বোন ছিলেন, যার আর্থিক সমস্যা চলছিল এবং হঠাৎ তার অ্যাক্সিডেন্ট হয়। ডাক্তাররা বলে, তার অনেকগুলো অপারেশন করতে হবে এবং এখন তিনি আর কোনো কাজ করতে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞা এবং মহামারির কারণে ভাই-বোনদের সাহায্য করা প্রাচীনদের জন্য সহজ ছিল না, কিন্তু যিহোবা সমস্ত কিছু দেখছিলেন। তিনি অন্য ভাই-বোনদের পরিচালিত করেছিলেন, যাতে তাদের পক্ষে যা-কিছু করা সম্ভব, তারা সেটা করে।

১৪. কোনো সমস্যা এলে কীভাবে প্রাচীনেরা যিহোবার উপর আস্থা রাখতে পারেন?

১৪ প্রাচীনেরা কী করতে পারেন? ভাই আন্দ্রে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং তিনি যা করতে পারেন, তা করেছিলেন। আর যিহোবা তার প্রার্থনা শুনেছিলেন। তিনি অন্য ভাই-বোনদের পরিচালিত করেছিলেন, যাতে তারা এগিয়ে এসে বোনকে সাহায্য করে। কিছু ভাই-বোন তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল, আবার কিছু ভাই-বোন তাকে টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করেছিল। তারা সাহসের সঙ্গে কাজ করেছিল এবং একসঙ্গে মিলে বোনকে সাহায্য করেছিল। তাই, যিহোবা তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন এবং বোনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ হয়েছিল। (ইব্রীয় ১৩:১৬) এখান থেকে প্রাচীনেরা কী শিখতে পারেন? আমাদের কাজের উপর যখন কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকে, তখন আপনাদের কিছু কাজ অন্য ভাই-বোনদের ভাগ করে দিন। (যির. ৩৬:৫, ৬) সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, যিহোবার উপর আস্থা রাখুন কারণ ভাই-বোনদের যত্ন নেওয়ার জন্য তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন।

১৫. আমাদের কাজের উপর যদি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তা হলে আমরা কী করতে পারি, যাতে আমাদের মধ্যে একতা বজায় থাকে?

১৫ অন্য ভাই-বোনেরা কী করতে পারে? আমরা যেখানে থাকি, সেখানে যদি আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তা হলে আমাদের হয়তো ছোটো ছোটো দলে মিলিত হতে হবে। এইরকম সময়ে এটা আরও গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা ভাই-বোনদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখি। আমাদের শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, একে অন্যের বিরুদ্ধে নয়। কোনো ভাই কিংবা বোন যদি এমন কিছু করে, যেটা আপনার পছন্দ নয়, তা হলে বিষয়টা ছেড়ে দিন। অথবা কারো সঙ্গে যদি আপনার মতের অমিল দেখা দেয়, তা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিষয়টা মিটমাট করে নিন। (হিতো. ১৯:১১; ইফি. ৪:২৬) আর নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে একে অন্যকে সাহায্য করুন। (তীত ৩:১৪) জানেন, যে-বোনের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল, তাকে যখন ভাই-বোনেরা সাহায্য করেছিল, তখন কী হয়েছিল? তাদের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছিল এবং তারা একটা পরিবারের মতো হয়ে উঠেছিল। একইভাবে, আমরা যখন একে অন্যকে সাহায্য করব, তখন আমাদের মধ্যে ভালোবাসা বেড়ে যাবে আর এর ফলে, আমাদের মধ্যে একতা বজায় থাকবে।—গীত. ১৩৩:১.

১৬. কলসীয় ৪:৩, ১৮ পদ অনুযায়ী, আমরা কীভাবে সেই ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারি, যাদের উপর তাড়না করা হচ্ছে?

১৬ আজ আমাদের হাজার হাজার ভাই-বোন এমন দেশগুলোতে থাকে, যেখানে সরকার আমাদের কাজের উপর বিধি-নিষেধ জারি করেছে। যিহোবার সেবা করার জন্য অনেক ভাই-বোনকে জেলে বন্দি করা হয়েছে। আমরা তাদের জন্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রার্থনা করতে পারি। c (পড়ুন, কলসীয় ৪:৩, ১৮.) আমরা সেই ব্যক্তিদের জন্যও প্রার্থনা করতে পারি, যারা এই ভাই-বোনদের উৎসাহিত করে, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পৌঁছে দেয় এবং আদালতে তাদের পক্ষে দাঁড়ায়। সেই ব্যক্তিদেরও গ্রেপ্তার করা হতে পারে, তারপরও তারা ভয় পায় না বরং সাহসের সঙ্গে অন্যদের সাহায্য করে। কখনো এইরকম চিন্তা করবেন না যে, প্রার্থনা করে কোনো লাভ নেই।—২ থিষল. ৩:১, ২; ১ তীম. ২:১, ২.

কীভাবে আপনি এখন থেকেই আপনার পরিবারকে তাড়নার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত করতে পারেন? (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭. কীভাবে আপনি তাড়নার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারেন?

১৭ আপনি এবং আপনার পরিবার এখন থেকেই তাড়নার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। (প্রেরিত ১৪:২২) শুধু খারাপ খারাপ চিন্তা করবেন না। এর পরিবর্তে, যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক আরও মজবুত করুন। আপনার সন্তানদেরও সাহায্য করুন, যাতে যিহোবার সঙ্গে তাদেরও সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। আপনি যদি অতিরিক্ত চিন্তা করতে শুরু করেন, তা হলে হৃদয় উজাড় করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। (গীত. ৬২:৭, ৮) আপনার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করুন, কেন আপনারা সবাই যিহোবার উপর আস্থা রাখতে পারেন। d ঠিক যেমন আপনি বিপর্যয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেন এবং যিহোবার উপর আস্থা রাখেন, একইভাবে তাড়নার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্যও আগে থেকে প্রস্তুতি নিন। এর ফলে, আপনাকে দেখে আপনার সন্তানেরা সাহসের সঙ্গে কাজ করতে পারবে এবং শান্ত থাকবে।

১৮. ভবিষ্যতে যিহোবা আমাদের কী দেবেন?

১৮ ‘ঈশ্বরের শান্তি’ থাকার ফলে আমরা সুরক্ষিত বোধ করি। (ফিলি. ৪:৬, ৭) কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ুক, বিপর্যয় আসুক কিংবা আমাদের উপর তাড়না করা হোক না কেন, যিহোবা আমাদের মনের শান্তি দেন। তিনি প্রাচীনদের মাধ্যমে আমাদের উৎসাহিত করেন এবং আমাদের যত্ন নেন। তিনি আমাদের সবাইকেই এই সুযোগ দিয়েছেন যেন আমরা একে অন্যকে সাহায্য করি। তাই আসুন, আমরা এখন থেকেই প্রচেষ্টা করে চলি যেন সমস্যা এলে আমরা শান্ত থাকি এবং অন্যদেরও শান্ত থাকতে সাহায্য করি কারণ ভবিষ্যতে আমাদের সামনে আরও বড়ো বড়ো সমস্যা আসবে এবং “মহাক্লেশ” আসবে। তখন এটা করা আরও জরুরি হয়ে যাবে। (মথি ২৪:২১) মহাক্লেশের পর আর কখনো এইরকম সমস্যা আসবে না এবং আমরা উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়ব না। সেইসময় যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবে। তিনি মানুষকে প্রকৃত শান্তি দেবেন, যে-শান্তি চিরকাল ধরে থাকবে।—যিশা. ২৬:৩, ৪.

গান ২৫ শিষ্যত্বের প্রমাণ

a যিহোবার কোনো উপাসক যখন সমস্যার মধ্য দিয়ে যায়, তখন যিহোবা প্রায়ই তাঁর অন্য উপাসকদের মাধ্যমে সেই ব্যক্তিকে সাহায্য করে থাকেন। যিহোবা আপনার মাধ্যমেও ভাই-বোনদের উৎসাহিত করতে পারেন। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, সমস্যার সময়ে কীভাবে আমরা ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারি।

b কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

c আপনি যদি এমন ভাই-বোনদের কাছে চিঠি লেখার কথা চিন্তা করছেন, যারা জেলে রয়েছে, তা হলে সেই চিঠি শাখা অফিসে কিংবা বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ে পাঠাবেন না। কারণ সেখান থেকে সেই ভাই-বোনদের কাছে চিঠি পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা করা হয় না।

d ২০১৯ সালের জুলাই মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “তাড়নার মুখোমুখি হওয়ার জন্য এখনই প্রস্তুত হোন” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

e ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: বিপর্যয়ের পর এক স্বামী-স্ত্রী একটা পরিবারের জন্য কিছু খাবার এনেছেন, যারা তাঁবুতে রয়েছে।