সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫৩

অল্পবয়সি ভাইয়েরা—পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে ওঠো!

অল্পবয়সি ভাইয়েরা—পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে ওঠো!

“পরিণত ব্যক্তি অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে খ্রিস্টের মতো পরিণত হও।”—ইফি. ৪:১৩.

গান ১৩৫ যিহোবার আন্তরিক অনুরোধ: প্রিয় সন্তানেরা, জ্ঞানবান হও

সারাংশ a

১. একজন ভাইকে পরিপক্ব হওয়ার জন্য কী করতে হবে?

 ইফিষে থাকা খ্রিস্টানদের পৌল বলেছিলেন, ‘সম্পূর্ণরূপে খ্রিস্টের মতো পরিণত হও।’ (ইফি. ৪:১৩, পাদটীকা) বর্তমানে, প্রত্যেক ভাইয়ের এই পরামর্শ মেনে চলা উচিত। এটা করার জন্য তাদের যিহোবার আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হতে হবে এবং বাইবেলে যে-নীতি রয়েছে, সেই অনুযায়ী তাদের জীবনে ছোটো-বড়ো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। (লূক ২:৫২) কিন্তু, কেন অল্পবয়সি ভাইদের পরিপক্ব খ্রিস্টান হতে হবে?

২-৩. অল্পবয়সি ভাইদের পরিপক্ব হওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?

পরিবারে ও মণ্ডলীতে ভাইদের অনেক দায়িত্ব সামলাতে হয়। অল্পবয়সি ভাইয়েরা, তোমরা হয়তো এখন থেকে ভবিষ্যতে পাওয়া কিছু দায়িত্ব পালন করার বিষয়ে চিন্তা করছ। তোমরা হয়তো পূর্ণসময়ের সেবা, পরিচারক দাস অথবা প্রাচীন হিসেবে সেবা করার কথা চিন্তা করছ। কিংবা তোমরা হয়তো পরে বিয়ে করার এবং তারপর সন্তান নেওয়ার কথা চিন্তা করছ। (ইফি. ৬:৪; ১ তীম. ৩:১) এই সমস্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য যোগ্য হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এবং সেগুলো ভালোভাবে পালন করার ক্ষেত্রে তোমাদের পরিপক্ব হতে হবে। b

তাহলে, কীভাবে তোমরা পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে উঠতে পার? তোমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে এবং সেইসঙ্গে কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এ ছাড়া, ভবিষ্যতে তোমাদের কাঁধে যে-দায়িত্বগুলো আসবে, সেগুলো ভালোভাবে পালন করার জন্য তোমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এসো, আমরা এক এক করে লক্ষ করি যে, কীভাবে তোমরা এইসমস্ত কিছু করতে পার।

পরিপক্ব হওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ

একজন অল্পবয়সি ভাই যদি যিশুর মতো গুণগুলো গড়ে তোলে, তা হলে সে একজন পরিপক্ব খ্রিস্টান হতে পারে (৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৪. অল্পবয়সি ভাইয়েরা কাদের মতো হতে পারে? (ছবিও দেখুন।)

এমন কিছু ব্যক্তির বিষয়ে চিন্তা করো, যাদের মতো তোমরা হতে চাও। বাইবেলে এমন অনেক ব্যক্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, যারা যিহোবাকে ভালোবাসত এবং তাঁর লোকদের দেখাশোনা করেছিল। অল্পবয়সি ভাইয়েরা, তোমরা তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পার। তোমাদের পরিবারে এবং মণ্ডলীতে হয়তো এইরকমই অনেক পরিপক্ব ভাই রয়েছে। তোমরা তাদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখতে পার। (ইব্রীয় ১৩:৭) আর তোমরা সবচেয়ে বেশি যিশু খ্রিস্টের কাছ থেকে শিখতে পার। (১ পিতর ২:২১) তোমরা যখন যিশু খ্রিস্ট এবং অতীতের পুরুষদের বিষয়ে অধ্যয়ন করবে এবং বর্তমানের পরিপক্ব ভাইদের বিষয়ে চিন্তা করবে, তখন তাদের ভালো বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দাও। (ইব্রীয় ১২:১, ২) এরপর চিন্তা করো, কীভাবে তোমরা তাদের মতো হতে পার।

৫. তোমরা চিন্তাভাবনা করে কাজ করার ক্ষমতাকে কীভাবে বাড়াতে পার এবং কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ? (গীতসংহিতা ১১৯:৯)

নিজেদের “পরিণামদর্শিতা রক্ষা কর” অর্থাৎ চিন্তাভাবনা করে কাজ করার ক্ষমতাকে বাড়াতে থাকো। (হিতো. ৩:২১) যে-পুরুষের মধ্যে এই ক্ষমতা থাকে, তার মনে যা আসে, সেটা করে না। তিনি একটু থেমে চিন্তা করেন যে, একটা কাজ কোন কোন উপায়ে করা যেতে পারে এবং কোন পদ্ধতিটা সঠিক হতে পারে। অল্পবয়সি ভাইয়েরা, এই ক্ষমতা এমনি এমনিই চলে আসবে না, তোমাদের ক্রমাগত প্রচেষ্টা করতে হবে। কেন? কারণ বর্তমানে বেশিরভাগ যুবক তাদের মন যা চায়, তা-ই করে কিংবা আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। (হিতো. ৭:৭; ২৯:১১) আর সিনেমাতে, টিভিতে এবং ইন্টারনেটে যা দেখানো হয়, সেগুলো তোমাদের চিন্তাভাবনার উপর অনেক প্রভাব ফেলতে পারে। তাহলে, কীভাবে তোমরা এই ক্ষমতাকে আরও বাড়াতে পার? সবচেয়ে প্রথমে বাইবেলের নীতিগুলো এবং যিহোবা কী চিন্তা করেন, তা জানার চেষ্টা করো। এরপর চিন্তা করো, সেই নীতিগুলো মেনে চললে কীভাবে তোমাদেরই ভালো হবে। তারপর সেই নীতিগুলো অনুযায়ী এমন সিদ্ধান্ত নাও, যেটা যিহোবাকে খুশি করবে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৯.) সত্যিই, চিন্তাভাবনা করে কাজ করার ক্ষমতাকে বাড়ানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ! তা হলেই, আমরা পরিপক্ব হতে পারব। (হিতো. ২:১১, ১২; ইব্রীয় ৫:১৪) এখন এসো আমরা এমন দুটো ক্ষেত্রের উপর মনোযোগ দিই, যেখানে এই ক্ষমতা কাজে লাগালে অনেক উপকার হবে: (১) বোনদের সঙ্গে আচরণ করার সময়ে আর (২) পোশাক-আশাক এবং চুলের স্টাইলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে।

৬. চিন্তাভাবনা করে কাজ করার ক্ষমতা থাকলে একজন ভাই কীভাবে মহিলাদের সম্মান করতে পারবে?

তোমাদের মধ্যে যদি চিন্তাভাবনা করে কাজ করার ক্ষমতা থাকে, তা হলে তোমরা মহিলাদের সম্মান করতে পারবে। কীভাবে? একজন যুবক ভাই যদি একজন বোনকে বিয়ে করার কথা চিন্তা করেন এবং তাকে ভালো করে জানার চেষ্টা করেন, তা হলে সেটা ভুল নয়। কিন্তু, সেই ভাইয়ের যদি সেই বোনকে বিয়ে করার কোনো উদ্দেশ্য না থাকে, তা হলে তাকে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। তিনি সেই বোনকে এমন কিছু বলবেন না অথবা এমন কোনো ম্যাসেজ পাঠাবেন না আর সেইসঙ্গে তিনি এমন কিছু করবেন না, যেটা থেকে সেই বোন চিন্তা করতে পারে যে, তিনি তাকে পছন্দ করেন। (১ তীম. ৫:১, ২) কিন্তু, সেই ভাই যদি কোনো বোনের সঙ্গে ডেটিং (বিয়ে করার জন্য একে অন্যকে ভালো করে জানা) করে, তা হলে তিনি এই বিষয়টা খেয়াল রাখবেন, ডেটিং করার সময়ে তারা দু-জন কখনো একা থাকবেন না; সবসময় তাদের সঙ্গে কেউ থাকবে। এভাবে তিনি সেই বোনের সুনাম নষ্ট করবেন না।—১ করি. ৬:১৮.

৭. চিন্তাভাবনা করে কাজ করার ক্ষমতা থাকলে একজন ভাই কীভাবে পোশাক-আশাক এবং চুলের স্টাইল করার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে?

কীভাবে অল্পবয়সি ভাইয়েরা দেখাতে পারে, তাদের মধ্যে চিন্তাভাবনা করে কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে এবং তারা যিহোবার মতো চিন্তা করে? তারা যে-পোশাক-আশাক বাছাই করে অথবা চুলের যে-স্টাইল করে, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখার মাধ্যমে তারা তা দেখাতে পারে। প্রায়ই যে-লোকেরা নতুন নতুন স্টাইলের পোশাক-আশাক ডিজাইন করে অথবা সেগুলো পরার জন্য অন্যদের উৎসাহিত করে, তারা যিহোবার মান অনুযায়ী চলে না এবং তাদের মধ্যে অনেকেই অনৈতিক জীবনযাপন করে। তাই, তারা এমন স্টাইলের পোশাক-আশাক ডিজাইন করে, যেগুলো খুবই টাইট হয় অথবা যেগুলো পরলে ছেলেদের মেয়েদের মতো দেখায়। একজন অল্পবয়সি ভাই যদি পরিপক্ব হতে চায়, তা হলে সে কোন ধরনের পোশাক-আশাক পরবে, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। তাকে চিন্তা করা উচিত, ‘আমি যদি এটা পরি, তা হলে যিহোবার কেমন লাগবে?’ তার এই বিষয়েও চিন্তা করা উচিত যে, তার মণ্ডলীতে পরিপক্ব ভাইয়েরা কোন ধরনের পোশাক-আশাক পরে। সেই ভাই নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারে: ‘আমি যা পরি, সেটা কি দেখায় যে, আমার সঠিক মনোভাব রয়েছে এবং আমি অন্যদের সম্মান করি? আমার পোশাক-আশাক থেকে কি বোঝা যায়, আমি যিহোবার উপাসনা করি?’ (১ করি. ১০:৩১-৩৩; তীত ২:৬) যে-অল্পবয়সি ভাইয়েরা চিন্তাভাবনা করে কাজ করার ক্ষমতাকে বাড়াতে থাকে, মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা তাদের সম্মান করে আর সেইসঙ্গে যিহোবা তাদের দেখে খুশি হন।

৮. একজন ভাই কীভাবে নির্ভরযোগ্য হতে পারেন?

নির্ভরযোগ্য হও। একজন ভাই যদি নির্ভরযোগ্য হন, তা হলে তিনি তার দায়িত্বগুলো ভালোভাবে পালন করবেন। (লূক ১৬:১০) এই ক্ষেত্রে যিশু সবচেয়ে ভালো উদাহরণ রেখেছেন। তিনি কখনো চিন্তাভাবনা না করে কোনো কাজ করেননি। এর পরিবর্তে যিহোবা তাঁকে যে-কাজ দিয়েছিলেন, তিনি সেই কাজ ভালোভাবে করেছিলেন। অনেক বার এটা করা তাঁর জন্য কঠিন হয়েছিল, কিন্তু তা-ও তিনি তা করেছিলেন। তিনি পিছিয়ে যাননি। তিনি লোকদের অনেক ভালোবাসতেন, বিশেষ করে তাঁর শিষ্যদের। সেই কারণে, তিনি তাদের সবার জন্য ইচ্ছুকমনে তাঁর জীবন দিয়েছিলেন। (যোহন ১৩:১) তাই ভাইয়েরা, যিশুর মতো হও এবং তোমাদের যে-কাজ দেওয়া হয়, তা ভালোভাবে করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করো। তোমরা যদি সেই কাজ করতে না জান, তা হলে অন্য পরিপক্ব ভাইদের কাছ থেকে সাহায্য নাও। এটা দেখাবে যে, তোমরা নম্র। তোমাদের যতটুকু করতে বলা হয়, শুধু ততটুকুই কোরো না; আরও বেশি করো। (রোমীয় ১২:১১) তোমাদের যেকোনো কাজ দেওয়া হোক না কেন, তা ভালোভাবে করার চেষ্টা করো। সবসময় মনে রেখো, তোমরা “মানুষের কাজ নয়, বরং যিহোবার কাজ” করছ। (কল. ৩:২৩) এটা ঠিক, তোমাদের দ্বারা ভুল হবে। তাই, সবসময় নম্র হয়ে থেকো এবং ভুল করলে সেটা মেনে নাও।—হিতো. ১১:২.

কিছু দক্ষতা অর্জন করো, যেগুলো তোমার কাজে আসবে

৯. কেন একজন অল্পবয়সি ভাইয়ের কিছু দক্ষতা অর্জন করা উচিত?

পরিপক্ব হতে গেলে তোমাদের কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হবে, যেটা তোমাদের কাজে আসবে। এটার ফলে তোমরা মণ্ডলীর দায়িত্বগুলো ভালোভাবে পালন করতে পারবে। এ ছাড়া, তোমরা এমন কাজ খুঁজে পাবে, যেটার মাধ্যমে তোমরা নিজেদের এবং পরিবারের যত্ন নিতে পারবে আর অন্যদের সঙ্গে তোমাদের সম্পর্ক ভালো থাকবে। এসো আমরা দেখি, কীভাবে তোমরা কিছু দক্ষতা অর্জন করতে পার।

তুমি যদি ভালো করে লেখাপড়া শেখো, তা হলে তোমার নিজের এবং মণ্ডলীর ভাই-বোনদের উপকার হবে (১০-১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০-১১. একজন অল্পবয়সি ভাই যদি ভালো করে লেখাপড়া শেখে, তা হলে সে এবং মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা কোন উপকার পাবে? (গীতসংহিতা ১:১-৩) (ছবিও দেখুন।)

১০ ভালো করে লেখাপড়া শেখো। বাইবেলে বলা হয়েছে, যে-ব্যক্তি প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য পড়ে এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে, সে আনন্দিত থাকে এবং তার প্রতিটা কাজে সফল হয়। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১:১-৩.) তাই, প্রতিদিন বাইবেল পড়ো। এভাবে তুমি যিহোবার চিন্তাভাবনা জানতে পারবে। যিহোবার চিন্তাভাবনা জানলে তুমি বুঝতে পারবে, বাইবেলের নীতিগুলো কীভাবে কাজে লাগানো যায় এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। (হিতো. ১:৩, ৪) এইরকম ভাইদের মণ্ডলীতে খুবই প্রয়োজন। কেন?

১১ কারণ মণ্ডলীতে এমন ভাইদের প্রয়োজন, যারা সবাইকে বাইবেল থেকে শেখাবে এবং ভালো পরামর্শ দেবে। (তীত ১:৯) তোমরা যদি ভালো করে লেখাপড়া শেখো, তা হলে তোমরা এমন বক্তৃতা প্রস্তুত করতে পারবে আর এমন উত্তর দিতে পারবে, যেটা থেকে ভাই-বোনেরা অনেক কিছু শিখতে পারবে এবং তাদের বিশ্বাস বাড়বে। তোমরা ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার সময়ে, সভায় অথবা সম্মেলনে নোটও নিতে পারবে। তোমরা যে-নোট নেবে, সেটার মাধ্যমে শুধু তোমাদের বিশ্বাসই বাড়বে না, কিন্তু ভাই-বোনেরাও উৎসাহিত হবে।

১২. ভালোভাবে কথা বলার জন্য তোমাদের কী করতে হবে?

১২ ভালোভাবে কথা বলার চেষ্টা করো। একজন ভাইয়ের জন্য এই দক্ষতা অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে-ভাইয়ের এই দক্ষতা রয়েছে, তিনি মন দিয়ে অন্যদের কথা শোনেন এবং এটা বোঝার চেষ্টা করেন যে, সেই ব্যক্তি কী চিন্তা করছেন অথবা কেমন অনুভব করছেন। (হিতো. ২০:৫) সেই ব্যক্তির বলার ধরন, তার মুখ এবং তার হাবভাব দেখে ভাই অনেক কিছু বুঝতে পারেন। তোমরা যখন লোকদের সঙ্গে সময় কাটাবে, তখনই তোমরা এমনটা করতে পারবে। তোমরা যদি সবসময় ই-মেইল অথবা ম্যাসেজের মাধ্যমে লোকদের সঙ্গে কথা বল, তা হলে সামনাসামনি গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা কঠিন বলে মনে হবে। তাই, লোকদের সঙ্গে দেখা করা এবং তাদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলার চেষ্টা করো।—২ যোহন ১২.

এমন কোনো দক্ষতা অর্জন করা ভালো, যেটার ফলে তুমি কোনো চাকরি খুঁজে পাবে (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. একজন অল্পবয়সি ভাইকে আর কী শিখতে হবে? (১ তীমথিয় ৫:৮) (ছবিও দেখুন।)

১৩ নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখো। একজন পরিপক্ব খ্রিস্টানকে নিজের এবং নিজের পরিবারের যত্ন নিতে হবে। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৫:৮.) কোনো কোনো দেশে আমাদের অল্পবয়সি ভাইয়েরা তাদের বাবা অথবা কোনো আত্মীয়ের কাছ থেকে কাজ কিংবা দক্ষতা শেখে। আবার কোনো কোনো দেশে আমাদের অল্পবয়সিরা চাইলে স্কুলে থাকতেই কোনো কাজ অথবা দক্ষতা শিখতে পারে। তুমি ঘরে অথবা স্কুলে যেখানেই শেখো না কেন, কোনো না কোনো দক্ষতা অর্জন করলে তুমি চাকরি খুঁজে পাবে। (প্রেরিত ১৮:২, ৩; ২০:৩৪; ইফি. ৪:২৮) তাই, পরিশ্রম করতে শেখো এবং তোমাকে যে-কাজ দেওয়া হয়, তা করতে শেখো। এর ফলে, তুমি এক সুনাম অর্জন করবে। এমনটা করলে তুমি সহজেই একটা চাকরি খুঁজতে পাবে এবং সেটা করে চলতে পারবে। তাই, এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা যে-গুণগুলো এবং দক্ষতা নিয়ে কথা বললাম, সেগুলো বাড়িয়ে চললে একজন খ্রিস্টান ভবিষ্যতে তার দায়িত্বগুলো ভালোভাবে পালন করতে পারবে। এখন এসো, সেই দায়িত্বগুলোর মধ্যে কয়েকটা নিয়ে আমরা আলোচনা করি।

ভবিষ্যতে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নাও

১৪. একজন অল্পবয়সি ভাই পূর্ণসময়ের সেবা করার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে?

১৪ পূর্ণসময়ের দাস। অনেক পরিপক্ব ভাই অল্পবয়স থেকেই পূর্ণসময়ের সেবা করা শুরু করে দিয়েছিল। এর কোন উপকার রয়েছে? যখন একজন অল্পবয়সি অগ্রগামী হিসেবে সেবা করে, তখন সে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কাজ করতে শেখে। অগ্রগামী হিসেবে সেবা করলে একজন অল্পবয়সি শিখতে পারে, তার কাছে যা আছে, কীভাবে সেটা দিয়েই জীবন চালাতে হয়। (ফিলি. ৪:১১-১৩) ভালো হবে, তোমরা যদি পূর্ণসময়ের সেবা করার আগে কিছুসময় সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবা কর। যারা এমনটা করেছে, তারা পরে নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে পেরেছে। অগ্রগামী হিসেবে সেবা করলে তোমাদের সামনে পূর্ণসময়ের সেবা করার বিভিন্ন দরজা খুলে যাবে। যেমন, নির্মাণ প্রকল্পে সাহায্য করা অথবা বেথেলে সেবা করা।

১৫-১৬. একজন অল্পবয়সি ভাই মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সেবা করার জন্য কীভাবে যোগ্য হয়ে উঠতে পারে?

১৫ পরিচারক দাস অথবা প্রাচীন। প্রত্যেক ভাইয়ের এই লক্ষ্য রাখা উচিত যে, একদিন সে প্রাচীন হিসেবে ভাই-বোনদের সেবা করার জন্য যোগ্য হয়ে উঠবে। বাইবেলে বলা হয়েছে, যে-ভাই তা করার জন্য এগিয়ে আসে, তিনি “উত্তম কাজ করার বিষয়ে আকাঙ্ক্ষী।” (১ তীম. ৩:১) তবে, প্রাচীন হিসেবে সেবা করার আগে একজন ভাইকে পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করার জন্য যোগ্য হতে হবে। পরিচারক দাসেরা বিভিন্ন উপায়ে প্রাচীনদের সাহায্য করে। প্রাচীন এবং পরিচারক দাসেরা নম্র হয়ে থাকে এবং ভাই-বোনদের সেবা করার জন্য উদ্যোগী হয়ে থাকে। তারা মনপ্রাণ দিয়ে প্রচারও করে থাকে। একজন অল্পবয়সি ভাই ১৭ থেকে ১৮ বছর বয়সে পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করার জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে পারে। আর একজন যোগ্য পরিচারক দাসকে ২০ থেকে ২২ বছর বয়সেই প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত করা যেতে পারে।

১৬ তোমরা পরিচারক দাস অথবা প্রাচীন হিসেবে সেবা করার জন্য কীভাবে যোগ্য হতে পার? এই বিষয়ে বাইবেলে কিছু যোগ্যতা রয়েছে। একজন ভাই এই যোগ্যতাগুলো তখনই অর্জন করতে পারবে, যখন সে যিহোবা, নিজের পরিবার এবং মণ্ডলীর ভাই-বোনদের ভালোবাসবে। (১ তীম. ৩:১-১৩; তীত ১:৬-৯; ১ পিতর ৫:২, ৩) তোমরাও বাইবেলে দেওয়া যোগ্যতাগুলো বোঝার এবং তা অর্জন করার চেষ্টা করতে পারো। যিহোবার কাছে প্রার্থনা করো যেন তিনি তোমাদের সাহায্য করেন। c

যিহোবা চান যেন একজন স্বামী তার স্ত্রীকে ভালোবাসে, তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর খেয়াল রাখে, তার ভালো বন্ধু হয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ককে মজবুত করার জন্য তাকে সাহায্য করে (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭. একজন অল্পবয়সি ভাই পরে একজন ভালো স্বামী এবং পরিবারের মস্তক হওয়ার জন্য এখন থেকেই কী করতে পারে? (ছবিও দেখুন।)

১৭ স্বামী এবং পরিবারের মস্তক। যিশু যেমন বলেছিলেন, কিছু পরিপক্ব ভাই বিয়ে করে না। (মথি ১৯:১২) কিন্তু, তোমরা যদি বিয়ে করার কথা চিন্তা করে থাক, তা হলে তোমাদের স্বামী এবং মস্তকের দায়িত্ব নিতে হবে। (১ করি. ১১:৩) যিহোবা চান যেন একজন স্বামী তার স্ত্রীকে ভালোবাসে, তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর খেয়াল রাখে, তার ভালো বন্ধু হয় এবং যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ককে মজবুত করার জন্য তাকে সাহায্য করে। (ইফি. ৫:২৮, ২৯) এই প্রবন্ধে আমরা যে-গুণ এবং দক্ষতা নিয়ে আলোচনা করলাম, সেগুলো তোমরা যদি বাড়িয়ে চল, তা হলে পরে তোমরা একজন ভালো জীবনসাথি হতে পারবে। তোমরা যদি এখন থেকেই চিন্তাভাবনা করে কাজ করার ক্ষমতা বাড়াও, মহিলাদের সম্মান করতে শেখ এবং নির্ভরযোগ্য হও, তা হলে তোমরা স্বামী এবং পরিবারের মস্তক হিসেবে তোমাদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারবে।

১৮. একজন অল্পবয়সি ভাই ভালো বাবা হওয়ার জন্য এখন থেকেই কী করতে পারে?

১৮ বাবা। বিয়ে করার পর তোমাদের হয়তো সন্তান হতে পারে। কীভাবে তোমরা ভালো বাবা হতে পার? এই বিষয়ে তোমরা যিহোবার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারো। (ইফি. ৬:৪) যিহোবা হৃদয় থেকে তাঁর পুত্র যিশুকে বলেছিলেন যে, তিনি তাঁকে ভালোবাসেন এবং তাঁর উপর সন্তুষ্ট। (মথি ৩:১৭) তাই, পরে তোমরা যদি বাবা হও, তা হলে তোমরাও যিহোবার মতো হওয়ার চেষ্টা কোরো। তোমাদের সন্তানেরা যেন এটা বোঝে যে, তোমরা তাদের ভালোবাসো। তারা যখন কোনো ভালো কাজ করবে, তখন হৃদয় থেকে তাদের প্রশংসা কোরো। তোমরা যখন এভাবে তোমাদের সন্তানদের সঙ্গে আচরণ করবে, তখন তারাও একজন পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে উঠবে। তাই, এখন থেকেই তোমরা তোমাদের পরিবারের সদস্য এবং মণ্ডলীর ভাই-বোনদের প্রতি চিন্তা দেখাও। তাদের বলো যে, তোমরা তাদের কতটা ভালোবাসো এবং তারা তোমাদের কাছে কতটা মূল্যবান। (যোহন ১৫:৯) এই সমস্ত কিছু করলে তোমরা একজন ভালো স্বামী এবং একজন ভালো বাবা হতে পারবে। তবে, বর্তমানেও যিহোবা তোমাদের ব্যবহার করতে পারেন আর তোমরা তোমাদের পরিবার এবং মণ্ডলীকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে পার।

তোমরা এখন কী করবে?

অনেক অল্পবয়সি ভাই-বোন বাইবেল থেকে শিখেছে এবং সেগুলো কাজে লাগিয়েছে, তাই তারা পরিপক্ব খ্রিস্টান হতে পেরেছে (১৯-২০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৯-২০. অল্পবয়সি ভাইয়েরা কীভাবে পরিপক্ব খ্রিস্টান হতে পারে? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৯ অল্পবয়সি ভাইয়েরা, তোমরা এমনি এমনিই পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে উঠবে না, তোমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হবে। তোমাদের এমন পরিপক্ব ব্যক্তিদের বিষয়ে চিন্তা করতে হবে, যাদের মতো তোমরা হতে চাও। তোমাদের চিন্তাভাবনা করে কাজ করার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে চলতে হবে এবং নির্ভরযোগ্য হতে হবে। এ ছাড়া, তোমাদের এমন কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হবে, যেগুলো তোমাদের কাজে আসবে এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করার জন্য তোমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

২০ তোমাদের যে এত কিছু করতে হবে, তা ভেবেই তোমাদের মাথা ঘুরে যেতে পারে। তবে, হাল ছেড়ে দিয়ো না; তোমরা খুশি হতে পার। মনে রেখো, যিহোবা তোমাদের সঙ্গে আছেন এবং তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন। (যিশা. ৪১:১০, ১৩) মণ্ডলীর ভাই-বোনেরাও তোমাদের সাহায্য করবে। তাই, পরিপক্ব হওয়ার জন্য পরিশ্রম করে চলো। তোমরা যখন পরিপক্ব হয়ে উঠবে, তখন তোমরা অনেক কিছু করতে পারবে এবং তোমরা সুখে থাকবে। অল্পবয়সি ভাইয়েরা, আমরা তোমাদের অনেক ভালোবাসি। আমরা প্রার্থনা করি যেন যিহোবা তোমাদের পরিশ্রমের উপর আশীর্বাদ করেন।—হিতো. ২২:৪.

গান ১৩৩ যৌবনে যিহোবাকে সেবা করা

a মণ্ডলীতে পরিপক্ব খ্রিস্টানদের খুবই প্রয়োজন। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কীভাবে অল্পবয়সি ভাইয়েরা পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে উঠতে পারে।

b আগের প্রবন্ধে দেওয়া “এই অভিব্যক্তির অর্থ” দেখুন।