সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫১

গান ৩ দৃঢ় দুর্গ তুমি ও বিশ্বাসভূমি

আপনার চোখের জল যিহোবার কাছে মূল্যবান

আপনার চোখের জল যিহোবার কাছে মূল্যবান

“দয়া করে আমার চোখের জল তোমার কুপায় ভরে রাখো। সেগুলোর বিষয়ে তোমার বইয়ে লেখা আছে।”গীত. ৫৬:৮.

আমরা কী শিখব?

আমরা যখন অনেক দুঃখিত বা হতাশ হয়ে পড়ি, তখন যিহোবা আমাদের কষ্ট বোঝেন এবং আমাদের সান্ত্বনা দেন।

১-২. কখন আমাদের চোখে জল চলে আসে?

 আমরা সবাই কখনো-না-কখনো চোখের জল ফেলেছি। আমরা যখন খুব খুশি হই অথবা আমাদের প্রতি ভালো কিছু ঘটে, তখন আনন্দে আমাদের চোখে জল চলে আসে। যখন আপনি প্রথম বার আপনার সন্তানকে কোলে নিয়েছিলেন, তখন হয়তো আনন্দে আপনার চোখে জল চলে এসেছিল অথবা কোনো মধুর স্মৃতি মনে করে অথবা আপনার কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা করে আপনার চোখে জল চলে এসেছিল।

কিন্তু, অনেকসময় আমরা এই জন্য চোখের জল ফেলি কারণ আমরা অনেক দুঃখে অথবা অনেক কষ্টের মধ্যে থাকি। যেমন, সেইসময়ে যখন আমাদের প্রিয় কেউ আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে অথবা হতে পারে, আমাদের এমন কোনো অসুখ হয়েছে, যে-কারণে আমরা অনেক কষ্ট পাই অথবা আমরা যখন আমাদের কোনো প্রিয়জনকে মৃত্যুতে হারাই, তখন আমরা অনেক কান্নাকাটি করি। এইরকম পরিস্থিতিতে হয়তো আমরা ভাববাদী যিরমিয়ের মতো একইরকম অনুভব করি। ব্যাবিলনীয়েরা যখন জেরুসালেমকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, “আমার চোখ থেকে জলের স্রোত বইছে। আমার চোখ থেকে স্রোত বইতেই থাকবে, থামবে না।”—বিলাপ ৩:৪৮, ৪৯.

৩. যিহোবা যখন তাঁর সেবকদের কষ্ট পেতে দেখেন, তখন তিনি কেমন অনুভব করেন? (যিশাইয় ৬৩:৯)

আমরা দুঃখকষ্ট ও চাপের কারণে যত চোখের জল ফেলেছি, সেই সমস্ত যিহোবা লক্ষ করেছেন। বাইবেল বলে যে, যিহোবা ভালোভাবে জানেন, তাঁর সেবকেরা কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং তাঁর সেবকেরা যখন সাহায্যের জন্য তাঁর কাছে বিনতি করে, তখন তিনি তাদের প্রার্থনা শোনেন। (গীত. ৩৪:১৫) তবে, যিহোবা যে শুধু আমাদের চোখের জলই দেখেন এমন নয়, সেইসঙ্গে তিনি আমাদের সাহায্য চেয়ে করা প্রার্থনাও শোনেন। আমাদের কাঁদতে দেখে তিনি অনেক কষ্ট পান এবং দ্রুত সাহায্য করেন কারণ আমাদের পিতা যিহোবা আমাদের খুব ভালোবাসেন।—পড়ুন, যিশাইয় ৬৩:৯.

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কোন ব্যক্তিদের উদাহরণগুলো নিয়ে আলোচনা করব এবং যিহোবা সম্বন্ধে কী শিখব?

যিহোবা তাঁর বাক্যে লিখিয়েছেন, যখন তাঁর সেবকেরা কেঁদেছিল, তখন তিনি কেমন অনুভব করেছিলেন এবং কীভাবে তিনি তাদের সাহায্য করেছিলেন। এই প্রবন্ধে আমরা হান্না, দায়ূদ এবং রাজা হিষ্কিয়ের উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করব এবং জানব যে, (১) তারা কেন চোখের জল ফেলেছিলেন, (২) যিহোবা কীভাবে তাদের সাহায্য করেছিলেন এবং (৩) আজকে যখন আমরা খুবই দুঃখের মধ্যে থাকি, যখন কেউ আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে অথবা যখন আমাদের কাছে কোনো আশা থাকে না আর এই কারণগুলোর জন্য যখন আমরা চোখের জল ফেলি, তখন কীভাবে আমরা সান্ত্বনা লাভ করতে পারি।

আপনি যখন দুঃখের মধ্যে থাকেন

৫. হান্না যে-পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই কারণে তিনি কেমন অনুভব করেছিলেন?

হান্নার জীবনে অনেক সমস্যা ছিল, যে-কারণে তিনি অনেক কাঁদতেন। একটা সমস্যা ছিল, তার স্বামীর পনিন্না নামে আরেকজন স্ত্রী ছিল আর সেই স্ত্রী হান্নাকে ঘৃণা করতেন। শুধু তা-ই নয়, হান্নার কোনো সন্তান ছিল না, যেখানে পনিন্নার অনেক সন্তান ছিল। (১ শমূ. ১:১, ২) হান্না বন্ধ্যা হওয়ার কারণে পনিন্না সবসময় তাকে আঘাত দিয়ে কথা বলতেন। একটু কল্পনা করুন, আপনি যদি হান্নার জায়গায় থাকতেন, তা হলে আপনি কেমন অনুভব করতেন? বাইবেল বলে যে, হান্না এতটাই দুঃখিত হয়ে পড়তেন যে, তিনি “কান্নাকাটি করতেন এবং খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিতেন।” এ ছাড়া, “হান্না খুবই হতাশ হয়ে” পড়তেন।—১ শমূয়েল ১:৬, ৭, ১০.

৬. হান্না সান্ত্বনা লাভ করার জন্য কী করেছিলেন?

কোন বিষয়টা থেকে হান্না সান্ত্বনা লাভ করেছিলেন? হান্না যিহোবার উপাসনা করার জন্য পবিত্র তাঁবুতে গিয়েছিলেন। সেখানে সম্ভবত প্রাঙ্গণে প্রবেশদ্বারের কাছে এসে তিনি “যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে এবং ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে” শুরু করেছিলেন। (১ শমূ. ১:৬, ৭, ১০, NW) তিনি যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলেন যে, “তোমার দাসীর অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত কর আর আমার প্রতি মনোযোগ” দাও। (১ শমূ. ১:৬, ৭, ১০, ১১) হান্না যিহোবার সামনে নিজের হৃদয় উজাড় করে দিয়েছিলেন। নিজের প্রিয় মেয়েকে কাঁদতে দেখে এবং কষ্ট পেতে দেখে যিহোবার কতই-না কষ্ট হয়েছিল!

৭. যিহোবাকে মনের সমস্ত কথা খুলে বলার পর হান্না কেমন অনুভব করেছিলেন?

হান্না তার মনের সমস্ত কথা যিহোবার কাছে খুলে বললেন এবং এরপর মহাযাজক এলি তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, যিহোবা তার প্রার্থনার উত্তর দেবেন। তখন হান্না কেমন অনুভব করেছিলেন? বাইবেল বলে, “তারপর, সেই মহিলা সেখান থেকে চলে গেলেন। তিনি গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করলেন এবং তার মুখ আর বিষণ্ণ রইল না।” (১ শমূ. ১:১৭, ১৮) যদিও হান্নার পরিস্থিতি তখনও ঠিক হয়নি, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি অনেক স্বস্তি পেয়েছিলেন। কেন? কারণ তিনি তার সমস্ত চিন্তা যিহোবার উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং যিহোবা তার প্রার্থনা শুনেছিলেন তার কষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন আর পরবর্তী সময়ে তাকে অনেক সন্তান দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন।—১ শমূ. ১:১৯, ২০; ২:২১.

৮-৯. কেন সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আমাদের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা করতে হবে? (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) (ছবিও দেখুন।)

আমরা কী শিখি? আপনি কি কোনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন আর সেই কারণে আপনি প্রায়ই কান্নাকাটি করছেন? হতে পারে, আপনার পরিবারের কোনো সদস্য অথবা আপনার কোনো বন্ধু মারা গিয়েছে, এইরকম পরিস্থিতিতে আপনার হয়তো কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করবে না আর আপনি হয়তো একা থাকতে চাইবেন। কিন্তু, একবার হান্নার কথা চিন্তা করুন। যখন তিনি পবিত্র তাঁবুতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি সান্ত্বনা ও শক্তি পেয়েছিলেন। একইভাবে, সভাগুলোতে যোগ দেওয়া আপনাকে শক্তিশালী করতে পারে। হতে পারে, আপনি দুঃখে এতটাই ভেঙে পড়েছেন যে, সভায় যেতে আপনার ভালো লাগে না। তা সত্ত্বেও, আপনি যদি সেখানে যান, তা হলে আপনি সান্ত্বনা পাবেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.) সভাগুলোতে আমরা যখন বাইবেলের পদগুলো শুনি, তখন আমরা অনেক উৎসাহিত হই। এভাবে, যিহোবা আমাদের ভালো বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করেন আর এর ফলে আমরা আমাদের দুঃখ ভুলে থাকতে পারি। আর যদি আমাদের পরিস্থিতি দ্রুত ঠিক না-ও হয়, তারপরও আমাদের মন ভালো হয়ে যায় এবং আমরা নিজেদের সামলাতে পারি।

এ ছাড়া, আমরা যখন সভায় ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করি, তখনও আমরা সান্ত্বনা লাভ করি। ভাই-বোনেরা আমাদের উৎসাহিত করে এবং এইরকমটা অনুভব করতে সাহায্য করে যে, তারা আমাদের খুব ভালোবাসে। (১ থিষল. ৫:১১, ১৪) একজন ভাইয়ের অভিজ্ঞতার প্রতি মনোযোগ দিন, যিনি একজন বিশেষ অগ্রগামী এবং তার স্ত্রী মারা গিয়েছেন। ভাই বলেন: “আজও আমার স্ত্রীর কথা মনে করে আমার চোখে জল চলে আসে। অনেকসময় আমি ঘরের কোণে বসে শুধু কাঁদতে থাকি। কিন্তু, সভায় যাওয়ার ফলে আমি অনেক শক্তি লাভ করি। ভাই-বোনদের মন্তব্য শুনে এবং তারা যেভাবে প্রেম দেখিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলে, সেটা দেখে আমার খুব ভালো লাগে। অনেকবার এমন হয় যে, সভায় যাওয়ার আগে আমি অনেক উদ্‌বিগ্ন থাকি, কিন্তু সেখানে গিয়ে সবসময় আমার মন ভালো হয়ে যায়।” আমরা যখন সভাগুলোতে যোগ দিই, তখন যিহোবা ভাই-বোনদের মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করতে পারেন এবং আমাদের সান্ত্বনা দিতে পারেন।

আমরা ভাই-বোনদের কাছ থেকে সান্ত্বনা লাভ করতে পারি (৮-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১০. আমরা যখন অনেক দুঃখের মধ্যে থাকি, তখন আমরা হান্নার মতো কী করতে পারি?

১০ হান্না আরেকটা বিষয় থেকে সান্ত্বনা লাভ করেছিলেন: তিনি হৃদয় উজাড় করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। আপনিও আপনার “সমস্ত উদ্‌বিগ্নতার বোঝা তাঁর উপর ফেলে” দিতে পারেন এবং নিশ্চিত থাকতে পারেন, যিহোবা আপনার প্রার্থনা শুনবেন। (১ পিতর ৫:৭) একজন বোনের স্বামীকে ডাকাতেরা খুন করেছিল। বোন বলেন, “আমার স্বামী যখন মারা গিয়েছিল, তখন আমার মনে হয়েছিল, যেন আমার হৃদয়টা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে এবং সেগুলো কখনো জোড়া লাগবে না। কিন্তু, যখনই আমি আমার প্রিয় পিতার কাছে প্রার্থনা করতাম, তখন আমি অনেক স্বস্তি লাভ করতাম। অনেকসময় আমি আমার হৃদয়ের কথা যিহোবার কাছে খুলে বলতে পারতাম না। কিন্তু, আমি জানতাম, যিহোবা আমার হৃদয়ের কথা বোঝেন। যখন আমি দুঃখ এবং উদ্‌বিগ্নতার কারণে কিছুই বুঝে উঠতে পারতাম না, তখন আমি যিহোবার কাছে মনের শান্তি চাইতাম। সেইসময় আমি অনেক স্বস্তি পেতাম এবং আরও একটা দিন কাটানোর জন্য শক্তি লাভ করতাম।” আপনি যখন কেঁদে কেঁদে আপনার হৃদয়ের কথা যিহোবাকে বলেন, তখন তিনিও অনেক দুঃখ পান এবং আপনার কষ্ট ভালোভাবে বোঝেন। আপনার উদ্‌বিগ্নতা দ্রুত দূর না-ও হতে পারে, কিন্তু আপনি যখন প্রার্থনা করবেন, তখন যিহোবা আপনাকে সান্ত্বনা এবং মনের শান্তি দেবেন। (গীত. ৯৪:১৯; ফিলি. ৪:৬, ৭) সমস্ত কিছু সহ্য করেও আপনি যেভাবে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করছেন, তার জন্য তিনি আপনাকে অবশ্যই পুরস্কার দেবেন।—ইব্রীয় ১১:৬.

আপনার কোনো প্রিয়জন যখন আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে

১১. দায়ূদ যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেই বিষয়ে তিনি কেমন অনুভব করতেন?

১১ দায়ূদের জীবনে অনেক সমস্যা এসেছিল এবং তিনি অনেক বার চোখের জল ফেলেছিলেন। অনেক লোক তাকে ঘৃণা করত এবং তার পরিবার ও বন্ধুরাও তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। (১ শমূ. ১৯:১০, ১১; ২ শমূ. ১৫:১০-১৪, ৩০) দায়ূদ একবার এতটাই দুঃখে ভেঙে পড়েছিলেন যে তিনি বলেছিলেন: “দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সারারাত ধরে আমি আমার চোখের জলে আমার বিছানা ভেজাই, আমি কেঁদে কেঁদে আমার খাট ভাসিয়ে দিই।” দায়ূদ কেমন অনুভব করেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, “যারা আমাকে জ্বালাতন করে” তাদের কারণে তিনি এমন অনুভব করেছিলেন। (গীত. ৬:৬, ৭, NW) লোকেরা দায়ূদের প্রতি এতটাই খারাপ আচরণ করেছিল যে, তিনি অনেক কেঁদেছিলেন।

১২. গীতসংহিতা ৫৬:৮ পদ অনুযায়ী দায়ূদের কোন বিষয়ে আস্থা ছিল?

১২ দায়ূদের জীবনে অনেক সমস্যা এসেছিল, কিন্তু তার এই আস্থা ছিল যে, যিহোবা তাকে ভালোবাসেন এবং তিনি তার সঙ্গে রয়েছেন। তিনি লিখেছিলেন, “যিহোবা আমার কান্নার আওয়াজ অবশ্যই শুনবেন।” (গীত. ৬:৮) আরও একটা পরিস্থিতিতে দায়ূদ হৃদয় ছুয়ে যাওয়ার মতো একটা কথা লিখেছিলেন, যেটা আমরা গীতসংহিতা ৫৬:৮ পদে পাই। (পড়ুন।) দায়ূদের কথাগুলো থেকে জানতে পারি, যিহোবা আমাদের কতটা ভালোবাসেন এবং তিনি আমাদের জন্য কতটা চিন্তা করেন। দায়ূদ বলেছিলেন যে, যিহোবা যেন তার চোখের জল একটা বোতলে ধরে রেখেছেন এবং তার প্রতিটা চোখের জলের হিসেব একটা বইয়ে লিখে রেখেছেন। দায়ূদের পুরো আস্থা ছিল যে, যিহোবা তার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন এবং যিহোবা জানেন যে, তিনি কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, যিহোবা এটাও জানেন, এই সমস্ত কিছুর কারণে তিনি কেমন অনুভব করছেন।

১৩. কেউ যখন আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তখন কোন বিষয়টা আমাদের সান্ত্বনা দিতে পারে? (ছবিও দেখুন।)

১৩ আমরা কি শিখি? আপনার কোনো প্রিয়জন কি আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং এর কারণে আপনি খুবই দুঃখিত? হতে পারে, আপনার যার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সে আপনাকে বিয়ে করবে না বলে ঠিক করেছে অথবা আপনার জীবনসঙ্গী হয়তো আপনাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে বা আপনার কোনো প্রয়োজন যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছে। একজন ভাইয়ের স্ত্রী যখন তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তখন তিনি কেমন অনুভব করেছিলেন? তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে, এটা আমার সঙ্গে ঘটেছে। আমার অনেক খারাপ লাগছিল আর রাগ হচ্ছিল এবং এইরকম মনে হচ্ছিল যে, আমি একেবারে অযোগ্য। কেউ যদি আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তা হলে আস্থা রাখুন, যিহোবা কখনোই আপনাকে একা ছেড়ে দেবেন না। এটা জেনে কি আপনি সান্ত্বনা লাভ করেন না?” ভাই এও বলেন, “আমি একটা বিষয় বুঝতে পেরেছিলাম, মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে, কিন্তু যিহোবা কখনোই আমাদের একা ছেড়ে দেন না। তিনি আমাদের শৈল। যা-ই ঘটুক না কেন, তিনি সবসময় তাঁর বিশ্বস্ত সেবকদের পাশে থাকবেন।” (গীত. ৩৭:২৮) এটাও মনে রাখবেন যে, যিহোবার মতো করে আপনাকে আর কেউ ভালোবাসে না। এটা ঠিক যে, যখন কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে, তখন সেটা আমাদের অনেক কষ্ট দেয়। কিন্তু এই কারণে আপনার প্রতি যিহোবার প্রেম কম হয়ে যায় না। আপনি তাঁর চোখে অনেক মূল্যবান! (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, কোনো ব্যক্তি আপনার সঙ্গে যেমনই আচরণই করুক না কেন, আপনার পিতা যিহোবা আপনাকে অনেক ভালোবাসেন।

গীতসংহিতা বই থেকে আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই যে, যাদের মন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে, যিহোবা তাদের কাছে থাকেন (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১৪. গীতসংহিতা ৩৪:১৮ পদ আমাদের কোন বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়?

১৪ কেউ যদি আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তা হলে আপনি গীতসংহিতা ৩৪:১৮ পদে পাওয়া দায়ূদের কথাগুলো থেকেও সান্ত্বনা পেতে পারেন। (পড়ুন।) একটা বইয়ে শাস্ত্রপদকে এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, “যাদের মন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে,” তারা এমন লোক হতে পারে, যাদের কাছে কোনো আশা নেই। কীভাবে যিহোবা এই লোকদের সাহায্য করেন? একটু কল্পনা করুন, একটা শিশু যখন কাঁদে, তখন তার মা অথবা বাবা কীভাবে তাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করে। একইভাবে, কেউ যখন আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বা আমাদের ছেড়ে চলে যায়, তখন যিহোবা আমাদের “কাছে থাকেন।” তিনি জানেন আমরা কতটা কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এবং তিনি দ্রুত আমাদের সাহায্য করেন। তিনি আমাদের চূর্ণবিচূর্ণ হৃদয়কে সান্ত্বনা দেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি আমাদের আশা দিয়েছেন, ভবিষ্যতের জন্য প্রচুর প্রতিজ্ঞা করেছেন, যেগুলো নিয়ে চিন্তা করলে আমাদের সমস্যাগুলো সহ্য করার জন্য আমরা শক্তি পাই।—যিশা. ৬৫:১৭.

যখন কোনো আশা থাকে না

১৫. হিষ্কিয় কেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলেন?

১৫ যিহূদার রাজা হিষ্কিয়ের বয়স যখন ৩৯ বছর ছিল, তখন তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভাববাদী যিশাইয় তাকে যিহোবার কাছ থেকে এই বার্তা শুনিয়েছিলেন যে, তার অসুস্থতা ঠিক হবে না এবং তিনি মারা যাবেন। (২ রাজা. ২০:১) হিষ্কিয়ের বেঁচে থাকার কোনো আশা ছিল না বলে মনে হয়েছিল। তিনি এতটাই দুঃখ পেয়েছিলেন যে, তিনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেছিলেন। সেইসময় তিনি যিহোবার কাছে আন্তরিকভাবে বিনতি করেছিলেন।—২ রাজা. ২০:২, ৩.

১৬. হিষ্কিয়ের কান্না এবং বিনতি দেখে যিহোবা কী করেছিলেন?

১৬ হিষ্কিয়কে কাঁদতে দেখে এবং তার বিনতি শুনে যিহোবা অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “আমি তোমার প্রার্থনা শুনেছি, তোমার চোখের জল দেখেছি। আমি তোমাকে সুস্থ করে তুলব।” হিষ্কিয়কে দেখে যিহোবার করুণা হয়েছিল এবং যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি হিষ্কিয়ের আয়ু বৃদ্ধি করবেন এবং জেরুসালেমকে অশূরীয়দের হাত থেকে রক্ষা করবেন।—২ রাজা. ২০:৪-৬.

১৭. যখন আমরা কোনো গুরুতর অসুস্থতার মধ্যে থাকি, তখন যিহোবা কীভাবে আমাদের যত্ন নেন? (গীত. ৪১:৩) (ছবিও দেখুন।)

১৭ আমরা কী শিখি? আপনার কি এমন কোনো অসুস্থতা রয়েছে, যার কোনো চিকিৎসা নেই? যদি তা-ই হয়, তা হলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। আপনার যদি কান্না পায়, তা হলে কাঁদুন আর কেঁদে কেঁদে তাঁকে বলুন, আপনি কেমন অনুভব করছেন। বাইবেল আমাদের আশ্বস্ত করে, “করুণাময় পিতা” এবং “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” আমাদের সমস্ত পরীক্ষার মধ্যে সান্ত্বনা দেবেন। (২ করি. ১:৩, ৪) বর্তমানে, আমরা এটা আশা করতে পারি না যে, যিহোবা আমাদের সমস্ত সমস্যা দূর করে দেবেন কিন্তু আমরা তাঁর উপর আস্থা রাখতে পারি, তিনি আমাদের সবসময় ধরে রাখবেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৪১:৩.) যিহোবা তাঁর পবিত্র শক্তির মাধ্যমে আমাদের শক্তি, প্রজ্ঞা ও মনের শান্তি দেবেন, যাতে আমরা আমাদের সমস্যাগুলো সহ্য করতে পারি। (হিতো. ১৮:১৪; ফিলি. ৪:১৩) শুধু তা-ই নয়, যিহোবা আমাদের আশা দিয়েছেন যে, খুব শীঘ্রই তিনি সমস্ত অসুস্থতা দূর করবেন আর এটা থেকেও আমরা অনেক শক্তি পাই।—যিশা. ৩৩:২৪.

যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শোনেন, আমাদের শক্তি দেন, প্রজ্ঞা দেন এবং মনের শান্তি দেন (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১৮. আপনি যখন কোনো বড়ো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন আপনি কোন শাস্ত্রপদ থেকে সান্ত্বনা লাভ করেছিলেন? (“ যে-শাস্ত্রপদগুলো থেকে সান্ত্বনা লাভ করা যায়” শিরোনামের বাক্স দেখুন।)

১৮ যিহোবার কথা শুনে হিষ্কিয় অনেক সান্ত্বনা পেয়েছিলেন। আমরাও ঈশ্বরের বাক্য থেকে অনেক সান্ত্বনা পেতে পারি। যিহোবা বাইবেলে সান্ত্বনাদায়ক কথাগুলো লিখিয়েছেন, যাতে আমরা যখন দুঃখ কিংবা হতাশার মধ্যে থাকি, তখন সেগুলো পড়ে শক্তি ও মনের শান্তি লাভ করতে পারি। (রোমীয় ১৫:৪) পশ্চিম আফ্রিকায় আমাদের এক বোনের যখন ক্যান্সার ধরা পড়েছিল, তখন তিনি অনেক কেঁদেছিলেন। তিনি বলেন, “যিশাইয় ৩৬:৩ পদ থেকে আমি অনেক সান্ত্বনা পেয়েছি। এই পদে যিহোবা আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি আমাদের মনের শান্তি দেবেন। কখনো কখনো আমাদের পরিস্থিতি ঠিক করার ক্ষমতা আমাদের হাতে থাকে না, কিন্তু যিহোবা আমাদের যে-শান্তি দেন, সেটার ফলে আমরা যেকোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি।”

১৯. আমাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে?

১৯ আমরা এই মন্দ জগতের একদম শেষ সময়ে বাস করছি। আমরা জানি, আমাদের সমস্যাগুলোও বাড়তেই থাকবে এবং আমাদের অনেক বার চোখের জল ফেলতে হবে। কিন্তু, আমরা যেমন হান্না, দায়ূদ এবং রাজা হিষ্কিয়ের উদাহরণ থেকে শিখেছি, যিহোবা আমাদের কান্নার প্রতি মনোযোগ দেন আর আমরা যখন কাঁদি, তখন তিনিও অনেক কষ্ট পান। আমাদের চোখের জল যিহোবার কাছে খুবই মূল্যবান। তাই আমরা যখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাই, তখন আসুন আমরা যিহোবার কাছে আমাদের হৃদয় উজাড় করে দিই, ভাই-বোনদের সঙ্গে মেলামেশা করতে থাকি, তাদের কাছ থেকে নিজেদের সরিয়ে না রাখি এবং বাইবেল থেকে সান্ত্বনা লাভ করে চলি। আমরা যদি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে চলি, তা হলে তিনি আমাদের অবশ্যই পুরস্কার দেবেন। আর খুব শীঘ্রই যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন এবং আমাদের চোখের সমস্ত জল মুছিয়ে দেবেন। (প্রকা. ২১:৪) বর্তমানে, আমরা যখন খুব দুঃখের মধ্যে থাকি, যখন আমাদের সঙ্গে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে অথবা যখন আমরা কোনো আশা খুঁজে পাই না, তখন আমরা চোখের জল ফেলি। কিন্তু, নতুন জগতে আমাদের শুধু আনন্দে চোখে জল আসবে।

গান ৪ যিহোবা প্রেমময় পালক