সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫২

অল্পবয়সি বোনেরা—আরও ভালো খ্রিস্টান হও

অল্পবয়সি বোনেরা—আরও ভালো খ্রিস্টান হও

“নারীরাও যেন গাম্ভীর্য বজায় রাখেন, . . . এবং সমস্ত বিষয়ে বিশ্বস্ত হন।”—১ তীম. ৩:১১.

গান ১৩৩ যৌবনে যিহোবাকে সেবা করা

সারাংশ a

১. একজন ভালো বা পরিপক্ব খ্রিস্টান হওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

 বাচ্চারা কত তাড়াতাড়ি বড়ো হয়ে যায় আর কীভাবে যে সময় কেটে যায়, তা বোঝাই যায় না! খ্রিস্টান হিসেবে আমাদেরও বড়ো হতে হবে অর্থাৎ আমাদেরও ক্রমাগত পরিপক্ব হতে হবে। বাচ্চারা তো আপনা-আপনি বড়ো হয়ে যায়। কিন্তু, একজন ভালো অথবা পরিপক্ব খ্রিস্টান হওয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা করতে হবে। b (১ করি. ১৩:১১; ইব্রীয় ৬:১) এটা করার জন্য আমরা কী করতে পারি? এরজন্য আমাদের যিহোবার সঙ্গে এক দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের তাঁর পবিত্র শক্তির সাহায্যও নিতে হবে। তা হলেই, আমরা নিজেদের মধ্যে এমন গুণগুলো বাড়াতে পারব, যেগুলো দেখে যিহোবা খুশি হবেন এবং এমন কিছু দক্ষতা অর্জন করতে পারব, যেগুলো আমাদের কাজে আসবে আর ভবিষ্যতে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করার জন্য আমরা এখন থেকেই নিজেদের প্রস্তুত করতে পারব।—হিতো. ১:৫.

২. (ক) আদিপুস্তক ১:২৭ পদ থেকে কী জানা যায়? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?

যিহোবা পুরুষ ও নারী হিসেবে মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন। (পড়ুন, আদিপুস্তক ১:২৭.) তারা দেখতে যেমন আলাদা, তেমনই তাদের অন্যান্য বিষয়ও আলাদা। যিহোবা দু-জনকেই আলাদা আলাদা দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এই দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য বিভিন্ন গুণ গড়ে তুলতে হয় এবং কিছু দক্ষতাও অর্জন করতে হয়। (আদি. ২:১৮) এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কীভাবে অল্পবয়সি বোনেরা পরিপক্ব খ্রিস্টান হতে পারে। আর পরের প্রবন্ধে আমরা দেখব, কীভাবে অল্পবয়সি ভাইয়েরা পরিপক্ব খ্রিস্টান হতে পারে।

ঈশ্বরকে খুশি করে এমন গুণগুলো বাড়াও

তুমি যদি রিবিকা, ইষ্টের এবং অবীগলের মতো বিশ্বস্ত মহিলাদের মতো নিজের মধ্যে ভালো গুণ বাড়াও, তা হলে তুমি একজন পরিপক্ব খ্রিস্টান হতে পারবে (৩-৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৩-৪. অল্পবয়সি বোনেরা কাদের উদাহরণ থেকে শিখতে পারে? (ছবিও দেখুন।)

বাইবেলে এমন অনেক মহিলার বিষয়ে বলা হয়েছে, যারা যিহোবাকে খুব ভালোবাসতেন এবং মনপ্রাণ দিয়ে তাঁর সেবা করতেন। এই প্রবন্ধের মুখ্য শাস্ত্রপদে যেমন লেখা রয়েছে, সেই মহিলারা ‘নিজেদের দমন করতেন এবং সমস্ত বিষয়ে বিশ্বস্ত’ ছিলেন। অল্পবয়সি বোনেরা, তোমরা সেই মহিলাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পার। এ ছাড়া, তোমাদের মণ্ডলীতে এমন অনেক বোন রয়েছে, যাদের কাছ থেকেও তোমরা অনেক কিছু শিখতে পার।

এমন কিছু পরিপক্ব বোনের বিষয়ে চিন্তা করো, যাদের মতো তুমি হতে চাও। প্রথমে লক্ষ করো, তাদের মধ্যে কোন কোন গুণ রয়েছে। এরপর চিন্তা করো, তোমরা কীভাবে তাদের মতো হতে পার। পরের কিছু অনুচ্ছেদে এমনই তিনটে গুণের বিষয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলো তুমি বাড়াতে পার।

৫. একজন পরিপক্ব বোন হওয়ার জন্য নম্র হওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?

একজন পরিপক্ব বোন হওয়ার জন্য নম্র হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন নম্র বোন যিহোবা এবং অন্যদের সঙ্গে এক ভালো সম্পর্ক বজায় রাখেন। (যাকোব ৪:৬) যেমন, একজন বোন যদি নম্র হন এবং যিহোবাকে ভালোবাসেন, তা হলে তিনি ১ করিন্থীয় ১১:৩ পদে দেওয়া নীতি মেনে চলবেন এবং মণ্ডলীতে অথবা পরিবারে যাদের কিছুটা অধিকার রয়েছে, তাদের অধীনে থাকবেন। c

৬. (ক) কীভাবে রিবিকা দেখিয়েছিলেন যে, তিনি নম্র? (খ) আজ অল্পবয়সি বোনেরা কীভাবে রিবিকার মতো হতে পারে?

রিবিকার উদাহরণের উপর মনোযোগ দাও। তিনি একজন বুদ্ধিমতী মহিলা ছিলেন। তিনি জানতেন, কখন তাকে কী করতে হবে এবং সারাজীবন ধরে তিনি সাহসের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। (আদি. ২৪:৫৮; ২৭:৫-১৭) তা সত্ত্বেও, তিনি অন্যদের প্রতি সম্মান দেখাতেন এবং যাদের কিছুটা অধিকার দেওয়া হয়েছিল, তাদের অধীনে থাকতেন। (আদি. ২৪:১৭, ১৮, ৬৫) রিবিকার মতো তোমরাও নম্র হতে পারো এবং সেই ব্যক্তিদের পুরোপুরি সমর্থন করতে পারো, যাদের যিহোবা কিছুটা অধিকার দিয়েছেন। এভাবে, তোমরা তোমাদের পরিবারের জন্য এবং মণ্ডলীতে ভাই-বোনদের জন্য ভালো উদাহরণ রাখবে।

৭. (ক) কীভাবে আমরা বলতে পারি, ইষ্টের বিনয়ী ছিলেন? (খ) আজ অল্পবয়সি বোনেরা কীভাবে ইষ্টেরের মতো হতে পারে?

একজন পরিপক্ব খ্রিস্টান বিনয়ী হন। তিনি এমনটা চিন্তা করেন না যে, তিনি সব কিছু জানেন। বাইবেলে লেখা রয়েছে, “প্রজ্ঞাই নম্রদিগের সহচরী।” (হিতো. ১১:২) এমনই একজন মহিলা ছিলেন ইষ্টের। তিনি বিনয়ী ছিলেন এবং তার বড়দা মর্দখয়ের কথা শুনতেন। রানি হওয়ার পরও তিনি গর্বে ফুলে যাননি বরং মর্দখয় যখন তাকে ভালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, তখন তিনি তা শুনেছিলেন। (ইষ্টের ২:১০, ২০, ২২) অল্পবয়সি বোনেরা, তোমরা যখন অভিজ্ঞ খ্রিস্টানদের কাছ থেকে পরামর্শ নেবে এবং সেগুলো মেনে চলবে, তখন তোমরা দেখাবে যে, তোমরা ইষ্টেরের মতো বিনয়ী।—তীত ২:৩-৫.

৮. প্রথম তীমথিয় ২:৯, ১০ পদ অনুযায়ী কীভাবে বোনেরা সাজগোজের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে?

ইষ্টের আরেকটা উপায়ে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি বিনয়ী। বাইবেলে লেখা আছে, তিনি “অত্যন্ত সুন্দরী ও আকর্ষণীয়া ছিলেন।” তারপরও তিনি নিজের উপর লোকদের মনোযোগ আকর্ষণ করাননি। (ইষ্টের ২:৭, ১৫) বর্তমানে খ্রিস্টান বোনেরা ইষ্টেরের কাছ থেকে কী শিখতে পারে? লক্ষ করো, এই বিষয়ে ১ তীমথিয় ২:৯, ১০ পদে কী বলা হয়েছে। (পড়ুন।) এই পদে প্রেরিত পৌল খ্রিস্টান বোনদের বলেছিলেন যেন তারা সঠিক মনোভাব বজায় রাখে এবং এমন পোশাক-আশাক পরে, যেটা থেকে বোঝা যায়, তারা বিনয়ী। এই বিষয়টা বলার জন্য পৌল যে-গ্রিক শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন, সেটা থেকে জানা যায়, খ্রিস্টান বোনদের এমন পোশাক-আশাক পরা উচিত, যেটা দেখায়, তারা ঈশ্বরকে সম্মান করে আর অন্যদের জন্য চিন্তা করে। আমাদের যে-বোনেরা এই পরামর্শ মেনে চলে, তারা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

৯. (ক) কীভাবে অবীগল বুদ্ধির সঙ্গে কাজ করেছিলেন? (খ) অবীগলের কাছে থেকে আমরা কী শিখি?

পরিপক্ব বোনেরা বুদ্ধির সঙ্গে কাজ করে। বুদ্ধির সঙ্গে কাজ করা এমন এক দক্ষতা, যেটার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে এবং সঠিক কাজ করতে পারে। অবীগলের উদাহরণের উপর মনোযোগ দাও। তার স্বামী এমন এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেটার কারণে তার বাড়ির প্রত্যেকের জীবন ঝুঁকির মুখে ছিল। তখন অবীগল দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং বুদ্ধির সঙ্গে কাজ করেছিলেন। এর ফলে, প্রত্যেকের জীবন রক্ষা পেয়েছিল। (১ শমূ. ২৫:১৪-২৩, ৩২-৩৫) যে-ব্যক্তি বুদ্ধির সঙ্গে কাজ করে, সে জানে কখন মুখ খুলতে হবে এবং কখন মুখ বন্ধ রাখতে হবে। এইরকম ব্যক্তিরা যখন অন্যদের খোঁজখবর নেয়, তখন তারা অযথা এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে না, যেটার ফলে সামনের ব্যক্তি অস্বস্তিতে পড়তে পারে।—১ থিষল. ৪:১১.

কিছু দক্ষতা অর্জন করো, যেগুলো তোমার কাজে আসবে

ভালোকরে পড়াশোনা করার ফলে তুমি কোন উপকার পেয়েছ? (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০-১১. তুমি যদি ভালো করে লেখাপড়া করতে শেখ, তা হলে কীভাবে তুমি নিজে এবং অন্যেরা উপকার পাবে? (ছবিও দেখুন।)

১০ খ্রিস্টান বোনদের কিছু দক্ষতা অর্জন করা উচিত। একজন ব্যক্তি যখন কম বয়সে কোনো দক্ষতা অর্জন করে, তখন সারাজীবন ধরে সেটা তার কাজে লাগে। আসো দেখি, খ্রিস্টান বোনেরা কোন কোন দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

১১ ভালো করে লেখাপড়া করতে শেখো। কিছু সংস্কৃতিতে মেয়েদের লেখাপড়া করাকে অতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় না। কিন্তু, প্রত্যেক খ্রিস্টানের এই দক্ষতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। d (১ তীম. ৪:১৩) তাই, তোমার সামনে যতই বাধা আসুক না কেন, এটা স্থির করো যে, তুমি ভালোভাবে লেখাপড়া শিখবে। এর ফলে তুমি কোন উপকার পাবে? তুমি একটা চাকরি খুঁজে পাবে এবং তা করে চলতে পারবে। তুমি ঈশ্বরের বাক্য ভালোভাবে অধ্যয়ন করতে পারবে এবং অন্যদের সেই বিষয়ে ভালোভাবে শেখাতে পারবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, তুমি যখন নিজে ঈশ্বরের বাক্য পড়তে এবং সেটি নিয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করবে, তখন যিহোবার সঙ্গে তোমার বন্ধুত্ব মজবুত হবে।—যিহো. ১:৮; ১ তীম. ৪:১৫.

১২. হিতোপদেশ ৩১:২৬ পদ থেকে তুমি কী শিখতে পার?

১২ ভালো করে কথা বলতে শেখো। খ্রিস্টানদের এই দক্ষতা বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাকোব এই বিষয়ে একটা ভালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “তোমরা প্রত্যেকে শোনার ব্যাপারে ইচ্ছুক এবং কথা বলার ব্যাপারে ধীর হও।” (যাকোব ১:১৯) আমরা যখন অন্যদের কথা মন দিয়ে শুনি, তখন আমরা তাদের কষ্ট বুঝতে পারি এবং তাদের প্রতি “সহানুভূতি” দেখাতে পারি। (১ পিতর ৩:৮) কিন্তু, তুমি যদি কখনো এটা বুঝতে না পার যে, সামনের ব্যক্তি কী বলতে চায় অথবা কেমন অনুভব করছে, তা হলে তাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারো এবং কোনো উত্তর দেওয়ার আগে একটু থেমে চিন্তা করতে পারো। (হিতো. ১৫:২৮) তুমি নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারো: ‘আমি যা বলতে যাচ্ছি, সেটা কি সত্য? আর যদি তা সত্য হয়, তা হলে এর থেকে কি সামনের ব্যক্তি উৎসাহিত হবে? এমনটা করা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? এর থেকে কি সে বুঝতে পারবে, আমি তার জন্য চিন্তা করি?’ সেই বোনদের কাছ থেকে শেখো, যারা অন্যদের সঙ্গে ভালোভাবে বলে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৩১:২৬.) লক্ষ কোরো, তারা কী বলে এবং কীভাবে বলে। এভাবে তুমিও ভালোভাবে কথা বলা শিখতে পারবে। তুমি যত বেশি এই দক্ষতা বাড়াবে, তত বেশি অন্যদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক ভালো হবে।

যে-মহিলা ভালো করে ঘর সামলায়, তার বাড়িতে প্রেম ও আনন্দ সবসময় বজায় থাকে এবং মণ্ডলীর প্রত্যেকে তাকে অনেক মূল্যবান হিসেবে দেখে (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. বোনেরা, কীভাবে তোমরা ঘর সামলাতে পার? (ছবিও দেখুন।)

১৩ ঘর সামলাতে শেখো। অনেক জায়গায় মহিলারাই ঘরের বেশিরভাগ কাজকর্ম করে থাকে। অল্পবয়সি বোনেরা, তোমরা তোমাদের মা কিংবা কোনো অভিজ্ঞ বোনের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পার যে, কীভাবে ঘর সামলানো যায়। সিন্ডি নামে একজন বোন বলে, ‘আমার মা আমাকে একটা ভালো বিষয় শিখিয়েছেন। তিনি শিখিয়েছেন, পরিশ্রম করলেই আনন্দ লাভ করা যায়। মায়ের কাছ থেকে আমি রান্না করা, ঘর-দোর পরিষ্কার করা, সেলাই করা এবং বুঝে-শুনে কেনাকাটা করতে শিখেছি। এই বিষয়গুলো আমার অনেক কাজে এসেছে। আমি নিজের যত্ন নিতে পেরেছি এবং আরও বেশি করে যিহোবাকে সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আমি মায়ের কাছ থেকে আতিথেয়তা দেখাতেও শিখেছি। এর ফলে আমি এমন অনেক ভাই-বোনের সঙ্গে দেখা করতে পেরেছি, যাদের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি।’ (হিতো. ৩১:১৫, ২১, ২২) যে-বোনেরা পরিশ্রম করে, আতিথেয়তা দেখায় এবং ভালোভাবে ঘর সামলায়, তারা সত্যিই অন্যদের কাছে অনেক মূল্যবান। তাদের বাড়িতে প্রেম ও আনন্দ সবসময় বজায় থাকে এবং মণ্ডলীর জন্য তারা এক চমৎকার উদাহরণ।—হিতো. ৩১:১৩, ১৭, ২৭; প্রেরিত ১৬:১৫.

১৪. (ক) তুমি বোন ক্রিস্টালের কাছ থেকে কী শিখতে পার? (খ) তোমাকে কোন বিষয়ের উপর মনোযোগ দিতে হবে?

১৪ নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখো। প্রত্যেক খ্রিস্টানের এই লক্ষ্যটা রাখা উচিত। তা হলেই, তারা পরিপক্ব হতে পারবে। (ফিলি. ৪:১১) বোন ক্রিস্টাল বলে: “স্কুলে যখন আমাকে একটা সাবজেক্ট বাছাই করতে হয়েছিল, তখন আমি এবং আমার বাবা-মা মিলে স্থির করেছিলাম যে, আমি কোন সাবজেক্ট বাছাই করব, যাতে কিছু দক্ষতাও শিখতে পারি। বাবা আমাকে অ্যাকাউন্টস্‌ নিতে বলেছিল। আর সত্যিই এটা পরে আমাকে অনেক সাহায্য করেছিল।” শুধুমাত্র টাকাপয়সা রোজগারের জন্যই কোনো দক্ষতা শেখা উচিত নয়। এর পরিবর্তে, তোমাকে এও বুঝতে হবে যে, কীভাবে বুঝে-শুনে খরচ করা উচিত। (হিতো. ৩১:১৬, ১৮) তাই, তুমি যদি অল্পতেই সন্তুষ্ট থাক এবং অযথা লোন না নাও, তা হলে তুমি তোমার লক্ষ্যের উপর মনোযোগ দিতে পারবে অর্থাৎ যিহোবাকে আরও বেশি সেবা করতে পারবে।—১ তীম. ৬:৮.

ভবিষ্যতে দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নাও

১৫-১৬. যে-বোনেরা বিয়ে করেনি, তারা কেন এত মূল্যবান? (মার্ক ১০:২৯, ৩০)

১৫ তোমরা যখন নিজেদের মধ্যে এমন গুণগুলো বাড়াবে, যেগুলো দেখে যিহোবা খুশি হবেন এবং কিছু দক্ষতা অর্জন করবে, যেগুলো তোমার কাজে আসবে, তখন ভবিষ্যতে তোমরা ভালোভাবে তোমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে। এখন আসো আমরা দেখি, তোমরা কী করতে পার।

১৬ তুমি কিছুসময়ের জন্য অবিবাহিত থাকতে পার। কিছু দেশে মেয়েরা যদি বিয়ে না করে, তা হলে সেটাকে খারাপভাবে দেখা হয়। এমন দেশগুলোতে আমাদের কিছু বোন যিশুর পরামর্শ কাজে লাগিয়ে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। (মথি ১৯:১০-১২) অথবা কিছু বোন হয়তো অন্য কোনো কারণে অবিবাহিত রয়েছে। কিন্তু তুমি নিশ্চিত থাকতে পার, যিহোবা ও যিশু অবিবাহিত বোনদের নীচু চোখে দেখেন না; তুমি তাঁদের কাছে অনেক মূল্যবান। সারা পৃথিবীতে আমাদের অবিবাহিত বোনেরা অনেক পরিশ্রম করে আর মণ্ডলীতে তাদের অনেক মূল্যবান হিসেবে দেখা হয়। তারা ভাই-বোনদের ভালোবাসে এবং তাদের প্রতি চিন্তা দেখায়। এই কারণে, ভাই-বোনদের কাছে তারা মা কিংবা বোনের মতো।—পড়ুন, মার্ক ১০:২৯, ৩০; ১ তীম. ৫:২.

১৭. একজন অল্পবয়সি বোন পরে গিয়ে পূর্ণসময়ের সেবা করার জন্য এখন থেকেই কী করতে পারে?

১৭ তুমি পূর্ণসময়ের সেবা করতে পার। আজ পৃথিবীজুড়ে যে-প্রচার কাজ হচ্ছে, তাতে বোনেরাই সবচেয়ে বেশি অংশ নিচ্ছে। (গীত. ৬৮:১১) তুমি কি এখন থেকেই পূর্ণসময়ের সেবা করার কথা চিন্তা করতে পার? তুমি অগ্রগামীর সেবা, বেথেল সেবা অথবা নির্মাণ প্রকল্পে সাহায্য করার লক্ষ্য রাখতে পারো। তোমার লক্ষ্য নিয়ে তুমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারো। যে-ভাই-বোনেরা পূর্ণসময়ের সেবা করার লক্ষ্য অর্জন করেছে, তুমি তাদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারো। তুমি তাদের জিজ্ঞেস করতে পারো, তোমার এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য তোমাকে কী করতে হবে। এরপর, তুমি ভালো করে প্ল্যানিং করতে পারো এবং চিন্তা করতে পারো, তুমি সমস্ত কিছু কীভাবে করবে। একবার তুমি যখন তোমার লক্ষ্য অর্জন করবে, তখন যিহোবাকে সেবা করার আরও অনেক দরজা তোমার সামনে খুলে যাবে।

তুমি যদি বিয়ে করার কথা চিন্তা করে থাক, তা হলে তোমাকে খুবই ভেবে-চিন্তে স্থির করতে হবে যে, তুমি কাকে বিয়ে করবে (১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৮. কেন একজন বোনকে খুবই ভেবে-চিন্তে স্থির করতে হবে যে, তিনি কাকে বিয়ে করবেন? (ছবিও দেখুন।)

১৮ তুমি বিয়ে করতে পার। এই প্রবন্ধে যে-গুণগুলো এবং দক্ষতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলো তোমার মধ্যে গড়ে তুললে তুমি একজন ভালো স্ত্রী হতে পারবে। তুমি কি এখন থেকেই বিয়ে করার কথা চিন্তা করছ? তা হলে, খুবই ভেবে-চিন্তে তোমাকে স্থির করতে হবে যে, তুমি কাকে বিয়ে করবে। এটা তোমার জীবনে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক সিদ্ধান্ত হবে। মনে রাখবে, তুমি যাকে বিয়ে করবে, সে তোমার মস্তক হবে এবং তোমাকে তার অধীনে থাকতে হবে। (রোমীয় ৭:২; ইফি. ৫:২৩, ৩৩) তাই, কাউকে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস কোরো, ‘সে কি একজন পরিপক্ব খ্রিস্টান? সে কি তার জীবনে সমস্ত কিছুর আগে যিহোবাকে রাখে? সে কি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়? সে যখন কোনো ভুল করে, তখন সে কি তা স্বীকার করে? সে কি মহিলাদের সম্মান করে? সে কি যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক মজবুত করার জন্য আমাকে সাহায্য করতে পারবে এবং আমার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করতে পারবে? সে কি আমার ভালো বন্ধু হতে পারবে? সে কি তার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারে? মণ্ডলীতে তাকে কোন কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে কীভাবে সেগুলো পালন করে?’ (লূক ১৬:১০; ১ তীম. ৫:৮) শুধু তা-ই নয়, তুমি যদি একজন ভালো স্বামী পেতে চাও, তা হলে তোমাকেও একজন ভালো স্ত্রী হওয়ার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

১৯. একজন “সাহায্যকারী” হওয়া কেন অসম্মানের বিষয় নয়?

১৯ বাইবেলে বলা হয়েছে, একজন ভালো স্ত্রী তার স্বামীর কাছে তার “অনুরূপ সহকারিণী” অথবা সাহায্যকারী হয়ে থাকেন। (আদি. ২:১৮) তাই, এটা বলার মাধ্যমে কি স্ত্রীদের অসম্মান করা হয়েছে? না, একদমই না। একজন সাহায্যকারী হওয়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাইবেলে যিহোবাকেও “সাহায্যকারী” বলা হয়েছে। (গীত. ৫৪:৪; ইব্রীয় ১৩:৬) তাহলে, কীভাবে একজন স্ত্রী তার স্বামীর সাহায্যকারী হতে পারেন? তার স্বামীকে পুরোপুরি সমর্থন করার মাধ্যমে। যেমন, তার স্বামী যদি পরিবারের হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে তিনি সেটা মেনে নেন। আর তিনি যেহেতু যিহোবাকে অনেক ভালোবাসেন, তাই তিনি অন্যদের সামনে তার স্বামীর ব্যাপারে খারাপ কিছু বলেন না বরং চেষ্টা করেন, যাতে সবার সামনে তার সুনাম বজায় থাকে। (হিতো. ৩১:১১, ১২; ১ তীম. ৩:১১) তাই বোনেরা, যিহোবাকে আরও বেশি করে ভালোবাসো। ঘরে ও মণ্ডলীতে অন্যদের সাহায্য করো। এভাবে তোমরা পরে একজন ভালো স্ত্রী হতে পারবে।

২০. একজন বোন যদি মা হওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে কীভাবে তার পুরো পরিবার উপকার পাবে?

২০ তুমি একজন মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পার। বিয়ের পর তুমি এবং তোমার স্বামী সন্তান নেওয়ার কথা চিন্তা করতে পার। (গীত. ১২৭:৩) তাই, এখন থেকেই তোমাকে ভালো করে চিন্তা করতে হবে, তুমি কীভাবে একজন ভালো মা হতে পার। এই প্রবন্ধে যে-গুণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং যে-দক্ষতাগুলোর বিষয়ে বলা হয়েছে, সেগুলো নিজের মধ্যে বাড়ালে তুমি একজন ভালো বোন হতে পারবে এবং একজন ভালো মা হতে পারবে। তুমি যখন অন্যদের সঙ্গে ভালো আচরণ করবে, তাদের প্রতি চিন্তা দেখাবে এবং তাদের প্রতি ধৈর্য ধরবে, তখন তোমার পরিবার সুখী হবে আর তোমার সন্তানেরা নিজেদের সুরক্ষিত মনে করবে এবং আনন্দে থাকবে।—হিতো. ২৪:৩.

অনেক অল্পবয়সি বোন বাইবেল থেকে শিখেছে এবং সেগুলো কাজে লাগিয়েছে। এর ফলে, তারা পরিপক্ব খ্রিস্টান হতে পেরেছে (২১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

২১. আমরা আমাদের বোনদের বিষয়ে কী চিন্তা করি আর কেন? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

২১ অল্পবয়সি বোনেরা, আমরা তোমাদের অনেক ভালোবাসি! তোমরা যিহোবা এবং তাঁর লোকদের জন্য কত কিছুই-না করছ! (ইব্রীয় ৬:১০) তোমরা এমন গুণগুলো গড়ে তোলার চেষ্টা করছ, যেগুলো দেখে যিহোবা খুশি হন এবং এমন দক্ষতাগুলো অর্জন করার চেষ্টা করছ, যেগুলো দেখে তোমাদের পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব খুশি হয় এবং উৎসাহিত হয়। তোমরা ভবিষ্যতে যে-দায়িত্বগুলো পাবে, সেগুলোর জন্য এখন থেকেই নিজেদের প্রস্তুত কর। সত্যিই যিহোবার সংগঠনে তোমরা অনেক মূল্যবান!

গান ১৩৭ বিশ্বস্ত খ্রিস্টান বোনেরা

a আমাদের প্রিয় অল্পবয়সি বোনেরা, তোমরা আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান! তোমরা যদি এমন গুণগুলো বাড়াও, যেগুলো দেখে যিহোবা খুশি হন এবং তোমরা যদি এমন কোনো দক্ষতা অর্জন কর, যেগুলো তোমাদের কাজে আসবে আর ভবিষ্যতে বিভিন্ন দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তোমরা এখন থেকেই নিজেদের প্রস্তুত কর, তা হলে তোমরা একজন পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে উঠতে পারবে। এভাবে, তোমরা ভালোভাবে যিহোবার সেবা করতে পারবে এবং তিনি তোমাদের প্রচুর আশীর্বাদ করবেন।

b এই অভিব্যক্তির অর্থ: একজন ভালো বা পরিপক্ব খ্রিস্টান হওয়ার মানে জগতের দৃষ্টিতে বুদ্ধিমান হওয়া নয়। এর পরিবর্তে, পরিপক্ব খ্রিস্টানেরা সবসময় যিহোবার মতো চিন্তা করার এবং তাঁর মান অনুযায়ী চলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে থাকে। তারা যিশুর মতো হওয়ার চেষ্টা করে, যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক মজবুত রাখার চেষ্টা করে এবং অন্যদের মন থেকে ভালোবাসে।

d পড়াশোনা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা জানার জন্য ইংরেজি jw.org ওয়েবসাইটে “Why Reading Is Important for Children—Part 1: Read or Watch?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।